#প্রেম_প্রেম_খেলা(১৫)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
আদ্রিয়ান হঠাৎ অহনার হাত ধরে বললো, তুমি এসব কথা আমাকে আগে কেনো বলো নি?কেনো বলো নি আমার নিজের বাবা মা মোহনার সাথে এতো বাজে ব্যবহার করেছে।আর আমার নিজের ক্লোজ ফ্রেন্ডরা মোহনার সাথে এতো বড় অন্যায় করেছে।
অহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,আপনাকে এসব কথা যদি আগে বলতাম আপনি কি বিশ্বাস করতেন?উলটো তো আমাকেই মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিতেন।সেজন্য আমি সব প্রমাণ জোগাড় করে তবেই হাজির হয়েছি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু একবার তো বলে দেখতে পারতে।মোহনার সাথে যারা যারা এমন অন্যায় করেছে তাদের সব কয় টারে আমি নিজেই কিভাবে শাস্তি দিতাম।
অহনা তখন বললো এখন তো জানলেন।দিন এখন কি শাস্তি দেবেন।
অনিল তখন এগিয়ে এসে বললো, কাউকেই এদের শাস্তি দিতে হবে না।এদের শাস্তি আইন দিবে।
আদ্রিয়ানের আর কারো সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র রুচি হলো না।সে ভুল করেও তানহা,সানি,উল্লাস,লিথি আর টিনার দিকে তাকালো না।আদ্রিয়ান তার বাবা মার সাথেও একটা কথা বললো না।সে ঘৃণায় বিয়ের আসর থেকে চলে যেতে ধরলো।
তবে আদ্রিয়ানের আজ কেনো জানি কোনো কষ্টও হচ্ছে না।সে শুধু একটা কথাই ভাবছে তার আপন বলতে আর কেউ থাকলো না।কাকে সে বিশ্বাস করবে এখন?বিশ্বাস নামক শব্দ টাই যে তার ডিকশনারীতে রইলো না আর।
আদ্রিয়ান কে চলে যাওয়া দেখে তানহা তার পথ আটকিয়ে বললো,বিশ্বাস কর আদি আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি।তোকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচতে পারবো না।আদি আমাকে বাঁচা।
আদ্রিয়ান তখন তানহাকে বললো,হু আর ইউ?ডু
আই নো ইউ?
তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আদি এরকম করিস না আমার সাথে।বিশ্বাস কর আদি আমি এসব নিজের বুদ্ধিতে করি নি।আমি মোহনাকে অপছন্দ করতাম ঠিক আছে।তোর পাশে মোহনাকে সহ্য করতে পারতাম না এটাও ঠিক আছে।কিন্তু এইভাবে মোহনার বদনাম করতে চাই নি।এই বুদ্ধি টা আমাকে সানি দিয়েছে।সে বলেছিলো আমি যদি এই কাজটা করতে পারি তাহলে নাকি তুই মোহনাকে ঘৃনা করবি।ওর থেকে দূরে সরে যাবি।আর আমি এই সুযোগে তোর কাছাকাছি আসবো।তখন তুই আমাকে নাকি ভালোবাসবি।এই বলে তানহা এবার সানির কাছে চলে গেলো আর বললো,
এই তুই চুপ করে আছিস কেনো?বল সত্যি টা সবাইকে।
সানিও এবার আদ্রিয়ানের কাছে চলে এলো আর বললো, দোস্ত আমিও আমার নিজের বুদ্ধিতে এই কাজ করি নি।তবে এটা ঠিক যে আমিও মোহনাকে সহ্য করতে পারতাম না।কারন তোর সাথে মোহনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর থেকে তুই আমাদের কে তেমন একটা পাত্তা দিতি না।কেমন যেনো ইগ্নোর করতিস।তুই প্রায় সময়ই মোহনাকে নিয়ে আলাদা ভাবে টাইম স্পেন্ড করতিস।আগের মতো আমাদের সাথে কোথাও ঘুরতেও যাতিস না।সেজন্য মোহনার প্রতি আমাদের সবার ক্ষোপ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।
হঠাৎ একদিন তোর মা আর বাবা এসে আমাদের সবাইকে বললো,যে করেই হোক আদ্রিয়ানের কাছ থেকে এই মোহনা মেয়েটাকে দূরে সরে দাও।কারণ আমাদের ফ্যামিলির একটা স্ট্যাটাস আছে।এইরকম থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে আদ্রিয়ান কি করে রিলেশনে যেতে পারলো?দুইদিন পর তো তাকে বিয়ে করতেও চাইবে।ওই মেয়েকে আমরা আমাদের বাড়ির বউ কিছুতেই করবো না।
আন্টি আর আংকেলের কথা শুনে আমরা সবাই যুক্তি-বুদ্ধি করে এই আইডিয়া টা বের করি।আমরা জাস্ট তোর থেকে মোহনাকে দূরে সরাতে চাইছিলাম।কিন্তু এই ঘটনা টা যে এতোদূর গড়াবে সত্যি আমরা ভাবতে পারি নি।
আদ্রিয়ান তখন সানির দুই গালে ঠাসঠাস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
তোর মুখ আর কখনোই আমাকে দেখাবি না।তোর কোনো কথা শোনার রুচি নাই এখন আমার।এই বলে আদ্রিয়ান এক এক করে সবাইকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় দিয়ে বললো, ইন্সপেক্টর! কি জন্য দাঁড়িয়ে আছেন আপনি?আপনাকে কি এসব তামাশা দেখার জন্য ডেকে আনা হয়েছে?নিয়ে যান সব কয়টারে জেলে।এরা যেনো কোনোদিন আর ছাড়া না পায়।যত টাকা খরচ হয় হোক,তবুও যেনো এদের কে কেউ বের করতে না পারে।এরা আমার কোনোদিন বন্ধু ছিলো না আর থাকবেও না।যারা পিছন দিক থেকে ছুরি মারে তারা কি করে আমার বন্ধু হতে পারে?এই অমানুষ দের সাথে আমি এতোদিন ছিলাম ভাবতেই আমার ঘৃনা লাগছে।সামান্য কারণে তারা মোহনাকে আমার কাছ থেকে কি করে আলাদা করে দিলো?এই ভুলের কোনো ক্ষমা নাই।
নিলয় তখন এক এক করে সবাই কে গাড়িতে ওঠালো।কিন্তু যেই তমালিকা আর আতিক হাসান কে নিয়ে যেতে ধরলো,তখন আতিক হাসান চিৎকার করে বললো,ডোন্ট টাচ।আমাদের কে ধরার সাহস কি করে হয় তোমাদের?আমি উপর মহলে গিয়ে সবার নামে নালিশ করে সবার চাকরি শেষ করে ফেলবো।
নিলয় সেই কথা শুনে বললো, সেটা থানায় গেলেই দেখা যাবে। আপনার পাওয়ার আপাতত পকেটে পুরে রাখুন।কারো বাপের ক্ষমতা নাই আপনাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার।
অহনা এবার নিজে এসেও বেশ কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিলো তমালিকা আর আতিক হাসান কে।অহনা বললো,
একটা মেয়ের বয়সী নির্দোষ মেয়ের সাথে এতো বড় অন্যায় করতে কি আপনার বুকটা একবারও কাঁপে নি?একবারও কি মনে হয় নি এটা অন্যায় করা হচ্ছে মেয়েটার সাথে।আপনার নিজের মেয়ের সাথে কি এমনটা করতে পারতেন?
একে একে কতগুলো জীবন নষ্ট করলেন আপনারা?আমার বোন,বাবা শুধুমাত্র আপনাদের এই অপকর্মের কারনে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।অন্যদিকে আমার মা,মেয়ে আর স্বামীর শোক করতে করতে নিজেও দুনিয়া থেকে সারাজীবনের জন্য চলে গেছে।আমি এখন নিঃশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।না আছে আমার মা না আছে আমার বাবা না আছে আমার কোনো বোন।
অনিল তখন অহনাকে শান্তনা দিয়ে বললো, এই কাঁদিস না তুই।আজ তো তোর খুশির দিন।যা আনন্দ কর আজ তুই।মন খুলে হাস আজকে।আজকের এই দিনটা দেখার জন্য তো তোকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।এই বলে অনিল আদ্রিয়ানের বাবা মাকে টানতে টানতে গাড়িতে তুললো।
আজকের এই ঘটনা পুরো দেশের লোকের কাছে কাছে পৌঁছে গেলো।সবাই পুরো কাহিনী শুনে শুধু ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।আর অহনার সুনাম করতে লাগলো।এরকম বোন যদি কারো থেকে থাকে তাহলে তার জীবনে আর কি চাই?সবাই অহনার জন্য দোয়া করতে লাগলো।মেয়েটা বোনের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য কত কষ্টই না করেছে।নিজের মানসম্মানের কথাও চিন্তা করে নি।
মুহুর্তের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টার টা জনশূন্য হয়ে গেলো।এই কিছুক্ষন আগেই বিয়ের জন্য কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছিলো।আর লোকে লোকে সরগরম করছিলো।কিন্তু এখন একদম ফাঁকা।
অহনা এবার আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো, সরি।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আপনাকে কষ্ট দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না আমার।কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকে আপনার বিয়ের দিনই এই সত্য টা সবার সামনে আনতে হলো।আসলে আমি চাইছিলাম আমার বোনের সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের কথা সবার জানা উচিত।যেহেতু আপনার বিয়ে নিয়ে পুরো নেট দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে সেজন্য আজকেই আমি সত্যি টা সবার মাঝে জানিয়ে দিলাম।পারলে ক্ষমা করে দিয়েন আমাকে।আজ থেকে আমি ফ্রি হয়ে গেলাম।আমার বোনের সাথে অন্যায় করা লোকগুলো তো ধরা পড়লো।কিছুটা হলেও বোনটা আমার শান্তি পেয়েছে।এই বলে অহনা চলে গেলো।
অহনার সাথে সাথে টুশু,অর্পা আর সনিয়াও ছিলো।অহনা চলে যাওয়ার পর তারা আদ্রিয়ানের মুখোমুখি হলো।টুশু বললো,
ভাইয়া আমাদের একটা অনুরোধ রাখবেন?
আদ্রিয়ান কোনো উত্তর না দিয়ে ওদের তিনজনের দিকে অবাক নয়নে তাকালো।
টুশু তখন বললো, আমরা জানি আপনার আজ যথেষ্ট মন খারাপ,আর আমাদের এই সময়ে কথাটা বলা ঠিক ও হচ্ছে না।তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি।
–কি কথা?
সনিয়া তখন আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো আপনি আমাদের বোনের মতো ভাবতে পারেন।যদিও কোনোদিন আপনার নিজের বোনের মতো হতে পারবো না তবুও বোন হিসেবে একটা আবদার করতে চাচ্ছি।
আদ্রিয়ান তখন বললো,আগে বলবে তো কথাটা?
অর্পা তখন বললো ভাইয়া,মোহনা আপু তো আর জীবনেও আপনার জীবনে ফিরে আসবে না।তার জন্য কি আপনি আপনার এই সুন্দর জীবন টা এভাবে নষ্ট করবেন?প্লিজ ভাইয়া অহনাকে আপনি আপনার জীবনসঙ্গিনী করে নিন।দেখবেন আপনার জীবন থেকে সকল দুর্দশা কেটে যাবে।আপনি আপনার লাইফ টা নিয়ে অনেক বেশি খুশি থাকবেন।
অর্পার কথা শুনে আদ্রিয়ান একদম বোবা হয়ে গেলো।সে অহনাকে কি করে বিয়ে করতে পারে?না এটা সম্ভব না।
টুশু তখন বললো, ভাইয়া প্লিজ একবার অহনাকে বলে দেখেন না?আমাদের বিশ্বাস অহনা না করবে না।আমাদের বিশ্বাস সেও মনে মনে আপনাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।
আদ্রিয়ান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে ওদের তিনজনকে রেখেই চলে গেলো।
এদিকে অহনা জানেই না তার বান্ধুবীরা আদ্রিয়ান কে এসব বলেছে।
▪️🖤▪️
আদ্রিয়ান পুরোপুরি নিঃসঙ্গতায় ভুগতে লাগলো।।না আছে তার বাবা মা,না আছে কোনো বন্ধুবান্ধব।আদ্রিয়ান একদম পাগলের মতো ঘর বন্দি হয়ে থাকলো।তার হাতে যে দুইটা মিউজিক ভিডিওর কাজ ছিলো সেটা সে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।সে আগে মানসিক ভাবে স্ট্রং হবে তবেই তার নেক্সট প্রজেক্ট নিয়ে ভাববে সে।
তিন মাস পরের ঘটনা।অহনা তার ফাইনাল এক্সাম শেষ করে মামার বাড়ি যাবে বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।তার তো এখন আপনজন বলতে এই মামার বাড়ি টাই আছে।এই তিনমাসে অহনা আর আদ্রিয়ানের না দেখা হয়েছে না কোনো কথা হয়েছে।কেউ কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করে নি।তো আজ যখন অহনা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ তার আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হয়ে গেলো।একদম পাগল দের মতো হয়েছে তার চেহারা টা।চুলগুলো কত বড় বড় হয়েছে তবুও কাটে নি।দাঁড়ি মোচ সব বড় বড় হয়ে গেছে।অহনা তো চিনতেই পারছিলো না আদ্রিয়ান কে দেখে।আজ আদ্রিয়ান কে দেখে অহনার বেশ মায়া হতে লাগলো।কি হ্যান্ডসাম ছেলেটা এই তিন মাসের মধ্যেই কেমন যেনো হয়ে গেছে।
অহনাকে দেখে আদ্রিয়ান এগিয়ে আসলো।
এদিকে আদ্রিয়ান কে দেখে সবাই একের পর এক সেল্ফি উঠতে লাগলো।সে যে অহনার সাথে দুই চারটা কথা বলবে এই সুযোগ ও পাচ্ছে না।
আদ্রিয়ান বাস স্ট্যান্ডে এসেছিলো তার ফুপিকে নেওয়ার জন্য।আদ্রিয়ানের বাবা মা জেলে যাওয়ার পর থেকে কেউ না কেউ আদ্রিয়ান কে এভাবে দেখতে আসে।কোনোদিন তার খালামনি আসে তো কোনোদিন তার নানুর বাড়ি থেকে মামা মামি আসে।আবার কোনো দিন দূর সম্পর্কের আত্নীয়রাও আসতে থাকে।সেইরকম আজকে আদ্রিয়ানের ফুপি আসতেছে।
অহনা এবার নিজেই এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে।কিন্তু কি কথা দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না সে।
আদ্রিয়ান তখন ভীড় ঠেলে বললো,এক্সকিউজ মি।আমাকে যেতে দিন একটু।এই বলে সে অহনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
অহনা আদ্রিয়ান কে দেখে বললো,আপনি এখানে?
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমারও তো সেম প্রশ্ন।
অহনা তখন বললো,এক্সাম শেষ। সেজন্য মামার বাড়ি যাচ্ছি।
আদ্রিয়ান তখন বললো, আমার ফুপি আসবে সেজন্য তাকে নিতে এসেছি।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, নেক্সট মিউজিক কবে আসবে আপনার?
–এখনো ভাবি নি ওটা নিয়ে।তবে আসবে।
অহনা তখন বললো, ও।আচ্ছা।
আদ্রিয়ান তখন বললো, তোমার বান্ধুবীরা কেমন আছে?
–জ্বি ভালো।
অহনা মনে মনে ভাবতে লাগলো আদ্রিয়ান তার কথা জিজ্ঞেস না করে তার বান্ধুবীদের কথা জিজ্ঞেস করছে কেনো?
হঠাৎ অহনার গাড়ি এসে গেলো।সেজন্য সে বললো, আমার গাড়ি এসে গেছে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, ওকে,সাবধানে যেও।
অহনা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আর কোনো কথা বললো না।সে তার ব্যাগ নিয়ে সোজা সীটে গিয়ে বসলো।
এদিকে আদ্রিয়ানের ফুপি অনেকক্ষন এসেছে।আদ্রিয়ান কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তার ফুপাতো বোন রুপা বললো, ভাইয়া!এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যে?
আদ্রিয়ান একদম চমকে উঠলো।সে তখন বললো তোমরা এসেছো?ফুপি কই?
আদ্রিয়ানের ফুপি মিসেস তায়বা বানুও এবার এগিয়ে আসলো।
অন্যদিকে অহনা জানালা দিয়ে দেখতে লাগলো ওদের।আদ্রিয়ান তখন নিজেও তাকালো অহনার দিকে।অহনা সেজন্য এবার তার মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এদিকে রুপা আদ্রিয়ানের সাথে একের পর এক ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে লাগলো।
তারপর আদ্রিয়ান সবাইকে নিয়ে তার গাড়িতে গিয়ে বসলো।
▪️🖤▪️
অহনা তার মামার বাড়ি পৌঁছে গেলো।অনিল বাস স্ট্যান্ডে এসেছিলো অহনাকে নেওয়ার জন্য।
অহনার মামা আর মামি অনেকদিন পর অহনাকে দেখে ভীষণ খুশি হলো।তারা যে অহনাকে তাদের নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।অহনাকে মামি একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বললো, এই ঘরে থাকবি তুই।আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নে।আমি খাবার রেডি করছি।
অন্যদিকে অনিল আজ অফিসেই যায় নি।অহনা আসবে বলে সে আজ সারাদিন বাসাতেই ছিলো।
অহনা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার মামি কত রকমের খাবার বানিয়েছে তার জন্য।সব তার ফেভারিট ফেভারিট খাবার।
অহনা যখন দেখলো টেবিলে অনিল নাই তখন অহনা তার মামিকে বললো,মামি অনিল ভাইয়া কই?উনি খাবেন না?
অনিলের নাম নিতেই অনিল এসে হাজির।তখন সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করতে লাগলো।হঠাৎ অহনার ফোনে কল বেজে উঠলো। অহনা তখন খাওয়া বাদ দিয়ে ফোনটা রিসিভ করার জন্য চলে গেলো।
আদ্রিয়ান কল দিয়েছে তাকে।অহনা তখন সাথে সাথে রিসিভ করলো।
অহনা কল রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বললো, পৌঁছিছো তুমি?
–হ্যাঁ।
আদ্রিয়ান তখন বললো এইজন্যই কল দিয়েছিলাম।ওকে বাই।এই বলে আদ্রিয়ান কল কেটে দিলো।
অহনা তখন ফোনটা রেখে আবার খাবার টেবিলে চলে গেলো।অহনা যেতেই অনিল বললো, কে ফোন দিয়েছে?
অহনা তখন বললো আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ানের নাম শুনে অনিল বেশ অবাক হলো।তবে সে আর আদ্রিয়ানের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
অহনা তখন নিজেই বললো,আজ এখানে আসার সময় আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হয়েছিলো।সেজন্য তিনি কল করে বললেন,আমি পৌঁছেছি কিনা?
অনিল সেই কথা শুনে বললো, বাহঃ ভালোই তো কেয়ার করে দেখি।
অহনা অনিলের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।কারণ আদ্রিয়ান কে কল করা দেখে সে তো নিজেই অবাক হয়ে গেছে।
▪️🖤▪️
রাতের বেলা অহনার মামি তার কিছু গহনা আলমারি থেকে বের করে আনলো।আর অহনাকে বললো,দেখ তো কোন সেট টা পছন্দ হয়?
অহনা তখন বললো সবগুলোই তো সুন্দর।
মামি তখন একটা সেটা হাতে নিয়ে অহনাকে বললো,এই সেট টা পড়ে আয় দেখি।
অহনা সেই কথা শুনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হার টা পড়ে নিলো।
অহনার গলায় হার টা বেশ মানিয়েছে।মামি তখন বললো, তোর বিয়ে তে তুই এটাই পড়বি।
–বিয়ে?আমার বিয়ের কথা বলছো?
মামি তখন বললো,বিয়ের কথা শুনে এভাবে অবাক হলি কেনো?মনে হলো প্রথম তুই এই কথাটা শুনলি?
–না মানে?পড়াশোনায় তো শেষ হয় নি।
“কি মানে মানে করছিস?বিয়ের পর কি পড়াশোনা করা যায় না?এখন তোর গার্ডিয়ান বলতে তো শুধু আমরাই।সেজন্য তোর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব ও আমাদের।অনিল বললো সে নাকি তোকে বিয়ে করতে চায়।আমি আর তোর মামা সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।এখন তোর কি মতামত?
অহনা তখন বললো মামি আমি এখনি বিয়ে করবো না।
মামি তখন বললো,না করলি।কিন্তু এটা তো আগে বল অনিল কে তুই বিয়ে করবি কি না?
অহনা তো পড়ে গেলো মহাবিপদের মধ্যে।এখন কি করে সে মামিকে বলে অনিল সে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবে না।
চলবে,