#ফিরবে চিনা ঠিকানায়
#লেখনীতে-অনামিকা_ইসলাম_জেরিন
#পর্ব_২
মেন গেইট খুলে ভিতরে ঢুকে মেঘলা দেখে বাসার দরজা বন্ধ। যা মেঘলা স্বপ্নেও আসা করিনি।ভেবেছিল আম্মু আর ফুপি ওর জন্য অধির আগ্রহের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে।আর ওকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরবে।কেঁদে বুক ভাসাবে।বাকি সবাই ভীষণ অবাক হবে চোখে থাকবে আকাশসম বিষ্ময়।কিন্তু না কেউ নেই দরজায়। কেউ না!তাহলে কি ওর জন্য ভালোবাসা কমে গেছে?কেউ আর তাকে ভালোবাসে না।সবাই নাম মাত্র বলে তোকে মিস করছি।কবে আসবি?তোকে ছাড়া ভালো লাগে না।তার জন্য কান্নাকাটি করাও নেহাৎ অভিনয় ছাড়া কিছু না। মেঘলার চোখে পানি টলমল করছে।দরজার কাছে গিয়ে কলিংবেল বাজালো কয়েকবার কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।এবার সত্যি কান্না করতে ইচ্ছে করছে মেঘলার।কেউ দরজা খুলছে না কেন?মা’র কি মনে নেই সে আজ আসবে?ফুপিও ভুলে গেছে তার আসার কথা?
হেনরি মুগ্ধ নয়নে সব কিছু দেখছে।হেনরির কাছে বাড়িটা অনেক সুন্দর লাগছে।একপাশে ফুল গাছে ভরা। সবুজ পাতার মাঝে রংবেরঙের ফুল দেখা যাচ্ছে।বেশ লাগছে দেখতে।একটা দোলনাও আছে সেখানে।আরেকপাশে চেয়ার টেবিলে দেওয়া।
______________________
মেঘলার পরিবারের সবাই গেছে সিয়ামের হবু শশুড়বাড়ি।ঝিনুক আর সিয়ামের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।ঝিনুকের পরিবার থেকেই প্রস্তাব দিয়েছে বিয়ে আগে যেন সবাই মিলে একসাথে সময় কাটায় পারিবারিকভাবে মজা করতে পারে সবাই।এতে সবাই রাজিও হয়ে যায় কারন সিয়াম আর ঝিনুক ও কথা বলে ফ্রি হতে পারবে একে অপরের সাথে।
সিয়ামের ফোনে বারবার অফিস থেকে ফোন আসছে।তাই ঝিনুকের মা হেসে বললেন,
—“বাব একদিনের জন্য সবাই পরিবারের সাথে সময় কাটাবে তার ভিতর এতো ফোন আসলে বিরক্ত হবে।ফোনটা আজ ছুটিতে পাঠায় দেও বাবা।”
সায়িদ দাঁত কেলিয়ে বলল,
—“জ্বি, আন্টি ঠিক বলেছেন পাশে সুন্দরী ভাবি আছে।সবাই মিলে বাইরে ঘুড়তে এসেছি। এখন এই ফোন কারোর কাছে থাকাই মানানসই না মোটেও।এসব ফোন টোন ব্যবহার আজ গ্রহনযোগ্য না।
সায়িদের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।সিয়াম কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেও কোনো লাভ হলো না।সে সিয়াম সহ বাকি সবার কাছ থেকে ফোন নিয়ে গাড়িতে রেখে আসে।অন্যদিকে মেঘলা ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না।হেনরি পাশে আছে চুপ করে।ভেবে পাচ্ছে না কি করবে?ফুপিদের বাসায় যাবে তা কি করে হয় তাদের বাসার ঠিকানা তেমন একটা মনে নেই।কি করে যাবে?আর ফুপিসহ সবার তো এইখানে থাকার কথা কেউ নেই কেন তাহলে?কারোর কিছু হয়নি তো?আজেবাজে চিন্তা-ভাবনা ঘিরে ধরছে মেঘলা।সে আর ভাবতে পারছে না।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।উজ্জ্বল মুখটা লাল হয়ে গেছে। মেঘলার এমন অবস্থা দেখে কি করবে হেনরি বুঝতে পারছে না।সে নিজেও চিন্তায় পড়ে গেছে।বাংলাদেশে প্রথমবার এসেছে।এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা স্বপ্নেও কল্পনা করে নি সে।অস্তিত্ববোধ করছে কিছু টা।তার ওপর গরম যা তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।কপালের ঘাম বাম হাতের বাহুতে মুছে নিলো।ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে মেঘলার কাঁধে হাত রেখে হেনরি বলল,
—“ডোন্ট ক্রায়িং প্লিজ।”
মেঘলা কিছু বলল না।অসহায় দৃষ্টিতে হেনরির দিকে নিক্ষেপ করল।আশেপাশে এলোমেলো ভালো চোখ বুলিয়ে দরজার কাছ থেকে সরে এসে সিড়িতে বসে পরল।ভেবেছিল সবাই ওকে দেখে অনেক খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে।তাদের না জানিয়ে আসার জন্য বকবে।এলাহিকান্ড শুরু হয়ে যাবে।কত প্রশ্ন করবে কিন্তু এখানে তো কেউ নেই।কেন নেই?মেঘলা নিশ্চুপ ভাবে কেঁদে যাচ্ছে।সবাই কি এত ব্যস্ত যে একবার ফোন রিসিভ করতে পারছে না কেউ?ভাইয়ারা ফোন করার সাথে সাথে রিসিভ করে আর আজ এত বার ফোন করার পরও ধরছে না কেন?সবকিছু অসহ্য লাগছে মেঘলার কাছে।অভিমানি মনে অভিমানের পাহাড় জমছে।বাংলাদেশে আসা তার একদম উচিৎ হয় নি।কেন আসবে সে এখানে?যদি সম্ভব হতো সে এখনই ফিরে যেতো। হেনরি মেঘলার হাত থেকে ফোন দিয়ে সবাইকে বারবার ট্রাই করছে,রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না।মনে মনে সে বেশ বিরক্ত হচ্ছে মেঘলার পরিবারের ওপর।আবার মেঘলাকে দেখে খারাপ লাগছে।
________________________
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।ঝিনুকের পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে সিয়ামের পরিবারের সবাই গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ তার মা সাথে তর্কে নেমেছে বাসায় যাবে বলে আর আকাশের মা যেতে দিবেন না।সে এখন সবাইকে ভাই বাড়ি যাবে মানে যাবেই।পরে গেলে হবে না।
—“আমি বাসায় গেলে প্রবলেম কি আম্মু?কাল আমার অফিসে যেতে হবে আজ তোমার কথায় এখানে এসেছি আর না।”
আকাশের মা কড়া গলায় বললেন,
—“এসেছিস ভালো করেছিস এখন তুই আমাদের সাথে তোর মামার বাসায় যাবি।আর কোনো কথা শুনতে চাইছি না আমি।”
—“কিন্তু কেন?”
—“আমি বলছি তাই?”
মায়ের নির্লিপ্ত ভাব আকাশকে বিরক্ত করে তুললো।মায়ের সাথে না পেরে আকাশ আর কিছু না বলে গাড়িতে বসে পড়লো।এতে আকাশের মায়ের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটলো।সিয়াম,সায়িদ,আকাশ আর আরিফ এক গাড়িতে যাচ্ছে।আকাশ আর সিয়ামের বাবা-মা এক গাড়িতে যাচ্ছে।
আতিফ সিয়ামের সাথে ফাজলামি করার জন্য মনে মনে কথা সাজাতে লাগল সাথে কিছু বেশি কথা শোনার জন্য নিজের কান এবং মনকে প্রস্তত করে নিল।কারণ সিয়াম সবসময় সব বিষয়ে হাসিঠাট্টার মুডে থাকে না।কিছুটা গম্ভীর স্বভাবে আর ওদের সবার বড় হওয়ার কারণে শাসনে একচুল এদিক ওদিক করে না।বাঁকা হাসে বলল,
—“ভাইয়া আজকের দিন কেমন গেল ভাবিররররর সাথে?”
সিয়াম ড্রাইভ করছিল।আতিফের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সামনের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
—“যেমন যাওয়ার কথা ছিল তেমন গেছে এখানে জিজ্ঞাসা করার মতো কিছু দেখছি না।”
সিয়ামের কথা শুনে সবাই হেসে দিল।ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
—“হাসছিস কেন তোরা?আমি কি জোকস বলেন তোদের?”
—“ভাবির জ্যন দুঃখ হচ্ছে।বিয়ের পর ভাবি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলবে এ কোন রষকষহীন বর জুটল আমার কপালে।তা ভাবি জানে তো তুমি একটা নিরামিষ?”
আকাশের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিল।সায়িদ ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে জবাব দিল,
—“আমি কি সেটা নাহয় বিয়ের বছরখানিক পর জানা যাবে।তোরা চাচ্চু হওয়ার জন্য রেডি থাক।”
সবার হাসি থেমে গেলো।সিয়াম মজা করার মুডে আছে দেখে সায়িদ বলল,
—“ভাই ফ্যামিলি প্লানিং হয়ে গেছে এত তাড়াতাড়ি?তা কয়জনের চাচ্চু হবো বছরে?
—“আমার মোবাইল কই?”
সিয়ামের গম্ভীর কন্ঠ শুনে মুখ ফুলালো।কিছু না বলে সিয়ামের মোবাইলটা এগিয়ে দেয় ওর দিকে।সিয়াম ড্রাইভ করতে করতে স্ক্রিনের দিকে তাকালো।মেঘুর নাম ভেসে উঠেছে দেখে ভাবলো বাসায় পৌঁছে কল ব্যাক করবে।পরক্ষণে চমকে আবার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাংলাদেশি নাম্বার।এই সিম তো সিয়ামই কিনে দিছিল যদি কখনও দরকার হয় তাও অনেক বছর আগে।গাড়ি রাস্তার একপাশে থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে।মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন চলতেছে এটা কি করে সম্ভব?সিয়ামের এমন অবস্থা দেখে পাশ থেকে আকাশ,সায়িদ,আতিফ বারংবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।কোনো জবাব না দিয়ে কাপাকাপা হাতে ফোন করে মেঘুর নাম্বারে কিন্তু সুইচ অফ বলছে।ও এসে আবার চলে গেলো না তো।একবার অভিমান করে গেছিল তাকে কেউ ফিরিয়ে আনতে পারি নি।এবার যদি একই ঘটনা ঘটে তাহলে আর কোনদিন ফেরানো সম্ভব হবে না।সিয়ামের এমন কাজে সবাই অবাক।আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—“কি হয়েছে ভাই?”
সিয়াম কিছু না বলে গাড়ি চালানো শুরু করল।মেঘু কি বাংলাদেশে এসেছে?কখন আসলো?আমাকে বলে নি কেন ও দেশে আসবে?সব কিছুতে পাকনামি না করলে হয় না।না জানি মেয়েটা কোথায় আছে?কি করছে?বাসায় এসে কাউকে না পেয়ে কি করছে?চলে না গেলেই হবে।বাকি সব সে সামলে নিতে পারবে।নানা ধরনের কথা ভাবছে।সিয়ামের অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে দেখে আর দেখে আকাশ জিজ্ঞেস করে,
—“ভাই ঠিক আছো তুমি?”
সিয়াম জবাব দিল না।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে তার।গাড়ির গতিবেগ আরও বাড়িয়ে দিল।বাকি তিনজন আরও অবাক হয়ে যায় সিয়ামের এমন কাজে।সিয়ামের মোবাইল বেজে উঠল।জোনিতা নাম ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে।সিয়াম এক হাতে স্ট্রায়ারিং সামলে আরেক হাতে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে বলল,
—“হ্যালো,মেঘু কোথায়?”
জোনিতা ভ্রুঁ কুঁচকে গেলো সিয়ামের কথা শুনে।সে নিজে মেঘলা আর হেনরির খবর নেওয়ার জন্য ফোন করেছে।বাংলাদেশে পৌঁছে একবারও তার সাথে কথা হয় নি এজন্য সিয়ামের নাম্বারে ফোন করেছে।এখন উল্টো তাকে এমন প্রশ্ন করায় সে কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না।আকাশের কথা শুনে বাকি তিনজন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করছে।অপর পাশ থেকে কাঙ্ক্ষিত জবাব তো দূর কোনো কথা শুনতে না পেয়ে আকাশ অধৈর্য হয়ে পড়ল।
—“ক্যান ইউ হেয়ার মি?”
জোনিতা নিজেকে নিজেকে সামলে নিয়ে স্পষ্ট বাংলায় স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—“মেঘু কোথায় মানে?”
আকাশের কপালের ঘামের পরিমাণ বাড়লে শুরু করল।মনে একটা প্রশ্নই বারবার আসলো তার বোনটা ঠিক আছে তো?রাগ করে চলে যায় নি তো?
—“হ্যালো?হ্যালো ভাইয়া শুনছেন?ও তো সকালেই বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়ার কথা।আমাকে বলেছিল পৌঁছে কল করবে কিন্তু এখন অবদি করে নি।অনেক খুঁজে ওর বাংলাদেশের নাম্বার পেয়েছি সেটা বন্ধ বলছে এজন্য আপনাকে কল করলাম।”
এটুকু বলে জোনিতা থামলো।পর মূহুর্তে অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো।পথে কি কোনো সমস্যায় হয়েছে তাদের?ভয়ার্ত কন্ঠ বলল,
—“মেঘু পৌঁছায় নি ভাইয়া?”
মেঘু সকালে এসেছে শুনে সিয়াম আরও জোরে গাড়ি চালানো শুরু করে।জোনিতাকে কিছু না বলেই কল কেটে দেয়।বুকের ভিতর ধুরুধুরু করেছে।রাগ লাগছে নিজের ওপর।এইদিন কেন তার বের হতে হলো?ফোনটাও কাছে রাখলো না।আর এই মেয়েটা কোন অংশে কম?আসবে ভালো কথা জানিয়ে আসতে কি সমস্যা ছিল?এত ঝামেলা পোহাতে হতো না সারাদিন।এখন কোথায়,কি করছে,কেমন আছে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানে।আকাশ সিয়াম ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
—“কি হয়েছে?মেঘু ঠিক আছে?কোনো সমস্যা হই নি তো ওর?”
সিয়াম জবাব দিল না।সিয়ামেন এখন একটাই চিন্তা তার আদরের ছোট বোনটা আবার চলে যাবে না তো সবার ওপর রাগ করে।এত সময় কি সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে নাকি চলে গেছে?কি করে রাগ ভাঙ্গাবে ছোট বোনের?বেশি রেগে গেছে কি?বেশ কিছু সময় পর সিয়াম বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো।সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে দেখে দরজার সামনে দু’জন মানব-মানবী মাথা করে নিচু বসে আছে।সিয়াম দৌড়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।কথা বলতে যেয়ে বুঝল তার গলা দিয়ে শব্দ আসছে না।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কত চেষ্টা করেছে তার বোনটাকে দেশে আনার জন্য কিন্তু পারি নি।তার এক কথা ‘গেছি নিজ ইচ্ছায় ফিরে গেলে সেটাও নিজ ইচ্ছায় ফিরব’।আজ যখন এসেছে তখন এইভাবে দিন কাটাতে হল।
সিয়াম মেঘলার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।করুন গলায় ডাকল,
—“মেঘু?”
সিয়ামের কন্ঠ শুনে মেঘলা মাথা উচু করে সামনের দিকে তাকায়।সিয়াম মেঘলার মুখের দিক তাকিয়ে আতকে উঠে।কান্না করে মুখ লাল হয়ে গেছে চোখ দুটো ফুলে গেছে।চোখে হাজারও অভিমানের ভিড় জমেছে।
মেঘলা কিছু বলল না।সিয়াম আদুরে গলায় বলল,
—“মেঘু এইভাবে কানছিস কেন?ভয় পেয়েছিস?আমি চলে আসছি প্লিজ বোন আমার আর কান্না করিস না।”
মেঘু কিছু না বলে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।বিরবির করে বলে,
—“তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না।সবাই মিথ্যা বলো।আমি চলে যাব এখান থেকে।থাকব না এখানে আমি।”
সিয়াম চুপ করে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে অভিমানে ভরা অভিযোগ শুনে হেসে দিল।বাকি তিনজন গাড়ি থেকে নেমে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে।সবাই অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে মেঘলাকে এখানে এভাবে দেখে।আকাশ একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে দেখছে সামনের মেয়েটাকে।সিয়ামের মুখে মেঘু নাম শুনে আকাশে বুকে মাঝে অদ্ভুত হাওয়া বয়তে শুরু করেছে।অন্ধকারে তেমন বোঝা যাচ্ছে না তবুও তাকে ভালো করে দেখার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।
সিয়াম মেঘলার কান্না থামিয়ে বাসার দরজা খুলে মেঘলা আর হেনরিকে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো।মেঘলা হেঁচকি উঠছে কান্নার করার কারণে। চুপচাপ সিয়ামের সাথে তার রুমে চলে যায়।আর সায়িদকে বলে হেনরিকে রুম নিয়ে যেতে।
সিয়াম,আকাশ,আতিফ আর সায়িদ ড্রয়াইং রুমে বসে আছে।সিয়ামের বাবা বাসার ভিতর ঢুকে সবাইকে বসে থাকতে দেখে বললেন,
—“কি রে তোরা ফ্রেশ হইসনি কেন?”
কেউ কোনো জবাব দিলো না।সিয়াম কোনো রকমে নিজের রাগ চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।কিছু সময় চুপ করে থেকে সিয়াম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—“মা তুমি জানতে মেঘু আসবে?”
সিয়ামের প্রশ্নে ওর মা বিস্মিত হন।ছেলের রাগের কারণ বুঝে উঠতে পারলেন না।নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন,
—“ও আসতে যাবে কেন?ওর কি আসার কথা আছে?”
সিয়াম জোর গলায় বলে উঠলো,
—“ওর আজকে আসার কথা ছিল এবং ও এসেছে। সারাদিন কান্না করে কি আবস্থা জানো তুমি?ছেলের বিয়ের খুশিতে মেয়ের বাড়ির ফেরার কথা ভুলে গেছো।সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আর কিছু পেলে না তোমরা দুইজন?যে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে সে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে।দারুণ হয়েছে না?”
সিয়াম নিজের কথা শেষ করে সেখান থেকে চলে গেলো।তার পিছেনে আকাশ,সায়িদ,আতিফ ও চলে যায়।বড়রা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।সিয়ামের বাবা সিয়ামের মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—“তুমি জানতে আমার মেয়ে আসবে?”
মাথা নিচু করে জবাব দেন,
—“হ্যাঁ।”
সিয়ামের বাবা চিৎকার করে বললেন,
—“তাহলে তুমি কি ভাবে ভুলে গেলে?”
ভাইয় রেগে যাচ্ছে দেখে আকাশের মা কেঁপে উঠে বললেন,
—“ভাইয়া আমরা তারিখ দেখতে ভুল করেছিলাম।”
—“বহ্।খুব ভালো।
এইটুকু বলে সিয়ামের বাবা রুমে চলে যান।এক এক করে সবাই রুমে চলে যায়।মেঘলার দরজার সামনে সবাই যেয়ে ডাকি ডাকি করলেও মেঘলা দরজা খোলে নি।রাতের খাবারের টেবিলে সে আর খেতে আসি নি।সিয়াম যেয়ে খাইয়ে দেছে।বাকি কারোর সাথে দেখা অবদিও করে নি।
চলবে….