#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮
অরিনের মেঝো ফুপি এবং ছোট ফুপি চলে গিয়েছেন সকাল সকাল। অনামিকা ইসলাম এখনো আছেন। বাড়িটা আবারও ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। তার ভীষণ খারাপ লাগছে। সে ছাদে এসে সেই রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো। এই রুমটাই তাকে শান্তি দেয়। এখানে থাকলে বাইরের দুনিয়ার কিছুই মাথায় আসে না। তার শান্তির জায়গা এটা।সে বসে একটা উপন্যাসের বই বের করে পড়া শুরু করলো।
কিছুক্ষণ বাদে রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলো অরিন। বইটি রেখে পাশে তাকাতে দেখলো ধূসরকে সে নিজেও একটা উপন্যাসের বই পড়ছে। অরিন বেশ রেগে গেলো। সে মানা করার পরও ছেলেটা এসেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো ধূসরের দিকে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,,,
“কি সমস্যা আপনার? আপনাকে কে না মানা করেছিলাম আমি এখানে আসতে। বজ্জাত লোক, নির্লজ্জ লোক। আমার রুমে কেনো এসেছেন আপনি?”
“সাট আপ বেয়াদব। তুমি কি ভদ্রতা শেখোনি? বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?”
“ঠিক আছে আমি না হয় বড়দের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে জানি না। কিন্তু আপনি! আপনি নিজেই কারো নিষেধ মানেন না। তার বেলায়”
“তুমি তো বলেছো তোমার অনুপস্থিততে যেনো না আসি। তুমি থাকলে তো আর আসতে মানা করোনি। তাই আমি এসেছি”
“আপনি, আপনি একটা যত্তসব। এমনিতেও মনটা ভালো ছিলো না। এখন আপনি এসে আমার মুডটা আরো নষ্ট করে দিলেন ছাই কোথাকার”
ধূসর হেসে বলে,,“বোম্বায় মরিচ কোথাকার”
ধূসর রুম থেকে বের হয়ে যায়। অরিন ঠিক করে এই বেয়াদব যতদিন না যায় সে আর এই রুম খুলবে না। সে কিছু আঁকার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমটাতে বড় তালা মেরে চলে আসে নিজের রুমে। বেয়াদব ছেলেটার জন্য কোথাও গিয়েও লাভ নেই। ফোনটা খুঁজে ফোন করলো রাহিয়াকে। দুইবার কল করার পর রাহিয়া অপাশ থেকে রিসিভ করে।
“হ্যাঁ বল অরিন”
“কোথায় তোরা এখন?”
“এইতো ট্রেন স্টেশনের কাছাকাছি চলে এসেছে। বাড়ি যেতে হয়তো এক ঘন্টা লাগতে পারে।”
“আচ্ছা সাবধানে যাস। পৌঁছে ফোন করিস রাখছি”
কল কেটে দিলো অরিন। এডমিশনের জন্য এখনো কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি নিতে হবে। ঢাকা ভার্সিটি বা জাহাঙ্গীর নগর ভার্সিটিতে চান্স পেলেই হচ্ছে। অরিন নিচে নামে। নিচে নামতেই দেখে সবাই গল্প করছে। সে সবার সাথে টুকটাক কথা বলে চলে যায় রান্না ঘরে নিজের মায়ের কাছে।
–
সব কাজিনরা মিলে শপিং এ এসেছে। রাফার বিয়ের মাত্র ৫ দিন বাকি। সবার অবস্থান এখন রাফাদের বাসায়। সবাই দুটো অটো করে চলে এসেছে মার্কেটে। বউয়ের শপিং করা শেষ। এখন বাকি শুধু রাহিয়া, জাহিন,জায়রা, অরিনের। সবাই মিলে শপিং শেষ করলো। রাহিয়া, জায়রা আর অরিন হলুদের জন্য একই রকমের লেহেঙ্গা নিয়েছে। সকালে হলুদ ছোঁয়ানোর জন্য শাড়িও কিনেছে। বিয়ের জন্য সাদা রঙের একটা লেহেঙ্গা কিনেছে অরিন। রাহিয়া কিনেছে কালো রঙের লেহেঙ্গা আর জায়রা নিয়েছে নীল রঙের। তিনটাই বেশ সুন্দর। জাহিন ও পাঞ্জাবি নিলো। ধূসরকেও জাহিন জোড় করিয়ে পাঞ্জাবি কিনিয়েছে।
সবাই কেনাকাটা শেষে রেস্টুরেন্টে আসলো। কেনাকাটা করতে করতে দুপুর হয়ে গিয়েছে। সবার ক্ষুধা ও লেগেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে সবাই আবারও অটো করে রাফাদের বাড়িতে চলে আসলো। রাফাদের বাড়িটা একতলা বিল্ডিং। চারটা রুম, একটা ড্রয়িংরুম সব আছে। রান্নাঘর বড় করে বাইরে দেওয়া। বেশ সুন্দর। অরিনের অনেক পছন্দ। রাহিয়াদের বাড়িটা না গ্রামে আবার না শহরে। বেশ ভালো একটা জায়গায়। শহর থেকে একটু ভেতরের দিকে।
সবাই এখন জামা কাপড় খুলে রাফাকে দেখাচ্ছে। বেচারি যেতে পারেনি। রাফা সবার জামা কাপড় দেখে বেশ খুশি হলো। ধূসর ও দেখালো তার তা। সে আসলে এসব কখনো দেখেনি। তবে এগুলো দেখতে তার বেশ ভালো লাগছে। দুপুরের সময় সবাই খেয়ে যার যার রুমে চলে গিয়েছে। জাহিন রাহিয়া এক সাইডে ডেকে এনে বলে,,,
“রাহিয়া একটু ছাদে আসবে তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো”
“আচ্ছা জাহিন ভাইয়া তুমি উপরে যাও আমি আসছি”
জাহিন রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ধূসরও বের হয়ে গিয়েছে। এখন রাফার রুমে অবস্থান তিন জনের, রাহিয়া, অরিন আর রাফার। রাফা রাহিয়াকে চেপে ধরে বলল,,,
“জাহিন ভাই কি বললো রে তোকে?”
অরিন না বুঝে তাকিয়ে আছে। সে আসলে খেয়ালই করেনি জাহিন রাহিয়াকে কিছু বলেছে। রাহিয়া বলল,,,
“ছাদে যেতে বলেছে কিছু কথা বলবে”
অরিন বোকার মতো প্রশ্ন করলো,,“ছাদে গিয়ে কথা বলতে হবে কেনো এখানে বললেই তো হতো”
রাফা বুরক্ত হয়ে বলল,,
“ওরে গাধা জাহিন ভাই রাহিয়াকে পছন্দ করে আর রাহিয়াও”
অরিন লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালো। সে অবাক হয়ে রাফা এবং রাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সে তো জানতোই না এসব কিছু।
“এতো কিছু হয়ে গেলো আর তোরা দু’জন আমায় কিছুই জানাসনি। আমি জাহিন ভাইয়াকে পেয়ে নেই।”
“আচ্ছা শোন জাহিন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার কাছে গেলাম”
“হ্যাঁ যাও যাও মানা কে করেছে।”
রাফার কথায় রাহিয়া বেশ লজ্জা পেলো। অরিন হাসছে। অরিন রাফার পাশে বসে বলল,,,“এসব কবে থেকে চলছে বল তো?”
“জাহিন ভাইয়ারটা তো জানি নাহ তবে রাহিয়া গত এক বছর যাবত জাহিন ভাইয়াকে পছন্দ করে। আজ মনে হয় জাহিন ভাইয়া তার মনের কথা বলতেই ডেকেছে রাহিয়াকে”
“বাহ কাজিন কাজিন কাপল। বেশ হবে তো”
রাফা ফাজলামি করে বলে,,,“হ্যাঁ আর তোর সাথে ধূসর ভাইয়ার ও কিন্তু বেশ যাবে”
অরিন মৃদু স্বরে চিৎকার করে বলল,,
“অসম্ভব চুপ কর। ওই বিদেশী বাদুড়কে আমি কখনোই বিয়ে করবো না। আস্ত খাটাশ। আমার সাথে শুধু ঝগড়া করে।”
“কিন্তু তোদের জুটিটা কিন্তু জোস হইতো”
“তুই চুপ করবি নাকি মারা খাবি তাই বল”
–
“জাহিন ভাইয়া!”
জাহিন পেছনে ঘুরলো। তার সামনে রাহিয়া দাঁড়িয়ে আছে। রাহিয়া জাহিনের থেকে দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। জাহিন গলা ঝেড়ে মৃদু স্বরে বলল,,,
“তোমার সাথে আমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে রাহিয়া।”
“হ্যাঁ জাহিন ভাইয়া বলো।”
জাহিন সাহস নিয়ে কাঙ্ক্ষিত কথাটি বলেই ফেললো,,,
“আমি কি তোমাকে বোনের থেকে বেশি কিছু ভেবে ভালোবাসলে তুমি কি খুব রাগ করবে রাহিয়া?”
রাহিয়া বিষ্মিত কন্ঠে বলে,,,“মানে?”
“মানে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমি প্রেম করতে তোমায় বলবো না তবে অন্যকারো সাথে তোমায় সহ্য ও করতে পারবো না। তুমি দয়া করে আমি ছাড়া অন্য হইও না।”
“এটা কি ছিলো জাহিন ভাইয়া”
“আমি তোমায় ভালোবাসি এটাই জানালাম। আমি জানি নাহ তোমার মনের কথা। আমি এখন তোমায় বিয়ে করতে পারবো না কারণ আমার কোনো চাকরি নেই স্টুডেন্ট আমি। তবে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে তোমায় হবে না দুবছর সময় দাও আমায় আমি তোমাকে ঠিক নিজের করে নিবো”
“তোমার এই কথাটা বলতে এতো সময় লাগলো জাহিন ভাইয়া। আমি কতগুলো দিন অপেক্ষা করেছি তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য। শেষ অব্দি বলেই ফেললে। আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি জাহিন ভাইয়া। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো হোক তা দু’বছর বা আরো বেশি।”
জাহিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহিয়ার মুখখানে। সে এটা আশাই করেনি। তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে ভালোবাসে এটা কম কিছু নয় তার জন্য। অতিরিক্ত খুশিতে যেনো সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এটা কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে। রাহিয়া মুচকি হেসে বলে,,,
“জাহিন ভাইয়া কোথায় তুমি?”
“না না কোথাও না। আমি কল্পনাও করতে পারি নি বিষয়টা”
রাহিয়া শব্দহীন হেসে বলে,,
“কিছু কিছু জিনিস আমরা কল্পনাও করি নাহ তবে তা পেয়ে যাই”
জাহিন সম্মতি জানায়। রাহিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ দেখলো কি না! না কেউ দেখেনি। সে জাহিনকে বলে নিচে নেমে যায়। জাহিন এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। একটু আগে যা ঘটলো তা সত্য কি না। তবে সত্য সবই সত্য। খুশিতে তার সব কিছু এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
–
“কি রে দু’জন কি এতো কথা বললি এতো সময় ধরে বলতো?”
অরিনের কথায় রাহিয়া লজ্জা পেলো তবে মুখভঙ্গিতে তা প্রকাশ করলো না সে। রাগি কন্ঠে বললো,, “কি পেয়েছিস তোরা দু’জন আমায়। ভাইয়া আমায় এমনিতেই ডেকেছে”
“ওসব বাদ দিয়ে মানে মানে সত্যি কথা বলে ফেলো সোনা। তোমার মিথ্যা আমি বা অরিন কেউই শুনতে চাইছি না। সত্যি বল তাড়াতাড়ি”
রাহিয়া জানে সে এদের সাথে পারবে না। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে বলে,,,“ভাইয়া তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছে”
রাহিয়া সব খুলে বলল দু’জনকে। দু’জন বেশ খুশি হয়েছে। যাক অবশেষে তাদের জাহিন ভাইয়া তার মনের কথাটা বলেই দিলো। জাহিনের চিন্তা ভাবনা তাদের তিনজনকেই মুগ্ধ করেছে। এই যুগে কেই বা বিয়ে করতে চায়। এখন তো সবাই প্রেমই করে। তবে জাহিনের মনোভাব বেশ ভালো লাগলো। ছেলেটা সোজা বিয়ে করতে চায়। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে!
#চলবে~