#প্রেম_প্রেম_খেলা(১৪)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
মহা ধুমধামে আদ্রিয়ান আর তানহার বিয়ে হচ্ছে।একমাত্র ছেলের বিয়ে সেজন্য মিঃ আতিক হাসান কোনো কমতি রাখেন নি।মিসেস তমালিকা খন্দকার তো খুশিতে কথা বলতেই পারছেন না।যে ছেলে বিয়ে করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে আজ তিনি সেই ছেলেকে বিয়ের আসরে দেখতে পাচ্ছেন।
নবাবি নাগড়া, বাহারী পাগড়ি মাথায় দিয়ে রাজকীয় হালকা গোল্ডেন শেরওয়ানীতে রাজপুত্রের বেশে বর সেজে বসে আছে আদ্রিয়ান।
অন্যদিকে তানহা পড়েছে ম্যাজেন্টা কালারের পার্টি ল্যাহেঙ্গা যেটাতে বানেট বেইসের উপর চুমকি পুতির সিকোয়েন্সের কাজ। যা পড়ে তানহাকে বেশ গর্জিয়াস লাগছে।তানহার দিকে তাকিয়ে আর কিছুতেই চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।বিয়ের আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে বসে আছে সে।
এদিকে একের পর এক ছবি তুলছে সবাই।প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার পুরো অনুষ্ঠানের ভিডিও করছে।আর মিডিয়ার লোকেরা তো আছেই।জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আদ্রিয়ানের বিয়ে বলে কথা।
আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রবেশের পথ আর গেট তাজা গোলাপ, গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।তার পাশাপাশি রয়েছে অর্কিড ফুলের সমারোহ।ফুলের সৌন্দর্য যেনো আলাদা মাত্রা যোগ করেছে কমিউনিটি সেন্টার টাকে।
বর-কনের বসার জায়গা টাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তাজা ফুল, সুন্দর রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো ষ্টেজ দেখে সত্যি মুগ্ধ সবাই।আর পুরো কমিউনিটি সেন্টারে লাগানো হয়েছে ইলেকট্রিক লাইট যা থেকে বিভিন্ন রঙের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজকের এই সুন্দর মুহূর্ত টাকে ক্যামেরা বন্দি করে রাখছে সবাই।
চারিদিকে লাল নীল আলোর ছড়াছড়ি।
হঠাৎ চার বান্ধুবি একসাথে আসলো আদ্রিয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠানে। অহনাকে দেখামাত্র মিডিয়ার লোকেরা ঘিরে ধরলো তাকে।সবাই একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে লাগলো।সবচেয়ে কমন প্রশ্ন হলো আদ্রিয়ান আর আপনাকে নিয়ে একের পর এক নিউজ হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরা সবাই জানি আপনারা রিলেশনে আছেন।কিন্তু আদ্রিয়ান আপনাকে বাদ দিয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তানহাকে বিয়ে করছে কেনো?
অহনা এমন আজগুবি প্রশ্ন শুনে হা হা করে হেসে উঠলো।আর বললো কে কাকে বিয়ে করবে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।কিন্তু আমাকে আর আদ্রিয়ান কে নিয়ে যে নিউজ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণটাই গুজব ছিলো।আমাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না।
অহনা পড়েছে সোনালি কালারের চুমকি বসানো একটা গাউন।যা পড়ে অহনাকে একদম অপ্সরাদের মতো লাগছিলো।শুধু অহনা নয়,টুশু অর্পা আর সনিয়াও তাদের পছন্দমতো কালারের গাউন পড়েছে।জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আদ্রিয়ানের বিয়ে বলে কথা।
অহনা আর তার বান্ধুবীরা সোজা বর আর কনের স্টেজের দিকে গেলো।আর তাদের কে ওয়েলকাম জানালো।তানহা আজ অহনার সাথে খুব মিষ্টি সুরে কথা বললো।কারণ তার যে আজ সবচেয়ে খুশির দিন।তানহার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে আদ্রিয়ান কে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে যাচ্ছে।
তমালিকা খন্দকার অহনাকে দেখে আদ্রিয়ানের উপর ভীষণ রেগে গেলেন।তিনি আদ্রিয়ানের কানে কানে গিয়ে বললেন,
অহনাকে কেনো ইনভাইট করেছিস?
আদ্রিয়ান তখন বললো,এতে প্রবলেম কি?
–প্রবলেম কি মানে?আমি সিওর সে নিশ্চয় কোনো ঝামেলা বাধাবে।
আদ্রিয়ান তখন বললো মাম্মি, সবসময় অহনাকে নিয়ে এরকম নেগেটিভ চিন্তাভাবনা কেনো করো?এখন এসব কথা বাদ দাও।ও শুনলে মন খারাপ করবে।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে তমালিকা খন্দকার সরে গেলেন।তবে তিনি একজন কে নিযুক্ত করলেন অহনার ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য।কারণ অহনাকে তার সুবিধার মনে হচ্ছে না।
তমালিকা খন্দকার এবার আতিক হাসান কে বললো, তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলেন প্লিজ। বিয়ে টা হয়ে গেলে বাঁচি।
আতিক হাসান তখন বললো এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছো?বিয়ে তো হবেই আজ।
আদ্রিয়ান বার বার শুধু অহনার দিকে দেখছে।আর অহনাও আদ্রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু দুইজন দুইজনার যেই চোখাচোখি হলো তখন সাথে সাথে তারা তাদের চোখ ফিরিয়ে নিলো।অহনা এবার একটু দূরে সরে গেলো।আর ভাবতে লাগলো এটা কি ঠিক হচ্ছে?আদ্রিয়ানের তো কোনো দোষ নাই।তাহলে ও বেচারাকে কেনো সে কষ্ট দেওয়ার জন্য এভাবে উঠেপড়ে লাগছে।
পরে আবার অহনা নিজে নিজেই ভাবলো, না সে ঠিক কাজই করছে।তারা সবাই যেমন তার বোনকে অসম্মান করেছে আজ তাদেরকেও অসম্মান করার দিন এসে গেছে।তাদের অপকর্মের কথা আজ পুরো মিডিয়ার লোক জানবে।এক দুই মাস ধরে শুধু তাদের কে নিয়েই নিউজ হবে।এতেই মোহনার আত্না শান্তি পাবে।লুকোচুরি ভাবে তাদের কে শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ নাই।
অহনাকে একা একা দাঁড়িয়ে থাকা দেখে টুশু অর্পা আর সনিয়া এগিয়ে আসলো।আর বললো, কি রে মন খারাপ নাকি?এখনো সময় আছে আদ্রিয়ান কে তোর মনের কথা জানিয়ে দে।
অহনা তখন বললো তোরা দুই লাইন একটু বেশি বুঝিস।আমি যে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসি সেটা তোরা কি করে বুঝলি?
–তাহলে এভাবে একা একা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছিস?
অহনা তখন বললো, মন খারাপ না।আমি আজ খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছি।কারণ কিছুক্ষন পর এমন একটা চমক দিবো সবাইকে যে সবাই তা শুনে শূন্যে ভাসতে থাকবে।
–মানে?
অহনা তখন বললো তোরা বুঝবি না এসব।যা আনন্দ কর গিয়ে।কারণ যা আনন্দ করার এখনি করতে হবে।পরে আর করতে পারবি না আনন্দ।এই বলে অহনা গানের তালে তালে হঠাৎ ডান্স দিতে লাগলো।তার যে আজ আনন্দের দিন।
অহনার এমন উরাধুরা নাচ দেখে সবাই অবাক।অহনা তখন এক এক করে তার বান্ধুবীদের ও নিয়ে আসলো ডান্স করার জন্য।
অহনা হঠাৎ নাচ থামিয়ে দিয়ে বললো,সবার আনন্দ করা শেষ হয়ে গেলে আমি কিছু কথা বলতে চাই।সবাই শুনবে কি আমার কথা?
তমালিকা অহনার এমন পাগলামি দেখে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো, বলেছিলাম না এই মেয়ে কিছু একটা করবে।এখনো সময় আছে একে থামিয়ে দে।
আদ্রিয়ান এবার অহনার কাছে গিয়ে বললো, অহনা কি করতে চাচ্ছো তুমি?
অহনা তখন বললো আপনার কি ভয় লাগছে?
আদ্রিয়ান তখন বললো কেনো ভয় লাগবে কেনো?
–তাহলে চুপচাপ স্টেজে গিয়ে বসে থাকুন।
আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না কি হতে চলেছে।তবে অহনার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে মারাত্মক কিছু ঘটাতে যাচ্ছে আজ।
অহনা তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,আমি হলাম অহনা চৌধুরী। আমার বড় বোনের নাম হলো মোহনা চৌধুরী। কিন্তু আমার সেই বোনটাকে মেরে ফেলা হয়েছে।যে মেরে ফেলেছে তাদের নিজের হাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম আমি।কিন্তু আইনকে যথেষ্ট পরিমাণে শ্রদ্ধা করি আমি।সেজন্য আমি কাউকে নিজের হাতে শাস্তি দেই নি।তবে আজ তাদের আপনারাই শাস্তি দেবেন।
অহনার এমন কথাবার্তা শুনে সবাই ভাবলো এই মেয়েটা নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে।বিয়ের অনুষ্ঠানে কি বলছে এসব?
আদ্রিয়ান নিজেও এবার রাগান্বিত হলো অহনার উপর।অহনা কি হচ্ছে এসব?এরকম কেনো করছো?
অহনা তখন আদ্রিয়ান কে ধমক দিয়ে বললো আপনি চুপ থাকুন।একটা কথাও বলবেন না আজ।আজ আমি বলবো আর আপনারা সবাই শুনবেন।
এবার সাংবাদিকেরা এগিয়ে এলো অহনার সামনে।আর বললো ম্যাম আপনি কি বলতে চাচ্ছেন দয়া করে ক্লিয়ার করে বলুন।আমরা আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।
অহনা তখন বললো,আদ্রিয়ানের প্রথম ভালোবাসার নাম ছিলো মোহনা।যে আমার মায়ের পেটের বড় বোন।আদ্রিয়ান মোহনাকে ভালোবাসে বিধায় তার বন্ধুদের সেটা সহ্য হয় নি।তারা আমার নিষ্পাপ বোনের উপর কলঙ্গের দাগ লাগায়।এই আইডিয়া টা পুরো তানহার ছিলো।সে আদ্রিয়ানের ফোন থেকে মোহনাকে কল করে হোটেলে ডাকে।মোহনা আদ্রিয়ানের কল পেয়ে সেখানে চলে যায়।কিন্তু হোটেলের সেই রুমে তমাল নামের এক সন্ত্রাসী কে ভাড়া করে রাখা হয়।মোহনা রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে তমাল তার সাথে শারিরীক, মানসিক সব ধরনের নির্যাতন করে।শেষ মেষ আদ্রিয়ানের বন্ধুরাই আবার পুলিশকে খবর দেয়।আর পুলিশ মোহনা আর তমালকে ধরে ফেলে।
আমার নিষ্পাপ বোনটির নামে বাজে বাজে নিউজ করা হয়।সমাজে আমার বাবা মুখ দেখাতে পারছিলেন না।সেজন্য বাবা এসব নিউজ শোনার পর পরই হার্ট এটাক করে মারা যান।
অহনার কথা শুনে সানি, উল্লাস, লিথি আর টিনা পালিয়ে যেতে ধরলে অনিল তাদের ধরে ফেলে।কারণ অনিল পুরো কমিউনিটি সেন্টার টাকে আগেই পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখে।
তানহার পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।তবুও সে সাহস করে বললো,এই মেয়ে কি সব মনগড়া কথা বলছো?
অহনা তখন সবার সামনে আগে ইচ্ছামতো তানহাকে কয়েকটা চড় মারলো।তানহা অহনার চড় খেয়ে মাটিতে পরে গেলো।অহনা তখন বললো,
চুপ থাক তুই।একটা কথাও বলবি না।আদ্রিয়ান কে পাওয়ার জন্য তুই এইরকম একটা জঘন্য খেলা কি করে খেলতে পারলি?আমার বোনের নামে অপবাদ দিয়েও তো আদ্রিয়ানের ভালোবাসা পাস নি জীবনে।
এবার মিডিয়ার লোকেরা বললো ম্যাম আপনি সিওর এই কাজ তানহা করেছে?
অহনা তখন অনিল কে বললো,তমালকে নিয়ে এসো।অনিল তখন তমালকে ধরে নিয়ে এলো।অহনা তখন বললো এই হলো সেই তমাল।যাকে সানি আর উল্লাস ছুরিকাঘাতে নদীতে ফেলে দেয়।কিন্তু কোনো কারনে তমাল বেঁচে যায়।ওরা ভেবেছিলো তমালকে খুন করলে আর কোনো সাক্ষীই থাকবে না।কিন্তু অনিল খুঁজে বের করে তমালকে।
তমাল তখন এক এক করে সব সত্য কথা বলে দেয়।কিভাবে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা তাকে হায়ার করেছে মোহনার নামে অপবাদ দেওয়ার জন্য।
আদ্রিয়ান তার জায়গাতেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।সে মনে হচ্ছে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।তার অজান্তে এতোকিছু ঘটে গেছে আর সে কিছুই জানে না।তার মতো অপদার্থ আর কে আছে?
এবার মিডিয়ার লোকেরা বললো,তারপর কি হলো ম্যাম?মোহনা মারা গেলো কিভাবে?
অহনা তখন বললো, মোহনা নিজের ইচ্ছায় মারা যায় নি।তাকে মেরে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে।
আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে আসলো।আর বললো,কে মেরে ফেলেছে মোহনাকে?
অহনা তখন বললো যে মেরে ফেলেছে তাকে নিজের হাতে কি শাস্তি দিতে পারবেন?
আদ্রিয়ান তখন চিৎকার করে বললো,
নাম বলো তাদের?কে মেরে ফেলছে মোহনাকে।
অহনা তখন বললো আপনার বাবা মা।
অহনার কথা শুনে যেনো আদ্রিয়ানের পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।সে কি শুনছে এগুলো?
তমালিকা খন্দকার আর মিঃ আতিক হাসান এবার এগিয়ে এসে অহনাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, এই মেয়ে?কি সব উল্টাপাল্টা বকছো?আমরা কখন মোহনাকে খুন করতে গেলাম?ও তো নিজেই গলাই ফাঁস দিয়েছে।
আদ্রিয়ান তখন তার বাবা মাকে সরিয়ে দিয়ে বললো আপনারা দূরে সরে যান।আর অহনা তাড়াতাড়ি ক্লিয়ার করে বলো।
অহনা তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,
আদ্রিয়ান আর মোহনার মধ্যকার ভালোবাসা অনেক বেশি স্ট্রং ছিলো।যার কারণে মোহনার নামে এমন অপবাদ শুনেও আদ্রিয়ান মোহনাকে গ্রহন করতে রাজি হয়ে যায়।যদিও প্রথম প্রথম আদ্রিয়ান ও মোহনাকে অনেক অনেক আজেবাজে কথা বলে।মোহনা সব কথা তার পার্সোনাল ডায়রি তে লিখে যায়।কিন্তু আদ্রিয়ান বেশিক্ষন মোহনার সাথে অভিমান করে থাকতে পারে নি।সে মোহনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।আদ্রিয়ান প্রথমে তার বাবা মাকে জানায়।কিন্তু ওনার বাবা মা রাজি হয় না।তারা আদ্রিয়ানের সামনে মোহনাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলতে থাকে।তারা জানিয়ে দেয় মোহনার মতো এমন নষ্টা মেয়েকে তারা তাদের বাড়িতে বউ করে কিছুতেই আনতে পারবে না।তখন আদ্রিয়ান একা একা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় মোহনাকে।সবকিছু ভালোভাবেই চলছিলো।মোহনা আদ্রিয়ান কে বিয়ে করবে বলে তার ব্যাগও গুছিয়ে নেয়।হঠাৎ বিয়ের আগের দিন মোহনার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
তমালিকা অহনার কথা শুনে বললো, মোহনা নিজেই আত্নহত্যা করেছে।এতে আমাদের দোষ টা কোথায়?আর এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে কারো ছেলে একজন দুশ্চরিত্র মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে তার বাবা মা রাজি থাকবে না।নানা ধরনের কথা শোনাবে।
অহনা এবার তমালিকার কাছে এসে বললো,আপনি আমার গুরুজন সেজন্য দু চারটা চড় মারতে পারলাম না।তা না হলে আজ এই ভরা মজলিস থেকে আপনাকে মারতে মারতে বের করে দিতাম।
আমার বোন কি আত্নহত্যা এমনি এমনি করেছে?সে তো সবকিছু ভুলে আদ্রিয়ান কে বিয়ে করবে বলে রাজিই হয়েছিলো।আপনি আর আপনার স্বামী আমার বোনকে এমন এমন কথা বলেছেন যা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে নি।এজন্যই তো আত্নহত্যা করেছে।আপনারা দুইজন হলেন আমার বোনের খুনি।
মিঃ আতিক হাসান তখন বললো আমরা যে তোমার বোনকে আজেবাজে কথা বলেছি তা তুমি কি করে জানলে?প্রমান কি তার?
অহনা তখন বললো কিছু কিছু জিনিসের প্রমান দেওয়া যায় না আংকেল।সেটা আন্দাজ করতে হয়।
আতিক সাহেব তখন বললো তুমি আন্দাজ করলেই হবে নাকি?আইন প্রমাণে বিশ্বাস করে।
অহনা তখন বললো আমি কি প্রমাণ জোগাড় না করেই এসব বলছি?এই বলে অহনা অনিল কে বললো,চাচা কে ডেকে আনো।
অনিল অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের বাসার পুরাতন ড্রাইভার কে ডেকে আনলো।যখন তমালিকা আর আতিক সাহেব মোহনার বাড়িতে গিয়েছিলো তখন রতন চাচাই গাড়ি ড্রাইভ করেছে।কিন্তু রতন এখন আর আদ্রিয়ানের বাসায় থাকে না।তার বয়স হয়েছে দেখে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রতন চাচা সবার সামনে সত্য টা প্রকাশ করলো।তিনি বললেন হ্যাঁ আমিও ছিলাম সেদিন।আতিক স্যার আর তমালিকা ম্যাডাম সেদিন মোহনাকে অনেক অপমান করেছিলো।তাকে বলেছিলো তোমার কি যোগ্যতা আছে আমার ছেলেকে বিয়ে করার?এরকম নষ্ট চরিত্রের মেয়েদের কারনে ভালো বংশের ছেলেরা দুশ্চরিত্র হয়ে যায়।আমার সহজ সরল ভালো ছেলেটা কি কারণে এরকম বেশ্যা মেয়েকে বিয়ে করতে যাবে?তোমার কি বিবেকেও বাঁধলো না একবার।যদি তুমি ভালো বংশের মেয়ে হয়ে থাকো আর এক বাপের জন্মা হয়ে থাকো খবরদার আমার ছেলের সামনে আর আসবা না।তোমার মতো মেয়েদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নাই।তোমরা হলে সমাজের অবর্জনা।
সেই দিনই মোহনার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
সবকিছু প্রমাণ জোগাড় করেই অহনা আজ মাঠে নেমেছে।সে চাইছিলো তার বোনের সাথে হওয়া অন্যায় টা সবাই জানুক।আর সবার সামনে অপরাধীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাক।সেজন্য অহনা আজ আদ্রিয়ানের বিয়ের দিনই সমস্ত সত্যি ফাঁস করে দিলো।কারণ আজ আদ্রিয়ানের বিয়ে উপলক্ষে সবাই এসেছে।
চলবে,