#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৭
#আয়েশা_আক্তার
মোহনাদের গ্রামের প্রবেশ পথেয় গাড়ি থামাতে বলে লাবণ্য। কারণ গ্রামের মানুষ এতোগুলো ছেলেমেয়েদের সাথে মোহনাকে দেখলে বাজে কথা বলতে পারে তাই। সবাইকে গাড়িতে থাকতে বলে লাবণ্য মোহনার সাথে মোহনাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে এশা জানায় সেও যেতে চায় ওদের সাথে। তাই তিনজনই যায় মোহনাদের বাসায়। বাকিরা গাড়ি থেকে নেমে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সাদাফ দূরে ধান গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয় উদাসমনে দূরে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে একটা ছবির দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রয়। ছবিটা বছর কয়েক আগে। বন্ধরা সবাই মিলে ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছিলো। তখন কিছু একটা দেখাতে লাবণ্য এবং মোহনা হৃদয়কে ডাকছিলো। কিন্তু হৃদয় আড্ডায় এতোটাই মগ্ন যে শুনতেই পেলো না। তখন মোহনা এসে হৃদয়ের কান টেনে ধরে। আর লাবণ্য সেই মুহুর্তটা ক্যামেরা বন্দী করে ফেলে। বন্ধুদের সাথে এমন হাজারো রঙিন মুহুর্ত ক্যামেরা বন্দী করা হয়েছে। কিন্তু হৃদয়ের কেন যেন এই ছবিটাই বেশি ভালো লাগে। সে এ পর্যন্ত কত হাজার বার ছবিটা মুগ্ধ হয়ে দেখেছে তার হিসেব নেই।
হৃদয়কে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রীতম এসে হইহই করে বলে উঠলো,
-এইযে লাভ গুরু, এতোই যখন ভালোবাসিস বলে দিলেই তো পারিস?
-আমি কোনো লাভ গুরু টুরু নই। আজাইরা প্যাঁচাল পারবি না।
– হাহ! তুমি লাভ গুরু না! তুমি হইলা মোহের প্রেমে দিওয়ানা। হাহাহা।
প্রীতম এবং অমিত একসাথে হেসে উঠে। সাদাফ ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-তোরা চুপ কর তো। মোহ’র জীবন অন্য পাঁচটা মেয়েদের মতো না। তাই হৃদয় মোহকে কিছু বলতে পারে না। তোরা সেটা কেন বুঝিস না? সবসময় মজা নেওয়া বাদ দিয়ে ওর দিকটা ভাব। বেচারা চারটা বছর ধরে নিরবে মোহ’কে ভালোবেসে যাচ্ছে।
প্রীতম এবং অমিত সাদাফের ধমকে চুপ হয়ে যায়। হৃদয় কিছু বলে না। মুঠোফোনটা পকেটে রেখে আকাশ পানে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সাদাফ হৃদয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,
-হৃদয়, অনেক তো অপেক্ষা করলি। এবার বরং তুই মোহ’কে নিজের মনের কথা বলে দে।
-ও যদি আমায় না করে দেয়? যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করে কিভাবে সহ্য করবো আমি সাদাফ?
-আমি তোর মনের অবস্থা বুঝতে পারছি হৃদয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন একা একা কষ্ট পাবি? এটলিস্ট বলেই দেখ, মোহ’র প্রতিক্রিয়া কি হয়?
তখনই হৃদয় দেখলো দূর থেকে মোহ’রা চলে আসছে।
-আচ্ছা বলবো, এখন চুপ ওরা আসছে।
সবাই একটু নড়েচড়ে বসে। হৃদয় আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মোহ’র মা কি বলেছে সেটা শোনার জন্য। লাবণ্য মন খারাপের ভান করে বলে,
-সবাইকে আমার একটা কথা বলার আছে।
-হ্যাঁ, বল? কি বলল? আন্টি অনুমতি দিয়েছে?
অমিত একনাগাড়ে প্রশ্ন গুলো করে। হৃদয়ের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়। লাবণ্য একটু নাটক করে মন খারাপের ভান করে থাকলো। তারপর সবার মন খারাপ হচ্ছে বুঝতে পেরে হুহু করে হেসে বলে উঠে,
-আন্টি অনুমতি দিয়ে দিয়েছে।
বলেই লাবণ্য খুশিতে বাচ্চাদের মতো মোহনাকে জড়িয়ে ধরে। সেই সাথে সবাই হইহই করে উঠে। হৃদয়ের মুখেও ফোটে উঠে এক চিলতে হাসি।
_______________________
এক সপ্তাহ পর,
শপিং করা, ঘুরাঘুরি, আড্ডাতেই যেন কেটে গেলো একটা সপ্তাহ। এইযে এখন যার গায়ে হলুদে সব বন্ধুরা মজা -আনন্দে মেতে উঠেছে। কালকে দুপুরের পর থেকে তাদের মধ্যে লাবণ্য আর আগের মতো থাকবে না। বিয়ের পর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বদল হয়। তখন তার জীবন সঙ্গীর পছন্দ অনুযায়ীই মানুষ জীবন যাপন করে অনেকটা।যদিও মেহেদী সেরকম নয়। সে লাবণ্য’র বন্ধুদের খুব ভালো করেই চেনে। কিন্তু তাতে কি? বদল তো অবশ্যই হবে। বিয়ের মাস খানেক পরই তো লাবণ্য মেহেদীর সাথে উড়াল দিবে লন্ডনে। বাকি পড়াশোনা সেখানেই শেষ করবে লাবণ্য।
এশা আর মোহনা কলা পাতা রঙের শাড়ি পড়েছে। দু’জনেই চুলগুলো খোঁপা করে তাতে বেলি ফুলের গাজরা জড়িয়েছে। চোখে গাঢ়ো কাজল, হাতে শাড়ির সাথে ম্যাচিং চুড়ি, গলায় নেকলেস, কানে ঝুমকো। দু’জনকেই বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। লাবণ্যও সেইম কালারের শাড়িই পড়েছে। তবে ওদের দুজনের থেকে লাবণ্য’র সাজটা আরো একটু গর্জিয়াছ। যতই হোক বউ বলে কথা। লাবণ্য, এশা, মোহনা একসাথে বসে কয়েকটা সেলফি তুলছিলো ঠিক তখনই এশার ফোনে টেক্সট আসে। এশা মেসেজ সীন করে দেখতে পায়,
“আমার বন্ধুদের পেয়ে তো আমাকে ভুলেই গেলে বউ পাখি। আমার কিন্তু অনেক অনেক অভিমান জমা হচ্ছে তোমার উপর। এখনই যদি ছাঁদে না আসো তবে কিন্তু এর হিসেব পরে তোমায় চুকাতে হবে। ”
মোহনা এবং লাবণ্য এশার পাশে থাকায় সবটাই ওদের চোখে পড়ে। এশার মুখে লজ্জার লাল আভা ছড়িয়ে যায়। লাবণ্য এশাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-ওলে ওলে বাচ্চাটা আর লজ্জা পেতে হবে না। আমার বন্ধুটা অপেক্ষা করছে যাও এখনই ছাঁদে যাও।
এশা ইতস্তত করে থেকে যেতে চায়। কিন্তু লাবণ্য ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয় এশাকে। এশা ধীর পায়ে ছাঁদের দিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি ভেঙে ছাঁদে গিয়ে পৌঁছাতেই এক পশলা ঠান্ডা হাওয়া এসে ছুঁয়ে দেয় এশাকে। সাদাফের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই সাদাফ এশার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপর পকেট থেকে একটা লাল টকটকে গোলাপ বের করে এশার খোঁপায় গুঁজে দেয়। তারপর মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ এশার দিকে চেয়ে থাকে। এশা লজ্জা পায়। চাঁদের আলোতে লজ্জাবতী এশাকে দেখে সাদাফের মনে উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যায়। নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। সাদাফ নিজেকে সামলে এশাকে জড়িয়ে ধরে। এশার শরীরে এক সুন্দর শিহরণ বয়ে যায়। এশা সাদাফের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে,
-তুমি অনেক অসভ্য হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।
-তাই?
এশা সাদাফের বুকে নাক ঘষে বল, -হুম।
-অসভ্য কিভাবে হলাম?
-তখন, আপুদের সামনে অমন একটা মেসেজ কেন দিলে? আপু’রা কি ভাবলো? আমার অনেক লজ্জা লাগছিলো।
-ওরে, আমার লজ্জাবতীরে। আজ সারাদিন তোমাকে দেখিনি। সেই সকালে একবার দেখেছি। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর। চাঁদের আলোয় বউকে দেখার ইচ্ছে হলো বলেই তো ডাকলাম।
-ওভাবে মেসেজ না দিয়ে, ছাঁদে আসো লিখেও মেসেজ দেওয়া যেতো।
-আচ্ছা, বুঝলাম।
-কি বুঝলে?
-আমার বউ একটা আনরোমান্টিক।
তখনই সাদাফের ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে দেখে লাবণ্য কল করেছে। রিসিভ করতেই লাবণ্যের গলা ভেসে আসে,
-কই তোরা? তাড়াতাড়ি নিচে আয়। মোহ’কে গ্রামে যেতে হবে।
-কেন? কি হয়েছে? এখনো তো অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। গ্রামে কেন যেতে হবে?
-নিচে আয়, তারপর সব বলছি। মোহ’র মা কল দিয়েছে মাত্র।
চলবে….