প্রেম বিভ্রাট পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
744

#প্রেম_বিভ্রাট
#রিয়া_জান্নাত
#শেষপর্ব_০৪

মীরার চোখ দিয়ে অর্নগল পানি পড়ে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সামনে ভালোবাসার মানুষ দাড়িয়ে আছে। কিভাবে তার সামনে অন্য এক ছেলেকে কবুল বলে। আবার কবুল না বললে ভালোবাসার মানুষকে গুলি খেতে হবে। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে থাকতে না পারি। কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে মৃত্যু উপহার দিতে পারিনা। তুমি অনেক দেরি করে ফেলছো ফারাজ। কতবার ফোন দিলাম মেজেস দিলাম তোমার আসার সময় এখন হলো। চোখে চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকে ফারাজকে। ফারাজ শুধু অপেক্ষা করছে মীরা কি করে। মীরা যদি একবার তার কাছে ছুটে এসে এখন বলে ভালোবাসি। তাহলে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ করে মীরাকে জয় করবে ফারাজ।

কাজী সাহেব পুনরায় বললো বলো মা কবুল। আরমান চোখ লাল করে মীরার সামনে দাড়ায়। মীরা অনেক ভয় পেয়ে যায়। না জানি কি করে দেয় ফারাজের সঙ্গে। আরমান উল্টো ঘুড়ে গুন্ডাদের ইশারা করে শুট করার জন্য। মীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেলে কবুল।

ফারাজের পৃথিবী মুহুর্তের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায়। বিশ্বাস করতে পারছেনা মীরা অন্য কাউকে কবুল বললো। কানের ভিতরে মাইকের মতো পু পু করা লাগলো। মীরার তিনবার কবুল বলা শুনতে পারলো। এরপরে মীরা রেজিস্ট্র চুক্তিতে সাইন করলো। ফারাজ বিশ্বাস করতে পারছেনা মীরা অন্য কাউকে সত্যিই কবুল বলে ফেললো।

কাজী সাহেব বিয়ে শেষে সামান্য দোয়া পড়ালো। ফারাজ শুধু মীরার দিকে একপলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। মীরা অন্য কাউকে কবুল বলে ফেলার জন্য ফারাজের চোখে একবারো চোখ রাখে নাই। কারণ চোখগুলো যদি ফারাজের উপর রাখতো স্থির হয়ে ওইখানে বসে থাকতে পারতো না।

সবাই দোয়া অনুষ্ঠান শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। মীরা এবার ফারাজকে একবার শেষ দেখার জন্য চোখ উপড়ে তুললো। কিন্তু ফারাজকে চারদিকের কোথাও দেখতে পেলোনা। মীরা বুঝতে পারলো ফারাজ চলে গেছে।

মনে মনে ফারাজের জন্য দোয়া করলো। হে আল্লাহ ফারাজের স্মৃতি থেকে মীরার খারাপ অধ্যায় মুছে ফেলেন। ফারাজের জীবনে সবকিছু ঠিক করে দিয়েন। ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিলোনা ফারাজ। তাহলে আজকে এতো বাজে দিন সহ্য করতে হতোনা তোমাকে আমাকে। শুনেছি ভালোবাসলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। একটা সময়ের পর ভালোবাসার গভীরতা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ঠিক হয়ে যায়। আজকে যদি আমি কবুল না বলতাম তাহলে তোমাকে মরতে হতো। সবাই চায় ভালোবাসার মানুষ টি সুস্থ থাকুক। তোমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো মীরা আসুক। যদি তুমি আর একটু আগে আসতে পারতা তাহলে অন্য কোনো পথের সন্ধানে হাটতাম। আমাকে ক্ষমা করো পারলাম না তোমার ভালোবাসা রক্ষা করতে।

” ফারাজ ভালোভাবে চল। রাস্তার মাঝখান দিয়ে ক্যান যাচ্ছিস? গাড়ি চলতেছে যেকোনো মুহূর্তে তোর লেগে যেতে পারে? ফারাজকে টান দিয়ে ডান সাইটে আনে আদনান। ”

” ফারাজ আদনানকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িড কন্ঠে বলে, দোস্ত ও পারলো কিভাবে আমার চোখের সামনে অন্য কাউকে কবুল করে নিতে। আজ থেকে ও আর আমার নাই? অন্য কারো হয়ে গেলো তাইনা দোস্ত। ২ বছরের স্মৃতি এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলো। আজ থেকে ওকে কাছে পাওয়ার আর কোনো আশা নেই তাইনা দোস্ত। ”

” আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ফারাজ। তোর সামনে মীরা কি করে অন্য কাউকে কবুল বলে? এটা কি আদৌও ভালোবাসা ছিলো। ভালোবাসার মানুষের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত থাকে। আমিতো ভেবেছিলাম মীরা তোকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে তোর হাত ধরবে। কিন্তু মীরা তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে কবুল করে নিলো অন্য কাউকে। এটা ভালোবাসা না দোস্ত। একটা মোহ ছিলো যেই মোহতে শুধু শারীরিক লালসার চাহিদা প্রকাশ পেয়েছিলো। সবকিছু হয়ে গেছিলো তোদের । ও যদি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটি ছেলেকে বিয়ে করতে পারে তুই কেনো পারবিনা। অন্য কাউকে বিয়ে করে জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে। ভূলে যা মীরাকে। মীরার সাথে জড়িয়ে থাকা অতীতকে। ”

” আদনান আমার ভালো লাগছেনা। আমি বাড়িতে যেতে চাই, এইখানে দাড়িয়ে থেকে প্রিয় মানুষের বিদায়দৃশ্য দেখতে পারবো না। আমার জন্য চিন্তা করিস না, তুইয়ো তোর ক্লিনিকে যা। ”

আদনান ফারাজকে অটোতে তুলে দিয়ে নিজে ক্লিনিকে চলে যায়।

ফারাজ বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। দুবছরের অতীত আস্তে আস্তে মাথায় স্মৃতিচারণ ঘটায়। স্মৃতিগুলো মনে পড়তে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারেনা ফারাজ। ফারাজ মনে মনে বলে এই যদি তোমার আমার ডেসটিনি ছিলো। তাহলে আমাকে ভালোবাসলে কেনো? আমার জীবনের সব হাসি কেড়ে নিয়ে তুমি এখন সুখে সংসার করবে মীরা? কয়েক মুহূর্তে আমার জীবনের সব হাসিখুশি, আমার জীবনকে কেনো উলট পালট করলে তুমি? শেষবারের মতো নিজের ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে। মীরার সাথে ভালো সময় গুলো কাটানোর দৃশ্য গুলো দেখছে।এরপরে নিজের ন
ড্রয়ার ওপেন করলো। ড্রয়ার থেকে ১ বোতল সায়ানাইড বিষ বের করলো। এরপরে বললো তোমার আমার যদি এক হওয়া কপালের লিখন না হয়। তাহলে এই জীবনে দ্বিতীয় কারো হতে পারবো না মীরা। তুমি পারলেও আমি পারবো না আমি আমার ভালোবাসাকে অপমান করতে পারবো না । ঢোক ঢোক করে সায়ানাইড গ্রহন করে ফারাজ। পুরো ১ বোতল সায়ানাইড শেষ করে ফেলে। সায়ানাইড খাওয়ার সাথে সাথে মাথা ঘোরে ফ্লোরে পড়ে যায় ফারাজ। বামহাতে বিষের বোতল ডানহাতে মোবাইল। মোবাইলের স্ক্রিনে মীরার ছবি। মুহূর্তের মধ্যে ফারাজের চোখে পৃথিবী আধার হয়ে নেমে আসে। অনেক চেষ্টা করেও চোখ গুলো খুলে রাখতে পারলো না ফারাজ। ”

মীরার বিদায়বেলা__

মীরা কারো সঙ্গে তেমন কথা বলে নাই। হবু জামাই অনেকবার মীরাকে অনেক প্রশ্ন করে মীরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় নাই। যার জন্য নতুন জামাইয়ের মুখে একটু ক্ষোভের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। ছেলেটি বুঝতে পারছে মীরা এই বিয়েতে খুশি নয়। এরপরে মানুষের সামনে যাতে অপমানিত হতে না হয়। এরজন্য খুব কষ্ট করে তখন থেকে মীরার পাশে বসে আছিলো। মীরাকে ডিস্টার্ব করে নাই আর।

মীরাকে চুপচাপ দেখে মীরার বাড়ির লোকজন একটু ভয়েই আছে। মীরার বাড়ির সবার চোখে ভয় প্রকাশ পেয়েছিলো? মীরার কানে কানে আরমান শেখ বলে ওই বাড়িতে যেয়ে কোনো প্রকার ভূল করলে আমি মরে যাবো মীরা। এসব বলে মীরাকে হুমকি দিচ্ছে। নতুন জামাই এসব কিছু বুঝেও না বুঝার ভানে বসে ছিলো।

মীরা মনে মনে বলে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে ফারাজ। জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। আমি সত্যিকার অর্থে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সম্পর্ক গুলো ভালোবাসার মাঝে সবসময় কাটা হয়ে বিদ্ধ হয়। সেই কাটার যন্ত্রণায় আজকে আমরা বিদ্ধ। তোমার সামনে কখনো আর এই মুখ দেখাবো না। আজকের পর থেকে কোনো পড়াশোনা করবো না। কারণ আমি ডক্টর হলে পরিস্থিতি কোনোদিন মুখোমুখি করতে পারে। আমাদের জীবনের বাকি পথটা না দেখার তৃষ্ণা থেকে যাক। তুমি তোমার জীবনে দ্বিতীয় মীরা খুঁজে নাও। আমি মারা যাবো তবুও এইরকম ভিলেনের বাড়িতে এন্ট্রি নিবো না। যে অতীতের প্রতিশোধ নিতে তিনটি জীবন নষ্ট করলো সে ভিলেন ছাড়া অন্যকিছু হতে পারেনা। আজ থেকে আরমান শেখ আমার জন্য মৃত। এখন যেই আরমানকে আমি চিনি সে আমার অসমাপ্ত গল্পের ভিলেন।

মীরাকে জামাইয়ের হাতে তুলে দেয় মীরার সব আত্নীয় স্বজন। জামাই বলে কোনো টেনশন করিয়েন না আপনাদের মেয়ে আমার অর্ধাঙ্গিনী। আজ থেকে ও আমার জীবনের সাথে আষ্টে পিষ্টে জড়িত। গাড়িতে তুলে দেয় সবাই মীরাকে। মীরা কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে।

ফজলুল হক ফারাজের রুম পাস করছিলো এমন সময় জানালা দিয়ে দেখে ফারাজ ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে আছে। ফারাজকে এইভাবে দেখে ফজলুল হক ভয় পায়। সাথে সাথে দরজায় আঘাত করে। কিন্তু দরজা লক করা দেখে ভয় পেয়ে যায় এমপি ফজলুল হক মূহুর্তের মধ্যে নিজের সব চ্যালা প্যালাদের ডাক দেয়। দরজা ভাঙ্গার আদেশ দেয়। চ্যালা প্যালারা দরজায় আঘাত করতে করতে ছিটকানি ছুটিয়ে ফেলায়। দ্রুত ফজলুল হক ছেলের কাছে যায়। ছেলের কাছে যেয়ে চিৎকার করে। সেই চিৎকারে এতোটাই গর্জন ছিলো যে ভূমিকম্পের মতো অবস্থা তৈরি হয় বাড়িতে। মূহুর্তের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে ফারাজের বাড়িতে। ফারাজের বডি গাড়িতে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়। ফারাজের দাদি,মা বাড়িতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রতিবেশি লোকরা এসে ভরসা দেয় ফারাজের পরিবারকে।

মীরা অন্য কারো বউ হয়ে নতুন বাড়িতে যাচ্ছে। ফারাজ হসপিটালে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স করে। দুইটা গাড়ি মুখোমুখি মাঝ রাস্তায়। একটা গাড়ি যাচ্ছে আনন্দের সহিত। আরেকটা গাড়ি যাচ্ছে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে। আহা কতবড় পৃথিবী,কারো জীবনের জন্য আনন্দ ;কারো জীবনে কান্না হয়ে নামে। কত নিষ্টুর এই দুনিয়া।

____ সমাপ্ত ____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে