প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৮

0
556

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৮
#আয়েশা_আক্তার

নিষ্ঠুর প্রিয়া,
এতোবার ভালোবাসি বলার পরও যখন আমায় চাইলে না। তবে আমারও তোমায় চাইনা। ভালোবাসার মানুষের নিকট বারবার নিজেকে অবহেলিত হতে দেখা কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবে না। তবে কখনো যদি মনে হয় তোমার আমাকে চাই, আমাকে তুমি ভালোবাসো তবেই না হয় আমায় ডেকো।

ইতি
তৃষ্ণার্ত প্রেমিক

এশা চিরকুটটা বার কয়েক পড়লো। তার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সত্যি সত্যি তার “শ্যাম পুরুষ” তাকে চিরকুট লিখেছে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না এশার।

তানহার মুখ থেকে সবটা শুনে এশার যেমন ভালো লাগছিলো। তেমনই তানহার জন্য খারাপ লাগছিলো। ও যতই বলুক ক্রাশ আর ভালোবাসা এক নয় তবুও এশা জানে তানহা সাদাফের জন্য কি কি পাগলামি করেছে। এশা ভেবেছিলো তানহা সবকিছু জেনে এশাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তানহা উল্টো এশার জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করবে এটাও ভাবে নি এশা।
_____________________________

আজ এশার শরীর অনেক টা সুস্থ। এশা মনে মনে ভাবছে, ভার্সিটিতে গিয়ে সাদাফকে সেও ভালোবাসে এটা জানিয়ে দিবে। অনেক তো লুকুচুরি হলো। এবার বলেই দিবে। এতো এতো অশান্ত মন নিয়ে পড়াশোনা করা যায় না, ঘুমানো যায় না। দুই দিন পর ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা পড়াশোনা তো করতে হবে।পরীক্ষার কথা মনে হতেই এশা বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তে শুরু করলো। ইয়াশা ঘরে এসে এসে এশাকে পড়তে দেখে বলে উঠলো,

-বাহ, আপু আজ তুমি সকাল সকাল বই নিয়ে বসে গিয়েছো? আবারো আগের মতো গুড স্টুডেন্ট হয়ে যাবে নাকি আপু?

-আমি ব্যাড স্টুডেন্ট ছিলাম কবে? যে এখন নতুন করে গুড স্টুডেন্ট হতে হবে?

-না মানে পড়ার ভয়ে মামাবাড়িতে চলে গিয়েছিলে তো তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি বোধহয় ব্যাড স্টুডেন্টের খাতায় নামটা লিখিয়েই ফেলেছো।

-আমি মোটেও পড়ার ভয়ে মামা বাড়ি যাইনি। বেড়াতে গিয়েছি। এতো বকবক করছিস কেন স্কুল নেই তোর?

-আজ শুক্রবার তুমি জানো না বুঝি।

-অহ তাই তো ভুলে গিয়েছিলাম রে।

-আপু, তোমার মনে আছে আগে আমরা শুক্রবারে শাড়ি পড়তাম। তারপর ছাঁদে গিয়ে ছবি তুলতাম।

-হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেন?

-চলো না আজও বিকেলে শাড়ি পরে ছবি তুলি।

-বাইরে দেখছিস কি ঠান্ডা বাতাস? শীত এসে গেছে প্রায়। এ অবস্থায় শাড়ি পরে ছাঁদে গেলে ঠান্ডা লাগবে না?

-তুমি তো সুস্থ হয়ে গিয়েছো আপু। প্লিজ, প্লিজ, আপু চলো না শাড়ি পড়ি।

-ওকে বিকেল হোক, পড়বো শাড়ি।

এশা পড়া শেষ করতে করতে এগারোটা বেজে গিয়েছে। পড়া থেকে উঠে গোসল সেরে নেয় তারপর রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে তার মা মিসেস আনিকা মুচকি হেসে বলে উঠে,

-সুস্থ হয়ে গিয়েছিস?

-হ্যাঁ, মা মানুষ কতদিন অসুস্থ থাকে বলো। আমি তো দু’দিন থেকেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।

-তো রান্নাঘরে এলি কেন? কিছু খেতে ইচ্ছে করছে?

-না, রান্না করতে ইচ্ছে করছে।

এটা এশার ছোট থেকেই অভ্যাস। সে মাঝে মধ্যেই কিছু কিছু রান্না করার চেষ্টা করে। যদিও ভালো পারে না। তবে রাঁধতে তার বেশ লাগে।এশার মা আনিকারও রান্না করতে ভালো লাগে তাই মেয়ের এমন আগ্রহে খুশিই হন। আনিকা ফ্রিজ থেকে বের করে রাখা মাছ এবং সবকিছু দেখিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন গোসল সারতে। একটু পরই আজান দিয়ে দিবে। শুক্রবারের দিনটা কেমন যেনো নিমিষেই চলে যায়। কিন্তু কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে তখন দেখে তার স্বামী মিস্টার ইয়াশ আহমেদ ওয়াশরুমের ভেতরে। তাই বের হয়ে বাইরে যে ওয়াশরুম আছে রান্নাঘরের পাশে সেখানেই গোসল সারবেন বলে প্রবেশ করলেন তিনি।

এদিকে এশা চুলায় কড়াই বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে তেল গরম হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। তেল গরম হয়ে এলে হলুদ, মরিচ, লবণ দিয়ে মাখানো মাছগুলো লাল করে ভেজে নেয়। তারপর মাছগুলো কড়াই থেকে নামিয়ে নেয় এবং কড়াইয়ে আরো কিছু পরিমাণ তেল দিয়ে পেয়াজ, কাঁচা মরিচ কুঁচি দিয়ে ভেজে নেয়। তারপর হলুদ, মরিচ আরো প্রয়োজনীয় মশলাদি দিয়ে মাছগুলো কষিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দেয়। ঠিক তখনই তার বোন ইয়াশা মা, মা, করে ডেকে রান্নাঘরে আসে। এশাকে দেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-আপু তুমি? তাহলে মা কই?

-মা গোসল করতে গেছে। মা’কে তোর কি প্রয়োজন এখন?

-আরে মায়ের একটা বান্ধবী আছে না উনি বারবার মায়ের ফোনে কল করছে তাইতো ডাকতে এলাম।

-তুই গিয়ে বল মা গোসল করছে পরে কল দিতে। আর তুই ও তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নে। নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে ফ্রী হয়ে শাড়ী পড়বো দু’জন তারপর রাতে আবার পড়া আছে তো।

-হ্যাঁ, যাচ্ছি। তোমার রান্নার সুন্দর ঘ্রাণ আসছে আপু কি রান্না করছো? মা-ই সব রান্না করেছে। শুধু মাছ ভোনাটা বাকি ছিলো ওটাই আমি করছি।

-অহ, তবে আপু তোমার রান্না কিন্তু একদম মায়ের মতো হয়।

-হয়েছে, আর পাম দিস না গোসল করতে যা।

-সত্যি কথার দাম নেই।

বলেই ইয়াশা চলে গেলো। এশার রান্না হলে এশা গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দেয়। আনিকা গোসল সেরে বেরিয়ে এসে একবার দেখে যায়। রান্না দেখে মনে হচ্ছে বেশ ভালো হয়েছে। আজান দিলে ইয়াশ আহমেদ বাসার কাছেই একটা মসজিদে চলে যায় জুম্মা নামাজ আদায় করতে। আনিকা, এশা, ইয়াশা বাড়িতেই নামাজ পড়ে নেয়। ইয়াশ এলে সবাই একসাথে খেতে বসে। খাওয়ার মাঝে কিছুক্ষণ আড্ডাও হয় তাদের মাঝে। এরপর ইয়াশ আহমেদ উঠে সোফায় গিয়ে বসে টিভি ছেড়ে খবর দেখতে শুরু করে। আর আনিকা সবকিছু গুছিয়ে রুমে গিয়ে বান্ধবীর নাম্বারে ডায়াল করে কথা বলতে শুরু করে।

এশা, ইয়াশা দুই বোন নিজেদের রুমে চলে যায়। এশা তানহার সাথে কিছুক্ষণ মেসেজে কথা বলে মোবাইল রেখে দেয়। তারপর ভাবতে থাকে কাল ভার্সিটি গেলে কি হবে? সাদাফকে এবার এশা নিজের মনের কথা কিভাবে বলবে? আর এশার কথা শুনে সাদাফই বা কি বলবে? সাদাফ কি সত্যিই অনেক টা খুশি হবে?

এশার ভাবনার মধ্যে ইয়াশা এসে ওর কানের কাছে মুখ এনে জোরে চিৎকার করে ডাকে, “আপু”।

এতো জোরে ডাকায় এশা চমকে যায়। একটু রেগে বলে,

– এতো জোরে ডাকার কি হলো? আর কানের কাছে মুখ এনে ডাকতে হবে কেন তোকে?

-সেই কখন থেকে ডাকছি তুমি তো শুনছিলেই না। তাই এভাবে ডেকেছি।

-তো, ডাকছিস কেন ছাগলের মতো?

-তুমি ছাগল?

-আমি ছাগল?

বলেই এশা কটমট করে বোনের দিকে তাকায়। ইয়াশা ভয়ে পেয়ে ঠোক গিলে জবাব দেয়,

-না, তুমি না৷ আমিই ছাগল। আপু শাড়ি পরবে না?

-হ্যাঁ, চল মায়ের থেকে শাড়ি নিয়ে আসি।

ইয়াশা নিলো আকাশু রঙের শাড়ি এবং এশা নিলো একটা সাদা রঙের জামদানী। দুজনেই কিছুক্ষণের মধ্যে শাড়ি, চুরি পড়ে চোখে কাজল, কানে ঝুমকো, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে সেজে নেয়। তারপর ছাঁদে গিয়ে অনেক গুলো ছবি তুলে দেয়।

পরদিন,
এশা ভার্সিটি গিয়ে দেখে পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। একসপ্তাহ পরই পরীক্ষা। আজ এশার চোখ বারবার সাদাফকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথাও সাদাফের দেখা পাচ্ছে না। তানহা এশার অবস্থা বুঝতে পেরে জানায়, সাদাফ পনেরো দিনের জন্য একটা কনসার্টে গিয়েছে তাই আসতে পারবে না। তানহা আগে থেকেই জানে কিন্তু এশাকে বলতে ভুলে গিয়েছিল। কি আর করার, তানহার সাথে আড্ডা দিয়ে ভার্সিটির ক্লাসগুলো করেই বাসায় চলে এসেছে ও। আজ অবশ্য তানহার জন্য ওর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিন্তু তানহার ত্যাগ ও ব্যবহারে ও মুগ্ধ। কি করে পারে মেয়েটা? কৌতুহল বশত এশা তানহাকে জিজ্ঞেস করে,

-আমার উপর তোর রাগ লাগছে না? আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলতে ইচ্ছে করছে না?

-মারবো এক চড়। তোর উপর কেন রাগ লাগবে আমার?

-ওইযে সাদাফ ভাইয়া আমাকে….

-এশু, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর উনি আমার ক্রাশ। ক্রাশ আর ভালোবাসা এক নয়। আর যদি এক হয়েও থাকে। উনি যদি আমার ভালোবাসা হয়েও থাকে তবে আমি চাই আমার ভালোবাসা ভালো থাকুক। আর তার ভালো থাকাটা যদি তুই হোস তাতে ক্ষতি কি? ক’জন পারে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালো থাকতে দিতে!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে