#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২৬
#আয়েশা_আক্তার
মেহেদী কোলের উপর ল্যাপটপ বসিয়ে সেই কখন থেকে কাজ করছে। লাবণ্য কাপড় ভাজ করছে আর আড়চোখে মেহেদীর দিকে তাকাচ্ছে। লাবণ্য’র মাথায় চট করেই একটা প্ল্যান আসে। সে কাপড় রেখেই পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় মেহেদীর দিকে। লাবণ্য দেখতে চায় মেহেদীর পাশে তার দাঁড়ানোতে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। সে এসে দাঁড়াতেই মেহেদী বলে উঠে,
-বসো।
-উহু, তুমি কাজ করো।
এটা বলে লাবণ্য চলে যেতে নিলেই মেহেদী একহাতে লাবণ্যর হাত ধরে আটকায়। তারপর ডান হাতে ল্যাপটপে কিছু একটা করে কয়েক সেকেন্ড পর ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। তারপর লাবণ্যকে তার পাশে বসিয়ে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করতেই লাবণ্য বলে উঠে,
-কাজ শেষ না করেই রেখে দিলে কেন?
-বউয়ের থেকে কাজ বড় নয়। কাজ অনেক আছে, করাও যাবে কিন্তু একটা মাত্র বউকে কাছে পেলেই আমার আদর আদর পায়।
কথাগুলো গত তিন বছরে মেহেদীর মুখে লাবণ্য শতবার হবে শুনেছে। তারপরও যতবার শুনে ততবারই খিলখিলিয়ে হেসে ফেলে লাবণ্য। অস্ফুটে উচ্চারণ করে,
-অসভ্য।
-হায়! এটা নতুন নয় বউ পাখি তোমার সাথে এ্যাংগেইজম্যান্ট হওয়ার পর থেকেই আমি অসভ্য হতে শুরু করেছি। তবে বিয়ের পর পুরোপুরি হয়ে গিয়েছি।
-ছি! তারমানে আমি তোমায় অসভ্য বানিয়ে ফেলেছি? আশ্চর্য!
-তুমি অসভ্য বানাওনি। সুন্দরী বউদের কাছে সব পুরুষ হাজারবার অসভ্য হতে রাজি।
-হয়েছে এখন ছাড়ো আমার কাজ আছে।
-তোমাকে বলেছি না এ অবস্থায় কোনো কাজ করতে হবে না? দেখি তো আমার হামিংবার্ড কেমন আছে?
এ কথা বলেই মেহেদী লাবণ্যকে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর লাবণ্যর পেটের উপর আলতো স্পর্শ করে বলে উঠে,
-এইযে আমার হামিংবার্ড ঘুমাচ্ছিস? দেখছিস তোর মা আমায় অসভ্য বলছে, তুই পৃথিবীতে এসে তোর মাকে বকে দিবি ওকে?
লাবণ্য আবারো হেসে উঠে। মেহেদী লাবণ্যকে বসতে বলে বিছানা থেকে নেমে বাকি কাপড় গুলো ভাঁজ করে ওয়ারড্রবে রেখে দেয়। আর লাবণ্য দেখতে থাকে তার একান্ত ব্যাক্তিগত পুরুষটি কে। সে মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ তায়ালা তার ভাগ্যে এতো ভালো একজন মানুষকে দিয়েছেন সেই জন্য। প্রেগন্যান্সির শুরু থেকেই মেহেদী লাবণ্যর দিকে দিগুণ খেয়াল রাখা শুরু করেছে। আগে যে রাখতো না তেমন নয়, তবে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে কোনো কাজেই করতে দেয় না মেহেদী লাবণ্যকে। রান্নার মহিলা এসে রান্না করে দিয়ে যায় আর বাদ বাকি কাজ মেহেদীই বেশির ভাগ সময় করার চেষ্টা করে। মেহেদী কাপড় ভাজ করে রেখে ঘড়িতে চেয়ে দেখে রাত এগারোটা বেজে গেছে। তাই সে দ্রুত রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। খাবার গরম করে একটা প্লেটে করে আবারো ঘরে ফিরে আসে মেহেদী। তারপর ভাত মেখে লাবণ্যর মুখের সামনে ধরতেই লাবণ্য তৃপ্তি সহকারে খেতে শুরু করে। খাওয়াতে খাওয়াতে মেহেদী লাবণ্যর পেটের দিকে চেয়ে কৌতুক করে বলতে শুরু করে,
-হেই পুঁচকে দেখছিস তো বাবা কত রোমান্টিক? তুইও শিখে রাখ ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। রোমান্টিক বাপের আনরোমান্টিক পোলা হোক এটা আমি চাই না। বুঝছিস?
-যদি মেয়ে হয়?
– মেয়ে হলেও সমস্যা নেই। মেয়ে তার বরের কাছে আবদার করবে, ভাত খাইয়ে দাও নয়তো খাবো না। আমার বেশির ভাগ সময় মাকে ভাত খাইয়ে দিতে। এবার তুমি আমায় খাইয়ে দাও।
লাবণ্য এসব শুনে হো হো করে হেসে ফেলে। লাবণ্যর প্রেগ্ন্যান্সির সাত মাস চলছে। এই সাত মাসে এমন রংঢং মেহেদী আরো অনেক বার করেছে। তবুও লাবণ্যর কাছে মেহেদীর সবকিছুই নতুন লাগে। মনে হয়, এইতো সেদিন এ্যাংগেইজম্যান্ট হলো, তারপর কিছু মাস পরই বিয়ে। কিন্তু অলরেডি তাদের বিয়ের তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আসলে ভালোবাসলে সবকিছুই নতুন লাগে। ভালোবাসা কখনো পুড়নো হয় না।
________________________
অপারেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাদাফ এশা চলে যায়। তার ঘন্টা খানেক পরই ইরফানের জ্ঞান ফিরে। হ্যাঁ তানহার হাসবেন্ডের নাম ইরফান। বিজনেসের সুত্র ধরেই ইরফান লন্ডনে এসেছে। ভালো মানুষদের যেমন শত্রুর অভাব নেই তেমনই ইরফানের ও। তাই ইরফানের চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রেখেই চলাচল করে। কিন্তু আজ একটা ইমার্জেন্সি এবং জরুরী কাজে গিয়েছিলো ইরফান। সেখান থেকে ফেরার সময়ই কেউ দূর থেকে ইরফানের উপর গুলি ছুড়ে। গাড়িটাও রাস্তায় খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আর এই সুযোগ টা-ই কাজে লাগালো ইরফানের শত্রু’রা।
তানহা ইরফানের জন্য হাসপাতালের ক্যানটিন থেকে স্যুপ নিয়ে এসে খাইয়ে দিয়েছে। তারপর ঔষধ গুলো খাইয়ে দেয়। এরপর তানহা ইরফানের সামনে বসতেই ইরফান তানহার মুখ পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। একহাতে তানহাকে কাছে আনার চেষ্টা করে বলে,
-কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছো নিজের?
তানহা কিছু বললো না। তার গাল বেয়ে আরো কিছুটা তরল পানি গড়িয়ে বললো। ইরফান নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
-আবার কাঁদছো? কেঁদো না প্লিজ।
-আজ থেকে গার্ড সাথে নিয়ে যাবে। তা নয়তো বিজনেস ফিজনেস করতে হবে না। বাংলাদেশে ফিরে চলো।
-বাংলাদেশেও শত্রু আছে। তাই পালিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। আমি লড়াই করতে জানি। এবার একটু অসতর্ক থাকায় ওরা সুযোগ পেয়েছে। তুমি চিন্তা করো না।
তানহা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাফ এশা হাজির হলো। তাই আর তানহা কিছু বললো না। সাদাফ এসে ইরফানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো,
-কি অবস্থা এখন আপনার?
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের জন্যই এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
-উহু, জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে।
-তা ঠিক তবে আমার আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। যেখানে দেশের মাটিতেই এক জনের বিপদে অপরজন পাশ কেটে চলে যায় সেখানে আপনারা আল্লাহর দেওয়া উপহার স্বরূপ এসেছেন।
– যাদের মধ্যে মানবতা আছে তারা অপরের বিপদে কিছুতেই নির্বিকার থাকতে পারে না। এসব কথা বাদ, তানহা এশা কেমন লাগছে তোমাদের এতো দিন পর দেখা হয়ে? আল্লাহ চেয়েছিলো তোমাদের দেখা হোক তাই হয়তো এভাবে আমাদের সবার এক হওয়া হয়েছে।
-আমি তো ভীষণ খুশি। জানো তানহা আমি তোমায় কত খুঁজেছি? (এশা)
-আমার বাবা মারা যাওয়ার পর বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়ে যায়। বাবাকে হারিয়ে আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম। তখন ইরফানকে মেনে নিতেও পারিনি। আর না কারো সাথে যোগাযোগ করতেও পারিনি। হয়তো চেষ্টাও করিনি। কারণ আমি অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। সুই সাই ড করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ইরফান ধীরে ধীরে আমায় ডিপ্রেশন থেকে বের করে এনেছে। তারপর আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলি, স্বামী হিসেবে মেনে নেই। আর এটা মানতেই হবে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে। তোর কি অবস্থা সেটা বল? (তানহা)
-আমিও সাদাফের অসুস্থতায় অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। একটা বছর…. (এশা)
-উফ, এতো দিন পর দেখা হলো কই হাসিখুশি কথা বলবে, আনন্দ করবে তা নয় দু’জন মিলে মন খারাপের গল্প শুরু করেছে। (এশার কথা কেড়ে নিয়ে সাদাফ বলে উঠে।)
-হাহাহা, রকস্টার’রা সবসময় জীবনকে উপভোগ করতে ভালোবাসে। (ইরফান)
-অবশ্যই, আপনি বললে আমি গান গাইতে শুরু করতে পারি। (সাদাফ)
চলবে..