ফানাহ্ পর্ব-৬২

0
1109

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৬২
#প্রথম_খণ্ড
#হুমাইরা_হাসান
_______________

ক্লান্ত-মলিন চোখটার নির্মল ধূসর চাহনিটা একদম কাটকাট আঁটকে আছে সামনের দিকে। নতশিরে বসে থাকা মেয়েলী চেহারা টায় চোখদুটো এভাবে বিদ্ধ করে রেখেছে যেন একবার চোখের পলক ফেললেই হারিয়ে যাবে৷ যেন খুব কিছু একটা মিস হয়ে যাবে৷ মোহর রিপোর্ট টা খুঁতে খুঁতে দেখলো। আগের তুলনায় হেলথ্ স্ট্যাবিলিটি অনেকটা গ্রো করেছে। শরীরে এখন আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অ্যাক্সিডেন্টে কার্ডিয়াক যেই ইস্যু টা ক্রিয়েট হয়েছিল ম্যাজিকের মতো সেটাও ধামাচাপা পড়েছে ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্যে৷ বডি ইমিউনিটি সিস্টেম,পালস রেট, অন্যান্য অর্গানের অবস্থা সবকিছু সঙ্কটাপন্নতার বাহিরে। কয়েকদিনের অবজারভেশনে যা সিম্পটম এসেছে তাতে অবস্থাটা এখন যথেষ্ট উন্নতির দিকে। মোহর ফাইলটা বন্ধ করে চোখ দু’টো চেপে বুজে নিলো। মনে মনে উপরওয়ালার কাছে খোশ দিলে বহুবার শুকরিয়া আদায় করলো। তার অশেষ মেহেরবানী ছাড়া কখনোই সম্ভব ছিলো না এই মিরাকল। যেন সবটা নাটকীয় ভাবে ঘটে গেলো। এই মাসটা যেন ফারার উপর ফারা সহ্য করে যেতে হচ্ছে। ফোঁস করে দম ছেড়ে যেন বহু টন ভারী বোঝামুক্ত করলো নিজেকে। মোহর হাত থেকে ফাইলটা সাইডে রেখে সামনে তাকাতেই চোখাচোখি হলো ভীষণ বেহায়া চোখ দু’টোর সাথে। এক্কেবারে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে লোকটা। ভ্রুদ্বয় আনমনেই কুঁচকে নিলো মোহর৷ মেহরাজ বেডে চিত হয়ে শুয়ে রইলেও বেশ অনেকক্ষণ ধরে ঘাড় বাঁ দিকে কাত্ করে তাকিয়ে আছে মোহরের দিকে। হাতের উল্টোপিঠে একটা ওয়ান টাইম টেপ লাগানো। কয়েক প্রহর আগেই– জ্ঞান-চেতনাশূণ্য মস্তিষ্কে লোকটার কথায় সাঁই দিয়ে স্যালাইনের নলটা খুলে ভুল করেছিল সেটা বুঝতে পেরেই এই ব্যবস্থা। মেহরাজের হাতে লাগানো স্যালাইন টা প্রায় শেষের পথেই ছিলো তবে মোহর যতই সাবধানে তা খুলে দিক মেহরাজের অস্থির-উচাটনতায় অতিষ্ট মন নিজের সমস্ত শক্তিটা যেন নিরীহ হাতটার উপরেই খাটিয়েছে৷ সেটাতেই স্যাভলনে ভেজা তুলার আঁচর দিয়ে টেপটা লাগিয়েছে মোহর। এতবড় একটা অঘটন করেও ক্ষান্ত হয়নি লোকটা এখন ঘন্টা ধরে এভাবে তাকিয়ে আছে। রাতে জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটা বারের জন্যেই দুচোখের পাতা এক করেনি লোকটা।

– ঘাড়টা সোজা করুন। কখন থেকে এভাবে তাকিয়ে আছেন! এ পাশটায় যে সেলাই পড়েছে সেটা কী মনে নেই? চাপ পড়লে অসুবিধা টা তো নিজেরই হবে

মেহরাজের কপালে ভাঁজ পড়লো কিঞ্চিৎ। মোহরের শাসানির পরিবর্তে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসলো।

– আপনি আমাকে আর ভালোবাসবেন না মোহ?

মোহর বিস্মিত হলো। ওষ্ঠদ্বয় কিঞ্চিৎ ফাঁক করে বিব্রত হয়ে বলল,

– মানে! এটা আবার কেমন প্রশ্ন?

– তাহলে অন্যদিকে তাকাতে কেনো বলছেন? আমার জন্য যদি এতই চিন্তা থাকতো তাহলে পাশে এসে বসতেন। আপনি কী জানেন না আপনাকে না দেখলে আমি শান্তি পাইনা?

মোহর বসা থেকে উঠে এসে পাশে দাঁড়ালো। মেহরাজের ঘাড়টা নিজ হাতে খুব সাবধানে সোজা করে দিয়ে বলল,

– শান্তির চেয়ে সুস্থতা টা অনেক বেশিই দরকার আব্রাহাম রুদ্ধ। ঘুমানোর চেষ্টা করুন, না তো আমিই ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেবো।

– কী করবেন?

মেহরাজের কৌতূহলী দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে মোহর রিপোর্ট সহ আরও কয়েকটা জিনিস হাতে নিয়ে বলল,

– ডাক্তারেরা মাথায় হাত বুলিয়ে নয় ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ায়। আপনি কী চাচ্ছেন আমিও তাই করি?

মেহরাজ মুখখানা খুব করুণ করে বলল,

– আমার কাছে একটু থাকুন মোহ। আমার পাশটায় বসুন। এই বালিশটা অসহ্য ঠেকছে আমার এখানে শুয়ে থাকতে খুব জঘন্য লাগছে। এখান থেকে বেরোতে চাই আমি।

মোহর নিজেকে শক্ত রাখতে চাইলেও মেহরাজের কথা,ওর মুখটা বারবার কেমন গুড়িয়ে দিচ্ছে সবটা। কেমন চুপচাপ গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে মেহরাজের পাশে বসে ওর মাথায় হাতটা ছুঁয়ে বলল,

– আপনাকে সুস্থ হতে হবে রুদ্ধ! এখনো অনেক কিছু বাকি। আসল লড়াই টা সামনেই। নিজের আর নিজেদের উপর হওয়া সকল অন্যায়ের হিসেব নিবেন না? আমার সব প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেবেন না? যে আসছে তাকে একটা সুস্থ পৃথিবী উপহার দিবেন না?

মেহরাজের চোখ জোড়া কেমন টলমল করে উঠলো। মোহর যেন খুব অভাবনীয় এক দৃশ্য দেখতে পেলো।সবা সর্বদা স্থির, প্রশান্ত চোখ দু’টো তার স্বভাবের হেরফের করেই দিলো! মোহর খুব যত্নে মেহরাজের মাথাটা তুলে নিজের নরম কোলটায় রাখলো। যেন একটা নবজাতকের দেহ একটু ছুলেই আঁচড় পড়ে যাবে৷ সযত্নে, অতি সাবধানে মেহরাজকে নিজের কোলে রেখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িবৃত গালটায় আদুরে হাতের নরম স্পর্শ মেখে বলল,

– আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা রুদ্ধ। আপনাকে ছাড়া এক একটা দিন আমার কাছে যন্ত্রণাময় বিষ লাগে। আমি এখনো জানি না আসল সত্য টা কী। আপনি আমায় সবটা কেনো বলেননি বা বলছেন না তাও জানিনা। কিন্তু আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারিনা।যতটা দৃঢ়তা, নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে আপনাকে ছেড়ে এসেছিলাম ততটাই ভেঙেচুরে মুষড়ে আপনারই বুকের মধ্যে এসে পড়েছি। এটাকে আমি নিজের ব্যক্তিত্বহীনতা বলবো নাকি ভুল শুধরে নেওয়া বলবো আমি জানি না। আপনাকে সুস্থ হতে হবে খুব শীঘ্রই আমার জবাব গুলো দিতে হলেও আপনাকে সুস্থ হতে হবে।

মেহরাজ চুপটি করে পড়ে রইলো আদুরে স্পর্শের নীবিড়ে। বুকের ভেতর যাতনার অমাবস্যা গুলো আস্তে আস্তে যেন উবে গেলো এতটুকু স্পর্শেই। বহুদিন পর যেনো একটু শান্তি একিটু আমিত্ব ফিরে পেলো৷ আগামী কাল এমনকি আগামী ঘন্টায়ও কী হবে জানা নেই। ও শুধু এই এখনটাকে উপভোগ করতে চাই। শরীরের সমস্ত বিষব্যথা, ক্ষত গুলোকে ভুলে একটু ভালোবাসা পেতে চাই। মোহরের পেটের দিকে মুখ গুঁজে দিয়ে বলল,

– আমায় আরেকটু ভালোবেসে দিন মোহ

•••

ঘরে ঢুকেই বিছানাতে থপ করে বসে পড়লো। শরীর টা ভীষণ ক্লান্ত। বিগত কয়েকটা দিনে না খাওয়া না ঘুম কোনো টাই হয়নি ঠিকভাবে। হসপিটাল থেকে অফিস, অফিস থেকে পৃথকের অফিস এই ছোটাছুটিতেই দিনগুলো কেটেছে। অভিমন্যু জানে ও না গেলেও পৃথকের কাজে কোনো অসুবিধে হবে না তবুও মনের কাছে বাধ্য হয়ে যায়। হসপিটালের বেডে মেহরাজের ক্ষতবিক্ষত শরীর টা দেখতে কষ্টে, রাগে ওর ভেতরটা জ্বলে ওঠে। পারেনা নোমান কে ধরে এনে পু’তে ফেলতে! আজও ছিলো হসপিটালে, কয়েকদিনের ধকলে মোহরের বোন অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই রাতে ইফাজ বা মিথিলা থাকতে না পারায় অভিমন্যু ছিলো। যত যাই হোক,মোহরকে এমতাবস্থায় একা ছাড়া কোনো ভাবেই বিবেকে সাঁই দেয়নি। ভোররাতে যখন মোহর কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসে বলল মেহরাজের জ্ঞান ফিরেছে, ওর শরীর টা এখন অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত তখন কী একটা শান্তি পেয়েছে এটা হয়তো কোনো ভাবেই প্রকাশযোগ্য নয়। তাই তো ফেরার পথে মেহরাজের নাম করে প্রার্থনা করে এসেছে ঠাকুরের কাছে।

– ঠিক আছেন আপনি?

মেয়েলী গলার স্বরে ঘাড় তুলে তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না অভিমন্যু । শ্রীতমা এগিয়ে এসে ওর পাশে বসলো। অভিমন্যুর মলিন মুখটা দেখে কেমন ভয় ভয় করছে৷ ওদিকে সবটা ঠিক আছে তো! কেমন একটা দুঃশ্চিন্তার বেড়াজালে আঁটকে গেলো ভেতরটা। অভিমন্যুর কাঁধে আস্তে করে হাতটা রেখে জিগ্যেস করলো,

– এতো সকালেই চলে এলেন যে আজ! ওদিকে সব ঠিক আছে তো? মোহর…মেহরাজ দাদা কেমন আছে ওনার..

বাকিটা সম্পূর্ণ করার আগেই খুব অপ্রত্যাশিত একটা কাজ হয়ে গেলো। আচানক অভিমন্যু শ্রীতমাকে ঝাপটে ধরে ওর কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে দিলো। ওর এমন টালমাটাল অবস্থাটা শ্রীতমার দুঃশ্চিতার শেকলটা আরও দৃঢ়তর করে তুললো। তবুও ভেতরের উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা সামলে অভিমন্যুর পিঠে হাত রেখে ধীরে ধীরে বুলিয়ে দিয়ে বলল,

– কী হয়েছে! বলুন আমায়?

– স্যারের জ্ঞান ফিরেছে শ্রী! স্যার এখন বিপদমুক্ত।

যেনো পরম শান্তির আবেশে চোখ দু’টো বুজে এলো শ্রীতমার। দু’হাতে আরও যতনে ভালো করে জড়িয়ে ধরলো অভিমন্যুর ভারী শরীরটা। ওর পিঠে সান্ত্বনা, যত্নময়ী স্পর্শ বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

– লাখো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি উপরওয়ালা কে৷ প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। বুক থেকে ভারী একটা বোঝা নেমে গেছে।

অভিমন্যু জবাব করলো না। ঝোকের বশে আবেগে ভেসে শ্রীতমাকে জড়িয়ে ধরলেও পরক্ষণে যে জড়তা টা জেঁকে ধরেছিলো তা শ্রীতমার স্পর্শে কেটে গেছে। ও ভেবেছিলো হয়তো শ্রীতমা গুটিয়ে নেবে নিজেকে, আড়ষ্টতা বোধ করবে। কিন্তু শ্রীতমার এই সহজ আচরণ টায় ভীষণ ভালো লাগা কাজ করলো অভিমন্যুর, ওকে জড়িয়ে ধরেই চোখ বুজে রইলো। একটুও ছাড়তে ইচ্ছে করছে না, এমনিতে যতই এড়িয়ে চলুক এটা তো সত্য যে মেয়েটাকে ও ভালোবাসে!

সময়ের রেলগাড়ী বিরামহীন, ছন্দপতনহীন, অবিরাম যাত্রা চলতেই থাকলো। একে একে আবহাওয়ার বাতাসে গা ভাসিয়ে তুলোর মতো উড়ে গেলো কতগুলো দিন,সপ্তাহ, মাস। বহমান ধারার নীরব স্রোতে এগিয়ে গেলো মানুষ গুলোও। আর তাদের মাঝের মান-অভিমান, ভালোবাসা, সম্পর্কের দাঁড়িপাল্লা। শ্রীতমা আর অভিমন্যুর বিয়ের চারটা মাসের ও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এক একটা দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে ওদের অভ্যন্তরীণ জড়তা,আড়ষ্টতা কাটিয়ে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক টুকুর রঙিন ঝুড়িটা দুজনে মিলে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। মাধুর্য ব্যানার্জি ও তার স্বামীর ইচ্ছে, স্বপ্নকে পূরণ করে ওরা দুজনে একসঙ্গে একই ছাদের নিচে কাছাকাছি পাশাপাশি থাকতে শুরু করেছে৷ মেহরাজ এখন প্রায় পুরোপুরি সুস্থ, তবে অবস্থান টা পালটেছে৷ হসপিটাল থেকে আর ও বাড়িতে ফেরেনি ওরা পৃথকের ফ্ল্যাটের পাশেই নিজের জন্য একটা ফ্ল্যাট নিয়েছে। ইচ্ছেটা পৃথকের৷ মেহরাজের অসুস্থতায় মোহরকে একা ওর সাথে দূরে রেখে ভরসা পাইনি। এই মাসগুলোয় মোহর ওর সযত্ন সেবায় মেহরাজকে একটু একটু করে সুস্থ করে তুলেছে। ভাঙা হাতটা এখন সংকোচন-প্রসারণক্ষম। মোটামুটি ঠিকঠাক বলা যায়, পায়ের ফ্র‍্যাকচার টাও এখন পূর্বের ন্যায়। মাথার পাশে চোট,গালের পাশে সব জাগায় ক্ষত শুকিয়েছে। গোটা মাস চারেকের বেড রেস্ট কাটিয়ে এখন প্রাত্যহিক জীবনের পরিস্থিতিতে আবারও ফেরার পালা একটু একটু করে। এরমধ্যে যে পরিবর্তন টা সবচেয়ে বেশি চোখে বাঁধার মতো তা হলো মোহর। সাতমাসের শেষ দিকে ভরা পেট টা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভবিতব্য ভেবে যা কিছুর স্বপ্ন বুনে এসেছে সেই সময়টা এখন এক্কেবারে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। মেহরাজ কাজের বাহিরে সারাটা সময় কাটায় মোহরের সাথে। আগত ব্যক্তিটার জন্য সারা রাজ্যের তোড়জোড় ওর! সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠা, উত্তেজনাটা মেহরাজের৷ সাধারণত গর্ভাবস্থায় মায়েদের মধ্যে সন্তানকে ঘিরে যে চাঞ্চল্য,যত্ন, উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায় তার পুরোটাই মেহরাজের চেহারায় প্রতিফলিত হয়। তবে না চাইতেও ধামাচাপা পড়েছে এই কালো অধ্যায় টা যার রচয়িতারা এখনো খোলা আকাশে,মুক্ত বাতাসে প্রাণ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নোমানকে এদেশের আনাচে কানাচে কোথাও পাইনি পৃথক। ও যে সেই রাতেই দেশ ছাড়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে কাজ টা ঘটিয়েছিল তার সন্দেহ দৃঢ়তর হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শান্ত পশুর মতো থমকে আছে মেহরাজ, স্থির হয়ে আছে ওর সমস্ত উদ্দেশ্য আর পরিকল্পনা। যাতে খুব আশ্চর্যজনক ভাবে মোহর ও দ্বিরুক্তি করেনি। চুপচাপ মেহরাজের হাত ধরে পূণরায় পূর্ববর্তী জীবনে জড়িয়েছে । ওদের এভাবে থমকে যাওয়া,যথেষ্ট প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও শান্ত বনে যাওয়াতে যথেষ্ট হতবাক হয়েছে মুর্তজা ভাইয়েরা। তবে আগ বাড়িয়ে বিপদের মালা গলায় পরবে না বলেই ওরাও নিজেদের দূরে রেখেছে, আড়ালে রেখেছে। কারণ প্রতিটি প্রয়ংকারী ঝড়ের আগেই তো এমন শান্ত বাতাবরণ দেখা যায় কী না!
…..

– আপি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করাবি, আমি কী একাই চলে যাবো নাকি!

– উফ দাঁড়া তো সাঞ্জে। এই তোয়াটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। একে জামাটা পড়িয়েই আসছি। তুই দ্যাখ নাজমা খাবার গুলো ক্যারিয়ার এ ঠিকঠাক তুলেছে কী না

সাঞ্জে বিরক্তিতে চ জাতীয় শব্দ করে নিচে নেমে এলো। ও হেলেদুলে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে তাথই ও তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে এলো মেয়েকে কোলে নিয়ে। সাঞ্জেকে এখনো সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চ জাতীয় শব্দ করে বলল,

– অপদার্থ একটা। এইটাকে ধর, আমি দেখে আসছি।

বলে তোয়াকে ওর কোলে ধরিয়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা চালিয়ে এগিয়ে গেলো। ব্যস্ত স্বরে ডেকে বলল,

– নাজমা খালা! হলো তোমার গোছগাছ..

কথাটুকু এগোনোর আগেই কেমন বিব্রত মুখে ভ্রু কুঁচকে নিলো। কেমন সন্দিহান গলায় বলল,

– তুমি এখানে কী করছ?

কেমন একটা আকস্মিকতা ভেসে উঠলো মালার চোখেমুখে। দৃষ্টিও কেমন অপ্রস্তুত, আমতা-আমতা করে কিছু বলার আগেই তাথই বলল,

– নাজমা কোথায়?

– সে ব্যাগ আনতে গেছে ওই ঘরে। আমি পানি নিতে এসেছিলাম দাদীর জন্য। আপনি যখন এসে গ্যাছেন আমি তাহলে যাচ্ছি।

বলে বেরিয়ে গেলে তাথই এগিয়ে এসে খাবার গুলো সব ঠিকঠাক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেই গুছিয়ে নিলো। খাবার গুলো ক্যারিয়ার এ ভরে সাঞ্জে আর তোয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। খাবার গুলো সেই সকাল থেকে দু বোনে মিলে রান্না করেছে আজ, মোহরের জন্য। মোহরকে প্রায় ই দেখতে যায় দুজনে আর এটা ওটা রান্না করে নিয়ে যায়। এ বাড়িতে কারো সাথেই ঠিকঠাক কথা বলেনা। বাবা মায়ের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতেও বিবেকে বাঁধে। যে মানুষ গুলোর টাকা সম্পদের লোভে এতো এতো পাপে পাপিষ্ঠ তাদের সাথে কীসের কথা! ওই বাড়িটায় পড়ে আছে শুধুমাত্র শাহারা বেগমের জন্য। বয়স আর রোগের ভারে বৃদ্ধা প্রায় বিছানাগত। তাকে সেবা শুশ্রূষা করার সমস্ত দায়টুকু দু বোনেই পালন করে।

•••

– আপনি কী কোথাও বেরোচ্ছেন এখন?

মেহরাজ ঘরে ঢুকতেই প্রশ্ন করলো মোহর। জবাব পেলো না তৎক্ষনাৎ। মেহরাজ ক্ষীণ হেসে এগিয়ে এলো। বিছানায় দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে আছে মোহর। পরনে পা সমান গোল জামার মতো একটা পোশাক। হালকা গোলাপি রঙের সুতি জামার সাথে সাদা রঙের ওড়না পেঁচিয়েছে। গোলগাল মোহরকে বেশ লাগে মেহরাজের। সারাদিন ই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
মেহরাজ এগিয়ে এসে ফ্লোরে বসে খাটে বসে থাকা মোহরের পেটের কাছে মুখটা এগিয়ে দীর্ঘ একটা চুম্বন দিলো। অতঃপর বলল,

– আপাতত পঙ্গুত্ব বরণ করে ঘরেই তো লেপ্টে আছি৷ যাবো আর কোথায়

মোহরের রাগ হলো ভীষণ। মুখটা ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মোহরের উত্তর না পেয়ে মেহরাজ মাথা তুলে তাকালে মোহরের ভার করে রাখা মুখটা দেখে আলতো হেসে উঠে পাশে বসল। গর্ভাবস্থার এই লম্বা সফরে মোহরের শারীরিক সহ আচরণগত পরিবর্তন ও হয়েছে। সবসময় চুপটি থাকা মেয়েটা কথায় কথায় রেগে যায়,মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে খাওয়া বাদ দিয়ে। মেহরাজ মনে মনে বেশ উপভোগ করে মোহরের চেহারাটা। কিন্তু প্রকাশ করে না।

– এদিকে তাকাবেন না?

মোহর ভ্রুক্ষেপ না করলে মেহরাজ মুখটা এগিয়ে নিয়ে বসিয়ে দিলো মোহরের গালে। নরম তুলতুলে গালটায় নিজের গালটা ঘষে দিলে মোহর কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,

– সরুন বলছি। একদম আদিক্ষেতা করবেন না। যেই কথাটা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি সেটাই বারবার বলবেন যখন তো কথাই বলার দরকার নেই।

মেহরাজ নিঃশব্দে বুঝে নিলো মোহরের অভিমান। নিজেকে পঙ্গু বলে মশকরা করা টা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় মোহরকে। মুখে যতই রাগ দেখাক ওর ভালোবাসার তীব্রটা টুকু আজীবন বুঝেও হয়তো শেষ করা যাবে না। যেই মানুষটা ওকে ঘৃণা করবে বলে ছেড়ে এলো সেই কিনা রাতের পর রাত জেগে কত যত্নে, আদরে সেবা করলো। যত্নময়ী আদরে আগলে মেহরাজকে সুস্থ করে তুললো। মোহরের প্রতিটি যত্ন, আদর, ভালোবাসার স্পর্শ মেহরাজকে ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়ে দেয় ওর পাগলাটে ভালোবাসা টা ভুল মানুষের জন্য নয়। যেই মানুষটাকে ও প্রতিটি ভাষায়,যত্নে,ভালোবাসায় ভালোবাসে। সেই মানুষটা ওকে এক্কেবারে নিঃশব্দে ভালোবাসে। মেহরাজ একটা হাত বাড়িয়ে মোহরকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,

– আমি একা বলে খুব জ্বালাচ্ছেন। কথায় কথায় রাগ করে মুখি ফুলিয়ে বসে থাকেন। একবার আমার বাহার আসুক, তখন আমরা দুজন এক হয়ে যাবো

– আর আমাকে আলাদা করে দিবেন?

ভীষণ আদুরে,অভিমানী শোনালো মোহরের গলাটা। মেহরাজ কণ্ঠের খাদ নামিয়ে বলল,

– মোটেও না! বিবিজান ছাড়া যে আমার একেবারেই চলে না!

.
.
.
চলমান

#Humu_❤️

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৬২
#দ্বিতীয়_খণ্ড
#হুমাইরা_হাসান

বিলাসবহুল, আভিজাত্যের ছোঁয়াপূর্ণ ফ্ল্যাট’টা জুড়ে হাসি,কলরবের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে ঝলমলে পরিবেশ জুড়েছে। কতশত মর্মবেদনাময় প্রহর গুলো পেরিয়ে আজ যেন খুশিয়াল মুহুর্ত গুলো শিউলি ফুলের মতো ফুটেছে। মোহর আর মেহরাজের ঘর জুড়ে আজ আপন মানুষ গুলোর আমেজ। যারা ওদের ভালো মন্দের প্রতিটা মুহূর্তে, ক্ষণে ক্ষণে আগলে রেখেছে। পাশে থেকে ভালোবেসেছে, ওদের সুখে দুঃখে নিজেদেরকে সামিল করেছে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভকামনা,দোয়া প্রার্থনার বুলি আউড়েছে। ইফাজ-মিথিলা, অভিমন্যু-শ্রীতমা, পৃথক-তাথই, সাঞ্জে সক্কলে মিলে আজ মৌজ-মস্তির আসর বসিয়েছে।
সময়টা জানুয়ারীর মাঝামাঝি, গায়ে কাটা ফোটানো হীম এখন শূলের মতো বিঁধে৷ মোহর গায়ে খয়েরী রঙের একটা শাল জড়িয়ে বসে আছে। ওর পাশটা জুড়িয়ে বসেছে সাঞ্জে,শ্রীতমা। মিথিলা আর তাথই মিলে খাবারের গোছগাছ করছে। ছেলেরা বসার ঘরটায় বসে আছে নিজেদের আড্ডা-আলোচনাতে মশগুল হয়ে।

– আচ্ছা ভাবী কুচুপু টা কী পেটের ভেতর নড়াচড়াও করে?

– আরেকবার এসব উদ্ভট নামে ডাকলে তোর কানের কাছে গরম বাতাস পড়বে সাঞ্জে

নিজের জবাবে এহেন ধমকানিতে ভ্রু যুগল না চাইতেও কুচকে এলো। মন ছোট করে ফেললো। ও তো মোহর কে জিগ্যেস করেছিলো তাথই টা এভাবে না বকলেও পারতো!

– থাক না। ওই তো! বলুক

– কোনো দরকার নেই রে শ্রী এসব উল্টো পালটা নামে ডাকার। তোয়াটাকে ও চমচম বলে ডেকে এমন অবস্থা করেছে এখন তোয়া বললে শোনে না ওকে চমচম বললেই রেসপন্স করে।

যেন বড়সড় একটা অভিযোগ করে বসলো তাথই। শ্রীতমা প্রত্যুত্তরের বদলে ফিক করে হেসে দিলো। সাঞ্জে নিজেও হেসে উঠলো গাল টিপে। তাথই মোহরের হাতে পায়েসের বাটিটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,

– তোমার না পায়েস খুব পছন্দ, তার জন্যেই তো করে এনেছি,নাও।

বলে একটা বাটি মোহরের হাতে ধরিয়ে বাকি দুটো সাঞ্জে আর শ্রীতমাকে দিয়ে আবারও বেরিয়ে গেলো। রান্নাঘর তখন ফাঁকা। মিথিলা গেছে ছেলেদেরকে দিতে৷ তাথই একা একা বাসন গুলো সাজাচ্ছিল। ব্যস্ত হাতটা থালগুলো সাজাতে সাজাতে হুট করেই থমকে গেলো, অপ্রতিভতা সামলাতে চোখ দু’টো বুজে এলো৷ পরক্ষণেই নিজেকে সামলে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বলল,

– ছিহ। দিনদিন দামড়া হচ্ছে আর জ্ঞান বিবেক সব লোপ পাচ্ছে

পৃথকের হাসিহাসি মুখটা নিমিষেই আধার হয়ে গেলো। তাথইকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে যতটা মজা পাচ্ছিলো এখণ ঠিক ততটাই হতবিহ্বল হয়ে গেলো। বেশ ভার গলায় বলল,

– দামড়া? এটা আবার কেমন ভাষা! তুমি এসব আমাকে বলছ? আমি দাম..

শব্দটা যেন খুব নিন্দনীয় ঠেকলো পৃথকের নিকট। পুরোটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। তাথই কপালে মোটা ভাঁজ ফেলে বলল,

– শুধু দামড়া’ই না বুড়ো ও

– কিসব বলছ আশু! আমাকে কোন দিক থেকে বুড়ো মনে হয় তোমার? কত্ত হ্যান্ডসাম আমি। এখনো মেয়েরা আমাকে দেখে ফিদা হয় জানো? এই তো সেদিনও রেস্টুরেন্টে একটা মেয়ে প্রপোজ করে বসলো।

বাঁকা হেসে কথাগুলো বলতেই তাথই চরম অবজ্ঞা করে বলল,

– এ্যাহ! এসেছে হ্যান্ডসাম। ত্রিশের কোঠা তো আজ পেরোয়নি। কদিন বাদে মনে হয় চামড়া গুলোও কোঁচকাবে।

তাথইয়ের কথাগুলো শুনে পৃথক নিজের গালে অবিন্যস্ত হাত বোলালো। ওর বিভ্রান্ত চেহারাটা দেখে তাথই খুব মজা পেলো মনে মনে। অন্যদিকে ফিরে মুখে হাত চেপে হেসে সরে যেতে নিলে পৃথক খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরে বলল,

– যাচ্ছো কোথায়? আর কত যাবে হু! তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকেই আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। বুড়ো বলে খোটা দিচ্ছ আর বুড়োকে সামলানোর জন্য আসতে পারছ না?

– কোথায় আসব?

– আমার কাছে

– কেনো যাব?

– ভালোবাসতে

পৃথকের লাগামহীন কথার শেষ জবাবটি আর দিতে পারলো না তাথই। মুখ জুড়ে লজ্জার প্রলেপে ঢালা পড়লো কপট দেখানো রাগ গুলো। পৃথক মাঝামাঝি দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল,

– ওদিকে দ্যাখো! সবাই সবার নিজের মানুষ গুলোকে নিয়ে আছে। সবাই কাছাকাছি, পাশাপাশি, সাথে-সাথে আছে। অথচ আমি তুমি দূরে দূরে। আর কতো অপেক্ষা করাবে! চলো না বিয়ে করি,আমার আর এই দূরত্ব ভাল্লাগে না আশু!

যেমন ছোট্ট বাচ্চা খেলনার জন্য আবদার করে। যেই আবদারে অনুরোধ, অনুনয় নয় বরং থাকে তীব্র অধিকারবোধ আর নিজের পাওনা টা অর্জন করে নেওয়ার উৎকণ্ঠা – ঠিক সেভাবেই যেন নিজের অধিকার টা নিজের বাহুডোরে গুটিয়ে নেওয়ার আবদার রাখলো পৃথক ও। তাথই লজ্জা,জড়তা,ভালোবাসা মিশ্রিত ছলছল চোখে তাকালো পৃথকের দিকে। যে চোখের ভাষা বড্ড স্পষ্ট, সুবোধ্য। পৃথক ওর গালে হাত রেখে বলল,

– কতশত বাঁধা পেরিয়ে আমরা আজ সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে। চলোনা এক হয়ে যাই। আমি তুমি আর আমাদের মেয়েটাকে নিয়ে। আর দেরী কোরোনা আশু!

চোখ ভরে আসে নোনাপানিতে,প্রাণপণে আড়াল করতে চাই তাথই। পৃথকের মুখটার দিকে তাকিয়ে যতটা অবাক হয় ততটাই ভালোবাসা, মুগ্ধতায় অভিভূত হয়। মানুষটা নিজের যোগ্যতায়, কত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামলে আজ নিজের স্থানটা উচ্চে নিয়েছে, পাকাপোক্ত করেছে অথচ মানুষটার মধ্যে কোনো অহমিকা নেই নাইবা আছে কোনো দাম্ভিকতা। শত ব্যস্ততা সামলেও নিজেকে জানপ্রাণ দিয়ে উজাড় করে দিচ্ছে, প্রতিটা প্রতিকূলতাকে নিজের আপন মনে করে ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লোকটা যেই স্থানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চাইলেই ওর চেয়ে হাজারো গুণ ভালো, প্রতিষ্ঠিত, সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে নিতে পারে। সেখানে ও কী না পড়ে আছে একটা ডিভোর্সি মেয়ের জন্য যার কিনা বছর খানেকের একটা মেয়েও আছে! তাথই নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে৷ প্রতিবার আরও বেশি করে ভালোবেসে ফেলে মানুষ টাকে। আবেগান্বিত হয়ে পৃথককে জড়িয়ে ধরলো তাথই খুব আকস্মিক ভাবেই। স্তম্ভিত পৃথক স্মিত হেসে আলতো ভাবে হাতখানা রাখলো তাথই এর পিঠে।

– আশ্চর্য! কী শুরু করেছ ইফাজ? এভাবে পিছু পিছু ঘুরছ কেন?

– আজকে না তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে মিথি, ইচ্ছে হচ্ছে আরও একবার বিয়ে করে বাসর…

বাকিটুকু বলার আগেই সামনের দৃশ্যে চোখ পড়লে অকস্মাৎ পা থামিয়ে খপ করে মিথিলার হাতটা চেপে ধরলো। মিথিলা রাগান্বিত চোখে তাকালেও ইফাজের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে চোখ খিঁচিয়ে নিলো। খুব একটা অপ্রীতিকর অবস্থায় দুজন উপস্থিত হয়েছে ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই ইফাজ মিথিলার কোমরের ফাঁকে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ওকে সরিয়ে আনলো। মিথিলার দুহাত জুড়ে কাপের ট্রে। তাই চাইলেও ছাড়িয়ে নিতে পারলো না। পৃথক-তাথই ওদের এহেন মুহূর্তে অন্যদুটো মানুষের আগমনের কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়ার আগেই সরে এলো ।

– ছাড়ো, ইফাজ ছাড়ো বলছি!

– চুপ! কথা বোলো না।

ইফাজ রান্নাঘর থেকে দূরে পাশেই একটা বারান্দার দিকে নিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে বলল,

– নিজে তো বর কে সময় দিচ্ছ না। অন্যরা প্রেম করছে সেসবেও বাগড়া দিতে হবে।

মিথিলা কপট রাগ দেখালেও কিছু বলল না। ইফাজ মিথিলার অপ্রস্তুত চেহারাটা দেখে মুচকি হেসে গালটা এগিয়ে ছোট্ট একটা চুমু দিয়েই সরে এলো। মিথিলা ঘরে এসে মোহরের পাশটায় বসলে মোহর বলল,

– বুবু উনি কোথায়?

– কে?

মিথিলা যেন বুঝেও বুঝলো না মোহরের ইঙ্গিত। অবুঝের ন্যায় প্রশ্নটা করে বসলো। মোহর আবারও বলবে তন্মধ্যে সাঞ্জে বলে বসলো,

– আরে কুচুপুর বাবার কথা বলছে ভাবী। বুঝছ না সেই উনি!

সাঞ্জের কথার ধরণ আর বলার সুরে উপস্থিত মানুষ গুলো হেসে ফেললো সশব্দে। মোহর মুচকি হেসে আস্তেধীরে নড়েচড়ে খাট থেকে নামতে লাগলে শ্রীতমা জিগ্যেস করলো,

– কোথায় যাস?

– তার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে। হাতে করে না দিলে তো কখনোই খাবেন না৷

বলে ধীরে সুস্থে সন্তপর্ণে এগোলো টেবিলের ওপরে রাখা বক্স টা হাতে নিয়ে। বসার ঘরের দিকে পা রাখলে মোহরের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটার চোখ খুব দ্রুতই খুঁজে নিলো তাকে তলব করা মানুষটিকে। কোনো শব্দহীনায় উঠে এলে মোহর বক্স টা রেখে ওষুধ গুলো বের করতে করতে বলল,

– আমি এসে না দিলে তো কখনোই নিজে নিয়ে খাবেন না। আশ্চর্য শরীর টা কী আমার!

– গোটা মানুষটাই তো আপনার।

মোহর জানে ঠোঁট কাটা মানুষটার সাথে কথা এগিয়ে লাভ নেই। তাই নিজের কাজটা সেরে সরে এলো৷ ঘরে এলে তাথই কেও বসে দেখে বলল,

– মায়ের শরীরটা কেমন আছে আপা?

যেন খুব অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ব্যাপারে বলে ফেলেছে৷ তাথইয়ের মুখটা কালো হয়ে এলো নিমিষেই। কেমন মলিন মুখে বলল,

– যতবার তোমার এখানে আসি বাড়ি গেলে কত কথা জিগ্যেস করে অস্থির হয়ে যায়। তুমি কেমন আছ, ভাই কেমন আছে, তোমার শরীর কেমন, এটা যেন খেতে বলি ওটা যেন করতে বলি– আরও কত কী৷ এখানে আসছি শুনে কত উচ্ছলতা তার চেহারায়।

বলে একটা দম ছেড়ে পূনরায় বলল,

– বড়মা তোমাদের দেখার জন্য মরিয়া হয়ে আছে গো। শুধু আসার সাহস পায়না বেচারি। নিজেকে অপরাধী ভেবে গুটিয়ে থাকে।

– মাকে বলবে তার ছেলে আর নাতনী তাকে দেখতে চাই। পরের বার যেন তাকেও পাই।

•••

ছিমছাম পরিষ্কার গোছানো ঘরটায় আশপাশে অসংখ্য কাঁচের শোপিস৷ বিশাল বাড়িটায় সার্ভেন্ট বাদে মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম। ফায়াজ প্রায় মাস খানেক পর পা রাখলো বাড়িটায়। তাও নিজ ইচ্ছেতে নয়, এক প্রকার বাধ্য হয়েছে।

– স্যরি! অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম না?

– না না। খুব বেশি সময় না।

ভদ্রমহিলা এসে বসলেন ফায়াজের একদম সামনাসামনি। ফায়াজ হাঁটুর উপর দুহাতের কনুই ভর দিয়ে বসে আছে সোফাতে। এরই মাঝে একজন সার্ভেন্ট দু’কাপ কফি রেখে গেলো সামনে৷ তানজিলা চৌধুরী তথা ফায়াজের মামী কফির একটা কাপ ফায়াজের হাতে ধরিয়ে আরেকটা নিজের নিয়ে খুব নরম গলায় বলতে শুরু করলেন,

– আমি জানি তোমাকে খুব বেশিই বিরক্ত করে ফেলছি। কিন্তু আমি কোনো রাস্তা পাচ্ছি না বাবা। মেয়েটা আমার দিনদিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ওকে বাঁচাবো কী করে আমি!

কথাগুলোর ভাঁজে ভাঁজে বিষন্নতা, দীর্ঘশ্বাসের প্রবল ভারটা দু’হাত দূরে বসে থাকা ফায়াজের বোধগম্যতার বাহিরে রইলো না। হাতের কাপটায় আঙুলের চাপ বসিয়ে নতমস্তকে শুনতে থাকলো তানজিলা চৌধুরীর কথাগুলো।

– প্রায় চার মাস হয়ে গেলো মেয়েটা আমার বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। রাগ,জেদ,অহংকার, একটা মানুষকে পাওয়ার আকাঙ্খা ওকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। তুমি ওকে বাঁচাও বাবা। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করছি

চোখ দু’টো ইতোমধ্যেই পানিতে ভিজে এসেছে ভদ্রমহিলার৷ ফায়াজ কাপটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে ব্যস্ত স্বরে বলল,

– অনুরোধ কেনো করবেন মামী। ভাই হিসেবে আমারও তো দ্বায়িত্ব ওকে সুস্থ করার। কিন্তু এখানে ওর নিজের চেষ্টা টা সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। যেখানে ও মুভ অন করতে চাই না সেখানে..

– লাগবে না ওর চাওয়া। ওর চাওয়ারকে প্রাধান্য দিয়ে দিয়েই আজ এই অবস্থা। এখন যা হবার আমার ইচ্ছেতেই হবে। না ও, না ওর বাবা। কারো মতামত চাইনা আমি।

তানজিলা চৌধুরীর গলায় তেজ, আক্রোশ, রাগ স্পষ্ট। বাবা আর মেয়ের জন্য অতিষ্ট মনে আর কোনো আপোষ করবার ইচ্ছে রাখেনা। ফায়াজ স্থবির হয়ে চেয়ে বলল,

– কী করতে চাচ্ছেন মামী?

– বিয়ে। ওকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে চাই আমি।

অনতিবিলম্বেই জবাব দিলেন৷ জড়তাহীনায় নিজের মতামত প্রকাশ করে ক্ষান্ত হলেন না। আবারও বলতে লাগলেন,

– অনেক হয়েছে ওর মনমর্জি। এখন আমি যা বলব তাই হবে। শুধু শুধু পরের ছেলের দোষ ধরে থেকে তো বসে থাকলে হবে না। মেহরাজ কখনোই ওকে নিয়ে আগ্রহী ছিলো না। তিয়াসাকে আংটিও পড়িয়েছেন মিসেস আম্বি। সম্পর্ক এগোনোর কোনো ধাপেই মেহরাজের কোনো ভূমিকা ছিলো না।সেখানে ও নিজ ইচ্ছেতে একটা মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করলে ওকে দোষারোপ করবার কোনো অধিকার তো আমাদের নেই। যাদের কাছে উত্তর চাইবো তারাই নিরুত্তর। শুধু নিরুত্তর নয় দায়সারা ও। আর তারা নাহয় পর, তিয়াসার নিজের বাবা! ওনার আচরণে আমি অবাকের সীমা ছাড়াচ্ছি।

বলেই ঘনঘন দম ছাড়লেন৷ রাগের চোটে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে এসেছে। ফায়াজ নিশ্চুপতা কাটিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল,

– তিয়াসা কোথায়?

তানজিলা চৌধুরী চোখের ইশারায় ফায়াজকে স্থানটা দেখিয়ে দিলে ও শব্দহীনা উঠে এলো। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে নব মুচড়ে ঢুকলো অধো অন্ধকারময় ঘরটায়। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বসলো তিয়াসার পাশে। ঘরে ছোট্ট একটা বাল্ব জ্বলছে৷ তার আলোয় তিয়াসার ফ্যাকাসে মুখটা স্পষ্ট দৃশ্যমান। খুব সন্তপর্ণে কপালে হাতের উল্টোপাশটা ঠেকিয়ে দেখলো। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো ফায়াজের৷ আফসোস করবে না দুঃখ পাবে তা বুঝতে পারেনা। মেয়েটাকে ও কতশত বার বুঝিয়েছে জীবনে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায় না। হাজারো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিশ্রিত একটা ঠিকানাহীন লড়াইয়ের নামই হলো জীবন। সেখানে কোন মোড়ে কোন অনুভূমিক অপেক্ষা করছে তা কারোই জানবার সাধ্যি নেই। শুধু জীবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে মানিয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় হাজারো হারানোর বেদনা,সুর। ঠিক যেমনটা ফায়াজ মেনে নিয়েছে। মোহরটাকে আজ বছর পাঁচেক ধরে ভালোবাসে, অথচ হুট করেই জীবন অনাকাঙ্খিত একটা মোড় ঘুরিয়ে আজ ওকে কতটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে ফায়াজ শুধুমাত্র একজন পরপুরুষ মোহরের নিকট। মোহরের চোখের দিকে তাকালে শুধু একটা মানুষেরই প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ওর মন-প্রাণ জুড়ে শুধু একটাই নাম একটাই চেহারা। যাকে ও প্রতিটি ক্ষণ মুহুর্ত নিজের সমস্তটা উজাড় করে ভালোবেসে যাচ্ছে। তাই তো ফায়াজ সরে এসেছে,নিজের নীরবতাকে নিস্তব্ধতা করে ফেলেছে। বুকের পাজরের হাড়গুলো বিদীর্ণ হলেও ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজ থেকে নিঃসৃত হয়নি এক একক শব্দও। ও যাকে ভালোবাসে তাকে ভালো থাকতে দিয়েছে। ভালোবাসা তো কোনো প্রতিযোগিতার মেডেল নয় যে লড়াই করে অর্জন করে নিতে হবে।বরং ভালোবাসা একটা নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ফুলের বাগান। যার এক একটা ফুল খুব যতনে,আদরে ফোটাতে হয়। সেখানে গায়ের জোর বা জেদের ছোঁয়া থাকে না। তাই তো নীরবেই সরে এসেছে ফায়াজ। যাকে ভালোবেসেছে তাকে নিজের করে নেওয়ার লড়াইয়ে কোনো খেলার বস্তু বানিয়ে অপ্রীতিকর অবস্থায় রাখতে চাইনি। নিজের নিখাঁদ ভালোবাসাটাকে সবচেয়ে নিখাঁদ জায়গাটাতেই আগলে রেখেছে, বুকের ভাঁজেই লুকিয়ে রেখেছে। শুধু রয়ে গেছে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে। যে সমস্ত প্রয়োজনে রয়ে যাবে মোহরের জন্য। পাশে দাঁড়ানোর অধিকারটুকু নাহয় নাই পেলো পেছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা তো করতে পারবে মোহরের একটা ডাকের। মোহর যতবার ডাকবে ততবারই ছুটে যাবে, এগিয়ে যাবে নিজের সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য করতে —

অথচ তিয়াসা! শত বোঝানোর পরেও মেহরাজকে অর্জন করার জেদ,হিংসাত্মক অনুভূতি গুলোকে মন থেকে সরাতে পারেনি। মেহরাজের অ্যাক্সিডেন্টের খবর শোনার পর থেকে মরিয়া হয়ে গেছিলো ওকে দেখার জন্য। কোনো এক অজানা কারণ যার হেতু ফায়াজের জানা নেই তিয়াসার বাবা ওয়াকিফ চৌধুরী কোনো ভাবেই মেহরাজের কাছে যেতে দেয়নি ওকে। বাবা মেয়ের মাঝে খুব গোপন একটা কারণেই বহু কথা কাটাকাটি থেকে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়েছে। একটা পর্যায়ে এসে তিয়াসাকে ওর বাবা ঘরবন্দী করে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। আস্তেধীরে মেহরাজ যখন সুস্থ হলো তখন তিয়াসা ছুটে গেছিলো আব্রাহাম ম্যানসনে। তবে সেখানে ওদের না পেয়ে একা একাই খুঁজেছে। পায়নি,কেও দেয়নি ঠিকানা। আত্নহত্যার চেষ্টাও করেছিলো মাস দুয়েক আগে৷ তারপর থেকেই নিজের শরীরের সমস্ত চঞ্চলতা, শক্তি হারিয়ে এভাবেই ঘরবন্দী হয়ে আছে। ফায়াজ অনেক বুঝিয়েছে অথচ মেয়েটা বোঝে না। একটাই ধারণা ওর মস্তিষ্কে কাঁটার মতো বিঁধে আছে, আর তা হলো সবাই ওকে ঠকিয়েছে। ধোকা দিয়েছে, প্রতারণা করেছে।

দীর্ঘ একটা প্রশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ফায়াজ। ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেই তানজিলা চৌধুরী এসে ওর হাত ধরে বলল,

– তুমি তো অ্যাব্রোডে ফিরে যাচ্ছ নিজের বাবা মায়ের কাছে?

ফায়াজ নিঃশব্দে ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। এই সিদ্ধান্ত টা একান্তই ওর নিজের। এদেশে থাকার আর কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ অবশিষ্ট নেই। তাই আবারও ফিরে যাচ্ছে নিজের বাবা মায়ের কাছে। এতে তারাও ভীষণ খুশি। যেই ছেলেকে এতদিন বলেও ফেরাতে পারেনি সে স্বেচ্ছায় ফিরছে এর চেয়ে আনন্দের ব্যাপার যেন আর দুটি নেই।

– একটা অনুরোধ রাখবে বাবা! তুমি তিয়াসাকে নিয়ে যাও নিজের সাথে।

তানজিলা চৌধুরীর কথায় বেশ হতবাক হলো ফায়াজ। বিব্রতকর মুখে বলল,

– আপনি তিয়াসার বিয়ের ব্যাপারে বলছিলেন!

– হ্যাঁ বলছিলাম। দেখো ওর ব্যাপারে আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে ভরসা করতে পারছিনা। তুমি ওকে তোমাকে সাথে নিয়ে যাও বাবা। বিয়ে না হোক, অন্তত স্থান পরিবর্তন হলেও ও একটু ভালো থাকবে। নতুন দেশ,নতুন মানুষ পরিবেশের ছোঁয়া পেলে এমনিতেই ওর মন ভালো হয়ে যাবে। তুমি আর নাকচ কোরো না বাবা। আমি মা হয়ে অনুরোধ করছি তোমায়!

•••

বিকেল গড়ালো প্রায়, সন্ধ্যার কালচে আভা আকাশের বুকে খুব দাম্ভিকতার সহিত আঁচড় কেটে নিজের বিস্তার ঘটাচ্ছে। ইফাজ আর মিথিলা বিদায় নিয়ে বেড়িয়েছে খানিক আগেই। রইলো অভিমন্যু আর শ্রীতমা…অভি অফিসের কিছু কাজের জন্য মেহরাজের সাথে ফাইল খুলে বসেছে৷ সমস্ত কাজ গুলো ও নিজেই দেখাশোনা করে, প্রয়োজন পড়লে নিজেই আসে মেহরাজের কাছে৷ সাঞ্জে আর তাথইকে পৃথক ছাড়তে যাবে। তাথই আর সাঞ্জে গিয়ে গাড়িতে বসলে পৃথক মেহরাজের সাথে কয়েকটা কথা সেরে ফিরবে সেই মুহূর্তে ফোন বেজে উঠলো। পৃথক দরজার নবে হাত রেখে আরেকটা হাতে ফোন ধরে কানে ধরে বলল,

– হ্যালো! পৃথক ইয়াসির স্পিকিং।

– স্যার আমি ঢাকা আন্তজার্তিক বিমান বন্দর পুলিশ অথোরিটি থেকে বলেছি। চার মাস আগে আপনি ইশতিয়াক নোমান নামের একজনের ডেটা-ইনফরমেশন দিয়েছিলেন। আজ একজন বিকেল পাঁচটার ফ্লাইটে দুবাই থেকে আসা প্লেন থেকে ল্যান্ড করেছে যাকে আপনার ইনফরমেশন অনুযায়ী সেই ছেলেটা বলেই সন্দেহ হচ্ছে আমাদের…

বাকিটুকু আর শোনা গেলো না। পৃথকের হাতটা দরজার নবেই আঁটকে গেছে। অফিসারের সাথে বেশ কয়েক মিনিট কথা সেরে তৎক্ষনাৎ ওখানকার লোকাল থানায় কল করলো। রাজীবকে টেক্সট করতে করতে এগিয়ে এসে বলল,

– মেহরাজ! নোমান দেশে ফিরেছে …

.
.
.
চলমান

#Humu_❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে