#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২০
#আয়েশা_আক্তার
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হৃদয় মোহনা বেরিয়ে যায় গ্রাম থেকে। শাঁ শাঁ গতিতে হৃদয়ের বাইক ছুটছে। সেই সাথে মোহনার ছোঁয়া হৃদয়ের মনে এক অদ্ভুত ঝর তুলছে। মোহনা কাল যতটা অস্বস্তি নিয়ে হৃদয়ের সাথে এসেছিলো আজ ততটা অস্বস্তিতে নেই। বরং আজ হৃদয় বলার আগেই সে হৃদয় কোমড় জড়িয়ে ধরে বসেছে। আজকে মোহনার কাছে হৃদয়ের সঙ্গ যেন দিগুণ পরিমাণে ভালো লাগছে। হৃদয় একটা কাজী অফিসের সামনে গিয়ে বাইক থামায়। মোহনা সামনে চেয়ে লাবণ্যকে দেখে অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তার মুখ অটোম্যাটিকেলি হা হয়ে যায়। মোহনাকে হা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাবণ্য এগিয়ে আসে। মোহনার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে? তুই ঠিক আছিস?
মোহনা কোনো জবাব না দিয়ে লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে লাবণ্যও। কিছুক্ষণ দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাটায়। তারপর মোহনা আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
-এটা কোথায়?
-আমরা সবাই এখানে কেন এসেছি?
এশা এগিয়ে এসে হেসে বলে উঠে, -এটা কাজী অফিস মোহপু।
– কাজী অফিসে কেন এসেছি? লাবণ্যর বিয়ে তো আজ বাড়িতেই হবে। তাহলে? কিরে লাবু, তুই কি ভাইয়াকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করার প্ল্যান করেছিস? (মোহনা বিস্ময় নিয়ে কথা গুলো বলে উঠে)
মোহনার কথা শুনে সবাই হুহা করে হেসে উঠে। এমনকি লাবণ্য নিজেও হেসে ফেলে। হৃদয় মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তুই এতোটা বোকা কবে থেকে হলি মোহ?
-ওমা আমি আবার কি করলাম?
-লাবণ্য কেন কাজী অফিসে এসে বিয়ে করতে যাবে? বিয়েটা আমাদের। কারণ কালকে হুজুররা আমাদের বিয়ে পড়িয়েছেন ঠিকই। তবে আমাদের বিয়ে হয়েছে তার কোন প্রমাণ আমরা কাউকে দেখাতে পারবো না। তাই এখানে আবার বিয়ে করে কাবিননামা সাথে নিয়ে যাবো।
নিজের বিয়ের কথা শুনে লাবণ্য চুপ হয়ে যায়। সাদাফ তাড়া দিয়ে বলে,
-এবার চল, কাজী সাহেব অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে তোদের জন্য। আর লাবণ্যকেও তো বাসায় সবাই খুঁজাখুঁজি শুরু করবে।
সাদাফের কথামতো সবাই কাজী অফিসের ভেতরে চলে যায়। কাবিননামায় স্বাক্ষর করার সময় মোহনার মনে হলো তার হাত ভীষণ কাঁপছে। মোহনা সবার দিকে এক নজর তাকায়। লাবণ্য মোহনাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে?
মোহনা ডানে বামে মাথা নাড়ায়। তারপর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মনে মনে আল্লাহর নাম নিয়ে সাইন করে দেয়। সাইন করে হৃদয়ও। কাজী অফিস থেকে বের হয়ে সবাই লাবণ্যদের বাসায় চলে যায়। বাসায় পৌঁছাতেই বিউটি পার্লার থেকে আসা মেয়েরা ঘিরে ধরে লাবণ্যকে। ভাগ্যিস লাবণ্য আগেই গোসল সেরে নিয়েছিলো। লাবণ্যর রুমে গিয়ে কালকের পড়া শাড়ি খুলে অন্য একটা জামা পড়ে নেয় মোহনা। জীবনের প্রথম এতোটা সময় মোহনা শাড়ি পড়েছিলো। হঠাৎ করেই মোহনার মনে পড়ে যায় বন্ধুত্ব শুরু হওয়ার বছরে লাবণ্য প্রায়ই বলতো তারা একই দিনে বিয়ে করবে। কাকতালীয় ভাবে লাবণ্য’র আগেই মোহনার বিয়েটা হয়ে গেলো। তা-ও একই দিনে। লাবণ্যকে সাজাচ্ছে পার্লার থেকে আসা একটা মেয়ে। লাবণ্য পিটপিট করে চোখ খুলে মোহনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটাকে থামতে বলে। মেয়েটা সাজানো বন্ধ করে থামতেই লাবণ্য বলে উঠে,
-ওই মোহ, গোসল করে আয়। আমাকে সাজানো শেষ হলেই তুই বসে পড়বি। বুঝছিস?
-আমি সেজে কি করবো? তোর বিয়ে তুই সাজ।
– তোর ও তো আজই বিয়ে হলো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় বলছি। আর এদিকে একটু শোন তো।
মোহনা লাবণ্যর দিকে এগিয়ে গিয়ে একদম সামনে এসে দাঁড়ায়। লাবণ্য মোহনার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-আমার বন্ধুটার বুঝি তার বউকে বধু সাজে দেখতে ইচ্ছে করে না? আমার বন্ধু কি বলছি হৃদয় তো তোরও বন্ধু। বধু সেজে আজ বন্ধু প্লাস তোর স্বামী মহোদয়কে জিজ্ঞেস করবি, ওহে প্রাণেশ্বর বলো তো আমায় কেমন লাগছে।
-ধেত, তুই না…
মোহনা লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে চলে যায়। লাবণ্য হেসে ফেলে।
_____________________
লাবণ্য’র সাজ শেষ হওয়ার পরই লাবণ্য পার্লার থেকে আসা মেয়েটাকে মোহনাকে সাজাতে বলে দেয়। কিন্তু লাবণ্য কিছুতেই সাজবে না। অনেক জোর করার পর শুধু শাড়ি পড়তে রাজী হয়। লাবণ্য মোহনাকে একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-এটা হৃদয় তোকে গিফট দিয়েছে। আর তুই আজ এটাই পড়বি।
-আমাকে গিফট দিয়েছে? এটা না তুই সেদিন শপিং করতে গিয়ে কিনে আনলি?
-হ্যাঁ, সেদিন এটা হৃদয়ই পছন্দ করেছে তোর জন্য। আর এই শাড়ির দামও হৃদয় দিয়েছে। আমাকে বলেছে আমি যেনো পড়ে তোকে দিয়ে দিই। ছেলেটা সেই প্রথম দিন থেকেই তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে মোহ। আর তুই নিজেও ওকে ভালোবেসেও ইগনোর করে গেছিস। সৃষ্টি কর্তা হৃদয়ের জন্যই তোকে সৃষ্টি করেছে। তাই তো তোরা এতোকিছুর পরও এক হয়ে গেলি।
মোহনার চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। লাবণ্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবণ্যর ফোন বেজে ওঠে। লাবণ্য মোহনাকে শাড়ি পড়তে ইশারা করে বারান্দায় চলে যায়।
মেহেদী ভিডিও কল করেছে। লাবণ্য কল রিসিভ করতেই মেহেদী যেনো একটা হার্টবিট মিস করে ফেলে। সে অপলক চেয়ে থাকে বধু সাজে ফোন স্ক্রিনে ভেসে উঠা মুখশ্রী’র দিকে। মেহেদীর তাকানো দেখে লাবণ্য হেসে ফেলে।হেসে জিজ্ঞেস করে,
-কি দেখো?
-প্রেয়সীকে।
-আগে কখনো দেখোনি?
-দেখেছি তো তবে আজ একদম রাঙা বউ লাগছে।
লাবণ্য লজ্জা পেয়ে ফোন স্ক্রিন থেকে চোখ সরায়। তার গালে একছটা লজ্জার লাল আভা এসে ছুঁয়ে দেয়। মেহেদী লজ্জাবতী লাবণ্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহেদী ছোট বোন ক্যামেরার সামনে চলে আসে। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
-ভাবি, তোমাকে এত্তো বেশি সুন্দর লাগছে কি বলবো? আমার ভাবি সবচেয়ে কিউট ভাবি।
লাবণ্য সামনে তাকিয়ে মারিয়াকে দেখে হেসে জবাব দেয়,
-তুমি আমার থেকেও অনেক অনেক বেশি কিউট। যার ননদিনী এতো কিউট তার ভাবি তো একটু কিউট হবেই বলো?
-উহু, তুমি বেশি কিউট। দেখছো না ভাইয়া তোমার থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না। আমরা তোমাদের বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি। কিন্তু ভাইয়া তোমাকে না দেখে থাকতেই পারছে না। তাইতো গাড়িতে বসে ভিডিও কল করেছে। ঠিক না ভাইয়া?
মেহেদী বোনের মাথায় হালকা চপড় দিয়ে বলে, খালি পাকা পাকা কথা? সর তো। আমার বউকে দেখতে দে।
মারিয়া মেহেদীর কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হয়। লাবণ্য লজ্জা পায়। সে মেহেদীকে বলে,
-ওকে বকছো কেন? আর গাড়িতে বসে এসব কি? ফোন রাখো।
-রাখতে বলছো? ওকে আমি এসে তারপর শাস্তি দিবো।
বলেই কল কাটে মেহেদী। লাবণ্য বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে মোহনা শাড়ি পড়ে তৈ হয়ে নিয়েছে। সে মোহনার কাছে এসে বলে,
-আজ হৃদয় শেষ মোহ। তোকে যা সুন্দর লাগছে। আমারই তো চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
-আর মেহেদী ভাইয়ার অবস্থা কি হবে? তোকে বুঝি কম সুন্দর লাগছে?
পার্লার থেকে আসা মেয়েটা হেসে ফেলে বলে,
-আপনাদের দুজনকেই সুন্দর লাগছে ম্যাম।
কথাটা বলেই মেয়েটি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। লাবণ্য আর মোহনা হেসে ফেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। লাবণ্য বলে উঠে,
-তোর মনে আছে? আমি এক সময় বলতাম আমরা দু’জন একসাথে বিয়ে করবো। দেখছিস আজ একসাথেই আমাদের দুজনের বিয়ে হলো।
ঠিক তখনই দুজনেই শুনতে পেলো, বাইরে কারা যেন ❝ বর এসেছে, বর এসেছে ধ্বনি তুলেছে।
চলবে…
#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_২১
#আয়েশা_আক্তার
লাবণ্য আর মেহেদী’র বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এবার বিদায়ের পালা। লাবণ্য এক এক করে সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানায়। বাবা-মা ভাইকে ছেড়ে চলে যেতে লাবণ্য’র বুকে তীরের ফলার মতো আঘাত অনুভব হচ্ছে। সবশেষে লাবণ্য বন্ধুদের সামনে এলো। মোহনার সামনে এসেই জড়িয়ে ধরে লাবণ্য। কেঁদে উঠে হু হু করে। কাঁদে মোহনাও। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে উঠে,
-সাবধানে থাকিস মোহ। হৃদয়ের বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিস প্লিজ। আর কোনো সমস্যা হলে হৃদয়কে জানাবি। একদম হ্যাজিটেশন করবি না।
লাবণ্য সাদাফদের দিকে চেয়ে বলে, -ভালো থাকিস তোরা। মোহ’র খেয়াল রাখিস। এশাকে সুখে রাখিস সাদাফ।
তারপর কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।
_________________
লাবণ্য চলে যেতেই মোহনাকে নিয়ে হৃদয় নিজের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। মোহনার বুক ধুকপুক করছে ভয়ে। হৃদয়ের বাবা-মা কি আদৌও মেনে নেবে মোহনাকে? এমন হাজারো ভাবনা বারবার মোহনার মাথায় উঁকি দিচ্ছে। ভয় হচ্ছে হৃদয়েরও। কিন্তু হৃদয় নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। সাদাফ এশাকে বাড়িতে দিয়ে এসে নিজেও হৃদয়ের সাথে যাচ্ছে। প্রীতম আর অমিতও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সাদাফ ওদেরকে চলে যেতে বলায় তারা চলে যায়।
ডোর বেলের শব্দ শুনে রাজীব হোসাইন এসে দরজা খুলে দেয়। রাজীব হোসাইন কয়েকবার হৃদয়ের বন্ধুদের দেখেছে। তাই তিনি সহজেই মোহনা এবং সাদফকে চিনতে পারলেন। সাদাফ এবং মোহনা সালাম দিলে তিনি হাসি মুখে সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে আসতে বলেন। ভেতরে প্রবেশ করে মোহনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাফ এবং হৃদয় রাজীব আহমেদের সামনের সোফায় বসে। রাজীব আহমেদ মোহনার দিকে চেয়ে হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-কি ব্যাপার মা? তুমিও বসো।
ড্রয়িং রুমে একাধিক মানুষের কথার শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন রাহেলা বেগম। রাহেলা বেগমকে দেখতে পেয়ে সালাম দেয় মোহনা৷ রাহেলা বেগম সালামের জবাব নিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে,
-তোমরা কখন এলে?
-এইতো কিছুক্ষণ হলো। (সাদাফ)
-রাহেলা সবার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো। কতগুলো দিন পর বাচ্চাগুলো এসেছে! (রাজীব)
রাহেলা বেগম স্বামীর কথা মান্য করা স্বরূপ রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে যাবে ঠিক তখনই হৃদয় বাঁধা দিয়ে বলে উঠে,
-দাঁড়াও মা।
ছেলের কথা শুনে রাহেলা জিজ্ঞেসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়ায়। ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে তাকায় রাজীব আহমেদ ও। মোহনার শরীর যেনো কাঁপতে শুরু করেছে। সে নিচের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আল্লাহকে ডেকে চলেছে। হৃদয় নিজের ওষ্ঠ যোগল ভিজিয়ে বড় করে নিশ্বাস নেয়। তারপর বলতে শুরু করে,
– আমার আর মোহ’র বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
রাজীব আহমেদ এবং রাহেলা বেগম যেনো নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। অটোমেটিকেলি তাদের চোখ জোড়া বড় হয়ে যায় খানিকটা। রাহেলা বেগম অস্ফুটে উচ্চারণ করে,
-মানে? কি বলছিস তুই হৃদয়?
-হ্যাঁ, মা আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
-বিয়ে যদি করতেই চাও তাহলে আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করোনি কেন তুমি? এটা তুমি ঠিক করো নি হৃদয়। (রাজীব)
বাবার কথার জবাবে কিছু বলতে যাবে তখন সাদাফ চোখে ইশারা করে চুপ হয়ে যেতে। তাই হৃদয় আর কিছু বলে না। সাদাফ বলে উঠে,
-আসলে আঙ্কেল বিয়েটা ওদের হাতে ছিলো না। এক্সিডেন্টলি ওদের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।
-এক্সিডেন্টলি মানে? (রাজীব)
সাদাফ মোহনাদের গ্রামে হয়ে যাওয়া ঘটনা খুলে বলে সবাইকে। সবটা শোনার পরও রাহেলা বেগমের মন গললো না। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার অনেক ইচ্ছে ছিলো। স্বামী রাজীব হোসাইন একজন সরকারি কলেজের প্রফেসর। স্বামীর ঘরে এসে সংসার সামলাতে সামলাতেই তার জীবন শেষ প্রায়। তার ইচ্ছে টিভি সিরিয়ালে যেমন বড়লোক বাড়ির কর্তৃ থাকে তেমন তিনিও একদিন হবেন। তারও একদিন গোটা কয়েক কাজের লোক থাকবে। সে পায়ের উপর পা তুলে খাবেন, টিভি দেখবেন এবং সময়মতো ঘুমাবেন। স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরি করা স্বামী তাকে কাজের লোক রেখে দিতে পারে নি৷ উল্টো, শশুর -শাশুড়ী, ননদের পড়াশোনা বিয়ে সব তার স্বানীর টাকাতেই হয়েছে বলে সংসারে টানাপোড়েন না থাকলেও কাজের লোক রাখার মতো টাকা তাদের ছিলো না। তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে ভালো চাকরি করবে তারপর একটা চাকরি করা মেয়েকেই ছেলের বউ করবে। ছেলে – ছেলের বউ দু’হাতে ইনকাম করে এনে তার কাছে দিবে আর তিনি ইচ্ছে মতো খরচ করবে, কাজের লোক রাখবে। সব শখ আহ্লাদ পূরণ করবে। কিন্তু এসবের কিছুই হতে দিলো না হৃদয়। তিনি মনে মনে রাগে ফুঁসছে। তবে স্বামীর প্রতিক্রিয়া দেখার আশায় চুপ করে আছে।
মোহনার শান্ত স্বভাবের জন্য রাজীব আহমেদের মোহনাকে ভালো লাগে। পানিতে ডুবে মা রা যাওয়ার হৃদয়ের বোন হৃদিতাও ছিলো এমন শান্ত স্বভাবের। তাছাড়া রাজীব আহমেদের কাছে মনে হয় মোহনা এবং হৃদিতার চেহারার মধ্যেও বেশ কিছু মিল আছে। এর আগে যতবার তিনি মোহনাকে দেখেছে ততবার মনে হয়েছে এটাই যেন তার হৃদিতা। তাই আজ মোহনার সাথে ছেলের সম্পর্কের কথা শুনে প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও বিস্তারিত শোনার পর মনে হচ্ছে, সৃষ্টি কর্তাই হয়তো তার হৃদিতাকে মেহনার স্বরূপ ফিরিয়ে দিয়েছে। সে কিছুক্ষণ বসে চিন্তা ভাবনা করে জবাব দিলেন,
-বিয়ে যেহেতু হয়ে গিয়েছে তখন তো আর কিছু করার নেই। হৃদয়ের মা, তুমি সবাইকে বলে দাও আমরা আবার ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে হৃদয় মোহনার বিয়ে দিবো। আমি বরং বাজারে যাই। মিষ্টি নিয়ে আসি। ছেলের বিয়ে বলে কথা সবাইকে তো মিষ্টি মুখ করাতে হবে।
এতোক্ষণে যেন মোহনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। মনে মনে, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। রাজীব সাহেবের সাথে হৃদয়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায় সাদাফও।
স্বামীর এমন খুশি হওয়া দেখে রাহেলা বেগমের মন খারাপ আরো দিগুণ বেড়ে যায়। রাজীব হোসাইন বেরিয়ে যেতেই তিনি হৃদয়ের সামনে গিয়ে বলে উঠে,
-দুপুরে খেয়ে এসেছেন নাকি টেবিলে খাবার দিবো?
মায়ের এমন কথা শুনে হৃদয় চমকে তাকায়। দেখতে পায় তার মায়ের মুখে ছড়িয়ে আছে হিংস্র মনোভাব। হৃদয় কোমল সুরে বলে,
-এভাবে কথা বলছো কেন মা?
-আমায় মা বলে ডাকবেন না। আমি আপনার মা নই। মা হলে বিয়ে করার আগে একবার মায়ের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ অন্তত করতেন।
রাহেলা বেগমের অভিমান বুঝতে পেরে হৃদয় মা’কে জড়িয়ে ধরে।
-অভিমান করো না মা। সবটা তো শুনলেই। আর মোহনার সাথে আমার বিয়ে না হলে ওকে অনেক অপমানের স্বীকার হতে হতো মা। আমি সেটা কিভাবে হতে দেই বলো? আমি মোহকে ভালোবাসি।
চলবে…