#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১০
#আয়েশা_আক্তার
এশার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম শেষ হয়েছে আজ। সাদাফ ওকে বলে দিয়েছে আজ পরীক্ষা শেষে যেখানে সাদাফের গাড়ি রাখা হয় সেখানে চলে যেতে। এশা পরীক্ষা শেষ হতেই সাদাফের কথামতো গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সাদাফ আগে থেকেই ড্রাইভিং সীটে বসে অপেক্ষা করছিলো। তাই এশা আসা মাত্র দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে বসতে ইশারা করে। এশা বাধ্য মেয়ের ন্যায় গাড়িতে উঠে বসে সিট ব্যালট বেধে নেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে,
-এভাবে ডাকলেন যে কোথাও যাবেন?
-আজ কতদিন পর তোমায় দেখছি। কতদিন পর কাছে থেকে তোমার কন্ঠ স্বর শুনতে পাচ্ছি।
-দেখা না হলেও কথা তো হয়েছে।
-সরাসরি তোমার কথা শুনতে পারা আর ফোন কলে তোমার শোনা কি এক এশা? আমার প্রতিটি মুহুর্তে তোমার সঙ্গ চাই এশা।
-তাহলে বিয়ে করে ফেলুন।
-চলো এখনই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
কথাটা ব’লেই সাদাফ ড্রাইভ করতে শুরু করে। ভার্সিটি এরিয়া থেকে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে শাঁ শাঁ গতিতে। এশার তখন টনক নড়ে মুখ ফসকে বেফাঁস কি বলে ফেলছে। বুঝতে পেরেই এশা সাদাফের দিকে তাকায়। সাদাফ ড্রাইভিং এ মনযোগ দিয়েছে। আড়চোখে এশার চুপসানো মুখ দেখে হেসে ফেলে সাদাফ। হাসি দেখে এশা প্রশ্ন ছুঁড়ে,
-হাসছেন কেন আপনি? আর সত্যি সত্যিই কী কাজী অফিসে যাচ্ছেন নাকি? এভাবে আমাদের পরিবার ছাড়া বিয়ে করাটা ঠিক হবে না সাদাফ।
সাদাফ সামনে দৃষ্টি রেখেই বলে,
-আমি তো বিয়ের কথা বলিনি। তুমিই বললে, তারমানে তুমি এখনই আমায় বিয়ে করতে চাইছো?
এশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। সাদাফ এক হাত বাড়িয়ে পাশে থাকা এশার হাতের উপর রেখে বলে,
-বিয়ে আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতেই হবে। তোমার পিচ্চি মাথায় এসব চিন্তা ঢুকাতে হবে না। পরীক্ষা শেষ হলেই আমি তোমাকে নিয়ে বাবা-মা এর সাথে কথা বলবো।
এশা মাথা নিচু করে রয়, কিছু বলে না। ঢাকার পাশে কিছুদূর এসে সাদাফ গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে এশাকেও নামতে বলে। এশা নেমে সামনে তাকাতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে যায়। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে, আর কিছুটা পথ হাঁটলেই নদী। নদী নাকি সমুদ্র এশা ঠিক বুঝলো না। কি সুন্দর, উত্তাল জলরাশী! সামনের দিকটায় বালু আস্তরণের কারণে কিছুটা বীচের মতো দেখতে লাগছে। এশা ভাবে, কক্সবাজার ছাড়া-ও বাংলাদেশে বীচ আছে? কই এশা তো জানে না। সাদাফের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় এশা। সাদাফ হেসে জিজ্ঞেস করে,
-জায়গাটা ভালো লাগছে?
-দারুণ! কিন্তু এটা কি সমুদ্র নাকি নদী? এ জায়গাটা দেখে কেমন মনে হচ্ছে এটা একটা বীচ!
-এটা সমুদ্র নয়, এটা হচ্ছে পদ্মা নদী। হ্যাঁ, নদীর পাড়ে বালির জন্য বীচের মতোই লাগে অনেক টা। তোমাকে এখানে কেন নিয়ে এলাম জানো,
-কেন?
-এ জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে এখানে আসা হবে, থাকবোও তখন এখানকার জেলেদের সাথে কিছু সময়।
-জেলে?
-হ্যাঁ, সকাল সকাল এলে আরো সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেতে এখানে। সকালে জেলেরা মাছ ধরে হাঁটে -বাজারে বিক্রি করে। এখানে আসলে আমি প্রায়ই তাদের সাথে মাছ ধরা শিখি, আড্ডা দেই।
শহরের পাশে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে এশা আগে কখনো ভাবতেও পারে নি। আর সাদাফ শহরের বড় বাড়ির ছেলে হয়েও জেলেদের সাথে আড্ডা দেয় শুনে এশার মনে ভালো লাগায় ছেঁয়ে গেলো। দুজনেই আশেপাশের পরিবেশ টা দেখতে লাগলো কারো মুখে কোন কথা নেই। ঠিক তখনই খালি গায়ে, কাঁধে গামছা ঝুলানো, হাতে ওজন মাপার জন্য লোহার তৈরী জিনিস নিয়ে ওদের সামনে আসে একজন মধ্য বয়স্ক লোক। পান খাওয়া দাঁত বের করে সাদাফের দিকে চেয়ে বলে,
-অনেক দিন পর আইলা বাবা?
-আসলে চাচা ব্যস্ততায় আসা হয়না। আপনার শরীর কেমন? চাচী কেমন আছে?
-ভালোই বাবা। তবে মাইয়াডার জ্বর দুইদিন ধইরা৷
-একি! ফুলির জ্বর? ডাক্তার দেখিয়েছেন?
– দেহাইছি তয় ডাক্তার কইলো, দূর্বলতার লাইগা জ্বর সারে না। আমরা গরীব মানুষ ফলমূল খাওয়ামু কই থেইকা কউ?
-চাচা, আপনাকে বলেছি না যা সমস্যা হবে আমাকে বলবেন।
-আর কত কমু বাবা? তোমার গান গেয়ে উপার্জনের টাকার এক অংশ তো আমাগোরেই দিয়া দেও।
-আমি আপনাদের ছেলের মতো চাচা। ছেলে হয়ে বাবা-মা, ভাইবোনের পাশে দাঁড়াবো না?
-তোমার লগে কথায় পারন যাইতো না। ঘরে আহো দুইডা ডাইল -ভাত খাইয়া যাও।
-আসবো চাচা, বিয়ের পর আপনাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই আসবো। আজ নয়।
সাদাফ এশাকে ইঙ্গিত করে কথা বলে। এশা এতোক্ষণ আগ্রহ নিয়ে দুজনের কথোপকথন শুনছিলো। হঠাৎ সাদাফের বলা কথাগুলো আর তাকানো দেখে এশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা এবার এশার দিকে তাকায়। হেসে বলে উঠে,
-আম্মা তো মাশাল্লাহ মেলা সুন্দর বাবা! আপনের লগে বেশ মানাইবো। দোয়া রইলো সুখী হোন।
-ধন্যবাদ চাচা, আর এই টাকাটা নিয়ে যান ফুলির জন্য ফলমূল কিনে নিয়েন।
পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে লোকটির হাতে ধরিয়ে দেয় সাদাফ। লোকটি টাকা হাতে নিয়ে ছলছল চোখে তাকায় সাদাফের দিকে। সাদাফ আস্বস্ত করে বলে,
-এখনই ফলমূল কিনে বাড়ি যান চাচা। ইনশাআল্লাহ ফুলি সুস্থ হয়ে উঠবে।
লোকটি বাড়ির দিকে না গিয়ে পুনরায় বাজারের দিকে এগিয়ে যায়।
সাদাফ এশার হাত ধরে নদীর পাড়ের দিকে এগিয়ে যায়। একদম নদীর পানি ঘেঁসে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে রয় কিছুক্ষণ। এশা হঠাৎ সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমবার এশা সাদাফকে জড়িয়ে ধরেছে। সাদাফ বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এশা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,
-“থেংকিউ, আমার জীবনে আসার জন্য। থেংকিউ আমাকে নতুন খুশি উপহার দেওয়ার জন্য। থেংকিউ আমাকে ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে পরিচয় করানোর জন্য। ভালোবাসি সাদাফ।”
সাদাফ হেসে আরো খানিক শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় এশাকে। পদ্মা নদীর উত্তাল জলরাশী, চিকচিক করা বালি, আশেপাশে আকাশের ছুঁতে চাওয়া লম্বা গাছ সবকিছু সাক্ষী হয়ে রয় সাদাফ এশার ভালোবাসার। সাদাফ- এশা নিজেদের মধ্যে আর কোনো কথা বলে না বরং নিরবে অনুভব করতে থাকে দু’জন দুজনকে। এভাবে কতক্ষণ তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করে ছিলো জানে না তারা।
____________________
-মিস্টার সৈকত আপনার ছেলে আজকাল নদীর পাড়ে মেয়েদের নিয়ে মাখামাখি করছে সে খবর কি আছে? তা-ও আবার ঢাকার পাশেই পদ্মানদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মৈনট ঘাটে গিয়ে।
-মুখ সামলে কথা বলবেন চৌধুরী সাহেব। আপনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিক আছে তবে আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না।
-বাজে কথা আমি বলছি না। আপনি নিজের চোখেই দেখে নিন।
ছবিটি দেখে চমকে উঠে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈকত আহমেদ। তারপর ও নিজেকে সামলে অবিশ্বাস্য চোখে বলে উঠে,
-এটা হতেই পারে না। আমার ছেলে গানবাজনা নিয়ে থাকলেও সে যথেষ্ট রুচিশীল। কত মেয়ে ফ্যান ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ও না করে দেয়। আর ও এমন কাজ করবে হতেই পারে না।
-বাবা হয়ে ছেলের নষ্টামো দেখেও চুপ করে আপনি থাকতে পারেন আমরা নই। আজই এখবর সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবে। এস,এ ইন্ডাস্ট্রির এমডি মিস্টার সৈকতে আহমেদের বড় ছেলে সিঙ্গার হওয়ার নাম করে মেয়েদের নিয়ে ন ষ্টা মো করে বেড়াচ্ছে। হাহাহা…
-আর যদি নিউজটার পরবর্তী নিউজ এমন হয় মেয়েটি এস.এ. কোম্পানির এমডি সৈকত আহমেদের বড় ছেলের হবু পুত্র বধু, যদি এমন হয় মেয়েটির সাথে আমার বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। আর তার সাথে নদীর পার কেন আমার যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি। তখন আপনার নিউজ টিকবে চৌধুরী আঙ্কেল?
দরজায় দাঁড়ানো সাদাফকে দেখে চমকে উঠে চৌধুরী সাহেব। চমকান বাবা সৈকত আহমেদ ও।
চলবে…