প্রেম_পুকুর পর্ব-০৬

0
623

#প্রেম_পুকুর
[৬]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

শিমু সকল কাজ শেষ করে সাফোয়ানের রুমে
নক করল।
সাফোয়ানের সাথে তার কথা বলা প্রয়োজন। সাফোয়ান ভিতরে আসতে বলায় সে ভিতরে ঢুকলো।কিন্তু রুমের ভিতরে ডুকে ভীষণ অবাক হলো। সাফোয়ান নিজের পোশাক আলমারির এক পাশে রেখে দিচ্ছে।
কৌতুহল নিয়ে শিমু জিজ্ঞেস করল,”আপনি আপনার জিনিস গুলো একপাশে রাখছেন কেন?”
সাফোয়ান কোন প্রতিক্রিয়া না করে এবার শিমু লাগেজ গুলো ধরতে যাবে অমনি শিমু দৌড়ে গিয়ে সাফোয়ানের হাত সরিয়ে দেয়।সাফোয়ান ভ্রকুচকে তাকায়।
“কি হলো হাত সরালেন কেন?”

“আপনি আমার লাগেজ ধরছেন কেন?”

সাফোয়ান শিমুর থেকে লাগেজ নিয়ে বললো “পোশাক গুছিয়ে রাখব।”

সহজ সাবলীল উওর দিয়ে সাফোয়ান লাগেজ নিয়ে যায়। শিমু আবার দৌরে গিয়ে আটকায়।

“আপনাকে রাখতে হবেনা।”

“কেন?”

“কারন আমার পোশাক আমিই রাখবো। ”

“আমি রাখলে কি সমস্যা বলুনতো!”

শিমু ভীষণ বিরক্ত হলো।রাগ দেখিয়ে বললো,
“আপনি বুঝতে পারছেননা একটা মেয়ের লাগেজে তার কত প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে”।

সাফোয়ান এবার বুঝতে পারলো তবুও বউকে রাগানোর জন্য বলল,”না আমি কিভাবে বুঝবো আমি কি মেয়ে নাকি। আপনি বলুন আমি সব বুঝে নিচ্ছি।”
শিমু রাগে চোখ মুখ লাল করে লাগেজের ওপর থেকে সাফোয়ানের হাত সারিয়ে দিয়ে বলে,”আমার পোশাক আমি গোছাবো।যদি আরেক বার হাত বাড়ান তো হাত পা ভেঙে কাধে ঝুলিয় দিবো।”

সাফোয়ান এই প্রথম বউকে এতো রাগ করতে দেখে আর কথা বলতে দেখে অবাকই হলো।
কিন্তু শিমু তার সাথে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বুঝতে পেরে মনে মনে খুশি হলো।

________________

অনিকা নিজের পড়ার টেবিলে বসে স্কেচ করছিল দু’টো চোখের।
দরজা খোলাই ছিল আয়ান চুপি চুপি পায়ে পিছন থেকে এসে বোন কে বলল,”কি করছিস পাকনী “।
আকষ্মিক শব্দ পেয়ে অনিকার হাতের স্কেচ বুকটা নিচে পড়ে যায়।
অনিকা দ্রুত স্কেচ বুকটা তুলতে যাবো অমনি আয়ান বুকটা নিজের হাতে তুলে নেয়।
হাত দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখে বলল,”কি বলত প্রেম পত্র লিখছিস নাকি। ”

“তুমি দাও তো খাতাটা। স্কেচ বুকে কি কেও প্রেম পত্র লিখতে পারে নাকি। ”

“পারে পারে মানুষ চাইলে সবই পারে।”

আয়ান খাতা টা খুলতে যাবে অমনি দ্রুত অনিক খাতা কেড়ে নিতে যায়। কিন্তু আয়ান খাতা দেয়না বোনের থেকে লম্বা হওয়ায় বোনকে এক বাহুর চিপায় আটকে রাখে।
অতঃপর খাতার পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকে উল্টাতে উল্টাতে একটা পৃষ্ঠায় গিয়ে চোখ আটকে যায়।
এক জোড়া চোখ। চেনা চেনা লাগছে কিন্তু চিনতে পারছেনা। অনিকা কোন রকমে আয়ানের কাছ থেকে ছুটে হাত থেকে খাতাটা কেড়ে নেয়।

“ভাইয়া তুমি যে এমন করে আমাকে জ্বালাও।দোয়া করি তোমার বউ তোমাােকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিক।”

“তা যাই করুক একটা বউ হলেই চলবে আমার।”
___________

শিমু সাফোয়ানের মাঝে আজকে রয়েছে বিশাল কোলবালিশ। সাফোয়ানই রেখেছে এই ভয়ে যদি কিছু হয়ে যায়।যা মেয়ে পড়ে তার হাত পাই ভেঙে দিবে।
________________

কেটে গেছে দু’টো দিন সাফোয়ান শিমুর চলে যাবার সময় হয়ে গেছে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও শিমু কে যেতে হচ্ছে।
শিমুর যাবতীয় জিনিস গাড়িতে তুলছে ড্রাইবার চাচা। শিমু শাশুড়ি কাছে দাড়িয়ে আছে মুখ ভার করে যেন যেন টুপ করে চোখের জল গড়িয়ে পড়বে। অনিকাও মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।তার ইচ্ছে করছে না ভাবীকে যেতে দিতে।কিন্তু ভাই ভাবীর মাঝে যোজন যোজন দুরত্ব কমাতে তাদের একত্রে থাকাটা প্রয়োজন।
আয়ান সাফোয়ানের সাথে দুষ্টুমিতে ব্যাস্ত।
অবশেষে সকলকে বিদায় দিয়ে সাফোয়ান আর শিমু গাড়িতে বসল।

দাদী তাদের যাওয়া দেখেও কিছু বলল না।শুধু মুখে অন্ধকার নামিয়ে বসে রইল।

শিমুর চোখ এবার বাধ ভেঙে গেল। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে আর ও হাতের সাহায্যে মুছে ফেলছে।
সাফোয়ান নিজের রুমাল এগিয়ে দিলো ।
শিমু সাফোয়ানের থেকে রুমালটা নিয়ে চোখ পরিস্কার করলো।
মুহুর্তের মাঝেই শিমুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।
প্রায় তিন ঘন্টার রাস্তা। আধঘণ্টা মতো কান্না করে শিমু ঘুমিয়ে গেল।
সাফোয়ান সপ্তপর্ণে শিমুর মাথা সাফোয়ানের কাধে রাখল।মনে মনে ভাবল মেয়েটার কত রূপ দেখবে সে কখনো রুদ্রাণী কখনো কান্নাবতী কখনো আবার শান্ত নদীর মতো গভীর।

এই মেয়ের প্রেমে পড়ার মতো হাজার কারন আছে তার কাছে।তাই সে একটা কারনও মিস করবেনা। সব গুলো কারন দেখে তার প্রেম পুকুরে হাবু ডুবু খাবে।

সাফোয়ানের মনে একটা ইচ্ছে বার বার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মন চাচ্ছে একবার মেয়েটার গালে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করাতে।
কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না এটা করলো তার ওয়াদা ভঙ্গ হবে।
মন মস্তিষ্কর সাথে লড়াই করে সে মস্তিস্ককেই জিতিয়ে দিল।
গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল নিজ স্ত্রীর দিকে। নেই চোখের প্রণয় যদি শিমু দেখত তবে সাফোয়ান কে নির্বিঘ্নে আপন করে নিত।
___________
লায়লা বেগম রান্না ঘরে রহিমা খালার সাথে রান্না করছিলেন। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হলো তিনি দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলেন আমান আর তার পরিবার দাড়িয়ে আছে। এই সন্ধ্যা বেলায় তাদের আসার কারন বুঝতে পারলেননা।তবুও ভদ্রতার খাতিরে ভিতরে আসতে বললেন।
আমান সম্পর্কে আয়ানের বন্ধু সে মাঝে মাঝেই এ বাড়িতে আসে কিন্তু বাবা মাকে নিয়ে আসার কারন টা অস্পষ্ট।
তাই তিনি তাদের হালকা নাস্তা দিয়ে ওপরে আয়ানকে ডাকতে চলে যান।
অনিকার মন খারাপ দেখে আয়ান এটা সেটা বলে বোনকে খুশি করার চেষ্টা করছে।
লায়লা অনিকার রুমে আয়ানকে দেখে বললেন। “আয়ান তোর বন্ধু এসেছে।”

আয়ান বিষ্ময় নিয়ে বললো,”এই সন্ধ্যা বেলায়!”

“হ্যা আমান এসেছে পরিবার নিয়ে।”

আমানের নাম শুনে অনিকার হার্ট বিট ফাস্ট হয়ে গেল। অস্পষ্ট স্বরে বলল আমান পরিবার নিয়ে চলে এসেছে।

আয়ানের বন্ধুর হঠাৎ পরিবার নিয়ে আগমনের কারনটা বোধগম্য হলোনা।

দ্রুত নিচে গিয়ে আমানকে বলল,দোস্ত তুই এই সন্ধ্যা বেলা”।
“কেন আসতে পারিনা। ”

আমানের শিতল কণ্ঠে উওর দিয়ে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে অনিকাকে খুজল। না কোথাও নেই, মেয়েটা তাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবার প্লানিং করেছে নাকি।

আলতাফ এসে আমানের বাবা সিরাজের পাশে গিয়ে বসলেন।
“ভাই এই অসময়ে আপনারা এখানে, কোথাও যাচ্ছিলেন বুঝি।”

“না ভাই এখানেই এলাম।”

আলতাফের ভ্রকুচকে গেল। ভদ্রতা সুলভ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,”হঠাৎ এই পথে কি মনে করে”।

“এখন রোজই আসতে হবে সম্পর্ক দৃঢ় করতেই এসেছি।”

আলতাফ বিচক্ষণ মানুষ সিরাজের কথার মানে খুব দ্রুতই বুঝতে পারলেন। আমানের দিকে একবার গভীর ভাবে তাকালেন।আমান বারবার অনিকার রুমের দিকে তাকাচ্ছে।
যা বোঝার তিনি বুজে গেলেন। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমান।আমান ছেলে হিসেবে ভালোই বর্তমানে সে একজন হার্ট সার্জন। সিরাজও নামকরা ব্যাবসায়ী। সব মিলিয়ে তিনি অমত করার সুযোগ পেলেননা।
তাই মুখে এক গাল হাসি ফুটিয়ে বললেন,”লায়লা মাকে ডাকো আর মিষ্টি নিয়ে আসো।”
সিরাজ ও খুব খুশি হলেন, “যদিও আমার ডায়াবেটিস আছে তবে আজকে জন্য মিষ্টি খেলে কিছুই হবেনা”।

আমানের মা কামিনী বেগম স্বামীর দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। বউ এর চোখ গরম দেখে সিরাজ মুখ ছোট করে বললেন,”অল্প করেই খাবো।”

সিরাজের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিলেন।
আয়ান বন্ধুর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকায়।মনে মনে আওড়ায়,”আমার বোনের সাথে শা*লা তুই এত কিছু করলি আমিই জানলাম না।”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে