প্রেম বিভ্রাট পর্ব-০১

0
940

#প্রেম_বিভ্রাট
#রিয়া_জান্নাত
#সূচনাপর্ব

ফারাজের অনুপস্থিতে খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করছে ফারাজের গার্লফ্রেন্ড মীরাকে। ফারাজকে এসে এই সংবাদ দেয় তার রুমমেট আদনান।

” কি বললি তুই? মেহেদীর এতো বড় সাহস। আমাদের মেডিকেল ক্যাম্পাসে এসে আমার গালফ্রেন্ডকে ইভজিটিং। বলেই দৌড়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে ফারাজ। ”
পিছনে পিছনে আদনান ছুটে আসে ফারাজের সঙ্গে।

” মজা দেখছো সবাই। বহিরাগত এক ছেলে এসে আমাদের ক্যাম্পাসে তোমাদের চোখের সামনে বাজে ভাবে এক মেয়েকে উক্তত্য করলো। বাধা দিতে পারলেনা। হিজরা কোথাকার। সড় এখান থেকে। ”

ফারাজকে দেখে মীরা কেঁদে ফেলে। ফারাজ মীরার হাত দুটি ধরে বলে উঠো। মাটিতে বসো আছো কেনো? বলো কি করছে তোমার সঙ্গে মেহেদী?

মীরা মধ্যমা আঙুল দিয়ে নিজের ওড়না দেখিয়ে দেয়। ফারাজ সঙ্গে সঙ্গে ওড়নাটা মাটি থেকে তুলে নেয়। এরপরে মীরাকে পড়িয়ে দেয়। ফারাজের বুঝতে বাকি রইলো না মেহেদি মীরার সঙ্গে কি করেছে?

আদনান,হাবিব,জুলেখা, নেহা,সৌম্য গাড়ি বের কর। আমরা এক্ষুনি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যাবো। মেহেদী জানেনা ও কি ভূল করেছে। ফারাজের কলিজায় হাত দিয়েছে। মেহেদির হাত আজকে ওর দেহতে থাকবে না।

আদনান, হাবিব, সৌম্য দ্রুত বাইক নিয়ে ছুটে আসে। ফারাজ বাইক স্টার্ট করলো পিছনে মীরা বসলো। আর দুইটি বাইকে আদনান, হাবিব, জুলেখা, সৌম্য ও নেহা বসলো।

ভূম ভূম করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে রওনা হলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সব ছাত্র ছাত্রী শুধু এই দৃশ্য চেয়ে রইলো।

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকলো। ফারাজ চিৎকার করলো এই মেহেদী তুই কোথায়? তাড়াতাড়ি বের হয়ে আয়। এই দৃশ্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রী দেখে কিছুটা ভয় খেলো। কারণ পুরো ক্যাম্পাসে তিনটি বাইক চড়কির মতো ঘুড়ছিলি।

ক্যাম্পাসে কোনো মশা মাছিকে না পেয়ে ফারাজ বাইক থামিয়ে সোজা মেহেদীর হোস্টেলে যায়। পিছনে পিছনে জুলেখা, নেহা,মীরা,সৌম্য, আদনান,হাবিব দৌড়ে আসে। এই মেহেদী তুই কোথায় রে। কার কলিজায় হাত দিয়ে লুকিয়ে বসে রয়েছিস।

” এই কে রে কার এতো বড় সাহস আমার রুমের সামনে চিৎকার করার। ”

সঙ্গে সঙ্গে ফারাজ মেহেদীর নাক বরাবর একটা ঘুষি মারে। এরপরে মেহেদীর কানের দিকে আরেকটা ঘুষি। এরপরে মেহেদীর গালে থাপ্পড় দেয় ডান হাত দিয়ে।

মেহেদী সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। নাক দিয়ে অর্নগল রক্ত পড়া শুরু করে। মেহেদীর রুমমেট ব্যাপারটা দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
মেহেদী পিটপিট চোখে ফারাজকে দেখছিলো। মীরা ফারাজের পিছনে উঁকি দিচ্ছে?

” তোর এতোবড় সাহস তুই আমার কলিজায় স্পর্শ করছিস। তোকে আমি হত্যা করবো। এই বলে ফারাজ ওর পকেট থেকে ছুড়ি বের করে। মেহেদী ছুড়ি দেখে শুকনো ঢোক গিলে। মীরা ভয় পেয়ে যায়। কারণ ফারাজ রাগের বশে অনেক কিছু করে ফেলে। ফারাজ এগোতেই মীরা পিছন থেকে ফারাজকে জড়িয়ে ধরে। কি করছেন আপনি ? ”

” এই জুলেখা, নেহা তোরা কিসের জন্য এখানে এসেছিস মীরাকে ধর। এই কুকুরকে হত্যা করে পিস পিস করে কাটবো আমি। ”

আদনান এসে ফারাজের হাত থেকে ছুড়ি কেড়ে নেয়।
” তোর কি হয়েছে ফারাজ? কলেজ থেকে রাস্টিকেট হতে চাস? ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাস? ভূলে যাচ্ছিস ক্যান তুই একজন ডক্টর। ডক্টর দের এতো রাগ হলে পেসেন্টদের কিভাবে হ্যান্ডেল করবি? ”

” তুই বুঝতে চাইছিস না কেনো আদনান? আমি আর এই কলেজে ১ বছর থাকবো। আমি থাকাতেই মীরার উপর এসব যদি হয়। আমি এইখান থেকে চলে গেলে কি হবে বুঝতে পারলি? মীরা সবেমাত্র কলেজে এসেছে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। হাউমাউ করে কান্না শুরু দিলো ফারাজ। ”

” আমরা আসছি কিসের জন্য কথা বলছি আমরা। নিজের রাগ কন্ট্রোল কর ফারাজ! ”

” চুপ থাক তোরা তো কাউকে ভালোবাসিস না। তোরা বুঝবি কি করে ভালোবাসার মানুষকে অন্যজন অপমান করলে কেমন লাগে? এই মেহেদি তোর সমস্যা তো আমার সাথে। তাহলে আমার সাথে না লেগে আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে এসব কি? কাপুরুষ কোথাকার সেইদিন বার্ষিক ক্রীড়ায় তোদের কলেজ ফল্ট করেছে। বারে বারে ফাউল করছিলো তোদের প্লেয়ার। শেষ তিনমিনিটে তুই আমার সাথে ফাউল করেছিস। এরজন্য আমি তোকে মেরেছিলাম। কিন্তু ফল কি হলো কাপতো কোনো কলেজ নিতে পারলো না। উল্টো কাপটা হাতছাড়া হলো। ব্যাক্তিগত সমস্যা সম্পর্কে আনছিস তুই। জানিস না ফারাজ কি করতে পারে। ফারাজের কাছে ভালোবাসা আগে, ক্যারিয়ার পরে বুঝলি। ”

” আমাকে মাফ কর ফারাজ। আমি বুঝতে পারি নাই তুই মীরাকে এতোটা ভালোবাসিস। প্রতিশোধের নেশা আমাকে কতোটা জঘন্য বানাইছে। যা আজ থেকে মীরা তোর। ভূলে গেলাম আমি দ্বন্দের কথা।এরপর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ব্যাচমেট হয়ে থাকবে পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রীরা। মীরাকে বাইরে থেকে প্রটেকশন দিবো আমি। ”

আদনান,হাবিব,সৌম্য, জুলেখা ও নেহা বলে উঠলো ফাও ফাও বেচারার নাকটা ফাটিয়ে দিলি ফারাজ। বলেছিলাম না রাগ সম্পর্ক নষ্ট করে। মিষ্টিকথা সম্পর্ক কে ভালো করে।

এরপরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে সোজা ঢাকা মেডিকেল কলেজ চলে আসে ফারাজ ও তার সহপাঠীরা।

সবাই বাইক থেকে নেমে বটতলায় বসে। ফারাজ মীরাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দেয়। মীরা অবাক হয়ে যায়।

” কি দেখছো মীরা। কেউ দেখে নাই ”

আদনান ও তার বাকি বন্ধুরা বলে উঠে কি বলছে এই শ্লা। কেউ দেখে নাই। হাবিব বলে উঠে হ্যা হ্যা আমরাও দেখি নাই। বাকিরা খিক খিক করে হেসে দেয়।

” যাও মীরা ক্লাসে যাও। এখন কি ক্লাস আছে তোমার? ”
” এনাটমি ”
” পাঁচ মিনিট লেইট হয়েছে। যাও স্যার কিছু বলবেনা। আর যদি কিছু বলে ক্লাস করার দরকার নাই। সোজা এখানে চলে আসবা। আমি ক্লাসের পড়া সব বুঝিয়ে দিবো। ”
” হুম ”

মীরা চলে যায় ক্লাসে। ফারাজ মীরার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রয়েছে। এমন সময় আদনান এসে পিঠে হাতের স্পর্শ দিয়ে বলে ___

” আমারতো মনে হয় মীরা তোকে আসলেই ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটা অতি শান্তশিষ্ট, সবসময় কেমন চুপ করে থাকে। ”
” গত তিনমাস থেকে তো মীরাকে দেখছিস। হ্যা ও এইরকম ক্যাম্পাসে নতুন পুরাতন হলে কেউ ওকে বাজে ভাবে উক্তত্য করার সাহস পেতো নাকি? ”

এমন সময় প্রথম বর্ষের ছাত্র এসে ফারাজ স্যার ফারাজ স্যার বলে ডাকা শুরু করে।

” কি ব্যাপার তুমি ডাকছো ক্যান আমাকে? ”
” স্যার আপনাকে অধ্যাপক বিনয় বসু ডেকেছেন ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে!”
” কেনো? ”
” তাতো জানিনা। আপনাকে ডাকতে বললো তাই ডাকতে আসলাম। ”
” ওহ আচ্ছা! চলো যাচ্ছি। ”

পিছন থেকে বন্ধুরা বলে উঠে যাও ফারাজ তোর আদরের মীরা মনে হয় ক্লাসে বিচার দিছে। তুই তাকে চুমু দিয়েছিস। বলেই একেকটা ফিক ফিক করে হাসতে থাকে।

” আদাব স্যার। আপনি আমাকে ডেকেছেন? ”
” হ্যা হ্যা আপনি বাইরে কেনো স্যার। ভিতরে আসুন? ”
ফারাজ ভিতরে ঢুকলো।
” হ্যালো প্রথম বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রীরা ইনি হলো ফারাজ শেখ। পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। ডক্টর হিসাবে ভালোই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। হার্ট সার্জন হিসাবে সফল হলেও ব্যবহার যথেষ্ট খারাপ। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। একজন যত ভালো হার্ট সার্জন হোক রাগী কখনো তার কাছে ভালো চিকিৎসা সেবা পাবেনা। কারণ পেসেন্টরা নিজের মনের কথা কখনো ডক্টরের কাছে শেয়ার করতে পারবেনা। তার রুটলি ব্যবহারের কারণে ”

” স্যার আমার কোনো দোষ নেই। খেলায় ফাউল করেছে ওই কলেজ, প্রতিবাদ করেছে আমাদের কলেজ। এইখানে অ্যাম্পায়ার যদি দুই দলের ফাউল দেখতে পায় আমার কি? ওরা আমাদের মেরে যাবো আমরা ওদের ছাড় দিবো ভাবলেন কি করে? ”

” তো কয়েকটা মিনিট ধৈর্য ধরলে এমন কিছু হতোনা ফারাজ শেখ। আমরা ট্রফি টা জিতে যেতাম? ”

” এমন ট্রফি আমরা চাইনা। যেই ট্রফির কারণে আমাদের ভীতুরাম উপাধি দেওয়া হয়।”

” আপনার এই ভূলের জন্য আমাদের কলেজের ০৫ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গছে। এরজন্য আপনাকে কলেজ রাস্টিকেট করবে? যদি আপনি নোটিশবোর্ডে ক্ষমা চেয়ে দরখাস্ত না লেখেন? সেই দরখাস্তে আপনার একটা সাইন থাকবে আমার একটা। একটা থাকবে নোটিশ বোর্ডে আরেকটা থাকবে আমার চেম্বারে। এরপরেও আপনাকে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে। ”

” এইরকম অন্যায় কোনো চুক্তিপত্র আমি লিখতেও পারবোনা সাইন করবো না। এতে যদি আপনারা আমাকে বের করে দেন দিতে পারেন। বলেই প্রথম বর্ষের রুম থেকে বের হয়ে যায়। ”

মীরা এতক্ষণ শুধু ফারাজের কথা শুনছিলো ইভেন্ট প্রথম বর্ষের সবাই ফারাজের কথা শুনে বিস্মিত ।

” দেখলেন আপনারা এই ফারাজ স্যার কত বেয়াদপ। আমি ওনার সিনিয়র হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। আমাকে সবার সামনে বেয়াদপের মতো অপমান করলো! ”

আদনান প্রথম বর্ষের রুমের কাছে যেয়ে সব শুনে নিয়েছে। ফারাজকে যেয়ে বলে এটা ঠিক না। তুই যদি কলেজের কথা না শুনিস, তোর এক বছর গ্যাভ যাবে। আমি জানি তুই ভালো ছাত্র অন্য কলেজে এডমিশন হয়ে যাবে দ্রুত। তবুও একটাবার মীরার কথা ভেবে দেখ। তুই এখান থেকে চলে গেলে মীরাকে দেখে রাখবে কে? মীরা যদি তোর এই মনোভবে কষ্ট পেয়ে তোকে ভূল বুঝে? তখন কি হবে তোদের প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি? সবকিছু তৈরি হওয়ার আগেই ভেঙ্গে ফেলিস না ফারাজ। একটাবার এই আদনানের কথা শুন?

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে