#ফিরবে চিনা ঠিকানায়
#লেখনীতে_অনামিকা
#পর্ব-১৩ (শেষ পর্ব)
পার্লারের তিনজন মেয়ে বিরক্ত হয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।তারা পারে তো মেঘলাকে ধরে বাইরে ফেলে রেখে আসে।সাজানোর সময় এত নড়চড় করলে কাজ করা যায়?মেঘলা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল।চুপ করে বসে চোখ বন্ধ করল।ভাব এমন সে আর কথা বলবে না,একটু নড়বে-চড়বে না।এত সময় এমন ভাব করেছে বেশ কয়েকবার কিন্তু লাভ কিছু হয় নি।সে শান্ত থাকতে পারি নি।তার ভিতরের অস্থিরতা কাউকে বুঝাতে পারছে না।ঝিনুক বা জোনিতা কেউ তার পাশে নেই।তারা থাকলে একটু বকবক করতে পারতো।দুইজনেই বাড়িতে।পার্লারে তার সাথে অন্য কাজিন গুলো এসেছে।এদের সাথে কথা বলে শান্তি পাচ্ছে না।আকাশের নাকি কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না সকাল থেকে।এখন দুপুর গড়িয়ে বিকালও হয়ে গেছে।ফুফুকে বলেছে তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু এখনো তার কোনো খবর নেই।এই কথা শুনে মেঘলার প্রাণপাখি উড়ে যায় যায় অবস্থা।মনের ভিতর শুধু খচখচ করছে।মেঘলা মনে মনে বলে,’কি সারপ্রাইজ দেবে?সারপ্রাইজের জন্যই কি সে গায়েব হয়ে গেছে?আল্লাহ আমার কি বিয়ে হবে না আজ?”
—“আপু আপনি কি শান্ত হবেন না?”
কর্কশ কন্ঠে কথটা বলে উঠলো মেঘলার ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া মেয়েটি।মেঘলা মনে মনে কথা বলতে যেয়ে বেখেয়ালি হয়ে ঠোঁট ও নাড়িয়ে ফেলেছে।সে কাঁদো কাঁদো হয়ে সামনের মেয়েটার দিকে তাকাল।মেয়েটা তার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নিজের কাজে মন দিল।কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে একটা মেয়ে এসে বলল,
—“আপনাদের সাজা হয়ে গেলে বাইরে যেতে বলেছে।গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আপনাদের জন্য।”
সবার সাজা হয়ে গেছে মেঘলা বাদে।তাই মেঘলার এক কাজিন বলল,
—“সবাই যাও।আমি মেঘলাকে সাথে নিয়ে আসতেছি।”
সবাই সম্মতি জানিয়ে বাইরে চলে গেলো।মেঘলা আর তার কাজিন ভিতরে রইল।মেঘলার সব ঠিকঠাক করা হয়ে গেলে দুইজনে বাইরে চলে গেলো।বাইরে এসে মেঘলা চমকে গেলো।তার সামনে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো।এই মানুষটার তো এখানে থাকার কথা না।তাহলে কি করছে?তার উচিত ছিল খুশি হয়ে কয়েকবার জ্ঞান হারানোর।কিন্তু সে যে টেডি স্মাইল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাতে মেঘলার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কয়েক পা এগিয়ে আকাশের সামনে যেয়ে দাঁড়াল।জিজ্ঞেস করল,
—“আপনি এখানে কেন?”
আকাশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—“মাশাআল্লাহ!আমার বউকে একদম হুর পরী লাগছে।”
মেঘলা হকচকিয়ে গেলো।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দৃষ্টি নত করল।তা দেখে আকাশ শব্দ হাসলো।হাসি থামিয়ে মেঘলার কাজিনকে সামনে গাড়িতে যেয়ে বসতে বলল আকাশ।মেঘলা ভ্রুঁ কুঁচকে সামনে তাকিয়ে দেখল তার সব কাজিন ওই গাড়িতে।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আকাশের পানে চাইল।আকাশ তাকে তাড়া দিয়ে মেঘলাকে টেনে তার গাড়িতে উঠালো।মেঘলা কিছু বলার সময়টুকু পেলো না।গাড়ির ভিতরে আতিফ আর রবিনকে দেখে অবাক হলো।
—“আসসালামু অয়ালাইকুম ভাবী।”
‘ভাবী’ শব্দ শুনে অস্বস্তিতে জড়িয়ে পড়ল মেঘলা।শব্দটা শুনে কেমন যেন অনুভব করল।কোনোরকমে রবিনের সালামের জবাব দিল।সবাইকে দেখে বুঝার চেষ্টা করল এরা কি করতে চাইছে।ব্যর্থ হলো।সামনে গাড়িটা অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে মেঘলা চিৎকার করে উঠল।
—“ওরা ভুল দিকে যাচ্ছে কেন?ওদের থামান।”
কেউ কোনো উত্তর দিল না।মেঘলা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
—“আরে আমরা ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।বাসার রাস্তা কি সবাই ভুলে গেলেন?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
আকাশ নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,
—“কাজী অফিসে।”
—“কেন?”
—“সেখানে কেন যায় মানুষ?”
—“কার বিয়ে হবে ওখানে?”
—“তোর আর আমার।”
আকাশের কথা শুনে মেঘলা পিছন দিকে ছিটকে সরে গেলো।দরজার সাথে বারি লেগে পিঠে ব্যথা পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।আকাশ ধরে কাছে আনতে চাইলে মেঘলা কেঁদে দিলো।তার হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,
—“আমি বাসায় যাব।আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন।যাব না আপনার সাথে।যাব না আমি।”
আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেঘলা কাছে টেনে নিলো।মেঘলা ছুটার জন্য হাত পা ছুড়াছুড়ি করলে আকাশ রবিনকে চোখের ইশারায় কিছু বোঝালো।ততক্ষণে আকাশ মেঘলাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে।রবিন একটা রুমাল আকাশের দিকে এগিয়ে দিল।সেটা নিয়ে মেঘলার নাকের ওপর চেপে ধরল আকাশ।মেঘলা আধো-আধো চোখ বুজে অস্পষ্ট গলায় বলল,
—“আমার কথা তো শুনুন।আমি এ…
আর কিছু বলতে পারল না সে।জ্ঞান হারিয়ে আকাশের বুকের ওপর পড়ে রইল।আকাশ সযত্নে আগলে নিলো তাকে।মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।
__________________
পানি ছিটা দেওয়ায় মেঘলা নড়েচড়ে ওঠলো।পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকাল।মাথা ভার হয়ে আছে।
—“তাড়াতাড়ি উঠে ঝটপট কবুল বলে ফেলো জান।”
আকাশের গলা শুনে পাশে মাথা ঘুরিয়ে আকাশকে দেখে মেঘলা তড়াক করে সোজা হয়ে দাঁড়াল।কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখন পিছন থেকে আরেকটা পরিচিত কন্ঠ ভেসে এলো।
—“মেঘু তুই ঠিক আছিস?”
পিছনে ঘুরে সায়িদকে দেখে মেঘলা অবাক না হয়ে পারল না।রাগে শরীর রি রি করছে।চেচিয়ে বলল,
—“তোমরা সবাই মিলে আমাকে কিডনাপ করেছো?”
পাশ থেকে বরিন মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল,
—“জি ভাবী।”
মেঘলা বিষ্ময় নিয়ে সায়িদকে বলল,
—“ভাইয়া তুমিও এসবের ভিতর ছিলে?নিজের বোনকে তুলে আনছো!”
সায়িদ আমতা আমতা করে বলল,
—“বিশ্বাস কর আমি এসবের মাঝে থাকতে চাই নি।আকাশ ভাই জোড় করছে আমাকে।”
মেঘলা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।মাথায় হাত দিয়ে বিরবির করে করল,
—“আল্লাহ এই সারপ্রাইজ ছিল আমার কপালে?”
আকাশ বাঁকা হেসে বলল,
—“কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?”
মেঘলা স্থির হয়ে বসে আছে।সবগুলোর মাথা ফা’টিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।এক একটা গাধার দল।এদের বলদ বললে বলদে নিজের নাম চেঞ্জ করে ফেলবে শিওর।মেঘলা নিচের দিকে চোখ স্থির রেখে বলল,
—“বাসায় যাব আমি।”
—“যাবি তো।আমরা সবাই যাব।আগে বিয়েটা হোক তারপর।”
কাজীকে ইশারায় বুঝালো বিয়ে পড়ানো শুরু করতে।মেঘলা শক্ত গলায় বলল,
—“আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করব না।”
আকাশ রেগে মেঘলার বাহু চেপে ধরে বলল,
—“বিয়ে তোর করতে হবে।তুই রাজি হলেও করতে হবে না হলেও করতে হবে।”
মেঘলার আকাশের বুকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বাইরে চলে গেলো।আকষ্মিক হামলা সামলাতে না পেরে আকাশ পিছনের দিকে হেলে পড়ে।আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে মেঘলাকে আটকানোর জন্য বাইরে গেলো।আকাশ ভেবেছিল মেঘলা চলে গেছে।কিন্তু না সে গাড়ির দাঁড়িয়ে সায়িদকে ঝাড়ছে।মুখ আর কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝা যাচ্ছে র্গে ফে’টে যাচ্ছে।
আকাশ মেঘলার হাত ধরে টেনে আবার ভিতরে নিয়ে যেতে গেলে মেঘলা এক চিৎকার দিল।সন্ধ্যার সময় হওয়াতে রাস্তায় তেমন লোক নেই।যে কয়েকজন ছিল তারা দাঁড়িয়ে গেছে।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—“সিনক্রিয়েট করিস না মেঘু।ক’ষে একটা দিলে টু শব্দও করতে পারবি নানে।”
—“আমি এভাবে বিয়ে করব না।”
—“বিয়ে তোকে করতেই হবে।সো চুপচাপ করে নে এতে সবার ভালো মেঘু।”
মেঘলার এবার রাগ কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে।তার কথা কি এদের কানে যাচ্ছে না?সে বলছে একটা আর উত্তর পাচ্ছে আরেকটা।দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
—“গাধার লিডার আমার হাত ছাড়।সবগুলো গাধা একসাথে হয়ে আসছে বিয়ে করতে আর করাতে।একটার মাথায় যদি বুদ্ধির ‘ব’ ও থেকে থাকে।”
—“কি বললি তুই?”
মেঘলা আকাশের চোখের চোখ রেখে বলল,
—“যা বলছি ঠিক বলছি।মাথায় কি আছে?কিচ্ছু নাই।আজ আমার বিয়ে আপনার সাথে।আর জোনিতার বিয়ে হচ্ছে হেনরির সাথে।এত সময় তো মনে হয় ওদের বিয়ে করে ফটোসেশান করাও হয়ে গেছে।আর আমি এখানে বসে গাধাদের সাথে তর্ক করতেছি।একটার মাথাও যদি বুদ্ধি থাকতো তাহলে কালই সব বুঝে যেতেন।আমরা তো হৃদপিণ্ডটা হাতে নিয়ে বসে ছিলাম।যে কখন আপনি সব জেনে যান আর বলে বসেন হইছে নাটক বন্ধ করো তোমরা।আমাদের সব প্লান মাটি হয়ে যাবে ভেবে ভেবে সবাই অস্থির হচ্ছিলাম।সকাল থেকে বাসায় থাকলে দুপুরেই সব জেনে যেতেন।কিন্তু আপনাকে তো টর্চ জালিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।শেষ মেষ হলো কি?বিয়ের দিন বর নিজের বউকেই তুলে আনলো বিয়ে করার জন্য।আপনাকে তো অস্কার দেওয়ার দরকার।”
মেঘলা থেমে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো।সবাই বিষ্ময়ে কিংকত্র্তব্যবিমূঢ়।হতবিহ্বল-হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিজেরাই বুঝতে পারছে তাদের গাধা বলে খারাপ করে নি।নিজেদের এমন নির্বোধ কর্ম দেখে কথা বলার জন্য শব্দ খুঁজে পেলো না কেউ।সবার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি গেলে সায়িদের ওপর।সে হকচকিয়ে গেলো।
আমতা আমতা করে বলল,
—“আমাকে এভাবে দেখছো কেন সবাই?আমি কিছু জানতাম না,ট্রাস্ট মি।আমি যদি জানতাম তাহলে তোমাদের…
—“বলে দিতাম।তাই তো?তোমার আর আতিফ ভাইয়ের ওপর আমার পুরো কনফিডেন্স ছিল যে তোমরা এসব জানলে দুই তিনটা ধমক খেয়ে মুখ খুলে দিবা।যেমন আমার ভাই আমাকে তুলে আসতে সাহায্য করছে।”
সায়িদের কথা কেড়ে নিয়ে কটমট করে কথা গুলো বলল মেঘলা।এরপর কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করে দিছে।এদের সাথে কথা বলার বা কথা শোনার কোনো ইচ্ছে নেই।একটা সিএনজি পেয়ে সেটায় উঠে চলে গেলো বাসার দিকে।আকাশ মেঘলাকে পিছু ডাকলেও সে শোনে নি।
_________________
ঘুমেে জন্য চোখ খোলা রাখতে পারছে না মেঘলা।বিছানায় আদৌ শোয়া হয়ে বসে আছে।ঘড়ির কাটা তিনের ঘরে।চারপাশ ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে।আকাশের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।তখন বাসায় ফেরার পর মেঘলা কেঁদে কেঁদে সবার একাকার করে ফেলেছে।সাথে রাগ তো আছেই।তার সাথে কেন এমন করল?কোন যুক্তিতে?তার নিজের আপন ভাইও বাদ যায় নি!করবে না সে কোনো বিয়ে।এই কথা বলে বেঁকে বসেছে তো বসেছে।মেঘলার আসার আকাশরা এসেছে।দোষ একে অপরকে মাথায় ঠেলে-ঠেলে দিয়ে বিশেষ কোনো লাভ হয় নি।বেশি কথা সবাইকে হজম করতে হয়েছে।এত বড় আহাম্মকের মতো কাজ কোনো বুঝদার মানুষ করে!সবাইকে কান ধরিয়ে মেঘলা ক্ষান্ত হয়েছে।অতপর তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে।দরজার খোলার শব্দ পেয়ে মেঘলা কোনো রকম সোজা হয়ে বসলো।হার্টবিট গতি বেড়ে গেলো।লজ্জায় মাথায় উঁচু করে সামনে তাকাতে পারলো না।ঘুম ছুটে গেলো।
আকাশ ধীরে ধীরে মেঘলার কাছে এনে বসে বিদ্রুপ হেসে বলে উঠলো,
—“সারপ্রাইজ দেওয়ার শখ মিটিছে?”
মেঘলা কোনো জবাব দিলো না।মাথা নিচে করে স্থির হয়ে আছে।আকাশ বাঁকা হেসে আবারও বলল,
—“আর কখনো এমন উল্টো পাল্টা কিছু ভাবলে আমি আরেকটা বিয়ে করে নিব।তারপর তুই দিস সারপ্রাইজ।সারপ্রাইজের গোডাউন খুলে নিস।ঠিক আছে?”
মেঘলা মাথা উঁচু আকাশের শেরওয়ানির কলার টেনে ধরে বলল,
—“আরেকটা বিয়ে করার কথা মাথায় আনলে একদম মে’রে ফেলব।তারপর আমিও দেখব আপনি কিভাবে আরেকটা বিয়ে করেন।আজ যা কিছু হয়েছে এতে আমার কোনো দোষ নেই,হুহ্।”
আকাশ হো হো করে হেসে দিলো।মেঘলাকে সন্তপর্ণে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,
—“আপনি হেনরিকে বিয়ে করার কথা কেন বলেছিলেন ম্যাম?”
মেঘলা শান্ত হয়ে গেলো।সময় নিয়ে বলা শুরু করল,
—“সিয়াম ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে ওরাও চেয়েছে এই ভাবে বিয়ে করবে।হেনরি জোনিতাকে প্রোপোজ করলে জোনিতা রাজি হয়ে যায়।তারপর আমি বাড়ির সবাইকে বলি ওদের বিয়ে এখান থেকে দিতে এতেও সবার রাজি কিন্তু শর্ত দেয় সাথে আমাদের বিয়ে দেবে।আপনি এমনি লাফাচ্ছিনে তাই আপনাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস প্রয়োজন মনে করে নি।আমি হ্যাঁ বললে সব আয়োজন শুরু হয়।আর আমি মানা করে ছিলাম আপনাকে যেন কেউ আগে থেকে বিয়ের কথা না জানায়।আপনাকে জ্বা’লা’নোর জন্য ফেসবুকে আংটি পড়ে পিক আপলোড দিছি।কারণ আমি জানতাম কোনো না কোনো ভাবে আপনার কাছে এই খবর যাবে আর আপনি রাগে ফে’টে পড়বেন।কিন্তু শেষ মূহুর্তে এমন কিছু আমি একদম আশা করি নি।”
আকাশ মেঘলাকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
—“আর কিছু বাকি আছে বলার?আমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো পথ বাদ রাখিস নি তুই।তোকে ভালো বলছিলাম এই বিয়ে করিস না,তুই শুনিস নি।আমি বা কি করতাম?আর কোনো পথ বাকি রেখেছিলি তুই?”
মেঘলা অভিমানী গলায় বলল,
—“আপনি আমাকে কম কষ্ট দিয়েছেন?”
—“তাহলে আমাকে বিয়ে করলি কেন?”
মেঘলা আকাশের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।স্মিত হেসে বলল,
—“মেঘের ভেলা আকাশ ছাড়া অন্য কোথাও ভাসে না।ভাসতে নেই।তার কোনো অনুমতি নেই এমন করার।আমি আমার চিনা ঠিকানায় ফিরে এসেছি।চিরদিনের জন্য ফিরেছি।”
মেঘলার ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—“ভালোবাসি।”
—“আমিও।”
মেঘলা লাজুক হেসে মাথা নত করে তার বুকে মুখ গুজলো।আকাশের অশান্ত মন আজ শান্ত হলো।শীতল অনুভূতিতে সিক্ত হলো মন-প্রাণ।এত বছরের মান-অভিমান আজ শেষ হয়েছে।তাদের ভালোবাসা পরিণতি পেয়েছে।বাতাসেও ভালোবাসার মাদকতা ছড়িয়ে পড়েছে।তাদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া শ’খানেক দূরত্ব যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেছে।
————–সমাপ্ত————–