#প্রেম_পুকুর
[৮]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন
সময়ের বেড়াজালে আমরা সবাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি।আমাদেরকে সময় ধোকা দিয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যখন আমরা সেটা অনুভব করি তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়।তাই আমাদের উচিত যে কোন সময় কে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যেন এই নিয়ে আমাদের পরে কোনো আফসোস না থাকে।
শিমু সাফোয়ানের বাসায় এসেছে গোটা সাত দিন হয়ে গেল।
কোনো রকম বই পড়ে টিভি দেখে সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে ওর। কখনো হয়তো সে ভাবেনি তার এত বড়লোকের বাড়িতে বিয়ে হবে।এই সব কিছুই ছিলো তাদের কাছে ছেড়া কাঁথায় থেকে লক্ষ টাকার সপ্ন দোখার মতোন।কিন্তু সৃষ্টি কর্তা যে ভাগ্যর মতো অলৌকিক একটা জিনিস রেখেছে।এই ভাগ্য যখন ফলে যায় মানুষ মিসকিন থেকে লাখপতি হয়ে যায়।আবার লাখপতি থেকে মিসকিন হয়ে যায়।
সাফোয়ানের এই ফ্লাটে রয়েছে তিনটি কামড়া যার একটি কামড়ায় সে থাকছে অন্যটিতে সাফোয়ান। আরেকটি কামড়া খালি পড়ে আছে।
মাজে মধ্যে তার নিজের কাছে ভাবতেও অবাক লাগে তারা তো স্বামী-স্ত্রী তাদের মাঝে কি এই যোজন যোজন দুরত্ব মানায়।
তখনই তার ভেতরে সত্তা বলে উঠে মানায়। নিজের আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এটা মানায়।
যদি দ্রুত তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও তবে আবার সে ভুল একই ভুল করতে পারে। যদি সে সত্যি নিজের ভুল শুধরে নিতে চায় তাহলে তাকে পরখ করো যেন একই ভুল বারবার না হয়।মুমিন ব্যাক্তি একবারই ধোকা খায় বারবার নয়।
শিমু ও সেই ভুল করবেনা সাফোয়ানকে পরখ করবে গভীর ভাবে। এতে একটু সময় লাগলেও দোষোর কিছু নেই।
শিমু নিজের চিন্তা ভাবনার ইতি ঘটিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।সাফোয়ান বলে গেছিলো আজকে ফিরতে রাত হবে।
তাই সেও রান্না ঘরে দেরি করেই ঢুকেছে।
উদ্দেশ্য কই মাছ টমেটো দিয়ে ভুনা করবে আর সাথে আলু ভাজি করবে। দুজন মানুষ বেশি রান্না করলে খাবার অপচয় হতে পারে।
কোমড়ে ওড়না গুজে রান্না করা শুরু করে দিলে।
প্রায় এক ঘন্ঠা সময় নিয়ে রান্না শেষ করল।
কিছু সালাদ আইটেম কেটে টেবিলে সব কিছু গরম গরম সাজিয়ে রাখল।
ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে যাওয়ায় ফ্রেস হতে ওয়াস রুমে চলে গেল।এরই মাঝেই সাফোয়ান ডোর বেল বাজালো কিন্তু কয়েকবার বাজানোর পরও শিমু দরজা খুলল না। শিমু ফোনে কয়েক বার কলও দিলো কিন্তু শিমুর ফোন ড্রয়িংরুমে থাকায় সেটাও রিসিব হলো না।
সাফোয়ান ভীষণ চিন্তিত হলো।
সাফোয়ান আরো কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। শিমু যতোক্ষনে বেড় হয়েছে ফোনের কল বাজতে বাজতে কেটে গেছে।
সাফোয়ান শেষ বারের মতো কলিং বেল বাজালো,শিমু দ্রুত দরজা খুলে দিলো।শিমু দরজা খুলতেই তার চোখে পরলো সাফোয়ানের বিদ্ধস্ত চেহারা।
সাফোয়ান তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকে গিয়ে শিমু কে স্পর্শ করতে গিয়েও করলোনা।
“তুমি ঠিক আছোতো।এতবার কলিং বেল বাজালাম, ফোনে কল করলাম কোনটাই কেন ধরলেনা?”
সাফোয়ানের অতিরিক্ত অস্থিরতার কারনে আপনির বদলে তুমি হয়ে গেছে।
শিমু দুঃখীত হয়ে উওর দিলো,”আম সরি,আসলে রান্না শেষে আমি ঘেমে গেছিলাম তাই শাওয়ার নিতে গেছিলাম একটু যার জন্য আমি শব্দ শুনতে পাইনি।”
“ওহ।”
সাফোয়ান ছোট করে ওহ বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।শিমু বুঝতে পারলো সাফোয়ান ভীষণ ক্লান্ত তাই ওর সাথে তেমন কথা বলল না।
শিমু এই একসাপ্তাহে বুঝতে পেড়েছে সাফোয়ান কফিতে আসক্ত।
তাই সে কিচেনে চলে গেল কফি বানাতে।
সাফোয়ান ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসেছে ।দরজা খটখটানির শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকালো।
“আসবো।”
“আসুন,আমি তো বলেছি আমার রুমে আসতে আপনি অনুমতি নিবেন না।”
শিমু কোন বাক বক্তিতায় না জড়িয়ে সাফোয়ানের কাছে এগিয়ে গেল।হাতে রাখা কফির মগটা সাফোয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।
“আপনার হয়তো এটা প্রয়োজন “।
সাফোয়ান শিমু হাতের দিকে তাকলো। এই মুহুর্তে তার সত্যি এক কাপ কফির প্রয়োজন ছিলো।আজকে অফিসে এক ক্লায়েন্টের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল সে যার দরুন মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
“ধন্যবাদ।”
“চাইলে কিন্তু আপনার জন্য এক কাপ আনতে পারতেন।”
“আমি কফি খাই না।”
“ওহ “।
সাফোয়ান কফি খেতে খেতে প্রশ্ন করলো আচ্ছা আপনি তো আমাকে পছন্দ করেননা তাহলে আমার কেয়ার করেন কেন?
“আসলে আমি মানুষ টাই একটু উদার প্রতৃতির তাই।”
সাফোয়ান মুচকি একটক হাসি দিয়ে বলল,”কতটা উদার দেখতেই পাচ্ছি। এতদিন যাবত ভালোবাসার আবদার করছি উদারতা দেখিয়ে সেটাও তো দিতে পারেন নাকি।”
“আপনাকে দেখলে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হয়। ঠিক ঘৃনা নয় যেটা আপনাকে আমার করা উচিত”।
সাফোয়ান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে শিমুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,”যেদিন আপনি এই অনূভুতির স্বাদ পাবেন সেদিন আপনি সম্পূর্ন আমার হবেন।”
শিমুর একটু লজ্জা লজ্জা অনুভুত হয় কেন হয় সে সেটা জানেনা। শিমু নিজের কক্ষের দিকে যেতে যেতে বলল,”আপনার খিদে পেলে আমাকে ডেকে দিয়েন।”
সাফোয়ান মনে মনে বলল, “খিদে তো লেগেছে প্রেম প্রেম খিদে লেগেছে আমার”।
_______
এতো রাতে আমানের ফোন দেখে অনিকা অবাক হলো।ছেলেটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।আগে এরকম ছিলোনা প্রথম প্রথম যখন আয়ান ভাইয়ার সাথে সাথে আসত তখন তাকে দেখে মনে হতো ভাজ মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। কিন্ত যেই থেকে
নিজের অনুভুতি সম্পর্কে ওকে জানিয়েছে সেই থেকে শুরু করল মি.অভদ্র হয়ে যাওয়া।
সেদিন দেখতে আসান পর থেকে ছেলেটা আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে।হুটহাট কল দিচ্ছে আবার দেখা করার আবদার করছে।ছেলেটা যে ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ এটা তার জানা হয়ে গেছে।প্রেমিক পুরুষ ভালো কিন্তু ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ একুটু বেশিই ভালো হয়। এরা তাদের প্রিয়তমার জন্য সবই করতে পারে।
অনিকা ভাবনার ইতি টেনে কল রিসিব করল,”আসসালামু আলাইকুম।”
মেয়েলি কণ্ঠ পেয়ে আয়ানের চিত্ত শান্ত হলো।
যতবার এই কণ্ঠ শুনে ততবার তাকে একান্ত নিজের করে নেয়ার ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।নিজেকে শান্ত করে নিজেই নিজেকে আশ্বাস দেয় আর অল্প কিছু দিন তার পর সে একান্তই তোর। যাকে হাড়ানোর ভয় তোকে আর কুড়ে কুড়ে খাবেন।
__________
দাদী রহিমাকে দিয়ে পা টেপাচ্ছে কালকে রাতে সে এক ভয়ংকর সপ্ন দেখেছে।সাফোয়ান আর শিমু বাড়িতে এসেছে।এসেই পায়ের ওপর পা তুলে তাকে দিয়ে সব কাজ করাচ্ছে। নাতি, ছেলের বউ তার পাশে না থাকায় শিমুকে সে কিছুই বলতে পারছেনা।
এই দুঃসপ্ন দেখার পর থেকে রাজিয়া বেগমের আত্মা শুকিয়ে আছে শরীরও কেমন মেচ মেচ করছে।
আয়ান দাদীর ঘরের কাছ দিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল। দাদীকে এত রাতে জাগতে দেখে দাদীর ঘরে প্রবেশ করল।
গিয়েও দেখলো রহিমা খালা পা টিপছে আর ঘুমে ঢুলছে।
কিন্তু বুড়ির চোখে ঘুম নেই।
আয়ান রহিমা খালাকে চলে যেতে বলে নিজেই দাদীর
পা টিপে দিতে শুরু করলো।
কথায় কথায় দাদীকে জিজ্ঞেস করল, “ঘুমাচ্ছো না কেন?”
“ঘুম কি আমার আর আছে।”
“কেন?”
“ঘুমতো আমার কবেই উড়ে গেছে।যেদিন থেকে আমার নাতি গরীব একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। জানিস আমার কত স্বাধ ছিলো,,,
আয়ান দাদীর কথা শেষ না করতে দিয়ে বলল,”দাদী আমার ঘুম পেয়েছে আমি আসছি।”
নিজের কথা শেষ করে আয়ান আর এক সেকেন্ড ও দেড়ি করলনা দ্রুত দাদীর কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেল।
রাজিয়া বেগম নাতির চলে যাওয়ার দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলেন।তার কথা শোনার মতো কেও নেই।
চলবে,,