ফানাহ্ পর্ব-১৯+২০

0
1383

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_১৯

– মুখটা এমন ফ্যাকাসে করে রেখেছিস ক্যান মেহু, কিছু হয়েছে?

শ্রীতমা আসতে আজকে বেশ দেরি করে ফেলেছিল । এসে ক্লাসে বসতে না বসতে টিচার ঢুকেছে। বেশ ঘন্টা দুয়েকের ক্লাস শেষে ক্লাসরুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলল মোহরকে। এসে থেকে ওর নির্জীব, ফ্যাকাসে চেহারা টা বেশ ভাবাচ্ছিল ওকে ৷ শুধু যথাযথ সুযোগের অভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি।

– আগে বল আমাদের ভার্সিটিতে তিয়াসা চৌধুরী নামের কোনো স্টুডেন্ট আছে? রিসেন্ট ইন্টার্নি শেষ করেছে বা করছে?

– এ কথা কেন জিজ্ঞাসা করছিস বল তো?

– আগে তুই বল আমাকে

শ্রীতমা বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো। খানিক বাদে জড়ো হওয়া ললাটের ভাঁজ প্রসারিত করে বলল

– হ্যাঁ হ্যাঁ আছে। রিসেন্ট ই ও ইন্টার্নি কমপ্লিট করে হসপিটালে জয়েন করেছে। শুনেছি অনেক বড়োলোকের মেয়ে,আর খুব অহংকারী। আমার রুমমেট ওর গল্প করেছিল। একই ব্যাচের ওরা।

খানিক থেমে মোহর কিছু বলার আগেই ও বলল,

– কিন্তু তুই হঠাৎ ওর কথা জানতে চাইছিস কেন বলতো?

মোহর তপ্ত শ্বাস ফেললো। সুগভীর চোখের প্রসারিত দৃষ্টিতে তাকালো শ্রীতমার দিকে। সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে সকালের সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। প্রায় গেইটের সামনে এসে পৌঁছালো পুরো কথা টা শেষ হতে হতে৷ তমা ভ্রুকুটি করে বলল

– এতো রেখে ওই জল্লাদ, ধিরিঙ্গি টাকেই তোর সতিন হতে হলো মেহু। ও আচ্ছা বজ্জাত মেয়ে আমি শুনেছি। তোর লাইফটাকে যে ঘেটে দেওয়ার জন্য ও সব টোটকা মশলা লাগাবে তা ভালই বুঝতে পারছি।

মোহর ক্লান্ত ভঙ্গিমায় কিঞ্চিৎ হেসে বলল

– লাইফ এমনিতেও খুব একটা সমতলে নেই। আমার এখন নিজেকে নিজেরই বোঝা মনে হচ্ছে। না আমার সাথে ওই লোকটার বিয়ে হতো নাইবা এতো সব ড্রামা হতো। সেদিন একা একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই পারতাম।

– মোটেও না। ভগবান যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। এতে নিশ্চয় বিধাতা তোর ভালোই লিখেছেন

– কি ভালো লিখেছে বলতে পারবি? শুধু কতগুলো মানুষের চক্ষুশূল হওয়া ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না নিজেকে

মোহরের বিতৃষ্ণা ভরা কথাগুলো গলা হতে নিঃসৃত হতেই শ্রীতমা ওর হাতটা ধরে দাঁড় করালো। বেশ গুরুতর ভঙ্গিমায় বলল

– বিয়েটা তো তুই পুরো পরিবার কে করিস নি, বা স্বেচ্ছায় পটিয়েও করিস নি। তোরা দুজনই সে পরিস্থিতি সাপেক্ষে বাধ্য ছিলিস এটা তো কোনো বাচ্চারও বুঝতে অসুবিধা হবে নাহ তবুও এই কথাগুলো কেন বলছিস বল তো। এসব বাইরের মানুষের কথা বাদ দে, মানুষই মানুষের দুশমন। সেখানে অন্য কারো আচরণে তুই কেন নিজেকে দোষারোপ করবি, তুই যার আমানত হয়ে এসেছিস সে তো তার খেয়ানত করছে না। ভরা রাস্তায় যে তোর গায়ে তোলা হাতটা আঁটকে যদি তোর ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে সে বাকিটা জীবন ও পারবে পাশে থাকতে।

মোহরের ভাবভঙ্গিমায় তখনও কোনো পরিবর্তন এলো নাহ৷ স্থির দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার সামনের দিকে চেয়ে, তমা ওর গালে হাত রেখে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল

– এত কেন ভাবছিস বল তো। আমাকেই দেখ জন্মের পর থেকেই অনাথ আশ্রমে বড়ো হয়েছি, আঠারো বছর পর সেই ছাদটুকুও হারিয়েছি। আমার সবকিছুই তো তোর জানা। আশ্রম থেকে যখন চলে আসতে হলো তখন তুই ই তো বলেছিলি ‘ চিন্তা করিস না শ্রী যার কেও নেই তার স্রষ্টা আছেন, তোকে সেই দেখবেন ‘ দেখ আজ আমি একা থেকেও কতো ভালো আছি। টিউশনি করিয়ে আমার দিন দিব্বি চলে যায় আরামসে। আর। সেখানে তোকে বিধাতা একজন রঙিন দূত পাঠিয়েছে যে নিজের রঙেই রামধনু করে দেবে তোর নিস্তেজ জীবনটা। কিসের দোটানায় ভুগছিস তুই? কি হারানোর ভয় পাচ্ছিস আর? যা হারাবার হারিয়েই তো গেছে। এখন যেটা ভগবান তোকে দিয়েছে ওটাই আঁকড়ে ধরে থাক।

– কিন্তু শ্রী, যাকে চিনি না জানি না তাকে স্বামী মেনে ভরসা করে নেব? ও বাড়ির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই আমায় পছন্দ করে নাহ

– ও বাড়ির লোক তো তোকে বউ করে আনেনি, যে এনেছে সে তো পছন্দ করে?

মোহর ছলছল চোখে তাকালে শ্রীতমা মোহরের হাতটা আরও জোরে ঝাপটে ধরে বলে

– মেহু, যে মানুষটা একটা মেয়ের সম্মান বাঁচাতে তার গুরুদায়িত্বটা নিজ ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে সে আর যাই হোক ঠক হবে এমনটা আমি ভাবতে পারছি না। আজ তো ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে বছর বছর প্রেম করে মাতামাতি করেও বিয়ের কথা শুনলে পালাই সেখানে তিয়াসার মতো এমন বড়োলোক বাপের একমাত্র মেয়েকে ছেড়ে তোকেই বেছে নিল। ভালো মানুষি দেখিয়ে বিয়ে করে এনে মুখের উপর দুটো হাজার টাকার বান্ডিল ছুড়ে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিতে পারতো। সেখানে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে বউ রূপে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের ঘরে অবদি রাখছে অথচ স্বামীত্ব ফলাতে একবার ছুয়েও কিন্তু দেখেনি মেহু।

বিরতিহীনা শ্রীতমা আবার বলে গেল

– পরিবারের সামনে, ভরা রাস্তায় যে তোর হাত ধরে পাশে দাঁড়ায় তাকে অন্তত অবিশ্বাসের ট্যাগ লাগিয়ে অপমান করিস না। সম্পর্ক আগাতে সে যখন এতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে তোর কি উচিত না নিজের দিক থেকেও একটু এগোনো? আর কতদিন আটকে রইবি এক জাগায়?

অকস্মাৎ ব্রেক কষে গাড়িটা থামিয়ে কোনো রকমে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া থেকে সামলে নিল অভিমন্যু। সানন্দে গাড়ি চালাচ্ছিল হুট করেই লাল রঙের একটা গাড়ি এসে ওকে টপকে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিমন্যু পরিস্থিতি উপলব্ধি করে সামলে ওঠার আগেই সামনের গাড়ি থেকে বের হয়ে গটগট পায়ে এগিয়ে এসে গাড়ির জানালার কাঁচে ধাক্কাতে লাগলো

– গাড়ি থেকে বেরোও, ফাস্ট

অভিমন্যুর বিরক্তিতে মুখ কুচকে এলো। গাড়ি দেখেই বুঝেছিল এই মালটাই এসেছে তাকে জ্বালাতে।

– কি বলছি কানে যাচ্ছে না? গেট আউট ফ্রম দ্যা কার ড্যাম ইট!

অভিমন্যু প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেরোলো গাড়ি থেকে। অবিলম্বেই তিয়াসা চড়া গলায় বলল

– তোমার স্যার কোথায় হ্যাঁ? ওকে ফোনে পাচ্ছি না কেন?

– স্যারের ফোন স্যার জানেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করে কি হবে

তিয়াসা অভিমন্যুর এমন গা ছাড়া কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। চেঁচিয়ে বলল

– তোমার তেড়া বাঁকা উত্তর শুনতে আসিনি। তোমার স্যার কোথায় সেটা ভালোই ভালোই বলে দাও। নয়তো তোমার গাড়ির কাঁচ ভে’ঙে দেব আমি

– ম্যাডাম এটা স্যারের গাড়ি, আমাকে তো শুধু চালাতে দিয়েছে। ভাঙলে কৈফিয়ত টা আপনিই দিবেন

– সামান্য একজন পিএ হয়ে আমার সাথে তর্ক করার সাহস পাও কি করে তুমি। আমি আজই ড্যাডকে বলে তোমার চাকরি উচ্ছন্নে দেব স্টুপিড।

– ম্যাডম আপনি নিজেই বললেন আমি সামান্য পিএ। তাহলে আপনিই বলুন স্যারের ফোন কলস এর মতো পারসোনাল ব্যাপারে আমি কিভাবে জানবো, আর তাছাড়াও আমি কক্সবাজারে গেছিলাম, আজকে সকালের ফ্লাইটেই ল্যান্ড করেছি। বিশ্বাস না হলে আমার টিকিট দেখতে পারেন আপনি।

তিয়াসা খানিক দমে গেল। কিন্তু রাগে জিদে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। আজ রাস্তা ভর্তি মানুষের সামনে অপমান করেছে মেহরাজ ওকে। তাও আবার ওই লেইম চিপ মেয়েটার জন্য। এর উত্তর ওর চাই ই চাই, কোনো কথা ছাড়াই ধুপধাপ পা ফেলে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আজ মেহরাজের সাথে দেখা করেই ছাড়বে।

তিয়াসা চলে যেতেই অভিমন্যু পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরলো। চটপটে গলায় বলল

– স্যার তিয়াসা ম্যাডাম গাড়ির সামনে এসেছিল

– অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে দিয়েছো?

– এমা কি বলেন না না। আমি বলতে চেয়েছি উনি আমার গাড়ি থামিয়েছিল। আপনার কথা জিজ্ঞাসা করলো, এখন মনে হয় অফিসের দিকেই গিয়েছে

তারপর আর কিছু শোনা গেল না ওপাশ থেকে। অভিমন্যু বাধ্য ভৃত্যের মতো ‘ ইয়েস স্যার ‘ বলে ফোনটা রেখে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিল।

– স্যার আসতে পারি?

– কাম ইন

হাস্যজ্বল চেহারার মোটা সোটা গোলগাল গড়নের মাঝ বয়েসী লোকটা এগিয়ে এলো কতগুলো ফাইল হাতে। হালকা নীল রঙের ফাইলটা মেহরাজের হাতে তুলে দিতে দিতে বলল

– এই ছবি গুলো আজই মেইল করেছেন মি.রায়ান গসলি৷ আপনি অ্যাপ্রুভাল দিলেই শিপ ঢুকবে খুলনাতে।

মেহরাজ ফাইল গুলো চেক করা অবস্থায় হুট করে কেবিনের দরজা খুলে কেও হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো। মেহরাজ সেদিকে না তাকালেও ইবনাত হক সেদিকে মুখ ভরা বিব্রতি নিয়ে তাকালো। ভয়াতুর চাহনিতে একবার আড়চোখে মেহরাজকে পরখ করে নিল। তার মুখাবয়ব পুরোপুরি স্বাভাবিক। তবুও ভীতিকর ভাবনা জড়ো হলো ইবনাত হকের মস্তিষ্কে। । মেহরাজ দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে স্টাফদের সাথে দেখা বা মিটিং করে, তা বাদে পারমিশন বা রেফারেন্স ছাড়া ওর কেবিনে আসার সাহস কেও করে নাহ।
ভয়াতুর চাহনি ঠেলে খানিক হাসি হাসি মুখে বলল

– আরে তিয়াসা ম্যাডাম, ভালো আছেন?

– আপনি বাইরে যান ইবনাত আংকেল আমি রাজের সাথে পারসনালি কথা বলতে চাই

ইবনাত দ্বিধাদ্বন্দ্বিত চোখ মুখে মেহরাজের দিকে তাকালো। সে খুব স্বাভাবিক গতিতে ফাইলটা সম্পূর্ণ ভ্যারিফাই করে সেটা ইবনাতের হাতে দিয়ে বলল

– আমি আমার পছন্দ মতো শিপের পিকচার মেইল করে দেব মি.গাসলি কে। আপনি আগেরটাই রিসিভ করার ব্যবস্থা করুন

– জ্বি স্যার, আসছি

বলেই মেহরাজের পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে গেল। তিয়াসা এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে, মেহরাজ আবারও ওকে ইনসাল্ট করলো! এই স্টাফের সামনে যাদের কি না ওর বাবাই বেতন দিয়ে খাটায়। বড়ো বড়ো পা ফেলে তিয়াসা মেহরাজের সামনে এসে দাঁড়ালো,

– তুমি আমার সাথে এমন কি করে করতে পারলে মেহরাজ। রাস্তার মাঝে অপমান করেও হয়নি এই স্টাফের সামনেও আমাকে হেয় করলে?

– কেবিনে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হয়। এই মিনিমাম বোধ টুকু নেই?

– কথা এড়িয়ে যাবে না। দুইদিন কি থাকলে একসাথে আর এতো প্রটেকটিভ হয়ে উঠলে, এতো কেয়ার? কই আমাকে তো করোনি কখনো? একটা বস্তি, ছেলেবাজ মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছো তুমি? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ওকে শে..

ক্ষেপে উঠলো মেহতাজ। চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে তিয়াসার সামনে দাঁড়ালো দূরত্ব বজায় রেখে, রাগান্বিত গলায় ফোঁসফোঁস করে বলল

– মোহরের ব্যাপারে একটাও বাজে কথা নয়, আমার ব্যাপার আমি বুঝে নেবো। আমি কার সাথে কেমন ব্যবহার করবো কার মায়ায় জড়াবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মেহরাজ না কাওকে জবাবদিহি করে নাইবা কারো ইচ্ছাতে কাজ করে।

মেহরাজের এহেন ক্ষিপ্ত রূপে তিয়াসা দুকদম পিছিয়ে গেল। ভড়কানো চাহনি দিয়ে খানিক তাকিয়ে থাকলেও পরমুহুর্তেই মনে হলো এই রাগ তৎপরতা,উৎকণ্ঠা সব ওই মোহরের জন্য। ওই মেয়েটার জন্যে আজ ওকে অপমান হতে হচ্ছে। তিয়াসা কান্নামিশ্রিত গলায় চেঁচিয়ে বলল

– ওই দুই পয়সার মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে ইগনোর করতে পারো না রাজ। তুমি আমার, তোমাকে আমার চাই-ই এর জন্য যা করার আমি করবো। প্রয়োজনে ওই মেয়েটাকে নর্দমায় ফেলে আসতে আমি তিয়াসা চৌধুরী দুবার ভাববো নাহ।

মেহরাজ আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারছে না। ওর সামনে দাঁড়িয়ে এতো বড়ো দুঃসাহসিকতা অন্য কেও করলে এতক্ষণে পুঁ’তে রাখতে দুবার ভাবতো নাহ। শুধুমাত্র মেয়ে বলে মেহরাজ দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
মেহরাজ তিয়াসার দিকে রক্তচক্ষুতে চেয়ে চিৎকার করে বলল

– মোহর আমার, ওর দিকে বাড়ানো হাত ঝলসে দিতে আমি মেহরাজ আব্রাহাম ও দুবার ভাববো না। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না। তার ফল একেবারেই ভালো হবে নাহ। দূরে থাকো নিজের সম্মান, সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখো

তিয়াসা থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো খানিক।এর আগে কক্ষনো মেহরাজের এমন ভস্ম করা চাহনি কেও দেখেনি হয়তো। এতো উত্তেজনা, অস্থিরতা শুধু ওই মেয়েটার জন্যে? এই মায়া,মোহ তো তিয়াসা চেয়েছিল। ওর এতদিনের বাসনা দুমড়ে মুচড়ে গেল?
তিয়াসার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে মেহরাজ জলদগম্ভীর গলার ধারালো স্বরে ধমকে উঠলো

– আমি ধৈর্যহারা হয়ে যায় তার আগেই এখান থেকে বেরিয়ে যাও তিয়াসা। গেট আউট!!

ভয়ে থতমত খেয়ে গেল তিয়াসা। মেহরাজের ক্রুদ্ধতা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো দুঃসাহস চেয়েও যোগাতে পারল নাহ। দ্রুত পায়ে কেবিনের দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।

– আলে লেলেলে, গুল্লু গুলু! চুল্লুমুনু! বুলবুল

তাথই প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা ভরা চোখে তাকালো সাঞ্জের দিকে। কখন থেকেই এসব অদ্ভুত শব্দ করছে। আর বাচ্চাটাও আছে, এসব শুনেই খিলখিল করে হাসছে। এসব বিশ্রী নাম শুনে এমন খিলখিলানোর মানে বুঝতে পারে না তাথই।

– ভাবী শোনো ওর নাম চমচম, বুঝলা। দেখো কেমন তুলতুলে টুসটুসে। এসব কঠিন নাম ওকে মানাবে না৷ তাই ওর নাম চমচম, আমি দিলাম তোমরা সবাই ও তা বলেই ডাকবা।

সাঞ্জের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো মোহর। কোলের বাচ্চাটাও কোনো কিছুর অর্থ না বুঝেই ফোকলা গালে হেসে উঠলো। ওর হাসি দেখে সাঞ্জে প্রাণোচ্ছল গলায় বলল

– দেখলে ওর ও নামটা পছন্দ হয়েছে। বাচ্চারা যখন কিছু পছন্দ করে সেটা দেখে ওরা এমন খিলখিল করে হাসে, আর যেইটা পছন্দ হয়না সেটা দেখে কাঁদে। ও যখন নামটা শুনে হাসছে তার মানে ওর পছন্দ হয়েছে,, ইয়ে চমচম, তাকাও আমার দিকে তাকাও

বলেই তোয়ার হাতটা ধরে টানতে লাগলো। তাথইয়ের মেজাজ টা তুঙ্গে উঠে গেল এবার। এক তো আজ কয়েকদিন ধরেই বাচ্চাটাকে ওর কাছে রাখতে দেয়না। সারাদিন কাকলির কাছেই থাকে। সুযোগ পেলেই মোহর নিয়ে বসে,এখন তো সাঞ্জেটাও এসে জুড়েছে। তার উপর এসব উদ্ভট নাম দিচ্ছে। চমচম? এটা কখনো কোনো মানুষের নাম হয়? সে কত সাধ করেই তো নাম রেখেছে তোয়া। তাথই এর সাথে মিলিয়ে। সেটা তো বলেই না।এতক্ষণ ধরে গুলু মুলু চুলু যা তা বলে এখন আবার চমচম দিয়ে নামকরণ করছে।

ধপ করে উঠে দাঁড়ালো তাথই, ধুপধাপ পা ফেলে ওদের সামনে গিয়ে বাচ্চাটাকে ধপ করে কোল থেকে তুলে বুকের সাথে ধরে বলল

– ও আমার মেয়ে, আমি যা নাম রেখেছি সেটাই ওর নাম হবে। এসব গুলুমুলু চমচম তোদের কাছেই রাখ

বলেই ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সাঞ্জে ওর দিকে তাকিয়ে আহাম্মক বনে গেল। টেনে টেনে বলল

– যাহ বাবা। যেই চমচম বেচে মানুষ লাখপতি হয়ে গেল এমন দামী একটা নাম কিনা হেয় করে চলে গেল। এই জন্যেই বলে বাঙালির ভালো করতে হয়না।

মোহর হুহা করে হেসে দিল সাঞ্জের কথায়। এইরকম ছেলে মানুষী দেখতে থাকলে পাগল হয়ে যাবে ও। মোহরের হাসি দেখে সাঞ্জে খানিক মুখ ফুলিয়ে রেখে, চটপট করে বলল

– এই যে সুহাসিনী। বহুত হেসেছেন।এখন ফট করে রেডি হন তো। বেরোবো এমনিতেই চমচমের জন্য দেরি হয়ে গেছে

– আজকে না গেলে হয় না? এমনিতেই তো বিকেল গড়িয়ে পড়লো

মোহরের কথাকে হরদমে উপেক্ষা করে ঘনঘন ঘাড় নাড়িয়ে সাঞ্জে নাকচ করে বলল

– একদমই না। আমার অনেক শপিং করতে হবে। আর আমি আজই যাবো। তোমাকেও যেতে হবে, জানি না আমি। আর বিকেল হোক বা রাত ওসব ব্যাপার না। দাভাই থাকলে অল গুড বেটার বেস্ট।

সাঞ্জের মুখে দাভাই শুনে থমকে গেল মোহর। জড়তাগ্রস্ত হয়ে বলল

– দাভাই মানে? উনি কি আসছেন?

– জ্বি, তোমার উনিই নিয়ে যাবে শপিংয়ে। এখন শিগগিরী রেডি হও তো। আমাকে বলেছে দেরি করলে নিয়ে যাবে না

বলে তাড়া দিয়ে মোহরকে নিজের ঘরে পাঠালো রেডি হওয়ার জন্যে। মোহরের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানতে হলো। কিন্তু ওই মানুষটার কথা শুনলেই তো বুকের ভেতর টাইফুন শুরু হয়,এই যে আবারো শুরু হয়েছে!

বেলা গড়িয়ে সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিমে। টকটকে লালাভ রোশনাইতে ভরে গেছে আকাশে বুকের পশ্চিমাস্থল।
ঘর্মাক্ত শরীরে, ব্যস্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো মেহরাজ। গায়ের ব্লেজারটা খুলে হাতে ঝুলিয়ে দ্রুতপায়ে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠলো। ঘরের সামনে এসে নব মুচড়ে দরজাটা খুলতেই পা বাড়াতে গিয়েও থমকে গেল।
আধখোলা দরজার নবে হাত রেখেই থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো আয়নার প্রতিফলিত চেহারাটার দিকে। আস্তে আস্তে পা ফেলে ভেতরে এসে দাঁড়ালো মোহরের পেছনে।
কারো ঘরে ঢোকার শব্দে মোহর তড়িঘড়ি করে পেছনে তাকিয়ে মেহরাজকে দেখেই দমে গেল। কিন্তু পরমুহূর্তে ওর এহেন নিষ্পলক চাহনি দেখে ইতস্তত ভাবে জড়তা ঘিরে ধরলো।
মোহরের জড়তা ভরা মুখাবয়বকে দেখেও অগ্রাহ্য করে তাকিয়ে রইলো বেহায়া নজরে। কালো রঙের একটা ঘের দেওয়া জামা পরেছে, জামাটা পায়ের গোড়ালি সমান লম্বায়। কবজি পর্যন্ত কালো হাতা আর পাতলা জরজেটের কাপড় টা মোহরের চিকন শরীরে লেপ্টে জড়িয়ে আছে। মেহরাজ শুকনো ঢোক গিলে মোহরের নতমস্তক মুখের দিকে তাকালো।

মেহরাজের দিকে মুখ করে থাকায় আয়নাতে মোহরের পিঠ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর মেহরাজের নিষিদ্ধ দৃষ্টি গিয়ে ঠেকলো একদম সেইখানটাই।
মোহর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করছিল, গলাটা সামান্য উঁচিয়ে তাকালো মেহরাজের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত চেহারায়। চোখের নিকে, নাকের আশেপাশে বিন্দু বিন্দু তৈলাক্ত ঘাম জমেছে, পরিপাটি করা চুলগুলো অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়ে আছে কপালে। মোহরের চেয়ে থাকা অবস্থায় মেহরাজ এগিয়ে এলো, হাতের ব্লেজারটা খাটের উপর ফেলে গলার টাই ঢিলে করে দিল।

– আমি আসছি

বলেই মোহর সরে যেতে নিলেই ওর ওড়না টা আলতো স্পর্শে ধরলো মেহরাজ, ওড়নাতে টান পড়লে মোহর জিজ্ঞাংসুক অস্বস্তিকর চাহনিতে তাকায়,সেদিকে চোখ রেখে হাতটা তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিয়ে মেহরাজ ধীর গলায় বলল

– দাঁড়ান

মোহরকে দাঁড় করিয়ে ওর একদম সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিল ঘাড়ের দিকে। ওর শরীরকে কোনো ভাবে স্পর্শ ছাড়াই চুলগুলো তুলে ঘাড়ের একপাশে রেখে আরও কাছে এগিয়ে এলো। মোহরের সারামুখ জুড়ে জড়ত্ব, একরাশ ভীত কৌতুহল। মেহরাজ সেসব পুরোদমে অগ্রাহ্য করে একদম কাছাকাছি আসলেও খানিক দূরত্ব বজায় রাখলো।
দু’হাত মোহরের কাধের উপর দিয়ে নিয়ে পেছনে জামার ফিতাটাতে হাত রাখলো। মেহরাজের আঙুলের স্পর্শ হীনাই কেঁপে উঠলো মোহর। মেহরাজের শরীরের সেই মাদকময় নেশাভরা ঘ্রাণ টা একদম খুব কাছ থেকে এসে নাসারন্ধ্র ভেদ করছে, পুরুষালী নিঃশ্বাস গুলোর ঝংকার তোলা শব্দ অত্যন্ত নৈকট্যে আঁছড়ে পড়ছে। মেহরাজ কয়েক লহমা সময় নিয়ে পিঠের ফিতাটা লাগিয়ে সরে এলো। পুরোটা সময় একচুল স্পর্শ না করলেও মোহরের অবস্থা করুন, পরনের জামাটা খামচে ধরে রেখেছে। মেদুর গালটা টকটকে হয়ে আছে। মেহরাজ ওর গভীর চোখে মোহরের আপাদমস্তক পরখ করে বলল

– এতটা ভয় পাচ্ছেন কেন মোহ, স্পর্শ করিনি তো। আপনি না চাইলে করবোও না। অপ্রিয় স্পর্শে কোমলমতি ফুলকে মিইয়ে দিতে চাইনা আমি। চোখের সামনে তার পরিস্ফুটিত রূপ দেখলেই শান্তি পাই।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_২০

– দাভাই ওদিকটাই চলো না, আমার আরও কেনা বাদ আছে

– তিন জোড়া হাত ভরে ফেলেছিস সাঞ্জে, এবার কিন্তু মাথায় করে হাঁটা লাগবে

সাঞ্জে শপিং ব্যাগ গুলো দু’হাতে সামলাতে সামলাতে বলল

– দরকারে তাই নিতে হবে। কতদিন শপিং করি নাই বলো তো।

বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এস্কেলেটরে উঠে দাঁড়ালো। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এটা ওটা কিনেই যাচ্ছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে তবুও থামাথামির নাম নেই ওর। এ দোকান ও দোকান ঘুরে একটা একটা করে জিনিস কিনছে আর মোহর সদা সর্বদা ওর শান্ত স্বভাবে পিছু পিছু হাঁটছে।
বেশ অনেকটা সময় হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত হলেও সাঞ্জের এমন প্রাণোচ্ছলতা দেখে মুখ ফুটে কিছু বলেনি। তবে মোহরের মেদুর গালে ক্লান্তির বিন্দু বিন্দু ছাপ মেহরাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে পারেনি, সাঞ্জে এগিয়ে গিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরের দোকান গুলোতে ঢুকে পড়েছে। মোহর ক্লান্ত চাহনিতে এস্কেলেটরের দিকে চেয়ে এগোতে গেলে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাজ এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল

– ব্যাগগুলো আমার কাছে দিন

মোহর ঘাড় উঁচিয়ে একবার তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি নামিয়ে নিল। নতজানু হয়ে ধীমি গলায় বলল

– আমি পারবো, থাক

মেহরাজ দ্বিতীয় শব্দটি ব্যয় না করে হাত বাড়িয়ে মোহরের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে বলল

– আমি থাকতে আপনাকে পারতে হবে নাহ মোহমায়া, চলুন যাওয়া যাক

বলে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। এস্কেলেটরের সামনে আসলে মোহর পা ফেলতে গিয়েও থেমে গেল, সাঞ্জে আজ ওকে জোর করে স্টিলেটো হিল পরিয়েছে, এমনিতে বেশ লম্বা হওয়ার দরুন হাই হিল কখনো পড়ার প্রয়োজন হয়নি, আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাঞ্জের জোরাজুরিতে পড়েছে বটে কিন্তু চলন্ত সিড়ির এহেন দ্রুতগামী গতি দেখে চিকন পায়ার হিলটা দিয়ে পা রাখতে বেশ ঘাবড়ে গেল মোহর, কিন্তু জড়তাগ্রস্ত হয়ে ব্যাপারটা বলতেও পারছে নাহ। দ্বিধাদ্বন্দ্বিত মুখাবয়বে মুহূর্ত খানেক দাঁড়িয়ে থেকে সাহস জুগিয়ে পা এগোতে গেলে রাশভারি গলার নরম স্বরটা পাশ থেকে বলে উঠলো

– আমার হাতটা ধরুন

সচকিত হয়ে পাশ ফিরে তাকালে শপিং মলের চিকচিকে আলোতে মেহরাজের শুভ্র শান্ত মুখটা বেশ স্নিগ্ধ দেখালো মোহরের নিকট। স্বাভাবিক গলায় বলল

– আমি একাই যেতে পারবো।

– আমার দু’হাতে ব্যাগ না থাকলে বলার অপেক্ষা করতাম না, আমার হাতটা ধরুন

ভারি গলার কথাগুলো বেশ দাপটধারী শোনালো মোহরের কানে। মনে হলো যেন ছোট বাচ্চাকে হাত ধরে হাঁটার জন্যে শাসন করলো মেহরাজ। এক মুহুর্তের জন্যে মোহরের মনটা বাধ্য শিশু হয়ে উঠলো। জড়তা, বিজড়তা কাটিয়ে মনের অদ্ভুত ইচ্ছাতে সায় দিয়ে আলতো স্পর্শে মেহরাজের নেভি ব্লু শার্টে আবৃত বাহুখানা ধরলো, মেহরাজ চোখ দু’টোয় সামনে ইশারা করে এগোতে বললে মেহরাজের সাথেই পা ফেলল। কিন্তু চলন্ত সিড়ির খাঁজকাটা ভাঁজে স্টিলেটোর সরু মাথা টা ঢুকতেই পদক্ষেপ নড়বড়ে হয়ে উঠলো মোহরের, গোড়ালি বাঁকিয়ে পড়তে নিলে মেহরাজের বাহু দু’হাতে সপাটে ঝাপটে ধরলো।
অসন্ন বিপদের কথাটায় আগে থেকেই অবগত থাকলেও অপ্রস্তুত হয়ে গেল মোহর, মেহরাজের হাতটা ধরা না থাকলে নিশ্চিত পা উলটে পড়তো সবার সামনে, কি একটা লজ্জার ব্যাপার হলো ছি ছি! লজ্জিত নজরে কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে মেহরাজের দিকে তাকালো মোহর, গম্ভীর মুখাবয়বের দায়সারা দৃষ্টি সরলভাবে নিবন্ধিত। মোহর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালো। তবে এবার আর মেহরাজের হাত ছাড়লো না, ফিট্ খানেক দূরত্ব ঘুচিয়ে যান্ত্রিক সিড়িটা এসে থামলো দোতালায়। আলতো ভাবে হাত সরিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকলো দুজন, তন্মধ্যে একটা সুহাস্য কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো অদূর থেকে, মেহরাজের সঙ্গে মোহরও পিছু ঘুরে দাঁড়ালো

– গুড ইভিনিং স্যার।

– গুড ইভিনিং

হাস্যজ্বল চেহারার যুবকটির সম্ভাষণে কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো মেহরাজ। ছেলেটি দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মেহরাজের সাথে কিছু একটা চোখের ইশারায় বলেই তার সানন্দিত চেহারা টা মোহরের দিকে ফিরিয়ে বলল

– আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।

অচেনা ব্যক্তিটির অভিবাদনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুততায় বিব্রতবোধ করলেও সহবত সুলভ গলায় সালামের জবাব দিল মোহর

– ওয়ালাইকুমুস সালাম

– ম্যাডাম আমি অভিমন্যু। সারের পিএ

মোহর সৌজন্যবোধক হেসে ‘ও’ বলল। অভিমন্যু নামক ছেলেটা মেহরাজের সাথে কিয়ৎকাল কথা বলল, তাদের সংলাপের হেতু হলো অভিমন্যু নামক ছেলেটাও শপিং করতেই এসেছিল। অত্যন্ত বাধ্যগত ভৃত্যের মতো মেহরাজ দিতে না চাইলেও জোর করে ব্যাগগুলো নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল

– স্যার আমি এগুলো গাড়িতে রেখে দিচ্ছি। আসি ম্যাডাম

বলেই প্রস্থান করলো। যেন বাতাসের মতো এসে অনিলের মতই গমন করলো। মোহর ওর যাওয়ার পানে চেয়ে থাকা অবস্থায় মেহরাজ বলল

– আমার সবচেয়ে ট্রাস্টেড স্টাফ অভিমন্যু মুখার্জি, হি ইজ লাইক মাই ইয়ংগার ব্রাদার।

মোহর শুধু মুখ গোল করে ও বললে আবারও হাঁটা শুরু করলো দুজনে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর সব কেনা কাটা করে ক্ষান্ত হলো সাঞ্জে, মোহরের সাথে গল্প করতে করতে শপিং মল থেকে বেরিয়ে এলো একসাথে তিনজনে। মল থেকে মিটার খানেকের দূরত্বে পার্কিং প্লেস, সেই উদ্দেশেই অগ্রসর হতে লাগলে
হাঁটার মাঝেই হুট করে পেছন ফিরে তাকালে মেহরাজকে না দেখতে পেয়ে মোহরের ললাটে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো, জিজ্ঞাংসুক গলায় বলল

– সাঞ্জে, উনি কোথায় গেল?

সাঞ্জে মোহরের দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে এদিক সেদিক তাকালে মেহরাজকে দেখতে না পেলেও চিন্তিত হলো না, উলটে স্বাচ্ছন্দিত গলায় বলল

– আরে কোত্থাও যাইনি দাভাই। হয়তো ফোন এসেছিল তাই কথা বলতে গেছে, এসে যাবে এক্ষুনি

বলে আবারও হাঁটতে হাঁটতে গল্প শুরু করলো। মোহর সাঞ্জের গল্প শুনতে থাকলেও মুহূর্ত কয়েক বাদে বাদেই পিছু ঘুরে তাকালেও মেহরাজকে কোথাও দেখতে পেল না। হুট করেই কোথায় চলে গেল মানুষটা! নিজের অজান্তেই মোহরের মনের ভেতর ব্যকুলতার সূক্ষ্ম ঢেউ উঠলো, মিনিট কয়েকের অনুপস্থিতিতে কেমন চিন্তার ভাঁজ খাটলো অন্তরে।

– ভাবী, আইসক্রিম খাবে? চলো খাই

বলে সামনের দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। মোহর পা বাড়াতে গেলেও আটকে গেল, ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচিয়ে এলো ওর।
হাঁটতে হাঁটতে মোহরের পা টলমলে হয়ে যাচ্ছে, স্টিলেটো পরার অভ্যাস না থাকায় পায়ের গোড়ালি আর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে চামড়া ছিলে গেছে হয়তো,হিলের ঘর্ষণ আর জ্বলনে পা টলে আসছে। ছিলে যাওয়া স্থানের পীড়ন আর অবিন্যস্ত পদক্ষেপের তাল সামলাতে না পেরে হুট করেই পড়ে যেতে নিলে পাশ থেকেই হাতটা কেও ঝাপটে ধরলো,আকস্মিৎ ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে তাল হারিয়ে ফেললো মোহর। তৎক্ষনাৎ শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে রাখা মানুষটা বলে উঠলো

– মোহ, সামলে হাঁটবেন তো। এক্ষুনি পড়ে যাচ্ছিলেন

মোহর ব্যথাতুর দৃষ্টিতে মেহরাজের দিকে তাকালে মেহরাজ ভ্রুকুটি করা উৎকণ্ঠিত গলায় বলল

– কি হয়েছে? ঠিক আছেন মোহ?

– প্ আমার পা

ততক্ষণে সাঞ্জে দৌড়ে এগিয়ে আসলো। মোহরকে দু’হাতে ধরে রাখতে দেখে বলল

– ভাবী কি হয়েছে তোমার?

মেহরাজ হাতের আইসক্রিমের প্যাকেট টা সাঞ্জের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলো রাস্তার মাঝে। ইঞ্চিখানেক উচ্চতার উঁচু স্টিলেটো টা আলতো ভাবে সযত্নে মোহরের পা থেকে খুলে দিতেই রক্তের বিন্দু মাখা পা টা স্পষ্ট হলো।

– ভাবী তোমার পা তো অনেকখানি ছিলে গেছে, রক্তও তো বেরোচ্ছে

মেহরাজ সুগভীর চোখের অসন্তোষ জনক চাহনি দিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, রসহীন স্বরে বলল

– আপনি এতটা বেখেয়ালি কি করে হলেন, পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে অথচ আপনি এটা পড়েই হাঁটছিলেন

– আমি আসলে বুঝতে পারিনি

মুখ খানা ফ্যাকাসে করে বলল মোহর। মেহরাজ ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল

– গাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবেন?

মোহর ঘনঘন মাথা ওঠানামা করে সম্মতি দিল। বউ যে যথেষ্ট গড়িমা পূর্ণ জেদি স্বভাবের এটা মেহরাজ বেশ জানে। তাই আর কিছু বলল না। এমনিতেও গাড়িটা সামনেই ফিট্ কয়েক দূরত্বে। মোহরের হিল টা হাতে নিয়েই এগিয়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিল মেহরাজ, মোহর সাঞ্জে দুজনেই উঠে বসলে গাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা এসে থামলো আব্রাহাম ম্যানসনের সামনে, গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ফটক পেরিয়ে ঢুকলো তিনজন। ড্রয়িং রুমে তখন আজহার,আরহাম মুর্তজা সহ আম্বি আর কাকলি বেগম ও উপস্থিত। রাতের খাবার খাচ্ছিল সবাই, এই মুহুর্তেই তিনজন ঢুকলে সকলের দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ওর দিকে গেল। আজহার মুর্তজা বললেন

– কি সাঞ্জে, হলো শপিং?

– হ্যাঁ চাচ্চু, অনেক শপিং করেছি আজ, মনটা ভরে গেছে একদম।

সাঞ্জে হাসি হাসি মুখে বলে এগিয়ে গেল টেবিলের দিকে। আরহাম মুর্তজা খেতে খেতে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– ছয় মাসের জন্য তোমার শপিং শেষ। অনেক বেশি অপচয় করো তুমি, এটা কিন্তু মোটেও উচিত নাহ।

সাঞ্জে বাবার কথা কানে নিলো নাহ। সোফাতে বসে এক এক করে সব কিছু বের করে দেখাতে লাগলো। ঠিক তখনি কাকলি বেগম মেহরাজকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– মেহরাজ তুমি কার হিল হাতে করে রেখেছো?

– ওটা ভাবীর, স্টিলেটো পড়ে পা ছিলে গেছে ভাবীর তাই ওটা খুলে ফেলেছে

মেহরাজের আগেই সাঞ্জে নিজেই উত্তর দিল তার মায়ের প্রশ্নের। কাকলি মোহরের ক্ষত হওয়া পায়ের দিকে তাকালো সেটা পুরোদমে অগ্রাহ্য করে বেশ তাচ্ছিল্য ভরা গলায় বললেন

– এখন কি না মেহরাজ বউয়ের জুতা,স্যান্ডেল ও হাতে নিয়ে ঘুরছে। ভালই উন্নতি করিয়েছে মেয়েটা তোমার।

আম্বি বেগম আড়চোখে তাকালো শুধু মোহরের মুখের দিকে। মেয়েটা বরাবরের মতোই এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, তবে মেহরাজ চুপ রইলো নাহ, হাতের হাই হিলটা নিয়েই এগিয়ে এসে স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতেই বলল

– নিজের জুতা,স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ঘুরতে যখন অসুবিধা হয়না বউয়ের টা নিয়ে ঘুরলে আপত্তি কোথায়, বউ তো আমারই।

মেহরাজের কথায় উপস্থিত সকলেই আড়চোখে তাকালো, তবে উত্তর দিলো নাহ। নাজমা রান্নাঘরে আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে আর মিটমিটিয়ে হেসে বলছে

– মোক্ষম জবাব দিয়েছে কাকলি বেগমকে। আরও লাগো পেছনে, ইশ আম্মা থাকলে ভালো হতো।

কাকলি বেগম মেহরাজের এরূপ কথার জবাব খুঁজে পেলো নাহ। তবে টিটকারি দিতে তার বাদ গেল না, ফিচেল গলায় বললেন

– দুইদিন বিয়ে করেই বউ বউ করছো, কদিন বাদে তো বউ বাদে কাওকে চিনবেই না তুমি।

– আগে কদিন যাক, তখন দেখা যাবে নাহয়।

বলেই মোহরের এক হাত ধরে এগোতে লাগলে এতক্ষণে আম্বি বেগম মুখ খুলে বললেন

– তোর খাবার কী ঘরেই পাঠিয়ে দেব বাবু।

– আমরা তিনজনেই বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি মা, তোমরা খাও

আম্বি বেগম প্রত্যুত্তরে আর কিছু বললেন না। বলার মতো কিছু খুঁজেও পেলেন নাহ। ইদানীং চুপচাপ থাকেন সচরাচর, ঘর থেকেও প্রয়োজন বাদে কমই বের হন, শুধু ছেলের খাওয়া দাওয়ার আর সবকিছুর খোঁজ রাখা টাই তার নিয়ম মাফিক হয়। বিয়ে করে যে ছেলে পালটে গেছে এই ধারণা টা তার বুকে আঠার মতো বিঁধে যাচ্ছে দিন দিন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজ স্ত্রীর প্রতি রক্ষণশীলতাও তার কাছে মনে হচ্ছে ছেলে পর হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত।

মেহরাজ না নিজে আর এক লহমা সেখানে দাঁড়ালো আর নাইবা মোহরকে দাঁড়াতে দিল। সোজা নিজ ঘরে এসে মোহরের হাত ছেড়ে দিয়ে কাবার্ডের দিকে গিয়ে বিশাল পাল্লা টা খুললো। ভেতরে কিছু একটা খুঁজতে লাগলে মোহর ভরা গলায় বলে

– আপনি আমার জন্যে বাড়ির সবার সাথে এভাবে কথা বলবেন না প্লিজ।

মেহরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, মোহর খাটের উপর বসেছে পা ঝুলিয়ে, সেদিকে তাকিয়েই বিশালাকৃতির কাবার্ডের সাথে হেলান দিল মেহরাজ, সকৌতুক গলাতে জিজ্ঞাসা করলো

– কিভাবে বলবো না

-, এই যে এভাবে প্রতিবাদ করে। এতে সকলে অসন্তুষ্ট হয়, ভাবে আমি আপনাকে উসকাই এসব কথা বলতে

তৎক্ষনাৎ জবাব দিল না মেহরাজ। আবারও কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বের করলো
এগিয়ে এসে মোহরের সামনেই বসলো হাঁটু গেড়ে, মোহরের বা পায়ের গোড়ালিটা নিজের ভাঁজ করে রাখা হাঁটুর উপরে তুলতে তুলতে বলল

– আমার বউকে কেও কথা শোনালে আমি উত্তর করবো এমনটাই কি সঠিক না? আর নাতো আমি ঝগড়া করেছি নাইবা অযৌক্তিক কথা বলেছি, আ’ভ যাস্ট এক্সপ্লেইনড হোয়াই আ’ম রাইট।

কথাগুলো ঠিক মোহরের বোধগম্যতায় পৌঁছাতে পারলো কি না স্পষ্ট নয় তবে মেহরাজের এরূপ কাজে মোহর দুরন্তরভাবে হতবাক হয়ে সরে আসতে গেলে মেহরাজ ওর পায়ের গোড়ালি চেপে ধরে বলল

– নড়বেন না একদম

– আ আপনি আমার পায়ে হাত কেন দিচ্ছেন ছাড়ুন

মোহর ভীষণ অস্বস্তিপূর্ণ গলায় বলল। ও যে এভাবে হুট করে পায়ে হাত দিয়ে বসবে এটা ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেনি মোহর, বিহ্বলচিত্তে বৈক্লব্য স্বরে বলল

– আমি নিজেই ওষুধ লাগিয়ে নিতে পারবো, ছাড়ুন আপনি

– আমাকে নিজের কাজ করতে দিন মোহমায়া, কাজে ব্যাঘাত একেবারেই অপছন্দ আমার।

আপতিতভাবে মেহরাজের কণ্ঠস্বরটা তুলনামূলক গম্ভীর হয়ে উঠলো। ভারি গলার শাসন সুলভ বাক্য গুলো কর্ণকুহরে সাময়িক প্রভাব বিস্তার করলো। দমে গেল মোহর, কিন্তু তার শরীর, মন,চিত্ত, অভিলাষ কোনো টাই স্থির রইলো নাহ। মেহরাজের পুরুষালী স্পর্শের শীতলতা কেমিক্যালের শৈথিল্যকে ছাড়িয়ে তরতর করে ঠান্ডা করে দিল মোহরের কায়া।
চামড়া সরে যাওয়া স্থানটাতে স্যাভলনে ভেজানো তুলাটা স্পর্শ হতেই দপদপ করে জ্বলে উঠলো, শ জাতীয় শব্দ করে কিঞ্চিৎ কেঁপে চোখ খিঁচিয়ে নিল মোহর। কিন্তু পা সরিয়ে নিতে গেলেও শক্তপোক্ত হাতের থাবা টা আলগা করতে পারলো নাহ। লহমা খানিক পার না হতেই জ্বলন ধরা স্থানে শীতল হাওয়া লাগলে চোখ দু’টো প্রসারিত হলো মোহরের, নিজের পায়ের কাছে মুখ নিয়ে মেহরাজকে ফুঁ দিতে দেখে গলা ঘাড়ের রজ্জু গুলোতে শিরশিরানি বয়ে গেল, ভাঙা ভাঙা গলায় বলল

– ঠিক আছি, ফুঁ দিতে হবে নাহ

মেহরাজ শান্ত নজরে চোখ বুলালো মোহরের অবিন্যস্ত, অস্থির চেহারা পানে। নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করে তবেই উঠে দাঁড়ালো।
বক্স টা জায়গা মতো রেখে দিয়ে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ঢুকলো। মোহর হতভম্বিত রূপে তাকিয়ে রইলো তার সামনে থেকে সরে যাওয়া সুপুরুষটির পানে, বন্ধ ওয়াশরুমের দরজার দিকে ঠিক কতক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো সেই সময় টাও বেহিসেবীর কোটায়।

অদ্ভুত রোমঞ্চিত ভাবে নয়নের দৃশ্যপটে ভাসতে থাকলো অত্যন্ত সুদর্শন এক পুরুষ যে কি না সময় সাপেক্ষে একবার তার সম্মান বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, কখনো প্রতিবাদের শেকরে আঁকড়ে রাখে, কখনো দ্বায়িত্বের বেড়াজালে আচ্ছন্ন করে ফেলে আবার কখনো বা যত্নের স্পর্শে শরীর না ছুঁয়েই সবটা ছুঁয়ে দেয়। অদ্ভুত সম্মোহনীর মতো তাকিয়েই রইলো মোহর। সবটা,সবকিছু কেমন স্বপ্ন, কল্পনা, বানোয়াট মনে হতে থাকলো। চিরচিত্তে এক মানুষের মোহ তাকে যেন গ্রাস করে ফেলছে। উদ্বেগ, যত্ন, ব্যবহারে ক্রমেই মানুষটা মোহরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশের মধ্যে গ্রাস করে নিচ্ছে৷ সবহারা জীবনে মৃত অনুভূতি গুলোর পরিশিষ্টাংশ একটা মানুষ যে অচিরেই অর্জন করে নিচ্ছে এটা মোহর সজাগ মস্তিষ্ক ধরতে না পারলেও অচেতন মন, অন্তঃস্থল প্রবল ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।

বেশ দীর্ঘ একটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো মেহরাজ। দরজা খোলার খট করা শব্দে মোহর ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ফট করে। মেহরাজ মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে বসলো ডিভানে। ল্যাপটপের সাটার তুলে অবিলম্বেই দু’হাতের তর্জনী খাটিয়ে মনোনিবেশ করলো জ্বলজ্বল করা স্ক্রিনে।

মোহর আড়চোখে চাইলো বার দুয়েক, মোহরকে ঠাঁই বসে থাকতে দেখে মেহরাজ চোখ দু’টো স্ক্রিনে রেখেই বলল

-, ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন।

মোহর বার কয়েক পলক ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সুতির একটা জামা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বেরোলো। মেহরাজ তখনও নিজ কাজে ব্যস্ত। মোহর কোনো শব্দহীনায় বিছানাতে গা এলিয়ে দিল।
অনেকটা ক্লান্ত লাগছে শরীর টা, কিন্তু বিছানাতে শুয়ে খানিক এপাশ ওপাশ করেও ঘুম না আসার কারণ টা বোধগম্য হলো না, চোখ বন্ধ অবস্থায় ই কুচকে নিলে হুট করে সুইচ চাপার খট করা শব্দ টা হতেই চোখ খুলে দেখলো মেহরাজ লাইট টা বন্ধ করে জিরো বাল্ব জ্বেলে দিয়েছে। ঘরের লাইটের তীব্র আলোতে যে ঘুম ধরা দিয়েও দিতে চাচ্ছিল না এটা মোহর নিজেও বুঝতে পারেনি। মানুষটা কি করে না বলতেই সবটা বুঝে যায়! কি করে মোহরের সকল সুবিধা অসুবিধা টাকে ম্যাজিশিয়ানের মতো ধরে ফেলে!
আধ-অন্ধকার ঘরেও মৃদু আলোতে ল্যাপটপ অপারেট করতে থাকলো মেহরাজ। অদ্ভুত কৌতুহলবশত মোহর সামান্য ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো মেহরাজের দিকে, ল্যাপটপের সফেদ আলোতে ধূসর বর্ণা চোখটা আরও চিকচিক করছে, এক হাত মাথার নিচে দিয়ে হেলান দিয়ে তাকালো মোহর, দূর থেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলো টকটকে পুরু ঠোঁট, খারা নাক, ঘন ভ্রু। আচ্ছা লোকটা কি সত্যিই এমন নিখুঁত সুন্দর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করেছে? বড়োলোক মানুষের ব্যাপার,করতেও তো পারে! পরমুহূর্তেই মোহরের নিজের কপালে দুটো চাপড় বসাতে ইচ্ছে হলো এহেন অযৌক্তিক ভাবনার জন্যে। নিজের উপর নিজেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে, চ জাতীয় শব্দ করে আবারও মেহরাজের দিকে তাকালেই চোখাচোখি হলে ভড়কে গেল মোহর। মেহরাজ কৌতূহল ভরা চোখে মোহরের এমন উদ্ভট নজরের দিকেই তাকিয়ে আছে, নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হলো মোহর, তৎক্ষনাৎ মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে