#প্রেম_প্রেম_খেলা(০৯)
বোনাস পর্ব
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
তানহার মুখে আদ্রিয়ান আর অহনার কথা শুনে উল্লাস,সানি আর লিথি যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।
তারা সবাই বললো, এতোদিন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমরা বিশ্বাস করি নি।এমনকি টিভির চ্যানেলেও আদ্রিয়ান আর অহনাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে তবুও আমরা বিশ্বাস করি নি।কিন্তু আজ এই কথা শোনার পর মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান আর অহনা সত্যি সত্যি প্রেম করছে।কিন্তু আদ্রিয়ান আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে এতো বড় সত্যি টা লুকাতে পারলো?
লিথি তখন বললো আদ্রিয়ান মনে হয় আর আমাদের বন্ধু ভাবে না।সেজন্য এভাবে এড়িয়ে চলছে।এতো বড় একটা খবর সে আমাদের জানালো না।
তানহা তখন বললো,এতে আদ্রিয়ানের কোনো দোষ নাই।আমার মনে হচ্ছে অহনার কোনো উদ্দেশ্য আছে।তাছাড়া এই মেয়ে হঠাৎ করে এভাবে আদ্রিয়ানের পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে কেনো?
সানি তখন বললো, এতো কিছুর পর ও তুই আদ্রিয়ান কে বিশ্বাস করছিস?
–হ্যাঁ করছি।কারণ ওকে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।সেই কলেজ লাইফ থেকে ওর সাথে আমি আছি।একসাথে আমরা ভার্সিটি লাইফও শেষ করেছি।ও যে কোনো মেয়ে মানুষের উপর আসক্ত হবে এটা কেউ আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না।
উল্লাস তখন বললো, ব্যাপার টা আমাকেও বেশ ভাবাচ্ছে।অহনা হঠাৎ কোথায় থেকে উদয় হলো?
কিছুক্ষন পর আদ্রিয়ান আসলো ওদের মাঝে।
আদ্রিয়ান কে দেখে কেউ কোনো কথা বললো না।
আদ্রিয়ান ওদের মুখ চোখ দেখে বুঝে ফেললো তানহা নিশ্চয় ওদের কে সবকিছু বলে দিয়েছে।
সেজন্য আদ্রিয়ান বললো,
দোস্ত তোরা যেটা ভাবছিস সেরকম কিছুই নয়।অহনা নিজেই গিয়েছে আমাদের বাসায়।আর গিয়েই কি শুরু করেছে যা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।
সানি তখন বললো,দোস্ত শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দে।তুই কি সত্যি অহনাকে ভালোবাসিস?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,আমি যে বার বার বলতেছি আমি অহনাকে ভালোবাসি না।তারপর ও তোদের বিশ্বাস হচ্ছে না?
উল্লাস সেই কথা শুনে বললো, দেখ আদি।আমরা তোকে অনেক বিশ্বাস করি। বাট ব্যাপার টা এখন খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অহনাকে তোর থেকে দূরে সরে দে।তা না হলে এই মেয়ে যে কি করবে তুই ভাবতেও পারবি না।
আদ্রিয়ান তখন বললো হ্যাঁ সেটাই করতে হবে।আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে অহনার সাথে ভাব জমাতে চাইছিলাম সে উদ্দেশ্য তো আর পূরন হলো না।তাহলে ওকে কেনো রাখতে যাবো আমার জীবনে?
তানহা সেই কথা শুনে বললো তাহলে ওকে তোর সত্যি কথাটা বলতে হবে এখন।তুই আজকেই বলে দে অহনাকে।তা না হলে অহনা কিন্তু তোর পিছু কিছুতেই ছাড়বে না।
আদ্রিয়ান কথা দিলো আজকেই সে অহনার থেকে তার আংটি ফেরত নেবে।আর অহনাকে ডাইরেক্ট বলে দেবে সে তাকে ভালোবাসে না।
উল্লাস তখন বললো আমি তাহলে নেক্সট ভিডিওর জন্য আবার একটা নিয়োগ দেই।অহনার থেকেও অনেক সুন্দর আর স্মার্ট মেয়ে বাছাই করবো আমি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অহনা আজ আদ্রিয়ানের বাসাতেই আছে।কারণ মিসেস তমালিকা আজ আর যেতে দেন নি অহনাকে।আদ্রিয়ান যেহেতু আজ চলে যাবে সেজন্য তিনি চাইছিলেন আজ অহনা তাদের বাসাতেই থেকে যাক।
আদ্রিয়ান আজ রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা ছাড়বে।সেজন্য আদ্রিয়ান চাইছিলো অহনাকে সে সত্যি টা বলেই যাবে।তাহলে সে একমাস পর দেশে এসে একদম নির্ঝামেলায় তার কাজে মন দিতে পারবে।
আদ্রিয়ান শুধু সুযোগ খুচ্ছে।কিন্তু বলতে পারছে না।কারণ অহনা এখন পর্যন্ত তার সামনেই আসে নি।
অন্যদিকে অহনা রুমে বসে থেকে কাঁদছে।আসলে আদ্রিয়ান আজ চলে যাবে দেখে অহনার মন টা ভীষণ খারাপ।সেজন্য সে একা একা রুমের মধ্যে বসে কাঁদছে আর চিন্তা করছে এই এক মাস সে আদ্রিয়ান কে না দেখে থাকবে কি করে?
হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার রুমে প্রবেশ করলো।আর এসেই বললো,অহনা তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই।
কিন্তু অহনা আদ্রিয়ানের গলা শোনামাত্র দৌঁড়ে এসে আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।এই এক মাস আমি আপনাকে না দেখে কি করে থাকবো?
আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে আর তার কান্দাকাটি দেখে সে কি বলতে এসেছিলো সেটাই ভুলে গেলো।আদ্রিয়ান একদম বোবার মতে হয়ে রইলো।এদিকে অহনা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর বলছে,বিদেশ গিয়ে আমাকে আবার ভুলে যাবেন না তো?
আদ্রিয়ান এবার তার বুক থেকে অহনাকে সরিয়ে দিলো।আর তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো, এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি?এইভাবে কেউ কাঁদে?মানুষের আপন কেউ মারা গেলেও তো এভাবে কেউ কাঁদে না।
অহনা তখন বললো আমার তো সেরকমই মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার প্রিয় মানুষ টা আমাকে ছেড়ে কত দূর চলে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান এবার আবার হেসে উঠলো। সে হাসতে হাসতে বললো,তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?কি জন্য ভালোবাসো?এতো ভালোবাসার একটা রিজেন দেখাও।
অহনা তখন বললো জানি না আমি।শুধু জানি আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।যে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই।
আদ্রিয়ান তখন বললো, অহনা!একটা সত্যি কথা বলবো শুনবে?
–জ্বি বলেন।
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি জানি কথা টা শুনলে তুমি ভীষণ মন খারাপ করবে।কিন্তু কিছু করার নাই আমার।এই সত্য টা আড়াল করে আমি তোমাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছি।
অহনা তখন বললো,কি এমন কথা?
আদ্রিয়ান তখন বললো, আই এম সরি অহনা।আমি তোমাকে কখনো কোনোদিন ভালোবাসি নি।আর বাসতেও পারবো না।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো, মানে?কি বলছেন এসব?
–হ্যাঁ ঠিক বলছি।আমি তোমার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করেছি এতোদিন। যাতে করে তুমি আমার সব কথা শোনো।আর আমার কথামতো প্রতিটা ভিডিওর জন্য কাজ করো।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হা হয়ে রইলো।এই কথাগুলো কি সত্যি আদ্রিয়ান বলছে?অহনার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আদ্রিয়ান তখন বললো, আমি তোমাকে বাকি সবার মতো ভেবে এসেছি।কিন্তু তুমি যে সম্পূর্ণ আলাদা টাইপের মেয়ে তা আমি আজ দিয়ে বুঝে গেলাম।অনেক মেয়েই আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু তারা সবাই তাদের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আসে।আমি তোমাকেও সুযোগ দিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা গ্রহণ করো নি।
তুমি যে শুধু আমাকেই ভালোবাসো এটা আমি বুঝে গেছি।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে কোনো উত্তর দিলো না।কারন তার যে আজ কথা বলার শক্তি টাই নষ্ট হয়ে গেছে।
আদ্রিয়ান তখন বললো আই এম সরি অহনা।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
অহনা এবার কথা বলে উঠলো।সে এবার তার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
আমাকে কেনো ভালোবাসা যায় না সেটা কি জানতে পারি আদ্রিয়ান ?
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি একসময় মোহনা নামের একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতাম।তাকে আমি আজও ভালোবাসি।সেজন্য দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়তে চাই না অহনা।কারণ আমি এখনো আমার ফাস্ট ভালোবাসার মানুষের প্রতিই আসক্ত।তার জায়গায় আমি অন্য কোনো মেয়েকে বসাতে পারবো না।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, সেই মেয়ে কোথায় এখন?
আদ্রিয়ান তখন বললো জানি না সে কোথায় আছে?তবে আমি তাকে অনেক খুঁজেছি।
অহনা তখন বললো কি হয়েছিলো আপনাদের মধ্যে?যে কারণে আপনারা আজ আলাদা?
আদ্রিয়ান তখন বললো এটা একান্তই আমার পার্সোনাল ম্যাটার।সেজন্য বলতে পারছি না।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,হায় রে ভালোবাসা।ভালোবাসা মানুষ কে সত্যি অন্ধ করে দেয়।
যে মেয়ে আপনাকে ঠকিয়েছে সেই মেয়েকে আপনি এখনো ভালোবাসেন?
যার জন্য আপনার সুন্দর জীবন টা এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো সেই খারাপ, দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য এখনো অপেক্ষা করছেন?
আদ্রিয়ান এবার চিৎকার করে বলে উঠলো মুখ সামলিয়ে কথা বলো অহনা।সে আমার কাছে সবসময়ই পবিত্র।তার চরিত্র নিয়ে খবরদার কথা বলবে না।
অহনা এবার নিজেও চিৎকার করে বললো সেদিন আপনি কই গিয়েছিলেন মিঃ আদ্রিয়ান? যেদিন মোহনাকে সবাই মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো?
সেদিন আপনি কই মুখ লুকিয়ে বসে ছিলেন যেদিন মোহনা আপনার কাছে ছুটে এসে বার বার বলেছিলো, মানুষের কথা বিশ্বাস করো না আদি।প্লিজ আমাকে এক্সসেপ্ট করে নাও।
সেদিন কই গিয়েছিলেন আদ্রিয়ান? যেদিন অপমান সহ্য করতে না পেরে মোহনা আত্নহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো?
আর আজ আপনি এখনো সেই ভালোবাসার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেছে আছেন?অথচ যখন মূল্য দেওয়ার কথা ছিলো তখন তাকে ঘৃনা করেছেন।নিজের মুখে আপনার জীবন থেকে তাকে সরিয়ে যেতে বলেছেন।
কেনো করেছেন এমন?
অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের যেনো পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো।অহনা এসব কি বলছে?অহনা মোহনার কথা জানলো কি করে?
আদ্রিয়ান মোহনার কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনি অহনা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এদিকে আদ্রিয়ান অহনা অহনা বলে চিল্লাতে লাগলো।কিন্তু অহনা আর পিছন ফিরে তাকালো না।তখন আদ্রিয়ান দ্রুত গিয়ে অহনাকে ধরে ফেললো,আর বললো তুমি কে?
অহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত সরে দিয়ে বললো আমি আপনার জীবন টা তছনছ করার জন্য এসেছিলাম আদ্রিয়ান। আপনাদের পুরো পরিবার কে ধব্বং করতে চেয়েছিলাম যেমন ভাবে আপনি আমার পরিবারকে ধবংস করেছেন।কিন্তু আফসোস আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।কারন আপনি যে এখনো আমার বোনকে ভালোবাসেন।আর আপনার বাবা মার মতো ভালো মানুষ যে কেউ হতেই পারে না।
চলবে,