প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৯

0
556

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্বঃ০৯
#আয়েশা_আক্তার

এশার পরীক্ষার মাঝামাঝি সময় সাদাফ সিলেট থেকে ফিরে এসেছে। তার মনে হচ্ছে কত বছর ধরে তার প্রেয়সীকে দেখে না। তাই এসেই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুটেছে।

ঠান্ডা বাতাস শরীর কাঁপিয়ে জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। তারপর এশা জানালার পাশের সিটে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। জানালা খোলা থাকার দরুন বাতাস আসছে আর ঠান্ডা বাতাসে এশার শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। এশা দিকে পাত্তা না দিয়ে পরীক্ষার খাতায় কলমের খচখচ শব্দ তুলে লিখে যাচ্ছে। চারঘন্টা পার হওয়ার শেষ ঘন্টা বেজে গেলো। সবাই যে যার খাতা জমা দিচ্ছে। এশা খাতা জমা দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ায় তানহার জন্য। তানহা বের হয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সাদাফ এদিকে চেয়ে আছে। তানহা বুঝতে পারে সাদাফ ঢাকায় ফিরেছে, আর ফিরেই এশাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছে। তাই ও অজুহাত দেখিয়ে দুটো মেয়ের সাথে কথা বলে এশার দিকে তাকিয়ে বললো,

-আমার ওর সাথে একটু কাজ আছে আমি পরে যাবো তুই আজ চলে যা এশা।

এশা কথার প্রতুত্তরে কিছু বলবে তার আগেই তানহা মেয়েটার হাত ধরে উল্টোদিকে চলে গেলো। এশা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হাঁটা ধরলো। পরের পরীক্ষার পড়া কিছু শেষ হয়নি। বাসায় গিয়ে পড়তে হবে। তাই তানহার এমন আচরণ বেশি একটা গায়ে মাখলো না। পরে তানহার সাথে কথা বলে দেখা যাবে। সাদাফ সিঁড়ির পাশের খালি ক্লাস রুমের দরজা দাঁড়িয়ে দেখছে এশাকে। এশা সামনে আসতেই ভীরের মধ্যে থেকে এক টানে ক্লাসের ভেতরে নিয়ে এসে দরজা আটকে দেয়। এশা প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও সাদাফকে দেখে বুঝতে পারে। কিন্তু অভিমানে কান্না পায় এশার। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। সাদাফ ভাবছে,ও কি বাড়াবাড়ি করে ফেললো? এশা কি সাদাফকে খারাপ ভেবেছে? কথা বলে ক্লিয়ার হবে ভেবে সাদাফ এশাকে জিজ্ঞেস করে,

– কাঁদছো কেন?

এশা ফুপিয়ে উঠে, চোখ মোছার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু বলে না। সাদাফ আবারো জিজ্ঞেস করে,

-কষ্ট পেয়েছো এভাবে তোমাকে এখানে নিয়ে আসায়?

এশা মাথা দোলায় না বোঝায়।

-তাহলে?

-আপনি আমায় ভুলে গিয়েছেন সাদাফ।

এমন অভিযোগে সাদাফ চমকায়। একটু কাছে এসে জবাব দেয়,

-ভুলে গেলে কি সিলেট থেকে ফিরেই তোমায় দেখতে আসতাম?

-এসব আমি জানি না। কিন্তু এতোগুলো দিন আপনি একবারও আমার খোঁজ নেননি। আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানেন আপনি? জানেন না, হুহ।

এশা কান্না থামিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কথা গুলো বললো। সাদাফ সমস্ত অভিযোগ মাথা পেতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-ভালোবাসো?

এশা এবার একটু লজ্জা পায়। তবে মাথা নেড়ে জানায় ভালোবাসে।

আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেয়ে সাদাফ অনেক বেশি খুশি হয়ে গেলো। খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো তার চোখে মুখে। সে কান ধরে এশার সামনে বসে বললো,

-সরি, আর হবে না প্রমিজ।

এশা ফিক করে হেসে বললো, -উঠুন।

সাদাফ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, -পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

-আমি ছিলাম না বলে ভালো হচ্ছিল তাইনা?

কথাটা বলেই সাদাফ গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকায়৷ এটা দেখে আবারো এশা হেসে ফেলে।

-উহু, বাকিগুলো আরো ভালো হবে।

সাদদফ এবার সামনে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,

-কাল পরীক্ষা আছে?

-হুম আছে তো।

-তাহলে চলো বাসায় যাওয়া যাক।

-আপনি আমার সাথে যাবেন কিভাবে?

-আমার বাসাও উত্তরাতেই। আর তোমার বাসাও সেইম তাহলে যেতে সমস্যা কোথায়?

-সমস্যা নেই কিন্তু আপনি কি করে জানেন আমার বাসা উত্তরায়?

-প্রিয়জনের সব খবরই যদি জানতে না পারি তবে আমি কেমন প্রেমিক হলাম?

-হয়েছে হয়েছে, এবার চলুন।

-ওকে।

ওরা ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় কেউ যেনো কিছু বলতে না পারে তারজন্য এশা আগে আগে হাঁটতে থাকলো আর সাদাফ পেছনে পেছনে। এশা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে বাসট্যান্ডের দিকে যেতে নিলে সাদাফ এশাকে পার্কিং এরিয়াতে যেতে বলে। এশা প্রথম কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সাদাফ গাড়ি কাছে গিয়ে দরজা খুলে এশাকে ভেতরে যেতে বলে। কিন্তু এশা তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাফ জিজ্ঞেস করে,

-কি হলো? উঠো?

-আমি তো বাসে করে যাই৷

-আজ আমার গাড়ি দিয়ে যেতে কি খুব অসুবিধে হবে?

এশার অস্বস্তি হচ্ছে। তারপর ও সাদাফের অনুরোধ ফেলতে না পেরে গাড়িতে উঠে সিট ব্যালট বেধে নেয় সে। সাদাফ ড্রাইভিং সীটে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে। রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলে নি। এশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত। তাকে মনে হচ্ছে রাস্তায় কোন মূল্যবান কিছু খুঁজে চলেছে এশা। সাদাফ অবশ্য ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে দেখেছে এশাকে। এশাদের বাসা থেকে কিছু পথ পেরুনো আগেই গাড়ি থামালো সাদাফ। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় এশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় সাদাফের দিকে। সাদাফ হেসে সুধায়,

– এখান থেকে হেঁটে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না তোমার। একদম বাসার সামনে তোমায় নামালে কেউ দেখে ফেলতে পারে। অবশ্য তুমি বললে তোমার বাসায়ও পৌঁছে দিতে পারি আমি। সাদাফ আহমেদ কাউকে ভয় পায় না।

একটু ভাব নিয়ে কথা গুলো বলে থামে সাদাফ। এশা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-আসছি, নিজের খেয়াল রাখবেন।

-ওয়েট, ওয়েট।

-আবার কী?

-তোমার সাথে কথা না হলে আমার দমবন্ধ লাগে। এই ক’টা দিন কি যন্ত্রণা সহ্য করে কাটিয়েছি আমি! তবে আর এক মুহুর্তও তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না।

-বুঝেছি।

এশা হেসে ফাইল থেকে কলম বের করে সাদাফের হাতটা টেনে ধরে তাতে কলমের আঁচড় কেটে নিজের এগারো ডিজিটের নাম্বারটা লিখে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাদাফের কাছে এই সামান্য বিষয়টাও ভালো লাগায় ছেঁয়ে গেলো। এশা তাকে প্রথম ছুঁলো ভাবতেই হাসি ফুটছে তার ওষ্ঠে। এশা চলে যাচ্ছে মনে হতেই সে সামনে তাকায় এশাও ঠিক তখনই পেছনে ফিরে সাদাফের দিকে তাকিয়েছে। সাদাফ হাসে, লজ্জা রাঙা হাসি উপহার দেয় এশাও। তারপর ধীরে ধীরে দু’জন দু’জনের দৃষ্টির অগোচর হয়। সাদাফ তারপরও একমনে চেয়ে আছে পথ পানে। যে পথ দিয়ে এশা হেটে গিয়েছে। এশা তার বাসার গলির ভেতরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে আজকের দিনটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন। এশা ভাবতে থাকে, আজ এতোটা খুশি লাগছে কেন? প্রেমে পড়লে বুঝি আশেপাশের সবকিছুই ভালো লাগায় ভরে উঠে! ভালোবাসলে যদি সবকিছু ভালো লাগে। তবে ভালোবাসা সুন্দর। ভয়ানক সুন্দর!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে