#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[২৮] (অন্তিম পার্ট)
সুসজ্জিত এক আবাসিক হোটেলের রুমের ঠিক মধ্যেখানে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে স্পর্শী। পুরো রুমে লাল ও সাদা বেলুন, সুগন্ধি মোম এবং ফুল দিয়ে সাজানো। বিশাল বড় রুমটার
জানালা থেকে শুরু করে বিছানার চাদরটাও ফকফকে সাদা
রঙের। দামী কার্পেটে মোড়া টাইলস্ করা মেঝে। এককথায় রুমের ডেকোরেশন অসম্ভব সুন্দর। রুদ্র আস্তে করে দরজা আঁটকে স্পর্শীর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটা অবাক নেত্রে
তাকিয়ে দেখছে চারিপাশ, তার চোখে জল, বিষ্ময়, ও খুশির ছাড়াছড়ি। রুদ্র মুচকি মুচকি হাসছে বোকা মেয়েটার কান্ড দেখে। খুব পছন্দ হয়েছে মুখে বললেই হয় কান্নাকাটি করতে হবে কেন, আশ্চর্য কারবার! অতঃপর দুপা এগিয়ে আচমকা
স্পর্শীকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখল। কিয়ৎকাল পার করে ঘাড় কিঞ্চিৎ বাঁকা করে আদুরেভাবে জিজ্ঞাসা করল,
–‘খুশি তো?’
-‘খুবব! এটাও আশা করি নি তাও তোমার থেকে।’
-কেন, কেন?’
-‘আমাকে খুশি করার সময় আছে নাকি তোমার?’
-‘এখন থেকে থাকবে আর কখনো অজুহাত দায়ের করব না, বোঝা গেল?’
-‘কেন, এখন থেকে কি এমন হবে যে আমার জন্য তোমার অহরহ সময় থাকবে? না মানে রাজনীতিবিদ বলে কথা।’
একথা শুনে রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হেসে তার গলায় মিষ্টি আদর এঁকে তাকে সামনে ঘুরিয়ে চোখে চোখ রেখে পুনরায় হাসল। কেন জানি ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। গাড়িতে আলোচনার পর
স্পর্শী নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চালাচ্ছে। পাহাড়
সমান অভিমান লুকিয়ে রেখে যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ তার ভাব-ভঙ্গিসহ সর্বাঙ্গে অস্বাভাবিকতার ছাপ, হাত কাঁপছে, শরীর দুলছে। হাজবেন্ডের ভালোর জন্য স্পর্শীদের মতো ওয়াইফদের এমন চাওয়াটা স্বাভাবিক, সেই হাজবেন্ড যদি সেকথা বোঝা তো দূর উল্টে রং যুক্তি গছিয়ে একের পর একটা অহেতুক যুক্তি দায়ের করে তখনই কী বা বলার থাকে। তবে স্পশী এত সহজেই মেনে নিবে এটা আশা করে নি। কারণ বিয়ের পর থেকে প্রতিটা মুহূর্ত সে রাজনীতি বিরুদ্ধে। কত কান্ড না করে চলেছে রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। অথচ আজ রাজনীতি ছাড়ার শর্ত জুড়ে দিলে প্লে বয়ের ব্যাপারটা। এই প্রস্তাবে রাখার পরপরই একটা চড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু না, এবারো স্পর্শী হতবাক করে দিয়ে মেনে নিলো। তবে মেয়েটার মনের উপর ঝড় বয়ে
যাচ্ছে তখন থেকে সেটা ভালোভাবেই অবগত সে। মনে মনে এসব ভেবে রুদ্র তাদের দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলো। দু’হাতে স্পর্শীর
দুই গাল ধরে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাল। অদ্ভুত সেই দৃষ্টি! রুদ্রকে মন কেমন করা চাহনিতে তাকাতে দেখে স্পর্শী নিজে চোখে চোখ রাখল তার চোখে। না বলা কথা ছুঁড়ে দিলো ব্যক্তিগত
পুরুষটার দিকে। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো মনের বার্তা।
তবে ঠোঁট হাসি নেই। লজ্জার ছিঁটেফোঁটাও নেই তার চোখে মুখে। অথচ এই মুহূর্তে লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠার কথা, রাঙা বধূর মতো মুখ লুকানো কথা তার প্রশ্বস্ত বুকে। তাছাড়া এই রুমের ডেকোরেশন দিচ্ছে অন্যকিছুর ইঙ্গিত। যা এতক্ষণে বুঝেও গেছে স্পর্শী। তার এই নিশ্চুপতার কারণটা বোধগম্য
হচ্ছে না রুদ্রর। সে জহুরি চোখে তাকিয়ে মন পড়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। তখন স্পর্শী হঠাৎ রুদ্রর চোখের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে দিলো। রুদ্রর গলা জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেলো, রুদ্র চোখ খুলতে গেলে চোখের উপর হাত রেখে কানে কানে বলল না বলা অবধি চোখ না খুলতে। রুদ্র চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে অনুভব করতে লাগল স্পর্শীর ছোঁয়া। সে একটু একটু করে ছুঁয়ে দিচ্ছে রুদ্রর কপাল, গাল, চিবুকসহ, প্রশ্বস্ত বুক। রুদ্র মিটিমিটি হাসছে। ওকে হাসতে দেখে স্পর্শী
রুদ্রর বুকের বাঁ পাশে এক হাত রেখে সেখানেও ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
-‘আমি এখন যা বলব মন দিয়ে শুনে একটা কল্পরাজ্য তৈরি করবে। তারপর আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে উপলব্ধি করবে আমি অবস্থান, ওকে?’
-‘ওকে।’
স্পর্শী তার গলা পরিষ্কার করে নিজেকে সামলে বলতে শুরু করল। ধরো, একদিন অনেক রাত করে বাসায় ফিরলে তুমি, ড্রয়িংরুমে বসে আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে রুমের দিকে পা বাড়ালে। রুম বন্ধ। আমি আছি সেইই রুমে।
দরজার নিচে গাঢ় আঁধার থাকায় বুঝলে রুমটা অন্ধকারের ডোবা। নাম ধরে ডাকলে আমি দরজা খুললাম না। বারবার দরজা নক করলেও না। তোমার ডাকাডাকিতে উপস্থিত হয়ে গেল বাকি সদস্যরাও, সকলে আমাকে দরজা খোলার তাড়া দিতে থাকল। না, না পুরো কথা শোনো আগে চোখ খুলিও না আমি গলায় ফাঁ/স দেওয়ার কথা বলব না। এত সহজে ছাড় পাবে না তুমি। যতদিন বেঁচে আছি তোমাকে বিনা দরখাস্তে জ্বা/লিয়ে পুঁ/ড়িয়ে খাঁক করে দিবো। ধুর, পরেরটুকু শোনোই
না রে বাবা রোমান্টিক কাহিনি বলছি আমি, চুপ করে শোনো শুধু। তারপর যখন আমি দরজা খুললামই না তখন তোমরা সবাই মিলে ভাবলে আমি সুই/সাইড করেছি, মনে মনে ভয় পেলে, ঠিক করলে দরজা ভাঙবে, ভাঙলেও তাই। কিন্তু চট
করে দরজা খুলে লাইট জ্বালিয়ে দেখলে নগ্ন অবস্থায় আমি অন্য পুরুষের বুকে।কারো উন্মুক্ত বুকে লেপ্টে আছে তোমার স্পর্শী, তোমার ভালোবাসা, তোমার প্রাণ। তার সর্বাঙ্গে অন্য পুরুষের স্পর্শ। অচেনা পুরুষের দেওয়া লাভ বাইট সুস্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠেছে তোমার স্পর্শীর নগ্ন শরীরে। তুমি……।
এইটুকু বলে স্পর্শী আর একটা শব্দও ব্যয় করতে পারল না, স্বজোরে এক থাপ্পড়ে ছিঁটকে পড়ল বেডের উপরে। হ্যাঁচকা টানে তাকে উঠে বসিয়ে রুদ্র আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তার বাম গালে। ছিঁটকে খাটের কোণায় বারি খাওয়ার আগে তাকে ধরে রুদ্র বিছানার ফেলে গলা চেপে ধরল। এতই শক্ত করে ধরেছে স্পর্শীর অবস্থা বেগতিক। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। ওকে অঝরে কাঁদতে দেখে রুদ্র আরো রেগে গেল। রাগে জ্ঞাণশূন্য হয়ে বাজখাঁই গলায় বলে উঠল,
-‘এতদিন এই হাতে এই বুকে আগলে রেখেছি আজ এহাতে তোকে মেরে এই হাতে দিয়েই তোর কবরে মাটি দিবো। অন্য পুরুষের ছোঁয়া পাওয়ার শখ চিরতরে মিটিয়ে দিবো। অন্য পুরুষের বুকে লেপ্টে থাকার পরিকল্পনা করিস, এত স্পর্ধা!
আর কী কী যেন বললি?অন্য পুরুষের বাইট তোর শরীরে..!
এই মুহূর্তে আগে আমাকে সামলা এরপর নাহয় যাস অন্য পুরুষের সংস্পর্শে।’
একথা বলে হাতের বাঁধন ঢিলে করে কাছে আসতেই স্পর্শী তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কাশতে থাকল। দৌড়ে গিয়ে একটু পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসতে হাসতে বলল,
-‘অন্যকে জ্বলাতে খুব ভালো লাগে?এসব শুনে এখন কেমন লাগছে? কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট বুঝি? আহারে। যখন আমাকে প্লে বয় হওয়ার কথাটা বললে ঠিক এভাবেই আমার বুকটাও কেঁপে উঠেছিল। ভীষণ, ভীষণ, জ্বালা পোড়া হচ্ছিল আমার অন্তদেশে তাইই এভাবেই শোধ নিলাম। সেই সঙ্গে আরেকটা কথা শুনে নাও তুমি যদি প্লে বয় হও। আমি এরচেয়ে আরো তিনগুণ খারাপ হবো, হবোই হবো। আমাকে যদি একভাগে পো/ড়াতে চাও আমিও তোমাকে কোনো না ভাগে পু/ড়ি/য়ে
ছারখার করে দিবো। তুমি যদি দশটা মেয়ের সঙ্গে শুতে চাও
আই মিন পুনরায় মুখে উচ্চারণ করো তবে আমি সত্যি সত্যি
বিশটা ছেলের সঙ্গে..!
-‘ তোকে তো আজ…।’
-‘খবরদার কাছে আসবে না। তোমার ভংচং মার্কা কাহিনীতে আমি অতিষ্ঠ। একটুও ভয় পাই না তোমাকে। গাড়িতে বয়াণ শুনে এতক্ষণ ভাবছিলাম কী করা যায়। ভেবে দেখলাম তুমি সর্বদা নিজের স্বার্থে অনড় থাকো তাই আমাকে আমার স্বার্থ দেখতে হচ্ছে।’
-‘ এসব বা*লের কাহিনি করে মুহূর্তটাকে নষ্ট না করলেই কী নয়? তোর এই কাহিনি দেখতে এখানে এনেছি? তাছাড়া খুব তো বলিস আমি কাছে আসি না, এই করি না, সেই করি না, হ্যান ত্যান কত কি! এখন যখন সুন্দর মুহূর্তে কাটানোর চেষ্টা করলাম ওমনি তোর কাহিনি শুরু হয় গেল। আজাইরা কথা এখনই বলতে হবে।’
-‘কেন বলবো না? তুমি রাজনীতিও ছাড়বে না, বেবি নিতেও দিবে না, প্লে বয় হবা, অন্য মেয়ের সঙ্গে শুতেও যাবে। আমি
সতী সাবিত্রী হয়ে তোমার শর্ত মেনে নিবো? আমাকে পাগলা কুত্তায় কামড়েছে, হ্যাঁ? আমাকে মুক্তি দিয়ে তুমি যখন যেটা ইচ্ছে তাইই করো। কেউ বলার নেই কওয়ার নেই। তবে হ্যাঁ, এটা ফাইনাল আমি আর তোমার সঙ্গে থাকব না।’
-‘তোর থাকা- থাকির মায়েরে বাপ। আজকে তো তুই শেষ।’
একথা বলে রুদ্র ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে থাকল। ওর এগোনো দেখে স্পর্শী ছুটে পালানোর আগে আঁটকে পড়লো শক্ত হাতের কবলে। মুহূর্তেই নিজেকে আবিষ্কার করল রুদ্রর কোলে, উন্মাদিত রুদ্র আজ আর না কোনো দূরত্ব রাখল না,
বাড়তি কোনো কথায়ও ভাবল না, মন এবং শরীরের কথাকে সায় দিলো। স্পর্শীর অভিযোগের দুয়ারে তালা ঝুলিয়ে রাখ ঢাখ উন্মুক্ত করে তাকে আপন করে নিলো। তবে বিশেষ সেই মুহূর্তে স্পর্শীকে আদরে ডুবিয়ে জানিয়ে দিলো অজানা কিছু কথা।যা শুনে স্পর্শীর ঠোঁটে হাসি ফুটল বিজয়ের হাসি,অশ্রু ভরা চোখে ভাসতে থাকল ঝমমকে খুশি। পরেরদিন সকালে আর্বিভাব হলো নতুন এক সকালের, আগের রুটিনে খানিক
পরিবর্তন আসল তাদের। মান-অভিমান ভুলে আনন্দে কেটে গেল বেশ কয়েকটা দিন। এই কয়েকদিনে রুদ্র সত্যি সত্যিই রাজনীতি থেকে নিজেকে সরানোর পদক্ষেপ নিলো। স্পর্শীর এতদিনের চাওয়াকেই প্রধান্য দিলো। সাংবাদিকের মাধ্যমেই
ছড়িয়ে সে নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে না নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াবে। হঠাৎ সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো কারণ, বারণ, কিচ্ছু নেই এটা তার মর্জি। এই নিয়েও কম জলঘোলা হলো না। নানান যুক্তি, কটুক্তি, অপবাদ, মিথ্যাচার, ভেসে বেড়াতে লাগল আকাশে বাতাসে, এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ এই
রাজনীতি হচ্ছে সুপার গ্লু আঠার মতো লাগলে সহজে মুক্তি তো মিলেই না বরং জোরাজোরি, টানাটানি, করলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এভাবে কিছু দিন পেরিয়ে নির্বাচনের দিন চলে এলো, দলের বড় বড় নেতারাও রুদ্রকে বুঝিয়ে কোনো সুরাহা করতে পারল না। ফাস্ট এ্যান্ড লাস্ট রুদ্রর একটাই কথা রাজনীতি চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ। পরে বিপক্ষীয় দল নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা হাতে নিলো। আর রুদ্র এসব থেকে একেবারেই নিজেকে সরিয়ে বাবার অফিসের হাল ধরলো।
এভাবেই দিন যেতে যেতে মাসে পরিণত হলো। মাস কাটতে না কাটতে বছরে গড়াতে লাগল। বাসার কারো মনেই এখন
রাজনীতির রোশানলে পড়ে মৃত্যুর ডঙ্কা বাজে না, মনে মনে
কেউ রুদ্রর জন্য আফসোসও করে না, এখন সবাইই খুশি।
তাছাড়া বাসার পরিবেশটাও বদলে গেছে কাফি এখন সেই বাসারই সদস্য। সে বর্তমানেও রুদ্রর এ্যাসিসটেন্ট হিসেবেই রয়েছে। তবে তাকে পুনরায় ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করানো হয়েছে আর বিয়েটা দিয়েছে দাদীমা নিজে। মেয়ের নাম তানিয়া, একটা স্কুলের শিক্ষিকা। বেশ মিশুক স্বভাবের মেয়ে সে। এতিম মেয়েটি কাফির সঙ্গে খুব সহজে নিজেকে মানিয়েও নিয়েছে। তবে রুদ্রর রাজনীতি ছাড়া নিয়ে এখন অবধি কেউ কোনো কথায় তুলে নি। সে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই তাতে ই সম্মতি দিয়েছে। এমনকি বড় মাও হাসিমুখেই
ছেলের সিদ্ধান্তে মেনে নিয়েছেন। অনেক হলো রাজনীতির খেলা এবার নাহয় একটু সুস্থভাবে বাঁচা যাক, সুখ-দুঃখের পালা এই বহমান জীবনে চলতেই থাকবে তবুও স্বস্তিভরে নিঃশ্বাসটুকু নেওয়া যাক। এই ছোট্টো জীবনে সব চাওয়ার
পাওয়ার চাহিদার মিলবে এমন তো নয়। জীবন মানে ত্যাগ, ত্যাগ মানেই অদৃশ্য তৃপ্তি। সব ত্যাগেই বিরহ থাকে এমনটাও নয়। সময়ের স্রোতধারায় স্পর্শীও পুরোপুরিই বদলে গেছে এখন সে বরপাগল একটা মেয়ে। যতটুকু সময় রুদ্র বাসায় থাকবে তার পেছনেই আঠার মতো লেগে থাকবে। কিছুদিন হলো সে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পন করেছে। ওর এখন একমাত্র লক্ষ্যই অকারণে রুদ্রকে রাগিয়ে মিটমিটিয়ে হাসা। সে ভালোমতোই জানে বাচ্চা কনসিভের কথা বললেই রুদ্র রেগে বোম হয়ে যায়। মাঝে মাঝে দুকান ধরে দাঁড়িয়েও থাকে। তবুও ঘুরে ফিরে টেপ রেকর্ডার মতো ওই কথায় ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। এইতো কিছুক্ষণ আগে কফির মগ হাতে হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসেছিল। রুদ্রকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জুরুরি মিটিং স্কিপ করতে বাধ্য করে কাঁদো কাঁদো মুখে বলেছিল,’ ‘ ‘তানিয়া আপু প্রেগনেন্ট, আসার সময় দাদীমাকে বলছে শুনলাম, এটা নাকি এ/ক্সি/ডেন্টলি হয়েছে। বলি,পৃথিবীতে এত এত মানুষের এক্সিডেন্ট আমাদের হয় না কেন? এক্সি/ডেন্ট করা ড্রাইভারদের এক নৈতিক অধিকার৷। বছর বছর গাড়ি চালিয়ে যদি এ/ক্সি/ডেন্ট নাই’ই করে তবে সে ড্রাইভার নামের কল/ঙ্ক।’
এই কথার জবাবে রুদ্র কটমট করে তাকিয়ে ছিল। আসলে সে কী বলবে নিজেও বুঝতে পারছিল না। এই ছাতার কথা বলার জন্য তার মিটিং স্কিপ করালো; এর কোনো মানে হয়!
এই গাধীটার মাথায় আর বুদ্ধি শুদ্ধি হবে বলেও মনে হয় না।
তারপর রোজকার মতো তাকে এক পা তুলে দু’কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রুদ্র হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেল। তাকে যেতে দেখে স্পর্শী কান ছেড়ে আয়নাতে নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখে গুনগুন করে গান গাইতে লাগল। অতঃপর আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তার শাহাদৎ আঙুল তুলে বলল, ‘নিজের ব্যক্তিগত পুরুষটাকে কারণে অকারণে বিরক্ত করে, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাঁক করতে না পারলে তুমিও মেয়ে নামে
কল/ঙ্ক। স্বামীকে জ্বা/লানো স্ত্রীর ভালোবাসাগত অধিকার।
জাগো মেয়েরা জাগো স্বামীকে জ্বা/লিয়ে মা/রো।’ একথা বলে সে ডাকাতিয়া হাসি হাসতে লাগল। তারপর হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়াতে ভাবতে লাগল কিছুদিন আগের কথা।
সেদিন ছিল বুধবার! কলেজ থেকে ফিরে সোফায় বসে টিভি দেখছিল। দুপুরবেলা বাসার মহিলাগণ দুপুরে খেয়ে ভাতঘুম দিচ্ছে। তার ঘুম আসছিল না বিধায় সে রুদ্রের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আপনমনে টিভি দেখছিল। তখন কাফি ড্রয়িংরুম থেকে তার নাম ধরে ডেকে উঠল। অলস ভঙ্গিতে কোনোমতে উঠে হেলেদুলে ড্রয়িংরুমে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল। খুব চেনা লাগলেও স্মরণ হচ্ছিল না কোথায় দেখেছে। তখন বড় এসে দাঁড়াতেই ভদ্রমহিলা বিনয়ের সঙ্গে সালাম দিলো, হাসি মুখে কুশল বিনিময় করল। তখনই তার স্মরণ হলো উনাকে সে চিনে, খুব ভালো করে চিনে, কারণ মহিলা আর কেউ নয় স্বয়ং রুদাশা। কিন্তু রুদাশার এক কোন রুপ! তার সর্বশরীর বোরকা হাত মোজাতে আবৃত করা শুধু চোখ দু’টো বেরিয়ে আছে। তাকে দেখে রুদাশা এগিয়ে এসে পূর্বের ঘটনার জন্য বার মাফ চাইল। বিষ্ময়ে যখন সে কথা বলতেই ভুলতে গেছে ততক্ষণে রুদাশা তার পা ধরে কাঁদতেও শুরু করেছে। স্পর্শী তাৎক্ষণিক রুদাশাক ধরে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল। এমন কিছু আশা করে নি সে। রুদাশার চোখে পানিতে মনটা গলে গেলেও কিছু বলল না সে। তাকে চুপ থাকতে দেখে রুদাশার কান্না বেড়ে গেল। যে কান্নার শব্দ নেই, গন্ধ নেই, বর্ণও নেই।
আছে শুধু অনুতাপের নিগূঢ় ছাপ। স্পর্শীকে নিশ্চুপ দেখে
রুদাশা এবার হাত জোড় করে কাফিকে কিছু বলতে গেলে কাফি শুধু এইটুকুই বলল,
‘ আমি র/ক্তে মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ। কারো দোষ গুন ধরার যোগ্যতা আমার নেই। তবে পূর্বে যা ঘটে গেছে সেটা অতীতমাত্র। অতীত ঘটলে কষ্ট ছড়া কিছুই পাওয়া যায় না, যাবে না। যাকে হারিয়েছি তাকে তো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় তাই পূর্বের কথা আজ থাক। তাছাড়া আপনাকে মাফ করে দিয়েছি যেদিন জেনেছি আপনি নিজেকে বদলে ফেলেছেন, রুমাকে মা/রার আফসোসে পুড়ে ম/রছেন, আফসোস হচ্ছে নিরব ঘাতক। এর দহন ভীষণ যন্ত্রণার। না আপনাকে স্বস্ত্বি দিবে আর না শান্তি। তাছাড়া পাপ ও পূর্ন্যের বিচার করার ক্ষমতা আমানর নেই তাই এই দায় আমি নিলাম না। মাথার উপরে একজন তো আছেই। তবে আমি দোয়া করি শিহাব ভাইয়ের সঙ্গে বাকিটা জীবন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।’
একথা বলে কাফি স্বভাবসুলভ হেসে প্রস্থান করল। তানিয়া গেল তার পিছু পিছু। শরীর খারাপ শুনে রুদ্রই তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল একটুপরে তানিয়ে নিয়ে হসপিটালেযাবে।
তানিয়াকে একবার চেকআপ করে নেওয়া জরুরি। এদিকে
স্পর্শীর মাথায় ঘুরছে অন্যকথা। তার মুখে হতভম্বের ছাপ। সে এখনো বিষ্ময় নিয়ে রুদাশার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু
বুঝতে পারছে না সে। যদিও শুনেছিল রুদাশা বদলে গেছে
তবুও বিশ্বাস করেছিল না। কিন্তু এখন চোখে দেখছে সেটা অবিশ্বাস করার জো নেই। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ কি?
এসব অদৌও সত্যি নাকি কোনো ছলচাতুরী?না সে মনমতো
কোনো জবাবই খুঁজে পেল না। মোদ্দাকথা, কোথায় বা গেল তার স্টাইলিশ পোশাক-আশাক, কোথায় গেল বাহারি সাজ, কোথায় বা তার আকাশচুম্বী অহংকার? যে অহংকার ছিল তার একসময়ের অলংকার। কাফি যাওয়ার পর রুদাশা ওর
নিকাব সরিয়ে মুখ বের করল। দু’হাতে দু’চোখ মুছে পুনরায় অঝরে কাঁদতে লাগল। পরনে ঢোলাঢালা সাধারণ বোরকা, সাজগোছের ছিঁটে ফোঁটাও নেই। বড় মা রুদাশার জন্য নাস্তা আনতে গেলে দ্রুত বাঁধা দিলো, কিছু খাবে না, শিহাব নাকি
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে এখনই চলে যাবে সে। রুদ্র এই সময় বাসায় থাকে না জেনেই এসেছে স্পর্শীর কাছে মাফ চাইতে। অতঃপর স্পর্শীর থেকে মাফ পেয়ে হাসি মুখে চোখজোড়া মুছতে মুছতে চলে গিয়েছিল। সে চলে যাওয়ার পর রুদ্রকে ফোন করে জোর করেই রুদাশার পরিবর্তনের কারণ জেনে তবেই ক্ষান্ত হয়েছিল। রুমবন্দি থাকাকালীন শিহাব তাকে খাবার, পোশাকসহ, নিত্য চাহিদার অভাব বুঝিয়েছিল। রং
এর দুনিয়ায় আরাম আয়েশ থেকে দুরে রেখেছিল। দু’মুঠো
ভাতের মর্ম বুঝিয়েছিল। বিলাসিতা করা তো দূর অতিরিক্ত কিছুই দেওয়া হতো না তাকে। একদিন শিহাব বেশ কয়েকটি ইসলামিক বই রুমে রেখে এসেছিল। একাকিত্ব ঘুচাতে এবং
সময় কাটানোর জন্য রুদাশা নাড়াচাড়া করে একসময় পড়া শুরু করে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আশয় জানতে পারে।
ফোন, লেপটপ, সোশ্যাল কোনো কিছুর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় সে বইতেই বুদ হয়ে যায়। যত পড়ে কেন জানি তার জানার আগ্রহ ততই বেড়ে যায়। তার এ আগ্রহ দেখে শিহাব সুযোগটাকে কাজ লাগায়, আরো কিছু বই এনে দেয়,রুদাশা বন্দিরুমে বসে সেসব বই পড়তে থাকে আর জানতে থাকে অজানাকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এভাবে কেটে
যায় তার। নতুন বই ছুঁইয়ে দেখা আর পড়া আনন্দকে আয়ত্ত করে সে। আরো কিছু বই এনে দেওয়ার আবদার করে এবং
বইতে যা যা পড়ে নিজে নিজে আমল করার চেষ্টা করে। জং ধরা মস্তিষ্কে পাপ ও পূন্যের তফাৎ বুঝে। এবং ধীরে ধীরে সে বদলাতে থাকে, অহংকারী রুদাশা পরিণত হয় ধার্মিক রুপে।
এতে শিহাবও তাকে সহযোগিতা করে। স্বামীর হক ও সন্মান নিয়ে একটা বই পড়ে সে নিজের ভুল বুঝে সেদিন শিহাবের
সামনে কেঁদে কেঁদে মাফ চাই। পূর্বের করা সব অপরাধ মাফ করে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করে। শিহাবও তাকে সুযোগ দেয় রুদাশাও পারফেক্ট সহধর্মিণী হয়ে ওঠে।
আর এই সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়ে এসব ঘটিয়েছে রুদ্র। অনেক আগেই রুদাশার নামের কেস তুলে আরেকটা সুযোগ দিতে চেয়েছিল। সেই সুযোগই রুদাশার জীবন চেঞ্জ করে দিয়েছে। রুদাশার বাবাও আর বেঁচে নেই। দেশ ত্যাগের উদ্দেশ্যে যে ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলেন সেই ফ্লাইট কীভাবে যেন ব্লাস্ট হয়, উনিসহ মা/রা যায় অসংখ্য মানুষ। মানুষের জীবন আসলেই বহমান। আর বহমান বলেই সুখ দুঃখ মিলে অতিবাহিত হয় অবিরাম।
প্রায় তিন বছর পর,
আজ সোমবার। সরকারি ছুটির দিন বিধায় রুদ্রসহ বাসার সকল সদস্যই উপস্থিত আছে। আজ কাফির মেয়ে তিন্নির জন্মদিন। বাসায় সেসবেরই আয়োজন চলছে। মেহমানদের
নিয়ে অনুষ্ঠানের ঝামেলা করা হয়নি। স্পর্শীর আর রুদ্রের কথামতো এতিমের বাচ্চাদের খাবার ও পোশাক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান,মেহমানদের গেদারিং কেন
জানি পছন্দ হয় না রুদ্রর। সে সর্বদা অনুষ্ঠান এড়িয়ে বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করে। তার কাছে এ অনুষ্ঠান মানেই লোক দেখানো ব্যাপার স্যাপার। এমনকি সব ঠিকঠাক হওয়া পরে যখন সবাই যখন চাচ্ছিল তার আর স্পর্শীর বিয়ে অনুষ্ঠান সারতে তখনও সে বাঁধ সেধেছে। কিছুতেই অনুষ্ঠানের জন্য রাজি করানো যায় নি। আজকের সমস্ত কাজ সেরে কেবল বাসায় ফিরেছে রুদ্র। ঘামে ভিজে একাকার অবস্থা, ঘড়িতে তখন বিকাল পাঁচটা। গোধুলিয়া মেরুপ্রভা। রুদ্র চটজলদি
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল স্পর্শী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গভীর চিন্তায় মশগুল। মন খারাপের ছাপ চোখে মুখে। পরনে হালকা গোলাপি রঙের ঢোলাঢালা ম্যাক্সি। উঁচু ফোলা পেট। কাঁধে পড়ে আছে যত্ন করে বাঁধা হাতখোপা। খোঁপার মাঝখানে আঁটকানো রুপার তৈরি স্টার আকৃতির কাঁটা। নিশ্চয়ই এটা তার মায়ে কাজ। কারণ উনি স্পর্শীর আরাম আয়েশের দায়িত্বে নিযুক্ত, মরিয়ম বেগম দেখেন খাবার-দাবার, বড় বাবা এবং স্পর্শীর বাবার দায়িত্ব রুদ্রর চোখ এড়িয়ে এটা ওটা এনে দেওয়া, দাদীমা দেন তার
মহামূল্যবান পরামর্শ, কাফি আর তানিয়ার কাজ হাসানো, আর রুদ্রর কাজ তাকে ধমকানো। স্পর্শীর এখন আটমাস সতেরো দিন চলে। বিয়ের পর থেকে বাচ্চা বাচ্চা করে তার কানমাথা ঝালা পালা করে দেওয়া মেয়েটার কোলে সত্যিই
বাচ্চা আসতে চলেছে। মরিয়ম বেগমে ভয় দূর হয়েছে। নতুন সদস্যকে বরণ করতে মুখিয়ে আছে বাসার প্রত্যেক সদস্য।
বাচ্চার পজিশন জানার জন্য গতমাসে আল্ট্রোসোনোগ্রাফি করে জানা গেছে টুইন ছেলে বেবি হবে। কে বাচ্চা সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। যা হবে তাতেই সবাই খুশি। কিন্তু বড় পেট নিয়ে স্পর্শীর একটু বেশি কষ্ট হয়ে যায়। হাঁটতে পারে না, শুতে পারে না, শুলে আর একা একা উঁঠতে পারে না, পা ফুলে অনেকটা পানি জমেছে, শারীরিক গঠনেও পরিবর্তন এসেছে। তবে গোলমলু স্পর্শীকে দেখতে বেশ লাগে। চঞ্চল স্পর্শী এখন গটগট করে হাঁটতে পারে না, লাফাতে পারে না, এখন সে পেট ধরে আস্তে ধীরে হাঁটাচলা করে, সেই দৃশ্যটুকু রুদ্র মনভরে, চোখভরে, আত্মাভরে দেখে আর হাসে। স্পর্শী পূর্বের মতো একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে, তবে হাতে আছে একবাটি কয়েক রকমের ফল। হয়তো মরিয়ম বেগম হয়তো ধমকে টমকে খেতে দিয়ে গেছেন। এই মেয়েটা আগে ছিল পড়াচোর প্রেগনেন্ট হওয়া পর হয়েছে খাওয়া চোর। খাওয়াতে তার বড্ড অনীহা। ধমক খেয়ে এখন মুখটা গোমড়া করে খাচ্ছে। রুদ্র মিটিমিটি হেসে হাতের টাওয়াল বেলকনিতে মেলে রুমে এলো। তার উপস্থিতি টের পাওয়াতে মাথা ঝাঁকাল। ভেজা চুলে পানি ছিঁটকে পড়ল স্পর্শীর চোখে মুখে। ঠান্ডা পানির ছিঁটে গায়ে পড়তেই স্পর্শী বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে পুনরায় বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রুদ্র ধীরে ধীরে
কাছে গিয়ে আলতো করে পেছনে থেকে জড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, মন খারাপ কেন? স্পর্শী কোনো জবাব দিতে পারল না, কারণ আজকাল এতবেশি মুড সুয়িং হচ্ছে সে নিজেও জানে না হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ কেন হচ্ছে। হঠাৎ স্পর্শী
বলে উঠল,
-‘বাবুর বাবা একটা সত্যি কথা বলো তো আমায়।’
-‘হুম।’
রুদ্র ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি আঁটকালো। এখন কিছুতেই
হাসা যাবে না নয়তো খবর আছে। আর স্পর্শী বর্তমানে এই সম্বোধনেই ডাকে। খারাপ লাগা দূর মনটা কেন জানি খুশিতে ডগমগ করে ওঠে। স্পর্শী রুদ্রর পারমিশ পেয়ে আমতা আমতা করে এমিলির কথা জানতে চাইল। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পর রুদ্র রাজনীতির কোনো বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে না। সুখে-দুঃখে দিব্যি আছে সে। তবে অসংখ্যবার নানা কারণে অকারণে বিপদে পড়তে হয়ছে। সেসব দিন পেরিয়ে
গেছে অনেক আগেই তবে আজক স্পর্শীর জানতে চাওয়ার কারণ রুদ্র কাছে স্পষ্ট। হয়তো টিভিতে সংবাদ দেখেছে যে এমলি গণধর্ষণের শিকার হয়ে সু/ইসাইড করেছে। প্রবাদে আছে ‘অতি বার বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে।’ এই প্রবাদটা এমিলির জন্য যথার্থ।এমিলি তার শশুরের ক্ষমতাকে কাজ লাগিয়ে অতিরিক্ত বাড়া শুরু করেছিল, ভুলে গিয়েছিল সে একটা মেয়ে, তার চলাফেলাতে মার্জিত ভাব থাকা দরকার। কিন্তু না, সে উগ্র স্বভাবের, চলাফেরা ক্ষমতাবান লোকদের সঙ্গে ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাইই হয়েছে। এসব শুনে স্পর্শী ঘুরে দাঁড়িয়ে রুদ্রর গলা জড়িয়ে ধরতে গেলে বড় পেট বাঁধ সাধলো। বিরক্ত হয়ে কিছু বলার আগেই রুদ্র হেসে নিচু হয়ে স্পর্শীর গলা জড়িয়ে ধরে ভ্রুঁ নাচালো। এবার স্পর্শীও হেসে রুদ্রর কপালে পড়ে থাকা ভেজা চুল এলোমেলো করে দিতে দিতে বলল,
-‘দত্তক নেওয়া আমিটাকে এত ভালোবাসে কেন তুমি?’
-‘ইচ্ছে করে তাই।’
-‘কেন ইচ্ছে করে?’
-‘মনে বলে তাই।’
-‘কেন মন বলে?’
-‘আপনি আমার মনোহারিণী তাই।’
-‘কেন আমি আপনার মনোহারিণী?’
-‘কপালে আর কোনো মেয়ে জুটে নি তাই।’
-‘কেন মেয়ে জুটেনি।’
-‘তুই নজর দিয়েছিস তাই।’
-‘কেন নজর দিয়েছি।’
-‘আমার মতো ভালোবাসায় আঁটকে গেছিস তাই।’
পরবর্তী কিছু বলতে গেলে রুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্পর্শীর ঠোঁটে আদর এঁকে দিলো। থামিয়ে দিল প্রশ্নের গাড়ি। স্পর্শী লাজুক হেসে মুখ লুকাল তার ব্যক্তিগত পুরুষের বুকে। যে
বুকে শান্তির আবাস। কে বলে প্রেম প্রার্থনা বিচ্ছেদের শব্দ।
তার প্রেম প্রার্থনা তো ব্যর্থ যায় নি। অনেক সাধনার পর সে রুদ্রকে ফিরে ফিরেছে নিজের মত করে। বোঝাতে পেরেছে
তার ভালোবাসা, তার চাওয়া-পাওয়ার গভীরতা। এভাবেই
থাকতে চাই আজীবন ভালবাসতে চাই প্রিয় মানুষটার সঙ্গে সারাজীবন। সে সুখী, ভীষণ খুশি, কারন বেলাশেষে পূর্নতা পেয়েছে প্রেম-প্রার্থনা
~সমাপ্ত~