প্রেম প্রার্থনা পর্ব-১২

0
707

#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১২]

-‘ আমি নাকি রাজনীতি? ‘

-‘রাজনীতি।’

রুদ্রর কথা শুনে স্পর্শী মুচকি হাসল। কষ্টমাখা মলিন হাসি। ছলছল চোখ। পুনরায় প্রত্যাখান! তাও একবার নয় পরপর কয়েকবার। অথচ রুদ্র মন রক্ষার্থেও বলতে পারতো, ‘ আমি শুধু তোকেই চাই স্পর্শী, শুধু তোকে।’
কিন্তু না, রুদ্র সেটা না করে পাষানের মতো বারবার ফিরিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার কোনো মূল্যই নেই। সে থাকলেও যা না থাকলেও তা। রাজনীতিই তার কাছে সব। নিজে বেহা/য়া হয়ে সবার মন রক্ষার্থে তাকে নিয়ে সংসার শুরু করার কথা ভেবেছে। নিজের ইচ্ছে, আকাঙ্খা, স্বপ্নকে, জলাজ্ঞলী দিয়ে
রুদ্রকে নিয়ে ভাবার ইচ্ছে পোষণ করেছে। অথচ যার জন্য এত আয়োজন সে তার পাশেও নেই, কাছেও নেই। তার করা সমস্ত আয়োজনই যেন বৃর্থা, নিরর্থক। তাছাড়া বাসার সবাই বলে ‘মেনে নে, ‘ কিন্তু কাকে মেনে নিবে, যে তার নয়, তাকে? সে তো চেষ্টা করছে কিন্তু রুদ্র! সে চাইলেও একপা এগোচ্ছে না, ভাবছে না, নতুন করে শুরু করার কথা। মূখ্য কথা কে বা চায় বিধবা হতে? এমিলির মতো পরিস্থিতিতে পড়তে চাচ্ছে না বলেই রুদ্রকে বার বার বলছে রাজনীতি ছেড়ে দিতে। কী দরকার রাজনীতি করার? রাজনীতি ছাড়া মানুষ বাঁচে না?
তাছাড়া রুদ্র তো এখন একা নয়। পরিস্থিতি মোতাবের সেও জড়িয়ে গেছে রুদ্রর সঙ্গে। এখন নিজের কথা ভাবতে গেলে
রুদ্রর নামও জড়িয়ে যাচ্ছে। আজ অথবা কাল রুদ্রকে সে স্বামী হিসেবে মানতে বাধ্য। এজন্য চাচ্ছিল রুদ্র এসব ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। আর পাঁচজনের মতো ওরা
সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকুক। কিন্তু সেটাও বোধহয় সম্ভব নয়।
কারণ রুদ্র দিনকে দিন যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে তাতে আশা ভরসা নেই। কখন কী ঘটে তাও বলা যায় না। যাকে নিয়ে বাঁচার কথা ভাববে সেইই যদি গলা অবধি জলে ডুবে থাকে তাহলে কীভাবে হবে? ভেবেছিল তার এমন পাগলামি দেখে রুদ্রর মনটা গলবে, কিঞ্চিৎ আলোর দেখাও মিলবে, কিন্তু ফলাফল শূন্য..! পুনরায় প্রত্যাখান হয়ে স্পর্শী একটা বাড়তি কথাও বলল না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেত্রজোড়া বন্ধ করে রইল। সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখের কার্ণিশ বেয়ে ঝরে গেল অশ্রুফোঁটা। ওকে কাঁদতে দেখে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। কেবিনের সামনেই নার্সরা বসে গালগল্পে
মগ্ন। সামনের কেবিন থেকে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। সম্ভবত তার হাতে ক্যানোলা করা হচ্ছে। কেবিনের দরজার কাছে এক মহিলা মুখে আঁচল গুঁজে অসহায় ভাবে কাঁদছে, হয়তোবা উনিই সেই বাচ্চাটার মা। কলিজার টুকরো বাচ্চার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে
মাঝে উঁকি মেরে দেখছে হয়েছে নাকি। তখন দু’জন নার্সকে কেবিন থেকে বের হতে দেখা গেল। তারা বের হয়ে বাচ্চাটার মাকে বলল,

-‘ কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চার দম আঁটকে গেছে, যান বুকে নিয়ে বুকে, পিঠে, থাবা দেন। আমরা একটু পরে এসে ক্যানোলা করে যাবো।’

একথা বলে ওরা বিরক্ত মুখে রুদ্রর পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
দম আঁটকানোর কথা শুনে সেই মা দৌড়ে গেলেন বাচ্চাটার কাছে। মুহূর্তেই বুকের ধনকে বুকে নিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। তবুও নার্সরা কেউ এগিয়ে গেলেন না। রুদ্র নার্সদের দিকে একবার তাকিয়ে নিজে গেল বাচ্চাটার কাছে। দরজা
পেরিয়ে ঢুকতেই দেখা গেল এক বছরের ফুটফুটে ছেলেকে। কাঁদতে কাঁদতেই দম আঁটকে গেছে তবুও ক্যানোলা করা হয় নি। বাচ্চাটা শ্বাস নিতেও পারছে না, কাঁদতেও পারছে না, হা করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে। বাচ্চাটার মা বর্তমানে একা হসপিটালে আছেন। উনার হাজবেন্ড ওষুধ আনতে গেছেন।
কিছুক্ষণ আগে তিনবার ক্যানোলার সূচ ফুঁটিয়েও বাচ্চাটার রগ পাওয়া যায় নি। ফলে মাসুম বাচ্চাটা ভয়, ব্যথায়, মায়ের দিকে হাত বাড়াতেই নার্স ধমকে ওঠে ভদ্রমহিলাকে। যা নয় তাই বলে বেরিয়ে যেতে বলে কেবিন থেকে। সেই অসহায় মা বাচ্চার ভালোর জন্যই কেবিনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে। আর নার্স চেপে ধরে ক্যানোলা করায় বাচ্চা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে দম আঁটকে যায়। এ অবস্থা দেখে তারা চেষ্টা চালাতে থাকে। যখন দেখে দম আসছেই না তখন
বাচ্চাটাকে কোলে না তুলে নার্স ভদ্রমহিলাকে বুকে, পিঠে, থাবা দিতে বলে চলে যায়। বাচ্চার অবস্থা দেখে বাচ্চার মা দিশা না পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তাও নার্সগুলো শুনেও এগিয়ে আসে না বরং চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করে আজ দুপুরের লাঞ্চে কে কী এনেছে।
রুদ্র কেবিনে প্রবেশ করে আগে বাচ্চাকে বুকে তুলে নিলো।
তারপর বাচ্চাটার মাথা কিছুটা নিচু করে উপুড় করে শুইয়ে পিঠে বেশ কয়েকবার চাপড় মারল। এতে বাচ্চার শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এলো। অনেক সময় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে শিশুরা কাঁদতে বা কথা বলতে পারে না। তখনই এই পন্হা অবলম্বন করতে হয়। দম ফেরার পর বাচ্চার তার মায়ের বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে। থেমে থেমে হিঁচকি তুলে কাঁদছে। রুদ্র ওই মহিলাকে কেবিনে থাকতে বলে সে বাইরে গেল। নার্সরা খাতাতে কীসব লিখতে ব্যস্ত তবে তাদের গল্প থেমে নেই। যে নার্স দু’টো বাচ্চার হাতে ক্যানোলা করেছিল রুদ্র তাদের একজন গিয়ে বলল,

-‘ম্যম, আপনার নামটা জানতে পারি?’

-‘আমার নাম আপনাকে বলতে যাবো কেন, আশ্চর্য!’

-‘প্রয়োজন না থাকলে জানতে চাইতাম না নিশ্চয়ই।’

-‘আমার নাম দিয়ে আপনার কি প্রয়োজন সেটা বলেন?’

-আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে বিয়ে করব তাই নাম ঠিকানা জেনে নিচ্ছি।’

-‘আপনি কি মজা করছেন?’

-‘আপনি কি আমার শালী লাগেন?’

-‘বলবেন নাকি অন্য উপায়ে জেনে নিবো?’

-‘আমার নাম রুবাইদা বলে রুবি ডাকে।’

-‘ধন্যবাদ। ‘

একথা বলে রুদ্র সেখানে দাঁড়িয়েই কাউকে কল করল। দুই বারের বেলায় রিসিভ করল ফোনেন অপর পাশের ব্যক্তিটি।
রুবি তখনো রুদ্রকে আড়চোখে দেখতে ব্যস্ত। অন্য নার্সরাও নিজেদের মধ্যে গুজুরগুজুর করছিল। অদুরে দাঁড়িয়ে রুদ্র
কাউকে বলে উঠল,

-‘হ্যাঁ আতিক, রুদ্র বলছি। শোন, বর্তমানে তোর হসপিটালেই আছি। তিনতলার ৩০৩ নং কেবিনের সামনে যে রিসিপশন আছে সেখানকার একজন নার্স রুবাইদা, সবাই নাকি রুবি নামে চিনে। উনাকে এই মুহূর্তে যদি সাসপেন্স না করিস তোর আর ইশিতার পিক ভাইরাল করে দিবো। কোন পিক মনে আছে তো? আর তুই তো জানিস আমি অকারণে মজা করি না। তাই মজা ভেবে বসে থাকিস না। সময় মাত্র ৫ মিনিট, রাখছি।’

একথা বলে রুদ্র কল কেটে দিলো। রুবিসহ বাকি নার্সরাও হতভম্ব তাকিয়ে আছে। মুহূর্তের মধ্যেই রুবির সাসপেন্সের আদেশ চলে এলো। আতিক খাতিয়ে দেখার আগেই রুবির বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে দিলো। তারপর রিসিপশনের সিসি ক্যামেরা থেকে পুরো ঘটনা দেখে উপস্থিত দুইজন নার্সকে সাপপেন্স করা হলো। যাদের কাজ সেবা করা তাদের এমন
হেলা আতিকেরও সহ্য হলো না। বিশেষ করে কোনো বাচ্চার কষ্ট দেখতে পারে না সে। কারণ তার প্রথম বাচ্চা মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। মূলত ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলাতে।
সেদিনের পর জেদ ধরেই এই হসপিটালের সৃষ্টি। বারংবার বলাও আছে এখানে কোনো বাচ্চাকে অবহেলা করা যাবে না, কোনো পরিস্থিতিতেই না। অথচ রুবি..!মুহূর্তেই এই খবর হসপিটালে ছড়িয়ে গেল। সকলে ধিক্কার জানাল তাদের। এই সুযোগে ভুক্তভোগীরা কথা শুনাতে ছাড়ল না। পরিশেষে সব
হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দুইনার্সকে তখনই বিদায় করা হলো।
আর ওই বাচ্চার চিকিৎসার দায়ভার আতিক নিজে নিলো।

তখন রুদ্র স্পর্শীর কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলছিল। একটুপরে কাফি আর রুমা এলো। তারা
স্পর্শীর খোঁজখবর নিলো। তারপর দু’টো ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,রুদ্রর জন্য ড্রেস আর খাবার নিয়ে এসেছে। স্যালাইন শেষ না হলে স্পর্শী খেতেও পারবে না। কখন স্যালাইন শেষ হবে ঠিক নেই। তাই তারা রুদ্রকে খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করলো। গতরাত থেকে রুদ্র খাওয়া তো দূর পরনের টি-শার্ট অবধি বদলায় নি। কালো টি-শার্টের কারণে রক্তের দাগটাও বোঝা যাচ্ছে না। কাফি আর রুমাজোরাজুরি করেও রুদ্রকে খাওয়াতে পারলো না। শুধু ড্রেস নিয়ে কেবিনের ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস বদলে নিলো। তারপর নার্সদের বলে দিলো রুমা আর স্পর্শীর সমস্যা হলে দেখতে। তার বলার ধরণে নার্সরা বিরক্ত হলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে আশ্বস্ত করল। এখানে রুদ্র বাদে অন্যকেউ হলে খ্যাঁক করে বলে ফেলতো, ‘এতই যখন দরদ তাহলে বউকে কাঁধে করে নিয়ে গেলেই তো পারেন।’
কিন্তু মুখে ফুটে বলার সাহস হলো কারোই৷ তাছাড়া আজকে যা ঘটল ভুলেও একাজ করার কথা ভাবাও যাবে না। নয়তো তাদের অবস্থাও রুবির মতো হবে। তখন রুদ্রের ফোনে কল।এলো। তাকে এখনই বের হতে হবে হাতে বেশি সময়ও নেই।
রুমাকে সাবধানে থাকতে বলে রুদ্ররা দু’জন বেরিয়ে গেল।
তাদের যেতে দেখে রুমা স্পর্শীর কেবিনে প্রবেশ করল। ওর হাতের ব্যাগ রেখে আস্তে করে বসল স্পর্শীর শিয়রে। স্পর্শী ঘুমে কাদা। ওষুধের প্রভাবে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাই বাইরের চেঁচামেচিতেও ঘুম ভাঙ্গে নি তার। নয়তো রুবির কান্নাকাটি শুনে ছুটে বেরিয়ে আসত। মেয়েটা বড্ড বেশি চঞ্চল। আর চঞ্চল মেয়েটিকে আদুরের ছানা মতো আগলে রাখে তাদের বাসার মানুষ। কি সৌভাগ্য! রুমা স্পর্শীর ব্যান্ডেজ করা হাত দেখে হাসল। রুদ্র সারারাত এই হাতটা ধরেই বসে ছিল। কত চুমু খেয়েছে কে জানে। এসব ভেবে রুমা স্পর্শীর ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

-‘ভাইয়া ঠিকই বলে বড্ড অবুজ তুমি স্পর্শী। নয়তো অনেক আগে ভাইয়ার চোখের ভাষায় মন পড়তে সক্ষম হতে। বুঝে ফেলতে কঠিন হৃদয়ের পুরুষটার শুধু মন নয় পুরো অস্বিত্বে মিশে আছো তুমি।’

একথা বলে রুমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। স্পর্শীর ঘুমটা যাতে না ভাঙ্গে তাই সে কেবিনের বাইরে এসে দাঁড়াল। নতুন পেশেন্টরা এসে কেবিন দখল করছে। তাদের আত্মীয়স্বজন
ছোটাছুটি করছে পেশেন্ট নিয়ে। রুদ্র যাওয়ার আগে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পাশের কেবিনের এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে। সে গিয়ে সেই ভদ্রমহিলার কাছে এগিয়ে গেল। তারপর কী যেন ভেবে পুনরায় কেবিনে ফিরে এলো। রুদ্রর আমানত স্পর্শী। তাকে আমানতের খেয়াল রাখতে এখানে রেখে গেছে। তার উচিত হবে না স্পর্শীকে একা রেখে যাওয়া কারণ রুদ্র আর কাফির শুত্রুর শেষ নেই। কখন কীভাবে স্পর্শীর ক্ষতি করে ফেলে তখন রুদ্রকেই বা কি জবাব দিবে? তাছাড়া কাফিও বারবার বলে গেছে নিজেদের খেয়াল রাখতে। ওদের কিছু হলে গেলে নাকি তারাও বাঁচবে না, একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে। একথা ভেবে সে কেবিনে ঢুকে দরজা ভালোভাবে লক করল। তারপর পাশের বেডে শুয়ে উপন্যাসের পিডিএফ নামিয়ে পড়াতে মন দিলো। এর কিছুক্ষণ পর তার ফোনে টুং করে মেসেজ এলো, ‘রুমা বোন আমার! স্পর্শীর হাতের দিকে নজর রেখো। স্যালাইন শেষ হয়ে রক্ত উঠে না যায়, কেমন?’

উক্ত মেসেজ পড়ে রুমা হেসে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘তোমার বরটা আসলেই বউপাগল, হা হা। ‘

____-______-______-______-_________-_______-_____-

এমিলি সাদা শাড়ি পড়ে সাংবাদিকদের সামনে বসে কাঁদছে।
কিছুক্ষণ আগে তার প্রাণের স্বামীর দাফন কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। রাজনীতিবিদরা দলে দলে এসে তাকে স্বান্ত্বণা দিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে সাংবাদিকরাও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। চতুরতার সঙ্গে কখনো সে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, কখনো বা এড়িয়ে যাচ্ছে। লাইভ দেখাচ্ছে সেই দৃশ্য। ভিডিও টা দেখে কাফি ড্রাইভ করতে করতে বলল,

-‘কে মেরেছে, কেন মেরেছে জেনেও এমিলির অভিনয় দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।’

রুদ্র একথার জবাব দিলো না। সে একমণে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। রুদ্রর থেকে জবাব না পেয়ে কাফি গলা পরিষ্কার করে পুনরায় বলল,

-‘অভিনয় করে কাঁদলেও চোখের পানি সত্যিই মনে হচ্ছে। কান্না করার জন্য চোখে কিছু দিয়েছে নাকি?’

-‘(রুদ্র এবারও নিশ্চুপ)’

-‘তবে বিধবা সাজে কিন্তু ভালোই দেখাচ্ছে এমিলিকে, তাই না স্যার?’

একথা শুনে রুদ্র সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থা বলল,

-‘ রুমাকে কি বলতে হবে আজকাল বাইরের মেয়ের দিকে নজর দিচ্ছো।’

-‘সরি, স্যার এই ভুল আর কখনো হবে না।’

একথা বলে কাফি সেই যে মুখ বন্ধ করলো অকারণে আর একটাও বাড়তি কথা বলল না। গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।
হঠাৎ রুদ্র গাড়ি থামাতে বলে চট করে গাড়ি থেকে নামল।তারপর কাফিকেও নামিয়ে হসপিটালে যেতে বলে সে নিজে
বসল ড্রাইভিং সিটে। কাফি হতবাক হয়ে কিছু বলার আগেই রুদ্র গাড়ি নিয়ে ছুঁটলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। আজকাল রুদ্রর মতিগতি কিছুই বুঝে না কাফি। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চলল হসপিটালের পথে। আধাঘন্টা পর হসপিটালে পৌঁছেই পড়ল আরেক বিপাকে। স্পর্শী ঘুম থেকে উঠেই জেদ ধরেছে এই মুহূর্তেই বাসায় ফিরবে। তাকে তারা কোনোভাবে বুঝিয়ে রাখতে পারছে না। এদিকে রুদ্রর ফোন বন্ধ। স্পর্শীর কান্নার গতি বেড়েই চলেছে। পরে বাধ্য হয়ে কাফি ছুটল ডাক্তারের কাছে। অনেক রিকুয়েষ্ট করে ডাক্তারের পরামর্শে স্পর্শীকে নিয়ে বাসায় ফিরল। বাসায় ফিরেই স্পর্শী রুমার সাহায্যে গোসল সেরে ভদ্রমেয়ের মতো খাবার খেলো। তারপর ওষুধ খেয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখায় মন দিলো। তখন বাজে বেলা তিনটা। তারপর বাকি সময়টুকু টিভি দেখে, রুমার সঙ্গে গল্প করে, বই পড়ে তার বাকি সময়টুকু কাটল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো। কাফি আর রুমার সঙ্গে রাতে খেয়ে পুনরায় রুদ্রর রুমে ফিরে এলো। এই সময়টুকুতে সে ভুলেও রুদ্রর কথা জিজ্ঞাসা করে নি তবে রুমা জানিয়েছে সে নাকি জুরুরি কাছে কোথাও গেছে। স্পর্শী রুমের লাইট বন্ধ করে অনেক সময় জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর শরীর যখন আর কুলাচ্ছিলই না তখন গিয়ে শুয়ে পড়ল। অন্ধকার রুমে শুয়ে থাকতে থাকতে সে ঘুমে তলিয়ে গেল। একটুপরে রুমা এসে তাকে দেখে মেসেজ করে রুদ্রকে জানিয়ে দিলো।
তারপর রুমাও সব ঠিকঠাক করে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। এভাবে সময় কাটতে থাকল রাত গভীর হতে লাগল।
মাঝরাতে স্পর্শীর যখন শুনতে পেল কারো বিরবির করা কথা। ঘুমের ঘোরে তেমন পাত্তা দিলো না। একটুপরে কারো নিঃশ্বাস এসে বারি খেল তার চোখে মুখে এবং শুনতে পেল কেউ বলছে,

-‘জানতাম রুমা একা সামলাতে পারবে না। এমনি কাফিকে পাঠিয়েছে আমি। সারাদিন টেনশনে কেটেছে আমার অথচ এনাকে দেখো নাক ঘুমে আরামসে ঘুমাচ্ছে। সারাদিন কি করলাম, কি খেলাম খোঁজ নেওয়া তো দূর একটা কল করার প্রয়োজন মনে করে না।’

তার বলা কথা শেষ হতেই স্পর্শী হাত রাখল সেই মানুষটার ঘাড়ে। আচমকা হামলে পড়ল সেই মানুষটার ঠোঁটের উপর।
সারাদিনের রাগ তুলতে রাগে জিদে স্বজোরে কামড়ে ধরল রুদ্রর ঠোঁট। তখনই রুদ্র টের পেল নোনতা স্বাদ।অর্থাৎ ঠোঁট কেটে গেছে। সেই সঙ্গে স্পর্শী খামছে ধরেছে তার শার্ট এবং পিঠে বসিয়ে দিচ্ছে ধারালো নখ।

To be continue……..!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে