ফানাহ্ পর্ব-০১

0
1937

#ফানাহ্_🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#সূচনা_পর্ব

সদ্যগত হওয়া নিজের মায়ের মৃতদে’হ রাখার জন্য টানানো সামিয়ানাতে দাঁড়িয়ে নিজের বিয়ে হলো। কথাটা শুনতে যতটা তীক্ত, মর্মান্তিক লোমহর্ষক লাগছে তার চেয়ে তীব্রতর যন্ত্রণা হয়েছে মোহরের।
নিজের মায়ের লা’শের সামনে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একটা ছেলেকে কবুল বলে নিজ স্বামীরূপে স্বীকৃতি দিতে বুকে ভ’ষ্ম হৃদয়ে পাঁজরের হাড় গুলো চুড়’মার হয়ে গেছে। মুখ বুজে সহ্য করে নেওয়া অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা,দাবদাহন ছা’রখার করে দিচ্ছে সম্পূর্ণ সত্তাকে।
অগ্নিঅশ্রুতে সিক্ত চোখ জুড়ে বুজে ঘাড় এলিয়ে দিল গাড়ির সীটে। তৎক্ষনাৎ মস্তিষ্ক বায়োস্কোপের স্লাইডের মতো স্মৃতির পর্দায় ভাসিয়ে তুললো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা……..

-এতো বড় জু’লুম আমার উপর করবেন না চাচা,আপনার পায়ে পরি! আমার মায়ের মুখটা একটা বারের মতো আমাকে একবার দেখতে দেন,আপনি যা শাস্তি দেবেন আমি তাই মেনে নেব তবুও আমার উপর এতটা নি’ষ্ঠুর হবেন না।

গগনবিদারী কান্নার আহাজারিতে পুরো বাড়ির চৌহদ্দি জুড়ে উত্তাপ বয়ে গেল। কিন্তু তাতে গললো নাহ কতগুলো পা’ষাণ মানুষের মন। এক ঝটকায় সরিয়ে দিল মোহরকে। প্রচন্ড ক্লান্ত, বিধ্বস্ত শরীরে ধাক্কা সামলাতে না পেরে ছি’টকে পরলো উঠোনের মধ্যিখানে। বাড়িভর্তি মানুষে গিজগিজ করছে অথচ একটা বার কেও ওকে তোলার জন্যে হাত বাড়িয়ে দিল নাহ। ব্যথা, আ’ঘাতে জর্জরিত শরীরটা নিয়ে কোনো মনে উঠে দাড়াতে গেলে দিলারা বেগম ছুটে এসে ওর কনুই চেপে ধরলো, ব্যথা জাগার উপরে চাপ পরাই সারা শরীর ঝিম দিয়ে উঠলো। কিন্তু যেই আ’ঘাত টা সে পেয়েছে এর চেয়ে শরীরের কেনো জীবনের আর কোনো আ’ঘাত ই বড় হতে পারে না। জীবনের শেষ সম্বল টাও তো সে হারিয়ে ফেলেছে!

-এই মেয়ে এই, মুখপু’রি কোথাকার! লজ্জা করলো না তোর, রাত বিরেতে বেলা’ল্লা’পনা করে বেড়াতে,বল? বাড়ির মান ইজ্জত সব আর হাটে বেঁচে দিলি তুই সব্বনা’শা। কেন এসেছিস বল? এই মুখ নিয়ে বাড়ির দোরগোড়া পেরোতে তোর লজ্জা হলো না?

ফ্যাসফ্যাসে গলায় চিৎকার করে বললো মোহরের চাচী দিলারা। কিন্তু কথা গুলোতে মোহরের একেবারেই আঁতে ঘা লাগেনি। বরং ও ধপ করে মাটিতে বসে দিলারা বেগমের পা ঝাপটে ধরে বললো

-চাচী তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও। যা খুশি বলো মা’রো কা’টো। শুধু একটা বার আমার মায়ের মুখটা দেখতে দাও। আমার মা ছাড়া যে আমার আর কেও নেই চাচী!

কান্নার হিড়কে কেঁপে উঠলো সারা শরীর মোহরের, দুর্বল হাত দিয়ে দিলারার পরনের জামা টা খামচে বসে রইলো।

-একথা টা আগে মনে হয়নি? বিছানায় শয্যাশায়ী মা কে রেখে যখন রাত বিরেতে ফ’স্টি করে বেড়াচ্ছিলে তখন মনে হয়নি যে মা ছাড়া কেও নেই?

আশেপাশের সমাগমের মাঝে যেন কথার তুবড়ি ছুটে গেল। যে যার মতো মোহরকে গা’লমন্দ করতে লাগলো। রহমান শিকদার ক্ষিপ্ত শরীরে ছুটে আসলো। মোহরকে তুলে দাঁড় করিয়ে বলল

-কোথায় ছিলি বল। কাল সারা রাত কোথায় ছিলি তুই? কার সাথে ছিলি? ওই ছেলেটা তাই না সেদিন রাতে যেই ছেলেটার সাথে তোকে দেখেছিলাম ওর সাথেই ছিলি তুই? এত বড় ধিঙ্গি মেয়ে সারারাত বাইরে থেকে এখন বাড়ি ফিরছে,এলাকায় মান সম্মান কিছুই রাখলি না তুই আমার

-চাচা তুমি বিশ্বাস করো আমি এমন কোনো কাজ করিনি যাতে তোমার সম্মানে আ’ঘাত লাগবে,তুমি কি আমাকে চেনো নাহ বলো আমাকে একবার বলতে দাও কাল রা..

মোহরের কথাটা সম্পূর্ণ শুনবার আগেই মুখ বিকৃত করে অন্যদিকে সরে গেল রহমান। মোহর অসহায়ের মত চাচার সরে যাওয়ার দিকে চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে চাচীর দিকে তাকালো, সেও মুখ বাকিয়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে বসলো। আশেপাশের সবাই মোহরের দিকে তিক্ত, ক্ষোভ পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, ওদের এমন নজর যেন তীরের মতো বিঁ’ধে গেল ওর শরীরে তবুও সেসব গ্রাহ্য করলো নাহ।
টলমল পায়ে এগিয়ে গেল বারান্দার এক কোণায় মাথায় হাত দিয়ে নিষ্প্রাণ চোখ মুখে বসে থাকা মেয়েটির দিকে।পাশেই একটা দু বছরের বাচ্চা বসা, বাচ্চাটা মায়ের এমন অবস্থার মানে বুঝতে না পেরে কাঁদছে আবার জামা টেনে গা বয়ে উঠছে। তবুও কোনো নড়চড় নেই মেয়েটির। প্রাণহীন মোমের পুতুলের মতো বসে আছে একভাবে। মোহর ছুটে ওর সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বলল

-বুবুরে তুই তো আমার কথা শোন। আমি জানি আর কেও আমায় বিশ্বাস করুক না করুক তুই ঠিকই করবি বল। তোর পুতুল তো এমন কিছুই করতে পারেনা বল যাতে তোদের মান সম্মান নষ্ট হয়,তুই ওদের বল না আমাকে মায়ের কাছে যেতে দিতে, মায়ের ওষুধ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে তো দেরি করলে মায়ের শরীর খারাপ করবে..

-মা নেই পুতুল,মা আর নেই। আর কোনো ওষুধ মায়ের লাগবে না কখনও। দুনিয়াবি সকল কিছুর উর্ধ্বে চলে গেছে মা ।

-তুই এসব কি পাগলের মতো বলছিস বুবু, মা কোথায় যাবে

-ম’রে গেছে মা ম’রে গেছে!

চিৎকার করে উঠলো মোহরের বুবু, বাচ্চাটা ভয়ে সিটিয়ে গেল এক কোণায়। উঠে দাঁড়িয়ে আবারও চিৎকার করে মোহরের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল

-ম’রে গেছে মা, তুই যখন অসুস্থ বিছানাগত মা কে রেখে সারারাত বাইরে ফু’র্তি করে বেড়াচ্ছিলি তখনই ম’রে গেছে মা।ছেড়ে চলে গেছে আজীবনের জন্য। এবার যা ইচ্ছে মতো মজা করে বেড়া কেও তোর পথের কা’টা হবে না

প্রচন্ড চিৎকারে হাঁফিয়ে উঠলো মেয়েটার শরীর, দম ভারী হয়ে আসতে লাগলো৷ তখনি পাশ থেকে তার স্বামী এগিয়ে এসে এক হাতে ওকে ধরে বলল

-শান্ত হও মিথিলা, তুমি এমন ভে’ঙে পরলে, অস্থির হলে বাবুর কি হবে!

তবে সেসব কথা মোহরের কানে যাচ্ছে না,,মিথিলার বলা কথাগুলোই সূলের মতো বিঁধে গেল কথাগুলো মোহরের কানে। দুহাত কানে চেপে চিৎকার করে উঠলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে পাগলের মতো বিড়বিড়ালো

-মায়ের কিচ্ছু হয়নি, আমার মা আছে। মা তো ঘরেই শুয়ে আছে, এক্ষুনি মা বলবে যে তার মেয়ে কোনো পাপ করেনি এক্ষুনি..

বলে বিড়বিড় করতেকরতে সামনে এগিয়ে গেলো। বারান্দার সামনে থাকা মানুষের ভীড়কে দু’হাতে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকতেই পা দুটো থমকে গেলো। লোকজনের ভীড়ে গিজগিজ করছে ছোট্ট ঘরটা। গ্রীষ্মের উত্তাপ গরমেও শিথিল হয়ে গেলো মোহরের সমস্ত শরীর। ওর সামনেই বিছানাতে চোখ বুজে শুয়ে আছে একটা নিষ্পাপ চেহারা, যেন দুনিয়াবি কোনো চিন্তা তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারছে নাহ, শান্তির ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। এক পা এক পা করে মোহর এগিয়ে গেলো, বিছানার এক কোণায় বরফের মতো দাঁড়িয়ে গেল
উপস্থিত মহিলারা মোহরকে দেখে নাক শিটকাচ্ছে, নানান ক’টুক্তি ছু’ড়ে দিচ্ছে। কিন্তু তা মোহরের কান অব্দি পৌঁছাতে পারছে নাহ, একঝাঁক ভ্রমরের ভোঁ ভোঁ শব্দের মতো শোনাচ্ছে সবার কণ্ঠস্বর।
মোহর খানিক ঠাঁই পাথরমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে দিল শয্যাশায়ী মানুষটার পায়ের দিকে। আকুল তৃষ্ণা, আ’ঘাতে জর্জরিত হাতটা শৈথিল্য পা স্পর্শ করার আগেই এক টান দিয়ে ছিটকে সরিয়ে আনলো কেও, ধাতস্থ হওয়ার আগেই মিথিলা টে’নে হি’চড়ে ঘর থেকে বের করে এক ঝটকায় উঠানে ফেলে দিলো মোহরকে, বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে বলল

-খবরদার, তুই যদি তোর ওই নোংরা হাতে মাকে স্পর্শ করেছিস। তোর জন্য একমাত্র তোর জন্য মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তোর মুখটা পর্যন্ত দেখতে চাইনা আমি

মোহর বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মিথিলার দিকে। যে বোন নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো তার এমন অ-মানুষিক ব্যবহার কিছুতেই সহ্য হলো না মোহরের। ও উদ্ভ্রান্তের মতো উঠে গিয়ে মিথিলার দুহাত ধরে বলল

-বুবু, বুবুরে তুই এভাবে বলিস নাহ। মা আর তুই ছাড়া আমার কেও নেই। সারা দুনিয়া আমাকে ভুল বুঝুক তুই অন্তত নিজের বোনকে ভুল বুঝিস না বুবু। একবার দেখ তোর পুতুল কখনো এমন করতে পারেনা বুবু আমার দিকে তাকা একবার বুবু

মোহরের এমন বুক ফাঁটা কান্নায় মিথিলা নিজেকে পা’ষণ্ড করে আর ধরে রাখতে পারলো নাহ। অন্তরে কিছুটা রহম এলো যেন।কিন্তু নিজেকে নরম করে মোহরের দিকে তাকালেও মোহরের গলায় খা’মচির দগদগে দুটো দাগ দেখে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো মিথিলার। যেটুকু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করেছিল এ দৃশ্যে যেন আগুনের ফুলকির মতো তেঁতে উঠলো। এক ধা’ক্কায় সরিয়ে দিলো মোহরকে। আরেক ধা’ক্কা সামলাতে না পেরে ছিটকে পরলো।
শরীরের আ’ঘাতের চেয়ে বক্ষের আ’ঘাতে খান খান হয়ে গেল অন্তঃস্থল। মস্তিষ্কের প্রচন্ড ধাক্কায় পাথর হয়ে গেলো। চোখ থেকে অশ্রুপাত ও হুট করে বন্ধ হয়ে গেল।সারা দুনিয়াটা তীব্র বিস্রংসী জাহান্নামের একাংশ মনে হতে লাগলো। আধার হয়ে আসা চোখ মুখে কোনো কিছু ঠাওর করার আগেই দিলারা বেগম ছুটে এসে মোহরের চুলের মু’ঠি টে’নে ধরে দাঁড় করালো

-নির্লজ্জ বে’হায়া মেয়ে। ফ’স্টি ন’স্টি করে বেড়ানোর এতো শখ তাই না? মায়ের এমন করুন অবস্থা দেখেও সারারাত বাড়ির বাইরে ছিলি। কি করছিলি বল? কোন না’গরের সাথে ছিলি? আজ তোর জন্যে শুধুমাত্র তোর জন্য আপা অকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো

বলেই কান্না জুড়ে দিলো। মোহর প্রতিক্রিয়াহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দিলারা বেগমের দিকে,কাল পর্যন্তও এই মানুষটাই তার মায়ের অসুস্থতা নিয়ে কতো খোটা দিল, তার ঘাড়ের উপর নাকি বোঝা হয়ে চেয়ে আছে মোহর আর তার মা, ম’রলে পারে দুদন্ড শান্তি পাবে। অথচ আজ সেই মা মারা যাওয়াতে এমন মায়াকান্না জুড়েছে যেন… আর কিছু ভাবতে পারলো না মোহর। তার আগেই পাশে থেকে এক বয়স্ক মহিলা বলে উঠলো

-এই মেয়ে সমাজের ক’লঙ্ক, আমি নিজে চোখে দেখেছি আজ সকালে ওকে বাজারের উপর একটা বড় কালো রঙের গাড়িতে করে কেও রেখে গেলো। বলি একবেলা ভাত পাও না ঠিক মতো ওত বড় গাড়ির মালিকের সাথে তোমার কিসের ওঠাবসা। কি মনে করো বুঝিনা কিছু

-হ্যাঁ তাই তো। এই মেয়েকে গত পরশু আমি দেখেছি চুপি চুপি রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরছে। কি মনে করো পানির পাতিলে পা দিয়ে রাখি আমরা? চুল কি বাতাসে পেকেছে

আশেপাশের মানুষের কথা বি’ষের মতো চামড়া ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে মোহরের শরীরে। মু’ঠিতে ধরে রাখা চুলগুলো আরও জোরে চে’পে ধরলো দিলারা, টান দিয়ে বলল

-তোকে আর কিছুতেই রাখব না আমার বাড়ি, তোর ছোঁয়া পেলে আমার মেয়েটাও ন’ষ্ট হয়ে যাবে

-ওকে বের করে দাও চাচী, ওর ছায়াও যেন মায়ের আশেপাশে না আসে। শেষ বিদায়ের বেলায় ওর মতো কল’ঙ্ককে পাশে রেখে মায়ের আ-জাব বাড়াতে চাইনা আমি। বের করে দাও ওকে

নিজের বোনের মুখের কথাগুলো তীরের ফলার মতো অন্তর্ভেদী হয়ে এ’ফোড় ও’ফোড় করে দিল মোহরকে। দুটো শব্দ বলার মতোও শক্তি পাচ্ছে নাহ আর। দিলারা মোহরকে টেনে নিয়ে চৌহদ্দি বরাবর ছি’টকে ফেলে দিলো। মুখ থু’বড়ে পরতেই পেছন থেকে এক লোকের কণ্ঠ কানে ভেসে আসলো

-এই ছেলেটা আবার কে?

-এই ছেলেটাকেই তো দেখেছি আমি সকালে, এই ছেলেটাই ওকে গাড়িতে করে রেখে গিয়েছিল। দেখেছ তো, এই জহুরা খাতুনের চোখ ভুল দেখে না

পশ্চাত হতে আসা বাক্য গুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তড়িৎ মুখ তুলে তাকালো মোহর। অত্যাধিক লম্বা চওড়া সৌষ্ঠব গড়নের একটা অবয়ব দাঁড়িয়ে ওর সামনে, ধুসর বর্ণের অপার্থিব চোখ জোড়ায় অদ্ভূতুরে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহরের দিকে। অবাক,বিব্রত কিংবা জড়তা সবকিছু ছাপিয়ে চেহায়ায় দুরূহ স্থিরতা বিদ্যমান। মোহর পূর্ণ দৃষ্টিতে বাক্যহীন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় সুঠাম হাতখানা এগিয়ে ধরলো ওর সামনে………
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে