#ফিরবে চিনা ঠিকানায়
#লেখনীতে-অনামিকা_ইসলাম_জেরিন
#পর্ব_৩
সকালে সবাই খাবার টেবিলে এক এক করে এসে বসছে সবাই।কারোর সাথে কারোর কোনো বাক্য বিনিময়ে হচ্ছে না।পরিবেশ থমথমে।মেঘলা আসি নি।সিয়াম ডাকতে যাবে তখনই দেখে মেঘলা নিচে নামছে।মেঘলা চুপচাপ এসে এটা চেয়ার টেনে বসে পরে।কারোর দিকে না তাকিয়ে মেঘলা অতি স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—“আম্মু আমাকে নাস্তা দেও জলদি খুদা লাগছে।পেটের ভিতর হাতি দৌড়া দৌড়ি করছে।”
মেঘলা কথা শুনে সবার হাসার কথা থাকলেও কেউ হাসতে পারল না।এত স্বাভাবিক ব্যবহার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।উল্টো সে রাগারাগি করলে সেটা সবার কাছে স্বাভাবিক লাগতো।মেঘলার মা তড়িঘড়ি করে মেঘলার প্লেটে নাস্তা দিল।
মেঘলা খাওয়ায় মনোযোগ দিছে।সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরে সবার দিকে তাকিয়ে বাম ভ্রুঁ উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,
—“আমাকে জোকার মনে হচ্ছে নাকি এলিয়েন?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?নাস্তা কর।”
মেঘলায় কথায় সবাই একটু নড়েচড়ে বসল।মেঘলার মনে কি চলছে তা বুঝার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো সকলেই।আকাশ খাচ্ছে কম তার সামনে বসে থাকা ছিমছাম গড়নের মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।রাতের ভালো করে না দেখতে পেলেও এখন তার ফর্সা মুখোশ্রীতে টানাটানি দুই চোখ আগে ধরা দিচ্ছে।দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় বাচ্চা ছিল।আর এরপর কখনো তার ছবি পযর্ন্ত দেখা হয় নি।আজ সরাসরি তার সাথে বসে আছে যুবতী রূপে।কথা বলার তীব্র ইচ্ছা জাগছে কিন্তু কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য।হুট করে মেঘলা আকাশের দিকে তাকালো আর তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।আকাশ তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে কাশতে শুরু করল।তার অবস্থা এমন যে চুড়ি করতে যেয়ে হাতেনাতে ধরা খেয়েছে।আকাশের অবস্থা এমন অবস্থা স্মিত হাসল মেঘলা।
—“তুমি কি রেগে আছো মা?রাগ হওয়া উচিৎ কিন্তু তা সবার ওপর না।আমরা সবাই যদি জানতাম তুমি আসবে তাহলে এমন পরিস্থিতিতে তোমাদের কখনই পড়তে হতো না।”
মেঘলা নাস্তা শেষ করে উঠে যাচ্ছিল।বাবার নরম কন্ঠে বলা কথা শুনে থেমে গেলো।কিছু বলতে যাবে তার আগে ব্যস্ত হয়ে আকাশের মা বললেন,
—“এটা ঠিক না।ও রাগ হলে এই গাধা সায়িদের ওপর হবে।সব নষ্টের মূলে ও।ভাবি ওকে পরশু তারিখ জিজ্ঞেস করছে কি বলছে?১১জুলাই তারিখ।সেই হিসাবে কাল ১২ তারিখ গেছে আমরা কাজ করছি সেভাবে।আর আজ হওয়ার কথা ছিল ১৩ তারিখ মানে আজ মেঘুর আসার কথা ছিল।কিন্তু আজ ১৪ তারিখ।কাজের চাপে আমি নিজেও তারিখ দেখি নি।সায়িদ তারিখ ভুল বলছে।এর মধ্যে মেঘুর সাথে কথা হয় নি।সব কেমন গোলমেল হয়ে গেছে।”
উনি একটু থেমে শ্বাস নিলেন।ফুপির অবস্থা দেখে মেঘলার দম ফাটানো হাসি আসতেছে।হাসি চাপিয়ে চোখে মুখে গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বলল,
—“আমি আসব এটা ঢাক ঢোল বাজিয়ে মনে রাখার মতো কোনো বিষয় না।কোনো ব্যাপার না।আমি রাগ করি নি এত চাপ নিও না তোমরা।কিছুদিনের জন্য আসছি সময় হলে আবার চলে যাব।”
মেঘলা কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।সবাই হতভম্ব হয়ে বসে আছে।মেঘলা থাকার জন্য আসে নি বুঝতে পেরে বড় এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সবার ভিতর থেকে।হেনরি সবাইকে দেখে নিয়ে চলে গেলো মেঘলার কাছে।মেঘলার মা এবার চেঁচিয়ে উঠলেন সায়িদের ওপর,
—“চোখ কোথায় থাকে তোর?সারাক্ষণ তো মোবাইল খাস।তোর মোবাইলে কি তারিখ নাই নাকি?কোনো কাজ তো নেই।বলেছি বাপ-ভাইয়ের সাথে অফিসে বস।তাও করিস না পড়াশোনা শেষ করে এখন শুধু ঘুরাঘুরি।তোর জন্য এখন আমার মেয়েটা আবার রাগ করে চলে যাবে।”
কথা শেষ করে শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে কান্না শুরু করে দিলেন।ওনাকে কেউ কিছু না বলে যে যার মতো কাজে চলে গেলো।সায়িদ আহাম্মকের মতো আতিফের দিকে তাকিয়ে আছে।সে কি জানত তার একটা ছোট ভুলে এত কিছু হবে?ইচ্ছে করে ভুল তারিখ বলেছে নাকি সে?এখন সব দোষ তার।
_________________
১০ঃ৩৭ বাজে।গরমে হেনরির করুণ দশা।এসি রুম থেকে বের হলেই বুঝি তার প্রাণপাখি উড়ে যাবে তাকে রেখে।এমন পরিবেশ হেনরির কাছে একদম নতুন তার জন্য সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে।বাসার ভিতর এমন লাগলে বাইরে গেলে কি হবে তা ভাবলে গরমের পরিমাণ যেন দ্বিগুণ বেরে যাচ্ছে।তবুও সে ঘুড়তে যাবে।কারণ সে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখতে।
মেঘলা হেনরিকে সাথে করে নিয়ে সায়িদের রুমে গেলো।বিছানায় ওপর আতিফ শুয়ে মোবাইল ঘাটতেছে।সায়িদকে কোথাও না দেখে মেঘলা আতিফকে জিজ্ঞেস করল,
—“সাদিফ ভাইয়া কোথায়?”
মেঘলার আওয়াজ শুনে আতিফ দরজার দিকে তাকাল।ওদের দুইজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
—“ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?ভিতরে আয়।সাদিফ বাথরুমে।”
মেঘলা ভিতরে গেলো সাথে হেনরিও গেলো।আতিফ মনে মনে ভাবছে মেঘু কি সাদিফ কে ঝাড়তে এসেছে?কথা যেভাবে মেপে মেপে বলছে মন হচ্ছে একটা কথা বেশি বললে জরিমানা দিতে হবে।কে বলবে আগে এই মেয়ের মুখ বন্ধ হতো না?নিজে থেকে কথা বাড়ানো সুবিধার মনে হচ্ছে না আতিফের এজন্য সে চুপ থাকা ভালো মনে করল।
সাদিফ বাইরে এসে মেঘলা আর হেনরিকে দেখে কপালে ভাজ পড়ল।চিন্তিত হয়ে বলল,
—“দেখ মেঘু আমি ইচ্ছা করে ভুল তারিখ বলি নি।এজন্য মোটেও ঝগড়া করবি না আমার সাথে।”
মেঘলা মাছি তাড়ানোর মতো মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,
—“আরে বাদ দেও তো।এতদিন পর আসছি আর তোমরা সবাই মিলে একটা ফালতু টপিক নিয়ে টানাটানি করছো।এখন আমি গলা ফাটিয়ে চিল্লালে কি কালকের দিন ফিরে আসবে?আসবে না।রাতে রাগ লাগছিল।মনে হয়েছিল চলে যাই।সকালে আম্মু আর ফুপির সামনে একটু রাগ করার অভিনয় করতেছিলা।”
আতিফ সোজা হয়ে বসে সায়িদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“ব্বাহ্ রে!দেখছিস মেয়ে কি চালাক হইছে?এর অভিনয়ের জন্য মামি তোকে চিল্লালো।এ এবার যাচ্ছে টাচ্ছে না।”
—“কে বলল আমি যাচ্ছি না?ভাইয়ার বিয়ের জন্য আসছি।বিয়ে হয়ে গেলে চলে যাব।তোমরা বিয়ে করো তখন আবার আসবানি।”
—“গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট।ওখানে গিয়ে কি করবি এখন?”
সিয়ামের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মেঘলা বলল,
—“ফ্রি আছো?আসলে হেনরি বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে আসছে।এই কয়দিনে দেশ ঘুরে দেখানো সম্ভব না।তাই আমাদের শহরটা না হয় ভালো করে ঘুরে দেখল।আমি তো সব জায়গা চিনি না তাই তোমাকে বলছিলাম।তুমি……
—“হয়েছে আর বলতে হবে না তোকে আমি পুরো ফ্রি ওকে আমি নিয়ে যাবো ঘুরতে।”
আতিফ চেতে বলল,
—“আমি কি বিজি থাকি মেঘু?”
আতিফকে পাল্টা প্রশ্ন করল মেঘলা,
—“তা আমি কি করে বলব ভাইয়া?”
আতিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে সিয়াম হেসে বলল,
—“তুইও যাস ঘুরতে কিন্তু ঝগড়া করিস না।তোকে কেউ মানা করছে?আর মেঘু তুই চিন্তা করিস না হেনরিকে শহর ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব তোর দুই ছোট ভাইয়ের।সাথে তোকেও সব কিছু চিনিয়ে দিব।”
—“আচ্ছা।হেনরির বাংলা ভাষা একটু ঠিক করে দিও।বাংলায় কথা বলতে পারে কিন্তু ভুল যায় সেগুলো শুধরে দিতে হবে।”
সায়িদ হেনরির ঘাড়ের ওপর দিয়ে হাত দিয়ে বলল,
—“আরে বাংলার এ টু জেড সব ঠিক করে দিব।নো টেনশন।”
চলবে…