প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১৮+১৯

0
522

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৮
#আয়েশা_আক্তার

সাদাফ এশা এক প্রকার দৌড়ে ছাঁদ থেকে নিচে আসে। ওরা নিচে আসতে আসতে প্রীতম, অমিত, হৃদয়ও সেখানে এসে হাজির হয়েছে। সবাই মোহনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। লাবণ্য মোহনাকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্রমাগত। কিন্তু মোহনা কেঁদেই চলেছে। লাবণ্য এবার মোহনাকে রেখে সাদাফের দিকে এগিয়ে আসে। তারপর বলতে শুরু করে,

-মোহ’র বোন কল করেছিলো ওর মা নাকি অনেক অসুস্থ। তোরা কেউ মোহ’কে নিয়ে যেতে পারবি?

-আমরা সবাই যাবো তার আগে ওকে কান্না থামাতে বল।(হৃদয়)

-তোদের কাউকে যেতে হবে না। তোরা আনন্দ কর। আমি একাই যেতে পারবো। (মোহনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো।)

-বললেই হলো একা যেতে পারবি? তোরা এখানে থাক। আমি বরং মোহ’কে নিয়ে ওর গ্রামে যাই। যদি বেশি গুরুতর অবস্থা হয় তাহলে তো আন্টিকে শহরে নিয়ে আসতে হবে।

কথাগুলো বলে সাদাফ এশার দিকে তাকায়। এশার হাত ধরে বলে,

-সাবধানে থেকো, আর অনুষ্ঠান শেষে হৃদয়কে নিয়ে বাসায় চলে যেও। খবরদার একা যাবে না।

-তারচেয়ে ভালো তুই বরং এদিকটায় থাক। আমিই না-হয় মোহ’কে গ্রামে নিয়ে যাই? (হৃদয়)

-হ্যাঁ, এটাই ভালো হবে। সাদাফ তুই এখানেই থাক। এতো বড় করে আয়োজন করা না হলে আমিই চলে যেতাম মোহ’র সাথে। কিন্তু এখন সবদিক তো সামাল দিতে হবে বল? হৃদয় আর দেরি করিস না। এখনই বেরিয়ে পর সন্ধ্যা ফুরিয়ে যাচ্ছে।

লাবণ্য’র কথা মতো হৃদয় মোহনাকে নিয়ে বেরোয় গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ভয়ে মোহনার শরীর কাঁপছে তার মায়ের কোনো বিপদ হলো না তো?

মোহনা হৃদয়ের বাইকে বসেছে। কিন্তু ও যেভাবে বসেছে হৃদয় নিশ্চিত মোহনা পড়ে যাবে। তাই হঠাৎ করেই ব্র্যাক করে বাইকে থামিয়ে দেয় হৃদয়। মোহনা জিজ্ঞেসু দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই হৃদয় বলে উঠে,

-এমনিতেই পাটকাঠির মতো শুকনা শরীর তার উপর এভাবে বসলে তো তোকে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

হৃদয়ের কথা বোধগম্য হয়না মোহনার। সে ভ্যাবলার মতো চেয়ে রয় শুধু। হৃদয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-এবার ধরে বসবি, নয়তো পড়ে যাবি। আর তুই পড়ে গেলে কিন্তু আর কেউ তোকে বিয়ে করবে না। হাত পা ভেঙে ঘরে বসে থাকতে হবে।

-দিবো এক চড়, পড়ে যাবো কেন তুই আছিস না?

-আমি তো আছিই। এক কাজ কর সারা জীবনের জন্য আমায় তোর নামে লিখে নে, প্রমিজ কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। প্রয়োজনে কোলে করে রাখবো যেন পড়ে না যাস।

-কি বিরবির করছিস?উঠ, এবার ধরেই বসবো।

-হ্যাঁ, ছাড়বি না একদম।

-আচ্ছা।

হৃদয় বাইক স্টার্ট দিলে মোহনা হৃদয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে। হৃদয় মনে মনে খুশি হয়। মোহনাও ভালো লাগা অনুভব করে।
_____________________

গ্রামে,
মোহনার জন্য একটা ভালো সমন্ধ পেয়েছে মোহনার মা মনোয়ারা বেগম। ছেলে বিদেশে থাকে, এক টাকাও যৌতুক দিতে হবে না। সাথে মোহনার ছোট বোন মিথিলাকেও পড়াশোনা করাবে তারা। আর পড়াশোনা শেষে তারাই ভালো ঘর দেখে মিথিলার বিয়ে দিয়ে দিবে। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? তাইতো মনোয়ারা নিজের অসুস্থতার নাম করে মেয়েকে ডেকে পাঠালো। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে এসেছে। গ্রামে রাত আটটা মানেই অনেক কিছু। ঘড়ির কাটা আটটার ঘরে যেতেই ছেলের এক আত্নীয় বলে উঠে,

-এখনো তো মাইয়ার আসার নাম নাই। মাইয়া আইবো তো?শহরের মাইয়াগো আমার দুই চোখে সহ্য হয় না। তুমি যে কি দেইখা এমন শহরে পড়ালেখা করা মাইয়ার লগে মিরাজের বিয়া ঠিক করলা ভাবি আমি তো তাই বুঝি না।

-আমি না, তোর ভাইয়ের কি হইছে কেডা জানে? এ মাইয়ারেই সে ছেলের বউ করবো। আমার কোনো কথা তো শুনে না। আমার পোলার মতে পোলা সারা গ্রাম খুঁইজা পাওন যাইবো? আমার এমন সোনার টুকরা পোলার লাইগা তোর ভাই এমন হাভাতে মাইয়া যে কেন পছন্দ করলো সেই জানে।

মনোয়ারা বেগমকে দেখতেই তারা নিজেদের মধ্যে কথা থামিয়ে দিয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আপনের মাইয়া আইবো তো?

-আইবো না কেন আপা? আমার মাইয়া আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চইলা আইবো। দেখবেন ভাইজান কাজি নিয়া আসার আগে আমাগো মোহনা আইসা হাজির।

-আচ্ছা আপা একটা কথা কই?

-হুম কন? অনুমতি লওয়ার কিছু নাই।

-শহরের মাইয়ারা তো ভালা না আপা। পড়াশোনার নাম কইরা পোলাগো লগে মাখামাখি কইরা বেড়ায়। শহরে কেন দিলেন মাইয়ারে যাইতে?

এমন প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পরে মনোয়ারা। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে উঠে,

-আমার মাইয়া এমন না। আমার মাইয়ার একটা ছেলে বন্ধু পর্যন্ত নাই। মাইয়া দেখলেই বুঝবার পারবেন আমার মাইয়া কেমন? মাইয়ার বাপের স্বপ্ন ছিলো ঢাকায় পড়াশোনা করাইবো৷ সে নাই বইলা তার ইচ্ছে দাম আমার মাইয়া ভুলে নাই। বাপের স্বপ্ন পূরণের জন্যই শহরে পড়াশোনা করতে গেছে।

-ঢং, মাইয়া মানুষের আবার স্বপ্ন?

-কেন আন্টি, মেয়ে মানুষের স্বপ্ন থাকতে নেই? তারা মেয়ে বলে মানুষ নয়?

মোহনার কথার জবাব খুজে না পেয়ে মহিলা দুজন চুপ হয়ে যায়। মোহনার পাশে হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে মোহনা শাড়ি চেঞ্জ করতে পারে নি। মোহনাদের বাসায় উপস্থিত সবাই মোহনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মোহনা বুঝতে পারছে না তার মায়ের অসুস্থতায় এতো মানুষ কই থেকে এলে? তাদের তো এতো আত্নীয় নেই। মোহনা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তার মাকে জিজ্ঞেস করে,

-তুমি না অসুস্থ? তাহলে উনারা কারা? আর তুমিই বা দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে তো?

-তার আগে ক তোর পাশের পোলাডা কেডা?

মোহনা হৃদয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে জবাব দেয়,

-ও আমার বন্ধু হৃদয়।

সঙ্গে সঙ্গে মহিলা দু’জন বলে উঠে,

-এ সবাই চলো, কইছি না শহরের মাইয়ারা কহনো ভালো হয় না? এই দেখছো তার নমুনা? শহরে পড়ালেখার নাম কইরা পোলাগো লগে মাখামাখি করুনের স্বভাব।

তারপর মহিলাদের একজন এসে মনোয়ারা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

-এতোক্ষণ তো ভালোই চাপা ছাড় ছিলেন। আপনের মাইয়া নাকি অন্য মাইয়াগো মতো না? এখন দেখলেন তো সাইজ্জা গুইজ্জা পোলা লইয়া ঘুইরা বেড়ায়।

কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্তও দাড়ায় না মহিলাটি। বড় বড় কদম ফেলে দরজার বাইরে বেরিয়ে যায়। বাকি মানুষজনও তার সাথে সাথে বেরিয়ে যায়। এসবকিছু আগামাথাই মোহনা বুঝে উঠতে পারছে না। সে মায়ের নিকট আবারো জানতে চায়,

-মা, উনারা এসব কি বলে গেলো? আর উনারা কারা মা? আমি কিছু বুঝতেছি না।

মনোয়ারা বেগম রাগ সংবরণ করতে না পেরে মোহনার গালে জোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। মোহনা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে হৃদয় হাত ধরে আগলায়। সে মনোয়ারার সামনে এসে বলে,

-আপনি ওকে মারছেন কেন আন্টি?

-সেই জবাব আমি তোমারে দিমু না। আর এই তোর পড়াশোনা? এমনে সাইজ্জা এই পোলার লগে কই গেছিলি?

-মা, আমি লাবণ্যর বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। তুমি অসুস্থ শুনে চেঞ্জ করার সময় পাইনি।

-আমারে ভুলভাল বুঝাইবি না মোহন? সত্যি কইরা ক তোর এই পোলার লগে কি সম্পর্ক?

মোহনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মায়ের মান সম্মানের কথা ভেবে মোহনা হৃদয়কে ভালোবাসা সত্ত্বেও একদিন মুখ ফোটে বলেনি কিছু। অথচ আজ মা তার সাথে এমন করছে?

মনোয়ারা আবারো বলে উঠে,

-আমার আগেই বোঝার উচিৎ ছিলো।তোরে শহরে যাইতে দেওয়াই আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

চলবে…

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৯
#আয়েশা_আক্তার

মোহনা হৃদয়কে অনেক বার চলে যেতে বলার পরও সে অনড়। হৃদয়ের মন বলছে, আজ মোহনাকে তার মা আরো মা র বে ন। তাই সে আজ কিছুতেই গ্রাম ছেড়ে যাবে না। এদিকে গ্রামে মোহনাদের প্রতিবেশী’রা এক এক করে এসে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। মোহনা নিরবে চোখের জ্বল ফেলছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো? বাবা থাকলে আজ মোহনাকে এতো এতো অপবাদ সইতে হতো? কখনোই না। জানে মোহনা, তার বাবা তাকে সব বিপদ হতে আগলে রাখতো। গ্রামের মানুষদের মধ্যে একজন বয়স্ক মহিলা এসে বললো,

-কি গো মোহনের মা, তোমার মাইয়ারে নিয়া কত গর্ব তোমার! মাইয়া শহরে পড়ালেখা করে। এহন পড়ালেখার নামে এগুলান কি হুনি? ছি! ছি! ছি! গ্রামে আর মুখ দেখানো যাইবো না। এই মাইয়ারে বিয়া করবো কেডা? জীবনেও কেউ বিয়া করবো না।

হৃদয় এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও। এবার আর নিজেকে চুপ রাখতে পারলো না। সে উঠে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর এতোক্ষণ মোহনাকে নিয়ে বাজে কথা বলা মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

-চুপ করুন আপনারা? আমি আর মোহ খুব ভালো বন্ধু। এটা কেন মানতে চাইছেন না আপনারা? তখন থেকে মিথ্যা এ্যালিগেশন দিয়েই যাচ্ছেন! আর কি বলছেন? মোহ’র কখনো বিয়ে হবে না। কেন হবে না? কি করেছে ও? খবরদার আমার বন্ধুকে আর একটা বাজে কথা বললে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবো না।

বেশির ভাগ মানুষই হৃদয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েকজন এখনো মোহনাকে অপদস্ত করতে পিছুপা হয়নি। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠে,

-বন্ধু, পোলা আর মাইয়া কিসের বন্ধু? পোলারা পোলাগো লগে চলবো তারা কেন মাইয়াগোরে বন্ধু বানাইবো? পোলাগো কথা কি কমু? সব তো মনো আর ওর মাইয়ারই দোষ। পোলাগো এমন একটু ছুঁকছুঁক স্বভাব থাকেই। কিন্তু মাইয়া মানুষের তো উচিৎ নিজেরে সামলাইয়া রাখা।

-চাচি, আমি এমন কোনো অন্যায় করিনি যার জন্য আপনারা আমাকে এভাবে অপমান করতে পারেন। (মোহনা)

– মাইয়ার দেমাগ দেহো এহনো কমে নাই।

এটা শুনে হৃদয়ের হাত মুষ্টি বদ্ধ হয়। রাগে চোখ দুটো রক্ত বর্ণ ধারণ করে। সে গর্জে উঠে বলে,

-মোহ’কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাবো আপনি একজন গুরুজন।

এবার পেছন থেকে মোহনার মা এসে বললো,

-খুব তো দরদ দেহাইতাছো, তোমাগো মতো শহরের পোলাগো আমার চেনা আছে। তোমরা মাইয়া নিয়ে ফু র্তি কইরা ছুঁইড়া ফালায় দাও। সাহস থাকলে এখন মোহনকে বিয়ে করে নিজের বাসায় লইয়া যাও।

হৃদয় চুপ হয়ে মোহনার দিকে তাকায়। মোহনা তার মায়ের দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। মনোয়ারা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠে,

-এখন চুপ মাইরা গেলা কেন? জানি তো পারবা না।

হৃদয় এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নেয়। সে মোহনার দিকে একবার তাকিয়ে মনোয়ারা বেগমের দিকে দৃষ্টিপাত করে জবাব দেয়,

-পারবো।

উপস্থিত সবাই বলতে শুরু করে, হ হ এই পোলার লগেই আমাগো মোহনার বিয়া হইবো। এই পোলার লাইগা যেহেতু বিয়া ভাঙছে তহন এই পোলাই বিয়া করবো।

-হ্যাঁ, আমিই বিয়ে করবো। আর আজ এখনই করবো।আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।

-এসব কি বলছিস তুই? এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নিবি না হৃদয়। আমরা খুব ভালো বন্ধু এটাই ঠিক আছে। আমি তোর বোঝা হতে চাই না হৃদয়। এমনকি কারো জীবনেই বোঝা হয়ে থাকতে চাই না আমি।

-কে বললো, আমার কাছে তুই বোঝা হয়ে থাকবি?

-আমি জানি তুই আমার উপর করুনা করে আর গ্রামের মানুষের অপমান থেকে আমাকে রক্ষা করতেই বিয়েটা করছিস।

-আর আমি যদি বলি, আমি তোকে ভালোবাসি।

-কিহ?

-সত্যি, মোহ আমি তোকে সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ভালোবেসে এসেছি। কিন্তু তুই যদি আমায় ফিরিয়ে দিস, আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করিস। সেই ভয়ে বলতে পারিনি।

মোহনার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তবে এ কান্নায় কষ্ট নেই আছে কিছু প্রাপ্তি। মোহনার দু’জন প্রতিবেশী গিয়ে পাশের মসজিদ থেকে একজন হুজুর নিয়ে আসে বিয়ে পড়ানোর জন্য। কলমা পড়ে গ্রামের সবার সামনে বিয়ে হয়ে যায় ওদের। হৃদয় সাদাফকে মেসেজ করে সবটা জানায়৷ সাদাফ ভরসা দিয়ে বলে, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তুই চিন্তা করিস না আমরা সবাই মিলে তোর বাসায় গিয়ে আঙ্কেল আন্টিকে ম্যানেজ করবো।

সেদিন রাতে বাধ্য হয়ে মোহনাদের বাড়িতেই থাকতে হয় হৃদয়কে। মোহনাদের দুটো ঘর। এক ঘরে তার বাবা-মা ও অন্য ঘরে মোহনা এবং মিথিলা থাকতো। মোহনার বাবা মারা যাবার পর থেকে একটা ঘর প্রায় সময় বন্ধই থাকতো৷ আজ সে ঘরটা সুন্দর করে পরিষ্কার করেছে মিথিলা। হৃদয়কে বড় বোনের স্বামী হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছে তার। মিথিলা ঘর গুছিয়ে দিয়ে পাশের ঘরে মায়ের সাথে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মিথিলা জানালা ধরে বাইরে দূর আকাশের দিকে মুখ করে আছে অনেকক্ষণ হলো। হৃদয় চেয়ে আছে মোহনার দিকে। হৃদয় ভাবতে থাকে,

“সৃষ্টি কর্তা চেয়েছেন বলেই আজ মোহনার সাথে তার বিয়ে হলো। সে প্রতি মোনাজাতে আল্লাহর কাছে মোহনাকে চেয়ে এসেছে। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেই মোহনাকে উপহার স্বরূপ দিয়েছে। ”

মোহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হৃদয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

-তুই ঘুমিয়ে পর, আমি নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ছি।

-না তোর ঠান্ডা লেগে যাবে মোহ। তুই উপরে শুয়ে পর আমার মেঝেতে থাকতে সমস্যা নেই।

-দিবো এক চড়, যা বলছি তা কর।

হৃদয় উপরের দিকে দু’হাত তুলে বলে, -আল্লাহ! জল্লাদ একটা বউ দিছো। প্রথম রাতেই জামাইকে মারতে চায়।

মোহনা একটু লজ্জা পেলো হৃদয়ের মুখে বউ সম্বোধন শুনে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চাইলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলার চেষ্টা করলো,

-তুই আগে আমার বন্ধু পরে অন্য কিছু।

-অন্য কিছু কি?

হৃদয়ের চোখে মুখে রহস্যের হাসি। মোহনা বুঝতে পেরে লজ্জায় আবারও জানালা ধরে বাইরে তাকায়। হৃদয় মোহনার একদম কাছে গিয়ে ঘেঁষে দাঁড়ায়। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

-এতো লজ্জা পেতে হবে না। তোর যত দিন ইচ্ছে সময় নে। তবে এটাও জানি, তোর মনে একটু হলেও আমার জন্য ফিলিংস আছে। আর তুই কিছুতেই আমায় মেঝেতে ঘুমোতে দিবি না। সেইম আমিও তোকে সেটা করতে দিবো না। এক কাজ কর দু’জন একসাথেই শুয়ে পড়ি। কেমন?

মোহনা পাশ ফিরে বড় বড় চোখ করে তাকায়। বলে উঠে,

-মানে?

-এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? আমি অতোটাও খারাপ ছেলে নই। যে বউয়ের মনে আমার জন্য প্রেম জাগার আগেই বাসর করতে চাইবো। আগে তো আমার প্রেয়সীর মনে আমার জন্য প্রেম জাগুক। তারপর ই না হয় প্রেম প্রেয়সীকে প্রেমের বর্ষণে ডুবাবো। ভয় নেই কোল বালিস টা মাঝখানে রেখে শুয়ে পর।

কথাগুলো বলেই হৃদয় গিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে। মাঝখানে কোল বালিশ রেখে শুয়ে পড়ে মোহনাও। ক্লান্ত লাগছে শরীর ভীষণ। সারা দিনের এতে ধকলে আর কত সহ্য করবে ছোট্ট দেহ?

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে