#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৭
লেখায়ঃ তানিয়া তানু
সারাদিন আমেজপূর্ণ হয়েই কাটলো।দিনে বিয়ে বাড়িতে কৃত্রিম আলো না থাকায় ঝলমল না করলেও অতিথিদের আনাগোনায় উজ্জ্বলিত করলো পরিবেশটাকে। সারাদিন নিলার সাথেই কাটিয়েছি। প্রথমে ভয় ছিলো না জানি কী পরিমাণ রাগ করবে? কিন্তু সময়ের পালায় সেই রাগ গলে গেল। চলে যাবে বলে অনেক্ষণ কাঁদলো। আর আমিও যে কাঁদেনি। তা কিন্তু নয়! এতদিনের বন্ধুত্বের মধ্যে আজ প্রথম এত বড় বিচ্ছেদ। দুই মেরুতে বাস করবো আমরা দুই বান্ধুবি। এই ভেবে মনের মাঝে চাপা কষ্ট অনুভব করছিলাম। মনে যেন ভারী এক পাথর বসানো হয়েছে।
বেবলি তো সারাদিন নিয়নের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে ছিলো। দুইজনই এক সাথে সারাক্ষণ এদিক সেদিন ঘুরলো। ওদের দেখে মনে হলো ওরা বেশ পরিচিত। আচমকা বিকেল বেলায় নিয়ন ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসি দিয়ে বললো,”আপু একটা কথা বলি।”
হঠাৎ করে এখানে তাও আবার আমার কাছে ওর আগমণে বেশ সন্দেহ লাগলো। বিশেষ করে ওর অনুমতি চাওয়ার এমন ভঙ্গি দেখে। কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে স্মিতহাস্যে বলতে বললাম।
“আপু ঐ যে নীল সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়েটা কী আপনার বোন?”
আমার জানা মতে ও পূর্ব থেকেই জানতো বেবলি আমার বোন। কারণ বেবলির সাথে পরিচয়ের বেলায় অভিভাবক হিসেবে আঙ্গুল দিয়ে বেবলি আমাকে দেখিয়েছিলো। কিন্তু জেনেও এমন প্রশ্ন করায় একটু হচকিয়ে গেলাম। তবুও বললাম,”হ্যাঁ, কোনো দরকার ভাই?”
হ্যাঁ বলার পরক্ষণে নিয়নের চোখেমুখে লজ্জার ভাব ফুঁটে উঠলো। কিন্তু এখানে লজ্জার কী আছে তা আমি বুঝতে পারলাম না।
পরক্ষণে লজ্জায় হুলো বিড়াল হয়ে বললো,
“আপু, আপনার বোনকে না আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। খুব ভালোবেসে ফেলেছি।”
ওর এহেন কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ। মুখে যেন কলুপ এঁটে রেখেছি। কিন্তু মনে মনে বলছি এত ছোট ছেলে বলে কী? ভালোবাসা? কেমনে সম্ভব? তাই খানিক রাগ দেখিয়ে বললাম,”জানো ও কিসে পড়ে?”
“ওহ হো স্মৃতির থেকে তো এই বিষয়টা জানা হলো না। ওয়েট এ মিনিট, আমি এক্ষণি জেনে আসছি।”
জেনে এর পর আমার কাছে আসবে। এই আসা যাওয়ায় টাইম ওয়েস্ট করার থেকে মনে হলো আমার বলাটাই বেটার হবে। তাই তাড়া দিয়ে বললাম, “শুন ভাই,তোমার যাওয়া লাগবে না। আমিই বলছি।”
ও দরজার কাছ থেকে এসে কান একটু বাড়িয়ে দিলো। বুঝলাম পিচ্চি শুনতে চায়। তাই বললাম,”ও ক্লাস এইটে পড়ে। তোমার থেকে কয়েক বছরের বড়।”
এইটা শুনে ওর মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। এহেন কথা শুনে পরক্ষণে সে বললো,”তো।”
কাছে এসে এই কথা বলায় যারপরনাই অবাক হলাম। ও কী বুঝলো না আমি কী বলতে চাইছি? হয়তো বুঝেনি। তাই বুঝানোর জন্য বললাম, “তো মানে তুমি ওরে ভালোবাসতে পারবে না। আর বিয়েও করতে পারবে না। তোমাদের বয়সের পার্থক্য অনেক। তো এই ভালোবাসা দূরে রাখো।”
“আচ্ছা আপু। আপনি কী নিলাপুকে বিয়ে করবেন?”
ওর প্রশ্নে আমি অবাক। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে। কেমনে কী!
“মানে?”
“আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন?”
এই প্রশ্ন খুব ভালো লাগলো। তাই বললাম, হ্যাঁ, খুব ভালোবাসি।”
“তাহলে বিয়ে করছেন কবে?”
“আরে বোকা। এই ভালোবাসাতে কোনো বিয়ে টিয়ে হয় না। এটা বন্ধুতের ভালোবাসা। প্রেমিক-প্রেমিকার নয়।”
“ওরে বোকা মহিলা আপু। আমিও যে আপনার বোনকে বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসি।
আসি। আর হ্যাঁ ডিমডাম খাবেন বেশি।”
ওর এই অপমানজনক কথায় বেশ লজ্জা পড়লাম। সত্যি কী আমি বোকা! না হলে ভালোবাসি বললেই ওমন সম্পর্কে আগে মাথায় ঢুকে কেন? ইশ, বেশি করে ডিম মনে হচ্ছে খেতেই হবে।
দিনে অনেকবার চেষ্টা করলাম ভাইয়াকে টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য কিন্তু যতবার দেওয়ার চেষ্টা করেছি ততবারই ব্যর্থ হয়েছি। কারণ শাহেদা আন্টি। যতবার ভাইয়ার কাছে উনি আমাকে দেখেছেন ততবার ভাইয়ার ডাল হয়েছে সামনে দাঁড়িয়েছেন। এহেন কর্মে আমি বোধ করলাম ভাইয়া হয়তো কোনো রাক্ষসীর পাল্লায় পড়েছে। যার কারণে উনি বার বার রক্ষা করছেন। তবে উনার মতে আমি সেই রাক্ষুসী। শেষ বার হতাশ হয়ে যখন ভাইয়া বলে ডাক দিলাম তৎক্ষণাৎ উনিও আকাশ বলে ডাক দিলেন। ভাইয়া পড়লে দ্বিধায়। কার ডাকে সাড়া দিবেন? তবে শেষে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে মায়ের সাথে কথায় জমে উঠে নিচে গেলেন। আমিও আশাহত হয়ে ফিরে আসলাম। তবে ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকালেন। অদ্ভুত লাগলো সেই চোখের চাহনি। তবে অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম। প্রতিবার এইরকম কিছু ফেস করলে আনন্দ হতো। সারা শরীর শিউরে উঠতো। এখন যেন অনুভূতীর মা মারা গেছে।
উপর নিচ আসা যাওয়ায় বার কয়েক নিয়নের ভাইয়ের গতিবেগ পর্যবেক্ষন করতে পারলাম। লোকটা ভারি অসভ্য। আড়চোখে বার বার যে আমায় পরখ করে তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এক চোর তো আরেক চোরকে চিনবেই না। কিন্তু আমি তো দেখেছিলাম উনি আমার দিকে তাকান কীনা। উনিও কী এই কারণেই তাকিয়েছিলে?
রাত্রে বিয়ের বাড়ির সমাগম বাড়তে লাগলো। রেডি হওয়ার ব্যস্ততা সব জায়গায়। বেবলি অনেক আগেই বিউটিশিউয়ান দ্বারা সেজেছে। বার কয়েক দরজায় ঠুকা দিয়ে আমার সাজার কতক্ষণ সময় লাগবে তা জিজ্ঞেস করলো। ওরা সবাই বোধয় ভাবছে আজ আমি ভারি সুন্দর করে সাজবো।বিউটিশিউয়ানদেরও চমকে দেবো। বলবো, দেখো তোমাদের থেকে অনেক সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়েছি। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। কারণ সেই শুরু থেকে শাড়ি পড়াতেই আমি আটকে আছি। একদিক দিয়ে কুচি ঠিক করছি তো অন্যদিক দিয়ে শাড়ির অন্য ভাঁজ অনায়সে খুলে যাচ্ছে। হায় কপাল! ইহাই কী মোর ললাটের লিখন ছিলো?
আবারো দরজায় ঠুকা পড়লে কে বলে প্রশ্ন করলে বেবলি উত্তরে বললো, “আপা, আমি। তোর কী শেষ হলো? বরযাত্রী এই এলো বলে।”
বেবলির এমন তাড়ামূলক কথায় তড়িঘড়ি করে অগোছালো কুচি দিয়ে ঠিক করে নিলাম বহু আকাঙ্ক্ষিত শাড়িটাকে। শেষে শাড়ি পরিহিতা নারী হিসেবে আয়নায় দেখে মনে হলো রাস্তায় গণধোলাই খাওয়া পাগলী। ইশ, কী বিচ্ছিরি লাগছে! আনমনেই কথাগুলো বললাম।
বিয়ে বাড়িতে শুধু শাড়ি পড়লে হয় নাকি। আমায় দেখে মানুষ বলবে মশলাপাতি ছাড়া তরকারি। ছিহঃ অখাদ্য কোথাকার!
গলায় পরে নিলাম শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া সেই গলার সেটখানা। এটা পড়ে চেহেরায় বেশ মায়া মায়া ভাব ফুঁটে উঠলো। মনে হলো শাড়ি সুন্দর করে পড়তে পারিনি তো কী হয়েছে গলার সেটটাতো পেরেছি। হেহেহেহে!
পটের বিবি সেজে বের হলাম বাইরে। বেশ জাঁকজমক পরিবেশটা। দরজার পাশেই নিচে নামবার সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে কুচি ঠিক করার সময় অবাধ্য চুলগুলো সামনে আসায় পড়লাম বেকায়দায়। কোনটা ঠিক করবো এই নিয়েও বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লাম। পরক্ষণে মনে মনে ভাবলাম মানুষ তো সামনে অনেক। তারা আমার দিকে কেমন তরে তাকিয়ে আছে তা দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই প্রথমে চোখের সামনে ভেসে উঠলো মেয়েদের,,,,
চলবে„„„„„„„„