#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৭
#আয়েশা_আক্তার
তানহা ভার্সিটি এসে দেখে এশা আসে নি। কল দিয়ে জানতে পারে এশা অসুস্থ। সে মনে মনে ভাবে, আমি সুস্থ হতেই এই এশুটার অসুস্থ হতে হল? অসুস্থ হবি যখন আরো দু’দিন আগেই হতি। দু’জন একসাথে ভার্সিটি বন্ধ করতাম। ক্লাসে বসে এসবই ভাবছিলো তানহা। ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে কিছু। তার কাঁধে একটা কোমল হাতের ছোঁয়া পেতেই এশা পেছনে ফিরে তাকায়। লাবণ্যকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-আরে আপু কেমন আছো?
-এইতো বেশ, তোমার কি অবস্থা? এই ক’দিন ভার্সিটি আসোনি কেন?
-অসুস্থ ছিলাম আপু। দেখো না আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসতেই এশুটা অসুস্থ হয়ে গেলো।
-কি বলো? ও অসুস্থ কবে থেকে?
-কাল রাত থেকে নাকি প্রচুর জ্বর। কল দিয়েছিলাম ওর মা বললো জ্বরে নাকি ওর কোনো হুঁশ নেই।
-ইশ! এতোটা অসুস্থ মেয়েটা!
-হ্যাঁ, আপু মন খারাপ লাগছে ওর জন্য।
-মন খারাপ করো না, এশা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
-ইনশাআল্লাহ।
-আচ্ছা, ক্লাসের মাঝখানে যখন বিশ মিনিট ব্রেক দিবে তখন একটু লাইব্রেরীতে আসতে পারবে? আমার বন্ধু সাদাফ তোমার সাথে কথা বলতে চায়। তুমি যদি কিছু মনে না করো।
সাদাফ ওর সাথে কথা বলতে চাইছে শুনে তানহা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সত্যি তার ক্রাশ আজ তার সাথে প্রথমবার কথা বলতে চাইছে। তানহার তো খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে। খুশির ঝিলিক তানহার চোখে মুখেও স্পষ্ট হলো, যা লাবণ্যর চোখ এড়ালো না। লাবণ্য মনে মনে ভাবতে লাগলো, সাদাফ যে তার মন ভেঙে দিতে চাইছে এটা বুঝলে এ মেয়ে কিছুতেই সাদাফের সাথে দেখা করতে চাইতো না।
ক্লাসে স্যার চলে আসতে দেখে লাবণ্য তানহার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তানহার কাছে যেনো আজকের ক্লাস শেষই হচ্ছে না। তার উপর দু’দুটো ক্লাস শেষ করতে হবে। অনেক অপেক্ষার পর ক্লাস দুটো শেষ হলো। তানহা তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো লাইব্রেরীতে৷ তার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। আবার লজ্জাও লাগছে। ভয়, লজ্জা নিয়ে সে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে দেখে সাদাফ আগে থেকেই বসে আছে। তানহা গিয়ে সাদাফকে সালাম দেয়। সাদাফ সালামের জবাব নিয়ে সামনে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বসতে বলে। তানহা বসার সাথে সাথেই সাদাফ বলে উঠে,
-তুমি নাকি আমায় পছন্দ করো?এটা কি সত্যি?
সাদাফের সরাসরি এমন প্রশ্নে এশা ভয় যেমন পেলো তেমনই লজ্জাও পেলো। মনে মনে বলতে লাগলো, “হে আল্লাহ, মাটিটা ফাঁক করে দিন। আমি ঢুকে যাই।”
তানহাকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ আবারো বলে উঠলো,
-চুপ করে থেকো না তানহা। আমি সহজ কথা সহজভাবে বলতে ও শুনতে পছন্দ করি। তাই তুমি আমাকে পছন্দ করো কি না সেটা বলো। হ্যাঁ অথবা না?
-জী আপনাকে আমার ভালো লাগে। আপনার প্রায় সব গান আমি শত হাজার বার করে শুনে ফেলেছি৷ (কাঁপা ঠোঁটে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো তানহা।)
-তানহা, আমি তোমার ভালো লাগাকে অসম্মান করছি না। তবে তুমি কি এটা বিশ্বাস করো যে, যেকোনো সম্পর্কেই দু’জন মানুষের আগ্রহ সমান ভাবে লাগে।
-হ্যাঁ, করি।
-তাহলে জেনে রাখো আমি অন্য একজনের প্রতি আগ্রহ ফিল করছি তা-ও প্রথম দেখাতেই। যা অন্য কারো জন্য কখনো আসেনি আর আসবেও না। আর সে তোমার খুব কাছের একজন।
-আমার কাছের? কে সে?
-এশা।
-এশা? (বিস্ময়ে একটু জোরেই বললো তানহা)
-হ্যাঁ, এশাকেই আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে আমি প্রথম দেখেছিলাম রূপপুর গ্রামে। সেখানেই ওকে আমার ভালো লেগে যায়। নৌকায় বসে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আমি বুঝেছি। আড়চোখে আমিও তাকে দেখেছি। এটা ও বুঝতেই পারে নি। একদিনেই যাকে মন দিয়ে দিলাম, যার জন্য রাতের ঘুম হারিয়ে গেলো তাকে অনেক খুঁজে ভার্সিটিতে পেলাম। প্রপোজ করতে গেলাম আর ও আমায় ফিরিয়ে দিলো।
-তারমানে আপনিই ওর সেই নৌকার মাঝি?
-হ্যাঁ। আমিই কিন্তু তুমি জানলে কি করে?
-আরে, এশাই তো আমাকো সব বলেছে কিন্তু ও যখন আমায় এসব বলেছে তখন আপনার নাম জানতো না। শুধু জানতো ও সেই “শ্যাম পুরুষ” কে ভালোবেসে ফেলেছে।
-শ্যাম পুরুষ?
-হ্যাঁ আপনাকে ভালোবেসে ও এই নাম দিয়েছে।
-কিন্তু স্বীকার তো করছে না।
-আশ্চর্য! ও আপনাকে না করে দিয়েছে?
-হ্যাঁ।
-কেন?
-কারণ তুমি আমায় পছন্দ করো তাই। বলো এতে আমার দোষ কোথায়? কত মেয়েই আমাকে পছন্দ করতে পারে কিন্তু আমি তো শুধু ওকেই আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। আবার অনেকেই ওকেও পছন্দ করতে পারে এতে ওর দোষ নেই আর না আমার কিছু করার আছে।
-অহ, এই কথা? আচ্ছা ভাইয়া আমি ওকে বোঝাবো ভার্সিটিতে এলে। আজ তো আসেনি এশু অসুস্থ তাই। বলবো যে আমার আপনাকে পছন্দ করা মানে হচ্ছে জাস্ট এ্যা ক্রাশ।ক্রাশ তো অনেকেই হয় তাই বলে সবাইকে ভালোবাসতে হবে বা বিয়ে করে হবে এমন কোন কথা নেই।
-এ্যাক্সেক্টলি, তুমি ওকে বুঝিও কেমন? আর আমি পনেরো দিনের জন্য সিলেটে চলে যাচ্ছি। একটা কনসার্ট আছে তাই। ওর খেয়াল রেখো।
-ওকে, আসছি ভাইয়া।
-দাঁড়াও এ চিরককুটটা এশাকে আমার হয়ে দিয়ে দিও প্লিজ।
তানহা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ায়। তারপর ক্লাসে চলে আসে। বেঞ্চে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে। তানহা জানে না কেন কান্না আসছে তার। তবে বুকে ছোট্ট একটা ব্যথা অনুভব করছে সে। “কেন এই ব্যথা? তারই ক্রাশ তার বান্ধবীকে ভালোবাসে বলে?”
কোনো রকম ক্লাসগুলো শেষ করে বাসায় ফিরলো তানহা। কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে পরে সে। কয়েকবার এসে তার মা ডেকে যাওয়ার পরও দরজা খুলেনি তানহা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হলো, ঢাকা শহর রাতের অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো। সেই সাথে তানহার বুকের ব্যথা গুলোও তরতর করে বৃদ্ধি পেলো। এভাবে কতক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে জানে না তানহা।তবে এখন উঠে বসলো। সিদ্ধান্ত নিলো আর কাঁদবে না। কার জন্য কাঁদবে? সাদাফ তো কখনো তার ছিলোই না। তখনই হঠাৎ এশার কথা মনে পড়লো তানহার। সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে রাত বারোটা বেজে গিয়েছে অলরেডি। এতো রাতে কল দেওয়াটা ঠিক হবে না ভেবে মোবাইল রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় তানহা। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পরে। আজ আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না তার। তাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে খাবারও খেলো না সে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তানহার মা প্রশ্ন করেন,
-কি হয়েছে তোমার?
-কিছু হয়নি মা। এমনিতেই ভালো লাগছিলো না।
-চোখ, মুখ এমন ফুলে আছে কেন? কাঁদছিস?
-না, একটু শরীর খারাপ লাগছে তাই।
-তাহলে রেডি হইছিস কেন? আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে না।
-না, মা কিছু দিন পরই পরীক্ষা শুরু এখন ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না।
-আচ্ছা সাবধানে যাস।
তানহা ভার্সিটিতে যাওয়ার নাম করে। এশাদের বাসায় চলে গেলো। কিছুক্ষণ এশার মা ও বোনের সাথে আড্ডা দিয়ে এশার রুমে যায় তানহা। এশা ঘুমাচ্ছে, তানহা এশার কপালে হাত রাখো। এখনো জ্বর কমেনি এশার। তানহা তাই আর ডাকলো না এশাকে। কিন্তু তানহার স্পর্শ পেয়ে এশার ঘুম এমনিতেই ভেঙে গেলো।সে চোখ খুলে এশাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
-তানু, তুই এসেছিস?
-হ্যাঁ এলাম তো। তোর আশিক তোর প্রেমে পাগল হয়ে গেছে দোস্ত তোকে না দেখে থাকতেই পারছে না। তাই তো আমায় দিয়ে চিরকুট পাঠালো।
জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো তানহা।
চলবে…