#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[২৫]
-‘ আমার বাচ্চা বউটাকে আগে পেলে পুষে বড় করি তারপর যদি বেঁচে থাকি তখন আমার ছানাপোনার কথা ভাবা যাবে। কিন্তু না, আমি বাদে সবাই এখন থেকেই আমার ছানাপোনা নিয়েই চিন্তিত। তাদের কি করে বলি ছানাপোনার আগমনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হতে ঢের বাকি। ‘
অতঃপর রুদ্র মনের কথা মনে চেপে মরিয়ম বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মরিয়ম বেগম একে একে জানালেন বর্তমানে রুদ্রই উনার একমাত্র জামাতা, হ্যান ত্যান আরো কত কি! এ কথা শুনে সামনে দন্ডায়মান মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা রুদ্রকে ভালো করে পরখ করলেন। মুখে তেলতেলে হাসি এঁটে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করলেন। যত কম কথায় জবাব দেওয়া যায় রুদ্র তাই দিলো। তারপর সময় দেখে যাওয়ার কথা বলতেই
ভদ্র মহিলার অন্য কথার টাল টানলেন, ফিরে গেলেন কবে কার বাগানের বরই চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন সেই গল্পে। মরিয়ম বেগমও উনার কথায় রেশ ধরে সেই গালগল্পে
মজে গেলেন। ধীরে ধীরে টেনে আনলেন গ্রামের কোন চাচা কবে মারা গেছে, কোন বান্ধবী কার সঙ্গে ভেগেছিল, কে কে বাইরের দেশে স্যাটেল হয়েছে, পুরনো কলেজটা এখন আর নেই, সেখানে নাকি এখন ইটের ভাঁটা হয়েছে, কোন বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় আর কোনটার সঙ্গে হয় না তার লিস্টও
দিলেন। কোন বান্ধবীর স্বামী নেশাখোর আর কারটা লুচ্চার ঘরে লুচ্চা, কে হুজুর বিয়ে করে হুজুরনী সেজেছে তাও বেশ গুছিয়ে গাছিয়ে উল্লেখ করলেন। নিজের বর্তমান অবস্থাসহ ছেলে মেয়েদের কথাও ইনিয়ে বিনিযে জাহির করতে ভুলল না। এতসব কথার ফাঁকে ফাঁকে ভদ্র মহিলা বার বার রুদ্রর মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। তীক্ষ্ণভাবে পরখ করছে হাবভঙ্গি।
বেচারা রুদ্র বার বার সময় দেখছে এখান থেকে গিয়ে তাকে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হতে হবে। প্রচারণার জন্য আজ নিজে বের হবে, এতদিন ছেলেপেলে প্রচার চালালেও আজ নিজেই রাস্তায় নামার কথা। দুপুরের লাঞ্চের একটা মিটিংও রেখেছে সেখানে উপস্থিত থাকাও জুরুরি। ওদিকে স্পর্শীরও
খোঁজ নিতে পারে নি এখনো, মেয়েটার পেট ব্যথা বাড়ল না কমলো কে জানে। এতদিন পর স্কুলে গিয়ে বান্ধবীকে পেয়ে
শান্তভাবে বসে থাকবে না নিশ্চয়ই,সে উড়ন্ত এক প্রজাপ্রতি। তার কাজই হলো তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলা।
কিন্তু এতসব কাজ সারতে গেলে তাকে এখন যেতে কিন্তু এই
দুই মহিলার গল্পের তোড়ে সে চিপকে গেছে। উনারা না নিজে যাচ্ছে আর না তাকে যেতে দিচ্ছে, কী যে জ্বালা! উনাদের এ
রসের গল্পভঙ্গ করতে রুদ্র দুইবার বলল, ‘ঠিক আছে আন্টি আজ আসি তাহলে, ভালো থাকবেন।’
ওমা! রুদ্রর কথা দন্ড়ায়মান দুই ভদ্র মহিলার কেউ পাত্তা না তো দিলেনই না বরং উল্টে ভদ্র মহিলা বললেন,’ তা জামাই
কী দেশেই থাকবা নাকি বাইরের দেশে সেটেল হবা? এদেশে সুস্থ ভাবে বাঁচা যায়?”
উনার এই কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলার আগে মরিয়ম বেগম জিজ্ঞাসা করলেন উনার কয়ছেলে মেয়ে, তারা কে কি করে। বাঁচাল মহিলা উনার পরিবারবর্গের কথা বলে চেহারায় এক
দাপুটে ভাব এনে গর্বে বুক ফুলিয়ে এটাও জানালেন, উনার জামাতা পাশের হসপিটালের ডাক্তার, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই, মাসে দু’বার বিদেশ যায়।
জামাতা পেয়েছেন লাখে একটা। আম্মা! আম্মা করে ডেকে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলে।
রুদ্র বিরস মুখে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে কাফি বারবার কল দিচ্ছে তাকে যেতে হবে। কিন্তু মরিয়ম বেগমকে একা রেখেও যেতে পারছে না, চারিদিকে মিছিল, প্রচারণার জন্য বিরোধী দলে ঝামেলা লেগেই আছে, এমতাবস্থায় একা ছাড়ার কথা প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু দুই বাঁচালের গল্পই সমাপ্ত হচ্ছে না যাবে কীভাবে! অনবরত একটার পর একটা চলতে আছে তাদের জীবনের গল্প কথা বিদায় জানিয়েও লাভ হলো না, গুরুত্বই দিলো না কেউ। তার এমুহূর্তে মনে হচ্ছে দুই মহিলার গল্পভঙ্গ করার মতো কঠিন কাজ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। ঠিক সেই সময় ভদ্র মহিলার ডাক পড়ল। উনার কোমরে সমস্যা, ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না, কোনো কাজ করতে পারে না তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছে। তারপর গল্পের সমাপ্তি ঘটিয়ে কত
আফসোস করে উনাকে বিদায় নিয়ে যেতে হলো। উনার মুখ দেখে মনে হলো বিদায়পর্বে কষ্টে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছেন। খুব কষ্ট পাচ্ছেন এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরো ঘন্টাখানিক গল্প করতে না পেরে। মহিলার মতিগতি এমন উনি যদি পারতেন ডাক্তারকেও বলতেন, ‘ডাক্তার সাহেব আপনি আর একঘন্টা অপেক্ষা করুন আমি গল্প শেষ করে আসছি।’যাক অবশেষে বিপদ হতে মুক্তি পেয়ে রুদ্র মরিয়ম বেগমকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। কিছুদূর গিয়ে মরিয়ম বেগমকে গাড়িতে বসিয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিবশন অনুযায়ী ওষুধগুলোও নিয়ে এলো। তখন মরিয়ম বেগম বললেন,
-‘যার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বললাম একটা সময় সে আমার হেটার্স ছিল, কথা বলে বুঝলাম এখনো আছে। আমরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওর নাম জেরিন খান। কিন্তু জেরিন নাম তার পছন্দ নয় এজন্য কেটে কুটে নাম রেখেছে জেরি।
আর বলল না ওর মেয়ে জামাই ডাক্তার, ডাক্তার না ছাই, সে
আজীবন মিথ্যা কথার হাঁড়ি। এক গলা পানিতে নেমেও যদি কেউ বলে ওর জামাতা এমবিবিএস জামাই থুরি ডাক্তার ; তাও এ কথা বিশ্বাস করবো না আমি। যদি তাই হতো তাহলে আমার জামাতার দিকে বার বার ঘুরে ঘুরে তাকাত না, ওকে আমি ভালো করে চিনি। ‘
মরিয়ম বেগমের কথা শুনে রুদ্র মিটিমিটি হাসছে। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করে, হেসে, কত কথার আদান- প্রদান ঘটিয়ে এখন বলছে সেই মহিলা নাকি হেটার্স। অথচ গল্প চলাকালীন সময়ে দেখে মনে হচ্ছিল ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ডশীপ দু’জনের। অনেকদিন পর দেখা হওয়াতে মনপ্রাণ জুড়িয়ে
গল্প জুড়ে দিয়েছেন। অথচ আড়ালে আসতেই না আসতেই শুরু হয়ে গেল বদনাম, এরা পারেও বটে। তারপর রুদ্র সহি সালামতে মরিয়ম বাসায় পৌঁছে নিজের কাজে চলে গেল।
আজ এত কাজ কখন ফিরবে কে জানে! একটুপরেই বড় মাও ফিরে এলেন জানালেন কোনো সমস্যা হয় নি। তারপর দুই জা মিলে হাতে কাজ করে দুপুরের রান্নাও শেষ করলেন। বাসায় দাদীমা আর উনারা দুই জা কেউ নেই। তাই তিনজনে দুপুরের খেয়ে যে যার রুমে বিশ্রাম নিতে চলে গেলেন। স্কুল ছুটির পর স্পর্শী রিকাশার জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। সব স্টুডেন্টরা হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছে স্কুলের গেট দিয়ে। রিকশার জন্য এদিক ওদিকে তাকাতেই দেখে অদূরে বাইকে হেলান রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হালকা বেগুনি টি-শার্ট ব্ল্যাক জিন্স আর চোখে সানগ্লাস। দাঁড়ানোর ভঙ্গি বলিউডের হিরোদের মতোই। সানগ্লাস থাকায় বোঝা যাচ্ছে না সে কোন দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ধারণা করা যাচ্ছে তার চোখাদৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ। এই মুহূর্তে সে এখানে রুদ্রকে আশা করে নি তবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যখন পেয়েই দেখে তখন সহজে ছাড়বে না। রুদ্রকে দেখামাত্রই মনে পরিকল্পনা এঁটে নিয়েছে
ততক্ষণে। সে গুঁটিগুঁটি পায়ে সেদিকে হাঁটা ধরল। হেলেদুলে হেঁটে রুদ্রর সামনে গিয়ে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইল। না নিজে কোনো কথা বলল আর না মাথা তুলে তাকাল। হঠাৎ তার এমন মলিন মুখ দেখে রুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
-‘কি হয়েছে, কেউ কিছু বলেছে?’
স্পর্শী না সূচক মাথা নাড়াল অর্থাৎ কেউ কিছু বলে নি।অথচ তার মুখটা শুকিয়ে আমচুর হয়ে আছে। রুদ্র আরো কিছু কথা জিজ্ঞাসা করলেও স্পর্শী ঠিকঠাক উত্তর দিলো না। স্পর্শী নিজে থেকে কিছু বলছে না দেখে রুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে বাইকে বসতে বলতেই স্পর্শী বলল,
-‘তুমি যাও আমি এখন বাসায় যাব না।’
-‘যাবি না মানে? রাস্তার মধ্যে থাপ্পড় খেতে না চাইলে ঝটপট উঠে বস।’
-“বললাম তো আমি বাসায় যাব না।’
-”স্পর্শী এবার বেশি বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। এমনিতেই মেজাজ চড়ে আছে নখরা করলে একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না।’
একথা শুনে স্পর্শী উল্টো ঘুরে একটা রিকশা ডাকতেই রুদ্র তার হাত ধরে টেনে বাইকে বসিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। স্পর্শী কিছু বলতে গেলে ধমকে তাকে থামিয়ে দিলো। বাইক চলছে
নিজ গতিতে। স্পর্শী মুখ গোমড়া করে রুদ্রকে ধরেও বসে নি বললেও ধরছে না। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলেও মুখ খুলছে না। বাসায় গিয়ে একে সাইজ করতে হবে। দিনকে দিন চরম বেয়াদব হচ্ছে মেয়েটা। আগে যা একটু আধটু ভয় পেতো এখন তাও পায় না। রুদ্রর গম্ভীর মুখ দেখে তখন স্পর্শী আমতা আমতা করে বলল,
-‘বাসায় যাব না আমি, কোথাও বেড়াতে নিয়ে চলো।’
-‘কাজ আছে আমার, অন্যদিন যাব।’
-‘না, আজই যাব, এখনই যাব মানে, এখনই যাব।’
-‘বলছি তো কাজ আছে আমার।’
-‘ তোমার কাজ তো সব সময়ই থাকে। আজ অবধি কখনো তো বলো নি তোমার কাজ নেই, বেড়াতে নিয়ে যাবে, অথবা বাইরে কোথায় খেতে নিয়ে যাবে। একগাধা সব খাবার এনে হাতে ধরিয়ে দাও যেন আমি দিনের পর দিন না খেয়ে থাকি।
নামী দামী রেস্টুরেন্টের খাবার এনে দিয়েই সব দায়িত্ব শেষ।
বউকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করলে বউয়ের মন ভালো থাকে জানো না তুমি? আর আজকে খাবার টাবার কিচ্ছু লাগবে না আমি বাইকে করে তোমার সঙ্গে ঘুরব, লং ড্রাইভে যাব! এই মুহূর্তে পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করছে, তুমি আমাকে সঙ্গে দাও
ব্যস! আজ আমি কোনো কারণ বারণ অজুহাত শুনবই না। আমার এখন বেড়াতে ইচ্ছে করছে, তাই তুমি বেড়াতে নিয়ে যাবে, আর কোনো কথা না।’
-‘আমি তোর বাপের চাকর?’
-‘না, আমার।’
-‘ আবার বল হর্ণের শব্দে শুনি নি।’
-‘বললাম, তুমি স্বামী মানুষ চাকর হতে যাবে কেন? এসব তো মনে আনাও পাপ।’
-‘অথচ রাতে স্বামী মানুষের বুকের উপর পা তুলে বেঘোরে ঘুমাস। কখনো কখনো কিল ঘুষিও মারিস তখন মনে পাপ বোধ হয় না?’
-‘আ..সলে ইচ্ছে করে করি নি তো হয়ে যায়।’
-‘আজ সকালে বলেছিলাম আমার শার্ট আয়রণ করে দিতে
দিয়েছিলি?’
-‘এবার থেকে তোমার সব কথা শুনবো তাও নিয়ে চলো না প্লিজ! প্লিজ! প্লিইইজজ!”
রুদ্র কথা বাড়াল না বাসার পথের রাস্তায় মোড় নিলো। সেটা দেখে স্পর্শী চেঁচিয়ে অনেক রিকুয়েষ্ট করেও কাজ হলো না।
রুদ্র নিজের কথা ঠাঁট বজায় রাখতে মোড় পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। তারপর হঠাৎই খেয়াল করল একটা হাত তার কোমরে আঁকিবুঁকি করছে। তার আবার ভীষণ কুতুকুতু। এই একটা জিনিসেই সে কাবু। রুদ্র নিষেধ করলেও স্পর্শী শুনল না বরং কতুকুতু দিতেই থাকল। কাতুকুতু এমন জিনিস নড়ে
উঠতেই হয়। ফলস্বরূপ রুদ্র মোড়ামুড়ি করতেই হাত কেঁপে উঠল সে জলদি ব্রেক কষে বাইক থামাতেই স্পর্শী খিলখিল করে হেসে উঠল। রুদ্র চোখ মুখ শক্ত করে স্বজোরে ধমকে উঠে পুনরায় বাইক স্টার্ট করতেই স্পর্শী শেষ চেষ্টা চালাতে
তার পিঠে মাথা রেখে আহ্লাদী সুরে গেয়ে উঠল,
“চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।’
তবুও রুদ্র নিজের সিদ্ধান্তেই অটল। ততক্ষণে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ফলে দশ মিনিটে তারা বাসার পৌঁছে গেল।
স্পর্শী বাইক থেকে নেমে করুণ দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে বাসায় ঢুকে গেল। এতবার করে রিকুয়েষ্ট করেও রুদ্র তাকে নিয়ে গেল না। রুদ্র তার পেছনেই আসছে ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে।তবে তার একটা কথা স্পর্শীর কানে গেঁথে গেল, ‘এমিলিকে বসতে বলো, আসছি।’ একথা শুনে সে রাগে দুঃখে কেঁদেই ফেলল। কাঁধের ব্যাগটা ড্রয়িংরুমের সোফায় ছুঁড়ে ফেলে চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমের চলে গেল। দাদীমা ডাকলেও জবাব দিলো না। স্পর্শী
নিজের রুমে গিয়ে পোশাক না বদলে সেভাবেই শুয়ে কাঁদতে লাগল। আর রুদ্রর বিরুদ্ধে অহরহ অভিযোগ দায়ের করল।
বিয়ের আগে রুদ্র তাকে বেড়াতে যেতো না। মূলত সে রুদ্রর সঙ্গে কোথাও যেতে চাইত না কারণ রুদ্রকে তখন সহ্য হতো না। কিন্তু বিয়ের পরও রুদ্র তাকে কোথাও নিযে যায় না, মুখ ফুটে বলেও না কোথাও যাওয়ার কথা। কেন এমন করে সে
ভেবে পায় না? পূর্বের কথা নাহয় বাদ দিলাম আজ এতবার বলার পরেও কি রুদ্র পারত না তাকে নিয়ে কোথাও যেতে?
অন্তত নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসতে বা ক্যাম্পাসে একপাক চক্কর দিয়ে আসতে, বাইকে গেলে কতটুকুই বা সময় লাগত?
আচ্ছা বেড়াতে নাহয় না নিয়ে গেল এক প্লেট ফুচকা খাইয়ে মন ভোলানোর চেষ্টা করতে পারতো। নতুবা ফুটপাত থেকেই একটা গোলাপ দিতে পারতো। কিন্তু এসবের কোনোটা করা দূর মুখের উপর বলে দিলো তার কাজ আছে। ওর কাজ তো সবসময় থাকে। এতই যখন কাজ আছে তাকে আনতে গেল কেন? কে পা ধরেছিল যেতে? সে তো বলে নি, তাহলে? আর যখন গেলোই তখন একটু ঘুরতে নিয়ে গেলে কি হতো? ওর বেলায় যত রাজ্যের কাজ আছে অথচ এমিলির জন্য সময় ঠিকই আছে। ওয়েট, ওয়েট, আচ্ছা এতদিন পর ওই এমিলি এলো কোথা থেকে? তারমানে এমিলির জন্যই তাকে নিয়ে গেল না। এমন নানান কথা ভেবে সে রাগে অভিমানে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে একটা সময় ঘুমিয়ে গেল। মরিয়ম বেগম এসে ঠেলে, ধাক্কিয়ে, গুঁতিয়ে উঠাতেও পারলেন না। ডাকাডাকিতে বিরক্ত হয়ে মরিয়ম বেগমকে যেতে বলে তার রুমের দরজা আঁটকে আবার শুয়ে পড়লো। রুমের লাইট অবদি জ্বালাল না। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যার আজান দিচ্ছে তবুও সে উঠল না, সেভাবেই গোো ধরে শুয়ে রইল। এর ঘন্টা খানিক পরে কেউ দরজা নক করাতে খুব বিরক্ত হলেও সাড়া দিলো না, উঠে দরজাও খুলল না। অপর পাশের ব্যক্তিও যেন নাছোড়বান্দা একনাগাড়ে নক করেই যাচ্ছে। আর সহ্য করতে না পেরে সে চেঁচিয়ে বলল,
-‘কে রে বা*!’
-‘বা* না তোর মায়ের একমাত্র জামাতা।’
To be continue……!!!!