প্রেম রাঙানো ক্যানভাসভ পর্ব-০২

0
658

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২

রাতের আকাশে পূর্নিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ। অরিন বারান্দার এক কোণে বসে চাঁদ খানা নিজের রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলতে চাইছে। তবে তার মন মতো হয়ে উঠছে না। আশেপাশে কতগুলো আর্ট পেপার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেখানে অর্ধেক চিত্র আঁকা। অরিন শেষ মেশ না পেরে সেগুলো সেখানে রেখে রুমে আসলো। হাতে মুখে রং লেগেছে। সেগুলো ধোঁয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলো।

“আপপপপপু কোথায় তুই?সবাই নিচে সন্ধ্যার নাস্তা করছে। বড় ফুপি ডাকছে তোকে। অরিন আপু কোথায় তুই?”

অরিন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হায়াতকে দেখলো। হায়াত বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন নিজেও বেশ বিরক্ত। এই মেয়ে এতো জোরে চিল্লায়। তার কান শেষ। অরিন কিছুটা ধমকের সুরে বলে,,
“এতো জোরে কেউ চিল্লায়? তুই কি পাগল। আস্তে বললে কি আমি শুনতাম না নাকি? বেয়াদব। আর কখনো আমাকে ডাকতে আসলে এতো জোরে চিল্লাবি নাহ, বুঝেছিস?”

হায়াত ভেংচি কেটে বলল,,,“আমার গলা এমন ডাকতে বললে এভাবেই ডাকবো। আসলে আয় না আসলে নাই। আমি গেলাম। তোকে কি আমি ডাকতে আসতাম নাকি শুধু মাত্র বড় ফুপি বলল তাই আসলাম হুহ”

হায়াত বেরিয়ে যেতে নিলে আবার ফিরে এসে বলে,,,“জানিস আপু ধূসর ভাইয়া আছে না উনি অনেক হ্যান্ডসাম। দেখেছিস তুই তাকে? আমি যদি তোর মতো বড় হতাম নির্ঘাত তাকে টুস করে বিয়ে করে নিতাম”

অরিন চোখ রাঙিয়ে বলে,,,
“যাবি তুই?নাকি আম্মাকে এই কথা গুলো বলবো?”

হায়াত দৌড়ে বের হয়ে গিয়েছে। অরিন চমকে উঠেছে ধূসর নাম ব্যক্তির কথা শুনে। তখন কি বাজে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেই না পরেছিলো সে। যদিও ধূসর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার রুম ত্যাগ করেছিলো। পাশাপাশি রুম হওয়ায় ধূসর তার রুমে চলে এসেছিলো। তবে অরিন একটা ব্যাপারে ভীষণ অবাক হয়েছে লোকটা তাকে একটি বারের জন্যও সরি বললো নাহ। এটা ভেবে ধূসরের প্রতি অরিনের ক্ষোভ জন্মালো। ধূসরকে মনে মনে ধুয়েও দিয়েছে সে। সে রুম ছেড়ে নিচে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখতে পায় সবাই বসে গল্প করছে। অরিন নিজের বয়সী কাজিন গুলোকে মিস করছে।

অরিনকে দেখে অনামিকা ইসলাম তাকে কাছে ডাকলেন। অরিন তার পাশে বসলো। ধূসর তার সামনের সোফাতেই বসে ফোন দেখছে। তার ধ্যান জ্ঞান সব ফোনের ভেতরে। আশেপাশের কিছুই খেয়াল নেই। অনামিকা ইসলাম বলেন,,
“অরিন মা তোর জন্য উপহার এনেছি। সবাইকে দেওয়া শেষ তুই লেট করে আসায় এখনো দিতে পারিনি। দাঁড়া মা আমি নিয়ে আসছি।”

অরুনি শেখ বলেন,,,“আপা তুমি বসো আমি দিচ্ছি”

অরুনি শেষ অনেকগুলো প্যাকেট এনে অনামিকা ইসলামের দিকে এগিয়ে দিলেন। তিনি সেগুলো অরুনি শেখের হাত থেকে নিলেন। অরুনি শেখ নিজ জায়গায় গিয়ে বসলো। অনামিকা ইসলাম শপিং ব্যাগগুলো থেকে একটা হাতে নিয়ে বাকিগুলো পাশে রাখলেন। এরপর প্যাকেট খুলতেই বের হলো মেরুন রঙা পাকিস্তানি একটা ভারি সেলোয়ার-কামিজ। অনামিকা আহমেদ ওড়নাটা বের করে পরিয়ে দিলেন অরিনকে। অরিন চুপচাপ তার ফুপির কাজ পর্যবেক্ষণ করছে।

“ মাশাআল্লাহ আমার মেয়েটাকে এই থ্রি-পিস এ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। তোর গায়ে এটা খুব সুন্দর মানিয়েছে অরিন মা”

অরিন লাজুক হেসে উত্তর দেয়,,,“ধন্যবাদ ফুপি”

ধূসর চোখ তুলে একবার তাকিয়ে দেখলো অরিনকে তারপর আবার নিজের ফোনে মনোযোগ দিলো। অনামিকা ইসলাম আরো কয়েকটি শপিং ব্যাগ খুলে দেখালেন অরিনকে। অরিনের বেশ ভালো লেগেছে থ্রি পিস গুলো। পছন্দ আছে বলতে হবে তার বড় ফুপির। রাতের খাবার সবাই হৈ হুল্লোড়ের সাথে খেলো। অরিন জানতে পেরেছে তার বাকি কাজিনরা আগামীকাল আসবে। এতে অবশ্য সে দারুন খুশি।

রাত বারোটার কাছাকাছি। যদিও গভীর রাত নয়, তবে গ্রামে এই সময়টাকে গভীর রাত বলেই আখ্যায়িত করা হয়। অরিন ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে রং তুলি। চুলগুলো হাত খোঁপা করা। সে বেশ মনোযোগ দিয়েই ক্যানভাসে নিজের দেখা দৃশ্যটি ফুটিয়ে তুলতে চাইছে। ধূসর নিঃশব্দে ছাদে উঠলো। ছাদে উঠতেই চোখে পরলো অপর পাশে দাঁড়িয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত থাকা এক অষ্টাদশীকে। ধূসর ফোনটা পকেটে পুরে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে সেদিকে এগোলো। অরিন তাকে এখনও খেয়াল করেনি।

“হেই বোম্বায় মরিচ তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?”

অরিন চমকে উঠলো। হাত থেকে রং তুলি পরে গেলো। বেশ ভয় পেয়েছে সে। প্রায়ই সে এখানে বসে নিজ মনে আঁকে। কেউ আসে না এই সময় তবে আজ হঠাৎ কারো গলা শুনে ভয় পেয়েছে। ধূসরকে দেখলো সে, নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,
“আপনি কানা? চোখে দেখেন না? দেখছেন না কি করছি?”

“কানা নই আমি তবে এতো রাতে এখানে একা আসা ঠিক নয়। আমি তোমাকে এটাই বলতে চেয়েছি! বাট নামটা কি যেনো তোমার?”

“অরিন, অরিন ওয়াসিনাত আমার নাম বুঝেছেন?এখন যেতে পারেন মিস্টার ধূসর”

ধূসর ভ্রু কুঁচকে বলল,,“তুমি কি আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছো? ইউ ফরগেট দ্যাট আজাদ শিকদার আমার নানা হয়। তোমার কোনো রাইট নেই আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলার”

“আমার মনে হয় আপনার ইংরেজিটা আগে ভালো করে শেখা উচিত। এতো বছর কানাডা থেকে কি করলেন যে অর্ধেক ইংরেজি তো অর্ধেক বাংলা বলতে হয়”

ধূসর রেগে বলল,,,“ইউ! তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছো”

“আমি জানি আমি বেশি বেশি বলি। আবারও মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ধূসর সাহেব”

ধূসর রেগে স্থান ত্যাগ করে। অরিন হেসে ফেললো। তাকে রাগাতে এসেছিলো এখন নিজেই রেগে গিয়েছে। অরিন নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। সে এখন তার চিত্রটি আঁকাতে মনোযোগ দিতে চায়। আগামীকাল থেকে আবার আঁকতে পারবে না, ভাই বোনদের সাথে সময় কাটাতেই সে বেশি ভালোবাসে। তার জন্য এখন যা আঁকার আছে আঁকছে। আঁকা তার নেশা, শখ।

ধূসর রুমে এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারী করছে। তাকে ওই পুচকি মেয়েটা নিজের কথার জালে ফাসিয়ে দিলো। তাকে ইংরেজি শিখতে বলছে! এর চাইতে অপমানের আর কি হতে পারে। ধূসর লাইট বন্ধ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরলো। কপালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে অরিনের করা কাজের কথা। রাগটা পুরো প্রিয়তার উপর পরছে। মেয়েটা তাকে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো। ধূসর শান্তি মতো ঘুমাতে পারছিলো না। তাই সে আবারও ছাদে যাওয়ার চিন্তা করলো। ছাদে আসতেই খেয়াল করলো অরিনের আঁকা প্রায় শেষ। ধূসর এগিয়ে যেতেই অরিন পিছনে ফিরলো। বেশ অবাক হলো ধূসরকে আবারও আসতে দেখে।

“আপনি আবারও কেনো এখানে এসেছেন?”

ধূসর উত্তর দিলো না। কোনার পাশটাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। অরিন বেশ অপমান বোধ করলো। আফসোস করতে লাগলো কেনো সে বেয়াদব ছেলেটাকে প্রশ্ন করলো! না হয় তো এমন অপমানিত হতে হতো নাহ। সে দ্রুত নিজের জিনিসগুলো গুছিয়ে ছাদের চিলেকোঠার রুমটাতে ঢুকলো। ধূসর আড়চোখে সব পর্যবেক্ষণ করছিলো এবং হাসছিলো। অরিনের গোমড়া মুখ দেখেই সে বুঝেছে প্রিয়তাকে এবার সে টক্কর দিতে পেরেছে। এতেই তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।

অরিন রুমের লাইট অন করে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলো। অন্যসব চিলেকোঠার মতো তাদের চিলেকোঠা নোংরা জিনিস দিয়ে ভর্তি নয়। অরিন এখানটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। সেখানে সব কিছু রেখে বের হলো অরিন। অরিন বের হবে বুঝতে পেরে ধূসর উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। অরিন বের হয়ে ধূসরকে এখনো ছাদে দেখে মুখ বাঁকায়। তার মাথায় ধূসরকে জব্দ করার বুদ্ধি আসে। সে দ্রুত সিঁড়ি ঘর দিয়ে নেমে ছাদের লাইট বন্ধ করে দেয়। অরিন কিছুক্ষণ চুপ করে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়। সে ভেবেছিলো ধূসর ভয়ে চিৎকার করবে তবে অনেক সময় পেরিয়ে গেলো চিৎকারের শব্দ তার কান অব্দি পৌঁছায় না।

সে ধূসরকে দেখতে চুপি চুপি ছাদে আসে। কোথাও ধূসরকে না দেখে ঘাবড়ে যায় সে। আর তখনই পেছন থেকে ধূসর হেসে উঠে। অরিন লাফিয়ে উঠে। পেছনে ঘুরে ধূসরকে দেখে রেগে তাকায়। বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,

“আপনি তো ভারি বেয়াদব। এই গভীর রাতে ভুতের মতো হেসে তো এখনই আমায় মেরে ফেলছিলেন”

“নিজে আমায় ভয় দেখাতে এসে এখন নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছো। এখব আমার দোষ দিচ্ছো? আমায় অপমান করেছিলে আমিও তার শোধ তুলে নিলাম মিস অরিন ওয়াসিনাত”

অরিন বুঝলো সে ধূসরের সাথে পারবে না। তাই কিছু না বলে ধূসরকে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো। ধূসর হাসলো কতক্ষণ। সে নিজের প্রতিশোধ তো নিতে পেরেছে। তাকে অপমান করেছিলো সেও করে দিয়েছে। এখন শান্তি শান্তি লাগছে তার। তাকে কেউ কিছু বলবে আর সে তার জবাব দিবে না তা কখনো হয়। ধূসর নিজেও ছাদ থেকে নেমে পরলো। ঘুমানো প্রয়োজন। আবার আগামীকাল বাকি বাদর গুলো আসবে। তখন সে মোটেও ঘুমাতে পারবে নাহ।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে