#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২৩
#আয়েশা_আক্তার
ঢাকা শহরে আজ সবচেয়ে বড় কনসার্ট হতে চলেছে। এখানে প্রধান অতিথি হয়ে আসছে প্রবাসী বাঙালি নামকরা বিজনেস ম্যান। সাদাফের গান আজ তার মন ছুঁয়ে গেলেই সাদাফকে তিনি কানাডায় কনসার্টে গান গাওয়ার অফার করবে। সাদাফ এ পর্যন্ত তিনটি গান গেয়ে শেষ করলো। প্রবাসী অতিথি’র অনুরোধে সাদাফ এবার চতুর্থ গানটি শুরু করলো এবং এটিই সাদাফের আজকের গাওয়া বাংলা গান। বিদেশে অনেক বছর ধরে থিয়েটার নিয়ে কাজ করছে বলে নিজের দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে ভুলে যাননি তিনি। তাই তো আজ সাদাফকে নিজের দেশের গান গাইতে বললেন তিনি।
❝ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।
তোমার হাওয়ায় করেছি যে দান।
আমার আপন হারা প্রান, আমার বাধন ছেড়া প্রান
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান…❞
সাদাফ গান শুরু করতেই আবারো চারপাশে হাত তালি এবং হইহই ধ্বনি উচ্চারিত হলো। জনগন সাদাফের গান বেশ পছন্দ করছে। সেটা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সামনে দর্শকদের ভীরে পিংক কালারের জামদানী শাড়ি পরিহিতা নারীটির দিকে সাদাফের চোখ যেতেই তার ওষ্ঠ যুগল হাসিতে প্রসারিত হয়। হাসি ফোটে উঠে দর্শকদের ভীরে বসে থাকা নারীটি’র ঠোঁটেও। একে অপরের চোখে চোখ রেখে কথা বলে চলেছে। সাদাফ হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠেই গেয়ে চলেছে,
❝পূর্নিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনী গন্ধায়
রূপসাগরের পাড়ের পানে উদাসী মন ধায়।
পূর্ণিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনী গন্ধায়
রূপসাগরের পাড়ের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাতির পাখা,
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখে রঙিন স্বপ্ন মাখা।
তোমার প্রজাতির পাখা,
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখে রঙিন স্বপ্ন মাখা।
তোমার চাঁদের আলোয়….
মেলায় আমার দুঃখ সুখের সকল অবসান।❞
এশা সাদাফের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে, লোকটা এতোটা নিখুঁত ভাবে কি করে গায়। কই আগে তো আমার কারো গান শুনতে এতো ভালো লাগতো না। তাহলে এই লোকটার গান কেন আমায় এতোটা মুগ্ধ করে? সবই এই ভালোবাসা নামক অনুভূতির যাদু! আমরা যাকে ভালোবাসি তার স্বভাব থেকে শুরু করে তাকে কেন্দ্র করে রয়েছে এমন প্রতিটি ক্ষেত্রকেই আমরা ভালোবাসতে শুরু করি। তাই এমনটা হচ্ছে আমার। তবে যাই বলুন, আপনি কিন্তু দারুণ গান, আমার শ্যাম পুরুষ।
চারপাশে জনগনের চি ৎ কা রে এশার ধ্যান ভাঙে। সবাই সাদাফ সাদাফ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপাচ্ছে। সাদাফ স্টেজ থেকে নেমে এশেই এশার পাশে চেয়ারে বসে। এশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-অমন ভাবে চেয়ে কি দেখছিলে?
-কই?
এশা নির্লিপ্ত ভাবে তাকাতেই সাদাফ এশার নিকট আরো কিছুটা এগিয়ে যায়। বলে উঠে,
-এভাবে তাকিও না, খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!
-ইশ! অসভ্য।
-বিশ্বাস করো, স্টেজে আমি যখন গাইছিলাম তখন তুমি আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলে, ওভাবে আমি তোমার দিকে তাকালে তোমারও অসভ্য হতে ইচ্ছে করবেে।
-আমি তোমার মতো অসভ্য নই। আর তুমি ও আমার দিকে চেয়েছিলে আমি দেখেছি।
সাদাফ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই একজন লোক এসে মাইক হাতে নিয়ে প্রতিযোগীতায় বিজয়ী’র নাম ঘোষণা করে। সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। সাদাফ এশাও তার ব্যাতিক্রম নয়। বিজয়ীর তালিকায় প্রথম নামটি এনাউন্সমেন্ট হতেই সবার আগে এশা জোরে জোরে হাত তালি বাজাতে শুরু করে। তার সাথে সবাই জোরে জোরে কর তালিতে চারপাশ মুখরিত করে তুলে। সাথে কিছু জনগণ সাদাফের নাম নিয়ে উচ্চ ধ্বনি করতে থাকে। সাদাফকে ম্যাডেল পড়িয়ে দেয় প্রবাসী অতিথি। সেই সাথে সাদাফের নিক অফার রাখে কানাডার কনসার্টে যেনো সাদাফ অবশ্যই গাইতে যায়। সাদাফও হেসে জবাব দেয়, সে অবশ্যই কানাডার কর্নসার্টে অংশ নিবে।
______________________
অনুষ্ঠান শেষে সবাই যে যার গন্তব্য স্থলে রওয়ানা দিয়েছে। সাদাফ আর এশাও ছুটে চলেছে নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে আছে সাদাফের বাবার ড্রাইভার রমিজ আলি। রমিজ আলি সামনে বসে গাড়ি চালাচ্ছে। পেছনে সাদাফ এশা বসে আছে। এশা মন খারাপ করে বাইরে তাকিয়ে আছে। যেটা সাদাফের একদমই ভালো লাগছে না। সাদাফ এশার কাঁধে হাত রাখে। এশা ঘুরে সাদাফের দিকে চেয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটায়। সাদাফ এশাকে একটানে নিজের কাছে এনে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে?
-কিছু না।
-মন খারাপ?
-না, ভয় করছে।
-কিসের ভয়?
-যদি তোমায় হারিয়ে ফেলি। আমার ভাগ্যে যদি এতো সুখ না থাকে সেই ভয়৷ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
-নেগেটিভ কথা কেন ভাবছো পাগলী? বেঁচে থাকতে কেউ তোমায় আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। আল্লাহ ব্যাতিত কারো শক্তি নেই তোমার থেকে আমায় কেড়ে নেওয়ার মতো।
ড্রাইভার তখন পেছনে ফিরে যুগল প্রেমিক- প্রেমীকার দিকে চেয়ে প্রশান্তির হাসি হাসে। সামনে তাকাতেই বিকট এক শব্দে চারপাশ থমকে যায়। হ্যাঁ, সাদাফদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়।ড্রাইভার যখন সাদাফ এশার কথা শুনে পেছনে তাকায় তখনই তার অগোচরে বড়সড় এক ট্রাক এগিয়ে আসে তাদের দিকে। সামনে তাকাতেই চোখের পলকে তাদের ছোট্র গাড়ির উপর দিয়ে চলে যায় ট্রাকটি। নিমিষেই রমিজ আলির পা দুটো গুঁড়ো হয়ে যায়। ব্যথায় আর্তনাদ করার সময় টুকুও পায়নি সে। তার আগেই প্রাণ পাখি দেহ থেকে বেরিয়ে উড়ে যায়।
একে অপরকে জড়িয়ে থাকা সাদাফ- এশা ছিটকে পড়ে দু’জন দু’দিকে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঢুকে যায় সাদাফ এশার শরীর ভেদ করে। দু’জনেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রচন্ড ব্যথা পায়। রক্ত ক্ষরণ হতে শুরু করে তাদের শরীর দিয়ে।
স্থানীয় লোকজন ট্রাকটাকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তারা এগিয়ে এসে সাদাফ এশাকে নিয়ে নিকটস্থ হসপিটালে এডমিট করায়। যদিও এই সমস্ত ঝামেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে চলতে চায়। তবে রকস্টার সাদাফকে অনেকেই চেনে। তার গান অনেকেই পছন্দ করে। তাই সাদাফের আইডি কার্ড দেখে নিমিষেই জনগণ সাদাফকে চিনে ফেলে। আর ডাক্তাররাও চেনে। তাই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করে এবং সাদাফের ফোন থেকে তার বাবা-মা এর ফোন নম্বর কালেক্ট করে তারা বাসায় জানিয়ে দেয়। এশার বাবা-মা কেউ জানানো হয়।
চলবে….