#প্রেমে_পাগল_হয়েছি_আমি
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা মনি
‘মোনালিসা পালিয়ে গেছে!’
মুনিয়া চৌধুরীর কথাটা শুনে তার স্বামী আনোয়ার চৌধুরীর বুকে ব্যাথা উঠে যায়।
মুনিয়া চৌধুরী নিজের স্বামীকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যান। মিরাজ ছুটে এসে তার বাবার এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে যায়। মুনিয়া চৌধুরী মিরাজকে বলে,
‘মোনালিসা কোথায় গেছে তুই জানিস? কাল ওর বিয়ে আর আজ কিনা ও এভাবে পালিয়ে গেল। আমি এখন কি করব?’
মিরাজ সব জেনেও না জানার ভান করে বলে,
‘আমি কিছু জানি না। আব্বু তুমি যাও রেস্ট নাও সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি দেখছি কি করা যায়।’
মিরাজ তার বাবাকে তার ঘরে রেখে আসে। তারপর মোনালিসাকে ফোন করে তার খোঁজ খবর নেয়। মোনালিসা ফোন রিসিভ করে বলে,
‘ভাইয়া আমি ঠিক আছি। ঐদিকে সব ঠিক তো?’
মিরাজঃএদিকে সব ঠিক আছে। তুই নিজের খেয়াল রাখিস আমাদের নিয়ে কোন টেনশন করতে হবে না। আমি এদিকে সব সামলে নেব।
মোনালিসা ফোনটা কে’টে দিয়ে আমিরের দিকে তাকায়। আমিরের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা বিরক্ত আর রেগে আছে। মোনালিসা আমিরকে একবার ডাকলে সে রাগী চোখে মোনালিসার দিকে তাকায়। মোনালিসা আমিরকে এভাবে তাকাতে দেখে মুখ ঝামটি দিয়ে বলে,
‘এভাবে তাকানোর কিছু নেই। আমি নিজের হবু স্বামীকে ডেকেছি।’
আমিরঃকে তোমার হবু স্বামী? আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।
মোনালিসাঃতাহলে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
আমিরঃজাহান্না’মে।
মোনালিসাঃআমরা দুজন একসাথে জান্নাতে গিয়ে সুখী থাকব। জা’হা’ন্নামে কেন?
আমির আর কোন কথা বলে না। সে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মোনালিসাকে বলে,
‘গাড়ি থেকে নেমে যা।’
মোনালিসাঃএত রাতে একটা মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে?
আমির মোনালিসাকে ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফে’লে দিয়ে চলে যায়।
৩.
‘তাহলে এই কারণেই মোনালিসা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে?’
মুনিয়া চৌধুরীর গরম মেজাজের সামনে আনোয়ার চৌধুরী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যান।
মিরাজের তো এটা ভেবেই ভালো লাগছে যে শেষপর্যন্ত তার বোনের সাথে ঐ ছেলেটার বিয়ে হবে না। কারণ যার সাথে মোনালিসার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে তো নিজেই এই বিয়ে করতে রাজি নয়। সে আজই দেশ ছেড়ে চলে গেছে যাতে তাকে এই বিয়েটা করতে না হয়। যাওয়ার আগে ছেলেটা মোনালিসার ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে এসব বলে। এখন মুনিয়া চৌধুরী সহ বাকি সবাই ভাবছে সেই ম্যাসেজ দেখেই মোনালিসা পালিয়ে গেছে।
মুনিয়া চৌধুরী আনোয়ার চৌধুরীর উপর রাগ দেখাচ্ছেন কারণ তিনি জোর করে নিজের বন্ধুর ছেলের সাথে মোনালিসার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। নাহলে মুনিয়া চৌধুরীর কোন ইচ্ছা ছিলনা এত তাড়াতাড়ি নিজের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার।
আনোয়ারঃআমি তো জানতামই না এমন কিছু হবে জানলে,,,,
মুনিয়াঃতুমি আর কি জানো। তোমার জন্য যদি আজ আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি কিন্তু তোমায় ছাড়ব না। মাইন্ড ইট।
‘আম্মি’
মোনালিসার কাতর স্বরে মুনিয়া চৌধুরী দরজার দিকে তাকান। মোনালিসা বিধ্ব’স্ত অবস্থায় এসেছে। তার মাথা ফে’টে রক্ত বইছে।
মুনিয়া চৌধুরী ছুটে এসে নিজের মেয়েকে আলিঙ্গন করেন। মোনালিসা মায়ের কোলে ঝাপিয়ে কাদতে থাকে।
মুনিয়াঃতোর এই অবস্থা কি করে হলো?
মোনালিসাঃআমার একটা ছোটখাটো এক্সি’ডেন্ট হয়েছে। কোন ব্যাপার না। এই নিয়ে চিন্তা করোনা। আমি খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম,,,
মুনিয়াঃভুল তুই নয় আমরা করেছি। আমাদের উচিৎ হয়নি এভাবে তোর বিয়ে ঠিক করা। সব দো’ষ আমাদের।
মায়ের কথায় মোনালিসা কিছু বুঝতে না পেরে তার ভাই মিরাজের দিকে তাকায়।
মিরাজঃআমরা জানি মোনা তোর হবু স্বামী বিয়ের আগেরদিন তোকে ছ্যা’কা দিয়ে বিদেশে চলে গেছে আর ঠিক সেই কারণেই তুই অভিমান করে চলে গিয়েছিলি।
মোনালিসা এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারে। আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া দেয়।
মোনালিসাঃএসব কথা ভেবে আর লাভ নেই ভাইয়া। আমি এখন নিজের ঘরে যাচ্ছি। তোমরা চিন্তা করোনা আমার বিয়ে আরো ভালো যায়গায় হবে ইনশাআল্লাহ।
মুনিয়া চৌধুরীঃতাই যেন হয়। আমি এবার আর তোর বাবার উপর ভরসা করব না। নিজে পছন্দ করে তোর জন্য সেরা জামাই এনে দেব।
মোনালিসা মনে মনে বলে,
‘শুধু আমির ভাইকেই এনে দাওনা সেরা জামাই আমার লাগবে না।’
৪.
আমিরের মুখে শোভা পাচ্ছে জ’ল’ন্ত সি’গা’রে’ট। এই জ’ল’ন্ত সি’গা’রে’ট হয়তো অনেকের নজরে পড়বে কিন্তু আমিরের হৃদয়ে লুকানো জ্ব’ল’ন্ত কষ্টটা সে খুবই সন্তপর্ণে লুকিয়ে রেখেছে যেখানে কেউ পৌঁছাতে পারবে না কখনোই।
আমিরের মা তানজিন তাকে এই অবস্থায় দেখে মুখ চেপে কান্না করে। নিজের ছেলের প্রতি অনীহা আর অবহেলার কারণেই তার ছেলের হয়তো আজ এই পরিণতি। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আমিরকে খুবই অবহেলার সাথে বড় করেছেন। নিজের ছেলেকে নিজেই প্রতি’হিং’সা আর প্রতি’শো’ধের আগু’নে দ’গ্ধ করেছেন। এখন চাইলেও যে সবকিছু ঠিক করতে পারবেন না। তবুও শেষ বয়সে এসে একজন মায়ের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে চান তিনি।
তানজিনঃসব ভুলে গেলে হয়না আমির? আর কতদিন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি তুই? আমি জানি তোর এই অবস্থা আজ আমার জন্য। এখন আমি বলছি সব ভুলে যা তুই৷ প্রতি’শো’ধের নেশায় আর অন্ধ থাকিস না। জীবনটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে নে।
আমিরঃআমি আর সেটা করতে পারব না আম্মু। যতদিন না পর্যন্ত তোমার চোখের জলের দাম আমি মেটাতে পারব ততদিন আমার শান্তি নেই। তোমার প্রতি ফোটা চোখের জলের দাম আমি নেব।
আমিরের ফোনটা আচমকা বেজে ওঠে। আমির ফোনটা হাতে নিয়ে মোনালিসার ফোনকল দেখে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় এবং কলটা কা’ট করে দেয়। মোনালিসাও নাছোড়বান্দা ফোনকল করেই চলে।
আমিরের রাগ বাড়তে থাকে। তানজিন এরকম অবস্থা দেখে বলে,
‘ফোনটা রিসিভ কর।’
আমির তার মায়ের কথায় ফোনটা রিসিভ করতেই মোনালিসা অপর পাশ থেকে বলে,
‘কখন থেকে কল করছি তুমি রিসিভ করছো না কেন? জানো আমার হবু বর পালিয়ে গেছে। সব আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি চান তোমাকে আর আমাকে মিলিয়ে দিতে তাইতো আমাদের মধ্যখানের সব বাধা দূর করে দিচ্ছেন। এতকিছুর পরেও কি তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবে?’
‘তুই বাংলা কথা বুঝতে পারিস না মোনালিসা? আমি তোকে ভালোবাসি না আর নাতো তোকে চাই। তুই আমাকে আর কখনো ফোন করবি না। আমি তোর নাম্বার ব্ল্যাকলিস্টে রেখে দেব।’
মোনালিসাঃভয় পাই নাকি।
আমির কলটা কে’টে দিয়ে মোনালিসার নম্বরটা ব্ল্যাকলিস্টে রেখে দেয়।
তানজিনঃমেয়েটা বোধহয় তোকে খুব ভালোবাসে। ওর আকারে ইঙ্গিতে আমি তো এই কথা অনেক আগেই বুঝে গেছি। তুই মেয়েটাকে এভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছিস কেন? ওকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতেই তো পারিস।
আমিরঃমোনালিসা ছেলেমানুষ। ও এমন করতে পারে কিন্তু আমার প্রেম নিয়ে এত পাগলামি করার সময় নেই। আমার জীবনে একটা লক্ষ্য আছে আমায় আগে সেই লক্ষ্যটা পূরণ করতে হবে। অন্যকিছু ভেবে আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাইনা।
তানজিনঃদেখিস আবার তুইও নাকি প্রেমে পাগল হয়ে যাস।
মায়ের মুখে এরকম ঠাট্টার কথা আমিরকে বিরক্তি ছাড়া অন্য কোন অনুভূতি এনে দেয়না। তানজিনও বুঝতে পারেন তিনি ভুল কথা বলে ফেলেছেন। তাই নিজের ভুল লুকানোর জন্য তিনি বলেন,
‘আমায়রা কাল আসবে জানিস।’
‘আমায়রা কেন আসবে আম্মু?’
‘কেন আবার ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমাদের সাথে পরিচয় করাতে।’
‘ও যেন আমার সামনে না আসে বলে দিলাম আমি। আব্বুর মৃত্যুর পর আমি কত কষ্ট করে ওকে পড়াশোনা করিয়েছি, নিজে না খাইয়ে ওকে খাইয়েছি আর ও এটা কি করল? বিদেশে পড়াশোনার নামে গিয়ে অ’শ্লী’লতা আর বে’হা’য়াপনা শুরু করে দিল। একটা ছেলের সাথে লিভ ইনের মতো জঘ’ন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। ওকে দেখলে আমার রাগ উঠে যাবে। ভুল কোন কাজও করে ফেলতে পারি।’
তানজিনঃভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। আমায়রাও নিজের ভুল শুধরে নিতে চায়। তাইতো এখন বিয়ে করে নিতে চায়।
আমিরঃসব ভুলের ক্ষমা হয়না আম্মু। ও যেটা করেছে সেটা অনেক বড় একটা পাপ। যার জন্য স্বয়ং আল্লাহ ওকে ক্ষমা করবে না। সেখানে আমরা তো সাধারণ মানুষ।
‘আমির ভাই আমি এসে গেছি।’
চেনা পরিচিত গলাটা শুনে আমির দরজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে……