প্রেমের_পরশ
পার্ট_17
জামিয়া_পারভীন
নিরু শুভর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো , স্লিপ করে বাথ টাবের পানিতে পড়ে যায় শুভ কে সহ ই। নিরুর মাথায় একটু ব্যথা পায়,
• “ উঁহু ! লাগলো তো মাথায়। ”
• “ বেশি না কম, কোথায় লেগেছে দেখি? ” শুভ নিরুর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।
• “ ইচ্ছে করে মেরে আবার ঢং! ”
• “ আদর করে দিলে সব রাগ উড়ে যাবে, বুঝলে পাখি।”
• “ ৮০ কেজির বস্তার চাপে আমি তো ডুবেই মরে যাবো। ”
নিরুর কথায় শুভ হাসতে শুরু করে, আর বলে,
• “ আমি ৮০ কেজির বস্তা, সো ফানি।”
• “ তা নয়তো কি ? তুমি কি একবার ও ভেবে দেখেছো তোমার মত ৮০ কেজি মাত্র ৪৩ কেজির বাচ্চা টার উপরে পড়লে বাচ্চাটার কি হয়। ”
• “ তুমি বাচ্চা ছিলে, এখন বড় হয়ে গেছো। আমার আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গেছো। ”
• “ কি বললে তুমি!! আমি বাঁদর ” এ্যঁ এ্যঁ চোখে হাত দিয়ে কান্নার ভান ধরে নিরু।
• “ চোখে নাই পানি, কাঁদছে আমার নানী। ” শুভ মজা করে এই কথা টা বলতেই বুকের উপর কিল দিতে শুরু করে নিরু। তখন শুভ আবার বলে,
• “ বুকেই যখন মারবা! ডান দিকে মেরো, বাম দিকে মেরোনা, ওখানে হার্ট থাকে। যদি হার্ট এটাক করে মরে যায়, তখন কে তোমায় আদর দিবে শুনি। ”
নিরু শুভর মুখ চেপে ধরে বলে,
• “ খবরদার আর বাজে কথা বলবেনা, তোমার যেন আমি মরে যায়। ”
• “ বাজে কথা বাদ দাও তো, আমরা একে অপরের জন্য বেঁচে থাকবো। ” শুভ নিরুকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে থাকে।
দুপুর হয়ে এসেছে, ওরা লাঞ্চ শেষ করে রেডি হয়ে সমুদ্রের ধারে যায়,
• “ চলো পানিতে ভাসবো দুজনে। ”
• “ এতক্ষণ ভিজেও স্বাদ মিটলো না আবার ভিজবে?”
• “ আমি ভিজবো বলেছি মানে ভিজবোই। ” বলে নিরু সমুদ্রে নেমে পড়ে।
শুভ বাধ্য হয়ে নিরুর সাথে পানিতে নামে। তখন নিরু চিৎকার করে উঠে,
• “ কি হয়েছে?”
• “ আমার পা আ আ আ আ”
• “ কি হয়েছে!!!! বলবে তো? ”
নিরু কিছু না বলে চিল্লিয়েই যাচ্ছে, তখন শুভ গিয়ে পা তুলে দেখে একটা কাকড়া কামড় ধরিয়ে বসে আছে। শুভ আস্তে করে কাকড়া কে সরিয়ে দেয়। কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হচ্ছিলো, শুভ কোলে করে এনে আশেপাশের ফার্মেসি তে নিয়ে গিয়ে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেয়, ব্যান্ডেজ করে দেয়। তখন নিরু বাইনা ধরে ট্রলার এ চড়বে। কিন্তু শুভ নিরুকে নিয়ে রুমে ফিরে এসে চেঞ্জ হয়ে নিতে বলে। নিরুর এতে খুব রাগ হয়, মুখ ভার করে বসে থাকে।
রাগ করে বসে থাকলেও শুভর কিছুই করার নেই। কারণ নিরু যখন সারপ্রাইজ পাবে তখন নিজে থেকেই কাছে আসবে। পরদিন সূর্য ওঠার আগে নিরুকে ঘুম থেকে উঠিয়ে রেডি করিয়ে বাইরে নিয়ে আসে। শুভ আগে থেকেই ট্রলার ভাড়া করে রেখেছে, নিরু দেখে অবাক হয়ে যায়।
ট্রলারে চড়েই নিরু বলে,
• “ যদি উঠবেই, তাহলে এতো ভাব নেয়ার কি ছিলো শুনি?”
• “ বলে দিতে তো তুমি সারপ্রাইজ পেতে না।”
• “ এই সারপ্রাইজ এর জন্য সারারাত কষ্ট পেয়েছি তা জানোনা?”
• “ জানি তো মহারানী।”
ট্রলার চলছে আপন গতিতে, নিরু উপভোগ করছে কি সুন্দর ঢেউ গুলো ট্রলার বরাবর কেটে যাচ্ছে। পানির শব্দে বাচ্চাদের মতো হাসছে নিরু। প্রথমে গঙ্গামতির চরে আসে, এখান থেকে সুর্যদয় দেখা যায়। কুয়াকাটার এই জায়গার নাম ই কুয়া। ওরা একেবারে পূর্ব দিকে চলে আসে। সুর্য আস্তে আস্তে লাল রঙের হয়ে ওঠে। এইখান থেকে সুর্যদয় দেখতে সব চেয়ে ভালো লাগে নিরুর। বেশ কিছু সময় শুভর উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দেয়। এতো ভালো লাগছে নিরুর, মুখে প্রকাশ করতে পারছেনা। এখানে কমলা গাছ আছে, সেখান থেকে দুজনে কমলা নিয়ে খায়। কামরাঙা নিয়ে ব্যাগে রেখে দেয়, পরে খাবে সেই জন্য। নিরু শুভকে বলে,
• “ এই যায়গা টা মায়াময়, গঙ্গামতি না হয়ে মায়ামতি হলে ভালো হতো। ”
শুভ একটু হাসলো এরপর বললো,
• “ তুমি নাম বিশেষজ্ঞ হলে ভালো হতো। ”
• “ সব সময় কি মজা নেবে নাকি? ”
• “ বউ টার রাগ মুখ টা দেখছি।”
এরপর ওরা ট্রলার এ করে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে যায়। এখানে আসলে নোঙর ফেলা যায়না তাই।
নিরু জিজ্ঞেস করে,
• “ এখানে যদি নামি তাহলে কেমন হবে? ”
• “ এখানে নামা যাবেনা। কারণ এখানে ট্রলার নোঙর করা যায় না। ”
• “ কেনো?”
• “ কারণ এই যায়গার কোন তল নেই, তাই এই যায়গা কে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড বলা হয়। যদিও স্থানীয় লোকজন এটাকে নাই বাম বলে, মানে এর কোন তল নেই। ”
নিরু মুগ্ধ হয়ে শুভর কথা শুনছে, বেশ ভালো লাগছে নিরুর। চারিদিকে পানি আর পানি আর ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুজনে গল্প করতে করতে ট্রলার ফাতরার চরে গিয়ে থামে।
নিরু বলে উঠে,
• “ ওয়াও!!!! এতো সুন্দর জায়গা? দেখো এখান কার গাছপালা গুলো হলুদ রঙের। ”
• “ বেশি ভিতরে যেও না, বিপদ হতে পারে।”
• “ আর একটু যায় না, দেখো গাছগুলো কতো সুন্দর লাগছে। ”
শুভ বিপদ হতে পারে ভেবে নিরুকে কোলে করে টেনে নিয়ে আসে। এরপর ওরা লাল কাঁকড়ার দ্বীপে যায়, বেলা প্রায়ই হয়ে এসেছে।
• “ কাকড়া গুলো তো দেখতে খুবই সুন্দর। ”
• “ হুমম, সুন্দর বটে! কিন্তু কালকের মতো কামড় খেয়োনা। ”
• “ ওকে জান্টুস!!!! হিহিহি”
• “ জানো!! সকালে এখানে আসলে আমরা কাঁকড়া দেখতে পেতাম না। ”
• “ কেনো?”
• “ কারণ দুপুরে রৌদ্র তাপে বালু যখন গরম হয়, তখন এরা উঠে আসে। ”
• “ বেশ তো, কি সুন্দর জীবনধারা। ”
ওখানে ওরা বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর ট্রলার এ উঠে ওরা লেবুর বনে যায়। প্রথমে গিয়ে স্পেশাল মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নেয়। পরে ওরা লেবুর বন এর তিন নদীর মোহনায় যায়। এখান থেকে অপরপাশে বনাঞ্চল দেখা যাচ্ছে।
• “ মন চাচ্ছে এখানেই থেকে যেতে। ”
• “ কাল দুপুরের দিকে আমরা বাসায় ফিরে যাচ্ছি। ”
• “ দিলে তো মন টা খারাপ করিয়ে। ”
• “ কিছুই ভালো লাগেনা আর। শুভ খুব খারাপ ” নিরুকে হাসাতে শুভ বলে।
নিরু ফিক করে হেসে দেয়,
• “ পারোও বটে!!!”
ফিরার পথে সুর্যাস্ত দেখে ট্রলার এ করে বিচে ফিরে আসে। সেখান থেকে হোটেলে চলে আসে দুজনে,
• “ সত্যিই খুব অসাধারণ ছিল আজকের ঘুরাঘুরি টা ” নিরু বলে শুভকে।
• “ তোমার খুশির জন্যই তো এতো কিছু করছি। কাল আরোও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে, সেগুলো দেখাবো। দেখবে খুব ভালো লাগবে তোমার। ”
• “ আমার না খুব টেনশন হচ্ছে!!! বাসায় কথা বলো তো, রিমির খোঁজ নাও। ”
• “ বেড়াতে এসেও আমার বোনের জন্য টেনশন। কতো পেয়ারি ভাবি পেয়েছিস রে রিমি। বউ টা শুধু আমাকেই বুঝলোনা। হায় কপাল হায় কপাল। ”
• “ কি এমন খারাপ করেছি!!! মনে হচ্ছে আমি ই একমাত্র খারাপ বউ।”
• “ আমি তো মজা করে বললাম!!! ”
শুভ বাসায় কথা বলে, রাতের ডিনারের অর্ডার করে।
চলবে…….