প্রেম প্রার্থনা পর্ব-২৪

0
651

#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[২৪]

‘পরিস্থিতির যাতাকলে পড়ে সময় নাকি কথা বলে’ একথার সত্যতা স্পর্শী হারে হারে টের পাচ্ছে। সত্যি সত্যিই বর্তমান পরিস্থিতি সত্যতা দেখিয়ে দিচ্ছে, নিজ সুরে কথাও বলছে।
যত দিন যাচ্ছে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ছে নিষ্ঠুর মানুষটার প্রতি মায়া জন্মাচ্ছে। যাকে সহ্য হতো না তার অনুপস্থিতিতে বক্ষপাশ অশান্ত করে তুলছে। ক্ষণে ক্ষনে মনে হচ্ছে একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষটা ছাড়া নিঃশ্বাস ফেলাও কষ্টসাধ্য।আহা! কী
নির্বোধ ক্ষোভ! পরক্ষণে তার উপস্থিতিতে ওষ্ঠকোণে ফুটছে প্রানবন্ত উৎফুল্লের হাসি। যেন এই পৃথিবীর সমস্ত সুখ প্রিয় মানুষটার উপস্থিতিতেই বরাদ্দ। তার কথা বলা, মিটিমিটিয়ে হাসা, আড়চোখে তাকানো, রাগানোর ধরণ, প্রশ্রয়মিশ্রিত
ধমক, তার এসবকিছুতেই নিঁখাদ ভালোবাসা লেগে থাকে।
তার ব্যবহারেই সুস্পষ্ট হয় অব্যক্ত প্রেমানুভূতির কাব্যকথা।
সেই সঙ্গে চারদিকে ছড়ানো প্রেমময় বেহায়া বাতায়ন এসে ফিসফিসিয়ে জানিয়ে যায়, ‘সে তোমাকে ভালোবাসে।’এসব বুঝি বৈধ সম্পর্কের জোর, বিয়ে নামক বৈধতার কারিশমা!

এতক্ষণ মনে মনে এসব ভেবে স্পর্শী মাথা তুলে ঘুমন্ত রুদ্রর মুখপানে তাকাল। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মানুষটা।তার বুকে মাথা পেতে সে চুপটি করে রাত জাগছে। ঘুমকাতুরে মেয়েটার সব
ঘুম ছিনিয়ে নিয়েছে ঘুমন্ত পুরুষটা। তার ধ্যান জ্ঞান করতেই
আজ চোখের পাতায় ঘুম ধরা দিচ্ছে না, কীসব চিন্তারা এসে ভর করে অলস মস্তিষ্কে।সে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করবে তারও উপায় নেই। রুদ্র তাকে বাহুডোরে জাপটে ধরে আছে যেন ছাড়লেই চলে যাবে নতুবা হারিয়ে যাবে। যেহেতু চোখে ঘুম নেই, কথা বলার মানুষও নেই, তাই সে নিজস্ব ভাবনার অলিখিত এক গ্রন্থ খুলে বসেছে। যে গ্রন্থের আদি হতে অন্ত রুদ্রের অধিষ্ঠান। স্পর্শী সেই তখন থেকে ভেবে চলছে তার আর রুদ্রর বর্তমান আর ভবিষ্যতের কথা। আগামীতে তার কী হবে সেসব অবান্তর কথা। সময়ের অগ্রভাগে পরিস্থিতি আজ উল্টো ভ্রমে মজেছে। এই তো কিছুদিন আগেও সে চাচাতো ভাইকে বিয়ে করবে না, সংসার করবে না, বলে কত ঝামেলার সৃষ্টি করেছে। মনের ঝাল মিটাতে যখন যা ইচ্ছে তাইই বলে অপমান করেছে রুদ্রকে। কখনো ভাবে নি যাকে যা বলছি তা আদৌও ঠিক কী না। এসব শুনে মানুষটার কষ্ট হচ্ছে কী না। এসব ভাবার অবস্থাতেই ছিল না রাগে জেদে তার মন মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি সেই সময় বাবা-মাকে অনেক কথাও শুনিয়েছে রাগে ও অভিমানে মুখ ফিরিয়েও নিয়েছে। তখন যেই রুদ্রর পক্ষে কথা বলতো কেন জানি তাকেই শত্রু বলে মনে হতো। সেদিন যখন ওদের বিয়ে
আঁটকানো গেল না তখন রুদ্রর রাজনীতিটা তার কাছে বাঁধা মনে হলো। একাধারে মনে হতো রাজনীতির কারণে রুদ্রকে তার পছন্দ না, স্বামী হিসেবে মানতে পারে না।তাই রাজনীতি
থেকে রুদ্রকে সরানোর পরিকল্পনাও এঁটেছিল।কিন্তু রুদ্রকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে পরে আবেগী হয়ে নিজের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে নি। তবুও রুদ্র তার সিদ্ধান্তেই অনড়। সেই ঘটনার পরে রুদাশার কর্মেও রুদ্রকে থামানো গেল না কুটিল বুদ্ধি দ্বারা রুদাশাসহ তার বাবাকেও জব্দ করার ব্যবস্থা করলো।
বর্তমানে রুদ্রর সঙ্গে তার নানার বাড়ির সবার সম্পর্ক কেমন নড়বড়ে, দূর্বল। ছোটো মামা কিছুটা সুস্থ হয়ে চট্টগ্রামে ফিরে গেছে। রুদাশাকে কোন জেলে রাখা হয়েছে এই খবর কেউই জানে না, অনেকে ধারণা করছে রুদাশা বেঁচে নেই। রুদাশার বাবা মেয়ের সন্ধান পেতে কম চেষ্টা করে নি কিন্তু বারংবারই ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে উঠে পড়ে লেগেও মেয়েকে ছাড়াতে পারে নি রুদাশার বাবা। সেই বেচারা এখন নিজেও পলাতক। পুলিশ উনার বাড়ি ঘেরাও করে উনার সব ব্যাংক একাউন্ট লক করে দিয়েছে। ওই বেচারা বেশিদিন গা ঢাকা দিয়েও থাকতে পারবে না, কারণ রুদ্র নিজেও গোপনে
উনার খোঁজ চালাচ্ছে। তার গায়ে হাত তোলার কারণে আজ রুদ্র উনাদের বাবা মেয়েকে নাকি দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। তবুও
সে রাজনীতি ছাড়ছে না। দিনকে দিন একের পর এক ঘটনা
তাদের জীবনে আছড়ে পড়ছে। সুক্ষভাবে পরিবারের সদস্য দের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ এ একরোখা পুরুষটা
রাজনীতি ছাড়া তো দূর ভোটে দাঁড়িয়ে নিজেকে পাকাপোক্ত
ভাবে রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে। এসব ঘটনা দ্বারাই স্পষ্ট এভাবে রুদ্রকে থামানো যাবে না। যত দিন যাবে রুদ্র আরো আগ্রাসী হয়ে উঠবে এজন্য তাকেই সংগোপনে
অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে। আর সে সেটা করার জন্যই উঠে পড়ে লেগেছেও। এই পরিকল্পনায় হয়তো তার হবে জয় নতুবা ক্ষয়। জয়ে হবে সুদিন আর ক্ষয়ের হবে নিঃশেষ।দেখা
যাক রুদ্রর তাকে কি উপহার দেয়।

তবে এসবের মধ্যে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে সে দিনকে দিন রুদ্রর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। আর এদূর্বলতা তার মনে ভয় সৃষ্টি করছে, ছিঁটকে পড়ছে নিজের জায়গা থেকে,পরক্ষণেই আবার ভাবছে থেমে গেলে হবে না পরিকল্পনা সফল করতে হবে। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য হলেও পরিকল্পনা সফল করতে হবে। এজন্য আগামীকাল রিপোর্টে কি আসে জানা দরকার।
তারপরে নাহয় নিজ পরিকল্পনায় আরো একটা ধাপ এগিয়ে যাবে। এতক্ষণ নিজের পরিকল্পনার কথা ভাবতে ভাবতে সে ঘুমে তলিয়ে গেছে। নিজের অজান্তে রুদ্রর শক্ত প্রশ্বস্ত বুকে নিদ্রালু হয়ে লুটিয়ে পড়েছে। শান্তিতে ডুবে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে, সাদা টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে।
সেই অবস্থাতেই সময় কাটল, রাত পোহাল, সকাল’ও হলো।
রোজকার মতো সবাই নাস্তা সেরে যে যার কাজকর্মে বেরিয়ে গেল। আজ পেটে ব্যথা নেই বিধায় স্পর্শী স্কুলে গেছে, সঙ্গে গেছে বড় মা। দরখাস্তবিহীন স্কুল গ্যাপের কারণে এমনিতেই বাসায় গার্ডিয়ান কল আসতো, কাউকে না কাউকে যেতেই হতো। এজন্য উনি আগে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন যেন স্পর্শীকে স্যারদের কথা শুনতে না হয়। উনাদের স্কুলের গেটে নামিয়ে রুদ্র আর মরিয়ম বেগম গেছে রিপোর্ট আনতে। একেবারে রিপোর্ট দেখিয়ে ডাক্তার সঙ্গে কথা বলে
তারপরেই ফিরবেন। রুদ্র রিসিপশন থেকে রিপোর্ট কালেক্ট করে মরিয়ম বেগমকে নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছে।একটু
পরেই তাদের ডাক পড়বে। রুদ্রকে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে মরিয়ম বেগম বললেন,

-‘রুদ্র!”

ডাকটা রুদ্রর কর্ণকুহুরে পৌঁছালেও সে মাথা তুলে তাকালো না। স্মার্টলি সেভাবেই বসে রইল মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
মরিয়ম বেগম পুনরায় কিছু বলার আগে সে স্বাভাবিকভাবে জবাব দিলো,

-‘আমি এমনিতেই খুব টেনশনে আছি মেজো মা। প্লিজ এমন কিছু বোলো না যাতে আমার টেনশনের মাত্রা বেড়ে যায়।’

-‘তুমি কি করে বুঝলে আমি এমন কিছু বলবো?’

-‘আমার মুখের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে থেকে গভীরভাবে কিছু চিন্তা করে অবান্তর কথা বলবে না এটা জানা কথা।’

-‘অবান্তর কথা নয় বাস্তব কথাটাই বলছি তোমার ইচ্ছে হলে
ভেবেচিন্তে উত্তর দিও।’

-‘বলো।’

-‘পেটে আঘাত পাওয়ার কারণে যদি আমার মেয়েটা কখনো মা হতে না পারে তখন কি করবে?’

-‘কথাটা বাংলা মুভির মায়েদের মতো হয়ে গেল না? তাছাড়া স্পর্শী মা হতে পারবে না কেন এটা বুঝাও আমারে? বুঝতে পারছি কেন কথাটা বললে তারপরেও বলি সেদিনের ঘটনায় যদি তার সমস্যা হয়েও থাকে এর চিকিৎসা আছে। এইদেশে সেই চিকিৎসা না থাকলে বাইরের দেশে আছে।’

-‘উন্নত চিকিৎসা তো আমিও করিয়েছে কই আমার তো…!’

-‘মেজো মা, নেগেটিভ চিন্তাধারা সুফল বয়ে আনে এমনটাও কিন্তু নয় তাই এসব ভেবো না। হয়তো তুমি মনকে বুঝ দিতে আমার থেকে এমন কিছু শুনতে চাচ্ছো, যেটা শুনে তোমার অশান্ত মন শান্ত হয়। কিন্তু আমি তোমার মনকে শান্ত করতে মিথ্যা আশ্বাস দিবো না। যদি স্পর্শী কখনো মা হতে না পারে আমি আবার বিয়ে করবো।’

একথা শুনে মরিয়ম বেগম বিষ্ময়ে কথা বলতেই ভুলে গেল।
হতবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন রুদ্রর মুখ পানে। কিয়ৎক্ষণ সেইভাবেই তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র চট করে উনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত দুটো ধরে বলল,

-‘আরে রিল্যাক্স! রিল্যাক্স! মজা করছি আমি, আমার পুরো কথাটা শোনো। আমি তোমার মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই বলতে চাচ্ছিলাম।’

মরিয়ম বেগম রুদ্রর হাত থেকে হাত সরিয়ে নিতে গেলে রুদ্র উনার দু’হাতের উপর চুমু এঁকে বলল,

-‘আমার নিজের মায়ের থেকে তোমাকে কোনো অংশে কম ভালোবাসি না মেজো মা। নরমাল হও প্লিজ! এত হাইপার হলে তোমার প্রেশার বেড়ে যাবে। আমি সত্যিই মজা করেছি, সরি সরি আর করবো না।’

-” মা হতে না পারার যন্ত্রণা কতটা পীড়াদায়ক যদি বুঝতি তাহলে এমন মজা করতে পারতি না। আমি মা হতে না পারা এক ব্যর্থ নারী। আমি যে পথের পথিক আমি চাই না আমার মেয়েটাও একই পথের পথিক হোক। যেসব দিনের সম্মুখীন হয়েছি স্মরণেও আনতে পারি না আমার মেয়ে এমন দিনের সম্মুখীন হোক এজন্য খুব ভয় হয়।’

-‘তোমার কথা অনুযায়ী যদি স্পর্শী কখনো মা হতে না পারে তখন কি করবো এটাই শুনতে চাচ্ছো তো? মেজো মা, মুখে তো অনেক বড় বড় কথা বলা যায়। বড় কথা বলে কতজন
সেসব কথার রাখে, বলো তো আমায়? জীবনটা বক্ররেখা। জীবনের যাত্রা কখন কোনদিক দিয়ে শুরু হয় তা বলা যায়?
আমি জানিনা আমাদের ভাগ্যকে কি লেখা আছে তবে যদি তোমার ভয়ের কারণ সত্যিই হয় তাহলে আমিও এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।’

-‘সেই কঠিন সিদ্ধান্ত টা কি? পুনরায় বিয়ে?’

-‘উহুম! বাবা ডাক না শুনেও আমার মেজো বাবা যেমন যত্নে আগলে রেখেছে তোমায়। তোমার ব্যর্থতাকে নিমূল করতে একটা পুষ্পকলি এনে দিয়েছে তোমার কোলেবুকে। আমি মেজো বাবার মতো এত হৃদয়বান হতে না পারলেও আমার মতো করে স্পর্শীকে আমার কাছেই রেখে দিবো আজীবন।
মৃত্যুব্যতীত তাকে কখনো আমার থেকে দূরে যেতো দিবো না যদিও না সে চায়। আর বাচ্চা কাচ্চার ব্যাপারটা পরে ভাবা যাবে। কারণ আমি জানি আমার ভাগ্য একটা অপ্রসন্ন হবে না।’

রুদ্রর বলা কথা শুনে মরিয়ম বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
তারপর রুদ্র কোনোমতে উনাকে সামলে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করল। ডাক্তার মনযোগ সহকারে রিপোর্ট নেড়ে চেড়ে দেখে জানালেন কোনো সমস্যা নেই, সবকিছু নরমাল। তবে একবার যখন আঘাত পেয়েছে তখন এখন থেকেই সাবধানে থাকতে হবে, ভারী জিনিসপত্র তোলা নামা থেকে সর্তক হতে হবে, বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়। বাঙালি নারীরা এ সময় শরীরের হেলাফেলা করে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে।
আর অবশ্যই তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে যেন ওই ঘটনা
পূনরাবৃত্তি না হয়। একবার বেঁচে গেল মানে এই না বারবার বেঁচে যাবে। আর মোদ্দাকথা স্পর্শী মেয়ে মানুষ আজ অথবা কাল তাকে সন্তান জন্ম দিতে হবে। সন্তান জন্ম দেওয়ার এই জার্ণিটা মোটেও সোজা কথা নয়। তখন যাতে সমস্যা না হয় এজন্য এখনই এত সর্তকতা। এসব নানান উপদেশপূর্ণ কথা বলে ডাক্তার মেডিসিন লিখে মরিয়ম বেগমকে বাইরে যেতে বললেন। ডাক্তার উনার থেকে কিছু লুকাচ্ছে ভেবে মরিয়ম বেগমের মুখটা শুকিয়ে গেল। এইেব্যাপারটা বিজ্ঞ ডাক্তার খেয়াল হেসে বললেন,

-‘মিসেস মরিয়ম আপনার মেয়ের কোনো সমস্যা নেই, ভয় পাবেন না। আসলে রুদ্র আপনার ছেলে+ বর্তমানে জামাতা।
শাশুড়ির সামনে অনেক কিছু বলা যায় না। আমরা ডাক্তার, লাজ লজ্জা নেই বললেই চলে। কিন্তু কিছু কথা মুখের উপর বলে দিলে আপনারা অস্বস্তিতে ভুগবেন এজন্য বাইরে যেতে বললাম। রুদ্র আমার চেনাজানা বলে তার জন্য এটুকু করা, নয়তো কে কার শাশুড়ী আর কে কার জামাতা এত দেখার সময় আমাদের হাতে নেই। এরপরেও যদি আপনার কোনো ডাউট থাকে তাহলে বসতে পারেন। আর রুদ্র তোমরা এখন স্বামী-স্ত্রী, একসঙ্গে এক রুমে থাকো, তুমিও শক্ত সার্মথ্যবান যুবক, তোমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে নিশ্চয়ই। ‘

ডাক্তারের বলা সর্বশেষ কথা কানে পৌঁছাতেই মরিয়ম বেগম পড়িমরি করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। ছিঃ! ছিঃ! মা হয়ে এসব কথা কানে শোনা যায়? বলার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেলে ভালো হতো। জামাইয়ের সামনের কি সব কথাবার্তা।
আর ডাক্তারের লজ্জা নেই তা যেন হাতেনাতে প্রমাণও দিয়ে দিলো। ডাক্তারের সামনে রুদ্র নিরুত্তর হয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি ডাক্তারের টেবিলে থাকা টুইন বেবিদের ছবিটার দিকে।
মরিয়ম বেগমকে যেতে দেখে ডাক্তার খোলামেলাভাবে কথা শুরু করলেন,

-‘স্পর্শীর বয়স একেবারেই অল্প তার উপরে এ বয়সে বিয়ে!
যেটা মোটেও ঠিক হয় নি। যাই হোক ফ্যামিলি ম্যাটারে কথা না এগোয়। অপরিপক্ক বয়সে বিয়ে, শারীরিক সম্পর্ক, সন্তান জন্মদান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ আপনাকে বলতে হবে না নিশ্চয়ই।
তবুও ডাক্তার হিসেবে শুধু এইটুকুই বলছি আপনার ওয়াইফ এখন যেন কনসিভ না করে। এতে মা ও বাচ্চা দুজন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আপনাদের দু’জনের বয়স অল্প, আবেগ বেশি
সঙ্গে ভুলের সংখ্যাটাও। তাই আবারও বলছি আপনি নিজে সর্তক হবেন আর খেয়াল রাখবেন আবেগের বশে ভুল যেন নাহয়।’

রুদ্রর উনার কথায় সম্মতি দিয়ে প্রেসক্রিবশন নিয়ে বেরিয়ে এলো। একটুদূরে দাঁড়িয়ে আছে মরিয়ম বেগম। চেনা কারো সঙ্গে রাজ্যের গল্পের জুড়ে দাঁত বের করে হাসছে। রুদ্র তার বিরক্তিকর মেজাজ নিয়ন্ত্রণে এনে সেদিকে পা বাড়াল। আর
যেতে যেতে ডাক্তারের কথাগুলো পুনরায় স্মরণ করে মনে মনে বলল,

-‘ আমার বাচ্চা বউটাকে আগে পেলে পুষে বড় করি তারপর যদি বেঁচে থাকি তখন আমার ছানাপোনার কথা ভাবা যাবে। কিন্তু না, আমি বাদে সবাই এখন থেকেই আমার ছানাপোনা নিয়েই চিন্তিত। তাদের কি করে বলি ছানাপোনার আগমনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হতে ঢের বাকি। ‘

To be continue…………!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে