#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_২৭
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
– চুপ করে আছেন কেন মোহ, বলুন? আমার শুধু একটা কথা রাখবেন এতটুকুও কি আমি আশা রাখতে পারিনা?
– আপনি ভুল বুঝছেন
বহু জড়তা আর অস্বস্তি ঠেলে প্রত্যুত্তর করলো মোহর। মেহরাজের মুখাবয়ব ধীর স্থির হলো। খানিক আগের কাঠিন্যের ছাপটা যেন কমে এলো। মোহর নিজেকে ধাতস্থ করে স্বাভাবিক গলায় বলল
– আমার বান্ধবী শ্রীতমার সাথে একটু মলে যেতে হয়েছিল, কিন্তু ওর কাজ দেরিতে শেষ হবে বলে আমি আগেই বেরিয়ে পরছিলাম, আসার সময়ই ফায়াজ স্যারের সাথে দেখা। উনিই আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেওয়ার কথা বলল।আমি নাকচ করেছিলাম কিন্তু উনিই জো’র করলেন। উনার মুখের সরাসরি না করে দেওয়া টা তো অপমান সূচক ব্যবহার হয়, সেটা করা কি উচিত ছিল?
মেহরাজ শান্ত চোখে তাকালো মোহরের মুখপানে।
মোহর অবিলম্বেই আবারও বলতে আরম্ভ করলো
– ফায়াজ স্যার আমার পরিবারের সাথে প্রায় ৫/৬ বছর ধরেই পরিচিত। উনি আমাকে এর আগেও অসংখ্যবার ড্রপ করেছে, তাই এটা আমার বা তার জন্য নতুন কিছু না,বরং এখন না করাটাই নতুন কিছু হবে
– এর আগে আপনি অন্যকিছু ছিলেন,এখন অন্যকিছু। আপনি আমার বউ মোহ, এবার আপনিই বলুন নিজের বউকে আমি অন্য একটা পুরুষের সাথে একই গাড়িতে পাশাপাশি বসতে দেয় কি করে ?
বুকের উপর দু’হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলল মেহরাজ। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ এঁটে আছে, তীক্ষ্ণ চোখ জোড়াতে জিজ্ঞাংসুক চাহনি। মোহর এহেন দৃষ্টি বা প্রশ্নের উত্তর বের করতে সক্ষম হলো না। উলটে মেহরাজের বউ ডাক টা বুকের ভেতর শিরশিরানি তুলে দিল।
ইতস্তত নজর সামলে নেওয়ার আগেই মেহরাজ সরে গেল। টেবিলের উপর থেকে কালচে রঙের ব্যাকপার্টের একটা ফোন এনে মোহরের সামনে ধরে বলল
– এটা ধরুন
ভ্রু কুচকে কৌতূহলী নজরে মেহরাজের দিকে তাকালে সে আবারও বলল
– এই ফোনটা আপনার। যাবতীয় প্রয়োজনীর সব নাম্বার, এ্যাকাউন্টস, সিম সব এর মধ্যে সেট করা আছে। এখন থেকে সবসময় নিজের কাছেই রাখবেন।
মোহর অসহিষ্ণু ভাবে তাকালো। চোখে মুখে হাজারো দ্বিধা উপচে পড়ছে। মেহরাজের হাতের তিন ক্যামেরা বিশিষ্ট অ্যাপেলের লোগো দেওয়া ফোনটাই বলে দিচ্ছে ওর দামটা কতো হতে পারে। একটা ফোনের দরকার হয়তো ওর নিজেরই ছিল তবে এতটা ব্যয়বহুল জিনিসটি নয়। ও ইতস্তত হয়ে বলল
– এতো দামী ফোনের প্রয়োজন নেই আমার
মেহরাজ হাসলো যেন। পাতলা অধরের কোণায় মৃদু বাঁক ধরলো। মোহরের ভূবন ভোলানোর ক্ষমতা সম্পন্ন হাসিটার স্থায়িত্ব হলো ক্ষণকাল। অতঃপর কিছুক্ষণ আগের ন্যায় এগিয়ে এসে মোহরের হাতটা ধরে তালুর মাঝে ফোনটা রেখে বলল
– আপনি মানুষটা তো আপাদমস্তকই দামী মোহ, এর সামনে লাখ টাকার জিনিস ও তুচ্ছ।
ফিট্ খানেক উচ্চতার দূরত্বে দু’জোড়া চোখ। একে অপরের অপলক চাহনি। গায়ে ভ্রম তোলা শব্দ,ঘ্রাণ সব মিলিয়ে পরিবেশটা যেন মা’দকতার আকর ঢেলে দিচ্ছে। মোহর ওই চোখ দু’টোতে চেয়ে থাকতে পারেনা বেশিক্ষণ। মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে নেয়। মেহরাজ সরে গিয়ে দাঁড়ায়, ষ্টীল ব্লু রঙের ট্রাউজারের পকেটে দু’হাত গুঁজে বলল
– কোনটা কত বেশি দামী সে হিসাব আপনার রাখতে হবে নাহ, আপনাকে বেহিসেবী রাখার মতো সামর্থ আছে আপনার স্বামীর । আপাতত ছোট্ট মস্তিষ্কটাকে রেহাই দিন, ঘুমিয়ে পড়ুন।
বলে বেড সাইড টেবিল থেকে ল্যাপটপ টা হাতে তুলে নিয়ে ডিভানে বসে পড়লো। আবারও সেই যান্ত্রিক চাহনি আর গুরুগম্ভীর মুখাবয়বের স্থৈর্য দৃষ্টি আঁটকে পড়লো ল্যাপটপের স্ক্রিন টাতে। মোহর হাতের বস্তুটিতে এক নজর দিয়ে রেখে দিল। মাথার ভেতরে অসংখ্য প্রশ্নের ঝুড়ি তুলে রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
________________________
সকাল বেলা করেই ঘুম ভেঙে যায় মোহরের। উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো ঘর থেকে। সিড়ি বেয়ে নেমে আসলো মোহর, আজকে শুক্রবার কাজেই মেডিক্যাল নামক নিত্যকর্মসূচীর ভার টা আজ নেই। ঘড়িতে সাতটা বেজে মিনিট কয়েক। ড্রয়িং রুমটা একেবারেই ফাঁকা।
অন্যান্য দিন এই সময়ে প্রায় সবাই উঠে পরে,আজকে ছুটির দিন বলেই হয়তো ব্যতিক্রম। আর এমনিতেও সাঞ্জে ওঠে দেরীতে,আর তাথই তো প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসবেও নাহ।
রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ আসছে, মোহর সেদিকে এগিয়ে গেল। আম্বি বেগম একা হাতেই রান্না বান্না সারছেন, পাশেই নাজমা একটু আকটু এগিয়ে দিচ্ছে। কাজের লোক বাড়িতে দুটো, নাজমা আর মালা। নাজমা অধিকাংশ সময়ই শাহারা বেগমের সাথে থাকে মাঝে মধ্যে রান্নায় হাত লাগায়, আর মালাকে কাকলি বেগমের সাথেই অধিক দেখা যায়। মালা নামক মেয়েটির বয়স খুব একটা না, চোখ মুখ কেমন চোখা। হাতের থেকে মুখ আর কানটা আবার বেশিই চলে তার।
মোহর রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো খানিকটা, আম্বি খাতুন নিজ মনোযোগে কাজ করে যাচ্ছে, মোহরের এখানে আসাটা উনি একেবারেই পছন্দ করবে না এটা মোহর নিজেও জানে, কিন্তু তবুও মোহরের ভীষণ ইচ্ছে হলো মাতুল্য মানুষ টার পাশে দাঁড়াতে। তার হাতের কাজ গুলো এগিয়ে দিতে। আম্বি খাতুনের কড়া কথা বা ক’টুক্তিতে মোহরের কেন যেন একটুও খারাপ লাগে না, কেমন অদ্ভুত ভাবেই মনে হয় মানুষটা নিজেকে যতটা কঠিন দেখায় ততটাও নয়।
এবাড়িতে পা রাখা মাস হয়ে গেল, এর মাঝে আম্বি নামক মানুষটার সাথে মোহরের বাক্যালাপ হয়েছে গুটি কয়েক বার যার সিংহভাগই তার পক্ষের ক’টুবাক্যই ছিল। তবুও মোহরের মনে হয় হয়তো মানুষটার সাথে একটু কথা বলা উচিত।
প্রতিটি মানুষেরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যদের তুলনায় থাকে বিস্তর তফাৎ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব মনোভাব, ইচ্ছা, আকাঙ্খা, মতামত থাকতে পারে। আমরা একপাশে দাঁড়িয়ে যেই সংখ্যাটিকে ইংরেজি সংখ্যার ছয় দেখবো ঠিক সেই সংখ্যাটিকেই আমাদের সম্মুখে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি নয় দেখবে, তার অর্থ কি এটা দাঁড়াবে যে অপরপাশের ব্যক্তিটি ভুল? মোটেও নাহ! আমাদের স্থানে দাঁড়িয়ে যেমন আমরা অকপটে কোনো যুক্তি মান্য হীনাই শব্দটিকে ছয় বলে দিতে পারি ঠিক একইভাবে অপর মানুষ টিও কিন্তু নয় বলতেই পারে। তাৎপর্য এটাই যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা।
মোহর যেমন নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে অসহায়, অপারগ, নির্দোষ ছিল ঠিক তেমন ভাবেই এই মা স্বরূপ ব্যক্তিটিও কিন্তু তার স্থানে অনপরাধী। কেননা প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে নিয়ে একবুক আশা,ভরসা,স্বপ্নকে লালন করে। সেইখানে হুট করেই অচেনা একটা মেয়ে এসে জুড়ে বসলে ক’টুবাক্য ছু’ড়ে দেওয়া টাও পাপ হিসেবে ধরা যাবে না হয়তো।
হাজারো দ্বিধাবোধ নিয়েই এগিয়ে গেল মোহর৷ আম্বি খাতুন মোহরের উপস্তিতি আড়চোখে লক্ষ্য করলেও ফিরে তাকালো না, বরং নিজ কাজেই অব্যাহত রইলো। মোহর গুটি পায়ে এগিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ভীষণ নরম গলায় বলল
– আমি সাহায্য করে দেই?
আম্বি খাতুন প্রত্যুত্তর করলো না। মোহর তার নিস্তব্ধতাতে কোনো উত্তর না পেয়ে, নিজের পাশ থেকে সবজি কাটার ছু’ড়ি টা তুলে হাতে নিলেই আম্বি খাতুন ফট করে মোহরের হাত থেকে ছিনি’য়ে নিল ধারালো জিনিসটা। কর্কশ গলায় বলল
– তোমাকে বলেছি আমার সাহায্য করতে? আগ বাড়িয়ে কাজ করতে আসতে কে বলেছে তোমাকে? নিজের কাজে মাথা ঘামাও,খবরদার আমার রান্নাঘর বা তার আশেপাশেও আসবে না।
রুক্ষ গলার চিটচিটে বাক্যে মোহর মিইয়ে গেল। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে আবারও আগের ন্যায় নরম গলায় বলল
– আপনি তো ঘেমে যাচ্ছেন, এটুকু আমি করি আপনি বরং গিয়ে বসুন?
আম্বি খাতুন প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ঘুরে তাকালো, নাক কুচকে বলল
– এই মেয়ে তোমার লজ্জা নেই? দেখছো আমি দুরছাই করছি তবুও বেহায়ার মতো কথা বলছো?
বলে মোহরকে বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই আবারও বলল
– তুমি কেন কাজ করবা? কি লাভ তোমার, যা লাভ তাতো পেয়েই গেছো? সবই তোমার, এখন আবার কোন স্বার্থে আমাকে গলাতে এসেছো হ্যাঁ? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো তোমাকে আমি কখনো নিজের ছেলেবউ মানবো নাহ। এখন এখান থেকে বের হও তো সকাল করেই আমি মেজাজ টা আরও নষ্ট করতে চাইনা
নাজমা আড়চোখে তাকিয়ে কথা শুনছে আর রুটি বেলে দিচ্ছে। মোহর আম্বির এতগুলো কথা শোনার পরেও নড়লো না, উলটে আম্বি খাতুনের হাত থেকে জিনিস গুলো নিয়ে বলল
– এটা আপনাদের বাড়ি, যা আছে সবই আপনাদের। আমিতো আপনাদের আশ্রয়ে থাকা সামান্য একটা আশ্রিতা মাত্র। আমি কোনো লাভের জন্যেই আসিনি, আপনাদেরই খাচ্ছি পড়ছি। প্রতিদান দেওয়ার যোগ্যতা তো আমার এখনও হয়নি, একটু সাহায্য তো করতেই পারি। আমি পারবো কাজগুলো চিন্তা করবেন না।
বলে কাজে হাত দিলে আম্বি আবারও ক্ষেপাটে চেহারায় কিছু একটা বলতে আসবে তখনি নাজমা অনুরোধের ন্যায় করে বলে
– থাক না আপা। ও করতে চাচ্ছে দিন না। এইটুকুই তো। আপনি সকাল থেকে এত কাজ করছেন বরং একটু বিশ্রাম করে নিন
আম্বি খাতুন নিভে যাওয়া প্রদীপের ন্যায় জ্বলজ্বল করে উঠে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মোহর সেদিকে একবার চেয়ে নাজমার সাথে সাথে নাস্তা তৈরি করতে লাগলো। বেশ কিছুটা সময় নিঃশব্দে পার হলে নাজমা নিজেই মুখ ফুটে বলল
– বড় আপার কথায় কিছু মনে করবেন না। উনি মানুষটা এমনিতে খুব ভালো। কিন্তু ছোট সাহেব উনার চোখের মণি, সারা দুনিয়া একদিকে আর নিজের ছেলে একদিকে। আর বাড়িতে একজন আছে তো সারাদিন ই বড়ো আপার কানে বি’ষ ঢালার জন্য। বিয়ে করে সাহেব পালটে যাবে, মাকে মানবে না, মায়ের ছেলে হয়ে থাকবে না। এসব সারাদিন শুনলে তো এমনিতেই মানুষের মন মেজাজ বিগড়ে যাবে
বেশ বিরক্তি নিয়ে শেষের কথাটা বলল নাজমা। মোহর মৃদু হেসে তাকালো মাঝ বয়েসী মোটাসোটা গড়নের মহিলাটির দিকে। বয়স হয়তো আম্বি বেগমের চেয়ে বেশিই হবে, ভাসা ভাসা চোখ মুখ। সেদিকে চেয়ে মোহর স্থির গলায় বলল
– ওসবে আমি মন খারাপ করিনা চাচী। উনি যেমনই হোক মা তো। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যে সবাই মেনে নিতে পারবে এমনটাও না
নাজমা শুরু বাঁকা চোখে তাকিয়ে রইলো মোহরের দিকে। দীর্ঘ বয়সের অভিজ্ঞতায় অন্তত এতটুকু বেশ উপলব্ধি করতে পারলো এই যে লম্বা, উজ্জ্বল, মায়াবী চেহারার মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে, এ ভীষণ বুদ্ধিমতী। কাকে কিভাবে সামলাতে হবে এটা খুব ভালো মতই জানে, আর তা এ বাড়ির লোক গুলোও খুব তাড়াতাড়িই ধারণ করতে পারবে।
অনেকটা কাজ আগে থেকেই করা ছিল। বাকিটুকু দ্রুতহাতে সম্পন্ন করে একে একে টেবিলে এনে রাখতে লাগলো খাবার গুলো। ড্রয়িং রুম থেকে শাহারা বেগমের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। চা বানিয়ে দুটো কাপে ঢেলে নিয়ে আসলো মোহর। এক কাপ আম্বি খাতুনের সামনে রেখে আরেকটা শাহারা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিল। শাহারা আজ রান্নাঘরে মোহরকে দেখে বলল
– বাবাহ, আজ তুই নাস্তা বানাচ্ছিস নাকি মোহর। বেশ বেশ, তবে আজ থেকে ওকেই নাস্তা বানাতে দিও আম্বি, বাড়ির বউ যখন হয়েছে এতটা দ্বায়িত্ব তো নিতেই পারে।
– বাড়ির দ্বায়িত্ব এখনও আমি ঠিক ভাবেই সামলাতে পারি মা, আর ওকে আমি বলিনি এসে নাস্তা বানাতে। ও নিজেই যেয়ে চেয়ে এসেছে আগ বাড়িয়ে।
শাহারা বেগম মৃদু হেসে আম্বির কাঁধে হাত রেখে বলল
– ও তো ওর দ্বায়িত্ব টাই করেছে। তোমার নিশ্চয় উচিত না ওকে বাধা দেওয়া। আর কতো রাগ করে থাকবে বলো তো। সাঞ্জে, তাথইকে যেমন নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসো তার চেয়ে একটু কম হোক মোহরকেও বাসো। ছেলের বউ মানে তো নিজেরও মেয়ে আম্বি।
আম্বি অবিন্যস্ত চোখে মোহরের মুখটার দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই ভীষণ রূঢ় ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল
– আমি কাওকে নিজের মেয়ে মানতে পারবো নাহ। শুধুমাত্র মেহরাজ আমার সন্তান। উড়ে এসে জুড়ে বসা কাওকে আমি কিচ্ছু মানতে পারবো নাহ।
বলেই উঠে দ্রুত পা ফেলে নিজের ঘরের দিকে গেল আম্বি। শাহারা সেদিকে চেয়ে বিষন্ন মুখে মোহরের দিকে তাকালে মোহর গালে মিষ্টি হাসি টেনে বলল
– এসব মনে নিও না তো দিদা। যে মানুষ যত রাগী, সে তত বেশি ভালোবাসতে পারে। শুধু সময় দিতে হয় তাদের।
বলে আবারও রান্নাঘরের দিকে গেল। মোহর প্রস্থান করতেই মেহরাজ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। মেহরাজকে বাইরে থেকে আসতে দেখে শাহারা বেগম স্নেহপূর্ণ গলায় বলল
– মেহরাজ, আই ভাই। আমার কাছে বস
মেহরাজ এগিয়ে এসে বসলো কাউচে, পরনে সাদা কালোর মিশেলে জগিং স্যুট। শাহারা বেগম মেহরাজের পিঠে হাত রেখে বলল
– দিদার কাছে তো বসিস ই না ভাই। তোকে আর পাই কোথায়। এখন তো আপিস আর বউ নিয়েই তোমার দিন পেরিয়ে যায়
– বউকে আর নিতে পারলাম কই। বউ আমার আমাকে স্বামী মানলে তো
পায়ের জুতার ফিতা গুলো ঝুকে আলগা করতে করতে বলল মেহরাজ। শাহারা বেগম মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বলল
– মানবে না কই যাবে। মেয়ে মানুষের বুক ফা”টে তাও মুখ ফাটে না। একটু ধৈর্য ধরো বউ না গলে যাবে কোথায়
মেহরাজ ঘাড় ঝুকিয়ে রাখা অবস্থায় ই কাত করে তাকালো। অধর যুগল সুপ্রসারিত করে হেসে উঠলো। হাসির দাপটে দীর্ঘায়িত শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠলো। সোজা হয়ে সোফায়ে গা এলিয়ে দিয়েও হাসতে লাগলো।
এরই মাঝে আম্বি খাতুন ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সোফাতে বসে থাকা সুদর্শন চেহারার ছেলেটার মুখের গাঢ় হাসিটাতে তাকিয়ে সমস্ত রাগ বিরক্তি মুহুর্তেই উবে গেল। কলিজার একটা টুকরো মেহরাজ যে আম্বির, ছেলের হাসিমুখ টা তার নিকট পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতোই খুব ক্ষীণ।
খুব পীড়াদায়ক হলেও সত্যিই এতো আদর ভালোবাসার পরেও মেহরাজ নিজের মায়ের সাথে কখনও বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক স্থাপন করেনি। বরাবর অন্য সকলের মতোই গাম্ভীর্যের একটা দেওয়াল তুলে রাখা মা ছেলের মাঝেও। কিন্তু সে সকল গাম্ভীর্যের আড়ালে এই বৃদ্ধার সাথে অমায়িক, অন্যরকম, বন্ধুত্ব সুলভ একটা সম্পর্ক আছে তা হয়তো মানুষের খুব একটা অজানা নয়। মাঝে মধ্যে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হয় আম্বির, খুব ইচ্ছে করে সাধ জাগে ছেলে তার সাথেও এভাবেই হেসে খেলে কথা বলবে,পাশে এসে বসবে। কিন্তু পরমুহূর্তেই মেহরাজের চাঁদ মুখ খানা দেখলে সমস্ত অভিযোগ, পীড়ন উবে যায়। ছেলেটি যখন তার ভরাট গলায় মা ডাকে তখন বুকের ভেতর টাতে শীতল বরফ ছুঁয়ে যায় যেন
– মা? দাঁড়িয়ে আছো কেন এদিকে আসো, বসো।
এর মাঝেই প্রিয় কণ্ঠের ডাকে আত্মাটা ভরে উঠলো আম্বি খাতুনের। সুহাস্য মুখে এগিয়ে এসে বসলো মেহরাজের পাশটাতে। ছেলের মুখটা যেন অন্যদিকের তুলনায় অনেক বেশিই উজ্জ্বল লাগছে, চোখে মুখে আনন্দ খুশিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে আছে। সে মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে পরম স্নেহের গলায় বললেন
– এতো সকালে কেন বেড়িয়েছিলি বাবু। রোজ ই তো সকালে উঠে চলে যাস। আজ নাহয় একটু দেরিতে উঠলি।
– রোজই তো অফিসে যাই, তাই আজ জগিংয়ে গিয়েছি
– থাক ওতো জগিং লাগবে না। তুই বস আমি এক্ষুনি তোর নাস্তা আনছি বাবু
বলেই তৎপর হয়ে উঠে ছুটলেন রান্নাঘরের দিকে।
মায়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে মেহরাজের গহীন দৃষ্টি পরলো রান্নাঘরের দিকে, কোমরে ওড়না বাধা ঘর্মাক্ত একটি পাতলা মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। দৃষ্টির কোটরে চম্বুকের ন্যায় বিঁধে গেল খুব সাধারণ, স্বচ্ছ মুখাবয়বের ব্যস্ত চেহারাটি।
দুরবগাহ দৃষ্টির একাগ্রতা সেদিকেই অটল রেখে সোফায় মাথাটা এলিয়ে দিল, নিষ্প্রভ গলায় বলল
– কি হয়েছে আমার? কোথায় হারিয়েছি বলো তো দিদা। কিসে আচ্ছন্ন হয়ে গেছি, কোন মায়ার৷ রশ্নীতে ক্রমশই অন্ধ হয়ে যাচ্ছি আমি। কি পেয়েছি?
শাহারা বেগম হাসলো খানিক। মেহরাজের দিকে চেয়ে বলল
– মোহর পেয়েছিস দাদুভাই। ঘরা ভর্তি মণি মুক্তায় সাজানো মোহর পেয়েছিস। মোহরের প্রাচুর্যে, মোহে আর কিচ্ছুটি চোখে বিঁধছে না তোর।
.
বাড়ির সকলে ঘুম থেকে উঠে এক এক করে নিচে এলো। বড়রা এসে খেতে বসেছে। মোহর নিজেই গিয়ে সাঞ্জে আর তাথই কে ধরে এনেছে। আজহার, আরহাম, শাহারা বেগম, তাথই,সাঞ্জে, কাকলি সকলে একসাথে খেতে বসেছে সুবিশাল ডাইনিং টেবিলে। মেহরাজ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলে আম্বি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল
– বাবু তোর ব্রেকফাস্ট ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আই খেতে বস।
মেহরাজও এসে বসলো। মোহর পাশেই দাঁড়িয়ে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে সাহায্য করছে। সাঞ্জে খেতে খেতে বলল
– ভাবী তুমিও বসো না। আমাদের সাথেই খাও
– আমি পরে খাবো সাঞ্জে
– পরে কেন, বস দাদুভাইয়ের পাশের চেয়ারটাতে বস তুই
শাহারা বেগমের কড়া গলায় বলা কথাটির প্রত্যুত্তরে বিব্রত বোধ করলো মোহর। মেহরাজ, সে তো বসে আরামসে খেয়ে যাচ্ছে। যেন তার আশেপাশে মানুষ বলে কোনো জীবের উপস্থিতি নেই। কিন্তু মোহরের কেমন আড়ষ্টতা কাজ করলো ভেতর ভেতর। ইনিয়েবিনিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তখনি আরেকটা গলা কানে আসলো
– গুড মর্ণিং এভরিবডি
তিয়াসা দাঁড়িয়ে হাস্যমুখে। কথাটি বলেই এগিয়ে এলো দুকদম। আরহাম মুর্তজা তিয়াসাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– গুড মর্ণিং। এসো নাস্তা করে নাও তিয়াসা অনেক বেলা হয়েছে তো।
কাকলি বেগম ও ডাকলেন তিয়াসাকে খেতে। টেবিলে দুটি মাত্র জায়গা ফাঁকা, একটা মেহরাজের পাশে আরেকটা সাঞ্জে আর তাথইয়ের মাঝে। তিয়াসা ক্রুর একটা হাসি দিয়ে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। ওর ব্যকুল অভিলাষ টাকে পুরোদমে ব্যর্থ করে দিয়ে মোহর চট করে মেহরাজের পাশের চেয়ার টাতে বসে পড়লো।
জলন্ত উনুনের লাকড়ি বের করে ফেলার ন্যায় চুপসে নিভিয়ে গেল তিয়াসার মুখটা। ক্রুদ্ধতা, বি’ক্ষেপে জ্বলে উঠলো যেন। তবুও সকলের মাঝে ভেতরের হিংসা দমিয়ে হাসি মুখাবয়বের প্রয়াসে গিয়ে বসলো সাঞ্জে আর তাথইয়ের মাঝে। সাঞ্জে টুসকি দিয়ে বলল
– গুড মর্ণিং তিয়াসা আপু
ভোঁতা মুখেই সামান্য হাসলো তিয়াসা। বিরক্তি আর ঈর্ষাতে ভেতরে ভেতরেই ফুঁসে উঠলো।
মোহর তিয়াসার নীরস মুখটাকে অগ্রাহ্য করে খেতে থাকলো। হুট করেই কি একটা ভেবে মেহরাজের দিকে তাকালো ঘাড় কাৎ করে। চোখাচোখি হলেই প্রচণ্ড বিজড়তায় আড়ষ্ট হয়ে পড়লো মেহরাজের অধর কোণের সূক্ষ্ম বাঁকা হাসিটা দেখে।
তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। মেহরাজ কি বুঝতে পারলো যে মোহর তিয়াসাকে ওর পাশে বসতে দিবে না বলেই এভাবে বসলো? আবারও আড়চোখে তাকালো মেহরাজের দিকে, মোহরের সমস্ত অস্বস্তি আর ব্যগ্রতাকে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িয়ে দিয়ে মেহরাজ অধর ছড়িয়ে বাঁকা হেসে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করলো
.
.
.
চলমান।
©Humu_❤️
#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_২৮
#হুমাইরা_হাসান
– এসব থাক না। কি দরকার শুধু শুধু এসব ঝামেলা করার
– কিসের ঝামেলা। কোনো ঝামেলা নাহ। তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো তো।
বলে মোহরকে দাঁড় করিয়ে এগিয়ে গিয়ে খাটের উপর থেকে হালকা বাদামি রঙের একটা জামদানী শাড়ি তুলে আনলো সাঞ্জে৷ মোহরের গায়ের সাথে ধরে বলল
– বাহহ, দারুণ মানিয়েছে তো। তোমার গায়ের সাথে একদম মিশে যাচ্ছে ভাবী৷
বলে শাড়িটার ভাঁজ খুলে টান করলো। হালকা বাদামি রঙের উপর গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুলের ডিজাইনের শাড়ি টা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। সাঞ্জে শাড়িটার ভাঁজ ভেঙে মোহরের গায়ে পেঁচিয়ে পড়িয়ে দিতে লাগলো
সবেমাত্র গোসল করে বেড়িয়েছিল, সাঞ্জে ওকে ঘর থেকে ধরে এনেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই শাড়ি পরানোর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিল। আজ যখন মোহরকে বাড়ি পেয়েছে এই মোক্ষম সুযোগ টা আর হাতছাড়া করেনি।
বেশ খানিক সময় নিয়ে শাড়িটা পড়িয়ে দিল মোহরকে, শাড়িটা ঠিকঠাক পড়ালেও কুঁচির ভাঁজ ধরতে পারছে না। কাঁচা হাতে পাতলা শাড়িটার কুঁচি ধরতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে।
– উফ শাড়িটা কুঁচিটা তো কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না
বিরক্তিতে চ্ জাতীয় শব্দ করে আবারও কুঁচিগুলো সাজানোর প্রয়াস করলো। কিন্তু কোনো ভাবে পেরে উঠছিল নাহ
– দেখি সর আমাকে দেখতে দে
পেছন থেকে তাথই এর গলা শুনে সাঞ্জে ঘুরে তাকালো। বিরক্তি ভরা মুখে হাসির ছাপ ফেলে সরে দাঁড়ালো। তাথই এগিয়ে এসে ঝুঁকে বসে আঙুলের ভাঁজে শাড়ি এঁটে খুব দক্ষ হাতে কয়েক মুহুর্তেই কুঁচি সাজিয়ে ফেললো। উঠে দাঁড়িয়ে মোহরের বুকের কাছের আঁচল টাও ঠিক করে দিল।
– ওয়াহহ,৷ মাশা-আল্লাহ কি দারুণ লাগছে ভাবীইই। ইশ আমিই তো তোমাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছি দাভাই নিশ্চয় আজ পলকটাও ফেলতে পারবে না
বলে টেবিলের উপর থেকে ফোন তুলে খটখট করে কতগুলো ছবি তুলে নিল। মোহর বিব্রত মুখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।
তাথই গিয়ে আবারও বসলো খাটের উপর, তোয়া বিছানাতে শুয়ে পাপ্ পাপ্ শব্দ করে হাত পা নাচাচ্ছে। সেদিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে, যেন এদিকের কোনো কিছু ওর কানেও যাচ্ছে নাহ।
– ভাবী এদিকে তাকাও দেখি
সাঞ্জে মোহরকে ধরে নিয়ে আয়নার সামনে বসিয়ে ছোট্ট একটা ইয়ারিং আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে দিতে গেলে মোহর বলল
– এসব দিও না সাঞ্জে, আমার লিপস্টিক ভালো লাগেনা না
– বলছো? আচ্ছা তাহলে থাক এমনিতেও তোমাকে আজ পুরাই আগুন লাগছে ভাবী
– এসব কথা বার্তা কোত্থেকে শিখিস বল তো? কথারা ছিরিছাঁদ দেখলে গা জ্বলে
তাথইয়ের বিরক্তিভরা গলায় বলা কথাটুকু সাঞ্জে কানেও নিল নাহ। মোহর কে ধরে বলল
– ভাবী চলো তোমাকে দাভাইয়ের কাছে দিয়ে আসি। তোমাকে দেখে ভাইয়ার রিয়েকশন কেমন হবে আমিতো ভাবতেই পারছি না।
– তোর ভাবা লাগবে না, বেশি পাকনামি করবি না। মায়ের কানে গেলে তোকে কি করবে সেটাও ভাবতে পারবি না
তাথই বাচ্চার মুখে ফিডার ধরে বলল কথাগুলো। সাঞ্জের মুখটা যেন খানিক চুপসে গেল৷ মায়ের দস্যিপনা নিয়ে সবাই জানে৷ কাকলি বেগম কেন যে মোহরকে অপছন্দ করে এটা সাঞ্জে বুঝে পাইনা। কি মিষ্টি একটা মেয়ে, একে রেখে ওই তিয়াসাকে নিয়ে আহ্লাদ করে কিভাবে ভেবে পাই নাহ
– উফ মায়ের কথা ছাড় তো। মা ওমনি দেখ গিয়ে বসে আছে নিশ্চয় ওই তিয়াসা ফিয়াসা পেত্নীটার সাথে। ওর ন্যাকা দেখলে আমার পিত্তি জ্বলে ওঠে
হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো ভঙ্গিমায় সাঞ্জে তাথই কে এসব বলেই মোহরের হাত ধরে বেরোতে গেলে পেছন থেকে তাথই আবারও ডেকে বলল
– সাঞ্জে তোকে এখানে ডেকেছিলাম না আমি? বোস এখানে কাজ আছে। মোহর তুমি যাও, ভাই মনে হয় নামাজ পরে ফিরেছে
মোহর কে যেতে বললেও সাঞ্জের দিকে কড়া নজরে তাকালো। আপির এরূপ শাসনবোধক দৃষ্টিতে কিছু একটার ইশারা পেয়ে সাঞ্জে চুপসে মুখেই দাঁড়িয়ে গেল। মোহর আর কি করবে অগত্যা একাই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে
– তুই আসলেই গাধা, মাথামোটা। এমনেই তো দুটো দুমেরুতে চলে বেড়ায়। এখন আবার সাজিয়ে দিচ্ছিস ইমপ্রেস করার জন্যে, তে বউয়ের সাথে বোন ও গিয়ে বসে থাকলে বউয়ের দিকে তাকাবে কি করে।
তাথই দাঁত খিঁচিয়ে কথাগুলো বলতেই সাঞ্জে মুখটা হতবুদ্ধির মতো করে ঘাড় দুলিয়ে বলল
– হ্যাঁ তাই তো। এটা তো ভাবিনি আমি
এগিয়ে এসে খাটের উপর বসতে বসতে বললে তাথই কটাক্ষের ন্যায় বলল
– তা বুঝবি ক্যান। শুধু তো লাফাতে পারিস।
– আমি আরও অনেক কিছুই পারি হ্যাঁ, শাড়িটা তো আমিই পড়ালাম তুই শুধু কুঁচি ধরেছিস।
বলে মুখ ভেংচে বসে রইলো। তাথই অযথা ঝগড়াতে কান দিল নাহ বরং নিজের কাজেই ব্যস্ত রইলো।
মোহর গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। মেহরাজ ঘরে নেই, হয়তো বারান্দায়। এগিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি হাতে তুলে চুল আঁচড়াতে লাগলো।
– তুমি কি সব সাইট গুলো ভিজিট করে এসেছো?
– হ্যাঁ স্যার। আমি সব দেখে এসেছি আমি এখন এ্যাপয়েন্ট করলেই কাজ শুরু হবে।
চোখ দু’টো সোজাসুজি পশ্চিমের দিকে আবদ্ধ রেখেই মেহরাজ আবারও বলল
– আমার হয়তো সামনের সপ্তাহেই যাওয়া লাগতে পারে অভি, তুমি সব রেডি করো।
– জ্বি স্যার।
– আর তোমার শরীরের অবস্থা কেমন? হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়লে যে?
ওপাশ থেকে কিয়ৎকাল কোনো প্রত্যুত্তর এলো নাহ। অবশেষে অভিমন্যু ভীষণ অসহায় গলায় বলে উঠলো
– আর অসুস্থ, সব দোষ ওই মেয়ের। ওর জন্যেই আজ আমার এই অবস্থা
মেয়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে এলো মেহরাজের। কৌতূহলী হয়ে বলল
– মেয়ে? কিসের মেয়ে?
– এই পরশুই একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় ধাক্কা লেগেছিল। ওর হাতে একটা কেক ছিল ওটা ধপ করে পড়ে গেছে বলে ভরা রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করে লোক জড়ো করে ফেলেছিল। তাই আমি সম্মান রক্ষার্থে ওকে দাঁড়াতে বলে আরেকটা কেক আনতে গেছিলাম, আর এসে দেখি মেয়েটাই নেই।
মেহরাজ নির্লিপ্ত গলায় পূর্বোগতের ন্যায় বলল
– তাই কেক টা বাড়ি এনে তুমি একাই সব খেয়েছো তাই তো?
– না মানে জ্বি স্যার
– মেয়েটার তো তোমাকে বলেনি পুরো কেক টা একবারে সাবার করে ফেলো তাহলে ওর দোষ দিচ্ছো কেন?
– ওরই তো দোষ। ও কেক না নিয়ে চলে গেল কেন? এখন কিনেছি যখন ফেলে তো দিতে পারিনা তাই তো একাই খেয়ে ফেললাম। আমি কি জানতাম পেট খারাপ হয়ে আমার বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে
– তোমার বাসায় কি ফ্রিজ ছিল না অভি? সেখানেও রাখা যেত?
– ওহ হ্যাঁ তাই তো? আসলে আমার মনেই ছিল না স্যার
– মনে ছিল না,নাকি কেক দেখে লোভ সামলাতে পারোনি
এবার অপরপক্ষ থেকে জবাব এলো নাহ। অভিমন্যু ধরা পড়া আসামীর ন্যায় চুপসে গেল।ওর ই বা কি দোষ কেক টা ওর ফেভারিট, ওটার লোভ কি সামলানো যায় নাকি!
– সুস্থ না হওয়া অব্দি অফিসে আসার দরকার নেই
বলেই ফোনটা কান থেকে নামিয়ে লাইনচ্যুত করে দিল। পকেটের ভেতর ফোনটা রাখতে রাখতে ঘরের ভেতর পা বাড়ালেও কেমন ধক করে উঠলো বুকের ভেতরটা, আচানক যেন শরীরের সমস্ত শক্তি খুইয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
নিশ্চিন্ত মনে রাখা পা টাও আকস্মিকভাবে স্থির হয়ে গেল। বুকের ভেতরের অবাধ্য যন্ত্রটা ভয়ংকর ক্ষিপ্রতায় ছুটতে লাগলো। চোখদুটো সেঁটে গেল সামনের দৃশ্যে।
চুল গুলো একপাশে রাখতে গিয়ে আয়নাতে এক পাশে সুস্পষ্টরূপে ভেসে ওঠা প্রতিবিম্বটা দেখে থমকে গেল মোহর খানিকের জন্য, পরমুহূর্তেই আয়না থেকে ঘুরে সামনাসামনি ফিরে দাঁড়ালো। যেন একটা আস্তো ধারালো তীর এসে বিঁধ’লো বুকের মাঝে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শাড়ি পরিহিতা নারীমূর্তিটির এহেন নিতান্তই স্বাভাবিক রূপও যেন মেরজারের বুকে অশান্ত প্রলয় জ্বেলে দিল। গায়ের পশম গুলো কাটা ফোঁ’টার ন্যায় তিরতির করে উঠল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় অপলক, স্থির, অনড় দাঁড়িয়ে রইলো।
মেহরাজের এহেন বেহায়া, বেপরোয়া অস্থির করা নজরে মোহর একেবারে মিইয়ে গেল। লোকটা এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? তাকে কি দেখতে খুব কুৎসিত লাগছে? কুণ্ঠা, সংকোচ তড়বড় করে ঘিরে ধরলো মোহরকে।
মোহরের অস্থৈর্য অনাবস্থাকে তরতর করে বাড়িয়ে দিয়ে মেহরাজ এক পা দু’পা করে এগিয়ে এলো। এ জীবনে বহু সুশ্রী,যুবতী, সুন্দরী, আকর্ষণীয় নারী দেখেছে। কিন্তু এমন বৈরী, যোগিনী সম রূপ কি কোথাও দেখেছে? যেই রূপ অতীব সামান্য, চাকচিক্যহীন তবুও এই রূপের কাছে যেন দৃষ্টি আঁটকে যায়, যার দিকে তাকিয়ে দিকবিদিকের খেঁই হারিয়ে ফেলে।
অস্থির দৃষ্টির বিরামহীন নজরে নিষ্পলক চেয়ে এগিয়ে এসে মোহরের সামনাসামনি দাঁড়ালো মেহরাজ। যেন বুকভর্তি নিঃশ্বাস এসে জড়ো হয়েছে। শুকনো ঢক গিলে টকটকে চোখে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলল
– মোহ? শাড়ি পরেছেন যে?
কুণ্ঠিত চোখের প্রসারিত দৃষ্টি মেলে তাকালো মোহর। মুহুর্তেই নামিয়ে নিল আবার চোখ খানা। কম্পমান ওষ্ঠের ভাঁজ থেকে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– আম.. সসাঞ্জে পরিয়ে দিয়েছে
– আমার জন্যে?
মেহরাজের এই একখানা কথা যেন সমস্ত কুণ্ঠাকে চুড়বুড় করে দিল। লজ্জা,অস্বস্তিতে সমস্ত কায়াতে ভ্রম ধরে গেল। ওর সমস্ত জড়তাকে পুরোদমে অগ্রাহ্য করে মেহরাজ দুহাত পকেটে গুঁজে ঘাড় নামিয়ে আনলো। ঝুকে এসে মোহরের কপাল বরাবর মুখ নামিয়ে বলল
– আমার জন্যে শাড়ি পড়েছেন মোহ?
মোহর বারংবার চোখের পলক ফেলে শুকনো মুখ তুলে তাকালো মেহরাজের অনিমেষ চোখের দিকে। চেয়ে ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বোধক জবাব দিল। মেহরাজ হাসলো। স্মিত শব্দ হলো সে হাসিতে, অধর বাঁকিয়ে দুষ্টু গলায় বলল
– আর কি কেও আছে যাকে দেখাবেন?
মোহর অস্বস্তিতে ঘাড় নামিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু তা সম্ভবপর হয়ে উঠলো না। কিভাবে সরিয়ে নিবে নজরটা? মেহরাজের ওই হাসি মাখা মুখটা যে মোহরের ভুবন ভুলিয়ে দেয়। একটা পুরুষ মানুষের হাসিতেও কি এতটা স্নিগ্ধতা থাকতে পারে? এতটা মোহনীয় হাসি কোনো পুরুষের আদও হয়? নাকি এ মোহরের চোখের ভ্রম! মেহরাজ কি মোহরের চোখে ভ্রম ধরিয়ে দেয়? কিভাবে এতটা অস্থির হয়ে ওঠে ও! এই যে বুকের মাঝে বেগতিক হারে ঝড় উঠেছ, কেন হয় এমন?
– অদ্বিতীয়া লাগছেন মোহ! একদম মোহমায়ার মতনই
মোহর চোখ তুলে তাকানোর আগেই কথাগুলো নিঃসৃত হওয়া মুখটা হারিয়ে গেল। নিজেকে সুস্থির করে তাকানোর সময়টা নেওয়ার আগেই মেহরাজ বেরিয়ে গেছে দরজা ফাঁক করে। শুধু শুভ্র রঙের
শার্টে আবৃত পিঠটাই খানিকের জন্য দৃষ্টিগোচর হলো। মেহরাজ যেতেই বিছানার উপরে ধপ করে বসে পড়লো মোহর, ঘাড় কাৎ করে আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। অস্ফুটস্বরে ভেতর থেকে নিজের লুকায়িত সত্তাটিই যেন বলে উঠলো।
” কি হচ্ছে নিজের সাথে? কোথায় গুম হয়ে যাচ্ছে ? এ কোন মায়া আচ্ছন্ন করছে ওকে? ওই চোখ দুটিতে তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায় মোহর, যেন সম্মোহিত করে ফেলে ওকে! এতটা মায়া, মুগ্ধতা কেন বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে! মাত্র কয়েকদিনের সঙ্গ পেয়ে মোহর কোন ঘোরে ডুবে গেল, কেন গেল? স্বামী হয় বলেই কি নাকি অন্য কোনো কারণ?
বাইরে বেরিয়ে এসেই ঝড়ের বেগে বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিল মেহরাজ। এতটা দূর্বল,উন্মত্ততা সামলানো ওর পক্ষে ভীষণ দায় হয়ে পড়ছিল। তাই তো এড়িয়ে এলো,এক প্রকার পালিয়ে এলো।
মেহরাজ কি করেই বা নিজেকে শান্ত রাখতো! পদ্মলোচন আঁখিদুটি ওকে বারবার সম্মোহন করে ফেলে। মনের ভেতর তীব্র ইচ্ছে জাগে ওই নেত্রপল্লবে একবার, দুইবার, হাজারবার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে। কপালের মাঝের ছোট্ট ওই কালো দাগটিতে একটু কপাল টা ঠেকাতে, অশান্ত অস্থির হয়ে ওঠা পাতলা মুখটাকে বুকের ভেতর চেপে ধরতে, বাহুদ্বয়ের কারাগারে আবদ্ধ করার অবাধ্য ইচ্ছের তীব্রতা তীব্র থেকেও তীব্রতর হয়ে ওঠে, কি করে সামলাতো ও?
ওর স্পর্শ যদি মোহরের অনাকাঙ্ক্ষিত, অসহ্য লাগে? যদি সুবিধাভোগী মনে করে? যদি ভয়ে সিটিয়ে যায়,গুটিয়ে যায়? যদি মনে করে আর পাঁচটা স্বামীর মতো অধিকার ফলাতে চাই সে! মেহরাজ তো মোটেও চাইনা মোহরের ভয় জড়তা,বা অসহায়ত্বের কারণ হতে তার চেয়ে নাহয় এক যুগ অপেক্ষা করাও শ্রেয়!
______________________
অর্ধেক দিনটা নিজের মনের উচাটন সামলাতেই কে’টে গেল মোহরের । দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেলের সময়। খাওয়ার পরে মেহরাজ বেরিয়ে গেছিল কোনো এক কাজে, মোহর ঘরেই ছিল, বিকেল হতে চলল শুয়ে বসে থাকতে ভালোও লাগছে না আর, ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এসে অন্যদিকে যাওয়ার আগেই একটা কণ্ঠে পা থেমে গেল
– এখন মেহরাজকে বশ করতে বউ সেজে শাড়ি পরে ঘুরছো, সো পিটি!
ঘাড় কাৎ করে তাকিয়ে তিয়াসার মুখটা দেখে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ালো মোহর। তিয়াসা এগিয়ে এসে মোহরের আপাদমস্তক দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলল
– এসব করে তুমি রাস্তার ছেলেদের পটাতে পারবে, মেহরাজকে নাহ
– আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি মেহরাজকে পটাতে চাচ্ছি?
ভ্রু নাচিয়ে বাকা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো মোহর। তিয়াসা খিটমিটে গলায় বলল
– এতে মনে হওয়ার কি আছে এটাই তো সত্য। তোমার মতো মেয়েদের কাজই তো এটা। তবে মনে কোরো না তোমার এই ইচ্ছে আমি পূরণ হতে দেব। মেহরাজ আমার, ওকে আমার থেকে কেও ছি/নিয়ে নিতে পারবে নাহ। তোমাকে খুব শীঘ্রই এখান থেকে দূর করবো আমি
মোহর মোটেও রাগলো না তিয়াসার এরূপ কথায়। বরং স্মিত হেসে বলল
– আচ্ছা? করুন দেখি কি করতে পারেন। আপনার জিনিসকে ফিরিয়ে নিন নিজের কাছে, আমিতো আটকাইনি একবার ও, আটকাবোও নাহ। কারণ আমি যানি যা কিছু আমার হয়ে থাকতে চাই তা কেও হাজারটা হাত আনলেও ছি’নিয়ে নিতে পারবে না। তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, দেখেন নিতে পারেন কি না।
বলে আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালো নাহ। দ্রুত পায়ে হেঁটে শাহারা বেগমের ঘরের দিকে গেল। তিয়াসা ওর যাওয়ার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে দাঁত কামড়ে বলল
– এতো দেমাগ তাই নাহ? সব ছুটিয়ে দেব। আমি তোমার কি হাল করতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবে না মোহর, শুধু একবার আমাকে সুযোগ টা পেতে দাও।
বলে গটগট করে হেঁটে কাকলি বেগমের ঘরে ঢুকলো। উনি বসে টিভি দেখছিলেন তিয়াসাকে এভাবে রণচণ্ডী রূপে আসতে দেখে কাকলি বেগম বললেন
– কি হয়েছে রেগে আছো যে?
– খুশিই বা হবো কি করে। চোখের সামনে বউ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতে আমার মাথায় আগুন জ্বলে যাচ্ছে। ওকে আমি আর সহ্য করতে পারছিনা আন্টি। ওকে আমার পথ থেকে যে করেই হোক সরাতে হবে। মেহরাজ আমার,শুধুই আমার। ওকে আমি অন্য কারো হতে দিতে পারি না।
কাকলি বেগম তিয়াসাকে হাত ধরে পাশে বসিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
– শান্ত হও, আগেই মাথা গরম করে ফেললে কি করে হবে। শুধু দেখে যাও মোক্ষম সুযোগ আসা পর্যন্ত।
তিয়াসা কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা। এতদিন এতগুলো বছর যাকে পাওয়ার জন্য মনে প্রাণে তপস্যা করেছে এতসব কারসাজি করেছে শেষ মেষ তাকে অন্য একটা মেয়ে নিজের করে নেবে এটা ও কিছুতেই নিজের চোখের দেখতে পারে নাহ। মেহরাজকে তো ওর চাই, যেকোনো ভাবে যেকোনো মূল্যে, তিয়াসা চৌধুরী কখনো নিজের পছন্দের জিনিসকে দান করবে নাহ।
____________________
প্রকাণ্ড নিশুতি রাত। নভোমণ্ডলে তারার ছড়াছড়ির মাঝে একখানা রূপোর থালা বসানো। ইদানীং চাঁদটা যেন একটু বেশিই উজ্জ্বল লাগে! পূর্ণিমা বাদেই উপচানো রূপোর রঙের তরঙ্গ ছড়িয়ে দেয় ধরণী জুড়ে।
দূর থেকে একটা কুকুরে ডাক ভেসে আসলো, গভীর নির্জনে কুকুরের এই আর্তনাদ টা ভীষণ বিদঘুটে, মৃতবতের ন্যায় শোনালো।
পাশ ফিরতেই চোখ কুচকে এলো, ঘাড়ের পেছন দিকে প্রবল পীড়া অনুভূত হচ্ছে। অস্বস্তি আর যন্ত্রণাভূত হতেই ঘুমে বুদ হওয়া চোখ খানা ধীরে ধীরে সজাগ হলো। লম্বা হাই তুলে উঠে বসল মোহর।
পরনের শাড়িটা কুচকে গেছে, সন্ধ্যার পরে এসে শুয়েছিল, এতক্ষণ ঘুমিয়েছে? কেও একটু ডাকেও নি? অবশ্য কেই বা ডাকবে, এ ঘরের দিকে কেও খুব প্রয়োজন ছাড়া পাও মাড়ায় না।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো। এতক্ষণে চকিত হলো নজর, ঘড়িতে সময় প্রায় একটা অথচ মেহরাজ ঘরে নেই?
ছোট ছোট পা ফেলে বারান্দার স্লাইডিং ডোর সরিয়ে উঁকি দিল, অদ্ভুতভাবে সেখানেও নেই মেহরাজ। এতো রাতে তবে কোথায় গেল লোকটা? দ্বিধাদ্বন্দে ভরা মস্তিষ্কে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো মোহর, প্রচণ্ড কৌতূহল কাজ করছে ভেতরে, এতো রাতে তো এর আগে কোথায় যেতে দেখেনি মোহর। দরজার নবে হাত রাখবে ঠিক তখনি অন্যরকম একটা শব্দ এসে আ’ঘাত করলো কানের নরম পর্দায়, শব্দের উৎসটা খেয়াল করে দরজা খুললে
.
.
.
চলমান।
©Humu_❤️