#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[০৮]
-‘এত ধারে শুলে পড়ে যাবি। সরতে সরতে ওইদিকে যাচ্ছিস কেন? তাছাড়া আমি তোর পাশে শুয়েছি কাছে তো যায় নি। নাকি এভাবেই নিমন্ত্রিত জানাচ্ছিস কাছে যাওয়ার?’
-‘খোঁচা না মারলে শান্তি পান না, তাই না?’
-‘কোথায় যেন শুনেছিলাম মেয়েদের মুখ থাকে এক কথা আর এক মনে থাকে আরেক কথা। অর্থাৎ মুখে বলবে ভাত খাবো না। আর মনে প্রত্যাশা রাখবে খাইয়ে দিলেই খেতাম।
অথচ তারা সোজাসাপ্টাভাবে মনের ভাব কখনোই প্রকাশ করবে না। আর তুই তো উল্টো পথে চলা উল্টোমালি।তোর
দ্বারা এসব করা অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য ভেবেছি হয়তোবা
সরে টরে গিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাছে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানাচ্ছিস।’
-‘এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে..! ‘
উক্ত কথাটি শুনে রুদ্র স্পর্শীকে নিজের কাছে এনে জাপটে ধরলো। পুরুষালি শক্ত হাতের বাঁধনে বন্দি স্পর্শী।আকষ্মিক কান্ডে হতবাক, হতভম্ব সে। রুদ্রর নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার চোখে মুখে। তার মন কেমন করা মাদকাসক্ত চাহনিতে
নাড়িয়ে দিলো অন্তঃপুর। তবে মাদকপূর্ণ চোখে দৃষ্টি আঁটকে রাখার সাহস হলো না। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে দু’চোখ বুজে নিলো নিজের অজান্তেই। অতঃপর নিজেকে ছাড়ানোর বৃর্থা চেষ্টা করতেই রুদ্র ওর হাতের বাঁধন শক্ত করলো। তাদের দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলো নিমিষেই। স্পর্শীর হাত তখনো রুদ্রর বুকের বাঁ পাশে। ধুকধুক ধুকপুক দামামা বাজিয়ে দ্রুত গতিতে চলছে রুদ্রর হৃদক্রিয়া। তাকে চোখ বুঝতে দেখে রুদ্র মৃদু হাসল।
তারপর আদুরে স্পর্শে স্পর্শীর একগুচ্ছ চুল কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
-‘বাড়াবাড়ি তখনই হতো যদি তোকে ঠিক এভাবে টান দিয়ে আমার বুকের উপর ফেলতাম। তোর কপালের বে/পরোয়া চুলগুলো এভাবে সরিয়ে দিতাম। তোর কপালে মাঝখানে
এমন করে ঠোঁট ছোঁয়াতাম। তোর ওই কম্পিত ওষ্ঠজোড়ায়
ঠিক এভাবে বেতাল হতে পারতাম। আমি কী এমন করেছি? করি নি তো! এমন করলে ঠিক ওমন হতো আমি শুধু এটাই বোঝালাম।’
মুখে মিটিমিটি হাসি এঁটে উক্ত জবাব দিতে দিতে সেসব কর্ম
সম্পূর্ণ করেছে রুদ্র। তখনো স্পর্শী অনড় হয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। বিষ্ময়তায় তার মস্তিষ্ক এখনো উক্ত ঘটনার সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ। রুদ্রর ছোঁয়ায় যেন জমে গেছে। তার ঠোঁটে এখনো ভেজা ভেজা ভাব। এই মুহূর্তে কী বলা উচিত কী করা উচিত কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। অসীম বিষ্ময়
নিয়ে অনড় হয়ে আছে। তখন রুদ্র তাকে বালিশে শুঁইয়ে মুখ গম্ভীর করে বলে উঠল,
-‘আগ বাড়িয়ে এসব করেছি আমি, বল?’
স্পর্শী বোকার মতো না সূচক মাথা নাড়ালো। আর রুদ্র হাসি আঁটকাতে জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে স্পর্শীর ওড়নার এক প্রান্তে নিজের হাতে বেঁধে অপর প্রান্ত বাঁধল স্পর্শীর হাতে। যাতে সে ঘুমালে স্পর্শী উঠে কোথাও যেতে না পারে। মেয়েটা যা চঞ্চল একে বিশ্বাস নেই। তারপর হাত বাঁধার কাজ সমাপ্ত করে রুদ্র পূর্বের মতোই ঠাঁট বজায় রেখে বলল,
-‘যেহেতু এসব করিই- নি তাই অহেতুক বদনাম দেওয়া থেকে
বিরত থাক। নয়তো সত্যি সত্যিই ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে তখন দোষ দিস না। আর বিনাঅপরাধে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে রাজি নই আমি। আশা করি বুঝেছিস আমার কথাগুলো।খুব ক্লান্ত আমি ঘুমালাম। ভুলেও নড়াচড়া করবি না। তোর নড়াচড়ার কারণে যদি ঘুম ভাঙ্গে তাহলে খবর আছে। আরেকটা কথা, এবার থেকে চায়ে কম চিনি খাবি নয়তো ডায়বেটিস বেড়ে যাবে, তোর না আমার। সেই সঙ্গে এটাও জেনে রাখ, কবুল বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি তোর ভাইয়ের চরিত্র থেকে রিজাইন করেছি। বর্তমানে আছি স্বামী চরিত্রে। আর এখন থেকে এই চরিত্রই বহাল থাকবে।’
নিজের কথা শেষ করে রুদ্র পাশ ফিরে শুয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। অথচ তার ঠোঁটের কোণে মিটিমিটি হাসি।
স্পর্শী নিজেকে সামলে জবাবে কিছু বলবে কিন্ত তাকে সে
ভাবার অবকাশও দিলো না। নিজের কথা আর কাজ সমাপ্ত করে তাকে এড়িয়ে গেল। বিষ্ময়ভাব এখনো কাটে নি তার। রুদ্রর করা কাজে হতভম্ব হয়ে কথার খৈই হারিয়ে ফেলেছে।
যেসব কল্পনাও করে নি আচমকা তেমন কিছু’ই ঘটে গেছে।
তাও কী না অপছন্দের মানুষটির থেকে। স্পর্শীর ঠোঁটে হাত রেখে আড়চোখে তাকালো রুদ্রর পানে। পুরো শরীর অবশ অবশ লাগছে তার। নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে। এমন অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত নয় সে। কোনোদিন এমন ছোঁয়াও
পায় নি ষোড়শী শরীরে। কোনো পুরুষ এতটা কাছে আসে নি ভুলক্রমে। এজন্যই বুঝি রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না সে। তারপর সে আর কিছু ভাবলো না রুদ্র যেভাবে তাকে শুঁইয়ে দিয়েছে ঠিক সেভাবে শুয়েই চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।
চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে গেল কয়েকফোঁটা নোনাজল। ভীষণ অভিমান হলো নিজের বাবা- মায়ের প্রতি। বুক ভেঙে কাঁদতে চাইলেও পারলো না।
জানালার বন্ধ করে পর্দা টানা বিধায় আলো বাতাস আসছে না রুমের মধ্যে। এসির কারনে রুদ্র সব বন্ধ করে দিয়েছে।
স্পর্শী উঠতে গেলে হাতে বাঁধা ওড়নায় টান লাগল। বাড়তি কথা বাড়ানোর ইচ্ছে হলো না তাই শুয়ে পড়লো পাশ ফিরে।
আর স্মৃতিচরণ করতে লাগল কিছু সুখ মুহূর্তের কথা।ওদের
‘ছন্দনীড়’ নামের বাড়িতে ছন্দের শেষ নেই। নিত্যদিন নানান
ছন্দে অতিবাহিত হয় তাদের বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের। কতই না মধুর সেই দিনগুলো।মেয়ে বলে কখনো আঁটকে রাখা হয়
নি তাকে। সর্বদায় স্বাধীনভাবে চলছে তার মর্জিমতো।বাসার
ছোট সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেই ভীষন ভালোবাসেও তাকে।সকলের কাছে তার আবদারের ঝুলি খোলা শুধু রুদ্র বাদে।
বুঝ হওয়া থেকেই রুদ্রকে অপছন্দের লিস্টে যুক্ত করেছে।
তার রুদ্রই একমাত্র ব্যক্তি যে তাকে শাসন করে, সব কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, একা কোথাও যাওয়া যাবে না, সর্বদা এমন ধরনের ফরমান জারি করতো। তাই তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। কিছু দিলে সে নিতে চাইত না আর নিলেও কখনো ব্যবহার করতো না।
যেহেতু সে অপছন্দের ব্যক্তি সে কিছু দিলেও আপনাআপনি সেই জিনিস অপছন্দের লিস্টে যুক্ত হতো। এভাবে দিনকাল
চলতে থাকলো নিজ নিয়ম। কিন্তু বিগত বছর দুয়েক আগে থেকে রুদ্রকে ভীষণ ভয় পাওয়া শুরু করলো। সে আর ওর মা গিয়েছিল ইদের শপিং করতে। রোজার মাস! তখন বেলা সাড়ে এগারোটা হবে। কেনাকাটা সেড়ে ক্লান্ত হয়ে ফিরছিল তখন একদল লোক তাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। সে ঊঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে থাকে মুখোশ পরা লোকগুলোকে।
কিন্তু তার মা ভয়ে মেয়েকে জাপটে ধরে কল করতে থাকে রুদ্রকে আর ড্রাইভারকে বলে কথা বলে কোনোভাবে তাদের আঁটকে রাখতে। কিন্তু ড্রাইভার কিছু বলার আগেই লোহার কিছু দিয়ে তারা গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলে। সেই কাঁচ ছিঁটকে এসে গেঁথে যায় তার কপালে আর হাতে। সঙ্গে সঙ্গে মরিয়ম বেগম আর্তনাদ করে কেঁদে উঠেন। ততক্ষণে লাল রক্ত ঝরে পছন্দের সাদা বারবি ড্রেসে ফোঁটা ফোঁটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে। সে তখনো বিষ্ময় নিয়ে দেখছিল লোকগুলোকে।ঠিক তখনি এক লোক গাড়ির দরজা খুলে তাকে বের করে আনে আর ঠাটিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তার দুই গালে। সে নিজেকে সামলাতে পারে না ছিঁটকে পড়ে মাটিতে। চোখজোড়া ঝপসা হতে থাকে আপনাআপনি। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। কানে এসে বিঁধছে মায়ের করা আহাজারি। তবে চোখজোড়া বন্ধ হওয়ার আগে স্বাক্ষী হয় আরেকটা বিভৎ/স কাহিনির। সে চোখ বন্ধ করা আগে তার কাছে ছিঁটকে আসে কারো কা/টা হাত। সম্ভবত যে তাকে থাপ্পড় মেরেছে তার। কারণ সে ব্যক্তি
তার থেকে দুই হাত দুরে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারল না সে। গা গুলিতে ওঠে। মাথা ঘুরতে থাকে। তবে চোখ বন্ধ হওয়ার আগেই ঝাপসা চোখে দেখতে পায় রা/মদা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা অচেনা রুদ্রকে। যার চোখে মুখে র/ক্তের ছিঁটা। ভয়ংকর মুখের আদল। সে কচু কা/টার মতো কুপাতে থাকে এগিয়ে আসা মুখোশধারীদের। এরপরে
কী হয়েছিল মনে পড়ে না কারণ ততক্ষণে সে অবচেতন হয়ে পড়েছিল। যখন সেন্স ফিরে শুনে রুদ্র নাকি জেলে। কবে সে
ছাড়া পাবে ঠিক নেই। কিন্তু এই ঘটনার আট ঘন্টার পর রুদ্র বাসায় ফিরেছিল। আর বরাবরের মতো তাকে খোঁচা মেরে বলেছিল,
-‘আজকে থেকে এর বাইরে যাওয়া বন্ধ। যে সামান্য ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে না তাকে বাইরে যাওয়া মানায় না, ননীর পুতুল একট। মেজো মা নতুন আরেকটা বারবি ড্রেস এনেছি ওকে পরিয়ে আলমারিতে তুলে রাখো।’
সেদিন রুদ্রর কথায় কড়া জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেছে।
বিশেষ করে মরিয়ম বেগমের ইশারায় নিজেকে সামলেছে।
এই ঘটনার পরপর বাসার সবাই আরো সাবধান হয়ে গেল।
রুদ্রর কড়া আদেশে তারও একা একা বাইরে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। স্কুলে গেলে রুদ্র রেখে আসত আর মরিয়ম বেগম নিয়ে আসতেন। স্কুল টিচারের কাছে টিউশনি করতো সেটাও অফ। আর তাকে পড়ার দায়িত্ব নিলো রুদ্র আর বড় বাবা।
এভাবেই দিন কাটতে লাগল। আর যত দিন অতিবাহিত হতে থাকল রুদ্রের উপরে সেও বিরক্ত হতে থাকল। বন্দী জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছে সে। এটাকে বেঁচে থাকা বলে? যে রাজনীতি আপনজনের বিপদ ডেকে আনে সেই রাজনীতি করার কী দরকার? রাজনীতি করতেই হবে এর কোনো মানে আছে?
যারা করে না তারা কী বাঁচে না নাকি পৃথিবীতে ঠাঁই পায় না।কিন্তু এসব কথা বলার সাহস হতো না। বললেই আস্ত গিলে খাবে রুদ্র। কী দরকার ষাঁড়কে খোঁচা মেরে গুঁতো খাওয়ার।
তবে এ ঘটনার তেইশ দিনের মাথায় রাতের বেলা বড় বাবার উপর হামলা হয়। উনার রক্তাক্ত দেহখানা ফেলে রেখে যায়
বাসার মূল ফটকে। সেদিন দাদীমা ছেলের অবস্থা দেখে বড় মাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন। বাদ যায় নি রাগী রুদ্রও।
তারপর রুদ্র সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রামে আসার আর আসেও সে সপ্তাহ খানিক পরেই। তারপর থেকেই সে এখানে একা থাকে
এত বড় ফ্ল্যাটে। তবে রাজনীতি ছাড়ে নি। বরং এখানে এসে দ্বিগুন চ্যালা চামুন্ডা জুটিয়ে রাজনীতির পদ পূর্বের চেয়েও
শক্তপোক্ত করেছে। নেতা হয়েছে নেতা। আর বর্তমানে এই নিষ্ঠুর নেতার সঙ্গেই তার জীবন জড়িয়ে গেছে। এসব ভেবে সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরতেই রুদ্রর চোখে চোখ পড়ে। হয়তো জেগেই ছিল এতক্ষণ। রুদ্রকে তাকাতে দেখে স্পর্শী এবার নিজেই মুখ খুললো,
-‘একটা কথা বলি?’
-‘শুনতে ইচ্ছে করছে না পরে বলিস।’
-‘এখন বলতে না পারলে পরেও বলবো না।’
-‘আচ্ছা বল।’
-‘তুমি কী আমাকে ভালোবাসো?’
-‘বউ ভালোবাসার জিনিস না ঠেঙানোর জিনিস। যতক্ষণ এদের ঠেঙানো যাবে এরা ততক্ষণই ভালো থাকবে। এতক্ষণ
পাশ ফিরে কল্পনা জল্পনা করে এখন আমাকেই কথার প্যাঁচে ফেলার ফন্দি এঁটেছিস। ভেবেছিস কিছুই বুঝবো না আমি?
ভালোই ভালোই বলছি ভুল ভাল চিন্তা ঝেড়ে ফেল। নয়তো
উল্টো করে ঝুলিয়ে মাথার ভূত ছাড়িয়ে দিবো। আর কী কী বললি তোকে ভালোবাসি না কি যেন? তুইই এটা বল তোকে ভালোবাসতে যাবো কোন দুঃখে? দেশে কী মেয়ের অভাব পড়েছে?’
রুদ্রুর অপমানজনক কথা শুনে স্পর্শী উঠে বসল। এক হাতে চোখ মুখে কান্নারত কন্ঠে জবাব দিলো,
-‘তাই তো! কখনো মিথিলা, কখনো রুমানা আবার কখনো এমিলি। তোমার জীবন মেয়ের অভাব আছে নাকি? থাকবে কেন তুমি তো সাধু পুরুষ। কে প্রেম করলো, কে কার সঙ্গে বেড়াতে গেল, কে উপুড় হয়ে নিচ থেকে জিনিস তুললো, কে ওড়না ছাড়া তোমার সামনে এলো সব খবরই থাকে তোমার কাছে। তুমি তো জ্ঞানী, জ্ঞানীর জ্ঞানী মহাজ্ঞানী।’
-‘আশ্চর্য, গফের সঙ্গে নাহয় প্রেম করেছি ঠিক আছে। কিন্তু গফের মায়ের সঙ্গে কবে প্রেম করলাম ?’
একথা শুনে শুনে স্পর্শী রেগে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
-‘গফের মায়ের সঙ্গে প্রেম করেছো একথা কখন বললাম আমি।’
-‘এমিলির মায়ের নামই তো রুমানা। তুইই তো বললি কখনো মিথিলার সঙ্গে প্রেম করি, কখনো রুমানা আবার কখনো
এমিলি, একথার মানে তো তাইই দাঁড়ায়।’
এই টপিক বাদ দিয়ে স্পর্শী উঠে চুল আঁচড়ে নিলো। রাগের চোটে তার নাকের পাটা ফুলে আছে। কোনোমতে চুলের জট খুলে চুলের কাঁটা দিয়ে চুল উঁচু করে বেঁধে নিলো। এসি অফ করে একটানে জানালার আকাশি পর্দা সরিয়ে দিলো।বাইরে তখন গোধূলির আলোমাখা আকাশপট। সূর্য্যিমামা বিদায় নেওয়ার পায়তারা করেছে। দলে দলে পাখিরা ফিরে যাচ্ছে আপন নীড়ে। একটা কাক জামগাছের ডালে বসে রক্ষ কন্ঠে কা কা করেই যাচ্ছে। সঙ্গী হারিয়ে ফেলেছে নাকি কে জানে।
একটা প্লেন উড়ে যাচ্ছে দূর আকাশপথে। সাদা সাদা ধোঁয়া উড়িয়ে যেন উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে। সামনেই একটা বিশাল বড় মাঠ। একদল যুবক সেখানে ফুটবল খেলছে। পথচারীরা হেঁটে যাচ্ছে যার যার কর্মে। বাইরের আবহাওয়া দেখে স্পর্শী উদাস কন্ঠে বলল,
-‘তুমি কি এখন বাইরে যাবে?’
-‘হুম।’
-‘আমিও তোমার সঙ্গে যাব। এবার থেকে তুমি যেখানে যাবে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে। আমি একা একা বাসায় থাকব না। বিয়ে যখন করে়ছো প্রয়োজনে বুকপকেটে নিয়ে ঘুরবা, তবুও সঙ্গেই রাখবা।’
-‘আচ্ছা তবে আয় কোলে আয়।’
-‘না, না, কোলে উঠাতে হবে না।’
-‘উহুম তা বললে তো হবে না। আমাদের একসঙ্গে পথচলা এই মুহূর্ত থেকেই শুরু হবে। এখন তোকে আমি কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে যাব। চল আয় আয় এত সময় দেওয়া যাবে না, প্যান্ট ভিজে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তখন কিন্তু তোকেই দিয়েই প্যান্ট ধোঁয়াবো বলে দিলাম। এসো বউপাখি কোলে এসো আমার, চলো যায়, একসঙ্গে ওয়াশরুম ভ্রুমন করে আসি।’
একথা বলে রুদ্র চট করে উঠে আড়মোড়া ভাঙল। তারপর ঠোঁটে ফিচেল হাসি এঁটে এগিয়ে গেল স্পর্শীর দিকে। তার এগোনো দেখে স্পর্শী দৌড়ে পালালো। তাকে পালাতে দেখে রুদ্র বলল,
-‘ তোমার সঙ্গে ওয়াশরুম ভ্রমনের বাসনা এভাবে অপূর্ণ রেখে যেও না বউ। স্বামীর আদেশ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হয়। এসো এসো জলদি এসো।’
রুদ্রর কথা শুনে স্পর্শী দৌড়ানো অবস্থায় চেঁচিয়ে বলল,
-‘ইয়া আল্লাহ! এই অসভ্য পুরুষের মুখে লাগাম দাও আমি ফকিরের হাতে কড়কড়া বিশ টাকা দিবো।’
To be continue……..!!