প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৫

0
556

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৫
#আয়েশা_আক্তার

সাদাফের গান শেষ হওয়ার আগেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এশা। এশার দাঁড়ানো দেখে তানহাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

-কি হলো তোর?

-আমার শরীর খারাপ লাগছে বাসায় যাবো। তুই গান শোন, আমি গেলাম।

-শরীর খারাপ লাগছে আর তুই একা একা বাসায় যাবি? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? চল আমিও যাচ্ছি।
_________________________

সাদাফ গান শেষ করে দৌড়ে এসে এশাকে খুঁজে পেলো না। ওর বন্ধুরা সব জিজ্ঞেস করছে, কি খুঁজছে? ওর কানে সে কথা ঢুকছেই না। অনেকক্ষণ খুঁজেও না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পরে সাদাফ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে, আবারও হাড়িয়ে ফেললাম। হায় আফসোস!

তিনদিন কমপিটিশন শেষ হওয়ার পর সাদাফ বিজয়ী হয়। সে ভার্সিটির সুনাম অর্জন করে। তারজন্য ভার্সিটির শিক্ষকরা সবাই তাকে ভালোবাসে। ছাত্র – ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় সবাই ওর গানের ভক্ত। কিন্তু পর মনে হতে লাগলো, তার অপরিচিতার হয়তো তার গান ভালো লাগেনি তাই ওভাবে মাঝখান থেকে হারিয়ে গেলো। ভার্সিটি ক্যান্টিনে বসে এসবই ভাবছিলো সাদাফ হঠাৎ দেখে সেই অপরিচিতা প্রেম প্রেয়সী হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে আসছে। এক মুহুর্তের জন্য সাদাফের মনে হলো হার্ট মিস করে গেলো। এবার সাদাফ কিছুটা হা করে তাকিয়ে রইলো এশার দিকে। এশা তানহার সাথে কথা বলতে বলতেই ক্যান্টিনে এসেছিলো। সকালে বাসা থেকে খেয়ে না আসায় খিদেয় তার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে। তাই তো প্রথমবার ক্যানটিনে আসলো সে। সাদাফ এখনো হা করে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে অমিত সাদাফের চোখ অনুসরণ করে দেখলো একটা সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সাদাফ। এটা দেখে অমিত হইহই করে উঠলো। তার সাথে সাথে এতোক্ষণে বাকি বন্ধু গুলোও বুঝে গিয়েছে যে সাদাফ কার দিকে তাকিয়ে আছে শুধু যার দিকে তাকিয়ে আছে তার কোনো খেয়াল নেই। এশা গিয়ে ধপ করে একটা খালি টেবিলের চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তানহা গিয়ে দুজনের জন্য দুটো সমুচা আর দুটো পিয়াজু অর্ডার করে এশার সামনের চেয়ারে বসে বসলো। সাদাফ এখনো ঠিক আগের মতোই এশাকে দেখে যাচ্ছে। লাবণ্য কেশে বলে উঠলো,

-প্রেমে পড়েছিস গুরু?

-উহু, মনের দখলদারিত্ব দিয়েছি।

-আহা!

সবাই একসাথে আহা! বলে উঠায় সাকিব একটু নড়েচড়ে উঠে। তারপর সবাইকে বলে,

-তোরা আমার দিকে কি দেখছিস?

-আমাদের সাদাফ যে দিওয়ানা হয়ে গেছে সেটাই দেখছি।

-দিওয়ানা হইছি না ছাই!

-ছাঁইইইই? (সবাই একসাথে)

-হু, ছাঁই। তোরা পোড়া গন্ধ পাচ্ছিস না? এই মেয়ে সেদিনের পর থেকে আমাকে পোড়াচ্ছে।

-তারমানে এটাই সে নৌকায় দেখা মেয়েটি? ( হৃদয় বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে)

-হ্যাঁ।

-বাহ, তাহলে তো ভালোই। আমি এখনই কথা বলি গিয়ে একটু? (লাবণ্য হাসতে হাসতে বলে কথাটা)

-কথা বলবি? হ্যাঁ বল দোস্ত প্লিজ। এই মেয়েকে আমার চাই।

-তো কি বলবো গিয়ে, এই মেয়ে শুনো তোমাকে সাদফের চাই। এটা বলবো?

-হ্যাঁ, বল। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলা উচিত।

-আচ্ছা, যাচ্ছি।

-দাঁড়া লাবণ্য।

লাবণ্য উঠার আগেই প্রিতম বাঁধা দিয়ে বলে।

-আমার মনে হয় না হুট করে এখনই সাদাফকে নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে। তুই বরং আজ মেয়েটার নাম, পরিচয়, কোন ইয়ার এসব জিজ্ঞেস করে আয়। আর একটু ভাব জমিয়ে আয় তারপর কাল অথবা অন্য কোনো দিন না হয় সাদাফ নিজেই জানাবে।

-প্রিতম এইটা একদম ঠিক বলছিস। আমার সব কথা আমাকেই বলতে হবে। লাবণ্য তুই বরং পরিচিত হয়ে আয়।

লাবণ্য মাথা নেড়ে এগিয়ে যায়। তারপর এশার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ওর নাম, পরিচয়, কোন ইয়ার এসব জেনে ভদ্রতা সূচক তানহার সাথেও একটু কথা বলে। তানহা অভ্যাস অনুযায়ী লাবণ্যর সাথে বকবক জুড়ে দেয় অল্প ক্ষণের মধ্যেই। এশা মাঝে মধ্যে একটু একটু কথা বলছে শুধু। কথার মাঝখানেই তানহা বললো,

-আপু, আপনি আর আপনার বন্ধু অনেক ভালো গান করেন।

-কি বলো? তুমি আমার গান শুনেছো?

-হ্যাঁ, প্রায়ই শুনি।

-অহ আচ্ছা, আমি আর কি গাই ওই তো আমার বন্ধু সাদাফ। ও অনেক ভালো গায়।

সাদাফকে দেখিয়ে লাবণ্য কথাটা বললো। তানহা সাদাফকে দেখে খুশি হয়ে গেলো। কিন্তু এশার সাদাফকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে গেলো। তানহা লাবণ্যকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই এশা বলে উঠে,

-আপু, আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। কাল আবার আড্ডা দিবো আজ আসি।

-ওকে যাও তোমরা। ভালো থেকো।

তানহাকে কিছু বলতে না দিয়ে এশা তারহাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো। তানহা অবাক হয়ে এশার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ করে হাঁটা থামিয়ে বলে,

-এভাবে কিছু বলতে না দিয়ে চলে আসলি কেন?

-ঘড়িতে দেখ, ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। এসাইনমেন্ট বাকি আছে ভুলে গিয়েছিস? স্যার এসে আজ তোর কি অবস্থা করবে সেটা ভাব তানু।

তানহা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সত্যিই ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসের দিকে ছুটে যায়।

লাবণ্য ফিরে আসতেই অমিত জিজ্ঞেস করে,

– কি কথা হলো?

-কি কথা হবে আবার? সব জেনে এসেছি।

-সব কি কি সেগুলো তো বল।

-আরে বলছি, ওর নাম এশা। ফাস্ট ইয়ারে পড়ে বাসা ঢাকায়।

-তবে তো সাদাফের বাসার সাথেই।

-কি মামা, তোর তো কপাল খুলে গেলো।

সাদাফ লাজুক হাসলো শুধু কিছু বলতে পারলো না।
_____________________________

পরদিন,
এশা লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিলো। আজ তানহা নেই, ওর জ্বর এসেছে তাই ভার্সিটিতে আসতে পারেনি। তাই একা একা ক্যান্টিনে না গিয়ে লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনায় মন দিলো। কিছু দিন পর, ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা। গ্রামে থাকার কারণে এতোদিন পড়ায় গ্যাপ গিয়েছে। এশার হঠাৎ মনে হলো তার সামনে কেউ বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এশা সামনে তাকাতেই তার গলা শুকিয়ে গেলো। সে কোনো কথা না বলে বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু তার ডান হাতটা অন্য একটা পুরুষালী হাত চেপে ধরলো। এশা থেমে গেলো। পেছনে তাকানোর সাহস তার নাই। সাদাফ নরম সুরে বললো,

-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

-জী, বলুন।

-প্লিজ বসো দু’মিনিট কথা বলেই চলে যাবো আমি। এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বললে আশেপাশের কেউ সেটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না।

এশা বাধ্য হয়ে সাদাফের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলো। সাদাফ ঠোক গিলে বলতে শুরু করলো,

-তোমাকে আমার ভালো লাগে? তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমি বলছি না আমার সাথে তোমায় রিলেশনে যেতে হবে। তবে আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় দেখে ভয় পাও। আমাকে এড়িয়ে যেতে চাও। এটার কারণ কি?

এশা বাইরে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও। ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আর সে প্রথম দেখাতেই সাদাফের প্রেমে পড়েছিলো। তাকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু তারপর ও এশার মনে কোন এক বাঁধা কাজ করছে। ভালোবাসার মানুষের মুখে ভালোবাসি শুনেও সাড়া দিতে পারছে না সে। এর কারণ কি? এর কারণ এশার বন্ধু তানহা সাদাফকে ভালোবাসে। এশা স্বার্থপরের মতো সাদাফকে তানহার থেকে নিতে পারে না। অনেক কষ্টে এশা দুটো শব্দ উচ্চারণ করে বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে। সাদাফ আহত দৃষ্টিতে এশার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,

“এটা কি হলো, সে কত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো এশার জবাবের। কিন্তু এশা ক্লাসের সময় হয়ে গেছে বলে অজুহাত দিয়ে চলে গেলো!”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে