প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০৫

0
551

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ধূসর এবং অরিন। ট্রেন এসে পৌঁছিয়েছে। তবে এখনো তাদের খুঁজে পায়নি। ধূসরের প্রতি বেশ বিরক্ত অরিন। অরিনের নিজের প্রতিই রাগ লাগছে। নিজের ফোনটাও আনেনি। ফোন দিয়ে যে শুনবে তারও উপায় নেই। আর সে ধূসরের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। তখনই একটা মেয়ে এসে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও বুঝতে পারলো কে হতে পারে। মেয়েটি তাকে ছেড়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে শুধালো,,,

“কেমন আছিস অরিন। কত দিন পরে দেখা হলো। আরে ধূসর ভাইয়াও যে এসেছো। তুমি কেমন আছো?”

অরিন মুচকি হেসে বলে,,
“এই তো ভালো আছি রাহিয়া।”

“চুপ কর ফাজিল মেয়ে। তুই তো খোঁজ খবর ও নিস না আমাদের। আমি কল বা মেসেজ করলে তারপর রিপ্লাই দিস। তোর সাথে কথা বলাও ঠিক না”

ধূসর বেশ বিরক্ত। এমনিতেও অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে তার উপর এদের এসব কথাবার্তা। কিছুই সে সহ্য করতে পারছে না। তখনই জাহিন এগিয়ে আসলো। জাহিন অরিনের মেঝো ফুপি সৃজনী রহমানের ছেলে। ধূসরের থেকে কিছুদিনের ছোট। তার এখনো মাস্টার্স শেষ হয়নি। সে ধূসরকে বলে,,
“ভালো আছো ব্রো?”

ধূসর মৃদু স্বরে শুধালো,,“হ্যাঁ দেখতেই তো পাচ্ছো”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই ছেলেটা তার বড় ভাই হলেও এখনো ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলেনি তাদের সাথে। সে আর কথা বাড়ালো না। অরিন ধূসরের আব্বু আসাদ আহসান, মেঝো ফুপা,ছোট ফুপাকে সালাম দিয়ে কথা বলল। তিনটা ভ্যান ঠিক করে অরিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো সবাই। অরিনসহ চারজন মেয়ে ছিলো তারা এক ভ্যানে বসেছে। বাকি রা বাকি দুটো ভ্যানে বসেছে। ধূসর নিজের বাবার সাথে ভালো মন্দ টুকটাক কথা বললো। বাবা ছেলে এক ভ্যানে বসেছে। আর এক ভ্যানে জাহিন আর অরিনের বাকি দুই ফুপা।

অরিনের বড় ফুপি অর্থাৎ অনামিকা ইসলামের একটা মাত্র ছেলে ধূসর। মেঝো ফুপির তিন ছেলে মেয়ে জাহিন, জায়রা, আর হায়াতের বয়সী একটা মেয়ে যার নাম ইলা। ছোট ফুপির চার ছেলে মেয়ে। রাহিয়া, রাফা, তাতান, টুসি। রাহিয়া,রাফা অরিন সমবয়সী। রাহিয়া রাফা জমজ।তাতান তো অনেক ছোট। টুসি হায়াতের থেকে এক বছরের ছোট। জায়রা আবার অরিনদের থেকে দু বছরের ছোট। এই তো এদের নিয়েই অরিনের কাজিন মহল। অরিনের বাবা তিনবোনের একমাত্র ভাই। বড় দুই বোনের পরে সে তারপর ছোটজন। অরিনদের পরিবার বেশ বড়ই।

বাকি সবাই বছর শেষে বেড়াতে আসলেও অরিনের বড় ফুপিরা আসতেন না। তারা চৌদ্দ বছর ধরে কানাডায় থাকেন। এ বছর ধূসরের গ্রাজুয়েশন শেষ হয়েছে তাই অনামিকা ইসলাম ঠিক করেছেন একেবারের জন্য বাংলাদেশে চলে আসবেন। তাই সপরিবারে এখানে। ধূসরেরও নিজ মাতৃভূমির প্রতি টান ছিলো, অনেক তো হলো অন্যের দেশে পরে থাকা এবার না হয় নিজ দেশেই থেকে গেলো।

বাড়ি আসতেই হৈ চৈ লেগে গেলো। বাড়ির তিন জামাই এতো বছর পর এক সাথে বাড়িতে এসেছে। আদর আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখছেন না আজাদ শিকদার, ইমরুল শিকদার। অরুনি শেখ ও রান্নাঘরের কাজ সামলাচ্ছেন। সাথে অনামিকা ইসলাম এবং অরিনের ছোট ফুপি ইফাতারা খানম ও তাকে সাহায্য করছেন। সৃজনী রহমান ছেলে মেয়ে আসাতে তাদের নিয়ে ব্যস্ত।
আজাদ শিকদার সহ বাকিরা বসার রুমে বসে আছেন।

“আব্বু আম্মু কোথায়? তাকে যে দেখছি না?”

“তোমার শ্বাশুড়ি আম্মু অসুস্থ আসাদ। সে নিজের রুমেই থাকে সব সময়”

“তাহলে আব্বু যাই আমি তাকে দেখে আসি?”

“হ্যাঁ যাও। সেও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে”

তিন জামাই শ্বাশুড়িকে দেখতে গেলো। অপর দিকে কাজিনরা সব আড্ডায় বসেছে অরিনের রুমে। শুধু মাত্র একজন নেই আর সেই একজন হলো ধূসর। রাহিয়া, রাফা, অরিন, জায়রা জাহিন পাঁচ জন মিলে আড্ডা দিতে বসেছে। জাহিনের সাথে সবাই অনেক ফ্রি। জাহিনও সবাইকে বোনের চোখেই দেখে শুধু এজন ছাড়া। গত দু বছর যাবত একটু একটু করে তার প্রতি অনুভূতি নিজের হৃদয় কোঠায় সাজিয়েছে জাহিন। তবে এখনো সাহস হয়নি তাকে মনের কথা জানানো। প্রেম সে করতে চায় না। করলে বিয়ে করবে। তবে এখন সে পড়াশোনা করছে, তাই চাইলেও সম্ভব নয়।

“কি হলো জাহিন ভাইয়া কোথায় হারালে?”

অরিনের কথায় জাহিন জোর পূর্বক হেসে বলল,,,“কোথায় আর হারাবো। আছি তো তোমাদের মাঝে।”

অরিন সন্দিহান কন্ঠে বলল,,“ভাই তুমি কি প্রেমে পরেছো? তাই তো মনে হচ্ছে! প্রেমে পরলেই কিন্তু মানুষ কল্পনায় ডুবে থাকে”

কথাটা বলতেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে রাহিয়া,রাফা, অরিন, জায়রা। জাহিন লজ্জা পায় কিছুটা। ইশশ এই মেয়েটা তাকে সব সময় লজ্জায় ফেলে দেয়। সে ধমক দিয়ে বলে,,,,
“হাসি থামা ফাজিলের দল। বড় ভাইয়ের সাথে মজা করতে ভালো লাগছে না। অরিন মামিকে বলে কিন্তু তোমাকে বকা খাওয়াবো”

“জাহিন ভাইয়া আমিও কিন্তু মেঝো ফুপিকে বলে তোমাকেও বকা খাওয়াতে পারবো। তাই ভেবে চিন্তে কাজ করো। তুমি একা আর আমার দলে এই যে আমার বোনগুলো”

জাহিন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সবার দিকে। অরিনের সাথে সে কোনো কালেই পেরে উঠে না। পাশ থেকে রাহিয়া বলে,,,
“আচ্ছা বাদ দাও এসব। আজকে রাতে কিন্তু সেই একটা আড্ডা দিবো। ছাদে বসে সবাই গল্প করবো। মজা হবে, অনেক দিন ওইভাবে আড্ডা দেওয়া হয় না”

অরিনও সম্মতি দিয়ে বলে,,,“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। কি রে রাফা আজ তুই চুপচাপ যে? কিছু হয়েছে?”

রাফা ক্লান্ত কন্ঠে শুধালো,,
“আমি ভাই অনেক ক্লান্ত। অনেকটা সময় জার্নি করেছি। তোদের মতো আমার এতো এনার্জি নেই ভাই। তাই তো চুপচাপ তোদের কথা শুনছি।”

জাহিন রাফার কথা শুনে বলল,,আচ্ছা এখন তোমরা বিশ্রাম করো। আমিও যাই। আসলেই অনেক ক্লান্ত লাগছে আমার”

জাহিন বের হয়ে যায়। অরিন উঠে দরজা আটকে দেয়। ততক্ষণে সবগুলো হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পরেছে। অরিন বিরক্ত হয়ে বলল,,
“ভাই তোদের তো আম্মু রুম দিয়েছে থাকতে তাই না? তোরা আমার রুমে এমন হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরলি কেনো?”

রাহিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,,“চুপ থাক তুই। এইটা এখন আমাদের রুম। মোটেও জ্বালাবি না। ভাগ এখান থেকে ”

অরিন কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এদের সাথে কথায় পারবে না। বাইরের আবহাওয়া এখনও খারাপ। যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে। সে ছাদে আসলো। মৃদু হাওয়া বইছে, আকাশে ঘন কালো মেঘ। এমন পরিবেশ ভীষণ পছন্দ অরিনের। স এককাপ চা করে নিলো যদিও পাশ থেকে মা তাকে বকেছে তবুও কিছু যায় আসে না তার। এখন একটু ছবি আঁকবে। সুযোগ যখন পেয়েছে এমন দৃশ্যের একখানা ছবি না হয় একেই ফেললো সে। ক্যানভাস, রংতুলি নিয়ে বাইরে চলে আসলো। আঁকা শুরু করলো সে।

“বাহ বোম্বায় মরিচ তুমি তো বেশ সুন্দর ছবি আঁকো।”

“আমি জানি। আপনাকে বলতে হবে নাহ”

ধূসর বেশ বিরক্ত হলো। দেশে আসার পর বৃষ্টি দেখেনি সে। তাই তো এরূপ আবহাওয়া দেখে সেও ছাদে চলে আসলো। আসতেই দেখতে পেলো অরিন ছবি আঁকছে। ছবি আঁকা এতোটাই সুন্দর হয়েছে যে সে মুখ ফসকে কথাটা বলেই ফেলেছে। তবে সে ভুলেই গিয়েছিলো এই মেয়ে কেমন। সে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,

“তুমি কি ভালো ভাবে কথা বলতে পারো না? আমি স্বাভাবিক ভাবে তোমার ছবি আঁকার প্রশংসা করেছি আর তুমি ত্যাড়া জবাব দিচ্ছো?”

“আমি এমনই সোজাসুজি উত্তর দেওয়া আমার পছন্দ নয়।”

ধূসর বিরক্ত হয়ে কথা না বাড়িয়ে ছাদের উপর পাশে এসে বসে। পরিবেশটা উপভোগ করছে। হুট করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। অরিন নিজের জিনিসপত্র সেই চিলেকোঠার রুমটাতে রেখে আবারও বাইরে আসলো। ইতিমধ্যে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। ঝড়ো হাওয়া বইছে। অরিন নিজেকে সামলাতে পারলো না। নেমে পরলো বৃষ্টিতে। ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে বৃষ্টি। ধূসর ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে দেখছে অরিনকে। তার একটু অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। যা আগে কখনো হয়নি। ধূসরের বেশ ভালোই লাগছে অরিনকে দেখতে। হুট করে কি হলো তার। অরিন ধূসরকে দেখে চিল্লিয়ে বলে,,,

“এই যে বিদেশী বাদুড় চাইলেও আপনিও আমার সাথে ভিজতে পারেন। আমি এখন ঝগড়া করার মুডে নেই। মনে হয় না তো কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন”

ধূসর নিজেও ভাবলো বৃষ্টিতে ভিজবে। এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে আসলো। সাথে সাথে ভিজে গেলো সে। বেশ ভালো লাগছে বৃষ্টি তার। বৃষ্টি তার খুব প্রিয় ছিলো ছোট বেলায়। ধূসর ভীষণ উপভোগ করছে।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে