ফানাহ্ পর্ব-৪০

0
1247

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৪০
#হুমাইরা_হাসান

‘ বিবিজান, খুব রেগে আছেন? আপনি তো নিজেও জানেন এখানে আসার কোনো অলটারনেটিভ ছিলো না আমার হাতে, আপনাকে রেখে আসতে যে আমারও ইচ্ছে করেনি, কিন্তু আপনি তো এটাও যানেন এ দূরত্বের পাল্লা একেবারেই সাময়িক। আপনাকে না জানিয়ে, দেখা না করেই কেনো চলে এলাম এটা ভেবে হয়তো খুব অভিমান হয়েছে তাই না? কি করবো বলুন আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে বিদায় জানানোর সামর্থ্য যে আমার নেই। খুব জোড় তিনদিন, এর বেশি তো নয়। কেঁদে বুক ভাসিয়ে চোখ দু’টো ফোলাবেন না,এটা আমার অর্ডার ধরে নিতে পারেন, কারণ আপনার চোখে পানি আমি কখনোই সহ্য করবো না,হোক সে চক্ষু অগোচরে। অশ্রুবিন্দু যদি ঝরাতেই হয় তবে সেটার স্থান শুধু এবং শুধুমাত্র আমার বুকেই। খুব শীঘ্রই ফিরবো মোহ, তখন কিন্তু এই অল্পছোট্ট না পুরো আপনাকেই চাইবো । তাই কান্না থামিয়ে খেয়ে দেয়ে তরতাজা হোন,এবার কিন্তু একচুল ছাড় দেবো নাহ ‘

এটুকু পড়েই ধপ করে মোহরের কান্না থেমে গেলো। অদ্ভুত অস্থির, ভীতসন্ত্রস্ততা অসাড় করে ফেললো অশ্রুসিক্ত চোখটাকে। থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো খানিক বড়সড় সফেদ পৃষ্ঠার বুকে কলমের আঁচড়ে ফুঁটে ওঠা কালো কালির শব্দগুলো। মেহরাজের লিখা প্রতিটি শব্দ যেনো কানের পর্দা ভেদ করলো খুব অদ্ভুতুড়ে ভাবে। কি আশ্চর্য! লোকটা তো এখানে নেই তবুও প্রতিটি শব্দের হরফ যেনো শ্রবণেন্দ্রিয় স্পষ্টভাবে ভেদ করছে মেহরাজের কণ্ঠস্বর হয়ে। কিছুক্ষণ রয়েসয়ে আবারও শুরু করলো, গোটা গোটা হরফ গুলোতে আবারও আদরিনী চোখ বুলালো

‘ এই শব্দগুলো পড়ে নিশ্চয় লজ্জায় মুষড়ে যাচ্ছেন? ইশ, আপনার লজ্জাবৃত মুখটাকে দু ঠোঁটে ছুঁয়ে দিতে ভীষণ ইচ্ছে করছে বিবিজান, আমাকে যে এভাবে পাগল করে দিচ্ছেম আপনি এর যন্ত্রণা টুকু বোঝেন! এই যে যখন তখন আপনাকে ঝাপটে ধরে কোলের ভেতর মিশিয়ে রাখার বেপরোয়া ইচ্ছেরা দিনকে দিন উন্মাদ করে তুলছে এর মাত্রাটুকু বুঝতে পারেন? বুঝিয়ে দেবো,আমার ভালোবাসার ভাষা,সুর,উন্মত্ততা টা বোঝানোর সময় খুব দ্রুতই আসবে, প্রস্তুত থাকবেন। আমি না ফেরা পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখার মতো গুরুদায়িত্বটা কষ্ট করে একটু পালন করবেন, আমি ফিরলে নিজের জিনিস নিজেই সামলে নেবো। আবারও অনুরোধ করছি অন্তত ততদিন নিজের একটু খেয়াল রাখুন, আপনাকে অসুস্থ বা মনমরা দেখতে পারিনা আমি, সহ্য হয়না। সুস্থ থাকবেন,খেয়াল রাখবেন আর অবসর পেলে এই অধমটাকে একটু মনে করবেন, ওহ হ্যাঁ ঘুমের ঘোরে যেই অনাচার টা করে ফেলেছেন তার শোধটা তোলা থাকলো, সুদে আসলে উসুল করে নেবো বিবিজান । ব্যবসায়ীক মানুষ তো,হিসেবের পাঠ-টা একটু বেশিই ভালো করে বুঝি ‘

একবার, দুইবার, তিনবার পড়লো একই শব্দগুলো। লজ্জায় চোখ খিঁচিয়ে নিলো মোহর, নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে, মেহরাজ তাকে এসব কথা বললো! ভাগ্যিস এখন সামনে নেই, নাতো নির্ঘাত লজ্জায় প্রাণ হারাতো । মোহর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে থাকে, চিঠিটার দিকে তাকাতেই শিরদাঁড়া বয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়,ধুকপুক করে ওঠে বুক।
চিঠিটা হাতে ধরেই উঠে দাঁড়ায়, ঘর আর বারান্দার মধ্যবর্তী দেওয়ালটাতে চোখ পড়তেই বড়ো ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটা চোখে পড়ে, এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় একদম সামনা-সামনি, এতক্ষণের লজ্জার মাঝেও এখন কান্না পাচ্ছে মোহরের, মনে হচ্ছে কতদিন দেখে না মেহরাজের মুখটা। ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে এগিয়ে গেলো, ছবিটার একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পায়ের গোড়ালি উঁচিয়ে ছবিটাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো, নিজের এই অহেতুক কাজটাও যেনো মনে মনে ভীষণ প্রশান্তি দিলো, যেনো ঠোঁট টা স্বয়ং মেহরাজকেই ছুঁলো।
হুট করেই বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মেহরাজের শেষোক্ত বাক্যটা মনে পড়ে গেলো,তার সাথে হালকা ঝাপসা একটা দৃশ্য! প্রচণ্ড ঘুমে আড়ষ্ট চোখ আর সেই চোখের ঝাপসা দৃষ্টিতে মেহরাজের চেহারাটা, খুব কাছে। এতটা কাছে যে একে অপরের উষ্ণ নিঃশ্বাসটাও গায়ে বিঁধছে, আস্তে আস্তে দূরত্ব ঘুচে এলো, দুটো শরীর দুটো ঠোঁট…
আর একটুও ভাবতে পারলো না মোহর, এসব কি ভাবছে ও! নিজের উপরেই নিজের ভীষণ ধিক্কার করলো, ক্ষোভাক্ত স্বরে আওড়ালো

– ছিহহ,,লজ্জা করা উচিত। এসব কি করে নিজের মাথায় আনছিস। নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকা উচিত।

মনে মনে নিজেকে ভর্ৎসনা করলেও খেয়াল টা পুরোপুরি সরাতে পারলো নাহ। মেহরাজ কোন অনাচারের কথা বলল? অহেতুক মিথ্যে তো সে বলবে না,তাইলে? আর এরূপ স্বপ্নটাই বা কিভাবে দেখলো ও? ওটা কি আদও স্বপ্ন ছিলো!
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে জামা কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।
ঘড়িতে সময় সাতটা আটচল্লিশ। ঘুম ভেঙেছিলো সাতটায়, উঠেই স্বভাব সুলভ পাশে তাকালেও প্রতিদিনের মতো নিজের পাশে কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে না পেয়ে ভীষণ মন খারাপ হচ্ছিলো, এতো সকালে সে আর তার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর অনুপস্থিতি টাই নিঃশব্দে বুঝিয়ে দিয়েছিলো মোহরকে। মনগহীনে অভিমানের কালো ধূসর মেঘ জড়ো হলো, লোকটা তাকে না বলেই চলে গেলো!যাওয়ার সময় একবার দেখা করলে খুব ক্ষতি হতো? হতোনা তো, একটুও হতোনা বরং মোহর লাজ লজ্জা ভুলে একটু জড়িয়ে ধরতো নিষ্ঠুর লোকটাকে। বুক ভরে প্রিয় ঘ্রাণ টা শুষে নিতো, ভারাক্রান্ত মনে মেহরাজের শুয়ে থাকা জায়গাটাতে হাত দিয়ে বালিশ টা তুলতেই চোখ গেলো অতি যত্নে পড়ে থাকা সাদা ভাঁজের কাগজে। তাহলে কি মেহরাজ ও জানতো ওকে না পেয়ে মোহর ওর শুয়ে থাকা জায়গাটাতেই হাত বুলিয়ে তৃষ্ণা মেটাবে ভালোবাসার? লোকটা কখন লিখলো এসব? আর জামা কাপড়ই বা কখন গুছিয়ে নিলো? এতগুলো কাজ মোহরের সম্পূর্ণ অজান্তেই, অগোচরেই সম্পূর্ণ করে ফেললো!
এতো বড়ো একটা উপহারবার্তা রেখে গেলেও মোহরের অভিমানী মনটা যেনো গললো নাহ,বরং বুকের মাঝের সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথাটা ক্রমশ ধারালো হতে থাকলো সুদর্শন চেহারাটার প্রতিক্ষায়।

________________________

ঘড়ির কাটায় সকাল গড়িয়ে বেলা হলেও শরীর টা কেমন ঝিমিয়ে আছে এখনো। সমতল ভূমিতে জন্মেছে সবুজ ঘাস, তার ফাঁকে ফাঁকে ফুল গাছ, সহ বড়ো বড়ো কয়েকটা বৃক্ষ। আউটহাউজের পাশেই বাগান জাতীয় পরিবেশ। মালী যে নিজ কাজে কোনো রূপ অবহেলার দুঃসাহস করেনি তার প্রমাণ এই সজীব, সতেজ গাছগুলোর সৌন্দর্য।
ঘাসের মাঝে খালি পায়ে হাঁটছে তাথই, ঘাড়ের ওপর মাথা এলিয়ে চুপটি করে আছে ওর বাচ্চাটা। সকালের নরম রোদের আরাম পেয়ে বিড়ালছানার মতো মিশে আছে নাড়ির টানে ধারণ করা মায়ের বুকে। ঘাড় থেকে নরম মাথাটা তুলার চেষ্টা করে ঢুলুঢুলু ভাবে উঠলো তোয়া, কিন্তু এখনো নিজের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার মতো সামর্থ্যের অভাবে ঢলে পড়তে নিলেই একহাতে আগলে ধরলো তাথই। হুট করে চমকে যাওয়ায় ছোট ছোট চোখ দু’টো বড়ো বড়ো করলো তোয়া, আতঙ্কিত চেহারায় ঠোঁট টা ফুলিয়ে ফেললো, মেয়ের এরূপ আদুরে চেহারাটা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো তাথই। আর মায়ের হাসিতে স্তব্ধ বাচ্চাটি কিছুর মর্মার্থ না বুঝে নিজেও ফিকফিক করে হেসে উঠলো ফোকলা গালে। টসটসে গাল দুটো টোপলা হয়ে গেলো নিমিষেই। তাথই সেদিকে অপলক চেয়ে রইলো, কি সুন্দর, নির্মল,অমায়িক হাসিটা। মাসুম চেহারাটা তুলনাহীন মায়ায় আবৃত। শুনেছিলো সন্তান নাকি বাবা মায়ের ভালোবাসার জাগ্রত চিহ্ন হয়। দুটো মানুষের মানসিক, শারীরিক ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ ভূমিষ্ঠ হয় ছোট একটা মাংসপিণ্ডের প্রাণ। যাকে ঘিরে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে বাবা-মায়ের পুরো দুনিয়াটা। তবে ওর মেয়েটার ভাগ্যই এমন কেনো! কেনো ওকে এইটুকু বয়সে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হতে হলো? কেনোই বা এতো ছোট বেলায়ই মায়ের নিষ্ঠুরতম আচরণ আর অবহেলার স্বীকার হতে হলো। বুকের ভেতর ব্যথার প্রকোপ টা চিনচিন হতে বৃহত্তর হতে থাকলো, তাথই মেয়ের কপালে মমতা ভরা চুম্বন এঁকে দিয়ে বলল

– মা আর কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না সোনা, এখন থেকে তোমার বাবাও আমি মা ও আমি। কাওকে লাগবে না। তোমাকে আমি সেই সবটুকু আদর ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করবো যা তোমার মা থেকে দূরে সরে গেছিলো এক সময়

বাচ্চাটার অবুঝ মস্তিষ্ক আদও কি ঠাওর করলো জানা নেই। তবে আদুরে মুখখানা তাথইয়ের শরীরের সাথে মিশিয়ে চুপটি করে রইলো।
তাথই আরও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে পেছন ঘুরতে নিলে পায়ের তালুতে ধারালো একটা কিছু বিঁধতেই তীব্র ব্যথায় আর্তনাদ মিশ্রিত শব্দ করলো। খালি পায়ে হাঁটার দরুন পায়ে হয়তো কিছু বিঁধেছে,কিন্তু কোলের বাচ্চাটার জন্য হাতটা পৌঁছাতে পারলো না তালু অব্দি। এক পা উঁচিয়ে হাঁটতে গেলেও ক্ষত স্থানে চাপ পরে পা টলে পরতে গেলে শক্তপোক্ত একটা বাঁধনে আঁটকে গেলো,কাৎ হয়ে যাওয়া শরীরটা অজানা দু’হাতের বন্ধনে আঁটকে গেলে তাথই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ওকে দু’হাতের বেড়িবাঁধে আবৃত করা চেহারাটার দিকে, ফট করে সরে আসতে নিলেও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। বিরক্তি ভরা চোখে তাকিয়ে আবারও সরে আসার চেষ্টা করলে আগন্তুক নিজেই খুব আস্তে করে সোজা করে দাঁড় করালো। বাগানের ভেতর বসে থাকার জন্য টাইলসে বাঁধাই করা সোফা জাতীয় আসনটাতে বসিয়ে দিলো তাথইকে। কোনো রূপ শব্দ ছাড়াই হাঁটু ভাঁজ করে বসলো, তাথইয়ের পা টা তুলে নিজের হাঁটুর উপর রাখলে তাথই এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে থমথমে গলায় বলল

– আমি নিজেই দেখে নিতে পারবো, ছাড়ুন আপনি

পৃথক শুনলো না, বরং আবারও তাথইয়ের পা টা টেনে ধরলো, ছাড়িয়ে নিতে যাতে না পারে এবার সেভাবেই ধরলো, তালুতে বিঁধে থাকা ছোট্ট একটা ধারালো পাথরের নিম্নাংশ টা ধরে এক টানে বের করে ফেললো টুকরা টা। যন্ত্রণায় মৃদু আর্তনাদ করলো তাথই। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে পা থেকে। পৃথক তাথইয়ের হাতটা ধরে ওকে দাঁড় করাতে নিলে তাথই এবার ঝামটা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল

– কতবার বলবো ধরবেন না আমায়। আপনাকে বলেছি আমাকে দয়া দেখাতে? কে বলেছে আপনাকে এতো ভালো মানুষী দেখাতে? এসব করে কি নিজেকে খুব ভালো প্রমাণ করতে চান?

– কিসব বলছো আশু? তোমার পায়ের তালু থাকে রক্ত বের হচ্ছে, হাঁটতে গেলে পরে যাবে তুমি

পৃথকের বিচলিত, করুন মুখটাতে পাত্তা না দিয়ে তাথই ঝাঝালো স্বরে বলল

– প্রথমত আমি হাঁটতে পারবো কি না আমিই দেখে নেবো। আর দ্বিতীয়ত আমাকে এই নামে ডাকবেন না, এই নামে ডাকার অধিকার শুধু ভাইয়া ছাড়া আমি কাওকে দেইনা।

– আর কেও কখনো ডাকেনি তোমায় এই নামে?

পৃথকের কথাটিতে একবুক বেদনা আর যন্ত্রণা প্রকাশ পেলো। ওর চোখের ব্যকুলতাকে চোখ মেলে দেখলোও না তাথই, বরং নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে বলল

– যে ডেকেছিলো সে বহু আগেই মারা গেছে। আপাতত অন্য কারো মুখে এই ডাক আমি শুনতে চাইনা

পৃথক মুখ বুজে গিলে নিলো সমস্ত ধিক্কার, ক্ষোভাত্মক, অপমানসূচক বাক্যগুলো। বড়সড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তাথই এর কোল থেকে হুট করে তোয়াকে নিজের দুহাতের মধ্যে এনে বুকের কাছে রাখলো, অপ্রস্তুত বিহ্বলিত তাথই ভ্রু কুচকে কিছু বলবে তার আগেই পৃথক নিজের কথাগুলো চাপিয়ে দিয়ে বলল

– আপনি যখন একাই হাঁটবেন তো ঠিকাছে, অন্তত ওকে নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার দরকার নেই! আমি তো আপনার অনেক বড়ো ক্ষতি করে ফেলেছি আর করছি, বাচ্চাটাকে অন্তত কিছু করবো না এইটুকু মানষিকতা আছে আমার।

বলে সোজা বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। তাথই খুড়িয়ে খুড়িয়ে পা ছ্যেচড়ে আসতে লাগলো পেছন পেছন। পৃথকের ভীষণ ইচ্ছে করলো পেছনে ফিরে একবার বলতে

– আর কতো রাগ করবে আশু,একটা বার আমাকেও বলতে দাও না। তোমার এই চেহারাটা আমি আর সহ্য করতে পারছিনা

কিন্তু বলা হলো না, কাঁটার মতো বিঁধে রইলো গলার মধ্যিখানে হাজারো শব্দগুচ্ছ। না পারলো গিলতে না পারলো উগড়ে দিতে। শুধু স্নেহপূর্ণ স্পর্শে বাচ্চাটাকে চেপে ধরলো বুকের সাথে। ছোট্ট শরীর টাতে সেই চিরচেনা মিঠা সুবাসটা মিশে আছে। এই ছোট্ট অংশটা ওর আশুর গর্ভে বেড়ে উঠেছে, যেনো আরেকটা ছোট্ট আশু ভাবা যায়! না চাইলেও পুরুষালী মনটা চরম বেইমানি করে চোখের কোণ দিয়ে উষ্ণ শিখা গুলো গড়িয়ে দিতে চাইলো, এইতো বছর তিনেক আগের কথাটাই মনে পড়ে গেলো . . শিশুসুলভ যেই মেয়েটাকে ছোট্ট বাচ্চার মতো ভেবেই রেখে গেছিলো নিশ্চিন্তে ৷ সেই মেয়েটার আজ কতটা পরিবর্তন, পৃথকের অনুপস্থিতিতে ওর আশু কতটা কষ্ট পেয়েছে! কতই না যন্ত্রণা মুখ বুঁজে সয়ে নিয়েছে, অথচ ও পারেনি, ও পারেনি কিছু করতে । অপারগ ছিলো তো ও!

______________________

ছোট্ট একটা ঘর, তার দুইপাশে দুটো সিঙ্গেল বেড, একটা ফাঁকা পরে থাকলেও আরেকটাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কতগুলো বই,খাতা, শীটের ন্যায় কয়েকটি পিনবন্ধনে আবদ্ধ কাগজ। আর তার মাঝে অতি আরামে হেলান দিয়ে বসে আছে একটা মেয়েলী শরীর, বালিশে হেলান দিয়ে থাকলেও চোখ দু’টোর জহুরি নজরটা সামনের ছোট টেবলের ওপর। খুব মনোযোগী হয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে জিনিসটার দিকে, এই তো কাল রাতের কথা….
মোহরের সাথে ফেরার পর হোস্টেলে এসে পৌঁছাতে বেশ রাতই করে ফেলেছিলো। সন্ধ্যা সাতটার পর অতি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকায় হোস্টেল সুপারের কাছ হতে কয়েকটি শাসানিও শুনতে হয়েছে, তবে সেসবে গা না করে রুমে এসে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়া অব্দি সবটা স্বাভাবিক ছিলো। ব্যাতিক্রম ঘটলো তো বিছানাতে বসে বইটা হাতে নিয়ে, ওর খাটের উপর যে আস্তো একটা লাল গোলাপের বুকে সানন্দে জায়গা জুড়ে শুয়ে আছে এটা আগে লক্ষ করেনি। ভীষণ বিস্ময়ক চাহনিতে ফুলে সজ্জিত সুবাসমিশ্রিত জিনিসটা হাতে নিলে বুকেটার গায়ের সাথে একটা ছোট্ট কার্ড ও ছিলো, যেখানকার বার্তাটা ছিলো ঠিক এরূপ

” জানি দোষ আমারও হয়তো ছিলো,তবে রাস্তায় দেখে শুনে হাঁটা টা এবার শেখা উচিত। না তো কোনদিন বড়সড় কান্ড ঘটিয়ে আমার উপরে মামলা ঠুকে দিবেন,,,আশা করি এখন সুস্থ আছেন। নিজের খেয়াল রাখবেন, Sorry! ”

এটা ঠিক জ্ঞান দিয়ে খোঁটা দেওয়ার জন্য ছিলো নাকি আদতেও সরি বলার জন্য ছিলো তা শ্রীতমার বোধগম্যে মিললো না। তবে প্রেরকের নাম বাদেও তাকে চিনতে অসুবিধা হয়নি একটুও। এই মনমরা দিনের তীব্র বিষাদেও যেনো এক ফালি বিরক্তি আর রাগ জেঁকে ধরলো, তার উপর সকাল সকাল নিজের ফোন নাম্বারে রিসিভ হওয়া আরেকটা টেক্সট ” Bouquet ta peyechen?”
এটা কোন ধরনের বলদামি শ্রীতমা বুঝে পাইনা, খাটের উপর রেখে দিয়ে কিংবা রাখিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে! আর ওর নাম্বার ই বা পেলো কি করে। সাত পাঁচ ভেবে ভেবে অবশেষে কুঞ্চিত মনে ফোনটা হাতে তুলে ডায়াল করলো কিছুক্ষণ আগে টেক্সট আসা নাম্বার টাতে।
.
.
.
চলমান

©Humu_❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে