প্রেম পুকুর পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
647

#প্রেম_পুকুর
[১৪] শেষ পর্ব
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

ভালোবাসায় মোড়ানো দিন গুলো খুব দ্রুত চলে যায় বিপরীতে দুঃখে মোড়ানো সময় গুলো যেতে চায়না একদিনকে মনে হয় হাজার দিনের চেয়েও বড়।
আসালে এগুলো সব কিন্তু আমাদের চিন্তা ভাবনারই ফসল।

সাফোয়ান, শিমু, আয়ান, অনিকা সবার জিবনে পরিবর্তন এসেছে। সবাই এখন যার যার জিবনে নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত।

সেদিন আয়ানের জেদের কাছে হারমেনে আলতাফ আর লায়লা বেগম বাধ্য হয়েছিলেন তাকে একমাসের মধ্যে বিয়ে দিতে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আয়ান পাত্রীর মুখটা অবদি দেখে ছিলোনা। যখন জানতে পারলো মেয়েটা তোহা তখন তার কাছে কোনো উপায় ছিলোনা।
যে মেয়েটার সাথে আয়ানের সম্পর্ক ঝগড়াটে শালিকের ন্যায় সেই মেয়েটার সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।
সারাদিন দুজনের মাঝে টোকাটুকি লেগেই থাকে যদিও তারা বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে বিয়ের পরপরই।
কিন্তু অভিযোগ গুলো ফোন দিলেই শুনতে পারা যায়।
আর অনিকা এখন ছ’মাস এর প্রেগনেন্ট। আমান তাকে সর্বদা আগলে আগলে রাখে। কোন রকম কাজই তাকে করতে দেয়না। আমানের বাবা সিরাজুল সাহেব ছেলের বউয়ের জন্য এক কথায় পাগল বলা চলে। আমানের মায়ের মেয়ে না থাকায় একটা মেয়ে পেয়ে সে যেন ভীষণ খুশি ।

পরিবর্তন এসেছে সাফোয়ান আর শিমুর জিবনেও তারা আজকে প্রথম বারের মতো বাবা মা হতে যাচ্ছে।
সাফোয়ান ওটি রুমের সামনে পায়চারী করছে। লায়লা বেগম আল্লাহর কাছে ধোয়া করছেন।
শিমুর বাবা তার দুই মেয়েকে নিয়ে এককোণে দাড়িয়ে আছে শুকনো মুখ করে।
আলতাফ পূর্বের মতো মুখ গম্ভীর করে দাড়িয়ে আছেন।কি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি সময় যেন গড়ায় না প্রতি সেকেন্ড কে মনে কয়েক ঘন্ঠার সমান।
এমন অভিজ্ঞতা হয়তো সকল হবু বাবারই হয়।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পর একজন নার্স ওটি থেকে বেড়িয়ে আসে। তার হাতে সদ্যজন্মানো এক পুত্র সন্তান। যার কান্নার শব্দে নিরাবতা ভেঙে গেছে কিছুক্ষন পূর্বেই।
যেন এই ছোট শিশু নিজের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সকলের মাঝে।
বাচ্চার কান্নার শব্দ পেয়ে সাফোয়ান নার্সের দিকে দৌরে গেল।
নার্স নিজের কোলে থাকা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাকে সাফোয়ানের কোলে তুলে দিলেন।
লায়লা বেগম দৌরে এলেন নিজের নাতির কাছে।
সাফোয়ানের পিতৃসত্তা আন্দোলিত হলো। এক বিন্দু সুখ যেন পুরো শরীর গ্রাস করে নিলো। আহ! কি আনন্দ সেটা কখোনোই বোঝানো সম্ভব নয়।
লায়লা বেগম নিজের নাতি কে কোলে নিয়ে বললেন আলহামদুলিল্লাহ।
অনিকা আর রাজিয়া বেগম নিজেদের শারীরিক
অসুস্থতার কারনে হসপিটালে উপস্থিত নেই তুবুও তারা বার বার ফোন কল করছে আলতাফ নিজে তাদের কে সুখবর দিলেন। তার গম্ভীর মুখে হাসি ছড়িয়ে পরল।দৌরে গেলেন নিজের নাতি কে দেখতে। ফিহা রিহাও বাদ গেলেনা।

সাফোয়ান নার্স কে উদ্দেশ্য করে বলল,”সিস্টার আমার স্ত্রী কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ আপনার স্ত্রীও অনেক ভালো আছেন।”
“আমি ওর সাথে কখন দেখা করতে পারবো?”

“আর কিছুক্ষন পরেই। ”

সাফোয়ানের সত্তা শান্ত হলো। আনন্দিত হলো এই ভেবে তার স্ত্রী সন্তান উভয়ই সুস্থ আছে।
_________
বেশ কিছুক্ষন পরে সাফোয়ানকে শিমুর কাছে যেতে দেওয়া হলো।শিমু চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। এক হাতে স্যালাইন চলছে।
ধীরে পায়ে হেটে সাফোয়ান শিমুর পাশে বসল।
শিমুর একহাত নিজের দুই হাতের মাঝে পুরে নিলো।

“কেমন লাগছে এখন তোমার?”

শিমু স্বামীর কণ্ঠ পেয়ে চোখ খুলে তাকালে।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,”বাবু কে দেখেছেন।”

সাফোয়ান উপর নিচ মাথা নারালো।
“জানো একদম তোমার হতো হয়েছে দেখতে।”

শিমু ঠোঁঠের কোণের হাসি আরো প্রশস্ত হলো।

একজন নার্স ওদের বাচ্চাকে নিয়ে এসে সাফোয়ানের কোলে দিলো। শিমু স্বামী আর বাচ্চকে দেখে খুশিতে দুইচোখ বন্ধ করে নিলো।তার জিবনের সর্বোত্তম পাওয়া হয়তো এটা। ওর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে।
ওর মতো সাধারন মেয়ে যে এত কিছু পেয়ে যাবে সেটা ও কল্পনাও করতে পারেনি।
________________

শিমুকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে এক মাস হলো।ও এখন সম্পূর্ন সুস্থ।
ওর সমস্ত খেয়াল লায়লা এবং রাজিয়া বেগম রাখে।রাজিয়া বেগম এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলতে গেলে শিমুর অমায়িক ব্যাবহার তাকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
গুরুগম্ভীর আলতাফ সাহেবও এখন বেশ হাসি খুশি থাকে নাতিকে নিয়ে।
আয়ান আর তোহাও এসেছে ছোট সাদমান কে দেখতে।
তোহার কোলে ছোট সাদ চোখ বন্ধ করে আছে।
তোহা আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,”দেখো আমারো কিন্তু খুব দ্রুত একটা পুচকি চাই।”

“নিজেই নিজেকে সামলাতে পারেনা সে আবার পুচকা পুচকি সামলাবে।”

কথাটা মোটেও পছন্দ হলো না তোহার। রাগ করে সাদমান কে শিমুর কোলে দিয়ে গটগট করে নিজের কক্ষে চলে গেলো।

শিমু আয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই আয়ানও তোহার পিছনে হাটা দিলো।
তাদের এই কাণ্ড দেখে লায়লা বেগম হাসতে হাসতে ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন।
“যাই বল বউমা আয়ানের জন্য কিন্তু তোহা একেবারে পারফেক্ট। ”
“জ্বী আম্মা পারফেক্ট ম্যাচ। ”

________

আয়ান গিয়ে তোহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
“এত রাগ কর কেন কথায় কথায়?”
“তুমি তো সব আজে বাজে কথা বলে রাগিয়ে দাও।”

“ওকে,আর রাগাবোনা আমাদের এক ডজন বাচ্চা হবে এবার খুশিতো।”

“কিন্তু এত বাচ্চা দিয়ে কি করবো।”

“ফুটবল টিম বানাবো। ”

তোহা পিছন দিকে ঘুরে আয়ান নাক টিপে দিল।

“ওক্কে।”

__________

শিমুকে দেখে রাখার জন্য বাবুকে টেক কেয়ার করার জন্য সাফোয়ান শিমুকে বাড়িতেই রেখে গেছে।
বাড়িতে এসেই পুত্রকে নিয়ে এইযে মড়িয়া হয়ে উঠেছে দিন দুনিয়া সব ভুলে বসেছে একদম।
শিমু কয়েকবার ডেকে গেছে খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু সাফোয়ানের কোন পাত্তা নেই।
তাই আর না পেরে খাবার বেড়ে একেবারে নিজেদের ঘরে নিয়ে এসেছে।
“এই যে সাহেব খেতে তো হবে নাকি। আপনি নিজেও খাচ্ছেননা আমার ছেলেকেও খেতে দিচ্ছেন না।”

“খাওয়া দাওয়া সব পরে হবে।”

শিমু আর সাফোয়ানের সাথে তর্কে জড়ায় না এক প্লেট ভাত মেখে নিয়ে সাফোয়ানের কাছে যায়।
এক লোকমা ভাত সাফোয়ানের সামনে ধরে।

“আসার পরে কিছুই খাওয়া হয়নি আপনার তাই কোন দ্বিরক্তি না করে এগুলো মুখে পুরুন চটপট।”

সাফোয়ান আর মানা করেনা। কিন্তু বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করতে ছাড়েনা।
শিমু বিরক্ত হয়ে বলল,”এক বাচ্চার বাবা হয়ে গেলেন তবুও দুষ্টুমি গেলোনা।”

“আরেক বাচ্চার বাবা হওয়ার প্লান করছি কি বলো আব্বু।”
সাফোয়ান নিজের ছেলেকে কথা টা বলে শিমুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে।

“আপনার লজ্জা জিবনেও হবেনা হয়।”

“স্ত্রীর কাছে লজ্জা পেলেতো সন্ন্যাসী হতে হবে।”

শিমু সাফোয়ানকে আলতো চাপর মেরে সাফোয়ানের কাধে মাথা রাখল।
“আমি আপনার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই সাফোয়ান।আপনাকে ভালোবেসে আপনার প্রেমপুকুরে ডুবে যেতে চাই। শুধু এতটুকু পেলে আমার কিছুই চাইনা।”

“আমি তোমার প্রেম পুকুরে ডুবে নিজের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছি এমন সংকটে আমি বার বার পড়তে চাই।তোমার প্রেমের পুকুরে আমি এক সাধারন মাঝি হয়ে বাচঁতে চাই।
আমি তোমাকে ভালোবেসে জান্নাতে যেতে চাই।”

“আমিও আপনাকে এপার ওপারে দুপারেই পেতে চাই।”
ওদের কথার মাঝে সাদমান জোড়ে কেদে উঠে।
দুজনেই নিজেদের হুশে ফিরে আসে।
দুজনে মুচকি হেসে আগলে নেয় নিজেদের ছেলেকে।এটাই যে তাদের ভালোবাসজর সর্বোত্তম চিহ্ন।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে