প্রেমের_পরশ পার্ট_21

0
7315

প্রেমের_পরশ
পার্ট_21
#জামিয়া_পারভীন

পরেরদিন শুভ নিরুকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে আনে । রিপোর্ট একদিন পর দিবে বলা হয়।
নিরুকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে শুভ অফিসে যায়। শুভ মনে মনে খুব টেনশন এ আছে নিরু কে নিয়ে। কি হতে কি হয়ে যাচ্ছে তার জীবনে। টেস্ট এর রিপোর্ট কেমন হবে, ভালো কি খারাপ কিছুই জানে না। নিরুর বারবার ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা নিয়েই বেশি টেনশন করছে শুভ।
…..

রিমি রুমের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলো, নিরু গিয়ে নক করতেই দরজা খুলে দেয় রিমি। নিরু বুঝতে পারছে রিমি খুব হতাশার মাঝে আছে। নিরু তখন রিমি কে জিজ্ঞেস করে,
• “ আচ্ছা রিমি একটা কথা বলবে? ”
• “ হুমম বলো। ”
• “ রাকিবের সাথে তোমার রিলেশন হলো কিভাবে? ”
• “ ভাইয়ের বিয়ের দিন তো আমি যায়নি, আমি তখন সাগর ভাইয়ের উপর মনে মনে রাগ করেছিলাম। কারণ ভাবীকে আমার ওতোটা পছন্দ হয়েছিলো না। ”
• “ তার মানে রুবি আপুকে আগেই দেখেছিলে তুমি? ”
• “ আমি আর শুভ ভাইয়া এক রেস্টুরেন্ট এ লাঞ্চে গিয়েছিলাম, সেদিন সেম রেস্টুরেন্ট এ সাগর ভাই আর ভাবী ডেটে গিয়েছিলো। তখন হাতেনাতে ধরা খেয়েছিলো আমাদের কাছে। ”
• “ হাহাহা, এরপর? ”
• “ এরপর ই তো শুভ ভাইয়া বাসায় এসে বলে দেয়, আর বিয়েটাও ঠিক হয়ে যায়। ”
• “ রাকিবের সাথে তাহলে কিভাবে দেখা হয়?”
• “ রাকিব আমার নাম্বারে ফোন দেয় প্রথমে, কথা হয়। পরিচয় দেয় আগে, পরে ফেসবুকে পরিচিত হয়। ”
• “ তোমার ফোন নাম্বার রাকিব কে কে দিয়েছিলো? জানো কিছু!”
• “ এটা আসলে চিন্তা করিনি আগে? তারমানে রুবী ভাবী দিয়েছে তাইনা!”
• “ আপু দিলে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। ”
• “ হুমম”
• “ ওরকম একটা বাউন্ডুলে ছেলে তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে এভাবে কষ্ট দিবে বুঝতেও পারিনি। ওরা মানুষ নামের কলংক বুঝলে। মন খারাপ করবে না, যা হয়েছে ভুলে যাও। নতুন করে সব শুরু করো। তোমার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। ”
• “ ভাবীইইইইই! একটু একা থাকি প্লিজ।”
• “ ওকে যাচ্ছি, খারাপ চিন্তা করিও না বুঝলে, গেলাম। ”

নিরু নিজেই হতাশ খুব, তার আসল শত্রু কে? রাকিব নাকি সৎ মা নাকি সৎ বোন।

……

রাকিব ঘরের মধ্যে খুব পায়চারী করছে, কিভাবে সম্ভব এটা নিজেও বুঝছে না। এরই মাঝে ওর মামী লুতফা বেগম দরজায় এসে দাঁড়ায়। হটাৎ করে মামি কে দেখে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রাকিব। লুতফা বেগম বলেন,
• “ কিরে তোরা মা ছেলে আমাদের আশ্রিত থেকেও শান্তি পাসনি, এখন আবার আমাদের ক্ষতি করার প্লান করছিস। অনেক হয়েছে ফ্রি খাবার গ্রহণ, এখন তোরা মা ছেলে মিলে বাসা থেকে বিদেয় হ। দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষে ছি এতো দিন।। ”

রাকিব এমনিতেই খুব টেনশন এ আছে, নিরুর কোন ক্ষতি করতে পারছে না সেই জন্য। তারই মাঝে মামীর বিষঢালা কথায় রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে পাশের টেবিল থেকে লোহার টর্চ লাইট টা ছুড়ে মারে, এতে লুতফা বেগম খুব জোরে চিৎকার করে উঠে। রাকিবের হুশ ফিরতেই খেয়াল করে মামী মাথা ফেটে খুব রক্ত বের হচ্ছে।

মনে মনে ভাবে, “ এখানে থাকলে দোষ ওর ঘাড়েই পড়বে, তার থেকে বরং পালায়। ”
এটা ভেবেই বাসার পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায় রাকিব। মনে মনে প্লান করে একেবারে রাতে বাসায় ফিরে আসবে, যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে।

দুপুরের পরে নিরুর বাবা বাসায় ফিরে আসলে, কাজের মেয়ে দরজা খুলে দেয়। বাড়ি ঢুকতেই আফজাল হোসেন বলেন,

• “ লুতফা কোথায়? ”
কাজের বুয়া বলে,

• “ আফা তো উপরে ছিলো। ”

আফজাল হোসেন তাড়াতাড়ি উপরে গিয়ে রাকিবের ঘরের সামিনে দেখে মেঝেতে প্রচুর রক্ত। একটু দুরেই লুতফার অজ্ঞান দেহ পড়ে আছে। সবাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকে আফজাল হোসেন। তাড়াহুড়ো করে সবাই মিলে হসপিটাল এ নিয়ে যায়, এডমিট করা হয় আই সি ইউ তে । রুবি কে ফোন দিয়ে জানানো হয়, রুবি সাগর দুজনেই অফিস থেকে বের হয়ে ডাইরেক্ট হসপিটাল এ আসে। শুভর বাবা মা ও খবর শুনে আসে, যতই হোক আত্মীয় বলে কথা। বিপদে তো আর আত্মীয় দের দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। শুভ নিরু আর রিমি কে বের হতে নিষেধ করে। বাড়ি তে বডি গার্ড বসিয়ে শুভ ও হসপিটাল এ যায় কি হয়েছে সেটা দেখতে।

শুভ এসেই দেখে রুবি কাঁদছে আর সাগর তাকে শান্তনা দিচ্ছে। শুভর বাবা মা একটু দূরে বসে আছে আর নিরুর বাবা একাই দাঁড়িয়ে ছিলো।
শুভ তার শ্বশুর মশাই এর সাথে কথা বলা শুরু করে।

• “ কিভাবে এসব হলো! কিছু কি জানেন? ”
• “ তোমার কথা মতো দুটো ঘরের ভেন্টিলেটর ছিদ্র করে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছিলাম। তো রাকিব কে ঘরের মাঝে খুব পায়চারী করতে দেখলাম। এরপর দেখলাম দাঁড়িয়ে গেলো, কি যেন ছুঁড়ে মারে বোঝা গেলো না। ব্যপারটা সন্দেহ জনক লাগে তাই ছুটে আসি বাসায়, এসেই রাকিবের ঘরের সামনে দেখি লুতফা অজ্ঞান। রাকিব ওর ঘরে নেই, কাজের মেয়ে বললো, রাকিব কখব বের হয়েছে তারা দেখেনি। ”
• “ স্পষ্ট বুঝায় যাচ্ছে, রাকিবের কাজ এটা। ছবি তে যদি না দেখা যায় তাহলে প্রমাণ করবো কিভাবে? ”
• “ হুম বাবা! কি ভাবে প্রমাণ করবো বলো? ”
• “ এখন বাসায় যাচ্ছি। একটু ভাবতে হবে সব কিছু। ”

শুভ আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে চলে আসে, শুভর বাবা আর মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
রুমে ঢুকতেই নিরু এসে জড়িয়ে ধরে,

• “ কে এমন করছে বুঝতে পারলে? ”
• “ সন্দেহ করা হচ্ছে রাকিব! প্রমাণ তো নেই। ”
• “ কি হবে এখন, খুব ভয় হচ্ছে আমার। ”
• “ আস্তে আস্তে তোমার শত্রুদের সংখ্যা বাড়ছে। আগে ছিলো শুধু তোমার সৎ মা আর এখন জুটেছে রাকিব আর সামিহা। খুব ভয় হয় তোমায় নিয়ে নিরু । ”
• “ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো কিনা জানিনা। হারাতে চাইনা, তোমাকে হারানোর ভয় টা আমার ভিতর টা কে কুরে কুরে খাচ্ছে। সতিই যদি এমন চলতে থাকে আমি হয় পাগল হয়ে যাবো না হয় মারা…. ”
• শুভ নিরুর মুখে হাত দিয়ে বলে, “ এমন কুলক্ষণে কথা আর কক্ষনো বলবে না, মনে থাকবে তো? ”
• “ হু ” বলে শুভর বুকে মাথা রাখে নিরু।

রাত্রে কেউ আর তেমন ভাবে ডিনার করতে পারেনি, কোনরকম খেয়ে উঠে। শুভ নিরু বাবা, সাগর আর রুবির জন্য খাবার নিয়ে হসপিটাল এ যায়।
• “ যাই হোক, বেশি টেনশন করো না ভাবী! কিছু খেয়ে নাও তো। ” রুবি কে শুভ বলে।
• “ খেতে ইচ্ছে করছে না। ” কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে রুবি।
• “ না খেলে চলবে কিভাবে বলো তো? শত্রুর মোকাবেলা করবে কিভাবে তাহলে!”
• “ আমার মা হাজার খারাপ হোক, মা তো মা ই তাই না বলো। কিভাবে মা কে এভাবে রেখে খায় বলোতো । ”

শুভ নিরুকে ফোন দিয়ে রুবির সাথে কথা বলিয়ে দেয়, নিরুর সাথে কথা বলার পর রুবি খেয়ে নেয়। সাগর আর রুবির বাবা কে খাইয়ে বাসায় ফিরে আসে শুভ।
রাকিব আর ওর মা হসপিটাল এ আসে, নিরুর ফুপু ভাইয়ের হাত ধরে ন্যাকা কান্না করে কিছুক্ষণ। রাকিব রুবির সামনে গিয়ে ন্যাকা কান্না করে, রুবিকে বোঝায়, ওর মা ভালো হয়ে যাবে। আফজাল হোসেন মনে মনে প্লান করে লুতফা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এদের কিছুই বলবেন না উনি। রুবিকেও তাই ইশারায় চুপ করিয়ে দেয়। আফজাল হোসেন বোন আর বোনের ছেলেকে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

পরেরদিন শুভ হসপিটাল এ গিয়ে প্রথমে নিরুর রিপোর্ট গুলো নেয়, পরে রুবির মা কে দেখে বাসায় ফিরে আসে। শুভ হটাৎ মুখ শুকনো করে ড্রইংরুমে দাঁড়াতে সবার আত্মা শুকিয়ে যায়। শুভর মা বলেন,
• “ কি হয়েছে, এমন করে ফিরে এলি তাও মুখ গোমড়া করে কেনো? ”
• শুভ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
• “ খারাপ কোন সংবাদ নাকি? ” শুভর বাবা বলে।
• “ খারাপ কি ভালো তা জানিনা, তোমরা দাদা দাদু হচ্ছো। ” শুভ আর কিছু না বলে চলে যায়।

শুভর বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে।
শুভ ঘরে গিয়ে দেখে নিরু বেলকনি তে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন থেকে পা টিপে টিপে গিয়ে জড়িয়ে ধরে নিরু কে। নিরুর ঘাড়ের উপর মাথা দিয়ে শুভ বলে,
• “ আমার বাবুর আম্মুর মন খারাপ কেনো তা কি জানার সৌভাগ্য হবে আমার। ”

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে