#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৮]
যে পুরুষ নারীর মন বুঝে না, কষ্ট বুঝে না, আবেগ বুঝে না, অভিমানে ঠাসা দৃষ্টির মানে বুঝে না, সে আর যায় হোক ভালো স্বামী হতে পারে না। কারণ ভালো স্বামীরা নিজদায়িত্ব বুঝে, অভিমান বুঝে, সেই সঙ্গে চেষ্টা করে প্রিয় মানুষটির মন জুগিয়ে চলার। এ ক্ষেত্রে রুদ্র অনেক পিছিয়ে, অনেক।
মনে মনে মনগড়া কথা ভেবে স্পর্শী ধীরে ধীরে চোখজোড়া
বুজে নিলো। কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না শরীরও আর সায় দিচ্ছে না। তবে রুদ্রর অনুপস্থিততে চিন্তা হচ্ছিল। কারণ এই অবধি রুদ্রকে যতটুকু চিনেছে তার বর্তমান অবস্থা জেনেও বসে থাকার মানুষ সে নয়। তাহলে সারাদিন পেরিয়ে যাচ্ছিল তার দেখা নেই কেন, সে ঠিক আছে তো? বেহায়া মনে এসব ঘুরপাক খাচ্ছিল সর্বক্ষণ। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারে নি। আর এই পারাটাই তাকে আরো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। স্পর্শীকে চোখ বুজতে দেখে রুদ্র মলিন হেসে ওকে
আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। ওষ্ঠ ছোঁয়ালো ওর অভিমানে ঠাসা চোখের পাতায়। মাথাটা চেপে ধরে রাখল উত্তপ্ত বুকে।
যেখানে অসহ্য চিনচিনে ব্যথারা মিছিল করছে, অদৃশ্য হয়ে
চিৎকার করে বলছে, ভালোবাসি রে পাগলি, তোকে ভীষণ ভালোবাসি।’
সারাদিন রুদ্রর বুকজুড়ে যে দূশ্যহীন ব্য/থা প্রকট হয়ে দহন ছড়াচ্ছিল, স্পর্শীর ছোঁয়া পেয়ে সেই বুক নিমিষে প্রশান্তিতে ভরে গেল। উপলব্ধি করতে পারলো এখানে শান্তির আবাস।
রুদ্রকে কাছে পেয়ে স্পর্শীও নিজেকে আঁটকাতে পারলো না রুদ্র গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকালো। সারাদিনের বোবা কান্নাগুলো বাঁধ ভেঙে আছড়ে পড়তে লাগল রুদ্রর বুকে।
যার নামে শতশত অভিযোগ অথচ কান্না করতে তার বুকই বেঁছে নিলো বোকা মেয়েটা। অভিমানের ঠুনকো স্তুপ ভেঙে ফেললো অপ্রিয় মানুষটার আলতো স্পর্শে।একেই বুঝি বলে মেয়ে মানুষ। যাদের মুখে অভিমানে ভাসা মনে থাকে প্রণয়ে বাসা। স্পর্শী কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রর বুকের শার্ট আঁকড়ে ধরে অস্পষ্টভাবে কিছু বলছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। অপ্রিয় এই মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লজ্জাও লাগছে না, অথচ ভীষণভাবে লজ্জা লাগার দরকার ছিল। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পরে রুদ্র স্পর্শীকে নিজে থেকে ছাড়াতে গেলে স্পর্শী মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল অর্থাৎ ছাড়বে না, এভাবেই আরো কাঁদবে, আরো। তবুও রুদ্র নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্পর্শীকে
ধরে উঠে বসালো। হাতের ক্যানোলা সাধধানে বালিশে উপর রেখে নিজে দেওয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে স্পর্শীকে নিজের
কাছে টেনে বুকে মাথা ঠেকাল। ওভাবে থাকায় ক্যানোলাতে র/ক্ত উঠে যাচ্ছিল। এখন ঠিক আছে আর সমস্যা হবে না।
স্পর্শী রুদ্রর বুকে মাথা ঠেকিয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদছে। তবে রুদ্রর কিছু বলছে না ধীরে ধীরে স্পর্শীর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কাঁটল। একটুপর দরজায় নক পড়াতে স্পর্শীকে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দরজাটা খুলে দিলো রুদ্র। রুদ্রর মা কেবিনে প্রবেশ করে একটা শপিংব্যাগ
রুদ্রকে দিয়ে বললেন,
-‘তোমার বাবা তোমার জন্য ড্রেস কিনে আনলেন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।’
-‘বাবা শুধু শুধু কষ্ট করতে গেল কেন?’
-‘দরকার আছে তাই, এখন যাও।’
রুদ্র কথা না বাড়িয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। তখন বড় মা ওয়াশরুমের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে স্পর্শীর মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মেয়েটা কেঁদে কেঁটে মুখের কী অবস্থা করেছে! কিয়াৎকাল চুপ থেকে উনি স্বাভাবিকভাবে বললেন,
-‘ আর যাই করিস ভুলেও কখনো রুদ্রকে রাজনীতি ছাড়ার কথা বলবি না। সে রাজনীতি ছাড়তে পারবে না কারণ এটা তার মায়ের আদেশ আছে। তাকে অনেকদূর পৌঁছাতে হবে,
তুই তাকে সাপোর্ট দিতে না পারলেও কথা দিয়ে দূর্বল করিস না, তোর কান্নাকাটি দেখে ওর যাতে মনে না হয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে ভুল করেছে। রাজনীতি তার আপনজনদের কষ্ট দিচ্ছে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উত্তম। তাহলে বলি শোন, কে কী চাচ্ছে জানি না তবে আমি চাই আমার ছেলে রাজনীতি করুক।’
-‘রাজনীতিতে মারামারি দাঙ্গা এসব কমন একটা ইস্যু। এটা আমার থেকে তুমি ভালো করেই জানো। বিরোধীদল যখন তোমার ছেলের উপর হা/মলা করবে, তার শরীরটা কুঁ/পিয়ে
র/ক্তাক্ত করবে, অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করবে, তখন তাকে দেখে তোমার কষ্ট লাগবে না? তুমি তো মা, ছেলে হারানোর য/ন্ত্রণা সইতে পারবে তুমি?’
-‘আমার হাতের উপর আমার বাবা-মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।নিজের চোখে দেখেছি মৃত্যুর যন্ত্রণায় তারা কীভাবে ছটফট করেছে। তবুও একটুও কাঁদি নি, ভেঙেও পড়ি নি।
বাবা মায়েরটা যখন সহ্য করতে পেরেছি ছেলেরটাও পারব।’
একথা শুনে স্পশী ব্যাকুল হয়ে কেঁদে উঠলো। দৌড়ে উঠতে গিয়ে হাতে টান পড়লেও গুরুত্ব দিলো না। ক্যানোলাটা ছিঁড়ে ফুঁড়ে মেঝেতে ছিটকে পড়লো। হাত থেকে টপটপ করে র/ক্ত
ঝরে পড়তে থাকল টাইলস্ করা মেঝেতে। স্পর্শী সোজা বড় পায়ের পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।তার জল থৈ থৈ অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে মেদুর গাল। সে কাঁদতে কাঁদতে
বলল,
-‘তুমি ছেলের শোক সইতে পারলেও আমি স্বামীর মৃত্যুশোক সহ্য করতে পারব না। এতটা নিষ্ঠুর হইয়ো না বড় মা।রুদ্রকে প্লিজ বলো এসব ছেড়ে দিতে। রাজনীতির রেষানলে আমরা
ধ্বংস হয়ে যাবো, একটু একটু করে হারিয়ে ফেলব কাঙ্ক্ষিত
মানুষগুলোকে। তোমার পায়ে পড়ি বড় মা ওকে বলো এসব ছেড়ে দিতে।’
স্পর্শীকে এভাবে কাঁদতে দেখে বড় মা ওকে দাঁড় করালেন।
তীক্ষ্ণ চোখে স্পর্শীকে পরখ করে সন্দিহান স্বরে বললেন,
-‘ভালোবেসে ফেলেছিস আমার ছেলেটাকে?’
-‘না! ভালো না বাসলেও আমি চাই সে সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক। কিন্তু দিনকে দিন যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে মনে হয় না খুব বেশিদিন ভালো লাগবে। টাকা-পয়সা, ক্ষমতা, বাড়ি গাড়ি কী হবে যদি আপনমানুষগুলোই ভালো না থাকে? তোমরা জোর করে বিয়ে দিয়েছো আমাদের, সব মেনে নিয়েছি কিন্তু এখন জোর করে বিধবা তকমা লাগিয়ো না আমার শরীরে। আমি এই কষ্ট সইতে পারব না।’
-‘বোকা মেয়ে কাঁদিস না। মন দিয়ে শোন, কাঁচের জিনিস আর রাজনীতি প্রায় একই জিনিস। কাঁচের গ্লাস হাত থেকে পড়ার পর জোড়া লাগালে যেমন জোরালো দাগ থেকে যায়, রাজনীতিতেও তাই। এই পথে একবার জড়িয়ে গেলে সহজে মুক্তি মেলে না।’
-‘তুমি রাজনীতি ছেড়ে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করছো, তাহলে রুদ্র কেন পারবে না? কেন জেনে বুঝে বিপদ ডেকে আনছে? ওকে বুঝাও বড় মা, তুমি বললে সে ঠিক শুনবে।’
-‘কে বলেছে আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারছি? আমার তো মনে হয় না। শ্বাস প্রশ্বাস চলাকেই কী বেঁচে থাকা বলে?
তাহলে বলবো ভুল জানিস। আমি হচ্ছি জীবন্ত লাশ! মানুষ কখন জীবন্ত লাশ হয় জানা আছে তোর? যখন বেঁচে থেকে মরার মতো মৃত্যু যন্ত্রণা সইতে হয়। বর্তমানে আমিও তাইই।
এজন্যই বলছি রুদ্রকে সাপোর্ট করতে না পারলেও ইমোশন কাজে লাগিয়ে হারতে দিস না। আমি একুটু একটু করে ওকে এই অবধি দাঁড় করিয়েছি, সে আমার সাহসী ছেলে। আমার ছেলে! আমার রুদ্র! সাহসী বলেই আমি মা হয়েও ওর জান বাজি ধরে লড়ছি। তুই এখনো অবুজ। নিষ্ঠুর পৃথিবীর ম্যার প্যাঁচ বোঝার বোধ এখনো হয় নি তোর। এখন কান্না থামা,
রুদ্র শুনে ফেললে লঙ্কাকান্ড বাঁধাবে।পরে নাহয় এসব নিয়ে কথা বলা যাবে।’
-‘কিন্তু বড় মা..।’
-‘চুপ! আমার কাছে ঠুনকো আবেগের দাম নেই।’
একথা বলে বড় মা নার্স ডেকে স্পর্শীর হাত ব্যান্ডেজ করিয়ে নিলেন। এখন স্যালাইন দিবে না আর তাই নার্স কাজ শেষে বেরিয়ে গেল। স্পর্শী বালিশে হেলান দিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নানান ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মস্তিস্ক জুড়ে।
বড় মায়ের মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষ পৃথিবীতে আর আছে নাকি জানা নেই তার। স্পর্শীকে ভাবনায় মশগুল দেখে বড় কথা না বাড়িয়ে তার চুল আঁচড়ে বেণি করে দিলেন। রুমাল ভিজিয়ে চোখ মুখ মুছে দিলেন। তখন মরিয়ম বেগম দরজা ঠেলেদাদীমাকে এই কেবিনে প্রবেশ করলেন। দাদীমা জ্ঞান ফেরার পর থেকেই স্পর্শীকে দেখার জন্য বড্ড উতলা হয়ে গেছেন। দাদীমাকে দেখে স্পর্শীর দু’চোখ ফেটে জল গড়িয়ে গেল। দাদীমার মুখটা শুকিয়ে গেছে কপালে সাদা ব্যান্ডেজ।
বৃদ্ধ শরীরে এমন ধকল, না জানি কত কষ্ট পেয়েছে দাদীমা।
তাকে কাঁদতে দেখে দাদীমা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেললেন, চারদিকে এত মন খারাপ কান্নাকাটি ভালো লাগছে না আর।
ক’দিন ধরে সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে বাসায় ফিরে দোয়া ও মহ্ফিলের আয়োজন করতে হবে। বিপদের উপর বিপদ। এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে বিপদমুক্তির পথ খুঁজবেন। ছেলে মেয়ে দুটো বিয়ে হওয়ার পর থেকে তাদের জীবনে কিছু না কিছু ঘটেই চলেছে। তারা
না পারছে নিজেরা ভালো থাকতে আর না পারছে কাউকে ভালো রাখতে। অথচ নিজেরা নিজেদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার এমনকিছু করতে হবে যাতে ছেলে মেয়ে দু’,টো ভালো থাকে।
তখন ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে রুদ্র বেরিয়ে এলো,
কেবিনে উপস্থিত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে তোয়ালে মেলে দিলো বেডের স্ট্যান্ডে। হঠাৎ রুদ্রর সঙ্গে স্পর্শীর চোখাচোখি হলো, রুদ্রর চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। গোসলে যাওয়ার আগে তো এমন ছিল না। আচ্ছা রুদ্র কি তাদের কথা শুনে ফেলেছে? কিন্তু তারা যখন কখা বলছিল তখন ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছিল। পানি পড়ার শব্দ ছাপিয়েও কী ওদের কথা শুনেছে রুদ্র? নাকি তার কান্না দেখে কাঁদতে না পেরে ওয়াশরুমে গিয়ে কেঁদেছে?তার জন্য নাকি কাঁদবে, তাও রুদ্র রাজ! ধুর, কীসব অহেতুক ভাবনা।
তখন একজন ডাক্তার এসে চেকাব করে জানালো স্পর্শীকে হালকা খাবার দিতে। রুদ্রর বাবা সবার জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলেন মাঝপথে আশিকের সঙ্গে দেখা। সে সবার জন্য তার বাসায় থেকে খাবার এনেছে। শুধু শুধু এত কষ্ট করার জন্য রুদ্রর থেকে ঝাঁড়ি খেয়েও হাসল ছেলেটা। তারপর সবাইকে খেয়ে নিতে বলে বেরিয়ে গেল।সবাই যখন স্পর্শীর কেবিনে খেতে বসেছে তখন রুদ্র মুখে খাবার তুলতে গিয়ে হাত নামিয়ে ফেললো। কাফির কান্নারত মুখটা ভেসে উঠল তার চোখের সামনে। কাফিকে ছোট ভাইয়ের মতো নিজের
সঙ্গে সঙ্গে রাখে। রাগের বশে অকারণে হুমকি ধামকি দিলে একটু পরে এসে ঠিকই বলে, স্যার, কিছু লাগবে? কোথাও বের হবেন, গাড়ি বের করবো?’ সে নিজেও খেয়াল করেছে কাফি খুব নরম মনের। যখন কাউকে মারতে দেখে তখন তার চোখ মুখে কষ্টের ছাপ ভেসে ওঠে। হয়তো মায়ের কথা
মনে পড়ে যায় তার। বারো বছর বয়সী কাফি নিজের চোখে দেখেছে তার মাতাল বাবা তার মাকে মারতে মারতে মেরেই ফেলেছে। মার দেখে ভয়ে পালিয়েও এসেছিল বাসা থেকে, ঠাঁই পেয়েছিল বস্তির টোকাইয়ের সঙ্গে তারপর সেখানে বড় হয়ে কোনো এক ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে দেখা। ধীরে ধীরে ওর বিশ্বাস অর্জন করে বর্তমানে তার সহকারী। পৃথিবীতে সবার জীবনে একটা অতীত থাকে। অতীতকে তালাবন্ধ করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। কাফির কথা মনে পড়তেই রুদ্র খাবার
রেখে দিলো, ছেলেটা রুমার লাশ দেখে কী করছে কে জানে,
বড্ড মায়া হচ্ছে ছেলেটার জন্য।
এদিকে বড় মা তীক্ষ্ণ নজরেছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মন
মন পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। হয়তো আন্দাজও করে ফেললেন রুদ্রকে খাবার রেখে কাউকে ফোন করতে দেখে। তখন তিনি বললেন,
‘আশিক এখান থেকে সোজা কাফির কাছে গেছে, ওর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তাছাড়া দলের আরো অনেকেই আছে সেখানে। আগামীকাল সকালে ওর বউয়ের দাফনের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে, সব ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। সারাদিন না খেয়ে আছো এখন কিছু মুখে দাও।’
একথা শুনে স্পর্শী স্যুপ খাওয়া থামিয়ে হতবাক হয়ে তাকাল রুদ্রর দিকে। রুদ্রর দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। সবার সামনে কিছু
জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে কী না ভেবে পেল না স্পর্শী। তখন দাদীমা বিষ্ময় নিয়ে বললেন,
-‘কাফির বউডা ম/ইরা গেছে? আহারে বেচারি! আমরা তাও ভাগ্যের জোরে বাঁইচ্ছা গেছি। বউডা ভালোই আছিল রে।’
রুদ্র সেকথার উত্তর না দিলেও মরিয়ম বেগম মুখ খুললেন,
-‘ নিজের বউয়ের নিরাপত্তা অনিশ্চিত রেখে অন্যের বউয়ের মৃত্যুতে শোক পালন করা হাস্যকর হয়ে গেল না? যাই হোক, বড় ভাবী আমি আগামীকাল সকালে স্পর্শীকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। তোমরা কাজ সেরে আস্তে ধীরে ফিরো।’
-‘মেজো মা আমার কথাটা..!’
-‘বলা আর শোনার পরিস্থিতি নেই। তোমার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি মানে এই নয় আমার মেয়ের জীবন তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। আজকে পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না যদি না স্পর্শীকে এখানে আনার কথা বলতে। যা হওয়ার হয়ে গেছে কিন্তু এখন থেকে যদি আমার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করো তাহলে এবার আমাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে।’
মরিয়ম বেগম কথা শেষ করতেই দাদীমা ধমকে উঠলেন। রাগে গমগম করছে উনার মুখ। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-‘থামো মেজো বউ, ফারদার এসব ফাও কথা কইবা না। কী পাইছো কী তুমরা হ্যাঁ? এসব কথা আগে ভাবো নাই ক্যান ?
জোর কইরা ওগো বিয়া দিয়া, মাইনা নে, মাইনা নে, কইরা
মুখে ফ্যাপরা তুইল্লা দিলা। এখন যখন দু’জনে একটু একটু কইরা সহজ হইতাছে এখন তুমি মশকরা শুরু করছো। বলি নিজেদের ভাবো কী তুমরা, হ্যাঁ?’
-‘বে/য়াদবি মাফ করবেন মা। কিন্তু আমি কিছুতেই আমার মেয়ের অনিশ্চিত জীবন আর মেনে নিতে পারব না। পরপর দুই দুইবার আমর মেয়েটা মরতে মরতে বেঁচে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলবো আমি। ও আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মা। এতদিন অন্যের ভরসায় থাকলেও আর পারছি না। অন্য কারো মতো এতটা পাষাণ হতে পারব না আমি যে নিজের সন্তানের জীবন নিয়ে বাজি ধরবো। অনিশ্চিত জীবন জেনেও সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবো।’
মরিয়ম বেগমের কথা শুনে স্পর্শী চকিতে তাকালো বড় মায়ের দিকে। বড় নিশ্চুপ হয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।
মরিয়ম বেগমের খোঁচা মারা কথার মর্ম বুঝতে বাকি নেই কারো। কেবিন জুড়ে চলছে সুনশান নীরাবতা। স্পর্শীর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অদূরে বসে থাকা রুদ্রর মলিন মুখপানে।
সেই নীরাবতার রাশ টেনে রুদ্রই মুখ খুলল,
-‘মোজো মা স্পর্শীই তোমার সন্তান আমি তোমার কেউ না?’
-‘ছিলে , কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সেই সম্পর্কের ছেদ ঘটেছে। কেন ঘটেছে জানো? কারণ তোমার মা নিজের মুখে স্বীকার করেছে উনি স্পর্শীকে বিধবা রুপে দেখতে পারবে। ছেলের মৃ/ত্যুশোক সামলে নিতে পারবেন। যে মা নিজের মুখে এসব বলতে পারে তার সন্তান নিজের সন্তানের মতো দেখাটাও,
‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ ব্যাপারটার মতো হয়ে যাবে না?’
-‘তাহলে এখন কি করতে চাচ্ছো তুমি?’
-‘আমার মেয়েকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাচ্ছি।’
-‘কতটা দূরে?
-‘যতটা দূরে সরালে কোনো অধিকার দেখানোর পস্থা খুঁজে পাবে না তুমি।’
-‘পারবো না, চেষ্টা করে দেখতে পারো।’
-‘দেখা যাক পারি কী না।’
-‘হুম অবশ্যই। তবে তুমি যদি ত্যাড়া শাশুড়ী হও তবে আমিও ছ্যাচড়া জামাইয়ের রোল প্লো করতে বাধ্য হবো।’
To be continue…………!!