প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০৩

0
605

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

আকাশে সাদা কালো মোঘের উপস্থিতি। ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে। সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। অরিনদের বাড়িটা পুরোনো জমিদার বাড়ির মতো। আজাদ শিকদারের বাবার বাবা নাকি জমিদার ছিলেন। বাড়িটা সেই আমলের। তবে এখন আগের মতো নেই নতুন করে কাজ করানো হয়েছে বাড়িটাতে। তাই পুরোনো বাড়ি বলা চলে না, রং করানো হয়েছে। তবে বাড়িটা বেশ বড়। অরিন ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পেছনের তার বাগানটিতে চলে আসলো। এইটা তার অন্যতম শখগুলোর মাঝে আরেকটি। এখানে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপ সহ আরো অনেক রকম ফুলের গাছ রয়েছে।

ধূসর এতো সকালে না উঠলেও আজ ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আসলে অচেনা জায়গায় মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। সে রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। এটা তার অভ্যাস ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে কিছুক্ষণ সময় কাটাবে। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম হলো অন্যদিন গুলোর তুলনায় কারণ জায়গাটা আলাদা এবং মানুষগুলো। তবুও এখানটায় একটু বেশিই ভালো লাগছে।ধূসর রেলিং এ ভর দিয়ে নিচে তাকালো। নিচে তাকাতেই চোখ পরলো মনোমুগ্ধ করা এক দৃশ্য। এক রমনী নিজ হাতে বাগানের ফুলগুলোর যত্ন নিচ্ছে। ধূসরের অজান্তেই তার মুখ থেকে বের হয়ে আসলো,,,

“সি ইজ রিয়েলি এ বোম্বায় মরিচ। কথাগুলো মরিচের মতোই ঝাল। বাট আই ডোন্ট লাইক ঝাল”

অরিন পিছু ফিরতেই ধূসরের ভালো লাগাটা গায়েব হয়ে গেলো। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এসে ভর করলো। সে কিছু একটা ভেবে নিচে নামার জন্য রুম ত্যাগ করে। গন্তব্য তার অরিন। অরিনের সাথে ঝগড়া করতে তার বেশ লাগে। এখনও ঠিক তাই করতেই সে যাচ্ছে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে কাউকে চোখে পরলো না। হয়তো ঘুমাচ্ছে সবাই। ধূসর হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকটায় চলে আসে। এসে এমন ভাব ধরলো যে সে অরিনকে দেখেই নি। অরিন ধূসরকে নিজের প্রিয় জায়গায় দেখে বেশ বিরক্ত হলো। তবুও গতকাল রাতের মতো ভুল সে করলো না।

ধূসর অরিনকে জ্বালানোর একটা বুদ্ধি বের করলো। বাগানের ভেতরে প্রবেশ করে একটা লাল টকটকে গোলাপ ছিড়লো। যা দেখতে পেয়ে অরিন এক প্রকার তেড়ে আসলো ধূসরের কাছে। ধূসর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“এটা আপনি কি করলেন? আমার আমার গাছের ফুল কেনো ছিঁড়লেন আপনি? আপনায় অনুমতি কে দিয়েছে”

ধূসর ফুলটা দেখতে দেখতে বলে,,
“ফুল ছিড়তে হলে অনুমতি নিতে হয় নাকি। এই ফুলটা আমার বেশ লেগেছে তাই ছিঁড়েছি তাতে তোমার কি?”

“কারণ গাছটা আমার। আর এই ফুলগুলোও আমার খুব শখের। আমি বড় ফুপিকে গিয়ে এখনি বলছি তার বিদেশী বাদুড় ছেলে আমার গাছের ফুল ছিঁড়েছে”

ধূসর ভাবলেশহীন হয়ে বলে,,“তো বলো মানা কে করেছে তোমায়?”

অরিন কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এই ছেলের কথা বার্তা সে বুঝে না। গতকাল আসার পর থেকে তার পিছে লেগে আছে। অরিন বুঝলো না এর সাথে তার শত্রুতা টা কোথায়। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে গেলেও ঝগড়া লাগে। ধূসরের ব্যবহার দেখে প্রচুর বিরক্ত সে। নিজে গায়ে পরে ঝগড়া করছে। অরিন মৃদু কন্ঠে শুধালো,,,

“আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো। গতকাল আসার পর থেকে আমায় জ্বালাচ্ছেন কেনো বলুন তো। কি ক্ষতি করেছি আপনার আমি। আপনাকে তো চিনিও না আমি ঠিকমতো। সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছি তো আমার সাথে ঝগড়া কেনো করছেন?”

“আই ডোন্ট লাইক দিস! আমায় প্রশ্ন করবে না। এটা আমার একটুও পছন্দের নাহ। তুমি হলে বোম্বায় মরিচ, যা আমি মোটেও পছন্দ করি নাহ”

ধূসর কথাগুলো বলে শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায়। অরিন পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে,,,“আপনার আমাকে পছন্দ নয় এতে আমার কিছু যায় আসে না বুঝেছেন। বেয়াদব ফাজিল পুরুষ। আমার সামনে আর আসবেন না আপনি মোটেও”

অরিন রাগে ফুঁসছে। ধূসর অরিনের কথাশুনে মুচকি হেসে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। অরিন নিজেও বাগানের দরজা লাগিয়ে বের হয়ে যায়। এই বজ্জাত, বিদেশী বাদুড় একদিনেই তাকে জ্বালিয়ে মারলো। আর কত দিন থাকবে কে জানে। ধূসরকে মনে মনে বকতে বকতে নিজের রুমে চলে আসে সে। কিছুতেই রাগ কমছে না তার। ধূসরের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

“বেয়াদব বিদেশী বাদুড় আমি ছাড়বো না তোকে। আমার গাছের ফুল ছেঁড়া না আমিও এর প্রতিশোধ নিবো”

সকাল নয়টা। বসার রুমে সবাই মিলে গল্পগুজব করছে। সেখানে আজাদ শিকদার এবং খাদিজা বেগম এসে নিজেরাও যোগ দিলেন। কতগুলো বছর মেয়ের সাথে দেখা হয় না। আজ এতোগুলো বছর পর মেয়ে নিজের বাড়িতে এসেছে। কত কথা জমে আছে। কাল তেমন কথা বলার সুযোগ পায়নি তারা। ক্লান্ত থাকায় সবাই বিশ্রাম নিয়েছে। চৌদ্দ বছর পর দেশে ফিরেছেন অনামিকা ইসলাম। স্বামী সন্তান নিয়ে সেখানেই সেটেল্ড তারা। ধূসর একমাত্র ছেলে তাদের। ধূসর কিছুক্ষণ পরে নিচে নেমে আসলো। এসে নিজের মায়ের পাশে নিঃশব্দে বসে পরলো। এখানে কোথাও অরিনকে দেখতে পেলো না সে।

“ধূসর তুমি আর অরিন গিয়ে তোমাদের বাকি কাজিনদের নিয়ে আসবে। ওরা ট্রেনে করে আসছে। নাস্তা করে তৈরি হয়ে নাও”

ধূসর অনামিকা ইসলামের কথায় না করবে ভাবলো। তবে অরিনের সাথে যাবে ভেবে রাজি হয়ে গেলো। সে একটাও চান্স মিস করতে চাইছে না অরিনকে জ্বালানোর। তাই সে তার মায়ের কথার পিঠে উত্তর দেয়,,,

“ঠিক আছে আম্মু সমস্যা নেই”

অরিনও তখন নিচে নেমে আসে। এতোক্ষণ যাবত সে নিজের রুমে বসে আঁকছিলো। এসে সবার সাথে যোগ দেয় সেও। অরিনের বাবা ইমরুল শিকদারও এখানে ভাইবোনদের সাথে গল্প করছে বসে। অরিনকে দেখে অনামিকা ইসলাম তাকে কাছে ডাকেন। অরিন অনামিকা ইসলামের অপর পাশে বসে পরে। ধূসর তার দিকে তাকিয়েই হাসছিলো। অরিন ধূসরের হাসির মানে বুঝে উঠতে পারলো না। তখনই অনামিকা ইসলাম বলে উঠেন,,,

“অরিন মা তুই আর ধূসর গিয়ে তোর ফুপা আর ভাইবোনদের নিয়ে আয়। তারা ট্রেনে আসছে। আর আমার ধূসরকেও গ্রামটা একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আয়”

অরিন বিরক্ত হলো ফুপির শেষের কথা শুনে। সে মোটেও চাইছে না এই বজ্জাত ধূসর না না ছাইয়ের সাথে বের হতে। তবে না করাও সম্ভব না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। সে জোর পূর্বক হেসে বলে,,

“ঠিক আছে বড় ফুপি। কখন বের হতে হবে?”

অনামিকা ইসলাম কিছু বলবেন তার আগেই পাশ থেকে অরিনের মেঝো ফুপি সৃজনী রহমান বললেন,,,“নাস্তাটা তাড়াতাড়ি করে যা মা। আমার মেয়েটাকে কত দিন দেখি না”

অরিন সৃজনী রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ফুপি একদিনও হয়নি তোমরা এসেছো? আর এর মধ্যে তুমি কত দিন বানিয়ে দিচ্ছো”

“ওই তো হবে কিছু একটা। মায়ের মন তুই কি বুঝবি”

অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পাশ থেকে অনামিকা ইসলাম বলেন,,“ওসব বাদ দে মা। চল নাস্তা করে নেই সবাই”

অরুনি শেখ সবাইকে খেতে ডাক দিলেন। সবাই টেবিলে বসে পরলো সকালের নাস্তা করার জন্য। বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে টেবিল সাজানো। সবাই নিজের মতো নিয়ে খেয়ে নিলো। অরিন নিজের রুমে চলে আসলো। তৈরি হতে হবে আবার তার। ধূসরের সাথে যেতে হবে এর থেকে বিরক্তির আর কি হতে পারে।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে