#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৬
#আয়েশা_আক্তার
সাদাফের ভীষণ মন খারাপ হলো। সে লাবণ্যকে সবটা খুলে বললো। লাবণ্য আবারো তাকে এশার সাথে কথা বলতে বলেছেন। এবার লাবণ্য তাকে সাহায্য করবে এটাও কথা দিয়েছে।
ভার্সিটি ছুটির পর যখন এশা ক্লাস থেকে বের হচ্ছিল তখন লবণ্য গিয়ে এশার সামনে দাঁড়ায়। এশা লাবণ্যকে দেখে খানিক হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে,
-কেমন আছো আপু?
-এইতো ভালো, তুমি কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
-আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে।
-হ্যাঁ, আপু বলুন কি কথা?
-আমার এক বন্ধু তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
এটা শুনে এশার ভেতরটা শুকিয়ে গেলো। ঠোঁট গিলে জবাব দিলো,
-বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা টেনশন করবে। আর কিছুূদিন পর আমার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম। পড়তে হবে বাসায় গিয়ে।
-জাস্ট দু’মিনিট হলেই হবে।
ভদ্রতার খাতিরে এশা কিছু বলতে পারলো না। সাদাফ লাইব্রেরীতে বসে আছে। লাবণ্য এশাকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে সাদাফকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-তোরা কথা বল। আমি বাইরে আছি।
-ওকে।
-আপু, আমি আপনার সামনেই কথা বলবো আর না হয় কথা বলতে চাই না আমি।
লাবণ্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাফ বলে উঠে,
-ওকে লাবণ্য, তুই ও বোস আমাদের সাথে। তুই আমার বন্ধু আর আমি লুকিয়ে কোনো কিছু করতে চাইও না। শুধু ওর সম্মানহানি হবে ভেবেই চুপ করে থাকি।
লাবণ্য অন্য একটা টেবিলে বসতে চাইলে। এশা লাবণ্যকে তার পাশেই বসতে অনুরোধ করে। তাই বাধ্য হয়ে লাবণ্য এশার পাশেই বসে। আর সাদাফ এশার ঠিক সামনে বসেছে। সাদাফ এশার চোখের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
-কি সমস্যা তোমার? আমার গায়ের রং তোমার মতো অতটা ফর্সা নয় তাই পছন্দ করো না আমায়?
একথা শুনে এশা চমকে উঠে অস্ফুট উচ্চারণ করে,
-ছি! ছি! কি বলছেন আপনি? এরকম কিছু না।
-তাহলে কি রকম কিছু? তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো বা রিলেশন আছে?
এশা মাথা নেড়ে না বোঝায়।
– তাহলে তোমার সমস্যাটা কোথায়? বলো প্লিজ।
এশা এবার কাঁদতে শুরু করে। ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে দিতে তার কষ্ট হুচ্ছে তবে কিছু করার নেই। সাদাফ এশার কান্নার দিকে চেয়ে রইলো। নিমিষেই তার বুকে ব্যথা অনুভব হলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরও এশা কান্না থামাতে পারছেনা দেখে সাদাফ একটু রেগে গেলো। লাবণ্যকে বললো,
-ওকে কান্না থামাতে বল লাবণ্য।
লাবণ্য এশার চোখ মুছে দিয়ে বলে, – বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন? সাদাফ ভীষণ ভালো ছেলে। সেই প্রথম দেখাতেই ও তোকে ভালোবেসেছে। এখনকার ছেলেরা উঠতে বসতে প্রেমে পড়ে। কিন্তু সাদাফ তোর প্রেমে পড়ার আগে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছে। নিজের মন কুঠোরীতে জায়গা দিয়েছে। ওকে ফিরিয়ে দিসনা এশু।
এশা হেঁচকি তুলে বললো, – সরি আপু আমার কিছু করার নেই। উনাকে বলে দাও এত ভালোবাসা আমি ডিজার্ভ করি না।
-আচ্ছা তুই আজ বাসায় চল। অন্যদিন না হয় তোরা নিজেদের মধ্যে কথা বলিস আবার।
লাবণ্য ইশারায় সাদাফকে কিছু একটা বলে এশাকে নিয়ে বের হয়ে যায় লাইব্রেরী থেকে। হাটতে হাটতে এশা কিছুটা স্বাভাবিক হলে লাবণ্য জিজ্ঞেস করে,
-আমি তোকে তুই করে বলায় রাগ করছিস না তো এশু?
-উঁহু, তুমি তো আমার বড় বোনের মতো। ডাকতেই পারো। আমার তো কোনো বড় বোন নেই তাই তুমিই আমার ভিন্ন মায়ের পেটের আপু।
-আচ্ছা, আমিই তোর ভিন্ন মায়ের পেটের আপু। হয়েছে?
-হুম।
-এশু সাদাফ ভীষণ ভালো ছেলে। ওর গান শুনে কত মেয়ে ওকে প্রপোজ করেছে কিন্তু ওর এসবে ইন্টারস্টে নাই বলে রিজেক্ট করে দিয়েছে। তুই-ই প্রথম যাকে ও প্রথম দিনই গ্রামে নৌকায় দেখে মনের সবটুকু দখলদারত্ব দিয়ে বসে আছে। ওকে ইগনোর করিস না প্লিজ।
-আমি উনাকে ভালোবাসতে পারবো না কখনোই। কেন সেটা তো বল?
-কারণ আমার বান্ধবী তানহা সাদাফকে ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে। উনার গাওয়া প্রতিটি গান তানহা বারবার শুনে, উনার প্রতিটি স্টেজ পারফরম্যান্স ও দেখে। সেদিন ওই দূরে একটা জায়গায় সাদাফ ভাইয়ার গানের কম্পিটিশন হয়েছিলো না? সেখানেও আমায় নিয়ে গিয়েছিল। এবার বুঝো ও কতটা ভালোবাসে উনাকে। আমি কি করে বন্ধুর ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে পারি বলো আপু?
-পাগলী, তুই কেন তানহার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিবি? সাদাফ তো আর তানহাকে ভালোবাসে নি। আর না ওদের মধ্যে কোনো রিলেশন হয়েছে। তাহলে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
-তারপর ও আপু আমি তো জানি তানহা সাদাফ ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
লাবণ্য এ কথার পরি প্রেক্ষিতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তখন এশা বলে উঠলো, -আপু আজ আসি৷ এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে। অন্য দিন কথা হবে।
-ওকে, সাবধানে যাস।
-জী আপু, ভালো থাকবেন।
____________________
সেদিন বাসায় যাওয়ার পর থেকেই তুমুল জ্বর উঠেছে এশার শরীরে। সিজন চেঞ্জ হওয়ায় হয়তো এমনটা হয়েছে এটাই ভাবছে এশা। প্রথমে বাবা -মা না বললেও এশা জ্বরের জন্য উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। অনেক কষ্টে ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই এশার পুরো পৃথিবী নড়ে উঠে। ধপাস করে ফ্লোরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছোট বোন ইয়াশা তখন রুমের দিকেই আসছিলো। এশার পরে যাওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখে এশা জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছে। বড় বোনের এমন অবস্থা দেখে ইয়াশা ভয় পেয়ে যায়। চিতকার করে মাকে ডাকতে শুরু করে। হেলেনা বেগম মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে আরেক মেয়েকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে কেঁপে উঠলেন। কেমন ভয়ে তার বুকের বা পাশ মোচড় দিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি মেয়ের কাছে এসে শরীরে হাত দিতেই দেখে। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে ছোট মেয়ের সাহায্যে এশার মাথায় পানি ঢালতে শুরু করেন মিসেস হেলেনা। মাথায় পানি দিয়ে তেল দিয়ে দিলেন। তারপরও জ্ঞান ফিরছে না দেখে, একটু তেল গরম করে ইয়াশা আর মিসেস হেলেনা মিলে এশার হাতে পায়ে মালিশ করতে শুরু করে। এভাবে অনেক্ক্ষণ যাওয়ার পর এশার জ্ঞান ফেরে। চোখ মেলেই বোনের কান্না মিশ্রিত চোখ, মায়ের ভয়ে ভীত চেহারা দুটোই দেখতে পেলো এশা। ফ্যাসফ্যাসে গলায় জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে, তোমরা কাঁদছো কেন?
-একটা কথাও বলবি না তুই এশু। তোর জ্বর এসেছে এটা আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস না তুই আজকাল? বড় হয়ে গিয়েছিস বেশি? ইশু আর আমি না থাকলে তোর কি অবস্থা হতো আজ ভাবতে পারছিস?
-মা, আমি তোমাদেরকে কি করে জানাবো? আমি তো ভার্সিটি থেকে এসে খাওয়া দাওয়া করে ভালো শরীর নিয়েই ঘুমিয়েছি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এইরকম অসুস্থ হয়ে যাবো সেটা তো জানতাম না। হয়েছে, চুপ কর। আমি স্যুপ রান্না করে নিয়ে আসছি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি। এখন চুপচাপ শুয়ে থাক।
-আচ্ছা, বাবা আসেনি?
-না এসে পড়বে হয়তো। তুই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক। রাতের রান্নাটাও করা হয়নি আমার কাজ বাকি অনেক। ইশু তই আপুর পাশে বসে পড়তে থাক। আর আপুর খেয়াল রাখিস।
ইয়াশা মাথা নাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা বই হাতে তুলে নিয়ে এসে এশার পাশে বিছানায় বসে পরে। আর মিসেস হেললনা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে।
চলবে….