#প্রেম_বিভ্রাট
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০২
” তুই আমার রুমমেট হয়ে আমার মান সম্মান খোয়াতে বলিস। তোরা থাকতে মীরার কিছু হবে ক্যান? ”
” কিন্তু মীরা তোকে এখনো বলে নাই। তোকে ও ভালোবাসে। আর তুই যদি এখন ওকে ফেলে এইখান থেকে চলে যেতে চাস। তাহলে ক্যাম্পাসের অন্য ছেলেরা ওর দিকে বাজে ভাবে নজর দিবে। অনেকে খারাপ প্রস্তাব দিবে। তোর অনুপস্থিতে অন্যরা সুযোগ নিবে। আর তুই যদি এখানে থাকিস। তাহলে ক্যাম্পাসের সবাই জেনে যাবে মীরা তোর। মীরাকে কেউ বাজে প্রস্তাব রাখার সাহস পরের বছর গুলোতে পারবেনা। ”
” চুপ থাক তুইতো চাস আমি এইখানে থাকি। যা পেজ নিয়ে আয় লিখতেছি আমি দরখাস্ত ঝুলিয়ে দিস তুই নোটিশবোর্ডে। ”
” আদনান উজ্জ্বল একটা হাসি দিয়ে বলে আনতেছি দোস্ত। ”
এরপরে ফারাজ ক্ষমা চেয়ে নেয় দরখাস্ত তে। আদনান সেই দরখাস্ত নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দেয়। ফারাজ বিনয় বসুর চেম্বারে যেয়ে ক্ষমা চায়।
বিনয় বসু দরখাস্ত মঞ্জুর করেন। একমাসের জন্য সাসপেন্ডে রাখে ফারাজকে।
মীরার ব্যাচমেটরা নোটিশ বোর্ডে এসে দেখে ফারাজ স্যার ক্ষমা চেয়ে নিছে। সবাই বলে উঠে এই মীরা ফারাজ স্যার বোধহয় তোরজন্য দরখাস্ত লিখলো। দেখে যা ফারাজ স্যার এই কলেজেই থাকছে। ফারাজ স্যারের সাইন আছে।
মীরা কারো সাথে কথা না বলে হোস্টেলে যাওয়ার জন্য দ্রুত পা ফেলে।
” কোথায় যাচ্ছো মীরা। মীরার হাত ধরে টান দেয় ফারাজ। ”
” কি করছেন আপনি। ছাড়ুন আমাকে। ”
” কিসের এতো ভয় তোমার। আমিতো তোমাকে ভালোবাসি। তোমার জন্য বিনয় বসুর অপমান ভূলে কলেজে থেকে গেলাম। একমাস আমার কোনো ক্লাস নাই। এসব ক্লাস ও আমি করতে চাইনা আর। ফারাজকে দেখে কি এমন মনে হয়। যে সবসময় এড়িয়ে চলো ফারাজকে। ফারাজ কি দেখতে খুব খারাপ। ”
” মাফ করবেন! আপনাকে দেখছি তিনমাস হলো। আপনার ভিতরে রাগ ছাড়া কিছুই নেই। আমি এরকম রাগী লোককে ভালোবাসতে পারবো না। ”
” রাগ কি আমি কারণ ছাড়াই করি। আমি সবসময় স্পষ্টবাদী। তর্কে যেতে চাইনা। কাল থেকে আমি পুরাই ফ্রি। কলেজে কোনো ক্লাস করতে হবেনা তোমার। সব বুঝিয়ে দিবো আমি। ”
মীরা কিছু না বলেই ফারাজের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে দ্রুত হোস্টলে চলে যায়। ফারাজ শুধু সেইদিকে চেয়ে রয়। এমন সময় আদনান ফারাজের পিঠে হাত বোলায়।
” কিরে মীরা কি বললো! ”
” মীরাতো কোনো কথাই বলেনা আদনান। আমার আজকে অনেক রাগ পেয়েছিলো। কিন্তু কিছু করতে পারলাম না। তুইতো জানিস আমার এসব মিনমিন স্বভাব ভালো লাগেনা। ”
” সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
” আর কতো সময় লাগবে ওর। চারমাস হতে চললো। এখনো সে আগের মতোই করে। ”
হাবিব, সৌম্য, জুলেখা এসে বলে ফারাজ, আদনান চল আজকে নেহার ট্রিট আছে। এখন না গেলে মিস করবো।
” তোরা সবাই যা আমার কিছু ভালো লাগছে না। ফারাজ দ্রুত নিজের হোস্টেলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। ”
বাকি বন্ধুরা আর কিছু বলেনা।
সকাল ৯.০০ টা ফারাজ ডিরেক্ট প্রথম বর্ষের রুমে যায়। সকল ছাত্র _ ছাত্রী ফারাজকে সালাম দেয়। ফারাজ সবাইকে ইশারা করে বসে পড়ার জন্য। ফারাজ মেয়েদের সাইটে যেয়ে মীরার দিকে ইঙ্গিত করে। মীরা এখানে আসো। মীরা চলে আসে।
” কেমন আছো মীরা? ”
” ভালো!”
” ক্লাস আছে তোমার? ”
” হ্যা! ”
” কি ক্লাস এখন? ”
” প্যাথলজি। ”
” চলে আসো আমি সবটা বুঝিয়ে দিবো। ”
” মীরা বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বলে। যাবো না। ”
” মূহুর্তের মধ্যে ফারাজ রাগ হয়ে যায়। কেনো আসবে না। বলছি না আমি ক্লাস নিবো। ফারাজের এই রাগ দেখে ক্লাসের সবাই মাথা নিচু করে ফেলে। ”
” ফারাজ মীরার হাত ধরে রুমের বাইরে নিয়ে আসে। ক্লাসের ছেলেগুলো হি হি করে হেসে দেয় এই দৃশ্য থেকে। ”
এই সবাই চুপ কর। যে হাসবে তার নাক ফাটিয়ে দিবো। এবার সবাই চুপ করে যায় ফারাজের হুমকিতে। ফারাজ মীরাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।
” কি করছেন আপনি! আপনি বুঝেন না কেনো আমি রাগকে খুব ঘৃণা করি। আপনি প্রচুর রাগী লোক। আমি এখানে পড়াশোনা করে ডক্টর হতে এসেছি প্রেম করতে নয়। ”
” হ্যা আমিতো তোমার ক্লাস নিবো। তোমাকে এমন ভাবে বুঝাবো যে তুমি ক্লাসে টপ থাকবে। ”
মীরা আর কিছু বলেনা। সেদিন সুন্দর ভাবে মীরার সব পড়া বুঝিয়ে দেয় ফারাজ।
দ্বিতীয় দিন ফারাজ প্রথম বর্ষের রুমে আসে। মীরাকে ডাক দেয়। মীরা কোনো নাটক না করেই ফারাজের সঙ্গে চলে যায়। ফারাজ সেইদিন মীরার মাইক্রোবায়োলজি ক্লাস নেয়। এভাবে ১৫ দিন হতে চললো। মীরা কোনো ক্লাস আ্যাটেন্ড করেনা। ফারাজের সঙ্গে প্রাইবেট সময়,পড়াগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে নেয়। আজকে ১৬ তম দিন। মীরার বায়োকেমিস্ট্রি ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুত হয় ফারাজ। এমন সময় মীরা ফারাজকে অপলকভাবে নয়নে দেখতে থাকে। ফারাজ মীরার দিকে তাকাতেও বুঝতে পারে।
” কিছু বলবে মীরা? ”
মীরা কিছু না বলে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে ফারাজের কপালে চুমু দেয়। ফারাজ অবাক হয়ে যায়। সে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা মীরা এমন কিছু করেছে। ফারাজ দুই আঙুল দিয়ে বাম চোখ ঘষে।
” বেবি আমিয়ো তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আমি তোমাকে এতদিন এই কথা বলি নাই। কারণ, আমার বাবা নেই। সপ্তম শ্রেনিতে থাকাকালীন আমার বাবাকে কেউ গুলি করে মেরে ফেলছে। তখন থেকে বড় ভাই আরমান শেখের কাছে আমার বড় হওয়া। সে খুব রাগী সে যদি জানতে পারে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাহলে সে তোমাকে মেরে ফেলবে। আমার ভাই আমাদের এলাকার এমপি তার ক্ষমতার কাছে তুমি আমি খুবই তুচ্ছ। ”
” এই প্যারার জন্য তুমি আমাকে প্রায় চারমাস থেকে ঘুড়াচ্ছো। এগুলা নিয়ে ভয় খেয়ো না বেবি। কিছু হবেনা আমাদের। আমি একজন ডক্টর। আর প্রতিটি বাবা/ ভাই চায় তার বোনের জামাই প্রতিষ্ঠিত হোক। ভালোবাসলে এতো ভয় পেতে হয়না। ভালোবাসলে মনে সাহস রাখতে হয়। তোমার সাহস সঞ্চয় করতে চারমাস লেগে গেলো। ”
মীরা ফারাজকে জড়িয়ে ধরে। ফারাজ মীরাকে জড়িয়ে ধরে। ভালোবাসার খুশিতে তারা দুজন সেইদিন ক্লাসের পরিবর্তে ঘুরতে বের হয়। মীরার পছন্দের খাবার ফুচকা খায়। নৌকা ভ্রমণ করে সুন্দর সুন্দর পিক তুলে দুজনে। এরপরে পার্কে বসে কিছুক্ষণ গল্প করে। দুপুরে খিচুড়ি খায়। বিকালে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হোস্টেলে যায়। এইভাবে প্রথম দিনটি সুন্দর ভাবে সেলিব্রেট করে দুজনে।
” কিরে ফারাজ ভিজতে ভিজতে কই থেকে এলি তুই। সারাদিন তোকে কল করলাম! একটা কল রিসিভ করিস নাই। এরপরে মীরার খোজ নিলাম। কিন্তু মীরাকেও ক্যাম্পাসের কোথাও দেখলাম না। তোরা দুজন কি আজ একসঙ্গে কোথাও বেড়িয়েছিস। ”
” ফারাজ ক্রুর হাসি দিয়ে বলে মীরা আমাকে আই লাভ ইউ বলেছে আদনান। ”
” সত্যি ”
” হুম ”
” শ্লা এর জন্য আজকে তুই এতো ব্যস্ত ছিলি। বল না কোথায় কোথায় ঘুরলি তোরা। ”
” অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম। প্রাইবেট টাইম স্পেন্ট করার সময় কল ধরি কিভাবে। ”
” তাই বলে ভালোবাসার জন্য ০৫ বছরের বন্ধুত্ব শেষ করে দিবি। ”
” এই কথা কখন বললাম। আজকে প্রথমদিন ছিলো। বুঝিস তো প্রথমদিন সব ভালোবাসার মানুষ দের জন্য কতোটা সেপ্শাল হয়। ”
” হ্যা বুঝেছি। এই খবর আমি এখন সবাইকে দিবো মামা। আজকে রাতে একটা ডিনার পার্টি চাই। ”
” হুম সব পাবি। সবাইকে রেডি থাকতে বলিস। ঠিক রাত ১০.০০ টায়। ”
” হ্যা ”
এরপরে ফারাজ মীরাকে কল করে___
” হ্যালো মীরা আজকে রাতে আমার বন্ধুদের ডিনারপার্টি ট্রিট দিচ্ছি। তুমি কিন্তু আসবে। ঠিক রাত ১০.০০ টায় মনে রাখিয়ো। ”
” হুম বেবি। ”
রাত ১০.০০ টা সবাই খাবারের জন্য অপেক্ষা করতেছিলো। নেহা আর জুলেখা মীরাকে বললো। সারাদিন কেমন কাটলো মীরা।
” খুব ভালো। ”
” ভালো হওয়ার কথা ফারাজ সঙ্গে ছিলো যে।”
” মীরা মাথা নিচু করে ফেলে। ”
” এই মীরা তুমি একজন ডক্টর। এতো কম কথা বললে হয়। ”
ফারাজ নেহা আর জুলেখাকে রাগ দেখায়। ওদের কথা শুনে। ফারাজের হুমকিতে কেউ আর কথা বলার সাহস পেলো না টপাটপ খাবার খেয়ে গেলো। ফারাজ মনে মনে বললো সব কয়টা হারামি কেউ অভিনন্দন জানালো না আমাদের।
এমন সময় মীরার গলায় খাবার আটকে যায়। ফারাজ দ্রুত পানি এগিয়ে দেয় মীরাকে। বন্ধুরা সবাই এই ব্যাপারটি দেখে হাসতে হাসতে লুটুপুটি খায়। খাবার শেষে ফারাজ মীরাকে হোস্টেলে দিয়ে আসে। আসার সময় কপালে একটি চুমু দিয়ে আসে।
দিনগুলো ভালোই কাটতেছিলো ফারাজ ও মীরার। এমন সময় ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা শেষ হয়ে আসে। মেডিকেল কয়েকদিনের জন্য ছুটি দেয়। ফারাজের মেডিকেল পড়া শেষ। এখন ইনটার্নশীপ নেওয়ার জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যেতে হবে। মীরার মন খারাপ হয়ে যায়। ফারাজ তাকে ছেড়ে যাবে বলে। ফারাজ মীরাকে ভালোভাবে বুঝায় দূরে কোথাও যাচ্ছি না মীরা। আমরা আগের মতো সবসময় দেখা করবো। মীরা সেদিন কলেজ ছাড়তে চায়নাই। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে ছুটি কাটাতে বাড়িতে যায়। ফারাজ ও তার বাকি বন্ধুরা ইনর্টানশীপ নেওয়ার জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যায়।
ছুটি শেষ হয়ে যায়। মীরা মেডিকেলে এসে ফারাজের সঙ্গে দেখা করে। খুব ভালোভাবেই পরের বছর টা কেটে যায়। ফারাজের ইনটার্ন শীপ শেষ হয়ে যায়। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এসে ফারাজকে অভিনন্দন জানায় মীরা। ফারাজ ডক্টর হওয়ার খুশিতে মীরাকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে। সবাই ফ্যালফ্যাল করে দেখে ফারাজ আর মীরাকে।
আদনান, হাবিব,সৌম্য,নেহা ও জুলেখার মন খারাপ। কারণ একসঙ্গে ছয়বছর পড়াশোনার কর আজ থেকে তারা প্রত্যককে আলাদা হয়ে যাবে। হাবিব ডিগ্রি নিতে অস্ট্রেলিয়া যাবে। সৌম্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। আদনান নিজের ক্লিনিক খুলবে। নেহা তার বাবার ক্লিনিকে বসবে। জুলেখা কানাডা চলে যাবে। ফারাজ কোথাও যাবেনা মীরাকে ছেড়ে। তাই ফারাজ বাংলাদেশেই হার্ট সার্জন গিরি করবে।
সেইদিন সকলেই শেষবারের মতো একত্রে টাইম পাস করে । কারণ এইভাবে আর সময়গুলো পাবেনা তারা। মীরাও সঙ্গে থাকে। মীরার কলেজ ছুটি হয়ে গেছে গতকাল। কিন্তু ফারাজের জন্য শহরে ছিলো।
” ফারাজ বেবি আমিতো কালকে চলে যাচ্ছি। আমাদের দেখা হবে কি করে। ”
” আমিতো এখন সম্পূর্ণ ফ্রি। যেয়ে দেখা করবো তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। ঠিক আছে। ”
এরপরে সবাই যার যার মতো আলাদা হয়ে যায়।
মীরা দুইদিন পর ফারাজের সঙ্গে দেখা করতে চায়। ফারাজ মীরার সঙ্গে দেখা করার জন্য মীরার গ্রামে আসে। কিন্তু তাদের একত্রে দেখে ফেলে আরমান শেখ।
চলবে,,,,