#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৪৭
#হুমাইরা_হাসান
ছয় মাস অন্তর অন্তর দুটো দূর্ঘটনা। পুরোপুরি দূর্ঘটনাও বলা যায়, ছ’টা মাস আর এর অন্তর্ভুক্ত ঘটনা গুলোর নব্বই শতাংশ স্বরচিত কার্যকলাপ। চৌকস মস্তিষ্ক খাটিয়ে পরোক্ষভাবে ঘটনা গুলোকে দূর্ঘটনায় নাম দেওয়ার ষড়যন্ত্র মাত্র।
শুরুতে বাবার মৃত্যু, তারপর থেকে অদ্ভুত সব সংঘটন। পরপর দুবার রাস্তায় ধাওয়া হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে মায়ের মরা মুখ। আকস্মিক দূর্ঘটনার চেয়েও আকস্মিক বিয়েটা।
তারপরেও কৌতূহল আর প্রহেলিকার সমাহার, এ বাড়িতে এসে প্রথমেই অদ্ভুত কতগুলো অভিজ্ঞতা আর নিজের উপর ভয়ংকর হা’তছানি। তারপর কিছু দিন বলা যায় কয়েক মাস সবটা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিক দেখানোর প্রচেষ্টা হয়তো । দীর্ঘ বিরতিতে আরও একটা আ’ক্রমণ আর এবার সামনে আসা মুখোশধারী—– সবকিছু, সবটা ঘটনার যোগসূত্র যেনো অন্যকিছু। আড়ালে দাঁড়িয়ে কলকাঠি নাড়ার হাত একটাই! দুর্বোধ্য একটা রহস্য আর বুকভর্তি অনিশ্চয়তা।
এসবের মাঝেও না চাইতেও,হাজারো সংযম সত্ত্বেও মনটা বেপরোয়া ভাবে বাড়াবাড়ি করলো। একটা মানুষের সাথে সাঁই দিয়ে ভালোবেসে ফেললো অদ্ভুত ভাবে। এমনকি নিজের সবটা সপেও দিলো তারই পদতলে। আদও কি সব ঠিক হলো! মনটা এমন কু-গাইছে কেনো তবে? অজানা কোনো এক ভয়ের স্রোত যেনো শিরদাঁড়ার মধ্য দিয়ে বয়ে গেলো। ভয় বললে ভুল হবে, একটা অনিশ্চয়তার সুর বেজে চলছে। কেনো এমন হচ্ছে! যাকে বিয়ে করেছে তার কাছে নিজেকে আজ হোক কাল হোক,সপে যে দিতে হবে এটা তো ওউ জানতো তবুও কেনো বুকটা কেঁপে ওঠে অজানা ভয়ে। বারংবার মনে হচ্ছে, কেনো মনে হচ্ছে এই প্রণয় থেকেই প্রলয় আসবে! টাইফুনের তাণ্ডবের চেয়েও বড়ো তাণ্ডবলীলা আসবে. . .
বুকের উপরের ভারী চাপটা একটু নড়েচড়ে উঠতেই সম্বিত ফিরল মোহরের, একটা স্পর্শে সকল দুশ্চিন্তা চুরচুর হলো। ঠিক কতক্ষণ ধরেই যে আকাশ পাতাল ভাবনায় মত্ত হয়ে দিন দুনিয়া ভুলে ছিলো সেটা ওর হিসেবের বাহিরে। মোহর জানালার কাঁচ থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো বুকের মধ্যিখানটা কব্জা করে আঁকড়ে ধরে থাকা মানুষটার দিকে। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট. . . নিষ্পলক চেয়ে থাকে মোহর। সেই গম্ভীর, রহস্যভরা ব্যক্তিত্ব। ভরাট কন্ঠে হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তোলা, দূর্লভ চোখটার চাহনিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেওয়া মানুষটা আজ ওর বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। কি সানন্দে, নির্দ্বিধায়, অকপটে!
এ যেনো এক স্বকীয় অধিকারবোধ, যার বদৌলতে একখানা বুকের মালিকানা এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে খুব যত্নে। মোহরের বুকের ভেতরটায় শৈথিল্যে ছড়িয়ে যায়, মখমলি অনুভূতিতে তরান্বিত হয় সমস্ত দেহখানা। ঘন-ঘন নিঃশ্বাস টা বুকের মাঝে উপচে পড়ছে, শূলের মতো বিঁধছে যেন৷ কিঞ্চিৎ নড়াচড়া করার প্রয়াস করলেও শক্তপোক্ত বাহুর বন্ধন আলগা না হওয়ায় ওভাবেই পড়ে রইলো।
মোহর খুব আস্তে,সন্তপর্ণে চিকন চিকন আঙুল গুলো গলিয়ে দিলো নরম চুলের আস্তরে। মেহরাজের ঘুম ঘুম চেহারাটা, শুষ্ক খরখরে ঠোঁট, চোখা নাক সবটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মোহর। কত শান্ত, নির্মল লাগছে চেহারাটা! নির্ভার, চিন্তাহীন ঘুম ঘুমাচ্ছে মানুষ টা। মোহরের খুব ইচ্ছে হলো নিজের ঠোঁট দুটো এগিয়ে নিয়ে ওই গাল,নাক,কপালে চেপে ধরতে। এই মুখ খানা দেখে মোহর ওর সমস্ত দুশ্চিন্তা, কালচে অতীতমুখর দুঃখ গুলো ভুলে যায়। এখন জীবন বলতে শুধুই মেহরাজ। মোহরের রুদ্ধ ছাড়া ওর তো কেও আপন হয়ে রইলো নাহ! যে খুব যত্ন করে ওকে ভালোবাসবে, ছোট্ট ছোট্ট আদরের স্পর্শে সবটুকু যন্ত্রণা, অভিমান ঘুচিয়ে দেবে। এই মানুষ টাকে ছাড়া মোহরের এখন একটা দিন ও দূর্বিষহ লাগে, বহু চেষ্টা করেও মোহর পারেনি নিজের রুহ্ আর সত্তাটার চরম বেইমানিতে বাধ্য হয়েছে এই মানুষ টাকে নিজের সমস্ত টুকু সপে দিয়ে ভালোবাসতে। কখনো স্বপ্নেও যদি এই হীরের চেয়েও বহুমূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে যায় ও কি নিয়ে বাঁচবে! কে থাকবে ওর হয়ে! এইটুকু ভাবতেই ওর ভেতরটায় যন্ত্রণার হুল বিঁধল, চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রুগুলো ঝরে পড়তে চাইলো। মোহর, ঘাড়টা কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে মুখ এগিয়ে পরপর তিনটে চুমু মেখে দিলো মেহরাজের কপালে, দুই গালে। মুহুর্ত খানেক পর নড়েচড়ে উঠলো মেহরাজ। বুক থেকে মাথাটা তুলে ঘাড় আর গলার মাঝে মুখ গুঁজে দিলো। কিয়ৎকাল ফোঁসফাঁস নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল
– ঘুমিয়ে থাকলে চুপিচুপি আদর দেন,অথচ আমি জেগে থাকলে হাজারো চেয়েও একটুখানি পাইনা। এটা কি আমার সাথে অন্যায় করা হয় না মোহ? আমারও তো অধিকার আছে সজ্ঞানে, জাগ্রত অবস্থায় বিবিজানের আদর পাওয়ার।
মোহর জবাবে মৌন থাকলো কয়েক মিনিট। অতঃপর খাটো গলায় বলল
– কখন জেগেছেন?
– যখন আপনি আমায় আদর করে দিচ্ছিলেন।
নিঃসংকোচে জবাব মেহরাজের। সমস্ত শরীরটা উদ্বেলিত হয়ে ওঠে মোহরের। কালরাত আর রাতের ঘটনা গুলো চমকে চমকে স্মৃতির মানসপটে ভেসে ওঠে। স্মৃতি বললে ভুল হবে, মেহরাজের দেওয়া প্রতিটি স্পর্শ, ভালোবাসা, আদর সবটা যেন এখনো তাজা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে। ওর প্রতিটা শব্দ, স্পর্শ, অনুভূতির প্রখরতা টুকু যেনো হরফে হরফে বুঝিয়েছে কাল।
মেহরাজ ঘাড় উঁচিয়ে হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে তাকালো। মোহরের গালে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলল
– একবার বলুন না
মোহর সমস্ত কুন্ঠাবোধ ঠেলে অস্ফুটে বলল
– কী?
মেহরাজ ওর কণ্ঠে গাঢ়ত্ব মিশিয়ে খানিক অভিমান মিশ্রিত অভিযোগ করে বলল
– আমার এতগুলো শব্দ,কথা বা ইশারা কোনোটার জবাবই তো সশব্দে আমি পাইনি। একটা বার মুখ ফুটেও তো বলুন। ভালোবাসেন না?
মোহর বিব্রত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। সজ্ঞানে এতটা কাছাকাছি থাকার অভিজ্ঞতা নিতান্তই শূন্য। মেহরাজ, ওর স্পর্শ কাল রাতভর ওর শরীরে বিচরণ করলেও এখন যেন জড়ত্ববোধ ঘিরে ধরছে মোহরকে। মানুষটার চোখের দিকে তাকালেই তো বুকটা কেঁপে ওঠে। মেহরাজ মুখটা এগিয়ে এনে ওর থুতনিতে হাত রেখে নিজের মুখোমুখি করায়, ছোট্ট ছোট্ট শব্দে বলে
– আপনার মুখ থেকে সম্পূর্ণ ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য হার হামেশা অপেক্ষা করে থাকি,চাতক পাখির মতন। একটা বার আবারও বলে দিন না
মোহর মুহুর্ত খানেক মেহরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা ঝাপটে ধরলো। মেহরাজের উন্মুক্ত বুকটাতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলো। মেহরাজ মোহরের আকস্মিক আচরণ দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মোহরের ঘাড় আর পিঠের নিচে হাত দিয়ে স্থান পরিবর্তন করে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। উৎকণ্ঠিত গলায় বলল
– মোহ? কি হয়েছে! কষ্ট হচ্ছে? বলুন আমাকে? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন?
মেহরাজের অস্থির উৎকণ্ঠিত প্রশ্নের জবাব দিলো না মোহর। বরং কান্নার দাপটে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল
– আমার কেনো এতো দুশ্চিন্তা হচ্ছে রুদ্ধ? অজানা ভয়ে আমার ভেতরটা অশান্ত হয়ে আছে কেনো? আপনি আমাকে কক্ষনো ছেড়ে যাবেন না তো? আমাকে কষ্ট দিবেন না তো? তাহলে কিন্তু আমি চলে যাবো, এতটা দূরে যাবো যতটা দূরে গেলে আমার কল্পনাও আসবে না। বলুন না, আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না? ভয়ংকর অতীত থেকে তুলে এনে আবারও ভয়ংকর অধ্যায়ে ডুবিয়ে দিবেন না তো?
মোহরের প্রতিটি শব্দ আর অশ্রু গুলো তলোয়ারের মতো বিঁ’ধলো মেহরাজের বুকে। ও মোহরকে থামিয়ে দিয়ে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলো, নরম চুলে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে ধীরে ধীরে বলল
– চুপ, কাঁদে না। একটুও কাঁদবেন নাহ। নাহ আমি কোথাও যাবো, না কখনো আপনাকে কোথাও যেতে দেবো। আপনি আমার মোহ, আমৃত্যু আমার। আপনি যেতে চাইলেও আমি দেবো না, প্রয়োজনে যেই সময় পর্যন্ত আমার কাছে ধরে রাখতে পারবো সেই সময়টাকেই আমার আমৃত্যু করে নেবো আমি।
_______________________
কাসার থালটা এক হাতে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে আসলো শ্রীতমা। পায়ে স্যান্ডেল টা গুঁজে দ্রুতপায়ে হাঁটা দিলো বাইরের দিকে। তখনই কানে আসলো পাশ থেকে একটা সুপরিচিত কণ্ঠস্বর
– ওই তো চলে এসেছে তোমাদের বউমা
শ্রীতমা না চাইতেও ঘুরে তাকালো। ঠিক হাত তিনের দূরের মেহগনি গাছটার নিচে অভিমন্যুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর সেদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো। মোহরের সামনে ওকে যা তা বলেছে, এবার যখন হাতের কাছে পেয়েছে, একটা উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে।
ধুপধাপ করে এগিয়ে গেলো শ্রীতমা ওর দিকে, কিন্তু ওকে প্রচণ্ডভাবে অবাক করে দিয়ে অভিমন্যু ভীষণ অপরিচিত কণ্ঠে, নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলল
– দেখেছো। আমি তো বলেছিলাম তোমাদের দেখলেই ও ছুটে আসবে। আরে আস্তেধীরে আসো পড়ে যাবে তো!
অভিমন্যুর কথার আগামাথা কিছুই মস্তিষ্ক অব্দি পৌঁছালো না শ্রীতমার। বিহ্বলিত চেহারাতে চোখ দু’টো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো।অভিমন্যু দু’কদম এগিয়ে এসে চাপা স্বরে বলল
– মুখটা বন্ধ করো। মাছি তো দূর হেলিকপ্টার ও ঢুকে যাবে
শ্রীতমা ক্ষুব্ধ চেহারায় নিজের ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো। ভারি অসভ্য ছেলে তোহ! একে তো…
আর কিছু ভাবা বা বলতে যাওয়ার আগেই একটা মেয়েলী গলার স্বর শোনা গেলো
– দেখি সর তো, আমাদের দেখতে দে
কথাটির উৎস লক্ষ্য করে তাকালেই একটা সুশ্রী মুখাবয়ব দেখে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো শ্রীতমার চেহারাতে। ও বিস্মিত হয়ে বলল
– আন্টি আপনি! আপনি এখানে?
মাঝারি গড়নের ফর্সা চেহারার মহিলাটার চোখে মুখেও বিস্ময়। উপচে পড়ছে এক অন্যরকম আনন্দ, তৃপ্তি বোধ। উনি এগিয়ে এসে শ্রীতমাকে ধরে বলল
– তুমি তো শ্রীতমা! এই মেয়ে। হায় ভগবান কি সৌভাগ্য আমার।
বলতে বলতেই মাঝবয়েসী একজন ভদ্রলোক ও এগিয়ে এলেন। একের পর এক পালা করে বিস্মিত হলো শ্রীতমা। এই মানুষ দুটো এখানেই ছিলো অথচ ও আগে খেয়াল করেনি! ও কিছু বলবে তার আগেই ভদ্রলোক হা হা করে হেসে উঠলো। ভীষণ আনন্দিত গলাতে বলল
– এতদিনে তোমার অকাল কুষ্মাণ্ডটা একটা কাজের কাজ করেছে মধু। এ তো সাক্ষাৎ লক্ষ্মী!
শ্রীতমা কোনো কথার মর্মার্থই বুঝতে পারলো না। এনারা এখানে তাও অভিমন্যুর সাথে! সাত পাঁচ ভেবে ভেবে কিছু বলার আর সুযোগটা হলো নাহ। হাস্যজ্বল চেহারার মহিলাটা শ্রীতমাত হাতটা ধরে বলল
– এখানে আর এক মুহূর্ত না। তুমি আগে আমার বাড়িতে চলো তো মা, ওখানে গিয়েই গল্প করবো।
– কিন্তু আন্টি?
শ্রীতমা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে,মহিলাটি প্রবল অধিকারবোধ খাটিয়ে বলল
– ওমা। এখনই আমাকে পর করে দিলে? আমার সাথে যাবে না?
কথাটার কেমন চাপা স্নেহবোধ হলো শ্রীতমার৷ ও চাইতেও নাকচ করতে পারলো নাহ, তবে ওর প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে মহিটা শ্রীতমার হাতটা বগলদাবা করে হাঁটা দিলো। খানিক এগিয়ে গিয়ে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটার ব্যাকসীটে উঠে বসলেন সাথে শ্রীতমাকেও বসালেন। ভদ্রলোক তাড়া দিয়ে বললেন
– যা কথা বাড়িতে গিয়েই হবে। এই গাধা গাড়িটা স্টার্ট দে
অভিমন্যু চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল
– বাবা!
– সাট আপ। গাড়ি ঠিকমতো চালা ঠু’কে দিস না।
অভিমন্যু প্রচণ্ড বিরক্ত হলেও জবাব দিতে পারলো না। এখন মনে হচ্ছে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেলো। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে মিররের দিকে এক পলক তাকালো। কি আশ্চর্য! ওর মায়ের সাথে মেয়েটাও গল্প জুড়েছে সমানতালে। ওকে যে অজানা অচেনা দুটো লোক ধরে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে সেরকম কোনো ভীতি,সঙ্কোচ বা বিব্রতি নেই। নির্দ্বিধায় হাসছে আর গল্প করছে মেয়েটা। ভ্রু কুচকে বিড়বিড়িয়ে বলল অভি
– এই জন্য বলে অপরের জন্য কুয়া খুড়লে নিজেকেই সেটাতে পড়তে হয়
কথার সাথেই ধপাস করে পিঠের উপর একটা চা’পড় পড়লো। বড়ো বড়ো চোখ করে বাঁ পাশটায় তাকাতেই ওর বাবা গা এলিয়ে দিয়ে বলল
– বিড়বিড় না করে সাবধানে গাড়ি চালা। তোকে দিয়ে তো ভরসা পাইনা আমি। অকালে আমাদের উপরের টিকিট বুক করে দিবি তুই।
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে মেয়েলী স্বরে খিকখিক করে হেসে উঠলো শ্রীতমা। অভিমন্যু আড়চোখে একবার পেছনে তাকিয়ে রুষ্ট মেজাজেই গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
.
পরপর তিনবার কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মোহর। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের মানুষটার দোমনায় জর্জরিত চেহারাটায় তাকিয়ে ক্ষীণ হাসলো নিঃশব্দে। ভেতরের অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তার ছাপটা উপরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মোহর আলতো স্বরে বলল
– তুমি এতো চিন্তা কোরোনা আপা। ভাইয়া ঠিক আছে
তাথই মোহরের দিকে বিব্রতভাব নিয়ে তাকালো। চেহারার অস্থিরতা ঠেলে জড়তা ভরা কণ্ঠে বলল
– আ..আমি কেনো তোমার ভাইয়ার জন্য চিন্তা করবো। আমিতো চিন্তা করছি তোয়ার জন্য। ওকে বাড়িতে রেখে এসেছি। কখন থেকে তো বেল বাজিয়েই যাচ্ছো, শোনো আমি বরং চলে যাই,দেরী হচ্ছে
বলে সরে যেতে নিলে মোহর ওর হাত ধরে বলল
– আরে আরে কি করছো? অসুস্থ মানুষ দেখতে এসে না দেখে ফিরে যাওয়াটা মোটেও ঠিক নয় আপা। অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেওয়া তাদের সেবা করা সুস্থ মানুষের কর্তব্য, জানো না?
তাথই কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মোহরের দিকে। এই মুহূর্তে মোহরের ভীষণ হাসি পেলো তাথইয়ের এই চেহারাটা দেখে। একদম ষোলো-সতেরো বছর বয়েসী কিশোরীদের মতো আচরণ করছে। শুরু শুরুতে প্রেমে পড়লে যেমন চাঞ্চল্য, অস্থিরতা দেখায় ঠিক তেমনটাই।
মোহর তাথইয়কে দাঁড়াতে বলে আরেকবার বেল বাজানোর সাথে সাথেই খট করে দরজা টা খুলে গেলো। ওপাশের ব্যক্তিটা স্বাভাবিক চেহারা নিয়ে আসলেও দরজার বাইরে মোহরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচণ্ড চমকে বলল
– মোহর! তুমি? এখন? এখানে? কীভাবে এলে!
মোহর মুখ ভার করে বলল
– ভাইয়া একটা একটা করে প্রশ্ন করুন।কোনটার উত্তর দেবো আমি!
পৃথক কিঞ্চিৎ লজ্জিত হলো নিজের কাজে। ক্ষীণ স্বরে বলল
– ওহ স্যরি। আচ্ছা তুমি হঠাৎ আমার বাড়িতে এলে যে? চিনলে কি করে
– বাইরে দাঁড় করিয়েই সব শুনবেন?
পৃথকের এবার নিজের উপরেই রাগ হলো। কিরকম ছেলেমানুষী করছে ও। লজ্জাকর হাসি হেসে বলল
– স্যরি স্যরি। ভেতরে আসো না
মোহর রহস্য হাসি হেসে মুখ টিপে বলল
– আমি কিন্তু একা আসিনি ভাইয়া, আমার সাথে আরও একজন আছে
পৃথক মুখটা এগিয়ে এনে দরজার বাইরে উঁকি দিতেই তাথই এগিয়ে এলো। চোখে মুখে জড়তা থাকলেও জোড় করে কাঠিন্যভাব টা বজায় রেখেছে। পৃথক খানিক হা করে তাকিয়ে থাকলো তাথইকে দেখে। যেন একের পর এক চমকের ব্যাপার টা ওর হজম হচ্ছে নাহ। আমতা-আমতা করে বলল
– আব্. . ভেতরে আসো না,আসো
মোহরকে ভেতরে আসতে বলে নিজেই হনহন করে হেঁটে ভেতরে ঢুকলো। মোহর তাথইয়ের হাত ধরে ঢুকলো ফ্ল্যাট-টাতে। বেশ সুন্দর আলিশান বলা যায় ফ্ল্যাট টা। তিনটা বেডরুম, ড্রয়িংরুম, কিচেন সবটা মিলিয়ে অনেকটা বড়ো। মোহর চারপাশে তাকিয়ে বলল
– এটা কেমন কথা ভাইয়া। আপনি এতটা অসুস্থ অথচ একটা বার আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না! অন্তত আপনার বন্ধুকে তো বলতে পারতেন
পৃথক ফ্যাকাসে মুখটাতে সৌজন্য হেসে বলল
-, ও কিছু না, একটু সর্দি জ্বর এখন ঠিক আছি।
– সর্দি জ্বর হলে কেও চার পাঁচদিন ধরে বাড়িতে পরে থাকে?
পৃথক কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলল
– তুমি কি করে জানলে
– আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর নাম্বার টা যোগাড় করা খুব বড়ো কাজ ছিলো নাহ। আপনার বন্ধু অবশ্য হেল্প করেছিলো।
পৃথক হেসে ফেললো মোহরের কথা বলার ভঙ্গিমায়। এগিয়ে এসে বলল
– তোমরা বোসো এখানে আমি কফি করে আনছি।
মোহর দেওয়াল ঘড়ির দিকে ইশারা করে বলল
– ঘড়ির ছোট কাটাটা এগারোর ঘর ছাড়িয়েছে মিনিট দশেক আগে। আপনাকে দেখেই মনে হচ্ছে এখনো কিচ্ছু খাননি। এখন কি না কফি!
পৃথক মাথা চুলকে বলল
– ওই আরকি। সিঙ্গেল মানুষ তো চা কফি খেয়েই চলে আমার।
– আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন ভাইয়া, আমি নাস্তা বানাচ্ছি
– না না তুমি কেনো আমি বরং অর্ডার করছি কিছু।
মোহর বিরক্তি নিয়ে বলল
– আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না ভাইয়া। আমাকেই দেখতে দিন।
বলে রান্নাঘরটার দিকে হাঁটা দিলো। বসার ঘর থেকে রান্নাঘরের দরজাটা একদম সামনাসামনি, তাই চিনতে অসুবিধা হলো নাহ।
তাথই অত্যাধিক জড়তায় মিইয়ে যাচ্ছে যেনো। ইশ, কেনো যে আসতে গেলো এভাবে। আসলেই ভুল হয়েছে। কিন্তু ওউ বা কি করতো, কাল রাত থেকে চিন্তা আর অস্থিরতায় ঘুম আসেনি। সকালে কথায় কথায় মোহরকে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল কথাটা। মোহর ও অল্প ব্যাখ্যাতেই পুরো সমীকরণ টা ধরে ফেলেছে বুদ্ধিমতীর মতো। তাই নিজ উদ্যোগেই তাথইকে ধরে বেঁধে এনেছে এখানে। এখন তাথইয়ের মনে হচ্ছে খুব ভুল করে ফেলেছে ও খুব বড়ো ভুল। এখন কোথায় যাবে, এই মানুষটার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক কথা যে আসে না, প্রয়োজনীয় কথাগুলো ও গলায় আঁটকে যায়।
– ব্ বোসো
পুরুষালী কণ্ঠে ধ্যানচ্যুত হয়ে তাকালো তাথই।না চাইতেও দৃষ্টি আঁটকে গেলো পৃথকের দিকে। সামান্য কয়টা দিনে চেহারার কী হাল করেছে লোকটা! চোখের নিচে কালির প্রলেপ পরে গেছে, দেবে যাওয়া চোখ দু’টো ভীষণ রকম ফুলে আছে। শরীর টার আগে থেকেও অবনতি স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে। কী অবস্থা হয়েছে লোকটার, একটুও কি নিজের যত্ন নেয়না?
তাথইয়ের ভাবনার মাঝেই একটু এগিয়ে এলো পৃথক, এতক্ষণ চেহারা দেখলেও এখন পৃথকের পরনের পোশাক দেখে চোখ মুখ কুচকে অন্যদিকে চোখ ফিরয়ে নিলো। ক্ষীণ স্বরে গজগজ করে বলল
– অসভ্য লোক
| সংযোজিত অংশ |
গালটা হাতের উপর ভর দিয়ে বসে ভীষণ অসহায় আর বিব্রত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভিমন্যু। বয়স সাতাশের কোঠায় পড়ার পর থেকে বাবা-মা যেন ওর নাভিশ্বাস তোলার জো করে দিচ্ছিলো। বিয়ে কর বিয়ে কর বলে অতিষ্ট করে ফেলেছে ওকে। বাড়ি থেকে হাজারটা মেয়ে দেখছিলো, বিরক্ত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ ফসকে একদিন বলেছিলো ওর পছন্দের কেও আছে আর সময় হলে তাকেই বিয়ে করবে, ব্যস্ ওটাই যেনো ওর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, সকাল বিকাল ‘মেয়েটাকে দেখা, বাড়িতে আন,বিয়ের কথা বল’ বলে বলে ওকে পাগল করে দিচ্ছিলো।
আজ সকালেও ওকে ধরে নিয়ে গেছে মন্দিরে পূজো দিতে। তাদের ভাষায় ওর রাশিতে অমঙ্গলকর কিছু ভার করেছে তার জন্যেই হয়তো ছেলের বিয়ে হচ্ছে নাহ। কিন্তু মন্দিরে গিয়ে শ্রীতমাকে দেখেই অভিমন্যুর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে যায়। ও ইচ্ছে করেই শ্রীতমাকে দেখিয়ে বলে যে ওই ওর প্রেমিকা। অভিমন্যু এটা নিশ্চিত ছিলো যে শ্রীতমাকে ডাকলেই ও এসে কোনো দিক না বেছে উল্টাপাল্টা ঝগড়া শুরু করবে, সেসব দেখে ওর বাবা মা অন্তত ওকে এই দেখা করানোর মালা জপ করাটা বন্ধ করবে হয়তো। আর হতোও তাই কিন্তু তাতে এক বালথি জল ঢেলে দিলো ওর মায়ের এই অত্যাধিক মমতাময়ী আচরণ। মেয়ে দেখলেই যেনো তাকে মেয়ে বানিয়ে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে এই মহিলা। কিন্তু শ্রীতমাকে ওর বাবা মা দুজনেই কীভাবে চিনলো এটা ওর মাথায় ঢুকছে নাহ
– দেখি বোসো তো। কত শুকিয়ে গেছো।আজ আমাদের সাথেই বসে নাস্তা করবে
বলে শ্রীতমাকে বসিয়ে তার পাশে অভিমন্যুর মা বসলো। ওর বাবাও ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। অভিমন্যুর পাশে বসতে বসতে বললেন
– শ্রী, মা একটা কথা বলো তো। তোমার মতো এতো বুদ্ধিমতী, লক্ষ্মীমন্ত মেয়েটা এই গাধার প্রেমে পড়লো কি করে?
মাত্রই রুটির টুকরোটা ছিড়ে মুখে পুড়েছিলো। এরূপ প্রশ্নে শ্রীতমার খুকখুক করে কাশি উঠে যায়। এক গ্লাস পানি ওর সামনে ধরে অভির মা বলেন
– মেয়েটাকে খেতে দাও না। কি করে প্রেমে পড়লো সেটা দিয়ে তোমার কি। অবশেষে ফারা কেটেছে এই তো অনেক।
শ্রীতমা ক্ষুব্ধ চোখে তাকালো অভিমন্যুর দিকে। ও পারছে না এখানেই ওকে ধরে দুটো শলা ঝাটার স্বাদ দিতে। শ্রীতমার খিটমিটে মুখের দিকে তাকিয়ে অভিমন্যু রয়েসয়ে সোজা হয়ে বসে বলল
– মা তোমরা ওকে চিনলে কি করে? ওর সাথে কি এর আগেও দেখা হয়েছিলো তোমাদের?
– হবেনা কেনো এইতো,এ দিয়ে প্রায় তিনবার দেখা হলো ওর সাথে।
ভদ্রমহিলার জবাবে অভিমন্যু বিস্মিত হয়ে বলল
– তিনবার! কোথায় পেয়েছো তুমি এইটাকে?
– প্রথমে একদিন বাজারে গিয়ে দেখা হয়েছিলো। তোর বাবাও ছিলো না সাথে, দুটো ভারী ভারী ব্যাগ নিয়ে নড়তে পারছিলাম ই নাহ। তখন কোত্থেকে এসে ও আমার হাত থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বলল চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দেই। এই যুগে এমন লক্ষ্মী মেয়ে কয়টা আছে বল তো!
অভিমন্যু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো শ্রীতমার দিকে। লক্ষ্মী? তাও আবার এই উড়নচণ্ডী ঝগড়ুটে মেয়েটা! ওর ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ওর মা আবারও বলল
– আরেকদিন ও রাস্তায় দেখা হয়েছিলো। মেয়েটা খুব অসুস্থ ছিলো, হাঁটতে গিয়ে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো। আমি দেখেই ছুটে গিয়ে ধরেছি। গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুড়ছে মেয়েটার শরীর। আমিই তো তখন ওকে বাড়িতে এনেছিলাম , তোর বাবাও ছিলো। তুই তখন কক্সবাজারে ছিলি।
অভিমন্যু হা করে শুধু গিলছে কথা গুলো। পাশ থেকে ওর বাবা খবরের কাগজের দিকে তাকিয়েই বলল
-, মেয়েটা এখানে অসুস্থ ছিলো অথচ দামড়া টা কক্সবাজারে গিয়ে বসেছিলো।কতো বড়ো দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এমন আচরণ করে ভাবা যায়!
– বাবা আমি বিজনেস পার্পজে গেছিলাম ঘুরতে না!
– তা বলে তোর কোনো দ্বায়িত্ব নেই? রাস্তায় যদি তোর মা না দেখত মেয়েটা তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতো। ভালো হয়েছে আজ দেখা হয়েছে এখন থেকে নিজেরদের চোখে চোখেই রাখবো তোকে দরকার নেই
শ্রীতমার প্রথমে রাগ হলেও এখন বেশ মজা লাগছে অভিমন্যুর অবস্থা থেকে। মনে মনে বেশ মজা নিচ্ছে। অবশ্য একটা কথা বলতেই হয়, এই যে দুজন মানুষ এরা ওর কাছে অনেক বেশি সম্মানের৷ ওর এখনো মনে আছে জ্বরের তোপে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছিলো ওর ভরা রাস্তাতে, তখন কোত্থেকে এই মানুষটা এসে ওকে দু’হাতে আগলে নিলো। নিজের বাসায় এনে তেল-পানি দিয়ে যেভাবে সেবা যত্ন করলো। একটা অপরিচিতার সাথে এমন স্নেহভরা আচরণ খুব কম মানুষ ই করে। তাই তো ও না করতে পারেনি। মানুষ দুটোর কাছে যে ও ভীষণ ঋণী। এ ঋণ তো টাকা বা সম্পদের না।এই ঋণ হলো ভালোবাসা, স্নেহ আর অমায়িকতার যার শোধ করা যে খুব কঠিন!
.
পৃথক বিহ্বলিত চোখে তাকিয়ে আছে। ‘অসভ্য’ বলার কারণ টা ওর ঠিক বোধগম্য হলো নাহ। ও কি অসভ্যতা করলো? কিঞ্চিৎ জড়তা নিয়ে পৃথক বলল
– অসভ্য? মানে?
– মানে আবার কি? দু দুটো মেয়ের সামনে এসব নেংটী প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ালে তাকে অসভ্য ছাড়া আর কি বলা যায়
পৃথক একবার নিজের আপাদমস্তক নজর বোলালো। সব তো ঠিকই আছে, নেংটী প্যান্ট আবার কখন পড়লো!
– কিহ্? নেংটী প্যান্ট! সেটা আবার কে পড়েছে
তাথই চোখ মুখ কুঁচকে ভীষণ রাগান্বিত স্বরে বলল
– এসব কি পড়েছেন হ্যাঁ? আপনার নাহয় কোনো বাছবিচার নেই বলে কি অন্যদের ও তাই ভাবেন।এসব পড়ে খবরদার আমার সামনে আসবেন না। খুলুন এসব
পৃথক বুঝলো না হাঁটু সমান প্যান্ট টাকে কোন দিক থেকে নেংটী মনে হয়। কপালে ভাঁজ ফেলে ও বলল
– আমি হাফপ্যান্ট পড়েছি বলে অসভ্য বলছো,অথচ নিজে যে খুলে ফেলতে বলছো তাতে কিছু না?
অস্বস্তিতে তাথইয়ের মুখ লাল হয়ে এলো। রণচণ্ডীর মতো রূপে ফোঁসফোঁস করে বলল
– অসভ্য কোথাকার
বলে ধুপধাপ পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে গেলো। এখানে দাঁড়ানোর কোনো মানেই হয়না। এইরকম একটা লোকের সামনে ও কিছুতেই দাঁড়াতে চাইনা।বরং এখান থেকে বের হতে পারলেই বাঁচে।
তাথইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পৃথক মুচকি হেসে ঘরে ঢুকলো
.
.
.
চলমান