Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রেয়সীর শব্দপ্রেমপ্রেয়সীর শব্দপ্রেম পর্ব-১১+১২

প্রেয়সীর শব্দপ্রেম পর্ব-১১+১২

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড)
#ফারজানা_মুমু
[১১] ও [১২]

ঝুমঝুমির শরীর অবশ হতে শুরু করল। ভয়ার্ত মুখশ্রী বারবার দেখছে মূল দরজায়। সাহস জুগিয়ে উঠে দাঁড়াল সে, যা হবার হবে। মুখ লুকিয়ে রাখার মত মেয়ে নয় ও। সন্তপর্নে দরজার কাছে দাঁড়ালো। ওপাশে যে আছে তার খুবই তাড়া বুঝা যাচ্ছে। কলিং বেল বাজানোর পাশাপাশি দরজায় ধাক্কাচ্ছে। ঝুমঝুমি দরজা খুলতেই দেখতে পেলো বিপদগ্রস্ত,ভীতু মুখশ্রী,লাল টকটকে ফোলা-ফোলা দু’চোখের এক সুদর্শন যুবকের আ’ত’ঙ্কি’ত চেহারা। ঝুমঝুমির ভয়ার্ত মুখশ্রী অপরাধবোধে দু-পা পিছিয়ে যেতেই যুবকটি হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকলো। তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকিয়ে এক মিনিট জড়িয়ে ধরল ঝুমঝুমিকে। নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম ঝুমঝুমির। তবুও বুকের মাঝে মুখটি লুকিয়ে ক্রন্দন মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, আমায় ক্ষমা করে দিন, আষাঢ়।

আষাঢ় দৃষ্টি নিচু করে তাড়া দিলো। বলল, তাড়াতাড়ি গিয়ে বোরখা পর। তোমার যাবতীয় কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে আসো আমি হালিমা খালা আর ঝিনুককে ঘুম থেকে তুলছি। সময় নেই বেশি।

-” পুলিশ আসছে?
-” কথা বাড়িয়েও না প্লিজ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি হয়ে আসো। মিরাজ ও হিরণ চলে আসবে এক্ষুনি।

ঝুমঝুমি কথা বাড়ালো না। আষাঢ়ের কথামত ওর কাগজপত্রের ফাইল একসাথে করে বোরখা পড়ল। আষাঢ় ততক্ষণে হালিমা খালাকে ঘুম থেকে তুলে ফেলেছে। ঘুমন্ত ঝিনুককে কাঁধে তুলে দরজার কাছে দাঁড়াতেই ফোন আসলো হিরণের। দরজা খুলে চারজন বেরিয়ে পড়তেই দেখল বাইক দুটো দাঁড় করা। যেহেতু গলিতে বড় গাড়ি ঢুকতে পারবে না তাই আষাঢ় বাইকের ব্যাবস্থা করেছে। এক মিনিট সময় নষ্ট করা যাবে না যেকোনো মুহূর্তেই পুলিশ চলে আসবে। হিরণ,মিরাজের পিছনে হালিমা খালা বসেছে। আষাঢ়ের বাইকে ঝিনুক ও ঝুমঝুমি। বাইক যত দ্রুত এগুচ্ছি ঝুমঝুমির মন ততই শান্ত হচ্ছে। আষাঢ় ও’কে ছেড়ে যায়নি বলে সুখের মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ। জঙ্গলের রাস্তা ধরে বাইক এসে থামলো নির্জন নিহারিকা এক রাস্তায়। সেখানে বড় সাদা রঙের গাড়ি। রাত তখন গভীর। কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দে ঝিনুক ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরেছে। গাড়িটির সামনে বাইক থামতেই দেখল নাজিম,তৃষ্ণা ও নীরা বসে আছে ভিতরে।
-” তোমরা তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসো। মিরাজ,হিরণ তোরা বাইক নিয়ে পিছনে আয়।

ড্রাইভিং সিটে বসেছে আষাঢ়। গাড়ি চালাচ্ছে ঝড়ের বেগে। ওর শরীরে আজ ভয়াবহ প্রেত-আ’ত্মা ভর করেছে যেন। তান্ডব থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। শুনশান,লোক সমাজের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে এক তলা বাড়ি। সেখানে গাড়ি থামিয়ে সকলে নেমে পড়ল। ঝিনুক তখন আবারও ঘুমিয়েছে। বাচ্চাদের মনে চিন্তা থাকে না, ভয় থাকে, তারা দুনিয়ার ব্যাপার-স্যাপার বুঝে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মতোই ঝুমঝুমির জীবনের মোড় কিন্তু ঝিনুকের সেটা বোঝার ক্ষমতা নেই, নেই কোনো ধারণা। পরমানন্দে ঘুমিয়ে যাচ্ছে সে। আষাঢ় আবারও ঝিনুককে কাঁধে তুলে বাসাটির দিকে এগিয়ে গেলো।

এই বাড়িটি এমপি সাহেবের লুকানো বাড়ি। অনেক কু-কাজের সঙ্গী এই বাড়ি। সেজন্য এ বাড়িটির কথা কেউ জানে না। কেয়ারটেকার পর্যন্ত রাখা হয়নি এই বাড়িটার জন্য। একদম নিরিবিলি, শহরের একদম ভিতরে গড়ে উঠা এক তলা বাড়ি। মাসে কিংবা বছরে কোনো কা’লো টাকার লেনদেন হয় এবাড়িতে। বাড়িটার বাইরের অবস্থা যতনা করুন ভেতরের অবস্থা বেহাল। মাকড়সার জালে জড়িয়ে আছে ভিতরে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকদিন ধরে এ-বাড়িতে যাওয়া আসা নেই এমপি সাহেবের। ভিতরে আসা প্রতি সদস্য কোনোমতে একটা রুম পরিস্কার করে সেই রুমে বসেছে। আষাঢ় একটা সোফা টেনে ওটাকে পরিষ্কার করে ঝিনুককে শুয়ে দিয়ে সেও ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসলো। এলোমেলো চুলে তখন ময়লার স্তুপ পড়েছে । তৃষ্ণা-নীরা ঝুমঝুমির গালে হাত রাখলো। তারপর করুণ কণ্ঠে বলল, বলবি কী হয়েছে তোর? তোর চাচাকে খু’ন করলি কেন? ওই মেয়েটা তুই ছিলি তো?

পাথরের মূর্তির মত বসে আছে ঝুমঝুমি। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে যেন। কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আটকে যাচ্ছে। কান্নাগুলো গিলে নিয়ে আষাঢ়ের মুখের দিকে তাকালো। আষাঢ় তখন ঝিনুকের মাথার সাথে নিজের মাথাটা একসাথে করে আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে। হালিমা খালা খু’নে’র কথা শুনে ভয়ে শিউরে উঠল। তারপর অজান্তেই বলে ফেলল, তারমানে তুমি রাত বেড়াতে ঘর থেইকা বাইর হইয়া খু’ন করতে যাইতা, মা?

আষাঢ় তখনো চোখ বুজে রয়েছে। তৃষ্ণা তখন আদুরে গলায় বলল, তোর মা,বোন কোথায়? কি হয়েছে ওদের?

মা-বোনের কথা শুনেই কেঁদে উঠল ঝুমঝুমি। বাচ্চাদের মতন হাউমাউ সেই কান্না। আষাঢ় চোখ মেলে ক্রন্দন মিশ্রিত প্রেয়সীর পানে তাকালো। বুকের ভিতরটা দুমড়ে-মুছড়ে যাচ্ছে তার। অ’ভি’শ’প্ত নগরীতে মিছিল চলছে বি’ষা’ক্ত প্রেয়সীর বিরুদ্ধে। এ কেমন মিছিল? যা সহ্য সীমার বাহিরে। এখানে আসার পর সবার ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ কিংবা কেউ এখন অব্দি জানে না ঝুমঝুমির সম্পর্ক আছে এমপি সাহেবের ছেলে আষাঢ়ের সাথে তবুও নিরাপত্তার কথা ভেবে সবার ফোন বন্ধ রাখতে বলেছে।

নিজাম অধৈর্য হলো। ঝুমঝুমির পানে তাকালো। ওর বিশ্বাস হচ্ছে এই মেয়ে খু’ন করতে পারে। এক খু’ন নয় বরং তিনটে খু’ন। যদিও বা বাকি দুটোর সাথে প্রমাণ এখনও পায়নি পুলিশ তবে সন্দেহর বশে বলেছে বাকি দুটো খু’ন এই মেয়েই করতে পারে।

-” ঝুমঝুমি বলো কি হয়েছে এই পাঁচ বছরে? তুমি খুলে না বললে আমরা বুঝবো কীভাবে? সাহায্য করব কীভাবে?

হিরণের কথার সাথে একমত পোষণ করল সকলে। ঝুমঝুমি ধীর সুস্থে বলে উঠল, ঝিনুক আমার মেয়ে নয়। ঝর্ণা মানে আমার ছোটবোনের মেয়ে।

আচম্বিতে সবাই পিলে চমকে উঠল। এ কেমন কথা বলছে ঝুমঝুমি। ঝর্ণা ও তো বাচ্চা একটা মেয়ে ছিল। নাইনে পড়ুয়া একটা মেয়ে বাচ্চা ঝিনুক। তবে আজকাল ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় সেখানে ঝর্ণার বাচ্চা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় তবে ঝর্ণার তো বিয়ে হয়নি তাহলে? নীরা বলে উঠল,ঝর্ণার তো বিয়ে হয়নি তাহলে ওর বাচ্চা আসলো কোথেকে?

ঝুমঝুমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো অতীতের কালো অধ্যায়………

মেঘের সাথে বিয়ে হওয়ার দিন ঝুমঝুমি খুব করে চাইছিল একটা মীরাক্কেল হয়ে যাক। মেঘের সাথে ও থাকতে পারবে না, কিছুতেই পারবে না। মনে-মনে মাকে স্মরণ করছিল যেন মীরাক্কেল ঘটিয়ে মা চলে আসুক এসে বলুক তোর মেঘকে বিয়ে করতে হবে না আমরা সবাই এখান থেকে চলে যাব, দূরে চলে যাব। মীরাক্কেল ঘটেছিল ঠিকই কিন্তু এই মীরাক্কেল ঝুমঝুমি বাস্তবে তো দূর কল্পনায় ভাবতে পারেনি। ঝর্ণা দৌড়ে এসে বোনের কাছে কেঁদে-কেঁদে বলে উঠে,
-“আপু,আম্মু দরজা খুলছে না এমনকি সাড়াশব্দ দিচ্ছে না তাড়াতাড়ি চলো না প্লিজ।

ঝুমঝুমির মন কু-ডাকে। দৌঁড়ে আসে মায়ের রুমের সামনে। অভিমানে ঢাকা পাঁচিল-টাকে ভেঙে মায়ের রুমের সামনে চিৎকার করে উঠে, মা ও মা দরজা খোলনা প্লিজ। আমি রাগ করে নেই তো। মা প্লিজ দরজা খুলো। তুমি ওভাবে বসে থাকলে যে আমার কষ্ট হয়। তোমার বাধ্য মেয়ে না আমি বলো। তোমার সবকথা শুনছি তো তারপরেও অভিমান কেন পুষেছ। প্লিজ মা একবার দরজাটা খুলো। আমার ভয় হচ্ছে তো, দেখো ঝর্ণা কাদঁছে। তুমি তো আমাদের কান্না সহ্য করতে পারো না। মা ও মা , মাগো দরজা খুলো না প্লিজ। তোমায় ছাড়া আমরা শূন্য মা।

ঝুমঝুমির আকুল আবেদন তবুও ওপাশ থেকে সাড়াশব্দ নেই। তাসলিমা খাতুন তখন রেগে গেলেন। দু’একটা গালমন্দ করে বলে উঠলেন, আবার নাটক শুরু হইছে। তোদের নাটকে আমি ম’রে যাচ্ছি। ওই জেসমিন দরজা খুলবি নাকি আমি এমন কিছু করব যার জন্য পরে আফসোস করবি। তোর কারণে আমার তৈরি করা সুন্দর বাসাটার দরজা ভাঙতে পারি না। ম’র’তে চাইলে দূরে গিয়ে ম’র। আমার বাসায় এসব হবে না।
-” এভাবে বলছো কেন মামী? আম্মুর কিছু হবে না তাই না আপু।

ঝর্ণার কান্না আরো বেড়ে গেল তাসলিমা বেগমের কথায়। মেঘ ও মেঘের বাবা পরে বাধ্য হয়েই দরজা ভাঙলো। দরজা খুলে হম্বিতম্বি হয়ে ভিতরে ঢুকলো সকলে। ঝর্ণা তখন সামনে তাকানো ঝু’ল’ন্ত মায়ের লা’শ’টি’কে দেখে চিৎকার করে উঠল। মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল ফ্লোরে। ঝুমঝুমি তখন একধ্যানে সামনে তাকিরে রইল। চোখ বেয়ে ঝরবে জলরাশি কিন্তু মুখ দিয়ে এক বিন্দু শব্দ উচ্চারণ করছে না। তাসলিমা বেগম ভয়ে চুপসে গেলেন। ওনি ঘুণাক্ষরেও বুঝেন নাই জেসমিন এমন একটি কাজ করবে। পুলিশি চিন্তা-ভাবনা মাথায় ঘুরা মাত্রই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসলো ওনার।

ঝুমঝুমি সামনে এগুলো দেখল বিছানায় রাখা সাদা কাগজ পরে আছে। ঝুমঝুমি তখন কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল,

আমার ঝুমঝুমি মা ক্ষমা করে দে আমায়। এক সন্তানের মঙ্গল চেয়ে আরেক সন্তানকে জলে ভাসাতে চেয়েছি। আমি খারাপ মা, নিষ্ঠুর মা। আমার মত মা যেন এই পৃথিবীতে আর কারো না হোক। মেঘের সাথে বিয়ে হলে তোর জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। ও তোকে ভালোবাসে কিন্তু সম্মান দিতে জানে না। যেখানে সম্মান নেই সেখানে ভালোবাসা তুচ্ছ, অকেজো। তোকে প্রতি নিয়ত কষ্টের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, শুনতে হবে অসহ্য কথা। আমি মা হিসেবে মেনে নিতে পারব না মেয়ের কষ্ট। জীবিত থাকতে তোর জন্য কিছু করে যেতে পারিনি উল্টো তোর কাঁধে চে’পে বসেছি। ঝর্ণাকে দেখে রাখিস তুই ছাড়া ওর কেউ র‌ইল না আর। তোর ঘাড় থেকে একজনের বোঝা সরে যাচ্ছে মা, এখন আর ভয় নয় মাথা উঁচু করে সামনে এগুবি। জানিস তো অভাগী মায়ের গর্ভে জন্ম হয়েছে তোদের। আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোদের জন্য আমার ভালোবাসা অনেক, আমি ধন্য তোর মত একজন মেয়ের মা হতে পেরেছি বলে তবে কষ্ট একটাই না পেলাম দুনিয়াতে শান্তি আর না পাব আখিরাতে। নিজ হাতে নিজের পরকাল ধ্বংস করতে যাচ্ছি। উপায় নেই রে মা আমি তোর কষ্ট,অভিমান সহ্য করতে পারছি না। ভালো থাকিস।

লেখাটুকু পরে গোগণবিদারি চিৎকার দিল ঝুমঝুমি। কলিজা ফে’টে যাচ্ছে ওর। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। আজ থেকে পুরোপুরি ভাবে এতিম হয়ে গেল ওরা দুবোন। মাথার উপরে বৃক্ষ ছায়ার গাছটি আজকের ঝড়ে ভেঙে মাটিতে ধসে পড়ল। ঝুমঝুমি চিৎকার দিয়ে উঠল, মা ও মা তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে পারো না। আমরা নিঃস মা তোমাকে ছাড়া আমরা অপূর্ণ। এখন আমি কার কণ্ঠ শুনে ঘুমাতে যাব মা? বাসায় আসার পর কার বুকে মাথা রেখে মা-মা গন্ধ শুকব। আমার তো বেঁচে থাকার সম্বল তোমরা দুজন। আমি তো কখনোই তোমাদের বোঝা ভাবিনি মা। কেন অভিমান করে আমাদের একলা করে চলে গেলে। বাবার অভাব তো আমরা তোমার ছায়ায় পেয়েছি এখন সেই ছায়াও তুমি ছিনিয়ে নিলে। আজকের পর থেকে আমরা সত্যি সত্যিই এতিম হয়ে গেলাম। আমাদের বেঁচে থাকার জোর ভেঙে চুরমার করে আমাদের একা করে কেন তুমি চলে গেলে মা,মাগো।

ঝুমঝুমি নিথর হয়ে পড়ল। তারপর কি হলো কিছুই সে জানে না যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ওর মায়ের লা’শে কা’ফ’নে’র কাপড় ঝরানো হয়েছে। ঝর্ণা তখন ফেঁপে উঠছে। এইটুকু সময়ে ওদের জীবনে ঝড়ের তান্ডব প্রখর ভাবে আ’ঘা’ত করে গেল।

তাসলিমা বেগম ঝুমঝুমিকে টেনে নিয়ে গেলেন ওনার রুমে। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে বললেন, থানা পুলিশ করলে তোর মায়ের লা’শ কা’টা হবে? ম’য়’না’ত’দ’ন্ত। তুই চাস তোর মায়ের লা’শ কা’টা’ছেঁ’ড়া হোক?

মাথা দুদিকে দুলালো ঝুমঝুমি। সে চায় না ওর মায়ের লা’শ কা’টা’ছেঁ’ড়া হোক। কষ্ট পেয়েছে অনেক তাই মৃ’ত্যু’র পর আর কষ্ট দিতে চাচ্ছে না। তাছাড়া কা’টা’ছেঁ’ড়া করে কি লাভ? ওরা তো জনেই জেসমিন বেগম আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছে।

-” ভালো কথা। আমরা প্রতিবেশীদের বলছি হার্ট-অ্যাটাক করেছে তোর মা। যা গিয়ে শেষ বারের মত দেখে আয়। অযথা বাড়াবাড়ি করিস না তাহলে পুলিশ এসে লা’শ নিয়ে যাবে। ঝর্ণাকে বলেছি ও সেজন্য চুপচাপ কাদঁছে।

ঝুমঝুমি চলে আসলো। পুলিশ জানানোর প্রয়োজনবোধ করল না ও। করে-কি-ই-বা লাভ হবে। বরং ওর মায়ের মৃ’ত নিথর দেহটাকে নিষ্ঠুর ভাবে কা’টা হবে। ঝুমঝুমি খেয়াল করল ওর শরীরের লোম দাঁড়িয়ে উঠেছে।

মহিলাদের মা’রা যাওয়ার খবর বেশি মানুষদের জানানো ঠিক নয় তাই সবাই মিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জা’না’জা শেষে দাপন করে দিয়েছে।

ঝর্ণা-ঝুমঝুমি মায়ের সাথে যে রুমে থাকতো ওই রুমটায় হাঁটু মুড়ে বসে আছে। কাদঁছে চুপিচুপি। মেঘ তখন আসলো এ রুমে, মুখশ্রী জুড়ে একরাশ রাগের ছোঁয়া।
-” এখন তো আর বিয়ে হবে না। হাজার হোক আপন ফুপু ছিলেন ওনার মৃ’ত্যু’তে আমিও কষ্ট পেয়েছি। আমি পশু তবে বিবেকহীন নয়। ফুপুর চ’ল্লি’শা শেষ হলে বিয়ে হবে আমাদের।

মেঘ এইটুকু বলে চলে যায়। ঝুমঝুমির কানে পৌঁছেছে কী পৌঁছেনি সে জানে না। দিন কাটতে থাকলো একদিন একদিন করে। মেঘ আগের মত বিরক্ত না করলেও ওর অসহ্য বাজে কথাগুলো গিলতে হতো প্রতিনিয়ত। প্রতিবাদী ঝুমঝুমি প্রতিবাদ করতো না তখন আর।

দিনেক পনেরোর পর হঠাৎ করেই ঝর্ণার খুব জ্বর,মাথা ব্যাথা,বমি,কোমরে ব্যাথা। একসাথে এতগুলো সমস্যা হওয়ায় ছোট বোনকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায় ঝুমঝুমি। তখন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডক্টর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে বলে। ঝুমঝুমি অবাক হলেও ডক্টরের কথা শুনে টেস্ট করে যার ধরুদ জানতে পারে ঝর্ণা প্রেগনেন্ট। একজন মানুষ আর কত যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা যায় ঝুমঝুমিকে না দেখলে হয়তো জানতে পারত না কেউ। শান্ত গম্ভীর হয়ে ঝর্ণার কাছে জানতে চায় সন্তানের বাবা কে তখন শুনতে হয় আরেকটি অসহনীয় ঘটনা।

একদিন মা’তা’ল হয়ে বাসায় ফিরে মেঘ। ঝর্ণা আসছিল পানি পান করতে। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে সেই দরজা খুলে দেখে সামনে টালমাটাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ। মেঘ ভিতরে আসতেই দরজা বন্ধ করে ঝর্ণা। তারপর শুনতে পায় আদেশের সুর, আমার খাবার বেড়ে নিয়ে আয়।

এই মুহূর্তে মামীকে ডাকা যাবে না। ডাকলেই শুরু হবে অশান্তি অন্যদিকে জেসমিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে খানিক আগে ঘুমিয়েছে মাথা ধরেছে তার। বাধ্য হয়েই খাবার বেড়ে নিয়ে যায় মেঘের রুমে।
-” রাখ ঐখানে।

মেঘের দেখানো জায়গায় খাবার রাখতেই শব্দ হয় দরজা আটকানোর। ঝর্ণা ঝুমঝুমির মত নয় একদম সহজ সরল, ভীতু সে।বলে উঠে, ভাইয়া দরজা আটকাচ্ছ কেন?

ঝর্ণার ঠোঁটে আঙ্গুল ছোঁয়ায় মেঘ। তারপর বেহুসে নাক ডুবায় ঝর্ণার চুলে। একহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে চুল। ঝর্ণা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই দখল করে ঠোঁটজোড়া। কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে উঠে, তোকে আমি খুব ভালোবাসি ঝুমঝুমি। আমার ভালোবাসাটা তুই বুঝিস না শুধু বুঝিস রাগটা।

বাইরে তখন বৃষ্টির স্রোত। সেই শব্দের মাঝে হারিয়ে যায় ঝর্ণার চিৎকার। মেঘ ঝর্ণাকে ঝুমঝুমি ভেবে লোপে নেই সেই মুহূর্ত। মিলন ঘটে অনিচ্ছা দুজনের শরীরের মিলন। বোনের মতোই নিজেকে ধ’র্ষি’তা হতে হয় ঝর্ণার।

ভোরের আগেই মেঘের নেশা কাটে। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। ভারী শরীর নিয়ে বসে উঠতেই দেখতে পায় ঘুমন্ত ল’গ্ন ঝর্ণাকে। বুঝতে পারে ঘুমিয়ে নয় বরং জ্ঞান হারিয়েছে ঝর্ণা। মাথা ধরে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে শুরু করে। মনে পড়ে রাতের কথা। চিন্তা হয় ঝুমঝুমি যদি জানতে পারে তাহলে কখনোই মেঘকে বিয়ে করবে না। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরায় ঝর্ণার। শরীরে পাতলা কম্বলে ঢেকে কেঁদে উঠে সে। মেঘ তখন ধমকে উঠে। ও জানে ঝর্ণার মুখ বন্ধ করার জন্য ভয়েই আসল।
-” একথা কাউকে বললে তোদেরকে খু’ন করে ফেলবো। তাছাড়া লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারবি না তোরা। দেখছিস ঝুমঝুমির কী দশা তোরও অমন দশা হবে যদি কেউ জানে। লোকে বলবে বড় মেয়ের চরিত্রের পাশাপাশি ছোট মেয়ের চরিত্রেও ক’ল’ঙ্ক। আমি না হয় তোর বোনকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু তুই? তোকে কে বিয়ে করবে। সারাজীবন বড় বোনের ঘা’ড়ে বসেই থাকতে হবে। মুখ বন্ধ রাখ তাহলে ভালো থাকবি সবাই। আজকের ঘটনা আমি আর তুই ছাড়া তৃতীয় ব্যাক্তি জানবে না। বুঝেছিস?

ঝর্ণার ভয় হলো খুব ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে ভালোভাবেই ভয় ঢোকাতে পেরেছে মেঘ। তাইতো এ কথা কাউকে বলেনি ও। চুপচাপ গিলে নিয়েছে। তবে একদিন নয় আরো চার-পাঁচবার মেঘ ওকে ধ’র্ষ’ণ করেছে। প্রথমবার ভুল হলেও পরেরগুলো ছিল মেঘের চাহিদা মিটিনো কিংবা ঝুমঝুমির রাগ করে তার ছোট বোনের উপর প্রয়োগ করা।

ঝুমঝুমি সব শুনে কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল। ঝর্ণাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে। বাসায় ফিরে মেঘকে এ ঘটনা বলার পর মেঘ বলে এ’ব’র’শ’ন করার জন্য। সে এই বাচ্চা মানে না। ভয় দেখানো শুরু করে ঝুমঝুমি ও ঝর্ণাকে। ঝর্ণা ভয় পেলেও ঝুমঝুমি পেলো না। মেঘ তবুও হাল ছাড়েনি। অনেক চেষ্টায় সে করেছে ঝর্ণার পে’টে থাকা বাচ্চাটাকে ন’ষ্ট করতে। ঝুমঝুমি জানে এ-বাড়িতে ওরা দুবোন নিরাপদ নয়। তাই তো সুযোগ বুঝেই রাতের আড়ালে নিজেদের দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সকলের চোখের আড়ালে। হাতে জমানো টাকায় সেদিন রাতেই চলে আসে সিলেটে। একবার ট্যুরে এসেছিল এখানে ঝুমঝুমি। তারপর অনেক খোঁজে একটি ভাড়া বাসা পেয়ে যায় ওরা। মানুষজনের সাথে কথা বলতো না ওরা। ঝর্ণা সারাদিন এক বাসায় থাকতো ঝুমঝুমি ব্যাস্ত থাকতো কাজকর্মে। ভালোই চলছিল দিনকাল, ঝুমঝুমি ওখানে কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পড়ানো শুরু করল,বাচ্চাদের প্রাইভেট, একটা কোচিং সেন্টার। দু-বোনের ভালোই চলছিল সময়। ঝর্ণা তখন ছয় মাসের প্রেগনেন্ট। লোকজন আগে খেয়াল না রাখলো ইদানিং তাদের চোখে পড়ছে বিষয়টা। আকাশের চাঁদকে যেমন কখনোই আড়ালে রাখা যায় না তেমনি প্রেগনেট মেয়েদের পেট আড়ালে রাখা যায় না। লোকের আড়ালে থেকেও শেষপর্যন্ত আড়াল হতে পারেনি দু’বোন। একদিন এক প্রতিবেশী এসে বলবে-বলবে করে বলেই ফেললো, বড় বোনের বিয়ের আগে ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে? তোমাদের মা,বাবা কোথায়?

যে ভয় মানুষ পায় সেই ভয়েই তাদের সঙ্গে থাকে ছায়ার মতো। তবে ঝুমঝুমি আগে থেকেই কথা রেডি রেখেছিল। যেহেতু মানুষের ভিড়ে থাকতে হচ্ছে মানুষ তো প্রশ্ন করবেই। সে বলে উঠল,
-” আমাদের মা-বাবা দুজনই মা’রা গেছেন। আমার স্বামীও মা’রা গেছে। ছোট বোনের স্বামী বিদেশ থাকে।

মহিলাটি বিশ্বাস করেছি কিনা জানা নেই তবে তারপরের মাসেই ও বাসা পরিবর্তন করে ঝুমঝুমি। চলে যায় অন্য পাড়ায়। ওখানেও মানুষের প্রশ্ন। সবকিছুই সামাল দিতে গিয়েও পারেনি শেষমেষ। কাল হয়ে সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো ভুল প্রমাণ দিয়ে মুখ ভর্তি কুটিল হাসি নিয়ে দাঁড়ায় ঝুমঝুমির আপন ফুপি রুজিনা বেগম।

##চলবে,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ