#ফিরবে চিনা ঠিকানায়
#লেখনীতে-অনামিকা_ইসলাম_জেরিন
#পর্ব_৫
দুপুরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আকাশ মেঘলাদের বাসায় যায়।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।সিয়াম সকালে আসতে বলেছিল।কিন্তু শেষ রাতে ঘুমানোর দরুণ সকালে উঠতে পারি নি।সিয়াম এখন বাসায় না থাকাই আকাশের বিরক্ত রাগ লাগছে।সায়িদ,আতিফ আর হেনরিও বাইরে গেছে।আকাশ আর সিয়ামের মা রান্না ঘরে কাজ করছে।বাসায় মেঘলা আছে তবে তার সাথে কথা বলতে সে ইচ্ছুক নয়।আকাশের বিরক্তি তরতর করে বেরে চলছে।সিয়ামের আসতে দেরি হবে।ততক্ষণ তাকে বোবার মতো বসে থাকতে হবে।টিভির রিমোট হাতে নিয়ে টিভি অন করল।
—“আম্মু?আম্মু?”
মেঘলা ব্যস্ত হয়ে নিচে নামছে আর জোরে জোরে চিল্লাছে।মেঘলার কন্ঠ শুনে আকাশ মেঘলার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।আকাশের এহেন কাজে মেঘলা ভ্রুঁ কুচঁকালো কিন্তু বিষয়টাকে তাকে পাত্তা দিল না।
—“আম্মু?”
মেঘলার মা রান্না ঘর থেকে জিজ্ঞেস করলেন,
—“চিল্লাছিস কেন?”
—“হেনরি কই?”
—“বাইরে গেছে।”
—“আচ্ছা।আমি বাইরে যাচ্ছি।”
আকাশের মা রান্না করতে করতে বললেন,
—“তুই আবার এখন কোথায় যাচ্ছিস রে মা?”
—“এয়ারপোর্টে।”
মেঘলার কথা শুনে রান্না ঘরের কাজ রেখে দুইজনেই দৌড়ে বাইরে চলে আসলেন।আকাশ এবার মেঘলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।মেঘলার মা মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
—“তুই কি চলে যাবি?”
মেঘলা কিছু বলার জন্য ঠোঁট ফাঁকা করবে তার আগেই আকাশ বলল,
—“ওই তুই এয়ারপোর্টে যাবি কেন?চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে পা ভেঙ্গে ঘরে রেখে দেব।কিছু বলছি না দেখে মাথায় উঠে যাচ্ছিস।”
মেঘলা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।এদের দেখে মনে হচ্ছে মন চাইলো আর বিমানে উঠে বললাম আমাকে ওমুক দেশে দিয়ে আসো।টিকিট না হলেও চলবে!নিজের বাপ-দাদার সম্পদেও কেউ এমন ছাড় দেয় না?মেঘলা বুঝলো এয়ারপোর্ট শব্দটা তার পরিবারের জন্য আ’তংক হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসি চাপিয়ে রেখে বলল,
—“কাজ আছে।বিকাল পর্যন্ত চলে আসবানি।”
মেঘলা আর কোনো কিছু বলার বা শোনার প্রয়োজন মনে করল না।দরজার দিকে হাঁটা দিলে আকাশের মা আকাশকে বললেন,
—“তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?ওর সাথে যা।বাসায় আর কেউ নেই মেয়েটা কি একা একা যাবে?
আকাশ মেঘলার দিকে তাকালো।ফুপির কথা শুনে মেঘলা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
—“যাবেন আপনি?গেলে তাড়াতাড়ি আসেন।”
আকাশ তার মায়ে দিকে তাকিয়ে হেসে দ্রুত বাইরে চলে গেলো।
—“ভাইয়া তাড়াতাড়ি চালান গাড়ি।”
আকাশ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,
—“এর থেকে জোরে চালালে বিপদ হবে তা কি তুই জানিস মেঘু?”
মেঘলা কৌতূহলি হয়ে জানতে চাইলো,
—“ভাইয়া আপনি বিয়ে করছেন কবে?”
আকাশ মেঘলার দিকে আড়চোখে তাকাল।গম্ভীর গলায় বলল,
—” ভাইয়া আর আপনি করে বলা বন্ধ কর।”
মেঘলা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
—“তো কি বলব?”
—“কি বলবি তুই জানিস না?”
—“না।আগে বলেন আপনার পছন্দের কেউ আছে নাকি?আছে তো অবশ্যই।তার নাম বলেন।”
আকাশকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই আবার বলা শুরু করল,
—“আরে আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি হলেন হ্যান্ডসাম বয়।আপনার পিছনে মেয়েদের লাইন পড়ে যায়।যেনো তেমন মেয়ে কি আপনার বউ হতে পারবে নাকি?ঠিক বললাম না?”
আকাশ আহত দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকাল।মেঘলা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।দু’জনে মৌনতা পালন করছে।গাড়িতে আর টু শব্দ করল না কেউ।এয়ারপোর্টের সামনে এসে গাড়ি থামলে আকাশ গাড়ি থেকে নামতে নিলে মেঘলা নামতে মানা করল।বাইরে প্রচুর গরম সাথে কাঠ ফাটা রোদ।মেঘলার দৃষ্টির বাইরে নিবদ্ধ করা।
—“মেঘু চল বিয়ে ফেলি।”
গাড়ির ভিতর নিরবতাকে খান-খান করে ভেঙে দিলো আকাশের অভাবনীয় বাক্য।মেঘলা বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে আকাশকে দেখলো।তার মনে কি চলছে বুঝার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।ক্ষণকাল চুপ থেকে আবাক হয়ে বলল,
—“কি?”
মেঘলার দিকে গভীর দৃষ্টিতে নিক্ষেপ ভারী গলায় বলল,
—“আমরা এখন কাজী অফিসে যাব।তারপর বিয়ে করব।”
—“আপনার যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুন কিন্তু খবরদার এসবে আমাকে টানবেন না।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে এখনই বিয়ে করে আসুন আমি অন্য গাড়ি বাসায় চলে যাবানি।”
দ্রুত কথাগুলো বলে গাড়ি থেকে ব্যস্ত হয়ে নেমে গেলো মেঘলা।আকাশ মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে মেঘলার কাছে গেলো।মেঘলার এক হাত চেপে ধরে বলল,
—“নামলি কেন?চল তাহলে বিয়েটা করে নি।”
মেঘলা গলা শুকিয়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে বলল,
—“হাত ছাড়ুন।কি পাগলামি শুরু করেছেন ভাইয়া?আমি আপনাকে বিয়ে….
—“হেই মেঘু?”
মেঘলার কথার মাঝে দাঁড়ি বসিয়ে পাশ থেকে পরিচিত এক মেয়েলি সুর ভেসে এলো।মেঘলা আকাশ দুইজনেই পাশ ফিরে তাকালো।ফর্সা পাতলা গড়নের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁটে হাসি।চেহারায় বিদেশীনি ভাব।পড়নে নীল জিন্স আর লেডিস লং টিশার্ট।ব্রাউন কালারের চুলগুলো পিঠের ওপর ছড়ানো।মেঘলা নিজের হাত ছাড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো।আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
—“কেমন আছো?”
মেয়েটা স্পষ্ট বাংলা ভাষায় বলল,
—“একদম ফাস্ট ক্লাস।”
মেঘলা তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল
—“এই যে ড্রাইভার সাহেব লাগেজ গাড়িতে তোলো।
আকাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো মেঘলার কথা শুনে।মুখ আপনা-আপনি হা হয়ে গেলো।রা শব্দও বের হলো না।মেঘলা ঠোঁট চেপে হেসে গাড়ির পিছন সিটে বসল।আকাশ ড্রাইভিং সিটে বসে রাগে ফুঁসছে।মেঘলা পিছনে বসে অনবরত বকবক করে যাচ্ছে।কথার মাঝে জানতে পারলো এই নতুন আগুন্তুক তার বান্ধবী জোনিতা।কিন্তু বান্ধবীর সাথে আকাশের ইজ্জত এমন ফালুদা না করলে হতো না?ড্রাইভাররা কি এই ভাবে চকলেট বয় সেজে ঘুরে বেরায়?তাকে দেখে কোন দিক থেকে ড্রাইভার মনে হয়?একবার পরিচয় করিয়ে দেওয়া জরুরি মনে করল না।সে যত স্বাভাবিক ভাবে সব ঠিক করতে চাইছে সব যেত তত অস্বাভাবিক করে দিচ্ছে এই মেয়ে।গাড়ি বাসার সামনে আসতেই মেঘলা জোনিতাকে ভিতরে চলে গেলো।হেনরি ড্রয়িং রুমে আতিফের সাথে বসা ছিল।মেঘলার সাথে জোনিতাকে দেখে এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে বলল,
—“জোনিতা!”
মেঘলা হেসে বলল,
—“টিকিট আগে থেকেই বুকিং করা ছিল।তোমার সাথে সামান্য মজা করেছি হেনরি।”
—“আমি ভেবেছিলাম জোনিতা সত্যি আসবে না।”
জোনিতাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো মেঘলা।রুমে গেয়ে জোনিতা চিন্তিত হয়ে বলল,
—“কাজটা তুমি ঠিক করো নি মেঘু?”
মেঘলা ধপাস করে বিছানার ওপর শুয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
—“কি করলাম আমি?”
—“আকাশ ভাইয়াকে ড্রাইভার বলছো।উনি রাগে লাল হয়ে গেছিল তা কি তুমি দেখো নি?”
মেঘলা হেসে দিল।মোবাইল হাতের ভিতর ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
—“যা করেছি বেশি…
—“ম্যাম আপনাদের লাগেজ।”
মেঘলার কথার মাঝে গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে আকাশ লাগেজ রেখে চলে গেলো।আকাশের অবস্থা দেখে মেঘলা হাসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মনে মনে বলল,
—“রাগে ফেঁটে যাক।আই ডোন্ট কেয়ার,হুহ্।”
চলবে…