#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬
কত সময় তারা দু’জন ওভাবে বৃষ্টিতে ভিজেছে। তা কারোরই খেয়াল নেই। বৃষ্টির তেজ কমেছে। অরিনের শীত শীত অনুভব হচ্ছে। তার হঠাৎ খেয়াল আসলো ধূসরের কথা। পাশে তাকাতেই দেখলো ধূসর দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত ধূসরের কিছুটা কাছে এসে বলল,,,
“এই যে বিদেশী বাদুড় ঠিক আছেন আপনি?”
ধূসর কথা বললো না। অরিন ভয় পেয়ে গেলো। আবারও জিজ্ঞেস করলো,,, “আপনি ঠিক আছেন ধূসর সাহেব”
হঠাৎই ধূসর হেসে উঠলো। অরিন বুঝলো ধূসর মজা করছিলো। অরিনের প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো। সে নেমে গেলো ছাদ থেকে। ধূসর মৃদু হেসে নিজেও সে দিকে পা বাড়ায়। যাক একবার তো বিদেশী বাদুড় বলেনি। এটাই অনেক। মাথা ভার ভার লাগছে তার। এতো সময় ধরে আগে কখনো বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। রুমে এসে টিশার্ট ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো গোসল করতে। অরিন নিজের রুমে এসে দেখে সবাই এখনো মরার মতো ঘুমাচ্ছে। অরিন বিরক্ত হলো। জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ভ্যাগিস তাকে মা দেখেনি না হলে বকা খেতে হতো। চেঞ্জ করে বাইরে এসে দেখে তিনটা এখনো ঘুম। অরিন এগিয়ে এসে সব ক’টাকে তুলল।
রাহিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,,
“কি হলো অরিন এখন ডাকছিস কেনো? মাত্রই তো ঘুমালাম”
“মাত্র ঘুমিয়েছিস? এখন তিনটা বাজে। সবাই হতো যার যার মতো খেয়েও নিয়েছে। তোরা খাবি না?”
“কেনো তুই খাসনি? এতো সময় তুই কি করছিলি?”
“ঘুমাচ্ছিলি তো গরুর মতো। কখন কি হয় সেই খবর কি আর তোরা জানবি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল তাই ভিজছিলাম।”
“আচ্ছা আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি তুই ততক্ষণ অপেক্ষা কর। আমরা এক সাথেই খাবো ঠিক আছে?”
অরিন সম্মতি দেয়। সবাই ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। নিচে নামতেই জাহিনকে দেখলো। তারা সবাই কথা বলতে বলতে খাবার টেবিলে এসে বসলো। অরুনি শেখ অরিনদের দেখে বলে উঠেন,,,
“তবে আপনাদের এতো সময় পর আসার সময় হলো। এতো দেরি করলি কেনো? কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি”
“মামি তুমি যাও আমরা নিজেরা নিয়ে খেতে পারবো”
সবাই জাহিনের কথায় সম্মতি দেয়। অরুনি শেখ বলেন,,“আচ্ছা আমি ধূসরকে ডেকে দিয়ে যাচ্ছি। ও তো খায়নি। দুপুরে ডাকতে পাঠিয়েছিলাম হায়াতকে ও বলল নেই। ব্যস্ততায় আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। অরিন তুই একটু দেখে শুনে ওকে খাওয়াস”
অরিন মনে মনে বলল,,,“এহ আমার তো কোনো কাম কাজ নেই ছাইয়ের দেখাশোনা ছাড়া।”
তবে মুখে সেগুলো প্রকাশ না করে বলল,,, “আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু”
অরুনি শেখ ধূসরের রুমে চলে আসে। দরজা টোকা দিয়ে বলেন,,“ ধূসর আছো তুমি?”
ধূসর দরজা খুলে বলে,,,“জি মামি কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ দুপুরের খাবার তো এখনো খাওনি। চলো খেয়ে নিবে। তোমার বাকি সব ভাই বোনেরা খেতে বসেছে। তুমিও তাদের সাথে খেয়ে নাও। আর কিছু লাগলে অরিনকে বলো”
ধূসর মাথা নাড়াতেই তিনি নিজের রুমে চলে যান। ধূসরের শরীরটা ভালো না। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে এরকম হয়েছে। শরীর হালকা গরম। তবে সে এগুলো মাকে বলে টেনশনে ফেলাতে চাইছে না। তাই চুপ থাকাই ভালো মনে করলো। ধীরে ধীরে নিচে নামলো। দেখলো সবাই বসে খাচ্ছে। সে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসলো। জায়রার আবার ভীষণ পছন্দ ধূসরকে। সে ধূসরকে দেখে খুশি হয়ে বলল,,,
“ভাইয়া এতো সময় কোথায় ছিলে তুমি?”
ধূসর ধীর কন্ঠে শুধালো,,,“এইতো শুয়ে ছিলাম।”
অরিন ধূসরের গলা শুনে বুঝে ফেললো ধূসরের শরীর খারাপ। বৃষ্টিতে ভেজার কারণেই হয়েছে। তার অনুশোচনা হলো। সে বলেছিলো বিধায় হয়তো ধূসর ভিজেছিলো। অরিন নিজে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো। অতঃপর ধূসরকে এগিয়ে দিলো সব। ধূসর অবাক হলেও কিছু বলল না। কারণ তার এখন কথা বলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। ধূসর বেশি খেতেও পারলো না। বসে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত উঠে রুমে চলে আসলো। অরিন বুঝলো সব কিছু। তবে এটা ভেবে ভীষণ অবাক হলো যে সে কাউকে কেনো কিছু বললো না। সবাই নিজের রুমে চলে গিয়েছে। অরিন বুঝলো এখন যদি ধূসর ঔষধ না খায় তাহলে জ্বর আরো বাড়তে পারে।
তাই সে সব অস্বস্তি এক পাশে রেখে ওষুধ নিয়ে রুমে গেলো ধূসরের। ভেতরে প্রবেশ করতেও কেমন লাগছে। তবুও দরজায় আঘাত করে বলল,,,
“আসতে পারি?”
ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো না। অরিন বেশ ভয় পেলো। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকতেই তার খারাপ লাগলো ভীষণ। ধূসর বিছানায় কাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। জ্বরে কাঁপছে হয়তো। সে দ্রুত কাছে আসলো। এসে ধূসরকে ডাক দিলো তবে উত্তর আসলো না। এবার অরিন অনেক বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছে। এসে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে তার আম্মু আব্বুর রুমে এসে নক করে। অরুনি শেখ মাত্রই শুয়েছিলেন। দ্রুত উঠে পরলেন তিনি। মেয়েকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,,,
“কিছু লাগবে তোর?”
“আম্মু ধূসর সাহেবের জ্বর এসেছে। তাড়াতাড়ি চলো”
অরুনি শেখ চমকে উঠলেন। দ্রুত মেয়ের সাথে চলে আসলেন ধূসরের রুমে। ছেলেটা এখনো কাঁপছে। তিনি অরিনকে কম্বল এনে দিতে বলেন আর অনামিকা ইসলামকে ডেকে দিতে বলেন। অরিন প্রথমে কম্বল এনে দেয়। তারপর অনামিকা ইসলামকে ডাকে। অনামিকা ইসলাম এসে ছেলের অবস্থা দেখে আটকে উঠেন। আসাদ আহসানও ছেলের খবর পেয়ে তার রুমে চলে এসেছে। একে একে বাড়ির সবাই চলে আসলো। ধূসর এখনো জ্বরে কাঁপছে ভীষণ। অনামিকা ইসলাম সুপ রান্না করে এনে সেটা খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলেন ছেলেকে। তবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না হঠাৎ করে সুস্থ ছেলেটার জ্বর কিভাবে আসলো।
সৃজনী শেখ বলেন,,,“হঠাৎ করে সুস্থ স্বাভাবিক ছেলেটার জ্বর আসলো কি করে। ও কি বৃষ্টিতে ভিজেছে”
অরিন মাথা নিচু করে অপরাধী কন্ঠে বলে,,,“হ্যাঁ মেঝো ফুপি উনি আমার সাথেই বৃষ্টিতে ভিজেছে”
সবাই এবার বুঝলো আসল বিষয়টা। তবে কেউ অরিনকে কিছু বলল না। কি বলবে ওর তো কোনো দোষ নেই। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ তাই হয়তো বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছে। অনামিকা ইসলাম সবাইকে চলে যেতে বলেন। সবাই ধীরে ধীরে রুম ত্যাগ করে। তিনি ছেলের পাশে বসে আছেন। তার বড্ড আদরের ছেলে। অনেক সাধনার ফল।
–
দেখতে দেখতে তিনদিন পার হয়েছে। ধূসর এখন সুস্থ বলা চলে। অনামিকা ইসলাম এই তিনদিন ধূসরকে রুমের থেকে বের হতে দেয়নি। ধূসর অবশ্য বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বকাও খেয়েছে মায়ের কাছে। এখন পরিবারের সকলে মিলে বসে আছে বসার রুমে। ধূসরও আছে। আজ আর অনামিকা ইসলাম কিছু বলেননি। অরিনের সাথে এই তিন দিন একবারের জন্যও দেখা হয়নি ধূসরের। সে বেশ মিস করেছে অরিনকে। অরিনের ছোটফুপি ইফাতারা খানম আমতা আমতা করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“তোমাদের সবাইকে আমার কিছু বলার আছে”
সবাই সম্মতি দিতেই তিনি বললেন,,,“রাফার বিয়ে ঠিক হয়েছে সামনে মাসেই বিয়ে। তোমাদের সবাইকে জানাতেই এসেছি আমরা খবরটা”
আজাদ শিকদার খুশি হয়ে বলেন,,,“বাহ এতো বেশ খুশির খবর তা ছেলে কি করে?”
“আব্বু ছেলে একজন আর্মি অফিসার। পরিবারও বেশ ভালো। তাই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছি। ছেলেদের বাড়িও বেশি দূর না আমাদের বাড়ি থেকে।”
“যাক ভালো তো তাহলে”
কাজিনরা সব রাফাকে নিয়ে অরিনের রুমে চলে। অরিনের রুমে আসতেই ওকে চেপে ধরে সব কটা। রাফা না পেরে বলে,,,
“ভাই থাম তোরা। আমার বলতে অস্বস্তি হচ্ছিল তাই বলিনি। এখন তো জানলি ”
জাহিনের খারাপ লাগছে কেনো যেনো রাফার বিয়ের কথা শুনে। তাহলে কি এর পর নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে তার হারাতে হবে। সে সহ্য করতে পারবে না রাহিয়ার পাশে অন্য কাউকে। সে মাথা থেকে উল্টাপাল্টা চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চাইলো। তবে সম্ভব হচ্ছে না। রাহিয়া অন্য কারো হবে ভাবতেই কাটা দিচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটাকে অন্তত সে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু সে তো জানেও না রাহিয়ার মনে তার জন্য অনুভূতি আছে কি না। তবে এখন সে জানার চেষ্টা করবে।
#চলবে~