#প্রেমে_পাগল_হয়েছি_আমি
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা মনি
‘আমির ভাই আমি এসে গেছি।’
চেনা পরিচিত গলাটা শুনে আমির দরজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
‘মোনালিসা তুই?’
মোনালিসাঃআমাকে তো আসতেই হতো। তোমাকে দেখতে এলাম।
আমিরঃতুই যেই রাস্তা দিয়ে এসেছিস সেই রাস্তা দিয়েই ফিরে যা।
তানজিন তার ছেলের এমন কথায় রেগে গিয়ে বলে,
‘মেয়েটাকে এভাবে চলে যেতে বলছিস কেন? তোর কি আক্কে’ল হবে না? মোনালিসা ভেতরে এসো।’
মোনালিসা চলে আসে। আমির নিজের রুমে চলে যায়। মোনালিসাও তার পেছন পেছন যায়। যেতে যেতে বলে,
‘আমি দেখেছি আমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার পর আমি যখন একা একা আসছিলাম তুমি তখন লুকিয়ে লুকিয়ে গাড়ি দিয়ে আমায় ফলো করছিলে। আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করো অথচ সামনে ঢং করে বলো ভালো বাসিনা। তোমার এই ঢং এর কোন মানে নেই আমির ভাই।’
আমিরঃতোর যায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমি একই কাজ করতাম। তোকে যেহেতু আমি নিয়ে এসেছিলাম তাই তুই আমার দায়িত্ব ছিলি। তাই তোর যাতে কোন বিপদ না হয় তাই এমন করেছি। তুই বেশি চিন্তা করিস না। তোর উপর আমি শুধু দয়া দেখিয়েছি। তোর প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা আমার নেই।
মোনালিসা খিলখিল করে হাসতে থাকে। মোনালিসাকে এভাবে হাসতে দেখে আমিরের খুব রাগ হয়।
আমিরঃএভাবে বোকার মতো হাসছিস কেন?
মোনালিসাঃআমার সাথে উপরে উপরে যতই নাটক করো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা আছে।
আমিরঃতুই যাবি এখান থেকে?
মোনালিসাঃযাচ্ছি। তবে মনে রেখো একদিন তোমার বউ হয়ে এই রুমে পাকাপোক্ত ভাবে থাকব। তখন হাজারবার বললেও আমি কিন্তু যাবো না।
আমিরঃসেই সুযোগ তুই পাবিও না।
মোনালিসাঃদেখা যাবে।
৫.
‘তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি!’
মিরাজের কথাটা শুনে মোনালিসা খিলখিল করে হাসে।
মিরাজঃহাসি থামা বলছি আমিরের প্রেমে তোর এত পাগলামি আমার সহ্য হচ্ছে না।
মোনালিসাঃকেন ভাইয়া? তোমার মতো অসমাপ্ত প্রেমের দেবদাস ছরি দেবদাসী হবো ভেবেছিলে?
মিরাজঃতোর এইসব মজা আমার ভালো লাগে না। কাজের কথা বল।
মোনালিসাঃআমির ভাই বোধহয় গলছে।
মিরাজঃকি বলছিস!
মোনালিসাঃআমি ঠিকই বলছি। তুমি পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবা।
মিরাজঃগললেই ভালো। আমি আমার বোনটাকে সুখী দেখতে চাই।
মুনিয়া চৌধুরী আচমকা এসে বলেন,
‘মিরাজ কাল ভালো করে তৈরি হয়ে থাকিস। আমরা তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাব।’
মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা শুনে মিরাজ খুবই বিরক্ত হয়।
মিরাজঃকালই মোনার বিয়েটা এভাবে ভেঙে গেল আর তোমরা আজই আমার বিয়ে দিতে চাইছ। অদ্ভুত!
মুনিয়াঃঅনেক ভালো একটা মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। মেয়েটা মেডিক্যালে পড়ছে। আর একবছর পর ডাক্তার হয়ে যাবে। এমন বিয়ের প্রস্তাব কিভাবে ফিরিয়ে দেই?
মিরাজঃঐ ডাক্তার মেয়ে কি আমার মতো বেকার ছেলেকে পছন্দ করবে?
মুনিয়াঃতুই পাগল নাকি? তোর বাবার এত সম্পত্তি থাকার পরেও তোকে বিয়ে করবেনা কেন? এসব কিছুর মালিক তো তুই।
মোনালিসাঃঠিকই তো বলেছে আম্মি। তাছাড়া ভাইয়া তুমি দেখতেও তো খুব হ্যান্ডসাম। সব মেয়েই তো তোমার প্রেমে পাগল শুধু একটা মেয়ে বাদে,,,,
ভুল কথাটা বলে ফেলার কারণে মোনালিসা জিভ কাম’ড়ে ধরে। মিরাজের চোখ রাঙানিতে ভয় পেয়ে কথা ঘুরিয়ে বলে,
‘আচ্ছা ভাইয়া কাল তুমি সুন্দর করে সেজেগুজে একেবারে রাজপুত্র সেজে থেকো। দেখবে ঐ ডাক্তার মেয়ে তোমায় ঠিকই পছন্দ করবে।’
মুনিয়াঃমোনালিসা তুই এখন একটু বিশ্রাম নে। তোর উপর দিয়ে যা ঝড় বয়ে গেল। তুই কোন চিন্তা করিস না মা তোকেও আমি ভালো ঘরে বিয়ে দেব। তোর বাবার উপর আর কোন ভরসা করবো না। তোর বাবার ভালোমন্দের কোন ধারণাই নেই। তাইতো আমাকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ের জন্য পাগল ছিল। আমিও কম না বিয়ের দিন কিভাবে বউ পালটে এই বাড়ির বউ হয়ে এলাম।
মুনিয়ার কথাটা শুনে মোনালিসা আর মিরাজ হেসে ফেলে। তাদের মা-বাবার বিয়ের এই অদ্ভুত কাহিনি তাদের খুবই ভালো লাগে। তারা ছোটবেলা থেকেই তাদের দাদা-দাদি,ফুফু,চাচা সবার কাছে শুনে এসেছে আনোয়ার চৌধুরী নাকি অন্য একটা মেয়েকে খুবই ভালোবাসতো। তার প্রেমে একেবারে পাগল ছিল। কিন্তু সেই মেয়েটাকে তাদের পরিবারের কারো পছন্দ ছিল না। পরিবারের সবাই আগে থেকেই মুনিয়াকে আনোয়ারের বউ ঠিক করে রেখেছিল। আনোয়ারের জেদে বাধ্য হয়ে ঐ মেয়েটার সাথে তার বিয়ে দিতে রাজি হয়।
কিন্তু বিয়ের দিন আনোয়ারের মা-বাবা আর মুনিয়া মিলে পরিকল্পনা করে বউ বদলে বিয়েটা করে। শেষমুহুর্তে বিয়ে পড়ানোর সময় পাত্রীর নাম শুনে তো আনোয়ার বিয়ে করতেই চায়নি। শেষে মুনিয়া আত্ম’হ’ত্যা করার হু’ম’কি দিয়ে বিয়েটা করে নেয়। এরপর কত কিছু করে আনোয়ারের সাথে সম্পর্কটা পাকাপোক্ত করেছে।
৬.
মিরাজের পাশে বসে তার হাত ধরে ভাইকে মোটিভেট করছে মোনালিসা। আজ তারা সবাই মিলে মিরাজের জন্য পাত্রী দেখে এসেছে। সেই এক ঘন্টা থেকে বসে গেছে কিন্তু পাত্রীর আসার কোন কথা নেই। পাত্রীর মা-বাবা গল্প করেই সময় কা’টিয়ে দিচ্ছে।
মিরাজ মোনালিসার কানে ফিসফিস করে বলে,
‘মোনা পাত্রী কোথায়? আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকতে হবে বলতো? আমি আর বসে থাকতে পারছি না।’
মোনালিসাঃবসে থাকতে পারবা না কেন? কি হয়েছে?
মিরাজের করুণ মুখ দেখেই মোনালিসা বুঝে যায় ব্যাপারটা কি। সেও মিরাজকে ফিসফিস করে বলে,
‘তুমি ওয়াশরুমে যাবে তাইতো?’
‘হুম।’
মোনালিসাঃদাড়াও আমি ওনাদের বলছি ওয়াশরুমটা কোনদিকে।
মিরাজঃপাগল হলি নাকি? এভাবে বললে ওনারা কি ভাববে। তুই চুপ থাক।
মোনালিসাঃওকে তাহলে চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
মোনালিসা সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমি ভাইয়াকে নিয়ে একটু আশ-পাশটা ঘুরে আসি।’
মোনালিসা আর মিরাজ একসাথে যায়। কাউকে লজ্জায় জিজ্ঞাসাও করতে পারছিল না ওয়াশরুম কোথায়।
মোনালিসা একটি রুমের দরজা খোলা দেখে বলে,
‘ভাইয়া এই রুমের ভেতর মনে হয় ওয়াশরুম থাকতে পারে। চলো তো দেখি।’
রুমের ভিতরে গিয়ে ওয়াশরুম দেখতে পায় তারা। মোনালিসা বলে,
‘দরজাটা তো খোলা যাও তুমি।’
মিরাজ কোনকিছু না ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।মিরাজ ভেতরে ঢুকতেই ওয়াশরুম থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। একটি মেয়ে চিৎকার করতে করতে বাইরে বেরিয়ে আসে। মোনালিসা মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
‘তুমি!!’
মুনিয়া চৌধুরী আমিরকে ফোন করে। আমির ফোনটা রিসিভ করলে তিনি বলেন,
‘আমির কোথায় তুমি? আমরা আজ তোমার বন্ধুর জন্য পাত্রী দেখতে এসেছি। তোমার বন্ধুকে খুব নার্ভাস লাগছে। তুমি একটা কাজ করো না চলে এসো। আমি ঠিকানাটা বলছি। তুমি এলে ও হয়তো একটু স্বাভাবিক হবে।’
আমিরঃআচ্ছা আমি যাচ্ছি।
একটি মেয়ে হাফাতে হাফাতে চলে আসে। মেয়েটিকে দেখে পাত্রীর বাবা বলে,
‘এই হলো আমার মেয়ে মোহনা। কেবল মেডিকেল থেকে ফিরল। মোহনা তুই যা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।’
মোহনাঃজ্বি আব্বু।
আচমকা একটি মেয়ের চিৎকারের আওয়াজ সবার কানে আসে। মুনিয়া চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন,
‘এটা আবার কে চিৎকার করছে?’
মোহনাঃএটা তো আমার বোন মায়ার গলা। ওর আবার কি হলো।
মায়া চিৎকার করতে করতে বসার রুমে চলে এসে বলে,
‘আপু,,আপু আমার ওয়াশরুমে একটা ছেলে ঢুকে গেছে। আমার খুব ভয় করছে আপু।’
তার পিছনেই মোনালিসা এসে বলে,,,
চলবে….