প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০৪

0
609

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

ধূসর বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে অরিনের জন্য। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও অরিন আসছে না। ধূসরের ইচ্ছে করছে অরিনকে পানিতে চুবাতে। এতো সময় লাগে তৈরি হতে। ধূসর এক প্রকার রাগে ফুঁসছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সে। অরিন নিজের বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে ধূসরকে। সে ইচ্ছে করেই এমন করছে। অরিন তৈরি হয়ে নিয়েছে আরো অনেক সময় আগে। ধূসরকে জ্বালানোর জন্যই এখনো নিচে নামছে না সে। তবে নিচ থেকে বড় ফুপির আওয়াজে এবার নামতেই হলো তাকে। নিচে নামতেই অনামিকা ইসলাম অরিনকে কাছে ডেকে বলে,,,

“সাবধানে যাস মা। আমার ছেলেটার একটু খেয়াল রাখিস। ও তো এখানের কিছু চিনেও না।”

অরিন মৃদু হেসে বলল,,
“তুমি চিন্তা করো না বড় ফুপি আমি তোমার ছেলের খেয়াল রাখবো। আর গ্রামটাও ঘুরে দেখাবো।”

অরিনের আম্মু অরুনি শেখ এগিয়ে এসে বললেন,,,
“রাস্তায় কোনো দুষ্টমি করবি না অরিন। আর ধূসরকে মোটেও জ্বালাবি না। সাবধানে যাস”

ইমরুল শিকদার অরিনের কাছে এসে বলেন,,,“আম্মা গাড়ি নিয়ে যাবে তোমরা? নাকি ভ্যানে যাবে?”

ধূসর ততক্ষণে বিরক্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। ইমরুল শিকদারের কথা শুনে তার বিরক্তির পরিমান আরো বেড়ে গেলো। ভ্যানে সে কত বছর উঠে না। এর থেকে তো গাড়িই ভালো। অরিন ধূসরকে দেখে সয়তানি হাসি দিয়ে তার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললল,,,
“আব্বু গ্রাম কি গাড়িতে ঘুরে মজা পাবে বলো? ভ্যানই বেস্ট। তুমি রহিম চাচাকে আসতে বলো। আমরা উনার ভ্যানে চড়েই গ্রাম ঘুরবো।”

ইমরুল শিকদার সম্মতি দিলেন। রহিম মিয়াকে ফোন করার জন্য সাইডে গেলেন। ধূসর বুঝলো অরিন তাকে জ্বালানোর জন্যই গাড়ির বদলে ভ্যানের কথা বলেছে। তবে ধূসর নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল,,,
“ভ্যান! ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই। নতুন কিছুতে উঠার অভিজ্ঞতাটা সেই। অনেক বছর হলো উঠি না। আমি খুবই এক্সাইটেড।”

অরিন খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো ধূসর তার সয়তানি বুদ্ধি ধরতে পেরে এখন এমন বলছে। মনে মনে ভীষণ হাসলো সে। আজ যে ধূসরের কপালে কি আছে তা ধূসর টেরও পাচ্ছে না। অনামিকা ইসলাম কাছে এসে বললেন,,
“আব্বু সাবধানে যাস। আর অরিনের সাথে সাথে থাকিস সব সময়। তুই কিন্তু এখানকার কিছু চিনিস না। তাই সাবধানে চলাচল করবি”

ধূসর বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,“আম্মু তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি আগেও এখানে এসেছি। হ্যাঁ হতে পারে অনেক বছর আগে তবে সব তো আর পাল্টায়নি তাই না। আর আমি কোনো বাচ্চা না যে একটা মেয়ের পিছু পিছু যেতে হবে।”

অনামিকা ইসলাম চোখ রাঙিয়ে বললেন,,
“ধূসর এগুলো কি ধরনের কথা। তুমি অনেক বছর পর এসেছো এখানে। সব কিছু চেঞ্জ হয়েছে। তাই অরিনকে নিয়ে ঘুরে দেখবে এতে বাচ্চা হওয়ার কথা কোথা থেকে আসছে”

ধূসর উত্তর দেয় না। রিনু এসে খবর দেয় রহিম চাচা চলে এসেছেন। অরিন ওড়না ঠিক করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে আসে। ধূসর নিজেও বাইরে যায় সবাইকে বিদায় দিয়ে। ভ্যানের সামনে বসে পরে অরিন। অরিনকে দেখে রহিম চাচা বলেন,,

“আম্মাজান কেমন আছেন আপনে?”

অরিন মিষ্টি করে হেসে শুধালো,,
“ভালো আছি চাচা। আপনি কেমন আছেন?”

“এই তো আম্মা ভালোই আছি।”

ধূসর বুঝে উঠতে পারলো না কোথায় বসবে সে। তাই সে অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,“আমি কোথায় বসবো?”

অরিন চোখ তুলে তাকালো। ধূসরকে নিজের সামনে দেখে বিরক্ত হলো। এরপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,,“আগে দূরে সরে দাঁড়ান। এটা আপনার কানাডা না যে মেয়েদের কাছে ঘেঁষলে তারা খুশি হবে। এটা বাংলাদেশ বিদেশী বাদুড়”

“বিদেশী বাদুড় কি? আমার একটা নাম আছে ধূসর। আমার সুন্দর নামটা কি তুমি উচ্চারণ করতে পারো না?”

অরিন ভেঙিয়ে বলল,,,
“ধূসর নাকি সুন্দর নাম। ধূসর হবে না ছাই হবে। ছাই কোথাকার”

ধূসর এবার প্রচুর রেগে যায়। সে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,,“ইউ!বোম্বায় মরিচ। তুমিও যেমন, তোমার ব্যবহার বোম্বায় মরিচের মতো।”

“তো আমার কি?”

অরিনের গা ছাড়া ভাব দেখে ধূসরের রাগে শরীর জ্বলছে। রহিম মিয়া দু’জনকে ঝগড়া করতে দেখে মৃদু হাসেন। তার আর তার বউয়েরও তো এমন ঝগড়া চলতে থাকে। তবুও দিন শেষে তারা দু’জন দু’জনকে ছাড়া থাকতে পারে না। হয়তো এটাই ভালোবাসা। সে দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
“আপনারা দু’জন ঝগড়া কইরেন না। বাবা আপনি সামনে বা পেছনে এক জায়গায় বসুন।”

ধূসর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে পেছনে বসলো। তার এতো শখ নেই যে অরিনের পাশে বসবে। তার এখন মনে হচ্ছে রাজি হওয়াটাই ভুল ছিলো। অস্বস্তি হচ্ছে, কত বছর পর ভ্যানে উঠেছে। সেই ছোটবেলায় উঠেছিলো। ভ্যান চলতে শুরু করলো। আঁকা বাঁকা রাস্তায় আপন গতিতে ছুটছে ভ্যানটি। ধূসর মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পল্লীর সৌন্দর্য দেখছে। মৃদু হাওয়া, আশেপাশের লোকজন, প্রকৃতির রূপ সব উপভোগ করছে ধূসর। অরিন নিজেও উপভোগ করছে। বেশ ক’দিন হয়েছে বাড়ি থেকে বের হয় না। এইচএসসি পরীক্ষার পর আর বের হওয়া হয়নি। এডমিশনের জন্যও এখনো কোচিং-এ ভর্তি হওয়া হয়নি।

ধূসর তার মাঝে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
“অনেক বছর পর এমন গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বিদেশে থাকতে থাকতে দেশীয় সংস্কৃতি এক প্রকার ভুলেই গিয়েছি। আমায় গ্রামটা ঘুরে দেখাবে মিস বোম্বায় মরিচ?”

অরিন বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,
“একটু আগে ছাই বলাতে তো রেগে গিয়েছিলেন এখন নিজেই আমায় বোম্বায় মরিচ নামে ডাকছেন। নিজে শুধরান তারপর আমায় বলতে আসবেন”

ধূসরের শান্ত মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো। এই মেয়ে ভালো কথা বলতেও পারে না। মেজাজটা বিগড়ে দিলো। ধূসর উত্তর না দিয়ে চুপ রইলো। অরিনও কথা বাড়ালো না। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলের উদ্দেশ্যে পা চালাচ্ছে। আশপাশ দিয়ে আরো ভ্যান গাড়ি তাদের ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। ধূসর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যেতে দেখে মনে করলো সেও যখন বাংলাদেশে ছিলো তখন এভাবে করে যেতো। সেগুলো এখন পুরোনো স্মৃতি ছাড়া কিছুই না।

অরিন খোলা মাঠে পিচ্চি ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখে ভ্যান থামাতে বলে। রহিম মিয়াও ভ্যান থামায়। অরিন দৌড়ে সেখানে চলে যায়। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়াতে ধূসর স্মৃতির পাতা থেকে বের হয়ে আসে। পিছনে ফিরতেই দেখতে পায় অরিন নেই। ধূসর ভাবলো অরিন কোথায় গেলো। সে নিজেও ভ্যান থেকে নেমে পরলো। এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পরলো অষ্টাদশীকে। যে বাচ্চাদের সাথে কিছু কথা বলছে। ধূসরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রহিম মিয়া বললেন,,,

“বাবা আপনেও যান আম্মার সাথে ফুটবল খেলেন। আম্মাজান ভারি ভালা একজন মাইয়া। আপনের লগে হয়তো একটু ঝগড়া করে তবে সে খুবই ভালো”

ধূসর রহিম মিয়ার কথায় উত্তর দিলো না। আসলে কি বলবে খুঁজে পেলো না। তাই চুপচাপ রইলো। অনেক সময় অরিনকে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দেখে ধূসর নিজেই এগিয়ে গেলো। কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেলো অরিন এবং বাচ্চাগুলোর কথা।

“আফা আপনে যান তো। আমাগে খেলতে দিন। এইখানে এসে আমাদের খেলতে ক্যান দিতাছেন না?”

“প্লিজ আমিও একটু খেলি। বেশি না অল্প একটু খেলবো।”

তবে বাচ্চারা রাজি হলো না তবুও। ধূসর এগিয়ে এসে বলল,,
“চলো এখান থেকে ওরা রাজি যখন হচ্ছে না তখন জোরাজুরি কেনো করছো বলো তো?”

“আপনি কি বুঝবেন এদের সাথে ফুটবল খেলার মজা। আপনি তো বিদেশে বড় হয়েছেন। দেশীয় সংস্কৃতি কি একটুও জানেন না কি?”

ধূসর হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। ট্রেন কিছুক্ষণ এর মাঝে স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। তবে তারা এখনো সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। সে অরিনকে তাড়া দিয়ে বলল,,,
“দ্রুত চলো মিস বোম্বায় মরিচ না হয় লেট হয়ে যাবে। তারা আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে।”

অরিন নিজেও আর কথা বাড়ালো না। ধূসরের পেছন পেছন হাঁটা ধরলো। ভ্যানে এসে বসতেই ভ্যান চলতে শুরু করলো। যাওয়ার পথে মানুষের কাজ, গ্রামীন সৌন্দর্য চোখে পরলো ধূসরের। সে উপভোগ করতে লাগলো। রাস্তায় তার সাথে আর কথা হয়নি অরিনের। দু’জনই চুপ করে ছিলো।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে