@প্রেম শহরে
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_নুসরাত জাহান_নিপু
হবু বরের সাথে কফিশপে দেখা করতে গিয়ে তার জায়গায় প্রাক্তনের দেখা পাবে কল্পনাও করেনি আরদি। মানুষটার সাথে তার দেখা হলো গুনে গুনে ৬ বছর পর। বসন্তের নভশ্চরে কিশোরী মনে যখন হাজারো এলোমেলো ভাবনা অজান্তেই তখন প্রেমে পড়ে যায় আয়নের। নিজের অতীতের পৃষ্ঠা উলটানোর আগে তার হবু বর এসে পড়লো। মিষ্টি হেসে সে বলল, “অপেক্ষা করালাম তোমাকে।বসো…”
ততক্ষণে আয়ন তার কাছাকাছি এসে পড়েছে। ওষ্ঠ জোড়ায় হাসি ঝুলিয়ে সে প্রশ্ন করল, “ভালো আছো?”
সেই পুরনো অভ্যেসটা আজও গেল না।’কেমন আছো’র বদলে প্রশ্ন করে ‘ভালো আছো?’। আরদি শীতল দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকালো। বেচারার চোখে-মুখে প্রশ্ন থইথই করছে।
আরদি স্মিত হেসে উত্তর দিলো, “ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
আয়ন দৃষ্টি নিচু করে মাথা নাড়লো। যার অর্থ সে ভালো আছে। সাগর এবারে মুখ খুলে বলল, “ইনি কে আরু?”
আরদি আয়নের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো, “আমার স্কুল লাইফের বন্ধু। মা..মানে আমার সিনিয়র ছিল। বাট ফ্রেন্ডের মতোই।”
সাগর ভদ্রতাসূচক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “হাই! আমি সাগর।”
আয়ন হাত মিলিয়ে বলল, “আয়ন।”
আরদির বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে।একজন হবু বর, অন্যজন প্রাক্তন প্রেমিক! এরা কেউ একে অপরের সম্পর্ক জানে না। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তার জানা নেই। আয়ন যদি সাগরকে তার বন্ধু মনে করে তাহলে এক্ষুনি আরদিকে বলে বসবে, “তুমি আগের চেয়েও সুন্দর হয়ে গেছো।”
আয়ন তার উদ্দেশ্যে বলল, ” তুমি…”
-“উনি আমার হবু বর।”
কথা বলতে বলতে তিনজন তিনটা চেয়ার দখল করে ফেলল। স্বভাবগত আয়ন মুচকি হেসে বলল, “ওয়াও! কংগ্রেস। আরদি, আমি কিন্তু কিছুই বলতাম না। ”
শেষ কথাটার অর্থ আরদি ভালোই বুঝলো। হুটহাট কিছু শোনার ভয়ে যে আরদি পরিচয় দিলো তা আয়ন বুঝতে পেরেছে। মাঝখানে সাগর প্রশ্ন করলো, ” কী বলতেন না?”
-“নাথিং সিরিয়াস।”
ভয়ে আরদির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এসেছিল। তার চেহারার ভাঁজে সুক্ষ্মভাবে মেঘের ছায়া স্পষ্ট ভেসে উঠলো। আয়ন মনে মনে এক গাদা হাসলো। এই সামান্য বিষয়টাতেও মেয়েটা এত ভয় পেল?এত ভীতু কেন মেয়েটা?
সেকেন্ড কাটতে না কাটতে সাগরের সাথে আয়ন মিশে গেল। কফি খেতে খেতে পরিবেশটা বেশ জমে উঠলো। দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরনো বন্ধু।
আরদির উদ্দেশ্যে আয়ন প্রশ্ন করলো,”কী ব্যাপার? এত চুপচাপ কেন? বিয়ে কবে করছো?”
নড়েচড়ে বসলো আরদি। সাগরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,” সামনের মাসেই। ”
আয়নের উদ্দ্যেশে সাগর বলল,” আরু এত চুপচাপ! উফ!যা প্রশ্ন করি তাই উত্তর দিবে। কথা বলবে মেপে মেপে। ”
ছেলে দু’জন খিলখিল করে হাসলো আর আরদি লুকিয়ে। আরদি-আয়নের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল বসন্তের শুরুতে।
দুই বেণী দু’হাতে ধরে যখন চঞ্চল আরদি কোচিংয়ে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে মোটা কন্ঠস্বর বলে উঠে, “এত কোমড় নাড়ানোর কী আছে?অঙ্গ-প্রতঙ্গ কী জন্ম থেকে বাঁকা?”
বসন্তের ভোর তখন। পুরুষ কণ্ঠে এমন কথা শুনে আরদি পেছন ঘুরে তাকাতেই আটকে গেল। সেই মুহুর্তে ছেলেটা বোতল থেকে চোখে-মুখে জল দিচ্ছিলো। কী নিখুঁতভাবে জলবিন্দু ছেলেটাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে! আরদি অনেকক্ষণ অবধি চেয়ে রইলো। হঠাৎ তার ছেলেটা তার কাছাকাছি এসে বলল, “হা করে তাকিয়ে আছো কেন? পছন্দ হয়েছে নাকি আমাকে?”
কী অসভ্য ছেলে! আরদির অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে এলো। লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো। চেয়েও সে ঝগড়া করতে পারেনি। চুপচাপ মাথা নিচু করে কোচিং-এ গিয়েছিল।
পরদিন আরদি যথা সম্ভব চেষ্টা করেছিল মাথা নিচু করে জায়গাটা পার করতে। কিন্তু আয়নের বাড়ির কাছাকাছি এসে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় ভর করায় সে ইচ্ছে করে কোমর দুলাতে লাগলো। সেদিন অবশ্য আয়নের দেখা মিলেনি। তবে পরদিনই কোচিং-এ গিয়ে জানতে পারলো আয়ন তার বান্ধবীর কাজিন হয়। ইনিয়েবিনিয়ে যখন আরদি তার বান্ধবীর বাসায় যায় তখন দেখা মিলে রাজকুমারের। বেশ জমিয়ে আড্ডার পর নাম্বার আদান-প্রদান হয়। দু’চার দিনের কথা বলায় প্রেমের সম্পর্কটাও হয়ে যায়। আয়নের প্রেমে পড়াটা আরদির জন্য যেন বাধ্যতা ছিল। তবে প্রেমটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
কল্পনায় জগতে থাকাকালীন আরদি হেসে উঠলো।আবেগে ভাসা দিনগুলো খুব একটা খারাপ হয় না। সাগর বলল, ” আরু, আমাকে এখনই যেতে হবে।বাসা থেকে ফোন এলো। ”
ব্যস্ত হয়ে আরদি বলল,”ওহ। ঠিক আছে চলুন।”
বিপত্তি বাঁধিয়ে আয়ন বলল, “সাগর, আমি বলছিলাম তোমার যখন তাড়া আছে আরদিকে আমি না হয় বাসায় পৌঁছে দিবো। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড। ”
ভাবার সময়ও না নিয়ে সাগর সম্মতি দিলো। আরদি মনে মনে সাগরকে বলল, “বলদ! হবু বউকে কেউ প্রাক্তনের সাথে ছাড়ে? প্রাক্তন তো কালনাগ স্বরুপ। ”
এতক্ষণে আরদির অন্যরকম অনুভূতি হলো। মনে হলো পুরনো অনূভুতিরা তাজা হচ্ছে। ছ’বছরে আয়নের জন্য কোনো রকম অনুভূতি কাজ করেনি। তবে মানুষটাকে মনে পড়তো। ঐ যে, প্রেমটা সে শিখিয়েছে।
-“আমার কী খবর জিজ্ঞেস করলে না তো।”
আরদি কফিশপ থেকে বের হয়ে হলো। পেছন পেছন আয়নও আসছে। কিছুটা উঁচু স্বরে বলল, “বসন্তরাণী!”
আরদি রাগীস্বরে বলল,”আমার নাম আরদি। ইসরাত আরদি! ”
-“সে তো আমারই বসন্তরাণী।”
-“খবরদার আপনি আবার আমাকে আপনার জালে ফেলছেন তো।”
আয়ন আবারো হাসলো। তার দেখে রেগেমেগে আরদি বলল,”আপনার এই অসহ্যকর হাসি বন্ধ করেন।”
-“কেন? হাসি দেখেই তো প্রেম করেছিলে।”
-“উফ!”
-“জানোই তো এটা আমার অভ্যাস।”
-“পরিবর্তন করুন।”
-“অসম্ভব! এর জন্যই মেয়েরা পটে যায়।”
রাস্তার দু’পাশে দু’জন হাটতে লাগলো। পলক বাদে আয়ন বলল, “সাগর ছেলেটা ভালোই। তোমার জন্য পারফেক্ট।”
-“জানি। বাবা-মায়ের পছন্দ।”
-“তোমার পছন্দ না?”
-“পছন্দ।”
-“বয়ফ্রেন্ড নেই?”
-“এক বছর আগে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ”
-“কয় বছরের সম্পর্ক?”
-“নয় মাস ছিল। দ্যান আমি নিরামিষ বলে ব্রেকাপ।”
আরদি চাপা হাসলো। আয়নের সাথে প্রেমের দুই মাসের মধ্যে মা জেনে যায়। তখন তার মা বাসার সবাইকে বলে দেওয়ার ভয় দেখায়। মাত্র ষোলো বছরে প্রেম শিখছে মেয়ে এই কথা পরিবারের কেউ মানতো না। সে ভীতুও ছিল বেশ। তাই ভয়ে ব্রেকাপ করে ফেলে। আয়ন চেষ্টা করেছিল সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার,দু’জনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর আগায়নি। আরদির প্রথম প্রথম কষ্ট হতো খুব। সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিতে ধূলো পড়ে যায়। “স্মৃতিতে ধূলো পড়ে যায়, কিন্তু মুছে যায় না!”
আয়ন তাকে বাসা অবধি ছেড়ে দিলো। নিজের রুমে এসে আরদি যেন প্রাণ ফিরে পেলো। কিন্তু তার মা এসেই হাজারটা প্রশ্ন করে বসলো। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো, “কি রে? কেমন কাটলো দিনটা? সাগর কত ভালো না?”
ক্লান্ত শরীর নিয়ে আরদি বলল, “হ্যাঁ, ভালো। ”
-“তোর চাচারা বলছিল এনগেজমেন্টটা এই মাসেই রাখতে।”
-“মা, পা’টা ব্যথা করছে।”
-“পা ব্যথা করছে মানে? হেটে এলি নাকি?”
-“হ্যাঁ!”
-“মানে? এতদূর থেকে তুই হেটে এলি? গাড়ি নিলি না ক্যান?”
বোকাবনে গেল আরদি। সত্যিই তো! তাঁরা হেটে এলো কেন? আয়ন গাড়ি কেন নেয়নি? টানা এক ঘণ্টা তারা হেটে এলো?
আরদি ভাবুক হয়ে তার মা’কে প্রশ্ন করল,”মা, আমরা হেটে কেন এলাম?”
-“আমিও তো তাই জিজ্ঞেস করছি। ”
-“কেন বলো তো? ও তো কিপ্টে না। ”
দুই নারী ভাবনায় মগ্ন। আরদির সাথে তার মায়ের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। হঠাৎ তার মা বলে উঠলো, “সময় না কাটার জন্য মনে হয়। তোর বাবাও না বিয়ের পর ঘুরতে গেলে এমন করতো। আস্তে গাড়ি চালাতো, নয়তো হেটে আসতো।”
থমকে গেল আরদি। আয়নের উদ্দেশ্য কী এটাই ছিল? কোথাও না কোথাও আয়ন কী তাকে এখনো ভালোবাসে? আরদিই বা কেন বলেনি গাড়ির জন্য? সময়টা কী তার ভালো কাটছিল?
এই সব প্রশ্নের উত্তর হয় একটাই। সময়টা আরদির ভালো লাগছিল। অপরাধী দৃষ্টিতে সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ” মা, আমি সাগরের সাথে আসিনি। ”
-“মানে?”
-“ঐ মানে আমি…”
-“একা এলি তুই?”
-“না, কীভাবে বলি তোমাকে?”
-“আজব!”
-“আয়ন…আয়নের সাথে এসেছি। কফিশপে হুট করে ওর সাথে দেখা হয়ে যায়। তো…”
-“আয়ন মানে ঐ ছেলেটা?”
‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়লো আরদি। কিছু মুহুর্তে দু’জনে নিরবে কাটালো। তারপর মা বলল,” ও কী চায়?”
-“কিছু না মা। হুট করেই দেখা। আর ওর জন্য আমার কোনো ফিলিংস নেই। ”
-“সিওর তুই? ”
-“হ্যাঁ।”
কিছু একটার হিসেব মিলাতে মিলাতে আরদির মা রুম ত্যাগ করলো। বিপাকে পড়লো আরদি। আয়নের সাথে আবার কী দেখা হবে? এত বছরে দেখা হয়নি কারণ সে ক্যারিয়ার গোছাতে ব্যস্ত ছিল। আরদি উড়ো খবর পেয়েছিল আয়ন বিদেশ গিয়েছে। তার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আয়নের ফিরে আসা, হুট করে দেখা হওয়া। সবটা কাকতালীয়?
আরদি নিজের ডায়েরি খুঁজতে শুরু করল। ডায়েরিতে একসময় তার আবেগী বয়সের ছন্দ লিখতো। সব কিছুই আয়নকে ঘিরে ছিল। পরবর্তী প্রেমটাতে এই অনুভূতিটা হয়নি। তাই কিছু লিখেওনি। ডায়েরিতে সে আয়নের পুরনো নাম্বারটা পেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে সে ডায়াল করলো নাম্বারটাতে। যদিও সে নিশ্চিত ছিল না, ওপাশ থেকে সাড়া পাবে।
তিন-চার বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। আরদির হৃৎপিণ্ডের গতি কয়েকগুন বেড়ে গেল। সত্যিই আয়ন রিসিভ করেছে?
-“হ্যালো, কে বলছেন?”
-“আ…আমি!”
ওপাশ থেকে সেকেন্ড কয়েক সাড়া এলো না। তারপর খিলখিলিয়ে হেসে বলল, “কী ব্যাপার? আমাকে মিস করছো বসন্ত রাণী?”
-“উফ! আপনাকে কেন মিস করবো আমি?কে হোন আপনি আমার। ”
-“প্রেমিক!”
-“ছিলেন।”
-“সে তো আমি সবারই ছিলাম। ক’জন আমার মর্ম বুঝলো বলো?”
-“মানে?”
-“সে কিছু না। একসময় তোমার নাম্বার থেকে খুব কল আসতো। কখনো ক্রন্দন মাখা নারী কণ্ঠে ভয়েস আসতো “আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।পড়াশোনায় মন বসছে না।”
নিজের অতীতের কর্মকাণ্ড শুনে আরদি লজ্জা পেতে শুরু করল। কত পাগলামিই না করেছে সে!
হঠাৎ আয়ন বলে উঠলো, “এই তোমার সাগর কেন কল করছে আমাকে? দুই বউ-বর একসাথে আমার প্রেমে পড়োনি তো?”
-“সাগর আপনাকে কেন কল করবে?আর নাম্বার কোথায় পেলো?”
-“তোমার সামনেই তো নিলো। উপস, তুমি তো তখন আমার শহরে ছিলে।”
আরদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো সে। বিড়বিড় করে আরদি বলল, “আজব লোক!”
রাতে খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়ে আরদি জানতে পারলো পাঁচ দিন পরেই সাগরের সাথে এনগেজমেন্ট। তারপরই বিয়ের কাজকর্ম শুরু হবে। কোথাও যেন আরদির মনে হয়েছে সবটা ঠিক হচ্ছে না। আরো কিছু সময় দরকার। কিন্তু বাবা-চাচা’র সামনে এটা বলার সাহস হয়নি। নিজের মনকে সান্ত্বনা
দিলো ‘প্রকৃতির নিয়মে সবটা হোক!’
রাত ১২টার সময় তার ফোনে কল এলো। ঘুম জড়ানোর কণ্ঠে সে রিসিভ করে বলল, “হ্যালো!”
-“তুমি কী ঘুমাচ্ছো?”
মেজাজ খারাপ করে মোবাইলের পর্দায় চোখ বুলিয়ে দেখলো কলটা আয়ন করেছে। রাতে ঘুম ভাঙানোর পর ‘ঘুমাচ্ছো’ প্রশ্ন করাটা তার দ্বারাই সম্ভব। কঠিন কণ্ঠে উত্তর দিলো, ” রাত ১২টায় জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।”
-“না, তুমি ঘুমাচ্ছো। এত জলদি ঘুমিয়ে পড়লে? আগে তো অনেক রাত অবধি জেগে থাকতে।”
মনে মনে আরদি বলল,”তখন তো প্রেমের ভূতে ধরেছিল।”
মুখে বলল, “এত রাতে কল করলেন কেন?”
-“তুমি বিকেলে কল করেছিলে। তোমার হবু বর তো আমাদের সুখের সাগরে আগুন ধরালো, প্রেমটা আর হলো কই? তাই ভাবলাম রাতে প্রেম করি। ”
-“শাট আপ।”
হেসে উঠলো আয়ন। আরদিকে রাগিয়ে দিতে বেশ লাগে তার। একজন হাসছে, অপরজন বিরক্ত হচ্ছে। তবুও কেউ কল কেটে দিচ্ছে না। আরদি প্রশ্ন করল, “সাগর কেন করছিল?”
-“তোমাকে বলেনি?”
-“কথা হয়নি আমার সাথে।”
-“ওও। তোমাকে ঠিকমতো পৌঁছে দিলাম কি’না জানতে চাইলো।”
-“ওহ।”
বাকি রাতটা দু’জনের ফোনে কথা বলতে বলতেই কেটে গেল। কখনো আরদিকে রাগিয়েছে তো কখনো হাসিয়েছে,নয়তো কখনো পুরনো কথা তুলেছে।মাঝে একবার গানও শুনিয়েছে আয়ন। সব মিলিয়ে আরদির খুব সুন্দর একটা রাত পার হলো। একবারের জন্যও আয়নকে প্রশ্ন করার সাহস হলো না “কেন আবার প্রবেশ করলেন আমার শহরে?”
এর পরের দিন সাগরের সাথে আরদির চলে যেতে হলো শপিংয়ে। গিয়ে দেখলো সেখানো রাজকুমারও উপস্থিত। সাগরকে প্রশ্ন করতে সে উত্তর দিলো সে নিজে আসতে বলেছে। তখন আরদি বিড়বিড় করে বলে, “কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।”
আয়ন তখন ফিসফিস করে বলে, “আমার মনে হয় সাগর আমাকে তার ছোটো বোনের জন্য পছন্দ করেছে। বোনটাও সেই কিউট!”
খুব রাগ লাগছিল আরদির। সে বুঝতে পারছিল আস্তে আস্তে সে পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছে। রাতভর কথা বলে আয়নের সাথে। সাগরের সাথে বের হলেই সেখানে আয়ন উপস্থিত। কখনো কাকতালীয়ভাবে নয়তো সাগর নিয়ে আসে। দিন কী দিন বাজে অভ্যাস হচ্ছিলো। এনগেজমেন্টের দিনটাও ঘনিয়ে এলো।
চলবে…