#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২৪
#আয়েশা_আক্তার
মেয়েরা মনের দিক থেকে ভীষণ নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা একটু দূর্বল প্রকৃতির হয় সেটা আমরা সবাই জানি। তবে কিছু কিছু মেয়ে হয় ভিন্ন প্রকৃতির। তারা সাহস ও মনোবলের দিক দিয়ে ছেলেদেরকেও ছাড়িয়ে যায়। এই যেমন একটা মাস ধরে দিন-রাত হাসপাতালে এসে সাদাফের কেবিনের সামনে বসে থাকছে সে।
সেদিন এক্সিডেন্টে সাদাফ অনেক বেশি আঘাত পায়। মাথায় আঘাতটা এতো বেশিই পেয়েছে যে সাদাফ কোমায় চলে গেছে। এক মাসেও সাদাফ সুস্থ হয়নি। পঁচিশ দিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে সাদাফের বাবা-মা সাদাফকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। এশা সুস্থ হওয়ার পর থেকেই দিনরাত সাদাফের পাশে বসে থাকে। ওদের এ্যাংগেজম্যান্ট হয়ে যাওয়ায় বাইরের কেউ কিছু বলতেও পারে না। ধবধবে ফর্সা এশার চোখের নিচে কালি পড়েছে, শরীরে পড়ছে অযত্নের ছাপ। ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে দিনরাত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতে দেখে মোটেও ভালো লাগে না এশার।
এশা সাদাফের ঘরেই জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট কান্না করে সাদাফের সুস্থতা কামনা করে। নামাজ শেষ করে চোখ মুছে নেয় এশা। জায়নামাজ উঠিয়ে ভাজ করে রাখার সময় হাতে থাকা অনামিকা আঙ্গুলে সাদাফের পড়ানো এ্যাংগেইজম্যান্ট রিং এর দিকে চোখ যেতেই এশার চোখে দু’মাস আগের স্মৃতি’রা এসে ভির জমায়।
সেদিন ছিলো শুক্রবার,
এশা লাল রঙের একটা কাতান শাড়ী গায়ে জড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো সাদাফদের আসার। সাদাফ ও লাল খয়েরী রঙের পাঞ্জাবিতে রাঙিয়ে জুম্মার নামাজ শেষ করেই পৌঁছে যায় এশাদের বাসায়। এশা এবং সাদাফের পরিবারের উপস্থিতিতেই তাদের দু’জনের এ্যাংগেইজম্যান্ট হয়ে যায়। সাদাফ এশা একে অপরের হাতে রিং পড়িয়ে দেয়। দু’জনেই ঠোঁটে লেগেছিলো প্রাপ্তির হাসি। রিং পড়ানোর পরই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হয়। খাওয়া শেষে সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে আড্ডার আসর জনায়। সাদাফ এশার দু’জনের বাবা পূর্ব পরিচিত বন্ধু হওয়ায় তাদের গল্প যেন শেষই হতে চায় না। সাদাফ সবার আড়ালে এশাকে ছাঁদে যেতে ইশারা করে। কিন্তু এশা মুখটা খানিক বাঁকা করে ইশারায় বলে, “সবাই কি ভাববে? ”
বিষয়টা ইয়াশা লক্ষ্য করে। তারপর সে গিয়ে তার মায়ের পাশে বসে বলে,
-মা, তোমরা গল্প করো। আমি আপু আর সাদাফ ভাইয়াকে নিয়ে একটু ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি।
-আচ্ছা যা।
এবার আর এশা না করতে পারে নি। রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি ভেঙে এগিয়ে যায় ছাঁদের দিকে। সাদাফ আর ইয়াশা এশার পিছু পিছু যাচ্ছে। এশা ছাঁদের রেলিং ধরে আকাশ পানে মুখে করে চেয়ে আছে। গোধূলি বেলার আকাশ এশার ভীষণ প্রিয়। কি সুন্দর রক্তিম আকাশ!
সাদাফ আর ইয়াশা ছাঁদের চিলেকোঠার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ইয়াশা কেশে গলার পরিষ্কার করার চেষ্টা করে বলে উঠে,
-ভাইয়া, আমি যে আপু আর আপনাকে ছাঁদে আসার সুযোগ করে দিলাম। তারজন্য যদি…
-যা চাইবে তাই দিবো৷ আমার একটা মাত্র শালিকা বলে কথা!
ইয়াশা কথা শেষ করার আগেই সাদাফ বলে উঠে। ইয়াশা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-বেশি কিছু না শুধু আইসক্রিম খাওয়ালেই হবে। খবরদার আপুকে বলবেন না। আপু জানলে আম্মুকে বলে দিবে। আর আম্মুর কানমলা যেই ব্যথা।
-হাহাহা, তোমার আপু জানবে না। পেয়ে যাবে আইসক্রিম।
-ওকে, তাহলে আপনারা কথা বলুন। আমি যাচ্ছি।
সাদাফ হেসে মাথা দোলাতেই ইয়াশা ছুটে চলে যায়। সাদাফ এশার শরীরের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কি দেখছো?
-আকাশ।
-আকাশ, বুঝি অনেক সুন্দর?
-ভীষণ।
-আর আমি?
– আপনি মানুষ, আমার মানুষ। পৃথিবীর সবচাইতে দামি মানুষ।
তারপরের কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না। সাদাফ নিরবতা ভেঙে এশাকে তার সামনে দাঁড়াতে বলে। এশা বাধ্য মেয়ের মতো এসে সাদাফের সামনে দাঁড়ায়। সাদাফ এশার আঁচলটা মাথায় দিয়ে বলে,
-এবার একদম লাল টুকটুকে বউয়ের মতো লাগছে।
এশা লজ্জা পেয়ে দু’হাতে মুখ ঢাকে।
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে এশার ধ্যান ভাঙে। চকিতে পেছনে তাকিয়ে দেখে, সাদাফের মা এশে দাঁড়িয়েছে। এশা কিছু বলার চেষ্টা করার পূর্বেই তিনি বলে উঠে,
-এভাবে নিজেকে অসুস্থ কেন করে তুলছো মা? আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে তোমার এমন বিধস্ত অবস্থা দেখলে কষ্ট পাবে তো। তুমি বাসায় গিয়ে নিজের যত্ন নাও, পড়াশোনায় মন দাও।
-সাদাফ যতদিন সুস্থ হবে না, ততদিন আমি কোথাও যাবো না। ও সুস্থ হয়ে আমায় খুঁজে না পেলে বড্ড রাগ করবে।
সাদাফের মা আর কিছু বলতে পারে নি। তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে ছেলের দিকে একবার তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
এশা আবার সাদাফের ডান হাতটা ধরে সাদাফের বিছানার পাশে বসে। তার চোখ বেয়ে গরম অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সাদাফের হাতটা শক্ত করে ধরে এশা বলতে শুরু করে,
-এটা কথা ছিলো না সাদাফ। তুমি এভাবে আমায় করে শুয়ে থাকতে পারো না। আমাদের একসাথে অনেকটা পথ চলার কথা ছিলো। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সাদাফ। এই সাদাফ, এই, দেখো তোমার এশা কাঁদছে। প্লিজ উঠো। প্লিজ….
_________________
কিছুদিন পর,
আজ সাদফকে চিকিৎসার জন্য কানাডা নিয়ে যাওয়া হবে। যদিও সবাই এশাকে যেতে নিষেধ করেছিলো কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। কারণ হিসেবে এশার মন্তব্য সে না গেলে সাদাফ এশাকে ফাঁকি দিবে। আর কখনো এশার কাছে ফিরবে তার শ্যাম পুরুষ। এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এশা সাদাফের সঙ্গে বাঁচতে চায়। তারজন্য এশার পাসপোর্টও তৈরি করা হয়। এশা নিজের বাড়িতে এসে বিভিন্ন জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। ইয়াশা চেয়ে এশার দিকে। তার আপুটা কেমন বদলে গেলো! ইয়াশার ইচ্ছে করছে কিছুক্ষণ এশাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে। কিন্তু ভয়ে এগুচ্ছে না। কারণ এশার মন মানসিকতা ভালো না। এ অবস্থায় যদি সে ইয়াশার এমন আবদারে অখুশি হয়!
এশা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে তার আদরের ছোট বোন তার আশেপাশে সেই কখন থেকে ঘুরঘুর করছে। এশা বুঝতে পারে ইয়াশা কিছু বলতে চাইছে কিন্তু ভয়ে বলছে না। তাই নিজেই ছোট বোনের নাম ধরে কাছে ডাকে।
-ইশু?
আপুুর মুখে নিজের নাম শুনে ইয়াশার চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করে উঠে। সে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জবাব দেয়,
-হ্যাঁ, আপু।
-এদিকে আয়তো।
ইয়াশা গিয়ে এশার উপর বসলে এশা জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে?
-কিছু হয়নি তো আপু। আমার আবার কি হবে?
-তুই সত্যি করে বল কি হয়েছে?
-কিছু হয়নি আপু।
-তাহলে তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
এবার আর ইয়াশা থাকতে পারে না। হুহু করে কেঁদে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়,
-তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে আপু। আমার সুন্দরী, কিউটিপাই এমন অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না আর।
-ধুর, পাগলী। কান্না থামা বলছি। ইশু, তোর ভাইয়ার জন্য দোয়া করবি। তোর ভাইয়া যেন আগের মতো আমার সাথে কানাডা থেকে ফিরে আসে।
-আচ্ছা আপু, একটা কথা বলবো?
-বল।
-তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি।
এশা কিছু না বলে ইয়াশাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে।
চলবে…
#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২৫
#আয়েশা_আক্তার
তিন বছর পর,
সাদাফ এশার বিয়ের আজ দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। তাই তারা ঠিক করেছে আজ সারাদিন লন্ডনের অলিগলি ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সাদাফ এখন দেশের সাথে সাথে বিদেশেরও একজন নামকরা রকস্টার। তার গান আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ তিন বছর আগে অনেক ডাক্তারই বলেছে, সাদাফ আর বাঁচবে না। ডাক্তারদের মুখে এমন কথা শুনেও ভেঙে পড়েনি সাদাফের বাবা-মা এবং প্রাণভোমরা এশা। এশার অক্লান্ত পরিশ্রমই সাদাফকে সুস্থ হতে সহায়তা করেছে। যদিও সাদাফ পুরো একটা বছর মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও এশার ভালোবাসার কাছে হার মেনে সাদাফকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
সাদাফ এসব মনে মনে ভেবে ঠোঁটে হাসি ফোটায়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে এশার মতো একজন প্রেম_প্রেয়সী সাদাফকে উপহার দেওয়ার জন্য। সাদাফ পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে এশা এবং সাদাফের বিয়ে হয়। বিয়েতে অমিত এবং প্রীতম উপস্থিত থাকলেও হৃদয়-মোহনা, লাবণ্য উপস্থিত হতে পারে নি। তবে বিয়ের পুরোটা সময় তারা অমিত এবং প্রীতমের ফোনে ভিডিও কলে সাদাফ এশার এক হওয়াকে দেখেছে।
সাদাফ ড্রাইভিং করছে আর এশা বাইরে চেয়ে রাতের লন্ডন দেখছে। হঠাৎ করেই বিকট এক শব্দে চারপাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। সাদাফ তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থামিয়ে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করে এক্সাক্টলি কি হয়েছে? সামনে কিছুটা যেতেই দেখতে পায় তার বয়সী একজন সুদর্শন যুবক বুকে হাত দিয়ে নিচে শুয়ে ছটফট করছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যায় ছেলেটির বুক থেকে গলগল করে র ক্ত বের হচ্ছে। এতোক্ষণে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবকটির কাছে আরো পথচারী ছুটে এসেছে। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সাদাফ সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করে যার বাংলা অর্থ ,
– আপনারা কেউ উনাকে চিনেন?
কেউ কোনো সাড়াশব্দ করলো না। সাদাফ বুঝতে পারে কেউ চিনে না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে ধরে গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে দেয়। তারপর সাদাফ ড্রাইভিং সীটে বসে এশাকে ইশারায় বলে সামনের পাশের সীটে বসতে। এশা উঠে বসতেই সাদাফ শাঁ শাঁ গতিতে এগিয়ে যায় কোনো এক হসপিটালের সন্ধানে।
_______________________
The Royal London Hospital,
ইমারজেন্সিতে একজন পেশেন্টকে ভর্তি করানো হয়েছে।শ্বাস-প্রশ্বাস খুবই ধীর গতিতে চলছে।বয়সটা আনুমানিক ৩০-৩১ হবে।গুলি লেগেছে বুকে একটি,হাতে একটি। বাচঁবে নাকি বলা যাচ্ছে না। রক্তক্ষরণ খুব বেশি হয়ে গিয়েছে।অপারেশন করাটারিস্কি। ইমারজেন্সিতে ডক্টররা মিটিং এ বসেছে।তারা দ্রুত ৪ জনের একটি টিম তৈরি করে। যাদের মধ্যে থাকবে এই টিমের সব চাইতে কনিষ্ঠ এবং দক্ষ সার্জন ডক্টর নাজিব আহমেদ নাঈম । বয়স ২৮ এর কাছাকাছি। অপারেশন শুরু হবার আগে সে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। নাঈম সবুজ রঙের এপ্রোন,মাস্ক,ক্যাপ আর হাতে গ্লাভস পড়ে তৈরি হয়ে যায় ওটিতে যাওয়ার জন্য। ঠিক তখনই নীল রঙের স্কার্ট, আর শার্ট পরিহিত অল্প বয়সী শ্বেত বর্নের এক রমনী তার সামনে এসে আহাজারি করছে,কাদঁছে। মেয়েটির চোখ কান্নামিশ্রিত।শোকের ছায়া মুখমন্ডল জুরে। মেয়েটির কপালের একাংশ জুড়ে ছুপ ছুপ লালাভ রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো। মেয়েটি এইবার ফোলা ফোলা চোখ আর ফ্যাকাশে চেহারা নিয়ে ভাঙা গলায় বললো,
-প্লিজ সেইভ মাই হাসবেন্ড ডক্টর। সেইভ মাই লাভ। ইট টোটাল্লি ডিপেন্ডস অন ইউ। আই উইল ওয়েট ফর হিম পেশিয়েন্টলি।
নাঈম কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে দেখলো এক মৃত্যুপথযাত্রীর প্রেয়সীকে। সে তাকে আশ্বস্ত করলো যে সে চেষ্টা করবে বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। মানুষকে সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট আয়ু দিয়ে পাঠায় যা কেউ চাইলেও বদলাতে পারে না। কিন্তু এই শরীরের আগেই অনেকের আত্মার মৃত্যু ঘটে যায়। নাঈমের বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস। অপারেশন শুরু হলো। কিন্তু বাইরে পেশেন্ট এর বিবাহিতা স্ত্রী হাউমাউ করে কাদঁছে। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে।
পাশে পাতানো বেঞ্চে বসে আছে সাদাফ এশা৷ মেয়েটিকে তাদের বড্ড চেনা চেনা মনে হচ্ছে। এতোক্ষণে তারা বুঝে গিয়েছে আগন্তুক ছেলেটির ফোন থেকে ❝বউ পাখি❞ দিয়ে সেইভ করা নম্বরটি এই মেয়েটিরই ছিলো। সাদাফ ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেই তার আত্নীয়দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। ছেলেটির ফোনে সর্ব প্রথম এই নম্বরটি পাওয়ায় সাদাফ এই নম্বরেই ডায়াল করে। সাদাফের হসপিটালের এড্রেস বলতে দেরি হয়েছে মেয়েটির ছুটে আসতে দেরি হয়নি। মেয়েটির হাউমাউ করে কান্না দেখে সাদাফ এশার দিকে তাকায়৷ এশার চোখ ছলছল করে উঠছে। এশা কাঁপা গলায় বলে,
-এবার ভাবো একটা বছর আমি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছি? কতটা ছটফট করেছি?
সাদাফ কোনো কথা না বলে এশার হাতটা শক্ত করে ধরে। এশা সাদাফের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যায় ক্রন্দনরত মেয়েটির দিকে। মেয়েটির সামনে বসতেই এশা অবাক হয়ে যায়। তার কারণ মেয়েটি আর কেউ না। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী তানহা। এশার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সাদাফের অসুস্থতায় একটা বছর এশা কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারেনি। তারপর সাদাফ সুস্থ হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করে ও তানহার সাথে আর যোগাযোগ হয়ে উঠে নি এশার। এশা কাঁপা হাতে তানহার শরীর স্পর্শ করে। তানহা সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। কান্না থামিয়ে পলকহীন চেয়ে থাকে। নিরবতা ভেঙে এশা তানহার নাম ধরে বলে উঠে,
-তানতা!
তানহা এশাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে আবারো। এশার মুখে তানহার নাম শুনে সাদাফ এগিয়ে আসে তাদের দিকে। এশা তানহাকে ধরে নিয়ে পাশের বেঞ্চে বসায়। এতো বছর পর বন্ধুর সাথে দেখা হয়েও খুশি হতে পারছে না তানহা। কারণ তার ভালোবাসার মানুষটি অসুস্থ। তবে বিদেশের মাটিতে এমন বিপদে বন্ধুকে পাশে পেয়ে ভেতরে ভেতরে শক্তি পাচ্ছে তানহা।
___________________
অপারেশন শেষ হলো দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর। দরজা খুলে করিডোরে আসতেই দেখলো মেয়েটি বেঞ্চে মাথা এলিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে চোখে এক সমুদ্র উৎকণ্ঠা নিয়ে। সেই সাথে তাকিয়ে আছে আরো দুজন মানব- মানবী। ক্রন্দনরত মেয়েটি যেন অস্থির চিত্তে দৌঁড়ে এলো। উৎসুক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। নাঈম চেয়ে রইলো শূণ্য দৃষ্টিত আর অধরে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে জবাব দিলো,
– ইউর ওয়েট ইজ ওভার।হি ইস টোটাল্লি ফাইন।অপারেশন ইস সাকসেসফুল।ইউ ক্যান মিট হিম হুয়েন হি রিগেইনস হিজ সেন্স।নাউ হি ইজ ইন অভজারভেশন।
(আপনার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।আপনি তার জ্ঞান ফিরলেই দেখা করতে পারবেন।এখন তিনি আমাদের অবজারভেশনে আছেন)
তানহার খরস্রোতা বুকটা যেন প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো। সেই সাথে সাদাফ এশার ঠোঁটে ফুটে উঠলো কিঞ্চিত হাসি। তানহার অধর রংধনুর ন্যায় হাসিতে ভরে উঠলো। মন ভরে দোয়া করলো। আর স্নিগ্ধ কন্ঠে বললো,
-ইউ গেভ মাই লাই লাইফ ব্যাক টুডে।ইফ ইউ নিড সামথিং ফ্রম মি জাস্ট রিমেমবার মি ওয়ান্স।
(যদি কখনো আমার প্রয়োজন পড়ে যে কোন দরকারে আমাকে একবার স্মরণ করবেন। আপনি আজ আমার জীবন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।)
চলবে…..